জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৪   ||   জানুয়ারি ২০২৩

সুবহে সাদিক
আমাদের মুশাহাদা রিপোর্ট

মাওলানা মুহাম্মাদ ফয়যুল্লাহ

আলহামদু লিল্লাহ, মাসিক আলকাউসারে মোট তেরটি কিস্তিতে সুবহে সাদিক কখন শুরু হয়- এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা পেশ করা হয়েছে। সুবহে সাদিক যে ১৮°-এর ভেতর শুরু হয়ে যায়- এর সপক্ষে বিস্তারিত দলীল-প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর বিপরীত সকল বাস্তবতা-বিরোধী দাবি ও আপত্তির খণ্ডন তুলে ধরা হয়েছে।

তেরতম কিস্তির শেষে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, আমাদের এই লেখাটি যদিও এখানে শেষ হয়নি; বরং আহসানুল ফাতাওয়ার  পরে আরো যারা এই বিষয়ে লিখেছেন তাদের লেখার উপরও পর্যালোচনা তুলে ধরা হবে, কিন্তু সেগুলো আলকাউসারে প্রকাশিত হবে না। সেই অংশ বইয়ে যুক্ত থাকবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু মুশাহাদার বিষয়টি মূলত পূর্বের লেখার অংশএর পঞ্চম ও ষষ্ঠ কিস্তিতে (অক্টোবর ও নভেম্বর ২০২১ ঈ.) বিভিন্ন দেশে হয়ে যাওয়া সমকালীন বহু মুশাহাদার বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের ভেতর যেহেতু আমাদের মুশাহাদা করার সুযোগ হয়নি তাই তখন আমাদের মুশাহাদার বিবরণ পেশ করা সম্ভব হয়নি। আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানী, এখন পেশ করার মতো আমাদের মুশাহাদার বিবরণও বিদ্যমান।

আমাদের মুশাহাদার বিবরণ পেশ করার পূর্বে এ পর্যায়ে মূল আলোচ্য বিষয়টি আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া সমীচীন মনে হচ্ছে। এক্ষেত্রে মূল বিষয় দুইটি। সুবহে সাদিক ও শাফাক। সুবহে সাদিক বিষয়ে কথা হচ্ছে, তা শুরু হয় ১৮°-এর ভেতর। আর সুবহে কাযিব প্রকাশিত হয় সুবহে সাদিকের আগে। এর শুরু সময়কে নির্ধারিত কোনো ডিগ্রি দ্বারা নির্ণয় করা হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতওয়ার দাবি হচ্ছে, সুবহে সাদিক শুরু হয় ১৫°-এ; এর আগে নয়। আর ১৮° হচ্ছে সুবহে কাযিব শুরু হওয়ার সময় এবং তা ১৫° পর্যন্ত দৃশ্যমান থাকে। ১৫°-এর পর থেকে সুবহে সাদিক শুরু হয়।

শাফাক সম্পর্কে কথা হচ্ছে, শাফাকে আবইয়াযের সময় ১৮°-এর  আগে শেষ হয়। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, ভোররাতের যে ধরনের আলোর নাম সুবহে সাদিক, সন্ধ্যার পর ঠিক সেই ধরনের আলোরই নাম শাফাকে আবইয়ায। সুতরাং ভোররাতে সুবহে সাদিক যত ডিগ্রিতে শুরু হয় সন্ধ্যারাতে শাফাকে আবইয়াযও তত ডিগ্রিতেই শেষ হয়। পক্ষান্তরে ভোররাতে সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার আগে যেমন সুবহে কাযিব  দেখা যায়, তেমনি সন্ধ্যারাতে শাফাকে আবইয়ায শেষ হওয়ার পর সুবহে কাযিবের মত শাফাকে কাযিবও দৃশ্যমান হয়। সুবহে কাযিব ও শাফাকে কাযিব এ দুটির মাঝে পার্থক্য শুধু এটুকু যে, সুবহে কাযিবের সময় হচ্ছে ভোররাতে ১৮°-এ দৃশ্যমান সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার আগে আর শাফাকে কাযিবের সময় হচ্ছে সন্ধ্যারাতে ১৮°-এ শাফাকে আবইয়ায শেষ হওয়ার পর।

শাফাকে আবইয়ায সম্পর্কে এই হচ্ছে সঠিক ও বাস্তবসম্মত কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হচ্ছে, শাফাকে আবইয়ায ১৫°-এ শেষ হয়ে যায়। ১৫°-এর পরপরই শাফাকে কাযিব শুরু হয় এবং ১৮°-এ শাফাকে কাযিব শেষ হয়ে যায়।

অতএব সুবহে সাদিক ও শাফাকে আবইয়ায উভয় ক্ষেত্রে ইখতেলাফের জায়গাটি হচ্ছে ১৮° থেকে ১৫°-এর মধ্যবর্তী সময়। ভোররাতে ১৮° থেকে ১৫°-এর সময় পর্যন্ত এবং সন্ধ্যারাতে ১৫°-এর সময় থেকে ১৮°-এর সময় পর্যন্ত। সঠিক মত অনুযায়ী এই সময় দিগন্তে আলো প্রশস্ত আকারে থাকে; দিগন্তের উপর লম্বালম্বিভাবে কিছুতেই নয়। আর আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হচ্ছে, এই সময় দিগন্তে আলো প্রশস্ত আকারে থাকে না; বরং দিগন্তের উপর লম্বালম্বি আকারে থাকে।

শাফাকের ক্ষেত্রে আরেকটি আলোচ্য বিষয় হচ্ছে শাফাকে আহমার তথা সূর্যাস্তের পর দৃশ্যমান লাল আভা কখন শেষ হয়শাস্ত্রজ্ঞদের মতে এর সময় ১৬°-এর আগে শেষ হয় না। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হচ্ছে, শাফাকে আহমার ১২°-তেই শেষ হয়ে যায়।

সুবহে সাদিক ও শাফাক সম্পর্কে এই হচ্ছে মূল আলোচ্য বিষয়। এই বিষয়গুলো স্মরণে রেখে সামনের মুশাহাদার বিবরণ পড়লে আশা করা যায় বিষয়টি বুঝতে সহজ হবে।

আলহামদু লিল্লাহ এ পর্যন্ত আমাদের মুশাহাদার দুটি পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। এই দুই পর্বের রিপোর্ট হুবহু সামনে উল্লেখ করা হল।

 

মুশাহাদার প্রথম পর্ব

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, পটুয়াখালী

 

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين، وعلى آله وأصحابه أجمعين. وبعد :

 

তারিখ : ৪ ঠা শাওয়াল ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ৬ মে ২০২২ ঈ. শুক্রবার দিবাগত সন্ধ্যা থেকে ৭ শাওয়াল ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ৯ মে ২০২২ ঈ. সোমবার সকাল পর্যন্ত।

মুশাহাদাকারীগণের নাম

১. মাওলানা মুহাম্মাদ আনোয়ার হুসাইন

(সদস্য, দারুল ইফতা, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

২. মাওলানা হুসাইন আহমাদ (যিম্মাদার, কিসমুদ দিরাসাত লিআকীদাতি খাতমিন নুবুওয়াহ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

৩. মাওলানা সায়ীদুল হক (নাযেম, আলমাকতাবাতুল ইলিকত্রুনিয়্যাহ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

৪. মাওলানা মুজাহিদ আহমাদ

(খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, রায়ধর, হবিগঞ্জ)

৫. মুহাম্মাদ ফয়যুল্লাহ (সদস্য, দারুল ইফতা, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

শাফাক মুশাহাদা

শাফাক মুশাহাদার স্থান

লেবুর বন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (২১.৮৪২৭° অক্ষাংশ, ৯০.০৮৫৪° দ্রাঘিমাংশ)

শাফাক মুশাহাদার বিবরণ

এখানে মোট তিন দিন সন্ধ্যায় শাফাক মুশাহাদার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কয়েকটি প্রতিবন্ধকতার কারণে পরিপূর্ণ মুশাহাদা সম্ভব হয়নি। দিগন্ত বেশ উপর পর্যন্ত কালো মেঘে ঢাকা ছিল। যার কারণে দেখা গেছে, সূর্য সমুদ্রপৃষ্ঠ বরাবর আসার প্রায় ছয় মিনিট আগেই মেঘের আড়ালে চলে যায়। দ্বিতীয়ত, মুশাহাদা স্থানের ডান দিকে কাছে ও দূরে অনেক বৈদ্যুতিক আলো ছিল। তৃতীয়ত, সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরই দিগন্তে চাঁদের আলো যুক্ত হয় এবং মুশাহাদার শেষ পর্যন্ত এর আলোর পরিমাণ বাড়তে থাকে। এসব প্রতিবন্ধক বিদ্যমান থাকায় শাফাক মুশাহাদায় কোনো ফলাফলে পৌঁছা সম্ভব হয়নি

সুবহে সাদিক মুশাহাদা

সুবহে সাদিক মুশাহাদার স্থান

লাল কাকড়ার দ্বীপ, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (২১.৮০৪৯৮১৩° অক্ষাংশ ও ৯০.২১৯১৮৮৪° দ্রাঘিমাংশ)।

মুশাহাদাস্থলের অবস্থার বিবরণ

উদয়স্থল থেকে খুব কাছে উত্তরে ৪৫°-এর ভেতর খুব উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলো ছিল। আলোর কেন্দ্র থেকে উদয়স্থল পর্যন্ত উক্ত আলোর প্রভাব সুস্পষ্ট ছিল। উদয়স্থল উক্ত আলো দ্বারা কিছুটা আলোকিত ছিল। এই অবস্থা আমরা রাত ৩:১৫ -এ পৌঁছেই দেখেছিএই আলোর সূত্র হল, পায়রা বন্দর ও পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আলো। মুশাহাদার স্থান থেকে পূর্ব-উত্তরে ২১ কি. মি. দূরত্বে পায়রা বন্দর অবস্থিত। তার পাশেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যমান। এ দুটোর আশেপাশে আরো অনেকগুলো বৈদ্যুতিক আলোর উৎস রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সূর্য উদয়স্থল বরাবর এবং তার উত্তর-দক্ষিণে দূরে সাগরের ভেতর মাছ ধরার অনেকগুলো নৌকা ও নৌযানের বাতির মিটি মিটি আলো ছিল।

সুবহে সাদিক মুশাহাদার বিবরণ

এই জায়গায় মোট তিন দিন সুবহে সাদিক মুশাহাদার চেষ্টা করা হয়। প্রথম দিন ছিল, ৫ শাওয়াল ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ৭ মে ২০২২ ঈ.। শুক্রবার দিবাগত ভোর রাত। ১৮°-এ সময়ের প্রায় ৪৫ মিনিট পূর্ব থেকে রাত ৩:১৫ মিনিটে মুশাহাদা শুরু হয়। কিন্তু দিগন্ত ও দিগন্তের বেশ উপর পর্যন্ত কালো মেঘে ঢাকা ছিল। সাথে বৈদ্যুতিক আলোর উপরোক্ত প্রতিবন্ধকগুলো তো ছিলই। তাই এই দিন সুবহে সাদিক মুশাহাদা সম্ভব হয়নি।

দ্বিতীয় দিনও এই সময় মুশাহাদা শুরু হয়। এই দিনও আকাশের নিচের অংশ, অর্থাৎ দিগন্ত ও দিগন্ত থেকে উপরের অনেক অংশ পর্যন্ত মেঘ ও জলীয় বাষ্প দ্বারা আচ্ছন্ন ছিল। অতএব এই দিনও দিগন্ত পরিষ্কার ও মেঘমুক্ত না থাকায় এবং সামনে উদয়স্থলের বাম পাশে খুব উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলো থাকার কারণে ১৮°-এ সুবহে সাদিকের আলো স্পষ্টভাবে মুশাহাদা করা সম্ভব হয়নি। তবে ১৮°-এর পরপরই সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার বিভিন্ন আলামত পরিলক্ষিত হয়। এক তো হল, ৪:০৬ মিনিটে ১৭.৪৫°-এর সময় দিগন্তে প্রশস্তভাবে কিছুটা সাদা আভা দেখা গেছে, যা ৪:১৬ মিনিটে ১৫.৩৭°-এর সময় আরো স্পষ্ট হয়। আর এই সাদা আভা দিগন্তে বিদ্যমান জলীয় বাষ্প ও মেঘে সুবহে সাদিকের আলো পড়ার কারণে হয়ে থাকবে।

এক্ষেত্রে আরো বড় একটি আলামত হচ্ছে, ৪:০৬ মিনিট অর্থাৎ ১৭.৪৫°-এর সময় থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত পায়রা বন্দর ও পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বৈদ্যুতিক আলো ও তার রিফ্লেক্শন ক্ষীণ ও মলিন হওয়া শুরু হয়ে যায়। এই অবস্থা এটিই প্রমাণ করে যে, দিগন্তে সূর্যের আলোর প্রভাব শুরু হয়ে গেছে। এবং এই প্রভাব যতই বাড়ে উক্ত বৈদ্যুতিক আলোর প্রভাব কমতে থাকে। আর ১৫°-এর সময় এবং এর পরপরই অবস্থা এমন হয়েছে যে, চারপাশের পুরো পরিবেশটাতেই আলোর ঔজ্জ্বল্য বেড়ে যায় এবং উক্ত বৈদ্যুতিক আলোও অনেক মলিন হয়ে যায়। এ সবকিছু প্রমাণ করে যে, সুবহে সাদিক মূলত ১৫°-এর বেশ আগেই শুরু হয়ে গেছে। কেননা সুবহে সাদিক শুরু الخيط الأبيض তথা সাদা রেখার মতো খুবই হালকা ও ক্ষীণ আকারে। তখন পুরো পরিবেশ غلس তথা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে

তৃতীয় দিন ৭ শাওয়াল মোতাবেক ৯ মে। রবিবার দিবাগত ভোর রাত। এই দিন পুরো আকাশই মেঘাচ্ছন্ন ছিল। মুশাহাদা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। তাই মুশাহাদা সম্পন্ন করার আগেই স্থান ত্যাগ করতে হয়।

هذا، وصلى الله تعالى وسلم وبارك على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين وعلى آله وأصحابه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.

০৭-১০-১৪৪৩ হি.

০৯-০৫-২০২২ ঈ.

 

এ পর্যন্ত মুশাহাদার প্রথম পর্বের বিবরণ শেষ হল। কিন্তু এই মুশাহাদা অনেক অস্পষ্ট ছিল। এর মাধ্যমে চূড়ান্ত ও নিশ্চিত কোনো ফলাফলে পৌঁছা সম্ভব হয়নি। তাই মুশাহাদার জন্য আরো উপযুক্ত স্থানের সন্ধান চলতে থাকে। ইতিমধ্যে কথা প্রসঙ্গে আমাদের এক শ্রদ্ধাভাজন মুরব্বী আলেম সর্বপ্রথম আমাদেরকে পরামর্শ দেন বান্দরবানের নীলগিরি পাহাড়ে গিয়ে মুশাহাদা করতে। কারণ উক্ত স্থানটি বান্দরবানের পাহাড়গুলোর অনেক ভেতরে হওয়ায় সেখানে বৈদ্যুতিক আলোর প্রতিবন্ধক কম থাকার কথা এবং পাহাড়ের উপরে উঁচু স্থানে হওয়ায় সামনের দিকে দিগন্ত আড়ালে থাকার সম্ভাবনাও কম। সেজন্য পরবর্তীতে নীলগিরি পাহাড়ে মুশাহাদার জন্য যাওয়া হয় এবং সেখানে মুশাহাদা করে আলহামদু লিল্লাহ স্পষ্ট ও চূড়ান্ত ফলাফলে পৌঁছা সম্ভব হয়। সামনে সেই মুশাহাদার রিপোর্ট পেশ করা হল।

 

মুশাহাদার দ্বিতীয় পর্ব

 নীলগিরি, বান্দরবান

 

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد :

 

তারিখ : ২৮ রবিউল আখির ১৪৪৪ হিজরী = ২৪ নভেম্বর ২০২২ ঈ. বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা থেকে ২ জুমাদাল উলা = ২৭ নভেম্বর ২০২২ ঈ. রবিবার সকাল পর্যন্ত।

মুশাহাদার স্থান

নীলগিরি হিল রিসোর্ট (পাহাড়), বান্দরবান (২১.৯১০° অক্ষাংশ ও ৯২.৩২৫° দ্রাঘিমাংশ)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৬৭০ মিটার বা ২২০০ ফুট (প্রায়)।

মুশাহাদাকারীগণের নাম

১. মাওলানা মুহাম্মাদ আনোয়ার হুসাইন

(সদস্য, দারুল ইফতা, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

২. মাওলানা সায়ীদুল হক

(নাযেম, আলমাকতাবাতুল ইলিকত্রুনিয়্যাহ, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

৩. মাওলানা মুজাহিদ আহমাদ

(খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, রায়ধর, হবিগঞ্জ)

৪. মুহাম্মাদ ফয়যুল্লাহ

(সদস্য, দারুল ইফতা, মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা)

শাফাক মুশাহাদা

প্রথম দিন

তারিখ : ২৮ রবিউল আখির ১৪৪৪ হিজরী = ২৪ নভেম্বর ২০২২ ঈ. বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা।

দিগন্তের অবস্থার বিবরণ

দিগন্ত মোটামুটি পরিষ্কারই ছিলতবে হালকা কুয়াশার মতো ছিল।

মুশাহাদার বিস্তারিত বিবরণ

সূর্যাস্তের আগ থেকে মুশাহাদা শুরু হয়। সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর নামাযের সংক্ষিপ্ত বিরতি দিয়ে আবার মুশাহাদা চলতে থাকে।

৫:৫৪ মিনিট : এখনো শাফাকে আহমার (সূর্যাস্তের পর লাল আভা) পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

৬:০০ : এখনো সবার মতে শাফাকে আহমার বাকি আছে এবং এটি যে শাফাকে আহমার এতে কারো সন্দেহ নেই।

৬:০৩ মিনিট : লালচে ভাব আগের থেকে কমেছে। তবে লাল আভার পরিমাণই বেশি। সবাই এতে একমত।

৬:০৪ মিনিট : শাফাকে আবইয়ায শুরু হয়েছে এখনো বলা যায় না। সাদা এবং লাল সমান সমান।

উল্লেখ্য, ৬:০৪ মিনিট ১৩.৩৯°-এর সময়।

৬:১০ মিনিট : এখনো দিগন্তে ডানে-বামে বেশ প্রশস্ত আলো আছে।

৬:১৩ মিনিট : এখনো স্পষ্ট আকারে উভয় দিকে প্রশস্ত আলো আছে। এতে কারো সন্দেহ নেই।

৬:১৪ মিনিট : উভয় দিকে প্রশস্ত আকারের আলো আছে। مستطيل ও আকাশের উপর দিকে লম্বালম্বি নয় কিছুতেই। সবাই এতে একমত।

৬:১৮ মিনিট : এখনো দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি কোনো আলো কেউ দেখতে পাচ্ছেন না; বরং আলোটি দিগন্তেই প্রশস্ত আকারে আছে। তবে ডানে-বামে আগের থেকে সংকুচিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, ৬:১৮ মিনিট ১৬.৫১°-এর সময়।

৬:২১ মিনিট : সূর্যাস্তের জায়গায় এবং এর ডানে-বামে কিছু জায়গা নিয়ে দিগন্তে এখনো প্রশস্ত আলো আছে। উপরের দিকে مستطيل (দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি) আকার এখনো ধারণ করেনি।

উল্লেখ্য, ৬:২১ মিনিট ১৭.১৮°-এর সময়।

৬:২৪ মিনিট : দিগন্তে সূর্যাস্তের জায়গায় অল্প কিছু জায়গা নিয়ে এখনো হাল্কা আলো আছে। তবে مستطيل (দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি) এখনো হয়নি।

উল্লেখ্য, ৬:২৪ মিনিট ১৭.৮৫°-এর সময়।

৬:২৬ মিনিট : এখন দিগন্তে প্রশস্ত কোনো আলো নেই। তবে দিগন্তের উপরে খুবই হাল্কা একটি আলো দেখা যাচ্ছে।

৬:২৮ মিনিট : দিগন্তের উপরে ক্ষীণ একটি আলো দেখা যাচ্ছে। তবে এটি পুরো مستطيل (দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি)-ও মনে হচ্ছে না। দিগন্তে কোনো আলো নেই

ফলাফল

৬:০৪ মিনিট পর্যন্ত শাফাকে আহমার পরিষ্কার দেখা গেছে। ডিগ্রি হিসেবে তা প্রায় ১৩.৫°-এর সময় হয়ে থাকে। ৬:০৪ -এর পরও শাফাকে আহমার বাকি ছিল কি না তা নিশ্চিত নয়।

৬:২৪ মিনিট পর্যন্ত দিগন্তে প্রশস্ত হাল্কা আলো দেখা গেছে। আর সেটি ১৭.৮৫°-এর সময়। অর্থাৎ এই দিন বলতে গেলে ১৮° পর্যন্তই শাফাকে আবইয়ায দেখা গেছে। ১৮°-এর সময়ের পর দিগন্ত অন্ধকার হয়ে যায়।

উল্লেখ্য, এই দিন সেখানে ১২°-এর সময় শেষ হয় ৫:৫৭:৩৫ -এ।

১৫°-এর সময় শেষ হয় ৬:১১:০৭ -এ।

১৮°-এর সময় শেষ হয় ৬:২৪:৩৫ -এ।

দ্বিতীয় দিন

তারিখ : ২৯ রবীউল আখির ১৪৪৪ হি. জুমাবার দিবাগত সন্ধ্যা। (আজ সূর্যাস্তের পর জুমাদাল উলার নতুন চাঁদ আমরা দেখেছি) = ২৫ নভেম্বর ২০২২ ঈ.।

মুশাহাদার বিস্তারিত বিবরণ

৫:৫৬ মিনিট : শাফাকে আহমার স্পষ্ট বাকি আছে।

৫:৫৮ মিনিট : শাফাকে আহমার বাকি আছে। সবাই একমত।

৬:০০ : শাফাকে আহমার এখনো আছে। সবাই একমত।

৬:০৪ মিনিট : শাফাকে আহমার এখনো দেখা যাচ্ছে। সবার একই কথা।

৬:০৬ মিনিট : আহমার এখনো আছে। দুইজনের (ফয়যুল্লাহ ও মুজাহিদ) মতে লাল আভার পরিমাণ বেশি আর দুইজনের মতে সাদার পরিমাণ বেশি; লাল আভার পরিমাণ তুলনামূলক কম।

উল্লেখ্য, ৬:০৬ মিনিট ১৩.৮৩°-এর সময়।

৬:১২ মিনিট : উভয় দিকে বেশ প্রশস্ত আলো স্পষ্টভাবেই আছে। তবে লাল মনে হচ্ছে না।

৬:১৫ মিনিট : সাদা প্রশস্ত আলো দেখা যাচ্ছে। এতে কারো সন্দেহ নেই।

উল্লেখ্য, ৬:১৫ মিনিট ১৫.৮৩°-এর সময়।

৬:১৮ মিনিট : এখনো সাদা ও উভয় দিকে প্রশস্ত আলো আছে। তবে আগের থেকে সংকুচিত হয়েছে। কিন্তু আলোটি مستطيل (দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি) হয়নি। সবার একই বক্তব্য।

উল্লেখ্য, ৬:১৮ মিনিট ১৬.৫°-এর সময়।

৬:২২ মিনিট : সূর্যাস্তের জায়গার ডানে-বামে অল্প কিছু জায়গা নিয়ে দিগন্তে এখনো আলো আছে। مستطيل (দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি) হয়নি।

৬:২৪ মিনিট : দিগন্ত অনেকটা ঝাপসা হয়ে এসেছে।

৬:২৬-২৭ মিনিট : দিগন্তে কোনো আলো আছে বলে মনে হচ্ছে না। অন্যান্য অংশের মতো প্রায় অন্ধকার হয়ে গেছে।

ফলাফল

এই দিন ৬:০৬ মিনিট অর্থাৎ প্রায় ১৪° পর্যন্ত শাফাকে আহমার নিশ্চিতভাবে দেখা গেছে। এর পরের কিছু সময় আহমার না আবইয়ায তা নির্ণয়ে সন্দেহ হচ্ছিল। তবে আলোটি পুরোই প্রশস্ত ছিল। এমনকি ৬:২২ মিনিট পর্যন্ত শাফাকে আবইয়ায নিঃসন্দেহে দেখা গেছে। আর তা হচ্ছে ১৭.৪০°-এর সময়। এক্ষেত্রে বড় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আলোটি এ পর্যন্ত مستطيل (দিগন্তের উপরের দিকে লম্বালম্বি) হয়নি। ৬:২৪ মিনিটের দিকে দিগন্ত ঝাপসা হয়ে আসে। এরপর আর আলোর ধরন নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, এই দিন সেখানে ১২°-এর সময় শেষ হয় ৫:৫৭:৩৬ -এ।

১৫°-এর সময় শেষ হয় ৬:১১:০৯ -এ।

১৮°-এর সময় শেষ হয় ৬:২৪:৩৭ -এ।

তৃতীয় দিন

তারিখ : ১ জুমাদাল উলা ১৪৪৪ হি. = ২৬ নভেম্বর ২০২২ ঈ. শনিবার দিবাগত সন্ধ্যা।

মুশাহাদার বিস্তারিত বিবরণ

দিগন্তের উপরে মেঘ ছিল। দিগন্তের কালো রেখার উপরের অল্প কিছু অংশ মেঘমুক্ত ছিল। কিন্তু এই মেঘমুক্ত অংশের অল্প উপরেই ডানে-বামে পশ্চিম আকাশের অনেক অংশ জুড়ে মোটা রেখার মত কালো মেঘ ছিল। এছাড়াও পশ্চিম আকাশের বিভিন্ন অংশে খণ্ড খণ্ড মেঘ ছিল। তাছাড়া কিছুক্ষণ পর বাম দিকে চাঁদের আলোও যুক্ত হয়।

৫:৫৭ মিনিট : শাফাকে আহমার পুরাই বাকি আছে। লাল আভারই প্রাধান্য। সাথে সাদার হালকা মিশ্রণ হয়েছে। যদিও দিগন্তের মূল অংশের অনেকটাই কালো মেঘে ঢাকা।

৬:০০ : শাফাকে আহমার বাকি আছে। সবার কাছে এটি স্পষ্ট।

৬:০৪ মিনিট : শাফাকে আহমার এখনো দেখা যাচ্ছে। সবাই এতে একমত।

৬:০৬ মিনিট : শাফাকে আহমার এখনো শেষ হয়নি। সবার একই কথা। বিশেষ করে দিগন্তের কালো রেখা এবং এর উপরের কালো মেঘের মাঝের অংশে লাল একটু বেশি বোঝা যাচ্ছে।

৬:০৭ মিনিট : এখনো শাফাকে আহমার বাকি আছে বলা যায়।

৬:০৮ মিনিট : আহমার এখনো শেষ হয়নি। শাফাকে আবইয়ায শুরু হয়েছে বলা যায় না।

উল্লেখ্য, ৬:০৮ মিনিট ১৪.২৬°-এর সময়।

৬:১৩ মিনিট : এখনো ডানে-বামে কিছুটা প্রশস্ত আলো আছে।

উল্লেখ্য, ৬:১৩ মিনিট ১৫.৩৭°-এর সময়।

এরপর থেকে আলোর ধরন নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। মেঘ, কুয়াশা ও বাম দিকের চাঁদের আলো- এসব কিছুর কারণে সিদ্ধান্তমূলক কোনো মত প্রদান করা যাচ্ছে না। তাই তখন মুশাহাদা স্থগিত করা হয়।

ফলাফল

এই দিন ১৪°-এর অল্প কিছু পর পর্যন্তও শাফাকে আহমার দেখা গেছে, এবং ১৫.৩৭°-এর সময় পর্যন্ত ডানে-বামে প্রশস্ত আলো দেখা গেছে। এরপর আবহাওয়া ও পরিবেশগত বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে মুশাহাদা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, এই দিন সেখানে ১২°-এর সময় শেষ হয় ০৫:৫৭:৩৮ -এ।

১৫°-এর সময় শেষ হয় ০৬:১১:১১ -এ।

১৮°-এর সময় শেষ হয় ০৬:২৪:৪১ -এ।

একনজরে শাফাক মুশাহাদার ফলাফল

          তারিখ      শাফাকে আহমার         শাফাকে আবইয়ায

১        ২৪-১১-২২     ১৩.৫°                    ১৭.৮৫°

২        ২৫-১১-২২     ১৪°                       ১৭.৪০°

৩        ২৬-১১-২২     ১৪.২৬°            দেখা সম্ভব হয়নি

 

সুবহে সাদিক মুশাহাদা

প্রথম দিন

তারিখ : ২৯ রবিউল আখির ১৪৪৪ হিজরী = ২৫ নভেম্বর ২০২২ ঈ.। বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোর রাত।

মুশাহাদার স্থান ও দিগন্তের অবস্থার বিবরণ

সুবহে সাদিক মুশাহাদার সময় মুশাহাদার স্থলেই ডানে-বামে ও পেছনে রিসোর্টের লাইটের বেশ আলো ছিল। যার প্রভাব পূর্ব দিকে মুশাহাদাকারীদের দৃষ্টির সামনের দিকেও পড়ছিল। তাছাড়া সূর্যের উদয়স্থল বরাবর সামনের দিকে ৮ কি. মি. দূরত্বে অবস্থিত বলিপাড়া বাজার ও বিজিবি ক্যাম্পের লাইটের আলোতে আলোকিত মেঘের উজ্জ্বল খণ্ড দেখা যাচ্ছিল। যদিও তা মুশাহাদার স্থানের লেভেল বরাবর থেকে বেশ নিচে ছিল, এবং সরাসরি লাইটের আলো দেখা যাচ্ছিল না।

এক্ষেত্রে আরেকটি লক্ষণীয় দিক হচ্ছে, দিগন্তের কিছু অংশ পূর্ব দিকের পাহাড়ে ঢাকা ছিল। যার কারণে সূর্য দেখা গেছে সূর্যোদয়ের সময়ের প্রায় চার মিনিট পর।

মুশাহাদার বিস্তারিত বিবরণ

৪:২৫ মিনিট : তখন আমরা পর্যবেক্ষণ স্থলে পৌঁছি। মাওলানা আনোয়ার সাহেব ছাড়া বাকি তিনজন তখন সেখানে দিগন্তের উপরে লম্বালম্বি একটি হালকা আলো দেখেছেন। আলোটির উপরের মাথা সরু ও নিচের অংশ কিছুটা মোটা অর্থাৎ শঙ্কু (cone)  আকৃতির ছিল।

৪:৫২ মিনিট : দিগন্ত স্পষ্ট হওয়া শুরু হয়েছে এবং আলোটি প্রশস্ত হওয়া শুরু হয়েছে।

৪:৫৪ মিনিট : সবার মতেই উদয়স্থল এখন আলোকিত হয়ে গেছে। উদয়স্থল ও এর ডানে-বামে কিছু অংশ নিয়ে আলোটি প্রশস্ত হয়েছে।

৪:৫৫ মিনিট : উদয়স্থল-এর ডানে-বামের আলোটি দুই পাশ থেকে আরো স্পষ্ট হয়েছে। দিগন্ত অনেক স্পষ্ট হয়ে গেছে।

৪:৫৬ মিনিট : উদয়স্থল-এর দুই পাশের অনেক জায়গা নিয়ে আলোটি প্রশস্ত হয়ে গেছে। এটি এখন অনেক স্পষ্ট বিষয়। এখন দিগন্তের উপরে লম্বালম্বিভাবে কোনো আলো নেই- এই বিষয়টি একদম স্পষ্ট।

৫:০০ : এখন আলো অনেক প্রশস্ত। দিগন্ত আগের চেয়ে আরো পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

৫:০৩ মিনিট : আলোটি দিগন্তে পুরোই প্রশস্ত হয়ে গেছে। আলোর পরিমাণও অনেক বেড়ে গেছে। লালের মিশ্রণ শুরু হয়েছে।

৫:১১ মিনিট : সাদা এবং লালের পরিমাণ অর্ধেক অর্ধেক হয়ে গেছে।

৫:১৩ মিনিট : উপরের সাদা মেঘটিও লাল হয়ে গেছে।

৫:১৫ মিনিট : এখন পুরোই লাল।

ফলাফল

এই দিন ১৮°-এর সময়ের ২৫ মিনিট আগে সুবহে কাযিব দেখা গেছে। যা প্রায় ২৪°-এর সময় হয়ে থাকে। আর সুবহে সাদিক দেখা গেছে ৪:৫৪ মিনিটে। এই তারিখে সেখানে সূর্য তখন দিগন্তের ১৭.১৭° নিচে থাকে। আর হুমরা (সন্ধ্যা বেলার শাফাকে আহমারের মতো লাল আভা) দেখা গেছে ১২°-এর অনেক আগেই।

উল্লেখ্য, এই দিন সেখানে ১৮°-এর সময় হয় ৪:৫০:২২ -এ।

১৫°-এর সময় হয় ৫:০৩:৫০ -এ।

১২°-এর সময় ৫:১৭:২৩ -এ।

দ্বিতীয় দিন

তারিখ : ১ জুমাদাল উলা ১৪৪৪ হিজরী = ২৬ নভেম্বর ২০২২ ঈ.। জুমাবার দিবাগত ভোর রাত।

মুশাহাদার বিস্তারিত বিবরণ

ভোর ৪:২৩ মিনিটে আমরা মুশাহাদার স্থানে উপস্থিত হই। সেখানে যাওয়ার আগেই উক্ত স্থানের পেছন এবং ডান ও বাম দিক থেকে একেবারে কাছের তিনটি বাতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও আশপাশে কিছু দূরত্বে আরো বাতি ছিল। আকাশ অনেক পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে।

সেখানে পৌঁছার পরই পূর্ব দিগন্তে আকাশের উপরে লম্বালম্বি একটি আলো আছে বলে মনে হচ্ছিল।

৪:৩০ মিনিট : তখন সবাই নিশ্চিত হন যে, দিগন্তের উপরে একটি লম্বালম্বি আলো দেখা যাচ্ছে। এই উল্লম্ব আলোটির ডানে-বামে কোনো আলো নেই।  দিগন্তেও আলো দেখা যাচ্ছে না। আজকের এই আলোটি গতকাল থেকে আরো স্পষ্ট।

৪:৩৯ মিনিট : এই উল্লম্ব আলোটি এখনো স্পষ্টভাবে আছে। আগের থেকে আলোটির গোড়া কিছুটা মোটা হয়ে ত্রিভুজাকার ধারণ করেছে।

৪:৪১-৪২ মিনিট : আলোটি আগের থেকে কিছুটা কমা শুরু হয়েছে। উপর থেকে নিচের দিকেও নেমে যাচ্ছে।

৪:৪৪ মিনিট : আলোটি ক্ষীণ হয়ে শুধু এর নিচের অংশটুকু আছে। তবে ছড়ানোও শুরু হয়নি। দিগন্তও আলোকিত হয়নি।

৪:৪৭ মিনিট : আলোটি অনেক হালকা হয়ে আকাশের অন্যান্য অংশের সাথে মিলে যাওয়ার মতো হয়ে গেছে।

৪:৫০ মিনিট : মনে হচ্ছে আলোটি ছড়ানো শুরু করেছে।

৪:৫১ মিনিট : সবাই একমত, আলোটি ডানে-বামে ছড়িয়েছে এবং দিগন্ত স্পষ্ট হয়ে গেছে। দিগন্তের কাছে হালকা একটি কালো মেঘের রেখা দেখা যাচ্ছে। যা আগে দেখা যায়নি।

৪:৫২ মিনিট : প্রশস্ততা বাড়ছে। আগের থেকেও কিছু প্রশস্ত হয়েছে। দিগন্তে আলো বাড়ার প্রভাবে এখন উদয়স্থল বরাবর দিকে অবস্থিত বলিপাড়ার আলোটি কিছুটা মলিন হয়ে গেছে এবং আশপাশ থেকে আলোটিকে পার্থক্য করা যাচ্ছে। যা আগে করা যাচ্ছিল না।

৪:৫৬ মিনিট : দিগন্ত অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে।

৪:৫৭-৫৮ মিনিট : দিগন্ত পুরো আলোকিত হয়ে গেছে। ডানে-বামে উভয় দিকে প্রশস্ত আলো বেড়েছে।

৫:০২ মিনিট : একদম স্পষ্ট হয়ে গেছে। ডানে-বামে অনেক প্রশস্ত হয়ে গেছে।

৫:০৪ মিনিট : ইসফারের কাছাকাছি হয়ে গেছে।

৫:০৬ মিনিট : কিছুটা লালভাব যুক্ত হয়েছে।

৫:১৩ মিনিট : হুমরা বা লাল আভা খানিকটা বেড়েছে।

৫:১৫ মিনিট : লাল ও সাদা সমান সমান হয়ে গেছে। হুমরা (সন্ধ্যা বেলার শাফাকে আহমারের মতো লাল আভা) যে শুরু হয়ে গেছে তা স্পষ্ট।

ফলাফল

এই দিন সুবহে কাযিব দেখা গেছে ১৮°-এর ২৮ মিনিট আগে ৪:২৩ মিনিটে। যা ২৪.২৫°-এর সময় এবং ৪:৩০ মিনিটে (২২.৭°-এ) সবাই আরো নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি সুবহে কাযিবই। আর  সুবহে সাদিক দেখা গেছে ৪:৫১ মিনিটে ঠিক ১৮°-এর সময়। এ ব্যাপারে মুশাহাদাকারীগণ সবাই একমত। ৫:০৪ মিনিটে ১৫°-এর সময় আলোর পরিমাণ অনেক বেড়ে ইসফার-এর কাছাকাছি হয়ে যায়। (ইসফার কাকে বলে তা জানার জন্য দেখুন, মাসিক আলকাউসার, ডিসেম্বর ২১ ঈ., পৃ. ২৯) হুমরা (সন্ধ্যা বেলার শাফাকে আহমারের মতো লাল আভা) শুরু হয়ে যায় ১২°-এর অনেক আগেই।

উল্লেখ্য, এই দিন সেখানে ১৮°-এর সময় হয় ৪:৫১ -এ।

১৫°-এর সময় হয় ৫:০৪:২৬ -এ।

১২°-এর সময়  হয় ৫:১৮ -এ।

তৃতীয় দিন

তারিখ : ২ রা জুমাদাল উলা ১৪৪৪ হি. = ২৭ নভেম্বর ২০২২ ঈ.। শনিবার দিবাগত ভোর রাত।

মুশাহাদার বিবরণ

আজ ৪:২২ মিনিটে মুশাহাদা শুরু হয়। দিগন্তের উপরে কিছুটা সাদা মনে হচ্ছে। কিন্তু কারো কাছেই বিষয়টি পুরো স্পষ্ট হচ্ছে না, এটি কি সাদা মেঘ, না আলো। যদি এটি সাদা মেঘ হয় তাহলে কোনো আলোর প্রভাব না থাকলে তা এতো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কীভাবে- বিষয়টি বোঝা যাচ্ছে না। মোটকথা, আকাশ পরিষ্কার না মেঘাচ্ছন্ন বোঝা যাচ্ছে না।

৪:৫১ মিনিট : এখনো স্পষ্ট কোনো আলো বোঝা যাচ্ছে না।

৪:৫৫ মিনিট : এখন মনে হচ্ছে, দিগন্ত সাদা মেঘ ও কালো মেঘে ঢাকা।

৫:০২ মিনিট : সাদা মেঘটি আলোকিত হয়ে গেছে। অনেক স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আলোর একটি খণ্ড

৫:২৬ মিনিট : আকাশ কিছুটা আলোকিত। দিগন্তরেখা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এখানো খুব স্পষ্ট আলো দেখা যাচ্ছে না।

৬:০৪ মিনিট : আকাশ পুরোই মেঘাচ্ছন্ন দেখা যাচ্ছে। এমনকি ৬:৪০ মিনিটে অর্থাৎ সূর্যোদয়ের সময়ের আধা ঘণ্টা পরও সূর্য দেখা যায়নি।

ফলাফল

এই দিন মেঘের কারণে সুবহে সাদিকের আলো স্পষ্ট দেখা যায়নি। তবে এটুকু পরিষ্কার বোঝা গেছে যে, সুবহে সাদিক ১৫°-এর আগেই হয়ে গেছে। কারণ, মুশাহাদার শুরুর দিকে দিগন্তের অবস্থা বোঝা না গেলেও ৪:৫৫ মিনিটে ১৭.২°-এর সময় অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং দিগন্তের অবস্থাটি অনুমান করা যাচ্ছিল যে, তা সাদা ও কালো মেঘে ঢাকা। এক্ষেত্রে আরো সুস্পষ্ট আলামত হচ্ছে, ৫:০২ মিনিটে ১৫.৬৫°-এর সময় দিগন্তে দৃশ্যমান অনেক উজ্জ্বল ও আলোকিত মেঘের খণ্ড

 

একনজরে সুবহে সাদিক মুশাহাদার ফলাফল

০        তারিখ            সুবহে কাযিব              সুবহে সাদিক

১        ২৫-১১-২২     ২৪° প্রায়                    ১৭.১৭°

২        ২৬-১১-২২     ২৪.২৫°                       ১৮°

৩        ২৭-১১-২২     দেখা সম্ভব হয়নি        দেখা সম্ভব হয়নি

 

الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات.

هذا، وصلى الله تعالى وسلم وبارك على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين وعلى آله وصحبه أجمعين، والحمد لله رب العالمين.

০৬-০৫-১৪৪৪ হি.

০১-১২-২০২২ ঈ.

 

 

advertisement