সীরাত চর্চা
সাহাবায়ে কেরাম ও আমরা
এক.
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে যাকাত স্বরূপ আদায় করা হত এমন প্রাণীর একটি রশিও যদি কেউ এখন দিতে অস্বীকার করে আর পৃথিবীর সকল মানব-দানব তার পক্ষে এক কাতারে শরীক হয়, খোদার কসম আমি আবু বকর একাই তাদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাব।’১
সদ্য খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণকারী, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রিয় সহচর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. যখন দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে এ ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন গোটা আরব ভূ-খণ্ডে ছিল অস্থিরতা আর অস্থিরতা। একদিকে প্রিয় নবীর তিরোধানের ক্ষত তখনো দগদগে, হৃদয়ের অবিরাম রক্ত ক্ষরণে দিশেহারা সাহাবায়ে কেরাম। অন্যদিকে ইয়ামান, মক্কা ও মদীনার পার্শ্ববতীর্ বিভিন্ন অঞ্চলে মুরতাদ হতে লাগল নও মুসলিম লোকজন। হাজার হাজার ভক্ত নিয়ে ভণ্ড নবী তুলাইহা মুসাইলামারা ঘোষণা করল, ‘কুরাইশের নবীর তিরোধান হলেও আসাদ ও হানাফিয়া গোত্রের নবীরা এখনো জীবিত।’
কিছু অঞ্চলের মানুষ যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানাল। আরব ভূ-খণ্ডের ঈশানকোণের যেন ফিতনার কালো মেঘ জমছে। ইতিহাসের এ চরম যুগসন্ধিক্ষণে জ্বলে উঠল খলীফাতুর রাসূল হযরত আবু বকর রা.-এর ঈমানদীপ্ত কণ্ঠ-
أينقص الدين وأنا حي؟
‘দ্বীনের অঙ্গহানী হবে, আর আমি জীবিত থাকব?’ নিজেদের আবাসভূমিই যখন বহির্শত্রুর আক্রমণের সম্মুখীন তখনও যে নবীর সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকা যায় এবং মূল সেনাদলকে বাইরের অভিযানে পাঠিয়ে সে সিদ্ধান্তের মর্যাদা রাখা যায়, তার দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন হযরত আবু বকর রা.।
বলাবাহুল্য, অপরিসীম ভালবাসা, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ আর নবীর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের কারণেই এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। তাঁর ইস্পাত—দৃঢ় সংকল্পের পরিচয় নিম্নোক্ত বাণী থেকে পাওয়া যায়-
والذي نفسي بيده لو ظننت السباع تخطفني لأنفذت جيش أسامة كما أمر به رسول الله صلى الله عليه وسلم، ولو لم يبق في القرى غيري لأنفذته.
ওই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি আমার এই আশঙ্কা হতো যে, আমাকে হিংস্র বাঘের থাবার মুখোমুখি হতে হবে এবং গোটা নগরীতে আমি ছাড়া আর কেউ জীবিত না থাকত তবুও আমি প্রিয় নবীর নির্দেশ মতো ‘জায়শে উসামা’কে অভিযানে প্রেরণ করতাম।
এটি হল সাহাবায়ে কেরামের সীরাত—চর্চার একটি নমুনা। নবী—সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থা ও আনুগত্যের একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত।
সময়ের ব্যবধানে সীরাত—চর্চার ধরন—ধারনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সীরাতকে কেন্দ্র করে নানা আনুষ্ঠানিকতার উদ্ভব ঘটেছে এবং নবী—প্রেমের দাবিও আগের তুলনায় অনেক বেশি শ্রম্নতিগোচর হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হল, বাস্তব জীবনে নবী—আদর্শের চর্চা দিন দিন কমেই চলেছে। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নবীর আদর্শ অবহেলিত হচ্ছে। তাহলে এত জৌলুসপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার ফলাফল কী দাঁড়াল?
তাই সীরাত—চর্চার সবক আমাদের আবার নতুন করে নিতে হবে সাহাবায়ে কেরামের জীবন থেকে, যারা ছিলেন প্রকৃত নবী প্রেমিক এবং নবী—আদর্শের ছাঁচে যারা তাদের জীবন ও কর্মকে গড়ে তুলেছিলেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন-
من كان منكم متأسيا فليتأس بأصحاب محمد صلى الله عليه وسلم، فإنهم كانوا أبر هذه الأمة قلوبا وأعمقها علما أقلها تكلفا، اختارهم الله لصحبة نبيه صلى الله عليه وسلم وإقامة دينه، فأقروا لهم فضلهم واتبعوهم في آثارهم، فإنهم كانوا على الهدى المستقيم.
তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর সাহাবীগণকেই আদর্শরূপে গ্রহণ করো। কারণ হৃদয়ের পবিত্রতায়, ইলমের গভীরতায় এবং আড়ম্বরহীনতায় তাঁরা ছিলেন এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ জামাত। আল্লাহ তাদেরকে আপন নবীর সাহচর্য এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য মনোনীত করেছিলেন। সুতরাং তোমরা তাদের শ্রেষ্ঠত্ব অনুধাবন কর এবং তাদের পথ অনুসরণ কর। নিঃসন্দেহের তাঁরাই ছিলেন সরল পথের পথিক।৩
দুই.
নবীর প্রতি ভালবাসা এবং নবী—আদর্শের প্রতি আস্থার সবক নিতে আমাদেরকে হাজির হতে হবে সাহাবীগণের দরবারে। কেননা তাঁদের এই প্রেম ও আস্থার আর কোনো নজির নেই।
রোম সম্রাটের হাতে বন্দী সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা রা.। একান্তে ডেকে সম্রাট এ প্রলোভন দিল যে, ‘খৃস্টান হয়ে যাও। প্রতিদানে আমার এ বিশাল ভূখণ্ডের অর্ধেক তুমি পাবে।’ ইবনে হুযাফার মনে সামান্য চাঞ্চল্যও সৃষ্টি হল না। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিলেন-
لو أعطيتني ما تملك وجيمع ما ملكته العرب على أن أرجع عن دين محمد صلى الله عليه وسلم طرفة عين ما فعلت.
অর্ধেক রাজত্ব নয়, তোমার পুরো রাজত্ব এবং তার সাথে বিশাল আরব সাম্রাজ্যও যদি আমার হাতের মুঠোয় ভরে দেওয়া হয় তবুও এক পলকের জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর আনীত দ্বীন হতে বিচ্যুত হব না।
অতঃপর একটি বিশাল পাত্রে প্রচণ্ডভাবে পানি ফুটানো হল। ইবনে হুযাফার চোখের সামনে একে একে দুজন মুসলিম কয়েদীকে নির্মমভাবে পানিতে নিক্ষেপ করে শহীদ করা হল। তাদের পরিণতি দেখিয়ে পুনরায় তাকে খৃস্টধর্ম কবুলের ফুরসত দেওয়া হল। আগের মতোই তা প্রত্যাখ্যান করলেন।
এবার তাকে ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হল। ডেগচির সামনে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি মৃদু কাঁদলেন। সম্রাট ভাবল, সে হয়তো দুর্বল হয়েছে। কাছে ডেকে আবারও খৃস্টধর্ম পেশ করা হল। কিন্তু এবারও তিনি প্রত্যাখ্যান করলেন। সম্রাট প্রশ্ন করল, তাহলে তুমি কাঁদলে কেন? ইবনে হুযাফা রা. বললেন, ডেগের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমি ভাবলাম, হায়! কিছুক্ষণ পরই আমার প্রাণপাখি উড়ে যাবে। হায়! আমার শরীরে যতগুলো লোম আছে সে পরিমাণ প্রাণ যদি আমার থাকত তবে একে একে সবগুলোই আমি আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করতাম। এ ভাবনা আসতেই আমার দু চোখ ভিজে উঠেছিল।৪
এক সাহাবী নবীজির দরবারে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে আমি নিজের চেয়ে এবং নিজ সন্তানের চেয়েও বেশি ভালবাসি। বাড়িতে গেলে আপনার কথা মনে পড়লে সহ্য করতে পারি না। বেচাইন হয়ে পড়ি। এসে আপনাকে এক পলক দেখে যাই। কিন্তু মৃত্যুর কথা মনে হলে আমার মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। আমি ভাবি, জান্নাতের অত্যুচ্চ মাকামে নবীদের সাথে আপনি থাকবেন। তখন কি আপনাকে এভাবে এক পলক দেখে যাওয়ার সুযোগ পাব? শুনে নবীজী চুপ করে রইলেন। ইতিমধ্যে আসমানী বার্তা নিয়ে জিবরাঈল আমীন উপস্থিত হলেন-
وَ مَنْ یُّطِعِ اللّٰهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاُولٰٓىِٕكَ مَعَ الَّذِیْنَ اَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیْهِمْ مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ.
যে আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে সে নবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎকর্ম পরায়ণদের সঙ্গে থাকবে।৫
এক আগন্তুক এসে জিজ্ঞাসা করল, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? নবীজী বললেন, তুমি তার জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? আগন্তুক বলল, কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি তবে আমি আল্লাহ ও তার রাসূলকে ভালবাসি। নবীজী বললেন-
إِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ.
তুমি তোমার প্রেমাষ্পদের সাথেই থাকবে।
হযরত আনাস রা. বলেন, এ কথা শুনে আমরা এত বেশি আনন্দিত হয়েছি, যা ইতিপূর্বে আর কোনোদিন হইনি।৬
প্রশ্ন জাগে, কীসের লোভে আশিটিরও বেশি তীর তার তরবারির আঘাত নিয়ে উহুদের মাঠে কাতরাচ্ছিলেন হযরত আনাস বিন নযর রা.। কার প্রেমের ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে শত্রট্টর হাতে কুচি কুমি হওয়া হযরত হামযা রা.—এর দেহটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল উহুদ প্রান্তরে?
কত ইতিহাস লেখা হল, কত উপাখ্যান রচিত হল, কিন্তু আনুগত্যের এ ইতিহাস এবং ভালবাসার এ উপাখ্যান আজও অতুলনীয়ই থেকে গেল। তাদের এ বাস্তব কাহিনী রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। মক্কার কাফেরদের হাতে বন্দী হলেন সাহাবী হযরত খুবাইব রা.। বদর যুদ্ধে নিহতদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা তাকে শূলিতে চড়াল। কাফেরদের নিক্ষিপ্ত তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে তার শরীর। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, أتحب أن محمد مكانك তোমার স্থানে আজ মুহাম্মাদকে এনে দিলে কি তুমি খুশি হবে? শুনে হযরত খুবাইব রা.—এর রক্ত কণিকায় শিহরণ জেগে উঠে। শূলী—কাষ্ঠে আবদ্ধ অবস্থায় তিনি বলে উঠলেন, খোদার কসম! কক্ষনো নয়। তাঁর গায়ে একটি কাঁটার আঁচড় লাগুক তাও আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। অতঃপর তার গলে যখন ফাঁসির দড়ি পরানো হচ্ছিল তিনি কবিতা বললেন। যার অর্থ হল-
প্রভূ হে আমার, তোমাকেই বলি আমার দুঃখ জ্বালা/
তুমিই দেখছ মুশরিকদের এই মিলিত তাণ্ডবলীলা।
তোমার পথে নিজেকে আকি করে দিলাম কুরবান,
ছিন্ন দেহের প্রতিটি অঙ্গের তুমি দিও প্রতিদান।
যেখানেই মরি, যেভাবেই মরি, চিন্তা কীসের আমার
আমি মুসলিম, সৈনিক আমি শুধু এক আল্লাহর।৭
এমন অকৃত্রিম ভালবাসা আর অসীম আত্মত্যাগ দেখে তৎকালন মুশরিকদের সর্দার আবু সুফিয়ান স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন-
ما رأيت من الناس أحدا يحب أحدا كحب أصحاب محمد محمدا.
‘মুহাম্মাদের সাহাবীরা তাকে যত ভালবাসে, কেউ কাউকে এতে বেশি ভালবাসতে আমি দেখিনি।৮
তিন.
আজ সীরাতের জ্ঞান লাভ করা অনেক সহজ। হাতের কাছেই রয়েছে। সহীহ হাদীসের নির্ভরযোগ্য সংকলন। যাতে নবী আ.—এর শিক্ষা ও আদর্শ পূর্ণরূপে সংরক্ষিত রয়েছে। আরও আছে নবী আ.—এর জীবন বৃত্তান্তমূলক নির্ভরযোগ্য সীরাত—গ্রন্থ। কিন্তু আমরা সীরাতের জ্ঞান চর্চায় কতটুকু সময় ব্যয় করে থাকি? পক্ষান্তরে নবী—প্রেমিক সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা দেখুন, তারা একটি হাদীসের সন্ধানে মাসের পর মাস সফর করতে থাকতেন। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বলেন, এক ব্যক্তির ব্যাপারে আমি জানতে পারলাম যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিসাস সম্পর্কিত একটি হাদীস শুনেছেন। হাদীসটি জানার জন্য একটি উট খরিদ করে বের হয়ে পড়লাম। এক মাসের দীর্ঘ সফর শেষে আমি সিরিয়ায় এসে পৌঁছাই। খোঁজ নিয়ে জানলাম, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস রা.। তার বাড়ির দরজায় গিয়ে দারোয়ানকে বললাম, তাঁকে গিয়ে বল জাবের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। শুনে ভিতর থেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইবনে আবদুল্লাহ? আমি বললাম, হ্যাঁ।
এ কথা শুনেই তিনি ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। মুআনাকা ও সৌজন্য বিনিময় শেষে আমি বললাম, কিসাস সম্পর্কিত একখানা হাদীস নাকি আপনি নবীজী থেকে সরাসরি শুনেছিলেন। হাদীসটি শোনার আগেই আমি বা আপনি দুনিয়া থেকে বিদায় নেই কি না- এ কথা ভেবে আপনার কাছে এসেছি। তিনি তখন আমাকে হাদীসটি শুনিয়ে দিলেন।৯
হযরত আবু আইউব আনসারী রা. দীর্ঘ সফর করে মিসরে হযরত উক্ববা ইবনে আমের রা.—এর কাছে এলেন। এসেই বললেন, আমি ও আপনি বাদে ওই সময় নবীজীর দরবারে উপস্থিত ছিলেন এমন কেউই আজ জীবিত নেই। অতএব বলুন তো মুসলমান ভাইয়ের দোষত্রুটি অপরের কাছে প্রচার না করার ব্যাপারে আপনি কী শুনেছিলেন? তিনি বললেন, আমি নবীজীকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কারও ভুল—ত্রুটি ঢেকে রাখল, কিয়ামতের দিন আল্লাহও তার দোষ—ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন।’ হাদীসটি শোনার পর হযরত আবু আইউব রা. আর এক মুহূর্তও দাঁড়াননি। ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে ফের রওনা হলেন মদীনার পথে।১০
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর রা. কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে জনসম্মুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিতেন, এ ব্যাপারে নবীজীর কোনো নির্দেশনা কারও জানা আছে কি না?১১
এগুলো হল সাহাবায়ে কেরামের সীরাত—চর্চার সামান্য কটি দৃষ্টান্ত।
চার.
সাহাবায়ে কেরাম সীরাতের জ্ঞান লাভের জন্য যেমন কোনো ধরনের ত্যাগ স্বীকারে কুণ্ঠিত হননি তেমনি অর্জিত ইলম মানুষের নিকট পৌঁছাতেও কার্পণ্য করেননি। হযরত ওয়াবিসা রা. প্রতি ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের দিনে ‘রাক্কা’ শহরের বড় মসজিদে দাঁড়িয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর বিদায় হজ্বের ভাষণের পুনরাবৃত্তি করে বলতেন, এসো। নবীজী যেমন আমাদের কাছে দ্বীন পৌঁছিয়েছেন তেমনি আমরা তোমাদের কাছে দ্বীনের বাণী পৌঁছে দেই।১২
সাহাবায়ে কেরামের অন্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর শিক্ষার অপরিসীম মর্যাদা ও গুরুত্ব থাকার কারণে তারা এই গুণের অধিকারীদেরকেও সম্মান করতেন। বিশেষত যার নিকট থেকে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর শিক্ষা গ্রহণ করতেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর ইন্তেকালের পর আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. একজন আনসারীকে ডেকে বললেন, আজ অনেক সাহাবী আমাদের মাঝে রয়েছেন। চল, তাদের কাছ থেকে ইলম অর্জন করি। আনসারী বলল, বড় বড় সাহাবীগণ জীবিত আছেন, তাদের ছেড়ে কে আমাদের কাছে হাদীস জানতে আসবে? ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আমি তার কথায় কান দিলাম না এবং সাহাবায়ে কেরামের ঘরে ঘরে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর হাদীস অন্বেষণ করতে লাগলাম। যার কাছেই কোনো হাদীস আছে বলে শুনতাম, তার বাড়িতেই যেতাম। কারও বাড়িতে এসে হয়তো দেখলাম, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। আমি তখন চাদর বিছিয়ে দরজার সামনেই বসে পড়তাম। ধুলোবালি পড়ে আমার শরীর মলিন হয়ে যেত। সাহাবী ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখে চমকে উঠতেন এবং বলতেন, হে রাসূলের চাচাতো ভাই! আপনি কেন এসেছেন? খবর দিলেই তো আমি আপনার কাছে হাজির হতাম। আমি তখন বলতাম, জ্বী না। আমারই আপনার কাছে আসা উচিত। এভাবে তার কাছ থেকে হাদীসটি শিখে নিতাম। কিছুকাল পর ইলমে নববীর অন্বেষণে আমার চারপাশে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখে ওই আনসারী বলল, এই যুবক বড়ই বুদ্ধিমান।১৩
হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত রা. যখন সফরের জন্য বাহনে পা রাখতেন তখন ইবনে আব্বাস রা. বাহনের রেকাব টেনে ধরতেন। হযরত যায়েত বলতেন, ছেড়ে দাও হে রাসূলের চাচাতো ভাই। কিন্তু ইবনে আব্বাস রা. বলতেন-
هكذا أمرنا أن نفعل بالعلماء والكبراء.
আমরা আলেমদের সাথে এভাবেই সম্মান প্রদর্শনে আদিষ্ট হয়েছি।১৪
পাঁচ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর আখলাক বিষয়ক শিক্ষাগুলো সীরাতের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। নবী—আদর্শে নিবেদিত প্রাণ সাহাবায়ে কেরাম ইবাদত—বন্দেগী, মেহনত—মুজাহাদার পাশাপাশি উন্নত আখলাকেরও অধিকারী ছিলেন। সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব, পরোপকার, অসুস্থের সেবা, আত্মীয়তার হক্ব আদায় ইত্যাদি উত্তম গুণাবলি ছিল তাদের চরিত্রের ভূষণ। আর এই চরিত্রগুণ তারা আহরণ করেছিলেন সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর পবিত্র ঝর্ণা ধারা থেকে।
সাহাবী আবু যর গিফারী রা. একদিন একটি ডোরাকাটা সুন্দর চাদর গায়ে জড়িয়ে ‘রাবায়া’ নামক স্থানে বসেছিলেন। পাশে ঠিক একই মানের ও একই রংয়ের চাদর গায়ে তার গোলামও বসেছিল। এটা দেখে গোত্রের লোকেরা বলল, ওই চাদরটি যদি আপনি লুঙ্গি হিসেবে পরিধান করতেন তবে সুন্দর লাগত। তাকে অন্য একটি কাপড় দিলেও তো চলত। আবু যর রা. বললেন, আমার একজন গোলাম ছিল, যাকে অনারব বলে একদিন কটুক্তি করেছিলাম। সে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর কাছে অভিযোগ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে বললেন, ‘ হে আবু যর! তোমার মাঝে এখনও জাহেলিয়াতের রেশ রয়ে গেছে। যাদেরকে আল্লাহ তোমাদের অধীন করেছেন, তারা তোমাদেরই ভাই। অতএব তোমরা যা খাবে তাদেরও তাই খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে তাদেরকেও তাই পরতে দিবে। সাধ্যাতীত কোনো কাজ তাদের উপর চাপাবে না। পছন্দ না হলে বিক্রি করে দাও তবুও আল্লাহর মাখলুককে কষ্ট দিও না।১৫
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. মসজিদে নববীতে ইতেকাফরত ছিলেন। এক আগন্তুক এসে সালাম দিয়ে তার সামনে বসল। আগন্তুকের চোখে—মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ, কপালে পেরেশানির ভাজ। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, তোমাকে এত বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন? আগন্তুক বলল, হে রাসূলুল্লাহর চাচাতো ভাই! অমুকের কাছে আমার কিছু ঋণ আছে। আর এই কবরে শায়িত মহামানবের ইজ্জতের কসম, তা আদায়ের সামর্থ্য আমার নেই। ইবনে আব্বাস রা. বললেন, আমি কি ঋণদাতার সঙ্গে তোমার ব্যাপারে কথা বলব? আগন্তুক সম্মতি দিলে তিনি জুতা পরে মসজিদ থেকে বের হতে উদ্যত হলেন। আগন্তুক বিস্ময়ভরা কণ্ঠে প্রশ্ন করল, জনাব! ইতেকাফের কথা কি ভুলে গেলেন? তিনি উত্তর দিলেন, না, ভুলিনি। এরপর অশ্রম্নসজল চোখে নবীজীর কবরের দিকে ইশারা করে বললেন, বেশি দিনের কথা নয়, আমি কবরে শায়িত মহামানবকে বলতে শুনেছি- যে তার ভাইয়ের কোনো প্রয়োজনে বের হয়ে তা পূরণ করল, তার এ আমল দশ বছরের ইতেকাফের চেয়েও উত্তম।১৬
হযরত আমর ইবনে হুবাইস রা. এবং হযরত হাসান—এর মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য ছিল। তারপরও হযরত হাসান অসুস্থ হলে তিনি তাকে দেখতে যান। এটা দেখে হযরত আলী রা. বললেন, তুমি হাসানের ইয়াদাত করতে এলে? আমর রা. বললেন, আপনি তো আমার প্রভু নন যে, আমার মনকে যেদিকে ইচ্ছা সেদিকে ঘুরিয়ে দিবেন? হযরত আলী রা. বললেন, তাই বলে আমি আমার উপদেশ পৌঁছাতে কার্পণ্য করব না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে মুসলমান তার অসুস্থ ভাইকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সকাল হতে সন্ধ্যা অথবা সন্ধ্যা হতে সকাল পর্যন্ত রহমতের দুআ করতে থাকে।১৭
একদিন এক বিশালদেহী লোক হযরত মিক্বদাদ রা. ও হযরত উসমান রা.—এর সম্মুখে হযরত উসমানের স্তুতি গাইতে শুরু করল। হযরত মিক্বদাদ রা. সামনে এসে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কঙ্কর ওই ব্যক্তির চেহারার দিকে নিক্ষেপ করতে আরম্ভ করলেন। হযরত উসমান রা. বললেন, কী হল মিক্বদাদ? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِذَا رَأَيْتُمُ الْمَدَّاحِينَ فَاحْثُوا فِي وُجُوهِهِمُ التُّرَابَ.
যখন তোমরা গুণকীর্তনকারীদের দেখবে তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে।১৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একটি গাধার উপর সওয়ার হয়ে মক্কা থেকে বের হচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক বেদুঈনের সঙ্গে সাক্ষাত হ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি অমুকের ছেলে অমুক? বেদুঈন উত্তরে বলল, হ্যাঁ। তিনি সঙ্গে সঙ্গে গাধা হতে নেমে গাধাটি ও নিজের পাগড়িটি ওই বেদুঈনের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, এখন থেকে গাধাটি আপনার বাহন। আর পাগড়িটাও আপনি পরিধান করুন। সাথীরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, আপনি নিজের পাগড়ি ও বাহন এক বেদুঈনকে দিয়ে দিলেন? ইবনে ওমর রা. জবাব দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, পিতার বন্ধুর পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক রাখাও পিতার সঙ্গে সদাচরণের অন্তর্ভুক্ত। এই বেদুঈনের পিতা ওমর রা.—এর বন্ধু ছিলেন।১৯
এভাবে কদমে কদমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর জীবনাদর্শের অনুসরণের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরাম চরিত্র—মাধুর্যে মহীয়ান হয়ে উঠেছিলেন। তাদের চরিত্রে নবী—চরিত্রের আভাষ ফুটে উঠেছিল। যে যতখানি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর নিকটে ছিলেন তিনি ততই নবী—আদর্শে আদর্শবান হয়ে উঠে ছিলেন। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.—এর ব্যাপারে সে সময়ের এক কাফের যে সাক্ষ্য দিয়েছে তাতে এ কথার প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রথম ওহী লাভের পর শঙ্কিত রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে উম্মুল মুমিনীন খাদীজা রা. বলেছিলেন-
كَلَّا وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الحَقِّ.
‘আল্লাহর কসম! কিছুতেই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়তা বজায় রাখেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, মেহমানদারী করেন এবং বালা—মুসিবতে মানুষের সাহায্য করেন।২০
উপরোক্ত উদ্ধৃতিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর আখলাকের একটি চিত্র পাওয়া গেল। এবার তাঁর সহচর আবু বকর রা.—এর আখলাক দেখুন।
কয়েকবছর পর যখন আবু বকর রা. আবিসিনিয়ার উদ্দেশে মক্কা ছেড়ে বের হতে গেলেন, তখন ‘ক্বারা’ গোত্রধান ইবনে দুগুন্নাহ তাকে যে কথাগুলো বলে মক্কা ছেড়ে যেতে নিবৃত্ত করেছিল তা ছিল এই-
مِثْلُكَ يَا أَبَا بَكْرٍ لَا يُخْرَجُ وَلَا يَخْرُجُ إِنَّكَ تُكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ.
‘আবু বকর! তুমি দেশ ছেড়ে চলে যাবে? এ হতে পারে না। তুমি তো নিঃস্বের কর্মসংস্থান কর, আত্মীয়তা রক্ষা কর, অনাথ—দুর্বলের দায়িত্ব বহন কর, মেহমানদারী কর এবং বালা—মুসিবতে বিপদগ্রস্তের সাহায্য কর।’২১
দেখুন নবী ও সাহাবীর চরিত্রে কী দারুণ মিল! কী সুন্দর সাদৃশ্য! বস্তুত এখান থেকেই তাদের আর আমাদের সীরাত—চর্চার পার্থক্যটি স্পষ্ট হয়ে যায়।
ছয়.
সাহাবায়ে কেরাম সুন্নাহর অনুসরণে যেমন ছিলেন নিবেদিত, তেমনি বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন আপোষহীন। হযরত ওমরের খেলাফতকালের ঘটনা। হুদায়বিয়ার প্রান্তরে যে গাছের নিচে বসে ঐতিহাসিক ‘বাইআতে রিযওয়ান’ সম্পন্ন হয়েছিল, বরকতের আশায় সেখানে মানুষ নামায পড়তে আরম্ভ করে। এ কথা খলীফার কানে গেলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে গাছটি কেটে ফেলার নির্দেশ দেন এবং স্পষ্ট ভাষায় ভাষণ দেন, ‘ হে লোক সকল! তোমরা তো ওই লাত—ওযযার জীবনে ফিরে যাচ্ছ। আজ থেকে যে ওই গাছের কাছে যাবে তাকে মুরতাদের মতো হত্যা করা হবে।’২৩
সিরিয়ায় হযরত ইবনে ওমর রা.—এর এক ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল। প্রায়ই তাদের মাঝে পত্র যোগাযোগ হত। ওই বন্ধুর ব্যাপারে একবার তার কাছে এ সংবাদ এল যে, সে ‘তাকদীর’ নিয়ে সন্দিহান অর্থাৎ তাকদীর সম্পর্কে সুন্নাহ—পরিপন্থী বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। শুনামাত্রই একটি পত্রের মাধ্যমে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে লিখলেন-শুনেছি, তুমি তাকদীর নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। সাবধান আর কোনো দিন তুমি আমার কাছে পত্র লিখবে না। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, অচিরেই আমার উম্মতে এমন কিছু লোক আসবে যারা তাকদীরকে অস্বীকার করবে।২৪
সাত.
সাহাবায়ে কেরামের সীরাতচর্চার কিছু দিক উপরোক্ত আলোচনায় উপস্থাপিত হল। এই মানদণ্ডের ভিত্তিতে আমাদের অবস্থাকে পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ভালবাসা, বাস্তব জীবনে তার অনুসরণ ও অনুশীলনের মাধ্যমেই আমরা আমাদের জীবনে আলোর সন্ধান পেতে পারি। অন্যথায় উৎসব পালন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রবিউল আওয়াল বরণ শুধু যে অনর্থক। তা—ই নয় এটি আমাদেরকে নবীর সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ারও কারণ। আল্লাহ আমাদের শান্তভাবে চিন্তা করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
তথ্যপঞ্জি :
১. সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭২৮৪, ৭২৮৫; ইবনে আসাকির
২. আল—মুনতাযিম ৪/৭৪
৩. জামিু বয়ানিল ইলম ২/৯৭
৪. ইসাবা ৪/৫৯; সিয়ারু আলামিন নুবালা ২/১৪
৫. তবারানী, আওসাত, হাদীস : ৪৬০; মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/৬৩, হাদীস : ১০৯৩৭
وقال : رجاله رجال الصحيح غير عبد الله بن عمران العابدي وهو ثقة.
৬. সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৬৮৮
৭. তবারানী, কাবীর ৫/২৫৯—২৬৬; হাদীস : ৫২৮৪; মাজমাউয যাওয়াইদ ৬/২৯৫—২৯৮
قال : وفيه ابن لهيعة وحديثه حسن وفيه ضعف.
৮. আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৩/২০৬
৯. মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৭৯৩—৭৯৪, হাদীস : ৮৭৫৪
১০. মুসনাদে আহমাদ ৪/১৫
১১. আররিসালাহ, ইমাম শাফেয়ী ৪২৭
১২. বাযযার কাশফুল আসতার, হাদীস : ১৪৫; মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৩৫৭
قال : ورجاله موثقون
১৩. মুসতাদরাকে হাকেম ৩/৭৩
১৪. মাদখালে সুনানে কুবরা, বায়হাকী ১৩৭১৭
১৫. সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৫১৫৮
১৬. তবারানী, আওসাত, হাদীস : ৭৩২২; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৩৯৬৫
১৭. মুসনাদে আহমাদ ১/৯৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/১৩৪
قال : رجال أحمد ثقات.
১৮. সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩০০২
১৯. প্রাগুক্ত, হাদীস : ২৫৫২
২০. সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৯০৫
২১. প্রাগুক্ত, হাদীস : ৩
২২. কুল্লিয়াত ১৪৭
২৩. ফাতহুল বারী ৭/৫১৩
وقال : بإسناد صحيح.
২৪. মুসনাদে আহমাদ ২/৯০