সফর ১৪৪৪   ||   সেপ্টেম্বর ২০২২

ইযাফী মুতালাআ
কিছু উসূল ও আদাব এবং একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد!

কওমী মাদরাসার নেসাব ও নেযামের মূল উদ্দেশ্য সমাজে একদল পূর্ণাঙ্গ মানুষ ও মুহাক্কিক আলেম তৈরি করা। এটাকে কেউ নিছক আরবী ভাষা শিক্ষা ও নির্দিষ্ট কিছু শাস্ত্র অর্জনের প্রতিষ্ঠান মনে করলে সেটা  হবে চরম ভুল। মাদরাসার কাজ হল, প্রথমত  ছাত্রদেরকে ঈমান-আমল, আদব-আখলাক, সুস্থ ও ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তা-চেতনা এবং উন্নত রুচি-প্রকৃতিতে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বানানো। দ্বিতীয়ত তাদেরকে তাফাক্কুহ ফিদ্দীন ও রুসূখ ফিল ইলমসম্পন্ন যুগসচেতন মুহাক্কিক আলেম হিসেবে গড়ে তোলা।

এই উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে কওমী মাদরাসায় যেসব মৌলিক কর্মপন্থা অবলম্বন করা হয় তা এই-

১. আসাতিযা কেরামের সোহবত ও তরবিয়ত।

শিশুশ্রেণী থেকে সর্বোচ্চ শ্রেণী- এই সুদীর্ঘ সময় তালিবে ইলমরা উস্তাযগণের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থাকে। উস্তাযগণ এই সময়ের মধ্যে তালিবে ইলমদের আমল-আখলাক, আদব-কায়দা, চিন্তা-চেতনা, রুচি-প্রকৃতি এই সব বিষয়ে তরবিয়ত করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই তরবিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা এটা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে এবং আঁকড়ে ধরে রাখবে তারা সারা জীবন সুফল ভোগ করবে। তাদের চাল-চলন, কথাবার্তা, আমল-আখলাক, চিন্তা-চেতনা ও রুচি-প্রকৃতি সর্বত্র এর সুপ্রভাব পরিলক্ষিত হবে। যারা এ ব্যাপারে অবহেলা করে এবং উদাসীনতার পরিচয় দেয় তাদের জীবনে কমবেশি এর কুপ্রভাব দেখা যায়। তাদের কথাবার্তা ও কর্মকা- দেখেই বোঝা যায় যে, তারা তাদের উস্তাযদের তরবিয়ত যথাযথ গ্রহণ করেনি। কুরআন-হাদীসের কিছু তথ্য হয়ত সে জেনেছে; কিন্তু ইলমের যে উপকারিতা ও সুপ্রভাব সেটা তার জীবনে যথাযথ প্রতিফলিত হয়নি। সেজন্য উস্তাযের সোহবত ও তরবিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. দরস। মানে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ও কিতাবের পাঠদান।

৩. তাকরার।

৪. দরসী মুতালাআ। এটা আবার দুই প্রকার-

ক. দরসী কিতাবের মুতালাআ।

খ. মুআবিন মুতালাআ তথা সহায়ক মুতালাআ।

৫. আমলী মশক ও তামরীনমূলক সকল কাজ।

৬. ইযাফী মুতালাআ। অর্থাৎ দরসী কিতাবের বাইরে আসাতিযা কেরামের তত্ত্বাবধানে তালিবে ইলমদের ব্যক্তিগত মুতালাআ।

তালীম-তরবিয়তের এই সবগুলো কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনোটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ সবগুলোর সমন্বয়েই একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাকার্যক্রম গঠিত হয়। তবে এই নিবন্ধে আমরা ইযাফী মুতালাআ সম্পর্কে কিছু আরয করার চেষ্টা করব। আল্লাহ তাআলাই একমাত্র তাওফীকদাতা।

মুতালাআর গুরুত্ব

মুতালাআর গুরুত্ব বুঝতে প্রথমে আমাদেরকে নেসাবভুক্ত কিতাবসমূহের অবস্থা এবং সেগুলোর পাঠদানের উদ্দেশ্য বুঝতে হবে। এগুলোর পাঠদানের উদ্দেশ্য কখনো এই নয় যে, এগুলোর দ্বারাই তালিবে ইলমের ইলমী ও আমলী যিন্দেগীর সকল চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। নেসাবী কিতাব ও সেগুলোর পাঠদানের মূল উদ্দেশ্য তালিবে ইলমের মাঝে কিতাব বোঝার যোগ্যতা এবং ইলমী ইস্তিদাদ তৈরি হওয়া। সেইসঙ্গে সঠিক-ভুলের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণের সক্ষমতা অর্জন করা। প্রাথমিক অবস্থায় অন্তত এটুকু জরুরি যে, কোথাও আপত্তিকর কিছু পড়লে বা শুনলে মনে সন্দেহ জাগা। ফলে উস্তাযকে জিজ্ঞেস করে সঠিক বিষয়টা জেনে নেবে।

অতএব নেসাবী কিতাব হল, ইলমী যিন্দেগীর ভিত্তি। ইলমী খাযানার চাবিকাঠি। এর দ্বারা কিতাব বোঝার যোগ্যতা এবং ইলমী ইসতিদাদ তৈরি হয়। তবে জানা কথা, কেবল ইসতিদাদ বা যোগ্যতা অর্জন করলেই ইলম হাসিল হয়ে যায় না; বরং সে যোগ্যতা ও সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে এবং মেহনত করে মুতালাআ করতে হবে। তবেই ইলম হাসিল হবে। সেজন্য মুতালাআর গুরুত্ব অপরিসীম। মুতালাআর কোনো বিকল্প নেই।

প্রাতিষ্ঠানিক তালীমে মশগুল তালাবার জন্য মুতালাআর কিছু উসূল ও আদাব

যারা প্রাতিষ্ঠানিক তালীম সম্পন্ন করেছেন তারা তো নিজেরাই নিজেদের উপযোগী মুতালাআর উসূল ও আদাব খুঁজে বের করতে পারেন। নিজেদের অভিজ্ঞতায় অনেক কিছু অনুধাবন করতে পারেন। উসূলে মুতালাআর কিতাবসমূহ থেকেও ইস্তিফাদা করতে পারেন। এখানে আমরা ইনশাআল্লাহ সে সকল তালাবার জন্য কিছু কথা আরয করব, যারা এখনো প্রাতিষ্ঠানিক তালীমে মশগুল-

১. মুতালাআ অবশ্যই উস্তাযের তত্ত্বাবধানে হতে হবে। কোন্ বিষয়ে পড়ব, কোন্ কিতাব পড়ব এই সবকিছু উস্তায নির্ধারণ করে দেবেন। আমি কী পড়ছি সেটা আমার উস্তাযের জানা থাকতে হবে। অনেকে পরামর্শ না করে নিজের মনমতো যা ইচ্ছা পড়ে। এদের সময় খরচ হয় বেশি, লাভ হয় কম। উপরন্তু এরা অনেক সময় মারাত্মক বিভ্রান্তিতে পড়ে।

২. ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, দরসী কিতাব হচ্ছে ইসতিদাদ হাসিলের মূল ভিত্তি। সেজন্য দরস ও দরস সংশ্লিষ্ট কাজসমূহের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে সবচেয়ে বেশি। নেসাবী কাজ পরিপূর্ণ করে বাকি সময়টুকুতে ইযাফী মুতালাআ করবে।

দরসী কাজ বলতে বোঝায় দরসের আগের মুতালাআ, দরস, তাকরার, দরস ও মুতালাআর খোলাসা প্রস্তুত করা, আমলী মশক-তামরীন এবং সহায়ক মুতালাআ। এগুলোর অবস্থান ইযাফী মুতালাআর আগে।

সহায়ক মুতালাআ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, দরসী কিতাবের কোনো হাশিয়া বা শরাহ মুতালাআ করা। কিংবা দরসী কিতাব যে বিষয়ের সে বিষয়েরই অন্য কোনো সহজ এবং তামরীনমূলক কিতাব মুতালাআ করা। যেমন নাহবেমীরের সঙ্গে النحو الواضح বা الطريق إلى النحوতালখীসুল মিফতাহ-এর সঙ্গে الطريق إلى البلاغة বা البلاغة الواضحة

অবশ্য শুরূহ-হাওয়াশী মুতালাআয় গুলু না করা উচিত। সেটা প্রয়োজন পরিমাণ হতে হবে এবং উস্তাযের মশওয়ারা মোতাবেক নির্বাচিত হতে হবে। এটাকে কিতাবী ইসতিদাদের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। শুরূহ-হাওয়াশী মুতালাআয় বাড়াবাড়ি না করে বরং সময়টা  পরিকল্পনা মাফিক পরিচ্ছন্ন ইযাফী মুতালাআয় ব্যয় করলে বেশি ভালো হবে। বরং বলা উচিত, তালিবে ইলমের মুআবিন মুতালাআও নিজের ইচ্ছেমত  হবে না, বরং উস্তাযগণের নির্দেশনা অনুযায়ী হবে।

অনেক তালিবে ইলমের অবস্থা হল, তাদের মধ্যে নেসাব ও দরসী কিতাবের প্রতি গুরুত্ব কম। অন্যান্য বিষয় ও কিতাবের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। ফলে নিয়মিত এরা দরসের পড়া রেখে অন্য কিতাব পড়ে আর ভাবে, আমরা তো পড়াশোনাই করছি! মনে রাখবেন, এটা স্পষ্ট ধোঁকা। এ সম্পর্কে শায়েখ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রাহ.-এর অনবদ্য কিতাব কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা’-এর হাশিয়ায় শায়েখ এবং তাঁর ছাহেবযাদা শায়েখ সালমান হাফিযাহুল্লাহ্র গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আছে। শায়েখের বক্তব্যের সারকথা এই- পরীক্ষার দিনগুলোতে অনেক সময় তালিবে ইলম পরীক্ষার বিষয় বাদ দিয়ে অন্য বিষয় নিয়ে পড়ে থাকে। তখন সেটাই তার কাছে বেশি ভালো লাগে। যে বিষয়ে পরীক্ষা, সে ব্যাপারে তার মধ্যে অনীহা কাজ করে। এটা মূলত মনের রোগ। তার মধ্যে হিম্মত ও নাশাতের অভাব। কারণ পরীক্ষায় বাধ্য-বাধকতা ও চাপ থাকে। অর্থাৎ যে বিষয়ে পরীক্ষা হবে সেটি ভালোভাবে আত্মস্থ করতে হবে এবং পরীক্ষায় তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ফলে অলস মনের জন্য সেটা বেশ ভারি মনে হয়। তাই সে পিছিয়ে যায়। অপরদিকে যে বিষয়ে পরীক্ষা নেই সেটা ভালোভাবে আত্মস্থ করা এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করার চাপও নেই, বাধ্য-বাধকতাও নেই। সেজন্য নফসের কাছে সেটা বেশ সহজ ও হালকা মনে হয়। তাই নফস সেদিকেই ধাবিত হয়। কিন্তু যে বুদ্ধিমান তার কখনো নফসের ডাকে সাড়া দেয়া উচিত নয়। কারণ নিঃসন্দেহে এটা শয়তানের ধোঁকা এবং সঠিক ও জরুরি বিষয় থেকে বিচ্যুতি। আল্লাহ্ই একমাত্র হেদায়েত দানকারী।

এখানে তাঁর ছাহেবযাদা যে কথা সংযুক্ত করেছেন তার সারসংক্ষেপ হল, আরেকটি সমস্যা, যা তালিবে ইলমদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। সেটি হল, নেসাবে নির্ধারিত কিতাবসমূহের প্রতি অবহেলা এবং উস্তাযের দরস ও তাকরীরের প্রতি উদাসীনতা। দরসী কিতাব ও উস্তাযের তাকরীরের পরিবর্তে অন্য কিতাবাদি ও অন্য শায়েখদের আলোচনার প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। দরসী কিতাবের প্রতি তাদের গুরুত্ব কম। তাদের মানসিকতা হল, দরসী কিতাবে ইলম নেই; এর দ্বারা তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ হয় না।

তাদের অবস্থা সেই ব্যক্তির মত, যে ফরয ছেড়ে দিয়ে নফলের ইহতিমাম করে! এটা নফসের অনুসরণ বৈ কিছু নয়।

দরসী কিতাবের প্রতি তাদের এই মানসিকতাটা একটা ধোঁকা। যদি বাস্তবেই তাদের মধ্যে ইলমের আগ্রহ ও গুরুত্ব থাকত তাহলে অবশ্যই তারা প্রথমে দরসী কিতাব আত্মস্থ করত, এরপর অন্য কিতাবাদির প্রতি মনোনিবেশ করত। কিন্তু তাদের মূল সমস্যা হল, অলসতার কারণে তাদের দরসী কিতাবগুলো পড়তে ও আত্মস্থ করতে কষ্ট লাগে। সেজন্য তারা এই অজুহাত দাঁড় করিয়েছে যে, এগুলোতে ইলম নেই; এগুলোর দ্বারা তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ হবে না।

হাঁ, এটা ঠিক যে, দরসী কিতাবগুলোতে সকল ইলম নেই এবং এগুলো একমাত্র ইলম নয়। দরসী কিতাবসমূহ হল ইলমের চাবিকাঠি। তবে সেটা তার জন্য, যে তা গুরুত্বের সঙ্গে যথাযথভাবে অর্জন করেছে। সুতরাং ইলমের চাবিকাঠিগুলো যথাযথভাবে ধারণ কর এবং ঘরে দরজা দিয়েই প্রবেশ কর। (কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা, পৃ. ১৯৫-১৯৬)

৩. বোঝা গেল, ইযাফী মুতালাআ করতে চাইলে সময়ের হেফাযত করতেই হবে। খুচরো সময়গুলোকে কাজে লাগাতে হবে। নেযামুল আওকাত তৈরি করতে হবে। পরিকল্পনা করে কাজ করতে হবে। জুমার দিন ও বিরতির দিনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

৪. ইযাফী মুতালাআর ক্ষেত্রেও পর্যায়ক্রম রক্ষা করা এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কারণ সব বিষয় তো একসঙ্গে শেখা সম্ভব নয়। তাই ইযাফী মুতালাআর ক্ষেত্রেও প্রথম লক্ষ্য থাকবে ফরযে আইনের মুদাল্লাল ইলম অর্জন করা এবং আলফিকহুল আম লিদ্দীন হাসিল করা। অন্যান্য বিষয় থাকবে পরবর্তী পর্যায়ে।

আজকাল তালিবে ইলমদের অনেকে এই প্রাধান্য-রীতি অবলম্বন করে না এবং পর্যায়ক্রম রক্ষা করে না। ফলে দেখা যায়, তারা কিতাবী ইসতিদাদ তৈরি এবং ফরযে আইন ইলম ও আলফিকহুল আম লিদ্দীন হাসিলের চিন্তা বাদ দিয়ে অন্যান্য বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মনে রাখবেন, লেখক হওয়া, বক্তা হওয়া, সাধারণ জ্ঞান অর্জন করা, দেশ-বিদেশের খোঁজ-খবর রাখা, সময় ও সময়ের চালচিত্র বুঝতে পারা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বের দক্ষতা অর্জন করা এবং বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী হওয়া- এজাতীয় আরো অনেক বিষয় আছে, যেগুলোর উপর সারা জীবন আপনি মেহনত চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু কিতাবী ইসতিদাদ বা কিতাব বোঝার যোগ্যতা এমন জিনিস, যা এখন অর্জন করতে না পারলে পরে আর কখনো অর্জন করা বাহ্যত সম্ভব নয়। আল্লাহ না করুন, এমনটা হলে আপনার পড়াশোনার যিন্দেগী সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলে সাব্যস্ত হবে। এবং ভবিষ্যতের পুরো ইলমী ও আমলী যিন্দেগীতে আপনাকে এ খেসারত দিতে হবে। তখন ঠিকই আফসোস হবে; কিন্তু ক্ষতিপূরণ আর সম্ভব হবে না।

৫. মুতালাআয় সামগ্রিকতা রক্ষা করা জরুরি। শুধু নিজের পছন্দ ও আগ্রহের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে বরং যেসব বিষয়ের ইলম হাসিল করা জরুরি সেগুলোরও প্রয়োজন পরিমাণ ইলম অর্জন করা উচিত। এক্ষেত্রে নিজের আগ্রহের চাইতে উস্তাযের পরামর্শকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।

বিশিষ্ট তাবেয়ী আমের ইবনে শারাহীল শাবী (১০৪ হি.) রাহ.-এর এই বাণীটি আমরা স্মরণে রাখি-

قَالَ الشّعْبِيّ: إِنّمَا كَانَ يَطْلُبُ هَذَا العِلْمَ مَنِ اجْتَمَعَتْ فِيْهِ خَصْلَتَانِ: العَقْلُ وَالنُّسُكُ. فَإِنْ كَانَ عَاقِلاً، وَلَمْ يَكُنْ نَاسِكاً، قَالَ: هَذَا أَمْرٌ لاَ يَنَالُهُ إِلاّ النُّسّاكُ، فَلَنْ أَطْلُبَهُ. وَإِنْ كَانَ نَاسِكاً، وَلَمْ يَكُنْ عَاقِلاً، قَالَ: هَذَا أَمْرٌ لاَ يَنَالُهُ إِلاّ العُقَلاَءُ، فَلَنْ أَطْلُبَهُ.

يَقُوْلُ الشّعْبِيّ: فَلَقَدْ رَهِبْتُ أَنْ يَكُوْنَ يَطْلُبُهُ اليَوْمَ مَنْ لَيْسَ فِيْهِ وَاحِدَةٌ مِنْهُمَا، لاَ عَقْلَ وَلاَ نُسُكَ.

قُلْتُ -القَائِلُ الذّهَبِي-: أَظُنّهُ أَرَادَ بِالعَقْلِ الفَهْمَ وَالذّكَاءَ.

(সিয়ারু আলামিন নুবালা, ইমাম যাহাবী, খ. ৪, পৃ. ৩০৭)

বর্তমানে দাওরা পড়ুয়া যে মওলবীগণ জুমহুর উলামায়ে কেরাম এবং নিজেদের উস্তাযদের থেকে আলাদা হয়ে বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন মতবাদ গ্রহণ করেছেন, তাদের মূল সমস্যা এটাই যে, তাদের ইলম আমল অথবা চিন্তা-চেতনার কোথাও ত্রুটি বা অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে, যার মন্দ প্রভাব এইভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তারা তাদের উস্তাযদের থেকে ইলম যথাযথভাবে হাসিল করেননি এবং তাদের তরবিয়ত সঠিকভাবে গ্রহণ করেননি। সেজন্য তাদের ইলমে সামগ্রিকতা ও পরিপক্বতা হাসিল হয়নি এবং উস্তাযের সোহবত ও তরবিয়তের দ্বারা তাদের চিন্তা-চেতনা ও রুচি-প্রকৃতির যে পরিশুদ্ধি দরকার ছিল সেটা অর্জিত হয়নি। তাদের প্রতি বান্দার ইনতেহায়ী দরদমান্দানা ও নাসেহানা গুযারিশ- আপনারা আপনাদের উস্তাযদের শরণাপন্ন হয়ে পুনরায় নিজেদের ইলম, ফাহম ও ফিকিরের জায়েযা নিন। এগুলো পরিশুদ্ধ ও ত্রুটিমুক্ত করুন। কেননা এগুলো মৌলিক বিষয়। এগুলোর কোনোটিতে যদি ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা বা বক্রতা থাকে, এর প্রভাব জীবনের বহু ক্ষেত্রে প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তাআলাই একমাত্র রক্ষাকারী।

৬. কেবল তথ্য আহরণের জন্য নয়, বরং নিজের তরবিয়তের নিয়তে মুতালাআ করতে হবে। তাহলেই মুতালাআ ফলপ্রসূ হবে। হাসান বসরী (১১০ হি.) রাহ. বলেন-

كَانَ الرّجُلُ يَطْلُبُ العِلْمَ، فَلاَ يَلْبَثُ أَنْ يَرَى ذَلِكَ فِي تَخَشّعِهِ، وَزُهْدِهِ، وَلِسَانِهِ، وَبَصَرِهِ.

অর্থাৎ পূর্বেকার মনীষীগণের অবস্থা ছিল, তাদের কেউ কোনো ইলম হাসিল করলে সঙ্গে সঙ্গে সেটার প্রভাব তার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চাহনিতে প্রকাশ পেত। -সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ৪, পৃ. ৫৮৩

সেজন্য যখন যেটা পড়ব তখনই সেটা আমলে পরিণত করব। এতে ইলমে বরকত হয়।

৭. কোনো কিতাব নির্ভরযোগ্য হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এই কিতাবে কোনো ভুল নেই, কোনো মুনকার কথা বা বর্ণনা নেই কিংবা কোথাও উপস্থাপনের কোনো দুর্বলতা নেই অথবা বিবরণে অসম্পূর্ণতা বা অস্পষ্টতা নেই। কেননা নির্ভরযোগ্যতা ও অনির্ভরযোগ্যতার বিষয়টা তো নির্ধারিত হয় সামগ্রিকতার বিচারে ।

সেজন্য কোথাও এ ধরনের কিছু থাকলে উস্তায অবশ্যই তালিবে ইলমকে এ ব্যাপারে সতর্ক করবেন। এমনিভাবে তালিবে ইলমের মনে যদি কোনো ব্যাপারে সন্দেহ জাগে কিংবা কিতাবের কোনো কথা তার কাছে আপত্তিকর বা অপরিচিত লাগে তাহলে অবশ্যই উস্তাযের শরণাপন্ন হবে। নিজে নিজে ইজতিহাদ করবে না।

মনে রাখবেন, আহলে হক উলামায়ে কেরাম এবং সকল ফনে বিশেষজ্ঞদের অনুসরণ করা আমাদের জন্য জরুরি। তবে কোনো বিষয়ে যদি কেউ ভুল ও স্খলনের শিকার হন আর অন্য উলামায়ে কেরাম ও বিশেষজ্ঞরা সে ব্যাপারে সতর্ক করেন তাহলে সে স্খলন ও ভুল থেকে বেঁচে থাকা আমাদের কর্তব্য। এ ব্যাপারে শিথিলতা করা অন্যায়। তবে এ কারণে উক্ত আলেমকে দোষারোপ করা বা তাকে খাটো করে দেখাটাও অন্যায়। হাফেয শামসুদ্দীন যাহাবী (৭৪৮ হি.)-এর এই বাণী আমরা সর্বদা স্মরণে রাখি-

كُلّ أَحَدٍ يُؤْخَذُ مِنْ قَوْلِهِ وَيُتْرَكُ، فَلاَ قُدْوَةَ فِي خَطَأِ العَالِمِ، نَعَمْ، وَلاَ يُوَبّخُ بِمَا فَعلَهُ بِاجْتِهَادٍ - نَسْأَلُ اللهَ المُسَامَحَةَ -.

(সিয়ারু আলামিন নুবালা, খ. ৯, পৃ. ১৪৪)

৮. গলত আকীদা ও গলত ফিকিরের মানুষদের লেখা না পড়া। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উসূল। বিশিষ্ট ফকীহ তাবেয়ী মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (১১০ হি.) রাহ.-এর কাছে একবার একজন এসে তাকদীর সম্পর্কে গলত কথা বলতে লাগল। তখন ইবনে সীরীন রাহ. কানে আঙুল দিয়ে বললেন-

إما أن تَخرُج عني، وإما أن أَخرُج عنك!

হয়ত তুমি বের হবে, নয়ত আমি বের হব।

লোকটি বেরিয়ে গেল। তখন ইবনে সীরীন রাহ. বললেন-

إنّ قلبي ليس بيدي، وإني خِفتُ أن يَنفُثَ في قلبي شيئاً فلا أَقدرَ أن أُخرجَه منه، فكان أحبَّ إليَّ أن لا أَسمعَ كلامَه.

আমার অন্তর তো আমার হাতে নয়। আমার ভয় হয়, সে আমার অন্তরে (গলত) কিছু ঢুকিয়ে দেবে, এরপর সেটা আর আমি সেখান থেকে বের করতে পারব না। সেজন্য আমার কাছে এটাই অধিক পছন্দনীয় যে, আমি তার কথা শুনব না। -আততাবাকাতুল কুবরা, ইবনে সাদ, খ. ০৭, পৃ. ১৯৭; রিসালাতুল মুসতারশিদীনের টীকা, আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, পৃ. ১৭৩-১৭৪

তাই এ ধরনের লোকদের লেখা একদম না পড়া উচিত। খণ্ডনের জন্য কখনো পড়ার প্রয়োজন হলে কেবল তারাই পড়বেন, যাদের ইলম, ফাহম ও ফিকির পরিপক্ব হয়েছে। ইস্তিদাদসম্পন্ন সচেতন তালিবে ইলমরা তামরীনের উদ্দেশ্যে পড়তে চাইলে অবশ্যই উস্তাযের তত্ত্বাবধানে পড়বেন। তবে সেক্ষেত্রেও অত্যন্ত সতর্কতা কাম্য।

অনেক ছাত্র আরবে গিয়ে সালাফী হয়ে আসে। অনেকে মরহুম আবুল আলা মওদুদীর বইপত্র পড়ে শুযুয তথা বিচ্ছিন্নতা এবং আকাবিরের প্রতি কুধারণার শিকার হয়ে যায়। আবার অনেকে অন্য কোনো গলত ফিকির ও গলত দাওয়াতের বইপত্র পড়ে সেদিকে চলে যায় এবং উলামায়ে কেরামের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এই সবই মুতালাআ ও অধ্যয়নের উসূল অমান্য করার পরিণতি। তাদের তো উচিত ছিল, প্রথমে উস্তাযদের নেগরানীতে নিজেদের ইলম, ফাহম ও ফিকিরকে পরিশুদ্ধ ও মজবুত করা। এরপর প্রয়োজন হলে এবং উস্তাযগণ মুনাসিব মনে করলে -আবারো বলছি, উস্তাযগণ মুনাসিব মনে করলে- তাঁদের তত্ত্বাবধানে সতর্কতার সঙ্গে সেদিকে অগ্রসর হওয়া। সর্বদা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এই দুআ করা-

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَیْتَنَا وَ هَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً ۚ اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ.

৯. ইযাফী মুতালাআর ক্ষেত্রেও নিয়ম হল, যা পড়বে বুঝে পড়বে। হুঁশের সঙ্গে পড়বে। এ সম্পর্কে আলকাউসারে ইতিপূর্বে যেসব প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলো আবার দেখে নেবে।

১০. শেষ কথা হল, ইযাফী মুতালাআর বিষয়টি বড় নাজুক। সেজন্য এ বিষয়ে তালিবে ইলমের স্বেচ্ছাচারিতা করা উচিত নয়। বরং যেমনটা বলা হল যে, এই কাজ উস্তাযের তত্ত্বাবধানে হওয়া জরুরি।

যাকে উস্তায ইযাফী মুতালাআ থেকে এজন্য বারণ করেছেন যে, তার পুরো সময় দরসী কাজে ব্যয় হওয়া উচিত; নতুবা তার ইসতিদাদ কাঁচা থেকে যাবে। কিংবা হয়ত অন্য কোনো কারণে বারণ করেছেন। তার উচিত উস্তাযের কথা মেনে চলা এবং ইযাফী মুতালাআ থেকে একদম বিরত থাকা। পুরো সময়টা দরসী কাজে ব্যয় করা। সময় বেঁচে গেলে দরসী কাজগুলো পুনরায় সম্পন্ন করা। আরো বাঁচলে তিলাওয়াত ও যিকির-আযকারে ব্যয় করা। যদিও বাস্তবতা হল, দরসী কাজগুলোর হক আদায় করার পর খুব কম সময়ই অবশিষ্ট থাকে।

এমনিভাবে ইযাফী মুতালাআর সময় সীমিত হওয়া জরুরি। তালিবে ইলমের প্রথম কাজ হল, দরসী কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করা, মাদরাসার ইনতিযামী কাজে নিজের অংশ পূর্ণ করা, ফরয ইবাদত, যিকির-আযকার ও নাওয়াফেলের মামুলাত আদায় করা এবং বিশ্রামসহ স্বভাবজাত অন্যান্য প্রয়োজন পূরণ করা। এসবের পর অতি অল্প যে সময়টুকু বাঁচবে সেটাই ইযাফী মুতালাআর সময়। এজন্য সতর্কতা এরই মধ্যে যে, ইযাফী মুতালাআয় কতটুকু সময় ব্যয় করবে সেটাও উস্তাযের সঙ্গে মশওয়ারা করে ঠিক করবে।

বাকি রইল, কোন্ জামাতের তালিবে ইলম কোন্ কিতাব পড়বে? এ বিষয়ে কথা হল, তালিবে ইলমের অবস্থা বিবেচনা করে কিতাব নির্বাচন করা হবে। সেজন্য মূল পরামর্শ তো উস্তাযই দেবেন; আমরা এখানে সহজতার জন্য নমুনাস্বরূপ একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পেশ করছি। আপনি আপনার কোনো উস্তাযের সঙ্গে মশওয়ারা করে এখান থেকে কোনো কিতাব নির্বাচন করবেন। তিনি আপনার জন্য অন্য কোনো কিতাব ঠিক করলে আপনি সেটাকেই প্রাধান্য দেবেন।

ইযাফী মুতালাআর তালিকা

ভূমিকাস্বরূপ কিছু কথা নিবেদনের পর এখন ইযাফী মুতালাআর জন্য প্রস্তাবিত কিতাবসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পেশ করার চেষ্টা করা হল। সত্য কথা হল, এটা কেবল একটি প্রস্তাবনা। তালিবে ইলমদের কর্তব্য হল, যদি তাদের আসাতিযা ও ইদারার ফায়সালা আমাদের প্রস্তাবনার বিপরীত হয় তাহলে নিঃসন্দেহে তারা তাদের আসাতিযা ও ইদারার ফায়সালাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মান্য করবে।

ইতিপূর্বে বলা হয়েছে, এই কাজ অত্যন্ত নাজুক। এজন্যই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বারবার এ থেকে পিছিয়ে আসছিলাম। এখন যেহেনে একটা সুরত এসেছে; এতে বোঝা কিছুটা হালকা হয়েছে। সেটা হল, দারুল উলূম দেওবন্দ, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তান, দারুল উলূম করাচি এবং দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার বিভিন্ন বছরের নেসাবে কিছু কিতাব এমন আছে, যেগুলো আমাদের এখানে সাধারণত দাখেলে নেসাব নয়। এমনিভাবে তাদের নেসাবে মুতালাআর জন্য নির্ধারিত কিছু কিতাবের নামও আছে। মুনাসিব মনে হচ্ছে, প্রথমে সেই কিতাবগুলোর নাম উল্লেখ করি।

কিছুদিন আগে

"کتب سيرت کی مرحلہ وار مطالعاتی فہرست"

এই শিরোনামে মাওলানা মুহাম্মাদ আকমাল জামাল সাহেবের একটি লেখা পাই, যা উস্তাযে মুহতারাম হযরত শায়খুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম কর্তৃক সত্যায়িত। বরকতের জন্য প্রথমে এই তালিকাটি পেশ করব, এরপর উপরোক্ত তালিকাগুলো। সবশেষে শ্রেণীভিত্তিক ইযাফী মুতালাআর জন্য কিছু কিতাবের তালিকা।

মাসিক সদায়ে বেফাকএবং মাসিক আলবালাগএ সদরে বেফাকে পাকিস্তান শাইখুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুমের পক্ষ থেকে আকাবিরের সাওয়ানেহ (জীবনী) বিষয়ক একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে আমরা সে তালিকাটিও পেশ করব ইনশাআল্লাহ।

এই তালিকাগুলো দেখার আগে দুইটি কথা মনে রাখা উচিত-

ক. আমাদের প্রস্তাবিত তালিকায় معاونِ نصاب পর্যায়ের কোনো কিতাবের নাম নেই। তাতে উল্লেখিত সকল কিতাব ইযাফী মুতালাআর জন্য।

খ. অন্য তালিকাগুলোতে দুই ধরনের কিতাবই রয়েছে। কিছু কিতাব معاونِ نصاب হিসেবে আর কিছু কিতাব ইযাফী মুতালাআ হিসেবে।

গ. এখানে কেবল ইবতেদায়ী থেকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত তালিবে ইলমদের ইযাফী মুতালাআর তালিকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তাখাসসুসের তালিবে ইলমদের ইযাফী মুতাআলার জন্য এই লেখায় কোনো তালিকা পেশ করা হয়নি।

১. শ্রেণীভিত্তিক সীরাতের কিতাব মুতালাআর তালিকা

ইবতেদায়ী

-سيرت خاتم الانبياء،  مفتی محمد شفيع صاحب ؒ

-سيرۃ النبی قدم بقدم، عبد اللہ فارانی

দারাজায়ে উলা (মীযান ও নাহবে মীর)

-رحمت عالم  صلی اللہ عليہ وسلم، مولانا سيد سليمان ندوی ؒ

-مختصر سيرت طيبہ، مفتی عبد الرؤف سکھروی صاحب

-سيرة خاتم الانبياء،مولانا أبو الحسن علي الندوي رحمه الله (عربی)

দারাজায়ে সানিয়া ও সালিসা (হেদায়াতুন্নাহু ও কাফিয়া)

-رحمۃ للعالمين، قاضی سلیمان منصورپوریؒ

-نور البصر فی سيرة خير البشر،  مولانا حفظ الرحمن سيوہارویؒ

-سيرت سرور کونين صلی اللہ عليہ وسلم، مولانا  محمد عاشق الہی بلندشہری  ؒ

-قصص النبيين (الجزء الخامس)، مولانا أبو الحسن علي الندوی رحمه الله (عربی)

-الرسول المعلم صلى الله عليه وسلم، الشيخ عبد الفتاح أبو غدة رحمه الله (عربی)

দারাজায়ে রাবেআ (শরহে জামী)

-نبی رحمت صلی اللہ عليہ وسلم،  مولانا ابو الحسن علی ندوی ؒ

-سيرت رسول اکرم صلی اللہ عليہ وسلم،  مفتی محمد شفيع صاحب رحمہ اللہ

-در يتيم،  مولانا ماہر القادری  مرحوم

-خاتم النبيين صلى الله عليه وسلم، الشيخ أبو زهرة (عربی)

দারাজায়ে খামেসা ও সাদেসা (হেদায়া ও জালালাইন)

-سيرت مصطفی صلی اللہ عليہ وسلم ، مولانا  محمد ادریس کاندھلوی رحمہ اللہ

-خطبات مدراس، مولانا سيد سليمان ندوی رحمہ اللہ

-محاضرات سيرت،  ڈاکٹر محمود احمد غازی

-النبی الخاتم صلی اللہ عليہ وسلم، مولانا سید مناظر احسن گيلانی رحمہ اللہ

-ہادی عالم صلی اللہ عليہ وسلم، مولانا محمد ولی رازی

-جوامع السيرة، الإمام ابن حزم رحمه الله(عربی)

-السيرة النبوية، مولانا أبو الحسن علي الندوي رحمه الله (عربی)

-هذا الحبيب محمد صلى الله عليه وسلم يا محب!،أبو بكر جابر الجزائري (عربی)

-السيرة النبوية، د.مصطفى  السباعي رحمه الله(عربی)

দারাজায়ে সাবেআ ও দাওরায়ে হাদীস

-نشر الطيب، مولانا اشرف علی تھانوی رحمہ اللہ

-اسوہ رسول اکرم صلی اللہ عليہ وسلم،  ڈاکٹر عبد الحي عارفی رحمہ اللہ

-انسان کامل،  ڈاکٹر خالد علوی

-الزهر الباسم في سيرة أبي القاسم صلى الله عليه وسلم،  العلامة مغلطاي رحمه الله (عربی)

-زاد المعاد، الحافظ ابن القيم رحمه الله،أو "مختصر زاد المعاد" (عربی) (اس کتاب کے مطالعہ کے دوران اس نوٹ کو یاد رکھنا چاہیے جو بندہ"المدخل إلى علوم الحديث الشريف"کے پانچویں ایڈيشن میں لکھاہے)

 

তাখাসসুস

-سيرة ابن هشام

-الشفاء بتعريف حقوق المصطفى صلى الله عليه وسلم ،  القاضي عياض رحمه الله

-فقه السيرة، محمد الغزالي

-السيرة النبوية الصحيحة،   د.أكرم ضياء العمري

-سبل الهدى والرشاد، محمد بن يوسف الدمشقي

 

২. দারুল উলূম দেওবন্দের নেসাব থেকে

আরবী ১ম বর্ষ (মীযান, নাহবে মীর)

رسول کريم، مولانا حفظ الرحمن رحمہ اللہ

আরবী ৩য় বর্ষ (কাফিয়া)

-شرح شذور الذهب، محمد بن عبد المنعم الجوهري (৮৮৯ھ)

-مشکوۃ الآثار،  حضرت مولانا سید محمد میاں دیوبندیؒ

-تاريخ ملت، مولانا انتظام اللہ شہابی (حصہ خلافت راشدہ ) (للمطالعۃ والاختبار)

আরবী ৪র্থ বর্ষ (শরহে বেকায়া)

-تسهيل الأصول، مولانا أنور بدخشاني(قبل أصول الشاشي)

-تاريخ ملت، مولانا انتظام اللہ شہابی (حصہ خلافت بنی اميہ، خلافت عباسيہ، خلافت ترکيہ)     

يا "تاريخ الخلفاء" (مترجم): امام سيوطی رحمہ اللہ (حصہ بنو اميہ)؛  "تاريخ ملت"(حصہ بنو عباسيہ)

আরবী ৫ম বর্ষ (হেদায়া)

تاريخ ملت، مولانا انتظام اللہ شہابی (تاريخ سلاطين ہند) (للمطالعۃ والاختبار)

আরবী ৬ষ্ঠ বর্ষ (জালালাইন)

-اصح السير، مولانا  حکیم ابوالبرکات عبد الرؤف قادری داناپوریؒ(للمطالعۃ)

-مبادی الفلسفہ، حضرت مولانا مفتی سعید احمد پالنپوری

আরবী ৭ম বর্ষ  (মেশকাত)

تاريخ المذاهب الإسلامية، أبو زهرة (للمطالعة)

 

৩. বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের নেসাব থেকে

নবম শ্রেণী (নাহবেমীর)

جوامع الکلم، مفتی محمد شفيعؒ

দশম শ্রেণী (হেদায়াতুন নাহু)

زاد الطالبين،حضرت مولانا عاشق الہی بلندشہریؒ

একাদশ শ্রেণী (কাফিয়া)

-رياض الصالحين، الإمام النووي

-نور اليقين،محمد الخضري؛ بداية الهداية،الإمام الغزالي

দ্বাদশ শ্রেণী (শরহে বেকায়া)

رياض الصالحين

ত্রয়োদশ শ্রেণী  (হেদায়া)

-آثار السنن، مولانا محمد بن علي النيموي

-الانتباہات المفيدۃ،حکیم الامت حضرت مولانا اشرف علی تھانوی رحمۃ اللہ علیہ

-التاريخ الإسلامي، إبراهيم الشريقي

তাছাড়া আমাদের দৃষ্টিতে এ কিতাবের স্থলে মাওলানা আবদুস সালাম কিদওয়ায়ী রাহ.-এর

ہماری بادشاہی مختصر تاریخ اسلام

বেশি উপযুক্ত।

 

চতুর্দশ শ্রেণী (জালালাইন)

-كتاب الآثار،موطأ محمد،مسند الإمام الأعظم

-الہيئۃ الوسطی، علامہ موسی روحانیؒ؛ فہم الفلکيات، سید شبیر احمد کا کا خیل

-التوضيح، التلويح(أصول فقه)

পঞ্চদশ শ্রেণী (মেশকাত)

-التبيان في علوم القرآن، الشيخ علي الصابوني (اس کے ساتھ حضرت بنوری کی "يتيمة البيان" کا مطالعہ بہت مناسب رہے)

-شرح عقود رسم المفتي، العلامة ابن عابدين الشامي

-اسلام اور جديد معيشت وتجارت، حضرت مولانا مفتی محمد تقی عثمانی

-آئينہ قاديانيت،  مولانا اللہ وسایا

-اختلاف امت اور صراط مستقيم ،مولانا محمد یوسف لدھیانویؒ (للمطالعۃ)

 

৪. দারুল উলূম করাচির নেসাব থেকে

একাদশ শ্রেণী (কাফিয়া)

تاریخ خلفاء راشدین (مطالعہ)

দাওরায়ে হাদীস

-التقريب والتيسير لمعرفة  سنن البشير والنذير،الإمام النووی

-تدريب الراوي، الإمام السيوطي(للمطالعة)

 

৫. দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামার নেসাব থেকে

উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষ

رحمت عالم، مولانا سيد سليمان ندوی رحمہ اللہ

উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষ

-ہندوستان کی کہانی (نصف اول)، مولانا عبد السلام  قدوائی ندوی رحمہ اللہ

-مثالی حکمراں، مولانا عبد السلام  قدوائی ندوی رحمہ اللہ

উচ্চ মাধ্যমিক ৩য় বর্ষ

تعليم القرآن ، مولانا محمد اويس ندوی

উচ্চ মাধ্যমিক ৪র্থ বর্ষ

قصص الصالحين للأطفال، مولانا السيد أبو الحسن علي الندوي    (للمطالعة.)

উচ্চ মাধ্যমিক ৫ম বর্ষ

-تهذيب الأخلاق، مولانا الحكيم السيد عبد الحي الحسني 

-عصر الخلفاء الراشدين وبني أمية (من كتاب الشيخ  عبد السلام)

-صور من حياة  الصحابة، عبد الرحمن رافت باشا (للمطالعة)

স্নাতক ১ম বর্ষ (শরহে বেকায়া)

-رسالۃ التوحید‏‏، شاہ اسماعیل شہیدؒ

-رياض الصالحين أو تهذيب الأخلاق

-مصطلح الحديث

-صور من حياة الصحابة (للمطالعة)

স্নাতক ২য় বর্ষ

-العقيدة السنية شرح العقيدة الحسنة،   الشاه ولي الله الدهلوي

-إذا هبت ريح الإيمان، أبوالحسن علي الندوي(للمطالعة)

-التاريخ الإسلامي بعد المتوكل إلى آخر العصر العباسي (للمطالعة)

স্নাতক ৩য় বর্ষ

-التفسير والمفسرون، الذهبي (للمطالعة)

-علم أصول الفقه،عبد الوهاب الخلّاف

-جزيرة العرب، محمد رابع الحسني الندوي

-الاقتصاد  (دروس يعدها الأستاذ)

-التاريخ من دخول المسلمين في الهند إلى نهاية حكمهم (للمطالعة)

-إلى الإسلام من جديد،أبوالحسن علي الندوي؛ أو من روائع حضارتنا ، للسباعي(للمطالعة)

স্নাতক ৪র্থ বর্ষ

-العقيدة والكلام  (دروس يعدها الأستاذ)

-نصوص للمطالعة من كتاب زعماء الإصلاح في العصر الحديث ... (للمطالعة)

-الطريق إلى المدينة، أبوالحسن علي الندوي (للمطالعة)

 

৬. সদরে বেফাকে পাকিস্তান শাইখুল ইসলাম দামাত বারাকাতুহুম কর্তৃক নির্দেশিত আকাবিরের জীবনীমূলক কিছু কিতাব

শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেন-

এ যুগে আমাদের তালীম-তরবিয়তের উৎস হল আকাবিরে উলামায়ে দেওবন্দের তালীমাত এবং তাদের উত্তম জীবন। এর দ্বারা তালিবে ইলমদের মধ্যে তাযকিয়ায়ে নফসের ইহতিমাম পয়দা হয়। সেজন্য মাদরাসায় এ বিষয়টির ইহতিমাম করা উচিত যে, নির্দিষ্ট একটা সময়ে (উদাহরণস্বরূপ ফজর কিংবা আসরের পর) ইজতিমায়ীভাবে আকাবিরে উলামায়ে দেওবন্দের সাওয়ানেহ (জীবনী) বা মালফুযাত (বাণীসমগ্র) পড়া হবে; সেটা দশ মিনিটির জন্যই হোক না কেন। বিশেষত নিম্নোক্ত কিতাবগুলো-

-آپ بیتی، حضرت شیخ الحدیث مولانا محمد زکریا صاحب کاندھلوی رحمۃ اللہ علیہ

-سوانح قاسمی،  مؤلفہ مولانا مناظر احسن گیلانی رحمۃ اللہ علیہ

-تذکرۃ الرشید (حضرت گنگوہی کی سوانح)،  مؤلفہ مولانا   عاشق الہی میرٹھی رحمۃ اللہ علیہ

-حیات شیخ الہند: مؤلفہ حضرت مولانا سید اصغر حسین صاحب رحمۃ اللہ علیہ

-اشرف السوانح (حضرت تھانوی کی سوانح)،  مؤلفہ خواجہ   عزیز الحسن مجذوب رحمۃ اللہ علیہ

-تذکرۃ الخلیل (حضرت مولانا خلیل احمد سہارنپوری رحمۃ اللہ علیہ کی سوانح)، مؤلفہ مولانا   عاشق الہی میرٹھی رحمۃ اللہ علیہ

-نقش حیات، از شیخ الاسلام حضرت مدنی رحمۃ اللہ علیہ

-معارف مدنی (شیخ الاسلام حضرت مولانا حسین احمد رحمۃ  اللہ علیہ کی علمی وتزکیتی سوانح) مؤلفہ مولانا عبد الشکور ترمذی رحمۃ اللہ علیہ

-تجلیات عثمانی (شیخ الاسلام حضرت مولانا شبیر احمد صاحب عثمانی رحمۃ اللہ علیہ کے علوم ومعارف کا تذکرہ)،  از مولانا  انوار الحسن شیرکوٹی ؒ-১০مجالس حکیم الامت، از حضرت مولانا مفتی محمد شفیع صاحب قدس سرہ

-১১اکابر  علمائے دیوبند کے خطبات (مثلا خطبات حکیم الاسلام حضرت قاری محمد طیب صاحب رحمۃ اللہ علیہ)۔

এই কিতাবগুলো দীর্ঘ হওয়ার কারণে যদি সম্পূর্ণ কিতাব ইজতিমায়ীভাবে পড়া কঠিন হয় তাহলে কমপক্ষে এর নির্বাচিত ইসলাহী আলোচনাগুলো কোনো উস্তায বলে দেবেন এবং সেগুলো মুতালাআর জন্য তালিবে ইলমদেরকে তারগীব দেবেন। সেজন্য কোনো মাদরাসার কুতুবখানা যেন এসকল কিতাবের একাধিক নুসখা থেকে খালি না থাকে।

বান্দার আরয হল, খুতুবাতে হাকীমুল ইসলাম-এর চাইতে হাযরাতুল উস্তাযের ইসলাহী খুতুবাতবেশি সহজ। সেজন্য একটা সময় পর্যন্ত হাযরাতুল উস্তাযের ইসলাহী খুতুবাতমুতালাআ করা, তারপর খুতুবাতে হাকীমুল উম্মতএবং মালফুযাতে হাকীমুল উম্মতবারবার মুতালাআ করা মুনাসিব।

 

৭. শ্রেণীভিত্তিক ইযাফী মুতালাআর জন্য কিছু কিতাবের তালিকা

জামাতে দাহুম (তাইসীর)

ছোটদের আকীদা সিলসিলা (১০টি বই), হযরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুম।

জামাতে নহুম (মীযান)

১. ছোটদের সীরাত সিলসিলা (১০টি বই), হযরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুম।

২. ছোটদের ফাযায়েল সিরিজ (৪টি বই), হযরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুম।

জামাতে হাশতুম (নাহবে মীর)

১. ইসলাম কিয়া হ্যায়, মাওলানা মুহাম্মাদ মানযুর আহমাদ নুমানী রাহ. (১৩২৬-১৪১৭ হি.)

২. ইসলামকে জানতে হলে, হযরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুম

জামাতে হাফতুম (হেদায়াতুন্নাহু)

-حیاۃ المسلمین، حکیم الامت حضرت مولانا اشرف علی تھانوی رحمۃ اللہ علیہ (১২৮০-১৩৬২)

-جزاء الاعمال، حکیم الامت

জামাতে শশুম (কাফিয়া)

-آپ کون ہیں، کیا ہیں، آپ کا منزل کیا ہے؟ حضرت مولانا محمد منظور نعمانی

-من أدب الإسلام، الشيخ عبد الفتاح أبو غدة رحمة الله عليه(১৩৩৬-১৪১৭)

-آداب المعاشرۃ، حکیم الامت

জামাতে পাঞ্জুম (শরহে জামী)

-تعلیم الدین، حکیم الامت

-فروع الایمان، حکیم الامت

-قرآن آپ سے کیا کہتاہے؟ حضرت مولانا محمد منظور نعمانی

-قيمة الزمن عند العلماء، الشيخ عبد الفتاح أبو غدة

জামাতে চাহারুম (শরহে বেকায়া)

-تحدیث نعمت، حضرت مولانا محمد منظور نعمانی

-پاجا سراغ زندگی، حضرت مولاناسید ابو الحسن علی ندوی

অথবা এর বাংলা অনুবাদ জীবন পথের পাথেয়’, হযরত মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ দামাত বারাকাতুহুম

-ذکر وفکر،حضرت مولانا مفتی محمد تقی عثمانی

জামাতে সুউম (হেদায়া)

-دین وشریعت،  حضرت مولانا محمد منظور نعمانی

২. ইসলামে মধ্যপন্থা ও পরিমিতিবোধ, মাওলানা আবুল বাশার দামাত বারাকাতুহুম

-دستور حیات، حضرت مولانا سید ابو الحسن علی ندوی

-تهذيب  الأخلاق، مولانا الحكيم السيد عبد الحي الحسني

জামাতে দুউম (জালালাইন)

-صفحات من صبر العلماء على شدائد العلم والتحصيل، الشيخ عبد الفتاح أبو غدة

-اختلاف امت اور صراط مستقیم، حضرت مولانا محمد یوسف لدھیانوی

-هكذا فهم الصحابة، صالح أحمد الشامي

-اکابر دیوبند کیا تھے؟ حضرت مولانا محمد تقی عثمانی دامت برکاتہم

জামাতে উলা (মেশকাতুল মাসাবীহ)

-معارف حکیم الامت، جمع کردہ ڈاکٹر عبد الحي عارفی رحمۃ اللہ علیہ

-اصلاحی مجالس، حضرت مولانا محمد تقی عثمانی دامت برکاتہم

-نقوش رفتگاں، حضرت مولانا محمد تقی عثمانی دامت برکاتہم

-دل کی دنیا، حضرت مولانا مفتی محمد شفیع (১৩১৪-১৩৯৬)৬

দাওরায়ে হাদীস

-اسلام اور ہماری زندگی،  حضرت مولانا محمد تقی عثمانی دامت برکاتہم

-آپ کے مسائل اور ان کا حل،  حضرت مولانا محمد یوسف لدھیانوی

-شخصیات وتاثرات، حضرت مولانا محمد یوسف لدھیانوی

-بصائر وعبر، حضرت مولانا سید یوسف بنوری(১৩২৬-১৩৯৭) 

هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على خير خلقه محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين.

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

২৯-০১-১৪৪৪ হি.

 

 

 

advertisement