সালাফের বক্তব্যে ‘তাকলীদ’ ও ‘মাযহাব’ শব্দের ব্যবহার
মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবন এবং আর্ন্তজাতিক জীবন পর্যন্ত সকল পর্যায়ে কিয়ামত পর্যন্ত যত সমস্যা ও প্রয়োজন দেখা দিবে তার শরয়ী সমাধানের উৎস হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ (ব্যাপক অর্থে)। তৃতীয় উৎস ইজমা এবং চতুর্থ উৎস কিয়াসে শরয়ী। সরাসরি শরীয়তের উৎস ও দলিল-প্রমাণ থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজে নেওয়া যে সকলের পক্ষে সম্ভবপর নয় তা বলাই বাহুল্য। এজন্য ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই এ ধারাটি চলে আসছে যে, কুরআন-সুন্নাহ ও তা থেকে উৎসারিত ইলমে পারদর্শী একটি জামাত থাকেন এবং অন্যান্যরা কুরআন-হাদীসের হুকুম জানার জন্য তাঁদের শরণাপন্ন হন। তাঁদের ব্যাখ্যা অনুসারে কুরআন হাদীসের নির্দেশনা জেনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করেন। কুরআনে হাকীমে সূরা তাওবার ১১২ নং আয়াত ও সূরা নাহলের ৪৩ নং আয়াতে এই কর্মপদ্ধতিরই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সহীহ বুখারীর ইলম অধ্যায়ে ১০০ নং হাদীসেও এই নির্দেশনা বিদ্যমান রয়েছে।
কিতাব ও সুন্নাহর পারদর্শীদের শরণাপন্ন হয়ে তাঁদের নিকট থেকে শরয়ী হুকুম জানা এবং তাঁদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার প্রতি আস্থাশীল হয়ে তারা শরীয়তের যে হুকুম বলেন তা মেনে নেওয়াকে পরিভাষায় ‘তাকলীদ’ বলে, যা ইসলামের প্রথম যুগ থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। কেননা এই ধারাটি শরীয়তের শিক্ষার ফলাফল হওয়ার পাশাপাশি একটি স্বাভাবিক পদ্ধতি, যা মানুষের স্বভাবের মধ্যেই আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে গ্রথিত রয়েছে।
দ্বীন ও দুনিয়ার সকল ব্যাপারেই যিনি যে বিষয়ে পারদর্শী নন তিনি সে বিষয়ের পারদর্শী ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে যিনি বা যারা বিভিন্ন বহিরাগত প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে স্বভাবের এই স্বাভাবিকতাকে বিনষ্ট করে ফেলেছেন তাদেরকে দু’পথের যে কোনো একটির অনুগামী হতে দেখা যায়। হয়তো শাস্ত্রের পারদর্শী ব্যক্তিদের সঙ্গে সংঘর্ষমূলক অবস্থান গ্রহণ করেন কিংবা কোনো অযোগ্য লোকের তাকলীদের মধ্যে পতিত হন। কিতাব ও সুন্নাহর পারদর্শী ব্যক্তিবর্গকে পরিভাষায় ‘ফকীহ’ ও ‘মুজতাহিদ’ বলা হয় এবং দ্বীনী বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে শরীয়তের সিদ্ধান্তমতেই তারা যেহেতু উম্মাহর অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব, এ জন্য তাঁদেরকে ‘ইমাম’ও বলা হয়। এঁেদর অনুসরণ করাকে ‘তাকলীদ’ বলা হয়। এবং অনুসারীদেরকে ‘মুকাল্লিদ’ বলা হয়। আরবী ‘ফকীহ’ শব্দটির বহুবচন ‘ফুকাহা’ এবং মুজতাহিদ শব্দটির বহুবচন ‘মুজতাহিদীন’ ব্যবহৃত হয়। ইমাম শব্দের বহুবচন ‘আইম্মা’ এবং ‘মুকাল্লিদ’ শব্দের বহুবচন ‘মুকাল্লিদীন’। যে ব্যক্তি (সাধারণ মানুষ কিংবা সাধারণ আলেম) কুরআন সুন্নাহয় পারদর্শী নয় তার জন্য কোনো পারদর্শী ব্যক্তিত্বের তাকলীদ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জরুরি। যদি সে শরীয়তের এই বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজের মনগড়া পদ্ধতি অনুসরণ করে একে হাদীস অনুসরণ আখ্যা দেয় এবং কিতাব-সুন্নাহ ও অন্যান্য শরয়ী দলিলের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আরম্ভ করে দেয় কিংবা সে নিজে এ কাজ না করলেও কোনো অযোগ্য অনধিকার চর্চাকারীর তাকলীদ আরম্ভ করে তবে তাকে ‘গাইরে মুকাল্লিদ’ বলা হয়। এ শব্দটি বহুবচনে ‘গাইরে মুকাল্লিদীন’ রূপে ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ তাকলীদ পরিহারকারী; অথচ তাকলীদ স্বভাব ও শরীয়ত উভয় দিক থেকেই কাম্য এবং সাধারণ মানুষের জন্য হাদীস মোতাবেক আমল করার সর্বযুগে স্বীকৃত ও অনুসৃত মাসনূন পন্থা।
এটা হল তাকলীদের অর্থ। আর মাযহাব দ্বারা উদ্দেশ্য ফিকহী মাযহাব। অর্থাৎ কুরআন, সুন্নাহ ও শরীয়তের অন্যান্য দলিল থেকে গৃহীত ও উৎসারিত বিধান ও মাসাইলের সুবিন্যস্ত সংকলন। সংকলকগণের ভিন্নতায় এই সংকলনও বিভিন্ন ছিল। তবে সেই সব সংকলনের মধ্যে বর্তমানে শুধু চারটি সংকলনই সংরক্ষিত ও অনুসৃত। তার একটি হল ‘আলফিকহুল হানাফী’ যা হানাফী মাযহাব নামে প্রসিদ্ধ। এর প্রথম সংকলক ইমাম আবু হানীফা রহ.। তাঁর সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয়ে সংকলনটির এই নাম হয়েছে। ইমাম আবু হানীফা রহ. এর জন্ম ৮০ হিজরীতে এবং মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে, যিনি একাধিক সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছেন। তিনি নিজেও অনেক বড় ফকীহ, মুজতাহিদ ও হাফিজুল হাদীস ছিলেন এবং তাঁর পূর্বসূরী ফুকাহা তথা কিতাব ও সুন্নাহর পারদর্শী ইমামগণের ফিকহের ভাণ্ডারও তাঁর সামনে বিদ্যমান ছিল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস শরীফ যা সকল মুমিনের সম্পদ, তার উপর আমল করার স্বীকৃত, অনুসৃত ও মাসনূন পন্থা হল কোনো ফকীহ, মুজতাহিদ কিংবা কোনো ফিকহী মাযহাবের নির্দেশনায় তার উপর আমল করা, এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং এখান থেকে বিধান গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোনো অপারদর্শী ব্যক্তির অনুপ্রবেশ না ঘটা, এবং সে ধরনের কোনো ব্যক্তির তাকলীদও না করা। কিন্তু ইংরেজ শাসনামলে যখন গাইরে মুকাল্লিদ ও লা-মাযহাবী মতবাদের বিদআতটি একটি স্বতন্ত্র ফেরকার রূপ পরিগ্রহ করল এবং হাদীস অনুসরণের স্বীকৃত ও সর্বযুগে অনুসৃত মাসনূন পন্থা পরিহার করে তারা হাদীস অনুসরণের নামে একটি নতুন পদ্ধতির দিকে মানুষকে আহ্বান করতে লাগল তখন এই নব আবিষ্কৃত পন্থাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তাদেরকে নানা ধরনের অসাধুতার আশ্রয় নিতে হল। তারা হাদীস অনুসরণের স্বীকৃত পন্থাটির ব্যাপারে মানুষকে সংশয়গ্রস্ত করে তোলার জন্য বিভিন্ন অর্থহীন প্রশ্নের অবতারণা করল। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে,
نَهى رسولُ اللَّهِ صلّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ عنِ الأُغلوطاتِ.
অর্থাৎ, মানুষকে বিভ্রান্তকারী প্রশ্নের অবতারণা করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। এই চানক্যপূর্ণ প্রশ্নসমূহের মধ্যে একটি হল “তোমরা যে তাকলীদ করে থাক তা চতুর্থ শতাব্দীর বিদআত। সালাফের কেউ তাকলীদ করতেন না। তাঁদের যুগে মাযহাব-মুযহাব কিছুই ছিল না। এগুলো পরবর্তী যুগের আবিষ্কার। এমনকি সালাফের বক্তব্যে তাকলীদ ও মাযহাব শব্দেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। যদি থাকে তবে দেখাও।”
এ ধরনের প্রশ্নগুলো দ্বারা সাধারণ মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা যায়। কিন্তু বাস্তবে তা অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা মাত্র। ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই বিভিন্ন ফিকহী মাযহাব বিদ্যমান ছিল। কোনো ধরনের আপত্তি ছাড়াই সেসব মাযহাবের তাকলীদও হয়েছে। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে পরবর্তী সকল যুগের ফুকাহা ও বিভিন্ন মাযহাববিশিষ্ট ইমামগণের ইতিহাস আমরা নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করতে পারব। সাহাবা, তাবেয়ীন তাবেতাবেয়ীনদের মধ্যে এবং তাঁদের পরবর্তী প্রতি যুগে ফকীহ ও মুজতাহিদ কারা ছিলেন এবং কোন অঞ্চলে কোন ইমাম ফকীহ ও মুজতাহিদের তাকলীদ করা হত-এই সব কিছু ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে। ইনশাআল্ল্হা ‘ফিকহে হানাফীর সনদ’ শিরোনামে প্রকাশিতব্য প্রবন্ধে আমরা সংক্ষেপে এই ইতিহাসটির উপরও আলোকপাত করব। এই আলোচনায় শুধু সালাফের বক্তব্যে ‘তাকলীদ’ ও ‘মাযহাব’ শব্দের ব্যবহার দেখাতে চাই। আর তাও দেখাতে চাই ইমাম বুখারী, তাঁর উস্তাদ ও ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রহ.-এর কথা থেকে। আশা করি তাঁদের কথাগুলো মনোযোগের সঙ্গে শোনার ও বোঝার চেষ্টা করা হবে।
১. ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রহ. (১৬১হি.২৩৪হি.) ইমাম বুখারী রহ. এর বিশিষ্ট উস্তাদ ছিলেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সেসব ফকীহের কথা আলোচনা করেছেন যাদের শাগরিদগণ তাঁদের মত ও সিদ্ধান্তগুলো সংরক্ষণ করেছেন এবং তা প্রচার-প্রসার করেছেন এবং যাদের ফিকহী মাযহাবের উপর আমল ও ফতোয়া জারী ছিল। আলী ইবনুল মাদীনী রহ. এই প্রসঙ্গে বলেছেন, সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে এমন ব্যক্তি ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. (মৃত্যু : ৩২ হিজরী), যাইদ ইবনে ছাবিত রা. (জন্ম : হিজরতপূর্ব ১১ সনে, মৃত্যু : ৪৫ হিজরী) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. (জন্ম : হিজরতপূর্ব ৩ সনে ও মৃত্যু : ৬৮ হিজরী)
তার আরবী বাক্যটি নিুরূপ :
ولم يكن من أصحاب النبى صلى الله عليه وسلم أحد له أصحاب يقومون بقوله فى الفقه الا ثلاثة عبدالله بن مسعود وزيد بن ثابت وعبد الله بن عباس رضى الله عنهم فان لكل منهم أصحابا يقومون بقوله ويفتون الناس.
এরপর আলী ইবনুল মাদীনী রহ. তাঁদের প্রত্যেকের মাযহাবের অনুসারী ও তাঁদের মাযহাব মোতাবেক ফতোয়া দানকারী ফকীহ তাবেয়ীগণের নাম উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, “আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর যে শাগরিদগণ তার কিরাআত অনুযায়ী মানুষকে কুরআন শেখাতেন, তাঁর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানুষকে ফতোয়া দিতেন এবং তাঁর মাযহাব অনুসরণ করতেন তারা হলেন নিুোক্ত ছয়জন মনীষী। আলকামাহ (মৃত্যু ৬২ হিজরী) আসওয়াদ (মৃত্যু ৭৫ হিজরী) মাসরূক (মৃত্যু ৬২ হিজরী) আবীদাহ (মৃত্যু ৭২ হিজরী) আমের ইবনে শারাহবীল (মৃত্যু ৬৩ হিজরী) ও হারিস ইবনে কাইস (মৃত্যু ৩৬ হিজরী)।
ইবনুল মাদীনী রহ. বলেছেন, ইবরাহীম নাখায়ী রহ. (৪৬-৯৬ হিজরী) এই ছয়জনের নাম উল্লেখ করেছেন।
ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী রহ.-এর উপরোক্ত বিবরণের সংশ্লিষ্ট আরবী বাক্য নিম্নরূপ
الذين يقرؤن الناس بقراءته, ويفتونهم بقوله ويذهبون مذهبه...
এরপর আলী ইবনুল মাদীনী রহ. লিখেছেন “আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (ফকীহ) শাগরিদদের ব্যাপারে এবং তাদের মাযহাবের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন ইবরাহীম (নাখায়ী) (৪৬-৯৬ হিজরী) ও আমের ইবনে শারাহবীল শা’বী (১৯-১০৩ হিজরী) তবে শা’বী মাসরূক রহ. এর মাযহাব অনুসরণ করতেন।
আরবী পাঠ নিম্নরূপ:
وكان أعلم اهل الكوفة بأصحاب عبد الله ومذهبهم ابراهيم والشعبي الا أن الشعبي كان يذهب مذهب مسروق.
এরপর লিখেছেন,
وكان أصحاب زيد بن ثابت الذين يذهبون مذهبه في الفقه ويقومون بقوله هئولاء الاثنى عشر...
অর্থাৎ যাইদ ইবনে ছাবিত রা. এর যে শাগরিদবৃন্দ তাঁর ফিকহী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন এবং তাঁর মত ও সিদ্ধান্তসমূহ সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারে মগ্ন ছিলেন তারা বারো জন।
তাদের নাম উল্লেখ করার পর ইবনুল মাদীনী রহ. লেখেন, এই বারো মনীষী ও তাদের মাযহাবের সবচেয়ে বড় আলেম ছিলেন ইবনে শিহাব যুহরী (৫৮-১২৪ হিজরী) ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ আনসারী (মৃত্যু ১৪৩ হিজরী) -আবুয যিনাদ (৬৫-১৩১ হিজরী) আবু বকর ইবনে হায্ম (মৃত্যু ১২০ হিজরী)। এদের পরে ইমাম মালেক ইবনে আনাস রহ. (৯৩-১৭৯ হিজরী)।
এরপর ইবনুল মাদীনী রহ. বলেছেন,
وكما أن أصحاب ابن عباس ستة‘ الذين يقومون بقوله ويفتون به ويذهبون مذهبه.
তদ্রূপ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর যে শাগরিদবৃন্দ তাঁর মত ও সিদ্ধান্তসমূহ সংরক্ষণ ও প্রচারে মগ্ন ছিলেন, সে অনুযায়ী ফতোয়া দিতেন এবং তার অনুসরণ করতেন, তারা হলেন ছয়জন। এরপর তিনি তাদের নাম উল্লেখ করেন।
ইমাম ইবনুল মাদীনী রহ. এর এই আলোচনা তার ’كتاب العلل‘ পৃ. ৪৪-৪৫-এ বিদ্যমান রয়েছে এবং ইমাম বাইহাকী রহ. এর ’المدخل الى السنن الكبرى‘ পৃ. ১৬৪-৬৫ এও সনদসহ উল্লেখিত হয়েছে। আমি এখন বাইহাকী রহ. এর উপরোক্ত কিতাব থেকেই ইমাম ইবনুল মাদীনী রহ. এর কথাগুলো উদ্ধৃত করেছি। এই কথাগুলো আলোচ্য বিষয়ে এতই স্পষ্ট যে এখানে আর কোনো টীকা টিপ্পনীর প্রয়োজন নেই।
২. ইমাম বুখারী রহ. এর ’خلق أفعال العباد‘ আলেমদের মধ্যে বেশ প্রসিদ্ধ একটি কিতাব। এই কিতাবে ইমাম বুখারী রহ. আকীদা প্রসঙ্গে এক আলোচনায় বলেছেন, ‘অনেক মানুষ অজ্ঞতার কারণে নানা ভিত্তিহীন কথা বলে থাকে। তারা না অন্তর্দৃষ্টি (ইজতিহাদ)-এর ভিত্তিতে কথা বলে, আর না কোনো শুদ্ধ পদ্ধতির তাকলীদের ভিত্তিতে। যা কিছু বলে সব কিছুর উৎস হল অজ্ঞতা। না কোনো দলিল আর না কোনো উদ্ধৃতি।’
বোঝা গেল, কোনো একটি মাসআলা গ্রহণযোগ্য হওয়ার পথ দুটি।
এক. সরাসরি দলিল অন্বেষণ করা। এটি অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন মুজতাহিদের কাজ।
দুই. কোনো অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি অর্থাৎ মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত তালাশ করা। এটা হল শুদ্ধ তাকলীদ। এর ভিত্তিতে যদি কেউ কিছু বলে তবে তার উপর আপত্তি করা যাবে না।
ইমাম বুখারীর আরবী বাক্য নিুরূপ:
قال ابو عبد الله : وانتحل نفر هذا الكلام فا فترقوا على أنواع لا أحصيها من غير بصر ولاتقليد يصح فأضل بعضهم بعضًا جهلا بلا حجة أو ذكر اسناذوكله من عند غيرالله الا من رحم ربك فوجدوا فيه اختلافا كثيرا.
যারা আরবী ভাল বোঝেন তারা ইমাম বুখারী রহ.-এর উপরোক্ত কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখবেন তাতে নিুোক্ত কথাগুলো রয়েছে।
এক. ইমামের তাকলীদ অনুমোদিত। দুই. এমন তাকলীদ জাহালাত বা মূর্খতা নয়।
তিন. এমন তাকলীদ গুমরাহী নয়। ইমাম যেহেতু দলিলের ভিত্তিতে বলেন তাই তার কথা মেনে নেওয়া গাইরুল্লাহর ফয়সালা মেনে নেওয়া নয়।
চার. অযোগ্য লোকের তাকলীদ করা বৈধ নয়।
আপাতত এই উদ্ধৃতিগুলো উল্লেখ করেই আলোচনা সমাপ্ত করছি। আরও বিস্তারিত আলোচনা অন্য কোনো অবসরে করা যাবে। উপরোক্ত আলোচনা যদি মনোযোগের সঙ্গে পড়া হয় এবং আল্লাহ তাআলার তাওফীক নসীব হয় তবে এর মধ্যেও হেদায়েতের উপকরণ রয়েছে।