তাঁদের প্রিয় কিতাব
বেশ কিছুদিন থেকেই তালেবে ইলম ভাইদের জন্য আকাবির ও আসলাফের প্রিয় কিতাবসমূহ সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে কাজটি বিলম্বিত হচ্ছিল। বিলম্বের একটি কারণ এটিও ছিল যে, আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রবন্ধটিকে তথ্যবহুল ও সুবিন্যস্ত রূপ দিতে চাচ্ছিলাম যাতে علوم عالية এর সকল শাখা এবং علوم آلية এর জরুরি শাখার যে গ্রন্থগুলোকে কোনো কোনো মনীষী নির্বাচিত গ্রন্থের বা উপকারী গ্রন্থের তালিকায় শুমার করেছেন তার একটি সূচি ও সেই গ্রন্থগুলোর পরিচিতি উল্লেখ করা হবে। পরে এই ভাবনা আসল যে, এভাবে পূর্ণাঙ্গতার চিন্তায় অপেক্ষা করতে থাকা এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য
ما لا يدرك كله لا يترك كله.
অনুযায়ী ইরাদা করেছি, উপরোক্ত বিষয়ে যখন যতটুকু সম্ভব হয় তা-ই বন্ধুদের খেদমতে উপস্থাপন করতে থাকব। এরপর এর বিন্যাস ও পূর্ণতাদানের কাজ পরবর্তীতেও করা যাবে ইনশাআল্লাহ।
পূর্বকথা
গ্রন্থ নির্বাচনের বিষয়টি একটি আপেক্ষিক বিষয়। এতে সময় ও পরিবেশ, যাদের জন্য নির্বাচন করা হচ্ছে তাদের যোগ্যতা এবং নির্বাচনকারীর রুচি ইত্যাদি সব কিছুরই প্রভাব থাকে। এজন্য পছন্দে পছন্দে তারতম্য হওয়া খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। তাছাড়া বর্তমান সময় পর্যন্ত যে কিতাবগুলোকে পছন্দ করা হয়েছে তার সূচি দিতে গেলে একটি দীর্ঘ সূচিপত্র তৈরি হবে, যেখান থেকে পুনরায় বাছাই করার প্রয়োজন দেখা দিবে। এ জন্য তালিবে ইলমগণ সর্বাবস্থায় তাদের শিক্ষা-মুরব্বী বা তাদের চেয়ে অগ্রগামী পথিকের রাহনুমায়ীর মুখাপেক্ষী। তাঁদের সামনে অবস্থা পেশ করে নিজ নিজ অবস্থার উপযুক্ত কিতাবাদি নির্বাচন করা জরুরি।
২. কোনো গ্রন্থ নির্বাচিত হয় সমষ্টিগত বিবেচনার ভিত্তিতে। এরপর তাতে রুচি ও বিচারেরও প্রভেদ থাকে। কোনো একটি গ্রন্থ কারও কাছে নির্বাচিত বা পছন্দনীয় হওয়ার অর্থ কখনো এই হয় না যে, নির্বাচিত গ্রন্থটি সকল দিক-বিচারে সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ের সকল গ্রন্থের চেয়ে ভালো। এই অর্থও হয় না যে, এই গ্রন্থে কোনো ধরনের ইলমী ত্রুটি নেই।
أبى الله العصمة لكتاب غير كتابه
নীতিটি সর্বজন স্বীকৃত ও সর্ব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৪. এ প্রসঙ্গে এ কথা বলাই বাহুল্য যে, পছন্দকৃত গ্রন্থাদির একটি সুচি তৈরি করতে গেলে এখানে ওই সব গ্রন্থই স্থান পাবে, যা মানুষের রচনা বা সংকলন। আল্লাহর কালামে পাক অর্থাৎ আলকুরআনুল কারীমের উল্লেখ এই সূচির উর্ধ্বে। এটা সকল মুসলিমের জীবনের সঙ্গী ও মহব্বতের পয়গাম। এই কিতাব থেকে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী হিদায়াত গ্রহণ করা এবং যার পক্ষে যে পর্যায়ের হিদায়াত গ্রহণ সম্ভব তা গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অপরিহার্য। এখানে তো নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। যেহেতু খুব সহজেই আমরা এই ফরমানে ইলাহী পেয়ে গেছি এবং সর্বদা তা আমাদের সামনে থাকছে তাই যে গুরুত্বের সঙ্গে এখান থেকে নির্দেশনা ও বরকত গ্রহণ করা জরুরি ছিল তা আমাদের অনেকের পক্ষেই হয়ে ওঠে না। এটি অত্যন্ত আফসোসের ব্যাপার।
ইতিমধ্যে দায়ীয়ে ইসলাম হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নাদভী রাহ-এর চিঠিপত্রের একটি সংকলন নজরে পড়েছে। সেখানে সহকর্মী মাওলানা আব্দুস সালাম নাদভী রহ.কে লেখা তাঁর একটি পত্র দেখলাম, যা তিনি হিজাযের কোনো এক সফরে মাদরাসাতুল উলূমিশ শরইয়্যাহ, মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ১৩৬৬ হিজরীর যিলকদ মাসে লিখেছিলেন। পত্রের নিম্নোক্ত কথাটিতে এসে আমার দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল। তিনি লেখেন,
‘মাদরাসা (দারুত্ তাওহীদ, তায়েফ) পরিদর্শন করলাম। তালিবে ইলম ও আসাতিয়ায়ে কেরামের সামনে আলোচনা করেছি। আলোচনায় তিনটি বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। একটি হল, কুরআন মজীদ এই মানসিকতা নিয়ে অধ্যয়ন করা উচিত যে, আজ পর্যন্ত যেন কুরআনের সাথে কোনো জানাশোনা ছিল না, এটি একটি নতুন জিনিস, যার সঙ্গে এই মাত্র পরিচয় হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আরব মুসলমান এবং দীর্ঘ বংশ পরম্পরায় মুসলমানদের জন্য কুরআন মজীদ ও ইসলামের মর্যাদা ও মাহাত্য অনুধাবন করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক তা এই মানসিকতা যে, এটা তো ওই কুরআনই, যা আমরা রাতদিন পড়ে থাকি ও শুনে থাকি এবং যা নাযিল হওয়ার পর থেকে সাড়ে তেরো’শ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। এই দীর্ঘ সময় এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিল। এই তায়েফভূমির কথাই ধরুন, আপনাদের হয়তো এই অনুভূতিও হয় না যে, আপনারা কোন ভূমির উপর দিয়ে চলছেন, এই ভূমিতে একদা কী কী ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু আমরা যারা পরদেশী তাদের জন্য এই ভূমির প্রতিটি বালুকণার মধ্যেও আকর্ষণ রয়েছে। কেননা, আমরা আগ্রহ, অনুরাগ ও কৌতূহল নিয়ে এই ভূমির প্রতি দৃষ্টিপাত করে থাকি। আপনারাও এই মানসিকতা নিয়ে কুরআন পড়–ন যে, আজ পর্যন্ত এই কুরআনের ব্যাপারে যেন আপনাদের কোনো অবগতি ছিল না। যেন এই কুরআন আজই অবতীর্ণ হয়েছে। এরপর দেখবেন, কীভাবে কুরআনের সৌন্দর্য ও মাহাত্য আপনাদের সামনে প্রকাশ পেতে থাকে।’
-মাকতূবাতে মুফাককিরে ইসলাম মাওলানা সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নাদভী ১/২০৩-২০৪, মজলিসে নশরিয়াতে ইসলাম, করাচী, পাকিস্তান
হযরত মাওলানা আলী মিয়া যখন ‘আননাদওয়া’-এর সম্পাদক ছিলেন সে সময় তিনি ميرى محسن كتابیں শিরোনামে একটি বিভাগ আরম্ভ করেছিলেন। তখন তিনি হিন্দুস্তানের প্রসিদ্ধ আলিম ও চিন্তাবিদগণকে আহ্বান জানিয়েছিলেন,
তারা যেন সাধারণ পাঠকদের উপকারার্থে এবং এ পথের নতুন পথিকদের পথনির্দেশনার জন্য ওই কিতাবগুলোর কথা উল্লেখ করেন, যেগুলো তাদের চিন্তা ও মানসিকতা গঠনে এবং তাদের জীবন ও চরিত্র নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে এবং তাদের চিন্তা-চেতনায় গভীর ছাপ এঁকে দিয়েছে।
মাওলানা আলী মিয়া রহ.-এর এই দাওয়াতনামার উত্তরে হিন্দুস্তানের একজন প্রসিদ্ধ চিন্তাবিদ লেখেন,
‘কিছু দিন আগে আপনার পত্র পেয়েছি। ‘আমি যে সব গ্রন্থের প্রতি কৃতজ্ঞ’ শিরোনামে কিছু লেখার কথা ছিল। আমি পত্রটির জওয়াব দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। এখন আপনাকে চিঠি লিখতে গিয়ে কথাটি মনে পড়ছে।
জাহেলী যুগে আমি অনেক কিছুই পড়েছি। প্রাচীন ও আধুনিক দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি বিষয়ে একটি বড়সড় লাইব্রেরি স্মৃতিতে গচ্ছিত করেছি, কিন্তু যখন চোখ খুলে কুরআন পড়লাম তখন খোদার কসম, এমন মনে হতে লাগল যে, যা-কিছু পড়েছিলাম সব অতি তুচ্ছ ছিল। জ্ঞানের শিকড় এখন হাতে আসল। কান্ট, হেগেল, মার্কস এবং পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় চিন্তাবিদদের আমার কাছে শিশু মনে হতে লাগল এবং তাদের প্রতি করুণা জাগল-তারা সারা জীবন যে সকল জটিলতার সুরাহা করতে গিয়ে ঘুরপাক খেয়েছে এবং যে সব সমস্যার আলোচনায় বড় বড় গ্রন্থ রচনা করেছে, কিন্তু তার সমাধান উপস্থিত করতে সক্ষম হয়নি সেগুলোকে এই কিতাব এক দুই বাক্যে খুলে দিয়েছে। আহা! যদি এরা এই কিতাব সম্পর্কে অবগত হত তবে কি আর এভাবে তাদের জীবনকে বিনষ্ট করত?
আমার প্রকৃত মুহসিন এই এক কিতাব। এটিই আমাকে আমূল পরিবর্তিত করেছে। পশু থেকে ইনসান বানিয়েছে, অন্ধকার থেকে আলোতে এনেছে এবং এমন চেরাগ আমার হাতে দিয়েছে যে, জীবনের যে অঙ্গনেই দৃষ্টি ফেলি বাস্তবতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়, যেন এর উপর কোনো আবরণ নেই। ইংরেজি ভাষায় ওই চাবিকে গধংঃবৎ কবু বলে যার দ্বারা সকল তালা খুলে যায়। আমার জন্য এই কুরআনই হল গধংঃবৎ কবু। জীবনের যে তালাতেই এই চাবি সংযুক্ত করি তাই খুলে যায়। যে খোদা এই কিতাব দান করেছেন তার শোকর আদায়ে আমার যবান অক্ষম। -পুরানে চেরাগ ২/৩০৫-৩০৬
একজন তালিবে ইলমের সম্পর্ক কুরআনের সঙ্গে ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে উন্নিত হওয়া উচিৎ যে, উপরোক্ত বিষয়ে তার পূর্ণ ইতমিনান অর্জিত হয় এবং কোনো ধরনের তাকাল্লুফ ব্যতীত তার যবান ও কলম থেকে পূর্ণ ইতমিনানের সঙ্গে এই কথাটি উৎসারিত হয়। কুরআনের সঙ্গে ঈমান ও মহব্বতের ওই সম্পর্ক হওয়া কাঙ্খিত যা নিম্নোক্ত আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ مِنْ قَبْلِهٖۤ اِذَا یُتْلٰی عَلَیْهِمْ یَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ سُجَّدً وَّ یَقُوْلُوْنَ سُبْحٰنَ رَبِّنَاۤ اِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُوْلًاوَ یَخِرُّوْنَ لِلْاَذْقَانِ یَبْكُوْنَ وَ یَزِیْدُهُمْ خُشُوْعًا
আরও ইরশাদ হয়েছে
اِنَّمَا الْمُؤْمِنُوْنَ الَّذِیْنَ اِذَا ذُكِرَ اللّٰهُ وَ جِلَتْ قُلُوْبُهُمْ وَ اِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُهٗ زَادَتْهُمْ اِیْمَانًا وَّ عَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَكَّلُوْنَۚ.
বলা বাহুল্য হবে না যে, কুরআনের সঙ্গে শুধু চিন্তাবিদসুলভ বা শুধু জ্ঞানের সম্পর্ক কখনো যথেষ্ট নয়? কুরআনের সঙ্গে একজন মুমিনের অনুরাগের সম্পর্ক হওয়া উচিত যা উপরের আয়াতগুলোতে উল্লেখিত হয়েছে।
দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার কোনো এক শিক্ষাবর্ষের সূচনা মজলিসে কালামে পাক তিলাওয়াত হচ্ছিল। তিলাওয়াতের পর মাওলানা আলী মিয়াঁ দাণ্ডায়মান হলেন এবং মাসনুন খুৎবার পর বললেন।
‘একটু আগে ক্বারী সাহেবের মুখে আল্লাহর কালামের তিলাওয়াত শ্রবণকালে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমার সমগ্র সত্তা এ ভাব ও ভাবনায় তন্ময় ছিল যে, আমাকে ও মানবজাতিকে যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং বিশ্বজগতের যিনি স্রষ্টা তাঁর কালাম এক তুচ্ছ মানুষ তিলাওয়াত করছে আর আমি এক তুচ্ছতম মানুষ তা শ্রবণ করছি।
সুবহানাল্লাহ! আমার মতো গান্দা ইনসানের কী যোগ্যতা আছে যে, ‘পবিত্র স্রষ্টার বাণী’ উচ্চারণ করতে পারি, শ্রবণ করতে পারি এবং হৃদয়ঙ্গম করতে পারি!
আমার আল্লাহ আমাকে সম্বোধন করে কালাম করছেন, আর আমি তা শ্রবণ করছি এবং অনুভব করছি! মাটির মানুষের জন্য এ কোন আসমানী মর্যাদা ও সৌভাগ্য! তুচ্ছ মানুষ এ অত্যুচ্চ নেয়ামত লাভ করে কেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় না? আল্লাহর কালাম বুঝতে পারা তো এমন নেয়ামত যে, মানুষ যদি খুশিতে মাতোয়ারা এবং আনন্দে আত্মহারা হয়, আর লায়লার প্রেমে পাগল মজনুর মতো দেওয়ানা হয়ে যায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা কী বলব! আমাদের না আছে সে হৃদয়, না আছে সেই অনুভূতি।
সাহাবী হযরত উবাই ইবনে কা’আবের ঘটনা কি ভুলে গেছেন? ইতিহাসের পাতায় আবার নযর বুলিয়ে দেখুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘আল্লাহ তোমার নাম নিয়ে আমাকে বলেছেন যে, আমি যেন তোমাকে কুরআন পড়ে শুনাই।’
এ খোশখবর শুনে তিনি এমনই আত্মহারা হলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনেই খুশিতে চিৎকার করে বলে উঠলেন
أو سماني ربي
সত্যিই আল্লাহ আমার নাম নিয়েছেন! সত্যি আমার আল্লাহ উবাই বিন কা’আব বলে আমায় ডেকেছেন! সুবহানাল্লাহ! ইশকে ইলাহী ও ইশকে নবীর কেমন দিওয়ানা ছিলেন তাঁরা! এর হাজার ভাগের একভাগও কি আছে আমাদের কলবে, আমাদের অনুভবে?’ -জীবন পথের পাথেয়, পৃ. ২০-২১
ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে এই নিয়ামত নসীব করুন, আমীন।
আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহে প্রবন্ধটি শুরু হল। এবার আপনারা দুআ করুন, আল্লাহ তায়ালা যেন ইখলাস ও ইতকানের সঙ্গে এটি পূর্ণতায় পৌঁছে দেন এবং আমাদের সকলের জন্য উপকারী বানান। আমীন।
আজ এই ভূমিকামূলক আলোচনার পরই বিদায়ের অনুমতি চাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ পরবর্তী সাক্ষাতে বাকি কথাগুলো পেশ করা যাবে।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.