আলকুরআনের দৃষ্টিতে মুত্তাকীর পরিচয়
মুত্তাকী অর্থ তাকওয়া অবলম্বনকারী। আর তাকওয়া হচ্ছে, আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট বিষয়গুলোকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করা। তা বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর হওয়া। আর তার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ বর্জন করা। তা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা। এভাবে পালনীয় বিষয়কে পালন করে এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। আখেরাতে জান্নাত লাভের উপযুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকা। আখেরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা হওয়া।
তাকওয়ার মাঝে রয়েছে সতর্কতার অর্থ। আল্লাহর আদেশ পালন করতে এবং তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে হলে প্রয়োজন পূর্ণ সতর্কতা ও সজাগ দৃষ্টি। হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা. একদিন হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা.-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাকে তাকওয়া সম্পর্কে বলুন।
তিনি বললেন, আপনি কি কখনও কন্টকাকীর্ণ পথে চলেছেন?
তিনি বললেন, অবশ্যই।
তিনি বললেন, তখন আপনি কীভাবে পথ চলেছেন?
তিনি বললেন, তখন তো কাপড় গুটিয়ে কষ্টে পার হয়েছি।
তিনি বললেন, এটাই তাকওয়া। (দ্র. তাফসীরে ইবনে কাসীর সূরা বাকারা ৩নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
এ সতর্কতা অবলম্বন করে একজন ব্যক্তি সফল মুমিন হিসেবে আল্লাহ তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে থাকে। সে আল্লাহ তাআলার কাছে হয়ে ওঠে মর্যাদাবান। লাভ করে প্রভূত কল্যাণ। একজন ব্যক্তি পরিপূর্ণ মুত্তাকী হওয়ার জন্য প্রয়োজন অনেকগুলো গুণ অর্জন করা। কুরআন কারীম মুত্তাকীদের সেসব গুণাবলির কথা তুলে ধরেছে। কুরআন মাজীদ এসব গুণাবলির কথা বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রসঙ্গে তুলে ধরেছে। সেসব গুণাবলির মধ্যে কিছু গুণ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ নিচে তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
কুরআনে কারীমের একেবারে শুরুতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
الٓمّٓ،ذٰلِكَ الْكِتٰبُ لَا رَیْبَ فِیْهِ هُدًی لِّلْمُتَّقِیْنَ،الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِالْغَیْبِ وَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ، وَ الَّذِیْنَ یُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَیْكَ وَ مَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَ بِالْاٰخِرَةِ هُمْ یُوْقِنُوْنَ،اُولٰٓىِٕكَ عَلٰی هُدًی مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
আলিফ-লাম-মীম। এটি একমাত্র কিতাব। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা হেদায়েত সেসব ভীতি অবলম্বনকারীদের জন্য, যারা অদৃশ্য জিনিসসমূহে ঈমান রাখে। যত্নের সঙ্গে সালাত আদায় করে। এবং তাদেরকে আমি যা কিছু দিয়েছি তা থেকে (আল্লাহর সন্তোষজনক কাজে) ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতিও। তারা আখেরাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। এরাই আপন রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের উপর রয়েছে। আর তারাই সফলকাম। -সূরা বাকারা (২) : ১-৫
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের পাঁচটি গুণের কথা তুলে ধরেন।
এক. যারা অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে।
দুই. যথাযথভাবে নামায আদায় করে।
তিন. আল্লাহর দেওয়া রিযিক থেকে খরচ করে।
চার. আপনার উপর এবং আপনার পূর্বে অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতি ঈমান আনে।
পাঁচ. আখেরাতের প্রতি ঈমান আনে।
এই আয়াতে মুত্তাকীর মোট পাঁচটি গুণের কথা তুলে ধরেছেন। এই পাঁচটি গুণ যে অর্জন করতে পেরেছে তাকে আল্লাহ তাআলা সফল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। আর যে তা অর্জন করেছে তার জন্য হেদায়েতের উপর থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَیْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَ الْمَغْرِبِ وَ لٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ الْمَلٰٓىِٕكَةِ وَ الْكِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ
وَ اٰتَی الْمَالَ عَلٰی حُبِّهٖ ذَوِی الْقُرْبٰی وَ الْیَتٰمٰی وَ الْمَسٰكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ السَّآىِٕلِیْنَ وَ فِی الرِّقَابِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوةَ وَ اٰتَی الزَّكٰوةَ
وَ الْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عٰهَدُوْا وَ الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِ اُولٰٓىِٕكَ الَّذِیْنَ صَدَقُوْا وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ.
পুণ্য তো কেবল এটাই নয় যে, তোমরা নিজেদের চেহারা পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং পুণ্য হল (সেই ব্যক্তির কার্যাবলি) যে ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, শেষ দিন ও ফিরিশতাদের প্রতি এবং (আল্লাহর) কিতাব ও নবীগণের প্রতি। আর আল্লাহর ভালবাসায় নিজ সম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজন, এতীম, মিসকীন, মুসাফির ও যাচ্ঞাকারীদেরকে এবং দাসমুক্তিতে এবং সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় এবং যারা কোনো প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণে যত্নবান থাকে এবং সঙ্কটে, কষ্টে ও যুদ্ধকালে ধৈর্যধারণ করে। এরাই তারা, যারা সত্যবাদী (নামে অভিহিত হওয়ার উপযুক্ত) এবং এরাই মুত্তাকী। -সূরা বাকারা (২) : ১৭৭
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের ছয়টি গুণের কথা তুলে ধরেছেন :
এক. আল্লাহ তাআলার প্রতি ঈমান আনা।
দুই. আখেরাতের প্রতি ঈমান আনা।
তিন. ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা।
চার. কিতাবের প্রতি ঈমান আনা।
পাঁচ. নবীদের প্রতি ঈমান আনা।
ছয়. সম্পদের প্রতি মনের টান থাকা সত্ত্বেও তা নিকটাত্মীয়, এতীম, মিসকীন, মুসাফির, যাঞ্চাকারী ও গোলাম আযাদের জন্য দান করা।
সাত. যথাযথভাবে নামায আদায় করা।
আট. যাকাত আদায় করা।
নয়. প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।
দশ. দুঃখ-দুর্দশা ও সংঘাতের সময় ধৈর্য ধারণ করা।
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের মোট দশটি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। এই দশটি গুণ যে অর্জন করেছে তাকে আল্লাহ সত্যবাদী বলে আখ্যা দিয়েছেন। অর্থাৎ সে ব্যক্তি তার জীবনে কথা ও কাজে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পেরেছে। অর্থাৎ সে যেমন নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহ ও অন্যান্য জরুরি বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে। ঠিক যেসব কাজ বাস্তবে করা প্রয়োজন তা সে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আঞ্জাম দিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
قُلْ اَؤُنَبِّئُكُمْ بِخَیْرٍ مِّنْ ذٰلِكُمْ لِلَّذِیْنَ اتَّقَوْا عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ خٰلِدِیْنَ فِیْهَا وَ اَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ
وَّ رِضْوَانٌ مِّنَ اللهِ وَ اللهُ بَصِیْرٌۢ بِالْعِبَادِ،اَلَّذِیْنَ یَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَ قِنَا عَذَابَ النَّارِ،اَلصّٰبِرِیْنَ
وَ الصّٰدِقِیْنَ وَ الْقٰنِتِیْنَ وَ الْمُنْفِقِیْنَ وَ الْمُسْتَغْفِرِیْنَ بِالْاَسْحَارِ.
বল, আমি কি তোমাদেরকে এসব অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জিনিসের সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে এমন বাগ-বাগিচা, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে এবং (তাদের জন্য আছে) পবিত্র স্ত্রী ও আল্লাহর পক্ষ হতে সন্তুষ্টি। আল্লাহ সকল বান্দাকে ভালোভাবে দেখছেন। যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা (তোমার প্রতি) ঈমান এনেছি। সুতরাং আমাদের পাপরাশি ক্ষমা কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, ইবাদতগোযার, (আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে) অর্থ ব্যয়কারী এবং সাহরীর সময় ক্ষমা প্রার্থনাকারী। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৫-১৭
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীর যেসব গুণ বর্ণনা করেছেন তা হল :
এক. যারা নিজেদের ঈমানের উছিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের গুনাহ ক্ষমার আবেদন জানায়।
দুই. যারা জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের দুআ করে।
তিন. যারা ধৈর্যশীল।
চার. যারা সত্যবাদী।
পাঁচ. যারা আল্লাহর দরবারে বিনয়াবনত।
ছয়. যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে।
সাত. যারা ভোর বেলায় আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনায় মগ্ন থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰی مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ،الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ
وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ وَ اللهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ،وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوْبِهِمْ وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ.
এবং নিজ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও সেই জান্নাত লাভের জন্য একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা কর, যার প্রশস্ততা আকাশম-ল ও পৃথিবীতুল্য। তা সেই মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে- যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর জন্য অর্থ) ব্যয় করে এবং যারা নিজের ক্রোধ হজম করতে ও মানুষকে ক্ষমা করতে অভ্যস্ত। আল্লাহ এরূপ পুণ্যবানদেরকে ভালবাসেন। এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে—আর আল্লাহ ছাড়া আর কেইবা আছে, যে গুনাহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনেশুনে তাদের কৃতকর্মে অবিচল থাকে না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৩-১৩৫
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের যেসব গুণাবলি উল্লেখ করেছেন তা হল-
এক. যারা সুখে-দুঃখে আল্লাহর রাস্তায় দান করে।
দুই. যারা ক্রোধ সংবরণ করে।
তিন. যারা লোকদেরকে ক্ষমা করে।
চার. যাদের থেকে কোনো গুনাহের কাজ ঘটে গেলে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করে বসলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং পরক্ষণেই নিজেদের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
পাঁচ. যারা তাদের থেকে ঘটে যাওয়া গুনাহের উপর জেনেশুনে অবিচল থাকে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ اُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِیْنَ غَیْرَ بَعِیْدٍ، هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِیْظٍ،مَنْ خَشِیَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَیْبِ وَ جَآءَ بِقَلْبٍ مُّنِیْبٍ.
আর মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতকে এত নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে যে, কোনো দূরত্বই বাকি থাকবে না। (এবং বলা হবে যে,) এই সেই জিনিস, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে এভাবে দেওয়া হত যে, এটা প্রত্যেক এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ-অভিমুখী থাকে এবং নিজেকে রক্ষা করে চলে। যে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে- তাঁকে না দেখেই। এবং আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী অন্তর নিয়ে আসে। -সূরা কফ (৫০) : ৩১-৩৩
এই আয়াতগুলোতেও আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের কয়েকটি গুণাবলির কথা তুলে ধরেছেন :
এক. যে ব্যক্তি আল্লাহ-অভিমুখী হয়।
দুই. নিজেকে রক্ষাকারী। অর্থাৎ সবসময় সতর্ক থাকে। আল্লাহ তাআলার বিধিবিধান পালনে সদা সজাগ দৃষ্টি রাখে। সবধরনের গুনাহ থেকে অত্যন্ত সন্তর্পণে বেঁচে থাকে ।
তিন. আল্লাহকে না দেখেও ভয় করে।
চার. আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তনকারী অন্তর নিয়ে আল্লাহর দরাবারে হাজির হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় ইরশাদ করেন-
یَوْمَ لَا یَنْفَعُ مَالٌ وَّ لَا بَنُوْنَ،اِلَّا مَنْ اَتَی اللهَ بِقَلْبٍ سَلِیْمٍ .
যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো কাজে আসবে না। তবে যে সুস্থ অন্তর নিয়ে হাজির হবে। (সেই নাজাত লাভ করতে পারবে।) -সূরা শুআরা (২৬) : ৮৮-৮৯
উপরে কুরআন মাজীদ থেকে কিছু আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে মুত্তাকীদের বিভিন্ন গুণাগুণ আলোচিত হয়েছে। মুত্তাকী ব্যক্তি এসব গুণ অর্জন করায় তার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সুসংবাদ। আখেরাতে তার জন্য থাকবে নানা নিআমত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা। কুরআন মাজীদে মুত্তাকীদের জন্য যেসব সুসংবাদ ও প্রতিদানের কথা এসেছে তা অত্যন্ত সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হল :
এক. মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার মহব্বত ও ভালবাসা লাভ করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
اِنَّ اللهَ یُحِبُّ الْمُتَّقِیْنَ.
নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন। -সূরা তাওবা (৯) : ৪
দুই. মুত্তাকীগণ দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত ও দয়া লাভ করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ رَحْمَتِیْ وَ سِعَتْ كُلَّ شَیْءٍ فَسَاَكْتُبُهَا لِلَّذِیْنَ یَتَّقُوْنَ.
আর আমার দয়া—সে তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি এ রহমত (পরিপূর্ণভাবে) সেই সব লোকের জন্য লিখব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে...। -সূরা আ‘রাফ (৭) : ১৫৬
তিন. তাকওয়া মুত্তাকীদের জন্য ঈমান ও হেদায়েতের আলো প্রজ্জলিত করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَ اٰمِنُوْا بِرَسُوْلِهٖ یُؤْتِكُمْ كِفْلَیْنِ مِنْ رَّحْمَتِهٖ وَ یَجْعَلْ لَّكُمْ نُوْرًا تَمْشُوْنَ بِهٖ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তাহলে তিনি তোমাদেরকে তাঁর রহমতের দুটি অংশ দান করবেন। তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন এমন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা হাদীদ (৫৭) : ২৮
চার. মুত্তাকীগণ দুনিয়াতে হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত আর আখেরাতে সফলকাম। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
اُولٰٓىِٕكَ عَلٰی هُدًی مِّنْ رَّبِّهِمْ وَ اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ.
এরাই আপন রবের পক্ষ থেকে হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম। -সূরা বাকারা (২) : ৫
পাঁচ. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য থাকবে চির নিআমতরাজির উদ্যান। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
اِنَّ الْمُتَّقِیْنَ فِیْ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوْنٍ.
নিশ্চয়ই মুত্তাকীগণ বিভিন্ন বাগবাগিচা ও নানা প্রস্রবণের মাঝে থাকবে। -সূরা হিজর (১৫) : ৪৫
ছয়. মুত্তাকীগণ আল্লাহ তাআলার বিশেষ সাহায্য লাভ করে থাকে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِیْن.
জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মুত্তাকীদের সঙ্গে রয়েছেন। -সূরা বাকারা (২) : ১৯৪
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফীক দান করুন- আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।