দশদিক
একেই বলে জুয়া!
মানুষকে যখন মত্ততায় পেয়ে বসে তখন তার ধ্বংস অনিবার্য। ভোগমত্ততা, ক্ষমতার মদমত্ততা এবং অর্থ ও মুনাফার লালসা মানুষকে অমানুষ বানিয়ে ছাড়ে। তার বিচার—বিবেচনাবোধ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং অনুভূতিগুলো বিকল হয়ে পড়ে। মানুষ তখন নিজ হাতে নিজের জন্য ও পরিবার—পরিজনের জন্য ধ্বংস—গহ্বর খনন করে। এর বিস্তর দৃষ্টান্ত চারপাশে ছড়িয়ে আছে। নতুন একটি দৃষ্টান্ত দেখা গেল গত ৫ মার্চ দৈনিক আমার দেশ—প্রকাশিত এক সংবাদে। সংবাদটির সারসংক্ষেপ হল, পাকিস্তানের হায়দারাবাদে এক পিতা জুয়াখেলায় বাজি ধরেছিল তার আপন শিশু কন্যাকে। পিতা মারা গেছে বহুদিন। সেদিনের শিশু রাশিদা সুলতানা আজ ষোড়শী। পনের বছর আগে বাজি—জেতা পিতার বন্ধুটি এসে এখন মেয়েটির উপর তার অধিকার দাবি করছে। স্বেচ্ছায় সমর্পণ না করা হলে তাকে অপহরণ করা হবে—এই হুমকির মাঝে মেয়েটির দিন কাটছে। মেয়েটির অভিব্যক্তি হল, আমার যখন দশ বছর বয়স তখন আমি এই ঘটনার কথা মা’র কাছ থেকে জানতে পারি, কিন্তু আমি তখন বিশ্বাসই করতে পারিনি, আমার মৃত পিতা এমন একটি পাপ করতে পারেন।
সরলপ্রাণ কিশোরীটি তখন বিশ্বাস করতে না পারলেও এখন তাকে এই অসহনীয় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। বস্তুত পাপের নেশা এমনই হয়ে থাকে। এই নেশা কাটাতে না পারলে মানুষের ধ্বংস ও লাঞ্ছনা অনিবার্য।
পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় মদ ও জুয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। সূরা মায়িদার ৯০—৯১ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, নিঃসন্দেহে মদ, জুয়া ও ভাগ্য গণনায় তার অপবিত্র শয়তানী কাজ। তোমরা তা থেকে বিরত থাক। তাহলে তোমরা সফল হবে। শয়তান চায় মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে হিংসা—বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে বিরত রাখতে। অতএব তোমরা কি তা থেকে নিবৃত্ত হবে?’
হাদীস শরীফে জুয়ার পুরো প্রক্রিয়া এবং জুয়ার কাজে ব্যবহৃত সকল জিনিসকে পাপাচার ও শয়তানের অস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই পাপ কতদূর পর্যন্ত তার থাবা বিস্তার করতে পারে তার একটি সামান্য দৃষ্টান্ত উপরোক্ত ঘটনায় দেখা গেল।
এ ধরনের, বরং এর চেয়েও জঘন্য ঘটনা জুয়া ভিত্তিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে ঘটছে। আধুনিক ‘সভ্য’ সমাজেও এই নিকৃষ্ট কর্মটির ব্যাপক বিস্তার লক্ষ করা যায়। জুয়া ভিত্তিক কর্মকাণ্ডকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়াও এই সভ্যতারই অবদান। সীমাহীন অর্থলিপ্সা এবং বিনাশ্রমে অন্যের পয়সা হাতিয়ে নেওয়ার জঘন্য মানসিকতাই হল জুয়া ভিত্তিক কর্মকাণ্ডের মূল প্রেরণা। বীমা সিস্টেম, ফিউচারস জাতীয় আধুনিক ব্যবসায় পদ্ধতি উপরোক্ত প্রেরণা থেকেই তার প্রাণ—রস আহরণ করে থাকে। জীবন ও সমাজের কল্যানের স্বার্থেই জুয়া ভিত্তিক সকল কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত।
গরীবের পয়সা মেরে এনজিও কর্মকর্তার পলায়ন
বাংলাদেশে এনজিওর সংখ্যা কত তার প্রকৃত পরিসংখ্যান সম্ভবত অজানা। দরিদ্র অঞ্চল হওয়ায় এ দেশটি এনজিওগুলোর সফল ব্যবসাক্ষেত্র। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে উচ্চ সুদে ঋণদানের মাধ্যমে তারা এ দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। এরপর এই টাকার বিনিয়োগ থেকেও আসছে বহু অর্থ। ফলে এই সব সুদী মহাজনদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেও দরিদ্র জনগোষ্ঠী যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেছে। এরপর এনজিও কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনৈতিকতার নানা চিত্র মাঝে মাঝে ফাঁক ফোঁকর গলে পত্রিকার পাতায় প্রকাশ পেতে দেখা যায়। এমনই এক দুর্নীতির খবর দেখা গেল ৭মার্চ দৈনিক আমার দেশ—এ। বাগেরহাটের শরণখোলায় রিক নামক একটি এনজিওর এক কর্মকর্তা ঋণের কিস্তির ৫০ হাজার টাকা আদায় করে উধাও হয়েছে। ঘটনাটি জানাজানি হলে ভুক্তভোগীরা সংস্থার রায়েন্দা অফিসে এসে ভিড় করেন। জানা গেছে, শারণখোলার রিক—ম্যানেজার থানায় জিডি করেছেন।
উক্ত দুর্নীতিবাজ এনজিও কর্মকর্তা পাকড়াও হবে কি না এবং আদৌ তার শাস্তি হবে কি না তা আমাদের জানা নেই। তবে এটা ঠিক যে, এভাবে বছরের পর বছর ধরে দরিদ্র অসহায় শ্রেণীর পয়সা মেরে এবং তাদের শ্রান্ত দেহের রক্ত শোষন করেই গড়ে উঠেছে এসব দুর্নীতিবাজ ও সুদী মহাজনদের ভোগের রাজপ্রাসাদ। দুঃখী মানুষের তপ্ত নিঃশ্বাসে এ প্রাসাদ একদিন ধ্বসে পড়বেই।
লোভে পাপ, পাপে ...
প্রতারকদের নাকি মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকে। কেননা, প্রতারণার ছলাকলা উদ্ভাবনে এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই একথা সহজেই বলা যায় যে, মনস্তত্ত ও সৃজনশীলতা এ দুয়ের সমন্বয়ে প্রতারণা—শিল্প পূর্ণতা লাভ করে। আধুনিক সভ্যতায় এ শিল্পের চাহিদা ও ব্যবহার ব্যাপক। অবশ্য, এই ব্যাপকতার আরেকটি কারণ হল, কাচা মালের সহজলভ্যতা। এ জন্য দেখা যায় এ শিল্পের শিল্পমানহীন অনেক পণ্যও দেদারছে চলছে। গত ১৮/০২/০৭ এর দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এ রকম একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ‘জিনের বাদশা’ খ্যাত এক ব্যক্তি হল এই শিল্পের শিল্পী, ভিকটিম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.বি.এ ২য় বর্ষের একজন ছাত্রী।
সংবাদের সারসংক্ষেপ হল, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় জিনের বাদশা খ্যাত আজমল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতারকচক্র বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। একটি কষ্টি পাথরের মুর্তির মাধ্যমে তারা নাকি বিপুল বিত্তের মালিক করে দিতে সক্ষম। তাদের এই প্রলোভনে পড়ে খুলনা বিশ্ব বিদ্যালয়ের বি.বি.এ—দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী তার বাবা—মাকে সঙ্গে নিয়ে ‘জিনের বাদশা’র আস্তানায় যায়। বাদশা তাদেরকে অনেক টাকা—পয়সার মালিক বানিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেড় লাখ টাকা দাবি করে। বাবা—মা বিষয়টি বুঝতে পেরে চলে আসতে চাইলে প্রতারকচক্র স্বমূর্তি ধারণ করে। তাদেরকে মারধর করে এবং মুক্তিপণের জন্য মেয়েটিকে আটকে রেখে বাবা—মাকে ছেড়ে দেয়। তারা তাড়াতাড়ি বিষয়টি গোবিন্দগঞ্জ থানায় জানালে ভোর রাতে পুলিশ এসে মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং প্রতারকদের আটক করে। সংক্ষেপে এই হল ঘটনা।
বলাবাহুল্য, এই প্রতারকচক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু যারা অর্থ—বিত্তের সস্তা প্রলোভনে এভাবে কুপোকাৎ হয়ে যায় তাদের চিকিৎসা কীভাবে হবে? আর এই চিকিৎসা না হওয়ার কারণেই যে এসব ছিঁচকে প্রতারকদের স্থূল প্রতারণাগুলোও শিকার পেয়ে যাচ্ছে তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে। বি.বি.এ পড়ুয়া একজন সচেতন শিক্ষার্থীও যখন এই প্রতারণার জালে জড়িয়ে পড়েন তখন স্বভাবতই আশ্চর্য জাগে। আবার প্রশ্নও জাগে, এই আধুনিক সভ্যতার পরশে আমাদের মা—বোনদের ত্যাগী ও সংযমী রূপটি যেভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে তার পরিণতি কী হবে। আসলে সীমাহীন অর্থলিপ্সা আর নানা অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এই রমরমা শিল্পের খুব সহজলভ্য কাঁচামাল। এই কাঁচামালের সরবরাহ বন্ধ করতে না পারলে এ শিল্পের জয়যাত্রা ঠেকানো কখনো সম্ভব হবে না।
আলচিশতী আল হাচানী আল...!
পীর নামধারী একশ্রেণীর ভণ্ডের খুব প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে আজকাল। পত্র—পত্রিকায় তাদের সর্বসমস্যার সাকুল্য সমাধানের মনোহর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। অনেক ‘সুফিসম্রাটের’ আস্তানার গম্বুজ ও সবুজ পতাকা অনেক দূর থেকেও দৃষ্টিগোচর হয়। এ ছাড়া আছে রাস্তার পাশে টাঙ্গানো রঙ বেরঙের নানা সাইনবোর্ড। পীরালীর নামে রমরমা বাণিজ্য।
সত্যিকারের আল্লাহওয়ালা বুযুর্গরা মানুষের চরিত্র নির্মাণ করেন এবং মানুষকে খোদাভীরু হতে সাহায্য করেন। পার্থিব নানা সমস্যার ম্যাজিক সমাধান দেওয়ার দাবি কখনো তারা করেন না। তারা মানুষকে আল্লাহমুখী করেন এবং একমাত্র আল্লাহই রিযিকের মালিক, হায়াত—মওতের মালিক এবং সকল সমস্যা থেকে মুক্তি দানের মালিক এই বিশ্বাসেই তাদেরকে বিশ্বাসী করে তোলেন। এমন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ এখনো আমাদের সমাজে রয়েছে তাদের মাধ্যমে মানুষের জীবনে ও চরিত্রে আমূল পরিবর্তন আসছে।
বলাবাহুল্য, এই মাকামে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রথমে তাদের নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ হতে হয়েছে। চরিত্র গঠনের দীর্ঘ সাধনায় সফল হওয়ার পর তারা অন্যদেরকে পথ দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু ওই সব ভণ্ডদের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দু’চারদিন আজমীর বা অন্য কোথাও থেকে ঘুরে এসে নামের শেষে বাহারী টাইটেল যুক্ত করে তারা রাতারাতি ‘পীর’ বনে যান আর মানুষের সকল সমস্যার চ্যালেঞ্জিং সমাধান দিতে থাকেন! তবে অজ্ঞ ও সমস্যাক্রান্ত দিশাহারা কিছু মানুষ এদের খপ্পরে পড়ে ঈমান—আমল খোয়ালেও সাধারণ মানুষ এদেরকে বিশ্বাস করে না। কখনো কখনো এ অবিশ্বাস ও অশ্রদ্ধা উচ্চকিত হয়ে উঠতে দেখা যায়। তখনই তা ‘খবর’ হয় এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। গত ১৮/০২/০৭ তারিখের দৈনিক আমার দেশ—এ এ রকম একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পুঠিয়া উপজেলার এক সাবেক এফডিসি কর্মকর্তা এবিএম আব্দুস সামাদ হঠাৎ গ্রামে এসে এবিএম আব্দুস সামাদ আলচিশতী আননিজামী নাম ধারণ করে এবং নানা আপত্তিকর কথা বলতে থাকে। সে নাকি বলে, প্রচলিত নামায—রোযার প্রয়োজন নেই। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ার দরকার নেই। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় একবার করে সিজদা করলেই নামায পড়া হয়ে যাবে। জীবনে একবার অজু করলে আর অজু লাগবে না। হাদীসগুলো বিকৃত এবং শবে মেরাজ মিথ্যা। (নাউযুবিল্লা)
সে কিছুসংখ্যক অনুসারীও জুটিয়েছে। এদের মাধ্যমে তার আস্তানায় নারী—পুরুষের সম্মিলিত নাচ—গানের আসর জমে ওঠে। এসব কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ভণ্ড গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ওরস করার ঘোষণা দিলে এ ক্ষোভ চরমে ওঠে। সংবাদে প্রকাশ, এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
বলাবাহুল্য, ওই এলাকার অধিবাসীদের ক্ষোভ ও প্রতিবাদ যথার্থ। পত্রিকার রিপোর্টে তার যে কথাগুলি উল্লেখিত হয়েছে সে হিসেবে তো তার ঈমানই থাকে না, পীর হওয়া তো দূরের কথা। এ ধরনের প্রতারকদের কঠোর হস্তে দমন করা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রশাসনের কর্তব্য।
নিরীহ বলে...?
একটি হাসির গল্প আছে। এক বাড়িতে অতিথি এসেছে। রাতের বেলা অতিথিকে নিয়ে খেতে বসেছে পরিবারের লোকজন- স্বামী, স্ত্রী ও তাদের একটি শিশুপুত্র। খেতে খেতে হঠাৎ অসাবধানে গৃহকত্রীর ‘বায়ুকর্ম’ হয়ে গেল এবং কিছুটা জোর আওয়াজে। তিনি উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিলেন এবং চট করে বাচ্চাটিকে একটি চাপড় দিয়ে বললেন, আহা, খাবার সময় একাজ করে? কিছুক্ষণ পর একই কর্ম করে বসলেন গৃহকর্তা। তিনিও তার পুর্বসূরীর পথ ধরলেন এবং ছেলেটিকে থাপ্পর দিলেন। অতিথি কিন্তু ব্যাপারটি ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। কিছুক্ষণ পর তারও যখন এই কর্ম হয়ে গেল তিনিও তখন বেশ জোরে বাচ্চাটিকে চড় লাগালেন। এবার বাবা—মা ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, কী ব্যাপার, আমাদের ছেলেকে মারলেন কেন? অতিথি বললেন, ভাবলাম এ ঘরের এটাই নিয়ম। যারই ‘বায়ুকর্ম’ ঘটে সে তা ঢাকা দেওয়ার জন্য বাচ্চাটিকে চড় লাগায়। তাই আমিও এর অন্যথা করিনি।
বলাবাহুল্য, বর্তমান সময়ে ‘যত দোষ নন্দঘোষ’ —এর নীতিই কার্যক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে চর্চিত। গত ১১ ও ১২ মার্চ দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক ঘটনায় এই নীতিরই প্রতিফলন দেখা গেল।
সংবাদটির সারসংক্ষেপ ছিল, বিস মিলনায়তনে সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এন্ড পিস স্ট্যাডিস (সিএসপিএস) আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, মাদরাসা শিক্ষা সন্ত্রাস উস্কে দিচ্ছে। ভুল পথে জীবন উৎসর্গ করার শিক্ষা মাদরাসাগুলোতে দেওয়া হয়ে থাকে ইত্যাদি। আমরা আশ্চর্য হই এই ভেবে যে, এ শ্রেণীর জ্ঞানপাপীরা যখন সভা—সেমিনারে নির্জলা মিথ্যা বলেন তখন কি তাদের একটুও লজ্জা হয় না? তারা দেশের মানুষকে কী ভাবেন? এ দেশের মানুষ স্বভাবতই শান্তিপ্রিয়, তাই বলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন না। কিন্তু আমাদের এ দেশীয় একটি শ্রেণী এ সত্য বুঝতে চান না।
জেএমবি—র ক্যাডাররা সারা দেশে বোমা ফাটানোর পর এ ব্যাপারে বেশ কড়া অনুসন্ধান ও ধরপাকড় হয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে অনেক। প্রশ্ন হল, এই তদন্ত ও অনুসন্ধানে কি মাদরাসার ছাত্রদের বিশেষত কওমী মাদরাসার ছাত্রদের সম্পৃক্ততায় কোনো সামান্য প্রমাণও পাওয়া গেছে? যতগুলো জেএমবি ক্যাডার গ্রেফতার হয়েছে তারা প্রায় সবাই কলেজ—ইউনিভার্সিটি—পড়–য়া। কুরআন—হাদীস সম্পর্কে যথাযথ পড়াশোনা না থাকায় খুব সহজেই এরা একটি স্বার্থবাদী চক্রের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে। কওমী মাদরাসাগুলোতে যেহেতু কুরআন—হাদীসের পঠন—পাঠন রয়েছে তাই এই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির মহোৎসবের যুগেও এ মাদরাসার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট নৈতিকতা সম্পন্ন।
এ দেশের সাধারণ জনতা ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় তারা এ সত্য সম্পর্কে ওযাকিবহাল। আওয়ামী শাসনামলে কওমী মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যয় করেও তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তাই বাস্তব ও পরীক্ষিত সত্য হল, এই মাদরাসাগুলো এখনো পর্যন্ত এ সমাজে সততা, নৈতিকতা, শান্তিপ্রিয়তা ইত্যাদি সৎগুণের দৃষ্টান্ত ধরে রেখেছে।
পর্দার অন্তরাল থেকে দেশে দেশে সন্ত্রাস ও অস্থিরতা কারা সৃষ্টি করে থাকে এবং এর পিছনে তাদের কী অভিপ্রায় রয়েছে—এগুলো দেশপ্রেমিক সচেতন জনগণের অজানা নয়। অথচ সভা—সেমিনারে তারাই অন্যের বিরুদ্ধে অন্যায় বিষোদগার করে।
এ দিকে আরও কৌতুকের ব্যাপার হল, কোনো কোনো পত্রিকার ভাষ্য থেকে জানা যায়, উক্ত সেমিনারের আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি নাকি একটি ‘ইসলামী’ দলের ঘরানাভুক্ত। বিষয়টি সত্য হলে এ কথা বলা ছাড়া উপায় থাকে না যে, এটা ‘চড় মেরে লজ্জা ঢাকার’ই একটি ব্যর্থ প্রয়াস।