রবিউল আখির ১৪২৮   ||   মে ২০০৭

মোবাইল বিড়ম্বনা

হাবীবা বিনতে আবদুস সামাদ

বাসায় আমি একা থাকি। কোনো সঙ্গীসাথী নেই। এমনকি আশেপাশে এমন কোনো বাসাও নেই যে, দরকারি দুইটি কথা বলব। আমার স্বামী সারাদিনের ব্যস্ততার ভিতরেও মাঝে মাঝে আসেন। তাও অল্পক্ষণের জন্য। এই নিঃসঙ্গতায় আমার যতটুকু কষ্টই হয় তার চেয়েও বেশি কষ্ট হয় আমার অভিভাবকদের। তারা ভাবেন, কীভাবে যে একা থাকে মেয়েটা! আমার জীবনসঙ্গীও কোনো কাজে শান্তি পান না।

চিন্তা করেন, কী জানি কী করছে এখন একা একা? এ ভাবনাতেই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন, আমাকে মোবাইল দেওয়া হবে। আমার খুব আনন্দ হল। সবাই ভাবছেন, আমার একাকিত্ব দূর হবে। আর আমি ভাবছি, এবার বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করা যাবে। খবর শুনে আমার বান্ধবীও খুব খুশি। এখন কোনো মাধ্যম ছাড়াই আমাকে পাওয়া যাবে। কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও যে বিড়ম্বনা আছেতা আমার জানা ছিল না। জানলাম কিছুদিন পরেই। নতুন মোবাইল, রিং আসলেই মনটা চঞ্চল হয়ে ওঠে, দৌঁড়ে যাই। তাড়াতাড়ি ধরি। মন খুলে কথা বলি। এমনিভাবে একদিন রিং বাজল। দৌঁড়ে গেলাম। যেতেই বন্ধ হয়ে গেল। অর্থাৎ মিসড কল। ভাবলাম, পরিচিত কেউ হয়তো আমার নাম্বার জেনে কল দিয়েছে, যার নাম্বার আমি জানি না। সুতরাং ব্যাক করলাম। ওপাশ থেকে বলল, কী ব্যাপার? বললাম, এই নাম্বার থেকে এইমাত্র একটা কল এসেছে। তাই কে দিয়েছে জানার জন্য ফোন করেছি। ওপাশ থেকে জবাব এল, মিসড কল? মোবাইল থাকলে তো মিসড কল আসবেই। লাইন কেটে দিয়ে ভাবলাম, বাহ! মোবাইল থাকলে মিসড কল আসবেই-এটা একটা স্বীকৃত নিয়ম। আর এই নিয়মটাই আমি জানি না। সেজন্য কাউকে মিসড কল দিতেও পারি না। এরপর কয়েকদিন যেতে না যেতেই আরেকটা রিং পেলাম। অপর প্রান্ত থেকে বলল, টাকাতে নাকি আমার নাম্বার লিখে একথাও লিখে দেওয়া হয়েছে যে, এই নাম্বারে ফোন করুন। শুনে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম।

আরেকদিনের ঘটনা। দুপুর বেলা ঘুমানোর সময় একজন ফোন করল। কণ্ঠ শুনে মনে হল বয়স্ক লোক। জিজ্ঞেস করল, এটা কোন জায়গা? উত্তর দিলাম। বললেন, । এরপর একদম নিশ্চুপ। কয়েক মিনিট কেটে গেল। আমিও কোনো কথা না বলে সালাম দিয়ে লাইন কেটে দিলাম। এখনও হাত থেকে মোবাইল রাখিনি আবার ফোন করল। করেই বজ্রকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, আপনি ফোন রাইখা দিলেন ক্যান? আমি চমকে উঠলাম। আমতা আমতা করে বললাম, কেন ভাই। আমি তো সালাম দিয়েই রাখলাম। কিন্তু ওনার বারবার একই প্রশ্ন- আমি ফোন রেখে দিলাম কেন? কী আশ্চর্য! ভয়ও লাগছে আবার রাগও লাগছে। আমার মোবাইল আমি ধরব না ছাড়ব সে ব্যাপারে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে কেন? কিন্তু এ কথা বলতে গিয়ে আবার কোন ফ্যাসাদে পড়ি? তাই চুপ করে রইলাম। কতক্ষণ আর একা একা গজ গজ করা যায়। বাধ্য হয়ে কেটে দিল। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। সেদিন যে কী পরিমাণ ভয় পেয়েছিলাম, তা শুধু আল্লাহ পাকই জানেন।

আসলে শুধু মোবাইলই নয়, সমাজের সব জায়গাতেই আজ একই চিত্র। আর তার কারণও একটাই। তা হচ্ছে আমরা ইসলামের স্বচ্ছ, সুন্দর, মহান আদর্শ থেকে দিন দিন দূরে সরে যাচ্ছি। আজকে যদি আমাদের এই সমাজ ইসলামের সাজে সজ্জিত হত তাহলে আমাদেরকে এই বিড়ম্বনা পোহাতে হত না। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দিন। আমীন।

 

 

advertisement