যিলহজ্ব ১৪২৭   ||   জানুয়ারি ২০০৭

আমার নানাজী

আবিদাতুল মুআইয়িদ আলআজীম

নানাজী  শায়খ আলী তানতাবী রাহ.-এর কথা। আমি তার পরিচয় লাভ করার অনেক আগেই তিনি মানুষের কাছে পরিচিত এবং আমার পৃথিবীতে আগমনেরও পূর্বে মানুষ তার দ্বারা উপকৃত। তার বিভিন্ন খুৎবা ও বক্তৃতা এবং মজলিস ও আলোচনা থেকে মানুষ তার বিস্তৃত জ্ঞানের পরিচয় পেয়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। আমার অক্ষরজ্ঞান হওয়ারও আগে নানাজীর বিভিন্ন গ্রন্থ ও প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে পাঠকবৃন্দের হাতে পৌঁছেছে। কিন্তু তারপরও সময়ের স্বাভাবিক বিবর্তনে একটি সময় উপস্থিত হয়েছে যখন আমিও নানাজী সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছি। তবে আমি তার কথা বলতে চাই মানুষ তাকে যেভাবে দেখেছেন সেভাবে নয়, আমি তার দৌহিত্রী, তাকে যেমন জেনেছি সেভাবে। তাঁরই গৃহে ও তত্ত্বাবধানে লালিত পালিত হওয়ায় আমি তাকে দেখেছি একজন সন্তানবৎসল নানারূপে, একটি পরিবারের কর্তারূপে এবং তার চারপাশের মানুষগুলোর জন্য কল্যাণকামী নির্দেশকরূপে।

নানাজী তরবিয়তের বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন লেখায় ও বক্তৃতায় মানুষকে সঠিক তরবিয়তের গুরুত্বের প্রতি মনোযোগী করেছেন এবং সন্তানদের সহীহ ইসলামী তরবিয়ত প্রদান করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।

ইসলামী তরবিয়তের মৌলিক ভিত্তি দুইটি। একটি হল শিশুর অন্তরে গভীর ঈমান প্রতিষ্ঠিত করা। আর দ্বিতীয়টি যাকে হাদীসের পরিভাষায় ইহসান বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা সর্বদা সবকিছু দেখছেন- একথার সার্বক্ষণিক অনুভূতি শিশুর অন্তরে জাগ্রত করা।

নানাজী তরবিয়তকে তুলনা করেছেন নির্মাণ-প্রক্রিয়ার সঙ্গে। নির্মাণ-প্রক্রিয়ার সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান কাজটি হল ভবনের ফাউন্ডেশন নির্মাণ করা। ভবন ভেদে ভবনের ফাউন্ডেশনও বিভিন্ন ধরনের হয়। যিনি দুই তলা বিশিষ্ট গৃহ নির্মাণ করতে চান তিনি সেই অনুপাতে ভূমি খনন করবেন এবং রড সিমেন্ট দ্বারা ফাউন্ডেশন তৈরি করবেন। যিনি দশ তলা ভবন নির্মাণ  করতে চান তিনি তার ফাউন্ডেশনও দশ তলার উপযোগী করে তৈরি করবেন। আর যিনি আকাশচুম্বী টাওয়ার নির্মাণের ইচ্ছা রাখেন তিনি ভূমির অনেক গভীর থেকে এবং অনেক মজবুত করে ফাউন্ডেশন নির্মাণ করবেন।

ইট-পাথরের গৃহনির্মাণের মত দ্বীন ও ঈমান বিশিষ্ট জীবন-নির্মাণেরও এটিই মূলনীতি।

আমরা যদি সুগভীর ঈমান, সুদৃঢ় আমল ও পরিষ্কার ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন একটি প্রজন্ম আশা করি তবে তরবিয়তকারীদের জন্য অপরিহার্য, সে প্রজন্মের হৃদয়ের বীজতলায় আল্লাহভীতি ও আল্লাহর স্মরণের চাষ করা এবং গভীর ঈমানের বীজ বপন করা।

শৈশব থেকেই এই জীবন-নির্মাণ প্রক্রিয়ার সূচনা হতে হবে। সেসময় থেকেই শিশুর চারপাশের প্রতিটি ঘটনা এবং প্রতিটি পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে তার হৃদয়-নির্মাণের কাজে ব্যবহার করতে হবে।

এক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে সার্বক্ষণিক সচেতনতা প্রয়োজন। কেননা এর মাধ্যমেই শিশুর অন্তরে ঈমান আমলের একটি দৃঢ় ও মজবুত ভিত্তি গড়ে দেওয়া সম্ভব হবে। একটি হল সহীহ ও পূর্ণাঙ্গ ঈমান তথা ঈমানের আরকানসমূহ শিশুর অন্তরে গ্রোথীত করা। আর অন্যটি হল দ্বীনের মৌলিক আমলসমূহ যথা নামায, রোযা, সাদাকাহ এবং হালালকে হালাল ও হারামকে হারাম জানা ইত্যাদিতে অভ্যস্ত করে তোলা। তবে এক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য তরবিয়তকারীকেও ইসলামের হালাল-হারাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও বুঝের অধিকারী হতে হবে। (চলবে)

 

 

advertisement