মুসলিম-সমাজে থার্টি ফার্স্ট নাইট!
আমরা অতি শীঘ্র ২০১১ তে পদার্পণ করতে যাচ্ছি। অর্থাৎ আমাদের জীবন থেকে পূর্ণ একটি বছর বিদায় নিল। নতুন বছরকে নতুন চেতনায় গ্রহণ করতে হলে মুহাসাবা ও আত্মসমালোচনার কোনো বিকল্প নেই। অথচ এই সময় আত্মসমালোচনার পরিবর্তে আত্মবিস্মৃতির দৃষ্টান্তই প্রকটভাবে দেখা যায়।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে দেশের শহর-নগরগুলোতে জমে ওঠে উদ্দাম নাচ-গানের আসর। আমাদের মিডিয়া একে আদর করে বলে ‘তারণ্যের উন্মাদনা’। যেন তরুণ মাত্রেরই উন্মাদ হওয়া অপরিহার্য।
এই উন্মাদনা এতটাই বাঁধভাঙ্গা রূপ ধারণ করে যে, রীতিমতো আইন্তশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। দৈনিক যুগান্তরের ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ সংখ্যায় এ সংক্রান্ত রিপোর্টের শিরোনাম ছিল-‘থার্টি ফার্স্ট নাইট : মাঠে ১২ হাজার নিরাপত্তাকর্মী’। তাতে বলা হয়, ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটকে সামনে রেখে রাজধানীতে দূর্ভেদ্য নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলছে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশ। এ রাতে উৎসবের নামে বেসামাল হয়ে পড়লেই জনসমাগমে ‘জলকামান’ থেকে ছিটিয়ে দেওয়া হবে হিমশীতল পানি। ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স র্যাবের পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। রাজধানীতেই থাকবেন দুই হাজার র্যাব সদস্য। প্রকাশ্যে মাতলামী করলেই অ্যাকশনে যাবে র্যাব। ক্লাব ও নামীদামী তারকা হোটেলগুলোতে অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশ সবধরনের উন্মাদনা ঠেকাতে ব্যাপক প্রস'তি নিয়েছে।’
এই উচ্ছৃঙ্খল পশ্চিমা কালচার বিগত দেড় দশক যাবত বাংলাদেশে চর্চিত হচ্ছে। এদেশের ঈমানদার নাগরিকদের জন্য এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে?
মুসিলম পিতামাতার সন্তানরা এ রাতে ভেসে যায় আল্লাহর নাফরমানীর সয়লাবে। সর্বত্র ছেলেমেয়ের অবাধ মেলামেশা প্রকট রূপ ধারণ করে। তরুণ-তরুণীরা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়, রেস্তোরাঁ, পার্ক-উদ্যান, নাইট ক্লাব ইত্যাদিতে। বহু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে থাকে। গত কয়েক বছর আগে রাজধানী ঢাকার এক উদ্যানে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনার কথা তখন পত্র-পত্রিকায় প্রধান শিরোনাম হয়েছিল।
নাইট ক্লাব ও ‘অভিজাত’ হোটেলগুলোতে বসে মদের আসর। তরুণ-তরুণীদের প্রলুব্ধ করার জন্য থাকে নানা রকম আয়োজন। ফলে নারী ও মদে পঙ্কিল হয়ে ওঠে বছরের প্রথম দিনরাত্রিগুলো।
দৈনিক যুগান্তরের ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ সংখ্যায় একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে-‘এ রাতে হোটেল সোনারগাও, শেরাটন, ঢাকা রিজেন্সি, রেডিসন ও হোটেল পূর্বাণীতে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব ও থ্রি স্টার হোটেলেও তরুণ-তরুণীদের দেওয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় অফার। এসব অনুষ্ঠানে পানীয় ছাড়াও রাখা হয়েছে নানা আয়োজন। ইতিমধ্যেই এসব অনুষ্ঠানের টিকিট শেষ হয়ে গেছে।’
বলাবাহুল্য, পাপাচার ও নাফরমানির মধ্য দিয়ে যে বছরের সূচনা তা জাতির জীবনে কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা খুব সহজেই অনুমেয়।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ও বুদ্ধিজীবী সমপ্রদায়
এই নোংরা কালচারটি আমদানী করেছেন এদেশেরই কিছু বুদ্ধিজীবী। এরা একটি শালীন সমাজের বুনিয়াদ গড়ার পরিবর্তে অশ্লীলতার ভাগাড় সৃষ্টি করতেই উৎসাহী। এরা একদিকে পহেলা বৈশাখের মাহাত্ম্য প্রচার করেন অন্যদিকে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদযাপনের উসকানী দিয়ে থাকেন। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, তারাই আবার যুবশ্রেণীকে উপদেশ দেন্ত‘মাদক, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতনকে না বলুন’।
প্রশ্ন এই যে, উচ্ছৃঙ্খলা ও পাপাচারের অসংখ্য উপলক্ষ তৈরি করে মাদক, সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতন বন্ধ করা কি কোনোভাবেই সম্ভব?
একজন সাধারণ রুচিশীল মানুষও থার্টি ফার্স্ট নাইটের এই নোংরামি সমর্থন করতে পারেন না। এই ধরনের পাপাচার বন্ধ করতে সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের অবশ্যকর্তব্য। আর একটি মুসলিম দেশের অভিভাবক হিসেবে দেশের সরকারের কর্তব্য এই ধরনের চরিত্রবিধ্বংসী বিজাতীয় উৎসব কঠোরহস্তে দমন করা।