সফর ১৪২৮   ||   মার্চ ২০০৭

মায়ের মমতা

গত সোমবার বিএসইসি ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটানা প্রায় সাত ঘণ্টা আগুন নেভানো ও উদ্ধারের কাজে অংশ নিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের ১৫০ সদস্য। এদের সবাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছেন। আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম যে দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় তাদের মধ্যে একজন হলেন নাসির উদ্দীন। এক আলাপচারিতায় তিনি তুলে ধরেন অগ্নিকাণ্ডের সেই অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, ভবনের ভেতরে মানুষের আহাজারি শুনে বুকটা ধক করে কেঁপে উঠে। ভাবলাম, খালি একটা মই আর দুইটা ট্রলি দিয়ে কি এতগুলো মানুষকে বাঁচানো যাবে? সঙ্গে সঙ্গে ভাবলাম, গরীব দেশ, যন্ত্রপাতির অভাব তো সবয় সময়। আফসোস করে লাভ নেই। সময় নষ্ট না করে আমি ঝুলন্ত ট্রলি দিয়ে ভবনের উত্তর পাশে গেলাম। সেখানে পাঁচ তলায় দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে বেশ কয়েকজন কাঁদছিলেন। আমি ট্রলি নিয়ে কাছে গেলে কার আগে কে যাবে এই নিয়ে হুড়োহুড়ি আরম্ভ হল। আমি বললাম, আপনারা নার্ভাস হবেন না। সিরিয়াল করুন। ধৈয্যর্ ধরুন এবং আল্লাহকে ডাকুন। তারা শিশুর মতো আমার কথা মেনে নিয়ে লাইন করলেন। আমি প্রতিবারে চার-পাঁচজন করে পালাক্রমে ত্রিশ-পঁয়ত্রিশজনকে উদ্ধার করলাম। এরপর উত্তর দিকে মই ফিট করার জন্য ছাদে গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি শতাধিক মানুষের অসহায় মুখ। এ সময় আমি দেখালাম, একটি বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ওর মা চিৎকার করে কাঁদছেন। আমাকে বললেন, ভাই আমার ছেলেটাকে বাঁচান। ভাবলাম সময় যত গড়াবে শিশুটি তত অস্থির হয়ে পড়বে। ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। পরে ওকে উদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। সবাই নিজের প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত, কিন্তু মা তার সন্তানের জন্য দিশেহারা। তাঁকে বললাম, আপনার ওড়না দিয়ে ছেলেটিকে আমার পিঠে শক্ত করে বেঁধে দিন। তারপর ছয়-সাত বছরের ছেলেটিকে নিয়ে ১৫০ ফুট উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসি। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে বাচ্চাটির মা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসেন। আমি তৃপ্তি ভরে দেখলাম, মা বাচ্চাটিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। আমি আবার ছুটে গেলাম আমার কাজে।

সৌজন্যে : দৈনিক প্রথম আলো, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ইং 

 

 

advertisement