দৃষ্টিভঙ্গি বদলের নাম দ্বীন
একজন কামেল মুসলমানের জীবন গড়ে উঠতে শুধু পরিচিত ও আনুষ্ঠানিক ইবাদত-আমলে নিমগ্ন থাকাই যথেষ্ট—ইসলাম একথা বলে না; বরং আনুষ্ঠানিক ও জরুরি ইবাদতগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের পাশাপাশি জীবনের স্বাভাবিক ও সাধারণ পর্বগুলোও ‘ইবাদতময়’ করে পার করার সুযোগ তার সামনে বিদ্যমান রয়েছে। হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী যুগের সালাফে সালেহীনদের জীবনে দ্বীনী ইবাদতে নিমগ্নতার পাশাপাশি ঘর-সংসার, বাজার-ব্যবসা, শ্রম-কামাই, খানাপিনা, সন্তান লালন পালন, আচরণ-কথাবার্তা, প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারা থেকে নিয়ে হাসি-কৌতুক পর্যন্ত বহু কিছুর উদাহরণ পাওয়া যায়। তাঁরা এ স্বাভাবিক জীবনোপায় ও জীবনাচারগুলো অবলম্বন করেছেন একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে। হযরত রাসূলে করীমের জীবনযাপন পদ্ধতিকে অনুসরণ করে। বলাবাহুল্য, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের সকল অঙ্গনেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
মূলত সুন্নত অনুসরণ ও আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাটানো বৈধ সাধারণ জীবনযাপনও ইবাদত ও দ্বীনে পরিণত হয়ে থাকে।
ক্ষুধা লাগলে খানা খাওয়া, পিপাসা লাগলে পান করা, ঘুম পেলে ঘুমানো, সন্তানের চেহারা দেখলে তাকে আদর স্নেহ করা এগুলো তো সব মানুষই করেন। স্বভাবজাত প্রেরণা থেকে বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী, দ্বীনদার-দ্বীনহীন সব মানুষের বেলায় এ বিষয়গুলো ঘটে থাকে। দ্বীনহীন মানুষ যখন এগুলো করেন তখন তাদের দৃষ্টিতে পার্থিব জীবনের কিছু প্রয়োজন ও ভালো লাগাটাই মুখ্য থাকে। এরচেয়ে বেশি কিছু তাদের দৃষ্টিতেও থাকে না, ভাবনাতেও থাকে না। পক্ষান্তরে দ্বীনদার মানুষের দৃষ্টিতে এ স্বাভাবিক কাজকর্ম ও আচরণগুলোর ক্ষেত্রে থাকে ইবাদতের একটি উঁচু ভাবনা। থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুসরণের মেজাজ। এ দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাবনার কারণে একই কাজ কারো ক্ষেত্রে নিছক দুনিয়াবী প্রয়োজন পূরণের কাজ হয়ে থাকে। কারো ক্ষেত্রে হয়ে যায় দ্বীনী আমল ও ইবাদতের কাজ।
পার্থিব জীবনের বড় অংশই সাধারণত ও দৃশ্যত পার্থিব ও স্বভাবজাত আচরণ ও ক্রিয়াকা-ে ব্যয় হয়। খানাপিনা, ঘর-সংসার, ঘুম, কথাবার্তা, আচার-আচরণ ইত্যাদির মধ্যেই দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হলে, নিয়ত ইবাদতের হলে, কাজ মাসআলা অনুযায়ী হলে সেগুলো দ্বীনে পরিণত হয় ; ইবাদতে পরিণত হয়। নির্দিষ্ট কিছু জরুরি ইবাদতের পাশাপাশি গোটা জীবনের সব আমল ও কাজকেই দ্বীন ও ইবাদতে পরিণত করতে তাই দৃষ্টিভঙ্গিটা কেবল বদলে দেওয়া জরুরি। স্বাভাবিক সব কাজ ও আচরণ ছেড়ে দেওয়া নয়, শরীয়তের বিধান মেনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, দ্বীনের নীতি ও সুন্নতের অনুসরণের মধ্য দিয়ে করা উচিত।