রবিউল আখির ১৪৪৪   ||   নভেম্বর ২০২২

দানে ধন বাড়ে

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

জীবনে চলার পথে টাকাপয়সা লাগেই। অর্থসম্পদ টাকাপয়সা মানুষের জীবনের এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ অর্থ মানুষ উপার্জন করে, ব্যয় করে এবং সঞ্চয়ও করে। এ উপার্জন-ব্যয়-সঞ্চয়- সবই পার্থিব এ জীবনকে সাজিয়ে তোলার জন্যে, এ জীবনের সুখ ভোগ করার জন্যে। নিজের উপার্জিত সম্পদ দিয়ে মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটায়, মেটায় অধীনস্থ পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনও। কিন্তু সামর্থ্য সকলের সমান থাকে না। কারও কাছে সঞ্চিত হতে থাকে প্রয়োজন-অতিরিক্ত টাকার ভাণ্ডার, কারও হাতে থাকে না দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন পূরণের যৎসামান্য উপকরণ। এ পরিস্থিতিতে মানুষ এগিয়ে আসে মানুষের কল্যাণে। মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়। নিজের কষ্টার্জিত অর্থ বিলিয়ে দেয় অন্যদের প্রয়োজনে। দান বা সদকা বলে আমরা সাধারণত একেই বুঝি।

দান করলে ধনসম্পদ কমে, না বাড়ে- বিষয়টি যদি আমরা খোলা চোখে দেখি, তবে এ কথাই বলতে হয়- এতে ধন কমে যায়; নিজের মালিকানাধীন সম্পদের একাংশ চলে যায় আরেকজনের হাতে। কিন্তু যদি আরেকটু গভীরভাবে আমরা লক্ষ করি, সমাজের দানশীলদের প্রতি তাকাই, তখন আমাদেরকে স্বীকার করতেই হবে- দান করে কেউ দরিদ্র হয় না। দান করলে ধন কমে না, বরং বাড়ে। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিকতাবিরোধী। কিন্তু এ স্বাভাবিকতাবিরোধী বিষয়টিই বাস্তব। পবিত্র কুরআন এ বাস্তব, কিন্তু স্বাভাবিকতাবিরোধী বিষয়টির প্রতিই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এ বলে-

اَلشَّیْطٰنُ یَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَ یَاْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَآءِ  وَ اللهُ یَعِدُكُمْ مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَ فَضْلًا   وَ اللهُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ.

শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার ভয় দেখায় ও কৃপণতার আদেশ করে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও দয়ার কথা দিচ্ছেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। -সূরা বাকারা (২) : ২৬৮

আয়াতের মর্মে কোনো অস্পষ্টতা নেই। মানুষ যখন দান করতে চায়, শয়তান তখন তাকে অভাবের ভয় দেখায়। নিজের ভবিষ্যৎ, সন্তানের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি নানা বিষয় সামনে তুলে ধরে তাকে দান থেকে বিরত রাখতে চায়। দান করলে নিজের সম্পদ চলে যাবে অন্যের হাতে, এতে সম্পদ যাবে কমে- এসব তো স্বাভাবিক কথা-ই। স্বাভাবিকতার এ ফাঁদ পেতেই শয়তান মানুষকে দানের অবারিত সওয়াব থেকে বঞ্চিত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু আল্লাহ দয়াময় আমাদেরকে শয়তানের এ ফাঁদের কথা জানিয়ে দিচ্ছেন, এর পাশাপাশি নিজে দয়া করার প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। আল্লাহ যদি কাউকে দয়া করেন, তার আর ভয় কীসের! এ দয়ার প্রতি যার আস্থা অটুট, তার আবার কীসের দরিদ্রতা, কীসের অভাব! আল্লাহ তাআলা যে দানশীলদের দয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়; তিনি এরপর ঘোষণা করছেন- আল্লাহ প্রাচুর্যময়। কোনো কিছুর অভাব তাঁর নেই। তিনি সর্বজ্ঞ। জগতের সবই তাঁর জানা। কোনো কিছুই তাঁর অজানা নয়, তাঁর থেকে গোপন নয়। যাকে তিনি চান, তাকে তিনি দেবেন। তাঁর দেয়ার হাত সদা প্রসারিত। তাঁর দেয়া বড়ই অকৃপণ। তাঁর প্রাচুর্যেও কোথাও কোনো ঘাটতি নেই। তাঁর ইলম ও জ্ঞান, তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা- সবই অসীম। ফুরিয়ে যাবার ভয় নেই কোনো কিছুতেই। এমন সর্বব্যাপী ক্ষমতার অধিকারী যিনি, তিনি কথা দিচ্ছেন- নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ কেউ কাউকে দান করলে তাকে তিনি দুটি পুরস্কার দেবেন :

এক. পরকালে তাকে ক্ষমা করবেন।

দুই. দুনিয়াতে তার প্রতি দয়া করবেন। অর্থাৎ তার সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেবেন।

কিয়ামতের ময়দানে যখন মানুষের আমলের হিসাব হবে, তখন কারও হাতেই কোনো টাকাপয়সা থাকবে না। দুনিয়ার আমলই তখন একমাত্র সম্বল। হিসাবনিকাশের পর ভালো আমল যার বেশি হবে, তার খুশির কোনো সীমা থাকবে না। সে অন্যদের ডেকে ডেকে নিজের আমলনামা দেখাবে, পড়তে দেবে। আর যার মন্দ আমলের পাল্লা ভারি হয়ে যাবে, তার অবস্থা হবে ঠিক বিপরীত। নিজের কৃতকর্মের জন্যে আফসোস করা ছাড়া তার আর কিছুই করার থাকবে না। দুনিয়াতে মানুষ যখন শাস্তির মুখে পড়ে, তখন টাকাপয়সা দিয়ে তা থেকে মুক্তির চেষ্টা চালায়। কিন্তু ঐ সময় তো আর টাকাপয়সা থাকবে না কারও। যদি থাকত, তবে গোনাহের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্যে সবই সে তখন দান করে দিত। এমনকি দুনিয়াভর্তি সোনারূপাও যদি তখন কারও হাতে থাকত, দোজখের আজাব থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্যে সবই সে বিলিয়ে দিত। তবুও যদি রেহাই পাওয়া যেত! পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা সবই আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন। সূরা ইউনুসের ৫৪ নং আয়াত-

وَ لَوْ اَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِی الْاَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهٖ  وَ اَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَاَوُا الْعَذَابَ وَ قُضِیَ بَیْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَ هُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ.

(যারা জুলুম করেছে, তাদের প্রত্যেকের কাছেই যদি পৃথিবীর সকল সম্পদও থাকত, তবে তারা তা মুক্তিপণ হিসেবে দিয়ে দিত। যখন তারা শাস্তি দেখবে, তখন মনে মনে আফসোস করবে। তাদের মাঝে ন্যায়ের সঙ্গেই বিচার করা হবে। তাদের কাউকেই কোনো জুলুম করা হবে না।)

লক্ষণীয় বিষয় হল, গোনাহের অভিশাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে পরকালে মানুষ যে সম্পদ মুক্তিপণ হিসেবে দিতে চাইবে, মুক্তিপণ দিতে না পারায় এবং শাস্তি থেকে নিষ্কৃতি না পাওয়ায় কেবল আফসোস করবে, দুনিয়াতে সে সম্পদ দানেই আল্লাহ তাআলা গোনাহ মাফ করে দেয়ার কথা দিচ্ছেন। বোঝা গেল, সম্পদ দিয়ে শাস্তি থেকে বাঁচা যাবে। দুনিয়াতে মানুষের শাস্তি থেকে যেমন টাকার বিনিময়ে বাঁচা যায়, তা পরকালেও সম্ভব। তবে কথা হল, পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে টাকা ব্যয় করতে হবে দুনিয়াতে। দুনিয়ার দান পরকালের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে দেবে।

এ তো গেল দানের প্রথম পুরস্কার প্রসঙ্গ। দ্বিতীয় পুরস্কার- দান যে করবে, আল্লাহ তাকে উত্তম বিনিময় দেবেন। শুধু পরকালের পুরস্কারই নয়, দুনিয়ার জীবনেও সমৃদ্ধি দেবেন। এটা নগদ পুরস্কার। আল্লাহবিশ্বাসী মুমিন যারা, এ কথা তাদের অস্বীকার করার উপায় নেই। এমন পুরস্কারের ঘোষণা পবিত্র কুরআনে আরও আছে-

قُلْ اِنَّ رَبِّیْ یَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ وَ یَقْدِرُ لَهٗ وَ مَاۤ اَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَیْءٍ فَهُوَ یُخْلِفُهٗ وَ هُوَ خَیْرُ الرّٰزِقِیْنَ.

তুমি বলো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন, (যাকে ইচ্ছা) কমিয়ে দেন। আর তোমরা যা কিছুই দান কর, তিনি তার জায়গায় অন্য কিছু দিয়ে দেন। আর তিনিই তো শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা। -সূরা সাবা (৩৪) : ৩৯

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোর দিয়েই বলেছেন-

مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ.

কোনো দান-সদকাই সম্পদে ঘাটতি সৃষ্টি করে না। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫৮৮

এ তো পুরস্কারের এক দিক। অর্থাৎ কেউ যখন কিছু দান করে, আল্লাহ তাআলা পুরস্কারস্বরূপ তাকে এর বদলে সম্পদ আরও বাড়িয়ে দেন। তাই দান করলে সম্পদ কমে যাওয়ার ভয় নেই। মুমিনের বিশ্বাস এমনই।

পুরস্কারের আরেকটি দিক হল, দানসদকা মানুষকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করে। দান আল্লাহ তাআলার ক্রোধ দমিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা ইরশাদ করেছেন-

إِنّ الصّدَقَةَ لَتُطْفِئُ غَضَبَ الرّبِّ وَتَدْفَعُ مِيتَةَ السّوءِ.

নিশ্চয়ই দান আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং মন্দ মৃত্যু ঠেকিয়ে দেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৬৪

বান্দা যখন পাপ করে, আল্লাহ তাআলা এতে অসন্তুষ্ট হন। সে অসন্তুষ্টি দূর করার একটি সহজ উপায়- দান। আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি যদি দূর হয়, তিনি যদি সন্তুষ্ট থাকেন, স্বাভাবিক কথা, তখন আমরা নিরাপদে থাকব যাবতীয় বিপদাপদ থেকে, আমাদের জীবন হবে শান্তিময়।

অনাকাক্সিক্ষত কত বিপদে কত টাকা আমাদের হাত থেকে হারিয়ে যায়! বিপদ কখনো আসে চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারীর বেশে। কখনো আসে রোগশোক মামলা-মোকদ্দমা জাতীয় কোনো সংকটের বেশে। বিপদ যেমনই হোক, তাতে টাকাপয়সা যায়-ই। কখনো টাকা হারিয়ে যায়, কখনো কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যায়, কখনো আবার আমরা নিজেরাই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে টাকা বিলাই। অনাকাক্সিক্ষত খাতে স্বেচ্ছায় টাকা খরচ করি। প্রশ্ন হল, এভাবে হাসপাতালে কোর্টকাচারিতে দেয়ার জন্যে কিংবা চোরডাকাতের পকেট ভারি করার জন্যে কি কেউ টাকা উপার্জন করে? এ প্রশ্নের এ উত্তর সর্বজনবিদিত- এ সবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এগুলো আমরা চাই না। তবুও নানা সময় এসব ক্ষেত্রে আমাদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত সম্পদ চলে যায় কিংবা বিলিয়ে দিতে হয়। দান যদি আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অসন্তোষ দূর করে দিতে পারে, তবে আমরা এমন অনেক অনাকাক্সিক্ষত বিপদ থেকে বেঁচে যেতে পারব- সন্দেহ নেই।

দান করলে আল্লাহ তাআলা ধন বাড়িয়ে দেন- এ বাড়িয়ে দেয়ার এও এক প্রক্রিয়া। অর্থাৎ সম্পদ বৃদ্ধি কখনো পরিমাণের দিক থেকে হতে পারে। এটা খোলা চোখে দেখা যায়। কখনো বিষয়টি থাকে প্রচ্ছন্ন, লুক্কায়িত। অনেক সময় দানকারীও টের পায় না। কিন্তু এর ফল ঠিকই সে ভোগ করে। সম্পদ বৃদ্ধির প্রচ্ছন্ন দিকটি হচ্ছে- উপার্জিত সম্পদে বরকত লাভ। আল্লাহ যদি বরকত দেন, তবে অল্প আয়েও জীবন চলে যাবে পালতোলা নৌকার মতো তরতর করে। যেখানে হোঁচট খাওয়ার কোনো ভয় নেই, পা পিছলে যাওয়ারও নেই কোনো আশঙ্কা। ঘরভর্তি সম্পদ নয়, আমরা আমাদের উপার্জিত সম্পদে এ বরকতটাই চাই।

দানের আরেক পুরস্কার- আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভ। ঘরে-বাইরে আপদে-বিপদে আল্লাহ তাআলার সাহায্যই আমাদের একমাত্র ভরসা। সুখে-দুঃখে সদা-সর্বত্র তিনিই আমাদের একমাত্র আশ্রয়। মুমিন-মুসলমান যাদের পরিচয়, তারা আল্লাহকে ছেড়ে আর কারও কাছে সাহায্য চাইতেই পারে না। তিনিই প্রথম আশ্রয়, তিনিই শেষ আশ্রয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, যখন তুমি কিছু চাইব, আল্লাহর কাছে চাইবে। যখন সাহায্য চাইবে, আল্লাহর কাছেই চাইবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৬

কথা হল, যে মহান মালিকের সাহায্য চাইতে আমরা আদিষ্ট, সে সাহায্য যদি এমনিতেই পাওয়া যায়, তো আর কী চাই! আর মহাক্ষমতাধর আল্লাহ যখন কাউকে সাহায্য করবেন, তার আর অক্ষম মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে না- এটা বলাবাহুল্য। প্রয়োজনগ্রস্ত অসহায় কাউকে দান করলে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে আল্লাহ তাআলাও সহযোগিতাকারীকে সাহায্য করেন। মানুষের দান তো কেবলই দুনিয়ায়। এর প্রতিদান হিসেবে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা সে লাভ করবে, তা বিস্তৃত দুনিয়া-আখেরাত সর্বত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ.

বান্দা যতক্ষণ নিজ ভাইয়ের সহযোগিতা করে, ততক্ষণ আল্লাহও তাকে সহযোগিতা করেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯

হাদীসের বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন- অন্যকে যে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। আর দান তো সহযোগিতা-ই। এক মানুষের প্রয়োজনে আরেক মানুষের এগিয়ে আসা। তাই এ সহযোগিতা যে করবে, আল্লাহর বান্দাদের প্রয়োজন যে পূর্ণ করবে, আল্লাহ তাকে সহযোগিতা করবেন। এ সহযোগিতা নানা ধরনের হতে পারে। বান্দা সহযোগিতা করে সীমিত সামর্থ্য দিয়ে, আল্লাহ সাহায্য করেন নিজ শান মোতাবেক অসীম সামর্থ্য দিয়ে। আল্লাহ কখনো বান্দার প্রয়োজন পূরণ করে দিয়ে সাহায্য করেন, কখনো তার বিপদ দূর করে দিয়ে সাহায্য করেন, কখনো তাকে সম্মান দান করে সাহায্য করেন, অর্থসম্পদে বরকত দিয়ে সাহায্য করেন, দুনিয়ার লাঞ্ছনা সরিয়ে দিয়ে সাহায্য করেন। এসব তো আল্লাহ তাআলাই করেন। তিনি ছাড়া আর কে আছে, যে এর কোনো একটি সম্পাদন করতে পারে? না, আর কেউ নেই। আমাদের বিশ্বাস এমনই।

কথা একটাই- দানে ধন বাড়ে। এ বৃদ্ধি সম্পদের পরিমাণের বিবেচনায়ও হতে পারে, প্রচ্ছন্ন বরকত লাভের মধ্য দিয়েও হতে পারে, বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার মধ্য দিয়েও হতে পারে। আর দুনিয়াতে মানুষ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে দান করে, এ দানের শীতল ছায়া সে লাভ করবে দুনিয়ার পাশাপাশি পরকালেও। এরপর আর ভয় কীসের! শয়তানের পক্ষ থেকে দরিদ্রতা আর অভাবের মিথ্যা আশঙ্কাকে পদদলিত করে মহান প্রতিপালকের আশ্বাসবাণী আমাদের বরণ করতেই হবে। আল্লাহ যে কখনোই কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করেন না! তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর সমৃদ্ধি দানের ওয়াদাকে যারা বুকে ধারণ করতে পারবে, আস্থায় ও বিশ্বাসে, তাদের জন্যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি বেশ হৃদয়জুড়ানো। তিনি বলেছেন-

مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ فِيهِ إِلاّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ فَيَقُولُ أَحَدُهُمَا اللّهُمّ أَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُولُ الآخَرُ اللّهُمّ أَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا.

প্রতিদিনই দুজন ফেরেশতা নেমে আসেন। তাদের একজন দোয়া করেন- আল্লাহ! যে দান করে তাকে আপনি আরও দিন। অপরজন দুআ করেন- আল্লাহ! যে ধনসম্পদ আঁকড়ে ধরে রাখে, তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৪২

 

 

advertisement