জুমাদাল আখিরাহ ১৪২৮   ||   জুলাই ২০০৭

আমেরিকায় আমি কী পেয়েছি আর কী পাইনি

মাওলানা সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী রাহ.

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

আমেরিকা থেকে বিদায় নেবার আগে আমি আপনাদের একথা বলে যেতে চাই, আপনারা মার্কিনী সভ্যতাকে ভয় পাবেন না। ভীত-সন্ত্রস্ত হবেন না। আপনারা যে বৃক্ষের ফল তা  হল নবুওয়াত বৃক্ষ। আপনারা এখানে থাকুন, কিন্তু এই সভ্যতার গোলাম হবেন না। আপনারা আগ্রহের সঙ্গে এখান থেকে উপকৃত হোন। কিন্তু আপনারা এই বস্তুবাদী সভ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আপনারা আপনাদের পয়গাম স্মৃতিতে গেথে নিন। আপনারা আপনাদের  ব্যক্তিসত্তাকে হারিয়ে ফেলবেন না। আপনারা এই  সভ্যতার কলমা পাঠ করা শুরু করবেন না। আপনারা নিজেদেরকে, নিজেদের ধর্মকে, নিজেদের জীবনব্যবস্থা ও জীবন-দর্শনকে, নিজেদের সমাজকে ঘৃণা ও অবজ্ঞার চোখে দেখবেন না। আপনারা  এমন মনে করবেন না যে, আমরা পশু আর এরা মানুষ। না, না, আপনারাই মানুষ আর এরা পশু জীব-জানোয়ার। এই ভুখ-টি যদিও বিদ্যূতালোকে ঝলমল করছে, এখানে রাতকে দিন মনে হয়, কিন্তু প্রকৃত আলো রহমত, বরকত ও হেদায়েতের আলো থেকে এরা একেবারেই বঞ্চিত। ইকবাল সত্যই বলেছেন,

ফিরিঙ্গীরা মেশিনের ধৌঁয়ায় আচ্ছন্ন/এই উপত্যকা নয় আলোর উপযুক্ত।

নিজেদের হাতে গড়া মূর্তির গোলাম

এরা আপন অভ্যাসের দাস। এরা নিজেদের হাতে গড়া ও ছাঁচে ঢালা যন্ত্রের গোলাম। হযরত ইবরাহীম আ. তার যুগের মূর্তি-পূজকদেরকে বলেছিলেন, কী ব্যাপার! আজ যাকে তোমরা নিজ হাতে গড়ছ আর কাল তার সামনে সিজদাবনত হচ্ছ? তাকে সাষ্টাঙ্গ প্রনতিপাত করছ? একই অবস্থা এখানকারও। আজ এক জীবন মান তৈরি হচ্ছে; একটি নীতি প্রণীতি হচ্ছে, মেশিন তৈরি হচ্ছে আর কাল সমগ্র দেশ তার গোলামে পরিনত হচ্ছে। এরাই  নিজেদের হাতে গড়া, নিজেদের ছাঁচে ঢালা মূর্তির গোলাম।

আযরের পূজা মণ্ডপে ইবরাহীম আ. এর প্রতিনিধিত্ব

এই দেশটি এক বিশাল বি¯তৃত পূজামন্ডপ যেখানে  ইবরাহীমী আযান দরকার, আর তা কেবল আপনারাই শোনাতে পারেন। ইবরাহীম আ. এর প্রকৃত উত্তরসূরী আপনারাই, ইহুদীরা নয়। এপথ থেকে তারা দূরে সরে গেছ। খৃস্টানরাও নয়। তারা হযরত ঈসা মসীহর পরিবর্তে সেন্টপলের খৃষ্টবাদের পথ ধরেছে। তারা সেন্টপলের অনুসারী। তারা ঈসা আ. এর প্রচারিত ধর্ম থেকে একেবারেই রিক্ত হস্ত হয়ে গেছে। এ ছিল বিরাট ষড়যন্ত্র যা মর্মান্তিকভাবে সফল হয়েছে। সম্ভবত ধর্ম নিয়ে যতগুলো ষড়যন্ত্র হয়েছে সে সবের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্রই এতটা সফল হয়নি। সেন্টপল সমগ্র খৃষ্টধর্মকে হযরত ঈসা আ. আনীত ধর্ম থেকে সরিয়ে তার (নিজের প্রচারিত) ধর্মের ওপর নিক্ষেপ করেছে। আজকের খৃষ্টধর্ম চাই তা ক্যাথলিক হোক অথবা প্রোটেস্টান্ট, তা সেন্টপলের খৃস্টধর্ম। তাই খৃস্টানরাও হযরত ইবরাহীম আ. এর উত্তরসূরী নয়। তার প্রকৃত উত্তরসূরী আপনারা। ইকবালের ভাষায় বলব:

হে মসজিদুল হারাম নির্মাণকারী। আপনাদেরকে নতুন পৃথিবী নির্মাণ করতে হবে। কেবল হারাম শরীফ নির্মমাতারই এই অধিকার আছে যে, তারা নতুন পৃথিবী গড়বে। আজ দুনিয়ার বুকে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। আপনারা যে পয়গামের বাহক, আপনারা যে আসমানী গ্রন্থের ধারক, আপনারা যে নবীর উম্মত তার এই দায়িত্ব ছিল-দুনিয়ার তাবৎ গোলামী থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়ে এক আল্লাহর গোলামী তে নিয়ে আসা। এজন্য আপনারা আমেরিকার বুকে একজন উদরসর্বস্ব মানুষ হিসেব কিংবা হিন্দুস্তানী পাকিস্তানী মিসরীয় ও সিরিয় হিসাবে নন। আপনারা বংশ-গোত্র, রক্ত-বর্ণ ও ভুখণ্ডের পরিচয় ভুলে গিয়ে মুসলিম পরিচয়ের মাঝে লীন হয়ে যান। এখানে আপনারা কেউ ইরানী নন, নন আফগান কিংবা পাঠান। আপনারা সিরিয় কিংবা মিসরিয় নন; আপনারা মুসলমান। আপনি মুসলিম উম্মাহরর সদস্য। আপনার পরিচয় আপনি ইবরাহীমী, আপনি মুহাম্মাদী। এজন্য আপনি আপনার পরিচয় জানুন, আপনার হাকীকত চিনুন। আপনি এজন্য এখানে আসেননি যে, মেশিনের একটি নগণ্য পার্টস এর ন্যায় মূল যন্ত্রের সঙ্গে ফিট হয়ে যাবেন। অস্তিত্বকে বিলীন করে দেবেন। উদরপুর্তিকেই একমাত্র কাম্য মনে করবেন না যেভাবে জীব-জানোয়ার তাদের উদর পুর্তি করে থাকে। না, বরং আপনারা এদেশের লোকদের পয়গাম দিন, তাদেরকে জাগ্রত করুন, তাদেরকে ঝাকি দিয়ে  বলুন, তোমরা জীবনের ভুল পথে চলছ। জীবনের কোন্ আনন্দ ও তৃপ্তি তোমরা পেয়েছ বল দেখিতোমরা জীবনের প্রকৃত দিক সম্পর্কে জানতেই পারনি। যখন তাদের মধ্যে এই রিক্ততার অনুভুতি জাগে তখন তারা অন্য পথে চলা শুরু করে। তারা হিপ্পীইজমের পথ ধরে। তারা আত্মহত্যার পথ ধরে। তারা জীবন থেকে পলায়ন করে। তারা হিন্দু যোগীদের অনুকরণে যোগবাদের পথ ধরে। তারা সন্যাসবাদের  পথে অগ্রসর হয়।

আপনারা এলাহাবাদে বেড়াতে এলে দেখবেন, সেখানে কুম্ভ মেলায় বড় বড় ডিগ্রীধারী লেখাপড়া জানা মার্কিনীরা জানোয়ারের মত পাগলের মতো বিচরণ করছে। সেখানে গিয়ে তারা সাধু-সন্যাসী ও যোগী পুরোহিতদের কাছে বসে। মানুষের যেভাবে বমনোদ্রেক হয় তাদের সংস্কৃতিরও হয়েছে সেই দশা। সভ্যতা-সংস্কৃতির মদ তারা এত পান করেছে যে, এখন তারা বমি করছে। তারা পশুত্বের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহরাজিকে অস্বীকার করে, প্রত্যাখ্যান করে সৃষ্টিজগতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং জীবন থেকে পালিয়ে যাবার মাঝে তারা শান্তি খুঁজছে, সান্তনা পেতে চাচ্ছে। হায়! আজ আমাদের মুসিলম দেশগুলো যদি এতটা যোগ্যতা হাসিল করত যে, ওইসব মার্কিনীকে সঠিক রাস্তা দেখতে পারত। ওই সব আমেরিকানদের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের উচ্চ আসন থেকে তাদের সম্বোধন করত। তাহলে পরিণতি আজ এতটা মর্মান্তিক হত না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের একটি দেশ ও এই পর্যায়ের নয় যে, মার্কিনীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলবে তাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখাবে। ফল এই হয়েছে যে, এই মার্কিনীরা যখন নিজেদের সভ্যতা সংস্কৃতিকে ঘৃণা করে এবং তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তখন তারা শান্তির খোজে, সান্ত¡নার আশায় ভারতবর্ষের হিমালয় পর্বতের শৃঙ্গে আরোহন করে। তারা নেপাল যায়। সেখানে তারা নেশাকর বস্তু পাণ করে। তারা ভাঙ ও চরসের জন্য সেখানে যায়। আজ আমরা মুসলমানরা যদি সেই পর্যায়ের হতাম তাহলে আমরা তাদের কে সঠিক পথ দেখাতে পারতাম। কিন্তু মুসলমান কোথায়?

আমার ভাই ও বোনেরা! আপনারা এখানে  এজন্য নন যে, আপনারা শুধু কামাই করবেন, উপার্জন করবেন, আর খাবেন। একাজ তো দুনিয়ার সবাই করতে পারে। আমাদের বহু স্বদেশী একাজ আমাদের থেকে আরো ভালোভাবে করতে পারে। আপনারা এখানে এজন্য আছেন যে, আপনারা পরিমান মতো খাবেন। যতটুকু না খেলেই নয় কেবল ততটুকুই খাবেন, আয়-উপার্জন করবেন, কিন্তু নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে  সজাগ থাকবেন। আপন পদমর্যাদা সম্পর্কে  অবহিত হোন এবং একটি একটি নতুন জীবনের বাস্তব নমুনা তাদের সামনে পেশ করুন। আপনারা আযান দিন যা তাদের মস্তিস্কে আঘাত করবে। নামায পড়ন যাতে তারা নিজ চোখে দেখে ভাবতে বাধ্য হয়। পাক-সাফ থাকুন যাতে তাদের পুঁতিগন্ধমায় জীবনের  প্রতি ঘৃণা ধরে, অবজ্ঞা জন্মে। ভারসাম্য জীবন যাপন করুন যাতে নিজেদের জীবনের ভারসাম্য হীনতার অনুভুতি তাদের মধ্যে  জাগে, যন্ত্রের হাত থেকে, মেশিনের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে তৃপ্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে পারে। যাতে  তারা জানতে পারে, শান্তি ও জীবনের তৃপ্তি কোথায় মেলে। আপনার দিলের দুনিয়া আবাদ করুন। অন্তর্জগত চাষ করুন। আপনাদের ভেতর সেই রূহানিয়াত সেই আধ্যাত্মিক শক্তি জাগ্রত হোক যাতে যে কেউ আপনার সান্নিধ্যে বসলে অনুভব করতে পারে যে, তার ভেতর এক নতুন শক্তির উম্মেষ ঘটেছে। আজ ছিল সেই সময় যখন যিন্দা দিল কোনো বুযুর্গ যদি এ দেশটির প্রতি দৃষ্টি দিতেন এবং ঐ সব ধর্মত্যাগী পথভ্রষ্ট মানুষ গুলোকে যারা নিজেদের জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণ, যা তাদের পরিধেয় পোশাকের থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে, হাত ধরে বলতেন, একমাত্র আল্লাহর যিকর দ্বারাই  শান্তি পাওয়া যায়।

আজ এই পয়গাম এই বার্তা দেবার জন্য কেবল মুসলমানরাই  ছিল। কিন্তু কোথায় মুসলমান? কোনো মুসলিম দেশের কোনো মুসলিম জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কি এই হিম্মত আছে, যারা এ সব আমেরিকান সে বলবে একমাত্র আল্লাহর যিকর দ্বারাই অন্তর শান্তি পায়, তৃপ্তি পায় তারা বলবে কি, তাদের নিজেদেরই তো এই বিশ্বাস নেই যে, আল্লাহর যিকিরে শান্তি লাভ হয় তাহলে তারা অন্যদের পয়গাম দেবে? যাদের নামাযের শক্তি, কল্যাণ ও উপকারিতার ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস নেই, কলেমার হাকীকত ও সত্যতা সম্পর্কে যারা নিজেরাই বিশ্বাসী নয়, আল্লাহর ভাল-মন্দ ও লাভ-ক্ষতির মালিক এ বিশ্বাস যাদের নেই, তকদীরের ওপর ভাগ্যের ওপর যাদের নিজেদের গভীর বিশ্বাস নেই, যারা আমেরিকাকে রাযিক (রিযিক দাতা) ভেবে নিয়েছে, যারা কল-কারখানাকে রাযিক ঠাওরে নিয়েছে তারা কি করে ওদের তৌহিীদের পয়গাম দিতে পারে? কিভাবে ওদেরকে বলতে পারে, লারাযিকা ইল্লাল্লাহু আল্লাহ ছাড়া রিযিকদাতা আর কেউ নেই!

আামর প্রিয় ভাই ও বোনেরা! প্রথমে নিজেদের ভেতর ঈমান পয়দা করতে চেষ্টা করুন, নামযের পাবন্দী করুন। অল্প সময় নির্জনে বসে, নিজের অন্তর্গত আবাদ করুন। সেই উত্তাপ সৃষ্টি করুন যা মেশিনের ধোয়া ঢেকে ফেলেছে। প্রথমে আত্মাকে জাগ্রত করুন। নিজের জীবনের লক্ষ্য ঠিক করুন। সহী-শুদ্ধ করুন! কুরআন অধ্যায়ন করুন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাত অধ্যয়ন করুন। এর থেকে আলো সংগ্রহ করুন। এরপর ওই সব মার্কিনীদেরকে স্বভাব-ধর্মের ফিতরতের (ইসলাম) পয়গাম শোনান।

কেবল ইসলামই হল ফিতরতের ধর্ম, স্বভাব-ধর্ম

কেবল ইসলামই ফিতরতের ধর্ম, স্বভাব-ধর্ম যে ফিতরত নিরুৎসাহিত করে না, যা ফিতরতের টুটি চেপে ধরে না; বরং বলে ফিতরত প্রকৃতিগতভাবেই সৎ ও সুস্থ। মানুষের ফিতরত ও প্রকৃতি যার ওপর আল্লাহ মানুষ কে সৃষ্টি করেছেন (আলকুরআন) আল্লাহ তাআলা মানুষকে সাদা শ্লেট দিয়েছেন। নির্দোষ ও নিষ্কলুষ স্বভাব দান করেছিলেন। কল্যাণ ও ভালোর প্রবণতা দান করেছিলেন। আমরা তাকে কলুষিত করে ফেলেছি। মানুষ স্বভাবগতভাবে ভালো এর সে ভালোকেই পছন্দ করে। যদি তাকে তার স্বাভাব ধর্মের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে সে সোজা পথের দিকেই চলবে। প্রথমে আপনারা  ওই সব সত্যের চেতনা সৃষ্টি করুন। মস্তিস্ক থেকেও এবং দিল থেকেও। এরপর ওই সব সত্য তাদের সামনে পেশ করুন। আপনারা উম্মতে দাওয়াত, আপনারা উম্মতে রিসালাত। আপনারা এমন জাতি যাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, এমন এক জাতি যে, সুনির্দিষ্ট পয়গামের বাহক। আপনারা উদর সর্বস্ব উপার্জনকারী কোন পশু নন যে কেবল পেট ভরবেন আর বংশ বৃদ্ধি করতে থাকবেন।

মানুষ চিনুন, মানুষ খুজুন

আমি আপনাদের সামনে আমার দিলের অনুভুতি ব্যক্ত করলাম। আমি আমেরিকায় সব কিছু দেখেছি, কিন্তু মানুষ দেখেনি, মানুষের দেখা পেলে তা আপনাদের মধ্যেই পেয়েছি। এ জন্য নয় যে, আমি আমেরিকা ও আমেরিকান দের সম্পর্কে অনবহিত। আমি তাদেরকে তাদের সাহিত্যে দেখেছি। তাদের টিভির পর্দায় দেখেছি তাদের রেডিওতে দেখেছি। আমি তাদের সম্পর্কে অনবগত নই। কিন্তু যে মানুষ আল্লাহর খলীফা, আল্লাহর প্রতিনিধি যে মানুষের জন্য সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃজিত হল যে মানুশের বুকের মাঝে এমন একটি দিল রয়েছে, যা সমগ্র দুনিয়ার চেয়ে বেশি মুল্যবান। গোটা বিশ্বের ভাণ্ডার এক দিকে, জ্ঞান-বিজ্ঞানের যাবতীয় উন্নতি-অগ্রগতি একদিকে আর সেই দিল যা একজন হৃদয়বান, মানুষের দিল একদিকে এই দিলের সামনে তামাম বিশ্বজগত মুল্যহীন।

আপনারা সেই মানুষ খুজুন। সেই মানুষ্যত্ব নিজের ভেতর জাগ্রত করুন। শুধু তাহলেই আপনার এখানে  অবস্থান করা যথার্থ হবে। তখন আপনাদের এখানে থাকা কেবল জায়েযই নয় বরং ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এক বিরাট দাওয়াতও তাবলীগ হবে।

যদি তা না হয় তাহলে ভাইয়েরা! আপনারা শুনে নিন, আমি ভয় পাচ্ছি, আমি কয়েক জায়গায় বলেছিও যে, যদি আপনারা  আপনাদের ধর্মীয় জীবন নিজেদের বাচ্চাদের শিশু সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার পূর্ণ এন্তেজাম না করেন, নিজেদের বাচ্চা-কাচ্চাদের ঈমান ও ইসলামের ওপর কায়েম থাকার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত না হন তাহলে আপনাদের এদেশে থাকা গোনাহ আপনারা  এক বিরাট  বড় বিপদের সম্মুখীন।

যারা নিজেদের ওপর জুলুম করে তাদরে প্রাণ গ্রহণের সময় ফেরেশতাগণ বলে, ‘‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?’’ তারা বলে, দুনিয়া আমরা অসহায় ছিলাম; তালা বলে, আল্লাহ যমীন কি এমন প্রশস্ত ছিল না যেখানে তোমরা হিজরত করতে? এদেরই  আবাসস্থল জাহান্নাম, আর সেটা কত মন্দ আবাস!, -সুরা নিসা, ৯৭

আমাদের এমন জায়গায় থাকা জায়েয যেখানে মানুষ পুরো বৈশিষ্ট্য সহকারে থাকতে পারে। যেখানে ফরয তথা দ্বীনের অবশ্য পালণীয় কর্তব্যগুলো আদায় করতে পারে। যদি পরিবেশের ভেতর তার অবাকাশ না থাকে অথবা আমরা এটা মনে করি যে, আমরা এই পরিবেশে নিজেদের ধর্মীয় অবশ্যপালণীয় কর্তব্যগুলো পালন করতে পারব না তাহলে আমাদের  এখানে থাকা জায়েয নয়। এজন্য আপনাদের কর্তব্য, আপনারা নিজেদের মুসলমান থাকার এন্তেজামও করবেন যাতে করে, পরিপূর্ণ  বৈশিষ্ট সহকারে এখানে থাকতে পারেন। নিজেদের পরিবেশ তৈরি করুন। নিজেদের পর নিজেদের সন্তানদের জন্য এই নিশ্চয়তা লাভ করুন যে, আপনাদের পর তারা মুসলমান থাকতে পারে। যেমন নিশ্চয়তা হযরত ইয়াকুব আ. তার সন্তানদের সম্পর্কে হাসিল করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু এসেছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে যখন পুত্রদেরকে জিজ্ঞেস করেছিল, আমার পরে তোমরা  কিসের ইবাদত করবে? তারা তখন বলেছিল, আমরা আপনার ইলাহ  এবং আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম. ইসমাইল ও ইসহাকের ইলাহের ইবাদত করব।

হযরত ইয়াকুব আ. দুনিয়া থেকে যাবার আগে আপন সন্তানদেরকে আপন পৌত্রদেরকে ডেকে জড়ো করেন এবং বলেন, আমার প্রিয় সন্তানের আমার প্রিয় কলিজার টুকরোরা! আমি মৃত্যুর পুর্বে এই নিশ্চয়তা লাভ করতে চাই, আমার পর তোমরা  কার ইবাদত করবে? তখন তারা বলল, আমরা তোমার ইলাহ ও তোমার পিত্রপুরুষদের ইলাহর ইবাদত করব। এরপর তিনি নিশ্চিন্ত হলেন এবং নিশ্চয়তা লাভের পর খুশি মনে দুনিয়া থেকে বিদায় হলেন। এটা আমাদের সকলের দায়িত্ব নিজেদের  সন্তানদের সম্পর্কে এই নিশ্চয়তা লাভ করা যে, তারা ইসলামের ওপর যিন্দা থাকবে কী?। যদি এই নিশ্চয়তা না পাওয়া যায় তাহলে প্রিয় বন্ধুরা! এখানে অবস্থান করার ব্যাপারে তোমাদেরকে পুনর্বার ভেবে দেখতে হবে, এই বিপদের ঝুকি নিয়ে এখানে থাকবে কি না।

আপনারা এখানে মুসলমান হিসেবে থাকতে পারেন

এম, এস, এ-র কাছে আমি কৃতজ্ঞ তারা আমার যে খেদমত করেছে সে জন্য এবং সে সব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ, যাদের খেদমত সম্পর্কে আমি পরিপূর্ণরূপে অবহিত নই। আমি সে সব লোকের কাছেও কৃতজ্ঞ, যারা দীনের ব্যাপারে মেহনত করে থাকেন, পাঠচক্র গড়ে তোলেনসাহিত্যের প্রসার ঘটান। মানুষকে একত্র করেন আরব হোক কিংবা অনারাব সকলেই মুবারকবাদ পাবার হাকদার। আল্লাহ তাআলা তাদের আমল কবূল করবেন এবং তাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। সর্বাধিক  জরুরী বিষয় হল, আপনারা প্রথম সুযোগেই এই নিশ্চয়তা লাভ করুন যে, আপনারা এখানে মুসলমান হিসাবে থাকতে পরবেন তো? আপন সত্তা বিসর্জন তো দেবেন না? তাদের মধ্যে নিজেদের হারিয়ে তো ফেলবেন না? যেভাবে মোমে আগুনের তাপ পেতেই গলে যায়। শিশির বিন্দু যেভাবে রৌদ্রতাপে নিজেকে হারিয়ে  ফেলে সেই ভাবে এই সভ্যতার সামনে জেদেরকে হারিযে তো ফেলবেন না? যদি এমনটাই হয় তাহলে আপনারা যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ফিরে যান এতে করে যদি এখানকার আয় আমদানীর ও আরাম-আয়েশের এক-চতুর্থাংশ কিংবা পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগও মেলে তবুও। আর এই বিপদের আশংকা না থাকলে মুবারক এদশে আপনাদের অবস্থান। সম্ভবত আপনাদের থাকার দ্বারা এদেশে একটি নতুন আলো আসবে। এবং সম্ভবত আপনাদের মাধ্যমে এখানে ইসলামের রাস্তা খুলবে।

অনুবাদ : আবু সাঈদ মুহাম্মাদ ওমর আলী

 

 

advertisement