তলাবায়ে কেরামের উদ্দেশে - তহারাত ও নাযাফাত : উদাসীনতার মূল কারণ কি ব্যস্ততা, না অন্য কিছু - ২
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
নখ কাটা
হাত পায়ের নখ কাটাও সুনানুল ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। তালিবে ইলমদের মধ্যে এই সুন্নতের বিষয়েও অবহেলা দেখা যায়। অথচ তা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এবং কোনো কোনো সময় সুন্নতে ওয়াজিবার পর্যায়ে চলে যায়। বড় নখ দেখতে বিশ্রী। যারা দেখেন তাদের কষ্ট হয়। আর তার মাঝে এত বেশি ময়লা জমে থাকে যে, পরিষ্কার করার পরও পুরোপুরি দূর হয় না এবং খাওয়া-দাওয়ার সময় অপরিহার্যভাবে পাকস্থলিতে তা চলে যায়। তাছাড়া বড় নখ তো হিংস্র প্রাণীর বৈশিষ্ট্য। মানুষের নখ কেন বড় থাকবে? যদি মানুষ এটুকু চিন্তাও করে যে, আমি নামাযে আল্লাহর সামনে দাঁড়াচ্ছি। আল্লাহর আদেশে পোশাকের যীনত গ্রহণ করেছি, কিন্তু হাত পায়ের নখ যদি বড় থাকে তাহলে তা কত বিশ্রী দৃশ্যের অবতারণা করবে। আমি মুনাজাতে আল্লাহর সামনে হাত ওঠাচ্ছি, কিন্তু নখের অবস্থা এমন যে, তা না আল্লাহর পছন্দ, না আল্লাহর ফেরেশতাদের, না রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর, না কোনো রুচিশীল মানুষের।
এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমাদের একটি রেওয়ায়েতে আছে, আবু ওয়াসিল বলেন, আমি আবু আইয়ূব রা.-এর সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম। মোসাফাহার সময় তিনি আমার নখ বড় দেখে বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ কেউ আসমানের খবর জিজ্ঞাসা কর, অথচ তার হাতের নখগুলো পাখির নখের মতো, যাতে জমে থাকে ময়লা-আবর্জনা! (মুসনাদে আহমদ; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী)
কেউ কেউ তো মাশাআল্লাহ প্রত্যেক শুক্রবার নিয়মিত নখ কাটে। তবে শুধু জুমার দিন নখ কাটতে হবে শরীয়ত তা নির্ধারণ করে দেয়নি। কারোর নখ তাড়াতাড়ি বড় হতে পারে এবং তাকে সপ্তাহে দু’ বারও কাটতে হতে পারে। মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বায় একটি ঘটনা আছে যে, জনৈক বুযুর্গ বৃহস্পতিবার নখ কাটছিলেন। কেউ তাকে বলল, আগামীকাল জুমার দিন। সেদিন কাটলেই পারতেন। তিনি বললেন, নেক কাজে দেরি করা উচিত নয়।
কারো মনে হতে পারে যে, কোনো কোনো হাদীসে তো চল্লিশ দিনের কথা বলা আছে। অথচ ঐ হাদীসেই স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, চল্লিশ দিন যেন অতিক্রম না করে। উদ্দেশ্য হল, যে ব্যক্তি ফিতরাতের চাহিদা অনুযায়ী আমল করে না এবং নখ ও মোচ এমনভাবে বড় করতে থাকে, যেন সে জংলী হতে চলেছে সেক্ষেত্রে শরীয়তের আইনী বিধান হল, চল্লিশ দিন অতিক্রম করতে পারবে না।
মোচ কাটা
মোচ থাকে মানুষের মুখমণ্ডলে, যা শরীরের সবচেয়ে দৃশ্যমান অংশ এবং যা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সর্বাধিক প্রয়োজনীয়। হাদীসে ‘কাস’ (ছোট করা) ও ‘ইহফা’ (গোড়া থেকে ছাঁটা) দু’টোর কথাই আছে। সকল দলীল বিবেচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, প্রথমটি হল সুন্নতের সর্বনিম্ন পর্যায় আর দ্বিতীয়টির দ্বারা মোকাম্মাল সুন্নত আদায় হয়। সাধারণত তালেবে ইলম ভাইরা প্রথমটিকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন, কিন্তু এত অল্প ছাটেন যে, শুধু ঠোটের লাল রেখাটি বের হয়। আর এটাও হয় দীর্ঘ বিরতির পর। অথচ দ্বিতীয় পদ্ধতি বা ‘ইহফা’কেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আর ‘কাস’-এর পদ্ধতি অনুসরণ করলে অন্তত লক্ষ রাখা উচিত যেন সারা মোচ ছোট করা হয়, মাঝের বিরতিও দীর্ঘ না হয়। তদ্রূপ কীভাবে মোচ ছোট করলে তা অধিক মানানসই হয় এটাও লক্ষ রাখা উচিত। এক্ষেত্রে শুধু নিজের রুচিমাফিক ফয়সালা না করে দ্বীনদার রুচিশীল মানুষের মন্তব্য শোনা উচিত। রুচিশীল মানুষের মাঝে প্রচলিত যওক ও রুচির বাইরে নিজের জন্য কোনো একটি রূপ নির্ধারিত করে এমন মনে করা যে, আমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে-এটা ঠিক নয়।
সর্বশেষ নিবেদন এই যে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে ব্যস্ততার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঐসব কাজের অন্তর্ভুক্ত, যেগুলোর বিষয়ে হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও অবহেলা করা যায় না। সকল বিষয়ে ব্যস্ততার অজুহাত চলে না। আর অধিকাংশ সময়ই মূল কারণ থাকে উদাসীনতা ও স্বভাবের অপরিচ্ছন্নতা। ব্যস্ততার কথাটি একটি অজুহাতমাত্র। এরপরও প্রকৃতপক্ষেই যদি কেউ খুব বেশি ব্যস্ত থাকেন তাহলে ঘরের লোকজন ও আশপাশের সাথীরা তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। এটাও তাকওয়া ও নেক আমলে পরস্পর সহযোগিতার কুরআনী হুকুমের মধ্যে শামিল।
ছোট বাচ্চাদের বিষয়ে অভিভাবকরা দায়িত্বশীল। মায়েদের দেখা যায়, তারা বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়া ও পোশাক-পরিচ্ছদের বিষয়ে সচেতন থাকলেও তাদের অযু, গোসল, মেসওয়াক ও নাযাফাতের দিকে লক্ষ্য রাখেন না। এটা ঠিক নয়। পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি তরবিয়তের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ বিষয়ে অমনোযোগিতা খুবই ক্ষতিকর।
আল্লাহ তাআলা আমাকে, আমার বন্ধুদেরকে ও সকল মুসলমানকে ইসলামী আদবগুলো মনে প্রাণে গ্রহণ করার তাওফীক দান করুন আমীন। ষ
অনুবাদ : মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান