সফর ১৪২৮   ||   মার্চ ২০০৭

শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল প্রসঙ্গ
এ আবদার গণচেতনা বিরোধী

জরুরি অবস্থা ঘোষিত হওয়ার পর সারাদেশে একটি স্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সাধারণ জনগণ স্বস্তিবোধ করছেন। দুর্নীতির অভিযোগে অনেক রাজনীতিবিদ গ্রেফতার হয়েছেন। এতদিন যাদের কেশাগ্র স্পর্শ করাও ছিল কল্পনাতীত তারাই এখন রীতিমতো জেল  হাজতে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কর্মর্সূচিও  অব্যাহত গতিতে চলছে। চলছে ভেজাল বিরোধী অভিযান। পঁচা গম, কাঁকর মেশানো চাল এবং ব্যবহারের অনুপযুক্ত অন্যান্য সামগ্রী যৌথবাহিনীর অভিযানে উদ্ধার হচ্ছে। একাধিক ভেজাল তৈরির কারখানার সন্ধান বের হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে একটি পরিচ্ছন্নতার আবহ সৃষ্টি হয়েছে।  তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এসব পদক্ষেপে সাহসিকতার ছাপ থাকলেও চূড়ান্ত মূল্যায়নের সময় এখনো আসেনি।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেতে হলে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে দুর্নীতিবাজ আমলা ও ব্যবসায়ীদেরও চিহ্নিত করতে হবে। যুগের পর যুগ দুর্নীতির মাধ্যমে যারা এ দেশকে ছিবড়ে করে ফেলেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়ার দরকার। তবে এই ধর-পাকড়ের পরিস্থিতিতে কোনো নিরপরাধ মানুষ যাতে অন্যায় হয়রানির শিকার না হন সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান এই  অভিযানে সৎ ও ভালো মানুষের স্বস্তিবোধের যথেষ্ট কারণ থাকলেও এদেশের ধর্মবিদ্বেষী শ্রেণীটির আশান্বিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। সম্ভবত তারা বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাহসিকতায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং একটি অযৌক্তিক দাবি উত্থাপন করে বসেছেন।

কিছু কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিলের যে আবদারটি উত্থাপিত হয়েছে তার নেপথ্য প্রেরণা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। এই ছুটি বাতিলের যৌক্তিকতা দেখাতে গিয়ে তারা যে ব্যবসায়িক ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন তার সঙ্গে বাস্তবের কোনোই সংযোগ নেই। ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের যে সময়ের ব্যবধান তার বিচারে এবং মোবাইল ইন্টারনেটসহ আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিদ্যমান থাকতে এ ধরনের দাবি শুধু অবাস্তবই নয় রীতিমতো হাস্যকরও বটে। বলা বাহুল্য, এ দাবি উত্থাপন করে তারা এদেশের গণমানুষের চেতনা-বিরোধী অবস্থান প্রকাশ করেছেন।

আরও কৌতুকের ব্যাপার হল, অতিউৎসাহী একটি শ্রেণীকে এই ছুটি বাতিলের পক্ষে কুরআনী দৃষ্টিকোণ নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতে দেখা গেছে। তাদের কুরআনপ্রিয়তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে আলোচিত বিষয়ে তারা যে কুরআনের মর্মবাণী উদ্ধার করতে সক্ষম হননি তাও বলে দেওয়া দরকার। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলো তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের কারণেই রবিবার ছুটি পালন করে থাকে। তাদের অনুসরণ করে রবিবার ছুটি কাটানোর কথা পবিত্র কুরআনের কোন আয়াতে আছে তা কি তারা বলবেন? পবিত্র কুরআনে বরং ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা অনর্থক কাজকর্মে মগ্ন হয়ে জুমআর প্রতি অমনোযোগী হওয়ারই নিন্দা করা হয়েছে এবং রিযিকদাতা আল্লাহর প্রতি ভরসা রেখে তাঁর ইবাদত নিষ্ঠার সাথে পালন করার কথাই বলা হয়েছে।

ইসলামে জুমআর দিনের ফযীলতের কথা সর্বজনবিদিত। অনেকগুলো সহীহ হাদীসে এ দিনের গুরুত্ব, ফযীলত ও করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জুমআর দিন ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া, আগে আগে মসজিদে সমবেত হওয়া, যথাসম্ভব নফল ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করা  -এসব হাদীস শরীফের নির্দেশনা, যা অনুসরণ করা কুরআনী দৃষ্টিকোণ থেকেই অপরিহার্য। এদেশের সর্বস্তরের মুসলিম জনগণও জুমআর দিনকে একটি বিশেষ ফযীলতের দিন হিসেবে বিশ্বাস করে থাকেন। তাদের এই বিশ্বাস নিঃসন্দেহে কুরআন-হাদীস সম্মত। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের অপব্যাখ্যা কখনও কাম্য নয়। আমরা আশা করি, যারা এসব অযৌক্তিক আবদার জানাচ্ছেন তারা তা থেকে নিবৃত্ত হবেন এবং দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতির ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল হবেন।

 

 

advertisement