রবিউল আউয়াল ১৪৪৪   ||   অক্টোবর ২০২২

নবীজীর প্রতি কৃতজ্ঞতা
নবীজীর প্রতি ভালবাসা

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। সুস্থ সভ্য মানুষ অবচেতন মনেই কৃতজ্ঞ হয়। সাধ্যমতো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চেষ্টা করে। অন্তত হৃদয় গভীরে কৃতজ্ঞতার অনুভূতি পোষণ করে। তাই অনুগ্রহ পাওয়ার পরও যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞ হয় না, সমাজ তাকে নিন্দার চোখে দেখে। নিম্নজাতের লোক মনে করে। তাকে সম্মানের আসনে গ্রহণ করতে পারে না। সেটা করে বিবেকের বিবেচনা থেকেই।

দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ অসংখ্য মানুষের অনুগ্রহ লাভ করে। অন্যের অনুগ্রহ ছাড়া মানুষের একটি দিনও চলে না। এটাই দুনিয়ার রীতি। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে এভাবেই সাজিয়েছেন। এরপর শিক্ষা দিয়েছেন অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে।

মানুষের জীবনে সবচে বড় অনুগ্রহকারীর মধ্যে রয়েছেন তার মা-বাবা। কারণ তাঁদের মাধ্যমেই প্রত্যেকের পৃথিবীতে আসা। তাঁদের উসিলায়ই জীবনের অস্তিত্ব লাভ করা। তাই তাঁদের প্রতি সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, তাঁদেরকে উফ্ শব্দটি পর্যন্ত বলো না। তাঁদের সঙ্গে কোমলভাবে কথা বলো। তাঁদের সঙ্গে সর্বোচ্চ সদাচার করো।

মা-বাবার চেয়েও অনেক অনেক বেশি অনুগ্রহ আমাদের প্রতি আমাদের রবের। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের। কারণ আমাদের পুরো জীবনটাই তাঁর দান। জীবনের যাবতীয় বিষয়, যাবতীয় প্রয়োজন তাঁরই অনুগ্রহে সমাধা হয়। তাঁরই হুকুমে হয় জীবনের যত আয়োজন ও বিয়োজন।

জীবনের পরে যে মৃত্যু, সেটাও তাঁর হাতে। মৃত্যুর পর আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব। তাঁর কাছেই আমাদের পরবর্তী সকল বিষয়।

মোটকথা, সবচেয়ে বেশি অনুগ্রহ আমাদের প্রতি তাঁর। সেজন্য তাঁর প্রতি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ থাকার কথা। সেই কৃতজ্ঞতা বিবেকেরও দাবি। ভালবাসা

দুই.

মৃত্যু পরবর্তী জীবনই মানুষের আসল জীবন, একথা মুমিনমাত্রই জানে এবং মনেপ্রাণে বিশ^াস করে। কারণ সে জীবনের পরে কোনো মৃত্যু নেই। সে জীবনের কোনো সমাপ্তি নেই। সে জীবন সুদীর্ঘ অসীম। কূল কিনারাহীন।

সেই জীবনে সফলতা পেতে হলে এই জীবনে কিছু করণীয় আছে। বরং এই সংক্ষিপ্ত জীবন পুরোটাই সেই জীবনের জন্য। কিন্তু কীভাবে, কী উপায়ে, কী কর্মে লাভ করা যাবে সেই জীবন? কী বিশ্বাসে, কী চেতনায়, কী কর্মপন্থায় পাওয়া যাবে সেই সফলতা?

মানুষকে সেসব জানানোর জন্যই আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী পাঠিয়েছেন। রাসূল পাঠিয়েছেন। কিতাব নাযিল করেছেন। এরপর বলেছেন, সেই নবী ও রাসূলের আনুগত্য করতে। সেই কিতাব ও বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে।

মা-বাবার মাধ্যমে তিনি আমাদের অস্তিত্ব দিয়েছেন। নবী-রাসূলদের মাধ্যমে দিয়েছেন সফলতার দিশা। তাই মা বাবার প্রতি যেমন সদাচারের নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি নবী-রাসূলদের প্রতি দিয়েছেন ভক্তি, ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও আনুগত্যের নির্দেশ।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে যত নবী পাঠিয়েছেন সবার প্রতিই আমাদের ঈমান ও বিশ্বাস রয়েছে। সবার প্রতিই রয়েছে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালবাসা। আর আনুগত্য এবং পূর্ণ আনুগত্য রয়েছে শুধু হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। কারণ তিনিই আমাদের নবী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের নবী। তিনি খাতামুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন। তিনি সায়্যিদুল আম্বিয়া ওয়া রাহমাতুল লিল আলামীন।

তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হেদায়েত দিয়েছেন। অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে এনেছেন। তাঁর মাধ্যমেই আমরা লাভ করেছি আমাদের রবের পরিচয়। আমাদের খালিক ও মালিকের পরিচয়। তাঁর মাধ্যমেই লাভ করেছি দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার সন্ধান।

তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা যেমন আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, তেমনি সুস্থ বিবেকেরও যৌক্তিক দাবি।

তিন.

ইতিহাস সাক্ষী, এই পৃথিবী একমসয় ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। অন্যায় অনাচার, জুলুম নির্যাতন ও মূর্খতা বর্বরতায় পূর্ণ ছিল। আল্লাহ তাআলা সেই সময় হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠালেন। তাঁর মাধ্যমে পুরো পৃথিবীকে হেদায়েতের দিশা দিলেন। অন্ধকার দুনিয়াকে প্রকৃত আলোর সন্ধান দিলেন। নির্যাতিত চরাচরকে দিলেন ন্যায় ও ইনসাফের সুদৃঢ় বার্তা। মানুষকে শেখালেন সত্যিকারের মনুষ্যত্ব। দীক্ষা দিলেন মানবতা, সভ্যতা, বোধ ও বিশ্বাসের শুদ্ধতা, চারিত্রিক উৎকৃষ্টতা ও পবিত্রতা এবং সুস্থ ও সফল জীবন লাভের।  এবং বললেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِیْ رَسُوْلِ اللّٰهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ یَرْجُوا اللّٰهَ وَ الْیَوْمَ الْاٰخِرَ وَ ذَكَرَ اللّٰهَ كَثِیْرًا

নিশ্চয় আল্লাহর রাসূলের মাঝে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ-এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে। -সূরা আহযাব (৩৩) : ২১

এই উত্তম আদর্শ অনুসরণের ফলে বিরাট এক মানব-কাফেলা পরিণত হয়েছে শ্রেষ্ঠ মানবে। ঘোর অবিশ্বাসী পরিণত হয়েছে একনিষ্ঠ বান্দারূপে। নিষ্ঠুর জালিম পরিণত হয়েছে বিনয়ী সেবকরূপে। এ ধারা অব্যাহত থেকেছে সুদীর্ঘ কাল। এখনো আছে।

এই আদর্শ লাভ করার পর নষ্ট ভ্রান্ত সমাজ পরিণত হয়েছে সুখ সাফল্যের সবুজ কাননে। মানুষ লাভ করেছে দুনিয়াবী জীবনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও শান্তি। ইতিহাস এ সবই দেখেছে এবং সংরক্ষণ করেছে।

চার.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, শিক্ষা, ইশারা ও নির্দেশনা এবং সকল ক্ষেত্রে তাঁর জীবনাচার অনুসরণই হলো নবীজীর প্রতি আনুগত্য। আর সেই আনুগত্যই হলো আল্লাহ তাআলার প্রতি মহব্বতের প্রকাশ। একথাই ইরশাদ হয়েছে কুরআন মাজীদে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِیْ یُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ وَ یَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ ؕ وَ اللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ

(হে নবী!) আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর। তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩১

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য যে ইসলামের প্রধান বিষয়, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ ইসলাম হলো আল্লাহ তাআলার মনোনীত একমাত্র দ্বীন। আর সেই দ্বীন জানার একমাত্র মাধ্যম হলেন হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যেহেতু তিনি খাতামুল আম্বিয়া, সর্বশেষ নবী, তাঁর মাধ্যমেই অহীর ধারা সমাপ্ত হয়েছে, তাঁর উপরই সর্বশেষ আসমানী কিতাব নাযিল হয়েছে, তাঁকেই দান করা হয়েছে সর্বশেষ দ্বীন ও শরীয়ত। সুতরাং তাঁর আনুগত্য ছাড়া কীভাবে সম্ভব দ্বীন মানা? তাঁর অনুসরণ ছাড়া কীভাবে সম্ভব শরীয়তের বিধান পালন করা?

এই আনুগত্য-অনুসরণের জন্যই প্রয়োজন তাঁর প্রতি ভক্তি মহব্বত ও ভালবাসা। বরং সর্বোচ্চ আবেগ ও অনুরাগ। কারণ শ্রদ্ধা-ভালবাসাপূর্ণ আনুগত্য আর শ্রদ্ধা-ভালবাসাহীন আনুগত্য- দুয়ের মাঝে বিস্তর ফারাক। অনেক অনেক পার্থক্য। বরং বাস্তবতা হলো, মহব্বতহীন আনুগত্য কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য হতে পারে না। শ্রদ্ধা ভক্তিহীন আনুগত্য কোনোভাবেই যথাযথ আনুগত্য হতে পারে না। এটা ব্যক্তিমাত্রই জানে এবং স্বীকার করে। সুতরাং তাঁর আনুগত্য যেমন আবশ্যক, তেমনি আবশ্যক তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা, ভক্তি, মহব্বত ও ভালবাসা পোষণ করা।

হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভক্তি ভালবাসা একেবারে সাধারণ বিবেকও খুব সহজে মেনে নেবে। কারণ যেসব কারণে মানুষ কাউকে ভালবাসে তার সবকিছু সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে তাঁর মাঝে। গুণ, সৌন্দর্য, মর্যাদা, ক্ষমতা ও কৃপা- কোনোদিক থেকে আছে কেউ তাঁর চেয়ে বেশি?

অতএব যদি কেউ প্রবৃত্তির প্ররোচনায়, শয়তানের ধোঁকায় কিংবা অন্য কোনো কারণে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাড়া অন্য কাউকে বেশি ভালবাসে, অন্য কাউকে বেশি গুরুত্ব দেয়, সেটা হবে তার মহা ক্ষতির কারণ। যা তার ইহ-পরকালীন জীবনকে বরবাদ করে দেবে। উভয় জীবনকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সেজন্যই আল্লাহ তাআলা খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন-

قُلْ اِنْ كَانَ اٰبَآؤُكُمْ وَ اَبْنَآؤُكُمْ وَ اِخْوَانُكُمْ وَ اَزْوَاجُكُمْ وَ عَشِیْرَتُكُمْ وَ اَمْوَالُ ِ۟اقْتَرَفْتُمُوْهَا وَ تِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَ مَسٰكِنُ تَرْضَوْنَهَاۤ اَحَبَّ اِلَیْكُمْ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ جِهَادٍ فِیْ سَبِیْلِهٖ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰی یَاْتِیَ اللّٰهُ بِاَمْرِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْفٰسِقِیْنَ

(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের খান্দান, তোমাদের সেই সম্পদ, যা তোমরা অর্জন করেছ, তোমাদের সেই ব্যবসা, যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং বসবাসের সেই ঘর, যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ ফায়সালা প্রকাশ করেন। আল্লাহ অবাধ্য লোকদেরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছান না। -সূরা তাওবা (৯) : ২৪

এখানে খুব দৃঢ়ভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসা দুনিয়ার সকল বিষয় ও বস্তু অপেক্ষা বেশি হওয়া আবশ্যক।

পাঁচ.

হাদীস শরীফে হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বিভিন্ন প্রসঙ্গে, বিভিন্ন শব্দ-বাক্যে একথা স্পষ্ট করেছেন যে, নবীজীর প্রতিই হতে হবে সর্বোচ্চ মহব্বত ও ভালবাসা।

সাহাবী আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتّى أَكُونَ أَحَبّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنّاسِ أَجْمَعِينَ.

তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার কাছে তার মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় না হব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫

আরেক হাদীসে ঈমানের স্বাদ লাভ করার প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির মাঝে তিনটি বিষয় থাকবে, সে এর মাধ্যমে ঈমানের স্বাদ লাভ করতে পারবে। তন্মধ্যে প্রথম বিষয়টিই হল-

أَنْ يَكُونَ اللهُ وَرَسُولُهُ أَحَبّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا.

আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অন্য সকল ব্যক্তি ও বস্তু অপেক্ষা সবচে বেশি প্রিয় হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬

আরেকটি হাদীসে এসেছে অত্যন্ত মমতাপূর্ণ উপস্থাপনা। বিখ্যাত সাহাবী আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَا مِنْ مُؤْمِنٍ إِلّا وَأَنَا أَوْلَى النّاسِ بِهِ فِي الدّنْيَا وَالْآخِرَةِ.

প্রত্যেক মুমিনের ক্ষেত্রেই আমি দুনিয়া ও আখিরাতে অন্যসকল মানুষ অপেক্ষা বেশি ঘনিষ্ট বা নিকটতমজন।

একথা বলার পর কুরআন মাজীদের একটি আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করেন। বলেন,

اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ  : اَلنَّبِیُّ اَوْلٰی بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ.

তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পড়ে দেখ-

মুমিনদের পক্ষে নবী তাদের প্রাণ অপেক্ষাও বেশি ঘনিষ্ঠ। [সূরা আহযাব (৩৩) : ৬] -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭৮১

ছয়.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মহব্বতের প্রসঙ্গে এসব আয়াত-হাদীস না থাকলেও কেবল বিবেকের দাবি থেকে তাঁর প্রতি সবচে বেশি ভালবাসা পোষণ করা উচিত ছিল। কারণ, তাঁর চেয়ে বেশি অনুগ্রহ আল্লাহ ছাড়া আর কারও নেই আমাদের উপর। তাঁর মাধ্যমে দুনিয়া আখেরাতের যত প্রাপ্তি, এর ক্ষুদ্রতম অংশও নেই অন্য কারও মাধ্যমে। সুতরাং আল্লাহ তাআলার পর তাঁর প্রতিই সবচেয়ে বেশি মহব্বত থাকার কথা।

এমনিভাবে তাঁর আনুগত্যেই যখন আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা, তাঁর মাঝেই যখন আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ, তখন একান্ত ভালবাসা ও সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা কেবল তাঁর প্রতিই নিবেদিত হওয়া উচিত। হৃদয়ের গভীর থেকে, জীবন-উৎসর্গ সেই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা অটুট রাখা আমাদের একান্ত কর্তব্য।

উপরন্তু কুরআন মাজীদের একাধিক আয়াতে তাঁর মহব্বতের নির্দেশ রয়েছে। হাদীস শরীফের বহু বর্ণনায় তাঁর প্রতি মহব্বতের তাগিদ রয়েছে। তাঁর মহব্বত আমাদের জীবন ও আমাদের প্রিয় সকল ব্যক্তি-বস্তুর চেয়ে বেশি হওয়ার কথা রয়েছে এমনকি তাঁর মহব্বত আমাদের ঈমানের মানদ- এবং তাঁর মহব্বতে আমাদের ইহ পরকালীন সফলতা!

সুতরাং হে আল্লাহ! আমাদের হৃদয়গুলো পূর্ণ করে দিন তাঁর মহব্বতে। জীবন উজ্জ্বল করে দিন তাঁর ভালবাসায়। চির কামিয়াবী ও সফলতা দান করুন তাঁর প্রতি উৎসর্গিত করে।

সালাওয়াতুল্লাহি ওয়াসালামুহু আলাইহি।

 

 

advertisement