প্রসঙ্গ : ফাতেহায়ে ইয়াজদহম
এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার এবং শিরক ও বিদআত থেকে সরিয়ে মানুষকে আল্লাহমুখী করার পেছনে যে বুযুর্গগণের অবদান অপরিসীম শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রাহ. তাদের অন্যতম। তাঁর ইখলাসপূর্ণ মেহনতের কারণে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতি মুসলিম জনগনের মনে মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এ অঞ্চলের মানুষ স্বভাবগতভাবেই ভক্তিপ্রবণ। তাদের নির্মল ভক্তিকে পঁুজি করে এক শ্রেণীর মানুষ এ অঞ্চলে বিভিন্ন অনৈসলামিক রীতি রেওয়াজের সূচনা করেছে। এ উপমহাদেশের অন্য অনেক বুযুর্গানে দ্বীনকে কেন্দ্র করে যে বিষয়গুলো ঘটেছে দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে, শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রহ.কে কেন্দ্র করেও এমন অনেক কিছু সংঘটিত হয়ে থাকে। অথচ শায়খ যদি জীবিত থাকতেন তাহলে কুরআন-সুন্নাহর বিরোধী হওয়ার কারণে এগুলোকে নির্মূল করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা তিনি নিজেই গ্রহণ করতেন। শায়খ আব্দুল কাদের জীলানীর মৃত্যু দিবসকে কেন্দ্র করে রেজভী দলের ভাইয়েরা ‘গিয়ারভী’ নামে একটি রসম পালন করে থাকেন। ‘গিয়ারা’ মানে এগার। অনেক অঞ্চলে আরবী মাসের রবিউস সানীর এগার তারিখে ‘গিয়ারভী’ নামে অনুষ্ঠানটি করা হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে ফাতেহায়ে ইয়াযদহম নামেও এদিনটিকে উদ্যাপন করা হয়। এদিন শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রাহ.-এর ঈসালে সওয়ারের উদ্দেশ্যে খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয় এবং দুধ ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়াজ চড়ানো হয়। এভাবে নির্ধারিত তারিখে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে নিয়মিত এই অনুষ্ঠান পালনের কোনো দলিল কুরআন-হাদীসে আছে কি না—একথা তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা উত্তরে বলে থাকে, এভাবে তো ঈসালে সওয়াবই করা হচ্ছে, এতে অসুবিধা কী ঈসালে সওয়াব করতে অসুবিধা নেই, কিন্তু ঈসালে সওয়াবের জন্য নিজের পক্ষ থেকে বিশেষ দিন-ক্ষণ ও বিশেষ নিয়ম নির্ধারণ করা এবং শরীয়ত নির্ধারিত নিয়মের মতো সেই নিয়মের অনুসরণ করা ইত্যাদির মধ্যেও যে কোনো অসুবিধা নেই, তা কীভাবে বুঝা গেল? শরীয়তের পরিভাষায় এভাবে দ্বীনী কাজকর্মে নতুন নতুন নিয়ম-কানুন উদ্ভাবন করা বিদআতের অন্তভুর্ক্ত।
রেজভী ভাইয়েরা যখন এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেন না তখন তারা বলতে থাকেন যে, তোমরা হলে ওহাবী, তোমরা বড় পীর সাহেবকে মান না। বলাবাহুল্য, হক্কানী উলামায়ে কেরাম বড় পীর সাহেবকে একজন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ হিসাবে সম্মান করে থাকেন, তবে বড় পীর সাহেবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের বিদআত উদ্ভাবন করাকে তারা সমর্থন দিতে পারেন না।
রেজভী আলেমদের ভেবে দেখা উচিত যে, দুনিয়াতে বিভিন্ন ছল-চাতুরীর মাধ্যমে পার পাওয়া গেলেও আখেরাতে মহান আল্লাহর সামনে কি জবাব দেওয়া হবে? আখেরাতে এ জাতীয় জবাব দিয়ে বিদআতের অপরাধ থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যাবে কি?
রেজভী মাওলানারা সাধারণ মানুষকে এসব রসম-রেওয়াজের পক্ষে টানার জন্য কুরআন-হাদীসের নামে কি ধরনের কৌশল অবলম্বন করে থাকে, তার একটি দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করছি। গিয়ারভী রাতে এক রেজভী মাওলানা ওয়াজ করছিলেন। তিনি তার ওয়াজে এক পর্যায়ে শ্রোতাদেরকে লক্ষ করে বললেন, দেখুন আজ চান্দ্র মাসের একাদশতম রাত। এখন সময় রাত এগারটা বেজে এগার মিনিট আর কুরআনের এগার পারায় এই আয়াত টি আছে যে—
اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ.
এই আয়াতে আল্লাহর ওলীদের প্রশংসা করা হয়েছে। আর বড় পীর সাহেব হলেন পীরানে পীর। কাজেই গিয়ারভী অনুষ্ঠান প্রমাণিত হল। পাঠক সামান্য চিন্তা করলে দেখতে পাবেন যে, কুরআনের উপরোক্ত আয়াতে যেমন রবিউসসানীর এগার তারিখের কোনো প্রসঙ্গ নেই তদ্রূপ ঐদিন বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে ঈসালে সওয়াব করতে হবে তারও কোনো আলামত মাত্র নেই, অথচ এই আয়াত দিয়ে গিয়ারভীর রসম প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা হল। আয়াতটি উদ্ধৃত করার দ্বারা ওয়ায়েজ সাহেব যে এগার সংখ্যার কারিশমা দেখালেন তার উদ্দেশ্য যে সরলপ্রাণ মুসলমানদের চোখে ধুলা দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই বলছিলাম, আমাদের রেজভী ভাইদের খুব শান্ত মনে ভেবে দেখা উচিত যে, এধরনের দলীল আখেরাতের কোন কাজে আসবে কি না এবং এভাবে ছলচাতুরীর করে বিদআতকে প্রতিষ্ঠিত করার যে প্রচেষ্টা তা আখেরাতে কী ফল বয়ে আনবে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন।
[রেজভী উলামা-মাশায়েখ কে লিয়ে লামহায়ে ফিকরিয়া পুস্তিকা থেকে গৃহীত।]
অনুবাদ : আবু তাসনীম