রবিউল আখির ১৪২৮   ||   মে ২০০৭

উত্তম সম্ভাষণ কোনটি

মাহমুদাতুর রহমান

একদিন আমার বাসায় একজন সম্ভ্রান্ত মহিলা এলেন। তঁ^ার সাথে চার বছর বয়সের একটি কন্যাশিশু । কথা-বার্তা বলে উঠে যাওয়ার সময় মা বাচ্চাটিকে বললেন, মনি! আন্টিকে টা টা দাও তো। বাচ্চাটি তার মায়ের কথামতো হাত নেড়ে নেড়ে বলতে লাগল, টা টা, টা টা! আমি অবাক হয়ে গেলাম। একজন মুসলিম গৃহিনী তাঁর সন্তানকে সালামের পরিবর্তে টা টা শেখাচ্ছেন। এটা ছিল প্রথম। এরপর আরও চার পাঁচ জন শিশুর কাছ থেকে একই ধরনের সম্ভাষণ পেয়েছি। সবাই তারা মুসলিম ঘরের সন্তান। তাদের মা বাবা তাদেরকে এসব শিখিয়ে আধুনিকতার সিঁড়িতে একধাপ এগিয়ে দিতে পেরেছেন বলে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। অথচ সালাম ইসলামের প্রতীকসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা মানে নিজের  ইসলামী পরিচয়টাকে বাঁচিয়ে রাখা। এমনিতেই আমরা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের স্বকীয়তাকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন যদি এই প্রতীকগুলোও হারিয়ে যায় তবে মুসলমান বলে পরিচয় দেওয়ার আর কীই বা বাকী থাকবে। কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর সম্মান করে তা তার অন্তরের তাকওয়াপ্রসূত। অর্থাৎ তা তার আন্তরিক তাক্বওয়া ও খোদাভীতির স্বাক্ষর বহনকারী।  আমাদের কি একটু ভেবে দেখা দরকার নয় যে, আমরা যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের জীবন থেকে ইসলামের এসব শাআয়ের তথা প্রতীকসমূহকে দূরে ঠেলে দিচ্ছি এবং পরবর্তী প্রজন্মকেও তাই শেখাচ্ছি তাদের অন্তরে কি বাস্তবিক অর্থেই তাক্বওয়া বা খোদাভীতির কোনো স্থান থাকছে?

আরেকটি বিষয়ও আমাদের ভেবে দেখা দরকার যে, আধুনিকতার  মোহে পড়ে যেসব আচার-আচরণকে আমরা সাদরে বরণ করে নিচ্ছি এবং প্রাচীন ও সেকেলে বলে যেগুলোকে বর্জন করছি তুলনামূলক বিবেচনায় এর মধ্যে কোনটি শ্রেষ্ঠ ও মার্জিত। টা টার আভিধানিক অর্থ, চলি, আসি বা বিদায়। এতে মর্মগত কোনো গভীরতা নেই। অন্যদিকে সালামে রয়েছে সামাজিক সৌজন্য, সম্প্রীতি ও শুভকামনার গভীর মর্মস্পর্শী ব্যাঞ্ছনা । সালামের বাক্য হল আসসালামু আলাইকুম অর্থাৎ  তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু  এবং বর্ষিত হোক তাঁর করুণা ও কল্যাণ। কত চমৎকারভাবে শুভকামনার ভাষায় সম্ভাষণ জানানো হচ্ছে ! পৃথিবীর কোনো ভাষায় কোনো সমাজে এর কি কোনো তুলনা আছে? আর এতে যে শুধু সামাজিক সৌজন্যই প্রকাশ পায় তা নয়, বরং আল্লাহ পাক এতে সওয়াবের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে  কেবল আসসালামু আলাইকুম বলে সালাম দেবে সে  দশ নেকী পাবে, আর যে ওয়ারাহমাতুল্লাহ বলবে সে বিশ নেকী পাবে, আর যে ওয়াবারাকাতুহু পর্যন্ত বলবে সে ত্রিশ নেকী পাবে। -তিরমিযী

জাগতিক, পারলৌকিক সবদিক দিয়ে এত সুন্দর বিধান নিজেদের কাছে থাকতে কেন আমরা বিজাতীয়  সংস্কৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করতে যাব এবং বুকের মানিকদেরকেও তাতে অভ্যস্ত করবসম্মানিতা মায়েদের প্রতি অনুরোধ, আসুন আমরা আমাদের সন্তানদের ইসলামী আদব-কায়দায় অভ্যস্ত করে তুলি। তাদের অন্তরে ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের  প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসতে শেখাই। হতে পারে আমাদের কাছ থেকে পাওয়া এই শিক্ষার আলোকেই তারা  ভবিষ্যতে আরও লক্ষ জনের আলোর দিশারী হবে এবং পরকালে আমাদের মুক্তির উসীলা ও নাজাতের জরীয়া হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন।  (আমীন)

 

 

advertisement