তাঁদের প্রিয় কিতাব (২য় কিস্তি)
চিন্তা ভাবনার পর মনে হল ‘প্রিয় কিতাব’ এর প্রতিশ্রম্নত আলোচনা আমার উস্তাদগণের মাধ্যমে শুরু করে উপরের দিকে যাই। অবশ্য কখনো এই বিন্যাসের ব্যতিক্রমও হতে পারে, তখন বিশেষ কোনো বিন্যাস ছাড়া স্মৃতিতে যা আসে, তাই তালেবে ইলম ভাইদের সামনে পেশ করব এবং সবশেষে বর্তমান সময়ের বর্ষীয়ান ও সচেতন আলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের প্রিয় কিতাবগুলোর কথাও তালিবে ইলম ভাইদেরকে জানাতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন এবং কবূল করুন।
মাওলানা মুহা. তক্বী উসমানী
উস্তাদে মুহতারাম হযরত মাওলানা তক্বী উসমানী দামাত বারকাতুহুম মাসিক আল বালাগ করাচীর ‘গ্রন্থ পরিচিতি’ বিভাগে বিভিন্ন কিতাবের উপর আলোচনা করেছেন। তার সে আলোচনাগুলো গ্রন্থাকারে ‘তাবছেরে’ নামে প্রকাশিত হয়েছে। কিতাবটি দেখেই ইচ্ছা হল এ প্রবন্ধটির সূচনা হযরত মাওলানার প্রিয় কিতাবগুলো দিয়েই করি।
মাওলানার ‘উলূমুল কুরআন’ কিতাবটি তালিবে ইলম ভাইদের প্রায় সকলেরই সংগ্রহে রয়েছে। আমার মতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত কোনো তালিবে ইলমই এই কিতাবের অধ্যয়ন থেকে বঞ্চিত থাকা উচিত নয়।
উলূমুল কুরআনে তাফসীর গ্রন্থের আলোচনায় মাওলানা লিখেছেন, ‘যে তাফসীরগ্রন্থগুলো বর্তমানে সহজলভ্য শুধু তার আলোচনা করতে গেলেও একটি স্বতন্ত্র কিতাব লিখতে হবে। আমি এখানে সংক্ষেপে এমন কিছু তাফসীর-গ্রন্থের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করতে চাই, যেগুলোর অনুগ্রহ আমার পক্ষে ভোলা সম্ভব নয় এবং আমার মনে হয়েছে যে, সালাফে সালেহীনের কুরআনী ইলমের সারনির্যাস এই গ্রন্থগুলোতে এসে গেছে।
যখনই কোনো আয়াতের তাফসীরের ব্যাপারে আমার মনে কোনো প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে তখন আমি সর্বপ্রথম এই গ্রন্থগুলোরই শরণাপন্ন হয়েছি। আমরা যারা সুদীর্ঘ তাফসীর-গ্রন্থগুলো নিয়মিত অধ্যয়ন করতে পারি না, তাদের জন্য এ গ্রন্থগুলোই যথেষ্ট হতে পারে বলে আমি মনে করি।
১. এগুলোর মধ্যে যে কিতাবটির নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য তা হল, তাফসীরে ইবনে কাসীর। হাফিয ইমাদুদ্দীন আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে উমর ইবনে কাসীর আশশাফেয়ী (মৃত্যু ৭৭৪ হিঃ) এ গ্রন্থের রচয়িতা। একে তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী এর সারসংক্ষেপ বলাই সংগত, যা রিওয়ায়াত ভিত্তিক তাফসীরের একটি মৌলিক গ্রন্থ। এর বৈশিষ্ট্য হল, গ্রন্থকার বহু জয়ীফ ও মওজু রেওয়ায়াত তার কিতাবে পরিহার করেছেন। এরপরও যে সব দুর্বল রেওয়ায়াত উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোর সনদের সমস্যা ও দুর্বলতার দিক সাধারণত তিনি চিহ্নিত করেছেন। ইসরাইলী বর্ণনাসমূহের ব্যাপারে তার নীতি অত্যন্ত সংযত, পরিচ্ছন্ন ও খালেস সুন্নাহ ভিত্তিক। এ জন্য একেতো তার রচনায় ইসরাইলী বর্ণনা বেশি উল্লে—খিত হয়নি এরপর যা—ও প্রসঙ্গত উল্লেখ করেছেন তার সঙ্গে সাধারণত একথাও বলে দিয়েছেন যে, এটি ইসরাইলী বর্ণনা।
মোটকথা, রেওয়ায়াতের বিচারে এটা সবচেয়ে অগ্রগণ্য ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ। তবে এর অর্থ এই নয় যে, এ তাফসীরে উল্লেখিত সকল রেওয়ায়াতই সহীহ। কেননা, কোথাও কোথাও হাফিয ইবনে কাসীর রাহ.ও কিছু জয়ীফ রেওয়ায়াত কোনো মন্তব্য ছাড়াই উল্লেখ করেছেন।
২. দ্বিতীয় গ্রন্থ তাফসীরে কাবীর। এর আসল নাম ‘মাফাতীহুল গাইব’। এর রচয়িতা ইমাম ফখরুদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনে উমার আররাযী ইবনুল খাতীব (মৃত্যু ৬০৬ হি.)। রিওয়ায়াতের বিচারে তাফসীরে ইবনে কাসীর যেমন অতুলনীয়, দিরায়াতের বিচারে তেমনি তাফসীরে কাবীর। এই কিতাবের ছয়টি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে হযরত মাওলানা লেখেন,
‘মোটকথা, তাফসীরে কাবীর নানা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী একটি গ্রন্থ। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, কুরআন বোঝার ব্যাপারে আমি যখনই কোনো জটিলতার সম্মুখীন হয়েছি, তাফসীরে কাবীর আমাকে রাহনুমায়ী করেছে। সাধারণত পাঠক এর দীর্ঘ আলোচনা দেখে ঘাবড়ে যায়, কিন্তু আলোচনার দীর্ঘতা কিতাবটির প্রথম দিকেই বেশি। কিছুদূর যাওয়ার পর এটা কমে এসেছে। এই কিতাব অধ্যয়নে থাকলে ইলম ও মা’রিফাতের দুষ্প্রাপ্য মণি—মুক্তা হাতে আসে।
তবে এ কিতাবের ব্যাপারে কিছু কথা মনে রাখা কর্তব্য।
১. ইমাম রাযী সূরা ফাতহ পর্যন্ত তাফসীর লিখে ইন্তেকাল করেন। বাকী অংশ অপর একজন আলিম—কাযী শিহাবুদ্দীন ইবনে খলীল আদদিমাশকী (মৃত্যু ৬৩৯হিঃ) কিংবা শাইখ নাজমুদ্দীন আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ (মৃত্যু ৭৭৭ হিঃ) পূর্ণ করেন। প্রশংসনীয় ব্যাপার হল, ইনি ইমাম রাযী রা. এর রচনাভঙ্গি এমন অনুসরণ করেছেন যে, উপরোক্ত তথ্য জানা না থাকলে অনুমান করাও কঠিন যে, এ অংশটি অন্য কারো রচনা।
২. অন্যান্য তাফসীর-গ্রন্থের মতো তাফসীরে কাবীরেও নানা শ্রেণীর রেওয়ায়াত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
৩. অল্প কিছু জায়গায় ইমাম রাযী রাহ. মশহুর মুফাসসিরীন থেকে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। যেমন
لَمْ يَكْذِبْ إِبْرَاهِيمُ إِلَّا ثَلَاثَ كَذِبَاتٍ.
এই সহীহ হাদীসটিকে সহীহ নয় বলে মত প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষেত্রগুলোতে জুমহুরের মতকে গ্রহণ করা উচিত।
তাফসীরে আবুছ ছাউদ
এ তাফসীরের পুরা নাম ‘ইরশাদুল আকলিছ ছালীম ইলা মাযায়াল কুরআনিল কারীম’। এটা কাযী আবুছ ছাউদ মুহাম্মাদ ইবনে মুহাম্মদ আলহানাফী (মৃত্যু ৯৫১ হিঃ) এর রচনা। নিঃসন্দেহ এ কিতাব তার ইলমের গভীরতা, চিন্তার সূক্ষ্মতা এবং কুরআন ভাবনার উজ্জ্বল দলীল। কিতাবটি সর্বমোট পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী আঙ্গিকে ও সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে কুরআনের তাফসীর পেশ করা হয়েছে। এ কিতাবের একটি উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্য হল এতে কুরআনের বাক্য ও আয়াতসমূহের পারস্পরিক মিল এবং বালাগাত সংক্রান্ত অত্যন্ত মূল্যবান আলোচনা বিদ্যমান রয়েছে, যার দ্বারা কুরআনের মর্ম অনুধাবন করা সহজ হয় এবং কুরআনের মু’জিযানা বর্ণনাভঙ্গি উপলব্ধি হতে থাকে।
তাফসীরে কুরতুবী
এ গ্রন্থের পুরা নাম ‘আলজামি লি-আহকামিল কুরআন’। আন্দালুসের প্রসিদ্ধ গবেষক আলিম আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আহমদ আলকুরতুবী (মৃত্যু ৬৭১ হিঃ)—এর রচনা। তিনি মালেকী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। এ কিতাবের বিষয়বস্তু হল কুরআনে কারীম থেকে ফিকহী আহকাম ও মাসাইল ইস্তিমবাত করা। কিন্তু এর মধ্যে তিনি আয়াতের মর্মার্থ, কঠিন শব্দের ব্যাখ্যা, ই’রাব, বালাগাত ও সংশিষ্ট রেওয়ায়াত ইত্যাদি বিষয়েও প্রচুর তথ্য পেশ করেছেন। বিশেষত দৈনন্দিন জীবনের উপযোগী যে নির্দেশনা কুরআন থেকে পাওয়া যায় সেগুলোও তিনি খুব ভালোভাবে উপস্থিত করেছেন। এ কিতাবের ভূমিকাটিও বেশ বিস্তারিত এবং উলূমুল কুরআনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সমৃদ্ধ। বার খণ্ডে সম্পূর্ণ তাফসীর—গ্রন্থটি অনেকবার মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে।
রূহুল মা‘আনী
এর পূর্ণ নাম হল ‘রূহুল মা‘আনী ফী তাফসীরিল কুরআনিল আজীম ওয়াছ ছাবইল মাছানী’। ৩০ খণ্ডে সমাপ্ত এই তাফসীর—গ্রন্থের রচয়িতা হলেন বাগদাদের প্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা মাহমূদ আলুছী হানাফী রহ. (মৃত্যু: ১২৭০ হি.) এটি যেহেতু পরবর্তী যুগের রচনা, তাই রচয়িত পূর্ববর্তী তাফসীর-গ্রন্থগুলোর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাকে তার রচনায় সন্নিবেশিত করেছেন। তাই এ গ্রন্থে লুগাত, নাহব, আদব, বালাগাত, ফিকহ, আকাইদ, কালাম, ফালসাফা, হাইয়াত, তাসাওউফ এবং সংশ্লিষ্ট রেওয়ায়াতগুলোর উপরও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং আয়াতের সঙ্গে সংশিষ্ট কোনো দিক যেন অনালোচিত না থাকে এ চেষ্টা করেছেন। হাদীস শরীফের বর্ণনার ব্যাপারেও আল্লামা আলুছী অন্য অনেক তাফসীরকারদের তুলনায় সতর্ক। এ সব দিক বিবেচনায় এ গ্রন্থটিকে পূর্ববর্তী গ্রন্থাদির সার নির্যাস বলা যেতে পারে। বর্তমানে তাফসীরে কুরআন বিষয়ক কোনো কাজ এই কিতাবের সাহায্য থেকে অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। অধম তার নাচীজ যওক অনুসারে এই পাঁচটি গ্রন্থ নির্বাচন করেছি। পরে আমার মাখদুম বুযুর্গ হযরত মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ ইউসুফ বানূরী সাহেব এর একটি প্রবন্ধে হুবহু এই কথাটিই পাওয়া গেল। ওয়ালহামদুলিল্লাহ।
তিনি তার মূল্যবান প্রবন্ধ ‘ইয়াতীমাতুল বয়ান’—এ লেখেন, ‘যেহেতু জীবনের সময় অল্প, ঝামেলা অনেক এবং এ যুগে হিম্মত ও সংকল্প দুর্বল... তাই আমি তালিবে ইলম ভাইদেরকে এমন চারটি তাফসীরগ্রন্থের কথা বলতে চাই যেগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে ইনশাআল্লাহ প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হবে।
এক. তাফসীরে ইবনে কাসীর, যার ব্যাপারে আমাদের উস্তাদ আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলতেন, কোনো কিতাব যদি অন্য কোনো কিতাবের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে তাহলে বলা যায় যে, তাফসীরে ইবনে কাসীর তাফসীরে ইবনে জারীরের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে।
দুই. তাফসীরে কাবীর, যার ব্যাপারে আমাদের উস্তাদ বলতেন, কুরআনে কারীম বোঝার ক্ষেত্রে আমি যে জটিলতারই সম্মুখীন হয়েছি, দেখেছি ইমাম রাযী সে সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। হয়তো সর্বক্ষেত্রে এমন সুরাহা পেশ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি যা অন্তর প্রশান্তির সঙ্গে গ্রহণ করে কিন্তু এটা তো ভিন্ন ব্যাপার। তার এ গ্রন্থের ব্যাপারে যে কথাটি প্রসিদ্ধ আছে যে,
فيه كل شيء إلا التفسير
এটা হল অযথা এর মর্যাদাকে খাটো করা।
তিন. তাফসীরে রূহুল মা‘আনী, আমার মতে কুরআন ব্যখ্যার ক্ষেত্রে এ গ্রন্থটি তেমনি, যেমন সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যার জন্য ফাতহুল বারী।
চার. তাফসীরে আবুছ ছাউদ। এ গ্রন্থে কুরআনের অপূর্ব বিন্যাস চমৎকার ভাষায় উপস্থাপনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এটি যমখশরীর তাফসীরে কাশশাফ এর প্রয়োজন পূরণ করে।’
উপরোক্ত আলোচনায় তাফসীরে কুরতুবী ছাড়া অন্য চার কিতাবের ব্যাপারে ওই বৈশিষ্ট্যই উল্লেখিত হয়েছে, যা অধমের চিন্তায় এসেছিল। হযরত শাহ সাহেব ও তার বিশিষ্ট শাগরিদ হযরত বানূরী এর সঙ্গে এই চিন্তাগত মিলের কারণে আমি আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করছি।
উপরোক্ত আলোচনা আরবী তাফসীর গ্রন্থসমূহের ব্যাপারে ছিল। উর্দুভাষায় হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রা. এর তাফসীরে ‘বয়ানুল কুরআন’ এক অতুলনীয় তাফসীরগ্রন্থ। এর যথার্থ মূল্য তখনই বুঝে আসবে যখন মানুষ দীর্ঘ তাফসীরগ্রন্থসমূহ অধ্যয়নের পর এ কিতাবের শরণাপন্ন হবে। তবে কিতাবের উপস্থাপনা শাস্ত্রীয় হওয়ায় এবং পারিভাষিক শব্দাবলির ব্যবহার থাকায় সাধারণ উর্দূ পাঠকদের জন্য এটা বোঝা কঠিন। এই প্রয়োজনের দিকে লক্ষ করে অধমের সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ‘মাআরিফুল কুরআন’ নামে আট খণ্ডে একটি বিশদ তাফসীরগ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে একদিকে যেমন বয়ানুল কুরআনের আলোচনা সহজভাবে উপস্থাপিত হয়েছে অন্যদিকে বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রার নানা অঙ্গনে কুরআনী নির্দেশনাকেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পাশাপাশি আধুনিক সভ্যতার বিভিন্ন অনুষঙ্গকে কুরআনী নীতির আলোকে পর্যালোচনা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত উর্দূ ভাষায় যত তাফসীর এসেছে তার মধ্যে এটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এতে সালফে সালেহীনের মাসলাক—মাশরারেব পূর্ণ হিফাযাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনসমূহ সবচেয়ে সুন্দর পন্থায় পূরণ করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, এই তাফসীর সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে এবং এর মাধ্যম প্রভূত উপকার সাধিত হচ্ছে। —উলূমুল কুরআন ৫০০—৫০৮
হযরত মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মাদ ইউসুফ বানূরী রহ.—এর আলোচনার একটি অংশ উস্তাদে মুহতারামের উদ্ধৃতিতে উল্লেখিত হয়েছে। উক্ত আলোচনার শেষ অংশটুকুও এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছুটা সংযোজনসহ উল্লেখ করে দিচ্ছি।
বানূরী রাহ. উক্ত চার কিতাবের আলোচনার পর আরও চারটি কিতাবের কথা বলেছেন।
১. তাফসীরে জাওয়াহিরুল কুরআন, শাইখ জাওয়াহিরী ত্বানত্বাবী।
আল্লাহ তাআলার কুদরত বিষয়ক আয়াতগুলোর ব্যাপারে আধুনিক বিজ্ঞানের তথ্যাদি জানার জন্য এ কিতাব উপকারী। তবে রেওয়ায়াতের তাহকীকের ব্যাপারে এ কিতাবের উপর নির্ভর করা যায় না। এবং আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যাদি আয়াতের সঙ্গে মেলানোর যে স্বীকৃত নীতিমালা রয়েছে সেদিকেও লক্ষ রাখা এ কিতাব থেকে উপকৃত হওয়ার প্রধান শর্ত।
২. তাফসীরুল মানার, রশীদ রেযা মিছরী (বারো খণ্ডে সূরা ইউসুফ পর্যন্ত যুগোপযোগী (ও স্বাভাবিক) পন্থায় কুরআনের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে এ কিতাব উপকারী। তবে মনে রাখতে হবে যে, কিছু ক্ষেত্রে লেখক আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুল ধারা থেকে বিচ্যুত হয়েছেন এবং আরও কিছু জায়গায় তার উপস্থাপনা ভঙ্গি এমন যা পাঠককে বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে, যাদের স্বচ্ছ দ্বীনী ও ইলমী রুচি নেই।
৩. গারাইবুল ফুরকান, নিযামুদ্দীন হাসান নিশাপুরী (মৃত্যু : ৭২৮ হি.) এটি কিছু প্রয়োজনীয় সংযুক্তিসহ তাফসীরে কাবীরেরই সারসংক্ষেপ। উপরোক্ত সবগুলো তাফসীর অধ্যয়নের সুযোগ যাদের নেই তারা গারাইবুল কুরআন ও তাফসীরে অবুছ ছাউদ পড়তে পারেন। ব্যস্ত মানুষের জন্য কুরআনী মর্ম হৃদয়ঙ্গম করার জন্য এ দুই তাফসীর যথেষ্ট হতে পারে।
৪. কেউ যদি শুধু একটি তাফসীর পড়তে চান তাহলে বড় তাফসীরে আগ্রহী হলে তাফসীর রূহুল মাআনী উত্তম। আর ছোট তাফসীর পড়তে চাইলে আব্দুর রহমান ছা’আলবী আলজাযাইরী কৃত ‘তাফসীরুল জাওয়াহিরিল হিসান’ উপকারী হবে। যা তাফসীরে ইবনে আতিয়্যার চমৎকার সারসংক্ষেপ হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শাস্ত্রের একশত কিতাব অধ্যয়ন করে অনেক মূল্যবান বিষয় এতে সংযোজন করেছেন।
৫. উর্দূ ভাষায় কুরআনী মর্ম হৃদয়ঙ্গম করার জন্য হযরত শাইখুল হিন্দ রাহ. ও মাওলানা শাব্বীর আহমদ উসমানী রাহ. এর তাফসীরী টীকাগুলো অধ্যয়ন করা উচিত। আরবী গ্রন্থাদি এই কিতাবের প্রয়োজন পূরণ করে না। (ইয়াতীমাতুল বয়ান)
উপরোক্ত কিতাবগুলো সবগুলোই মুদ্রিত। তবে কিছু কিতাব একেবারে সহজলভ্য না হলেও একদম দুর্লভও নয়।
উস্তাদে মুহাতারামের অন্যান্য প্রিয় কিতাবের আলোচনা আগামী সংখ্যায় করব ইনশাআল্লাহ।