শাবান-রমযান ১৪৪৩   ||   মার্চ-এপ্রিল ২০২২

কুরআন কারীমের নূর ও হেদায়েত গ্রহণই
সফলতার একমাত্র পথ

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নৈকট্য লাভের সহজ ও সুন্দরতম মাধ্যম হল কুরআন মাজীদ। অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা, অন্যের তিলাওয়াত শোনা, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা ফিকির করা- এসবই বান্দাকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করে। আল্লাহর পরিচয় লাভ ও তাঁর প্রতি আপনত্ব অনুভবে সাহায্য করে। কারণ, কুরআন আল্লাহর কালাম। তাঁর পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি প্রেরিত বার্তা। যেখানে তিনি পরম মমতায় বান্দাকে সম্বোধন করেছেন। উপদেশ দিয়েছেন। কল্যাণের পথ নির্দেশ করেছেন। মন্দ ও ক্ষতিকর বিষয়ে সতর্ক করেছেন। নবী ও রাসূলদের গল্প বলেছেন। সাহাবায়ে কেরামের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। পূর্বের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর কর্ম-পরিণতি ও উত্থান-পতনের ইতিবৃত্ত জানিয়েছেন। সর্বোপরি ইহ-পরকালীন জীবনে সফলতা লাভের পথ ও পন্থা বলে দিয়েছেন। এসব এত সহজ ও সাবলীলভাবে পেশ করেছেন যে, সবাই বুঝতে পারে। এত চমৎকার শব্দ, বাক্য ও শৈলী ব্যবহার করেছেন যে, সবাই তার মাধুর্য অনুভব করতে পারে।

কুরআন হল রূহ

কুরআনের বহু জায়গায় আল্লাহ তাআলা নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর বলেছেন, হে বান্দা, ইনি তোমাররব। অর্থাৎ এই মহামহিম অত্যুচ্চ গুণাবলির অধিকারী সত্তার সঙ্গে তোমার সম্পর্ক বড় গভীর ও মজবুত। তিনি তোমার স্রষ্টা। তোমার প্রতিপালক। তোমার অতি আপন।

এভাবে বান্দাকে তার আসল পরিচয়ের সূত্র ধরিয়ে দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের রহস্য। এরপর নানাভাবে তাকে উৎসাহিত করেছেন কুরআন পড়তে। উদ্বুদ্ধ করেছেন কুরআনের বিভিন্ন আয়াত নিয়ে ভাবতে। কুরআনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে। কুরআনকে বুকে ধারণ করে লাভবান হতে। যেমন সূরা শূরার এক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَکَذٰلِکَ  اَوْحَیْنَاۤ  اِلَیْکَ رُوْحًا مِّنْ اَمْرِنَا  مَا كُنْتَ تَدْرِیْ مَا الْکِتٰبُ وَ لَا  الْاِیْمَانُ وَ لٰکِنْ جَعَلْنٰهُ  نُوْرًا نَّهْدِیْ  بِهٖ مَنْ نَّشَآءُ  مِنْ عِبَادِنَا.

এভাবেই আমি ওহীর মাধ্যমে আপনার প্রতি নাযিল করেছি এক রূহআমার নির্দেশে। এর আগে আপনি জানতেন না- কিতাব কী, ঈমান কী। কিন্তু আমি একে বানিয়েছি এক নূর, যার মাধ্যমে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চাই হেদায়েত দান করি। -সূরা শূরা (৪২) : ৫২

এখানে আল্লাহ তাআলা কুরআনকে মানব জাতির রূহবা প্রাণ বলেছেন। বুঝিয়েছেন, কুরআনহীন মানব জীবন প্রাণহীন মানুষের মতো, মৃত।

এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إن الذي ليس في جوفه شيء من القرآن كالبيت الخرب.

যে ব্যক্তির বুকে কুরআনের কোনো অংশ নেই, সে যেন বিরান ঘর। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৬

অর্থাৎ অপরিচ্ছন্ন, আবর্জনাময়, ভীতিকর মানব সে। আলো বাতাসহীন, বসতিহীন, কীট পতঙ্গের আবাস তার বুক। কিন্তু এই বুকে যখন কুরআন প্রবেশ করে, বুক আলোকিত হয়। জীবন উজ্জ্বল ও ঝলমলে হয়। সজীব সতেজ হয়। জীবন্ত ও প্রাণবন্ত হয়। আর বিরান মৃত জীবনের সঙ্গে তো প্রাণবন্ত জীবনের কোনো তুলনা হতে পারে না। একথাও আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়েছেন-

اَوَ مَنْ کَانَ مَیْتًا فَاَحْیَیْنٰهُ وَ جَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا یَّمْشِیْ بِهٖ فِی النَّاسِ کَمَنْ مَّثَلُهٗ فِی الظُّلُمٰتِ لَیْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا.

যে ব্যক্তি ছিল মৃত এরপর আমি তাকে জীবন দিয়েছি, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করেছি, যার সাহায্যে সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, সে কি ওই ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে অন্ধকারে পরিবেষ্টিত, যা থেকে সে বের হতে পারে না? -সূরা আনআম (৬) : ১২২

এছাড়াও সূরা ইবরাহীমের শুরুতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

کِتٰبٌ اَنْزَلْنٰهُ  اِلَیْکَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوْرِ ۬بِاِذْنِ رَبِّهِمْ  اِلٰی صِرَاطِ الْعَزِیْزِ الْحَمِیْدِ.

এটি এমন কিতাব, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোতে আনতে পারেন, তাদের রবের নির্দেশে। সেই সত্তার পথে, যিনি পরাক্রমশালী প্রশংসার্হ। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ১

কুরআন মানব জাতির জন্য হেদায়েত

পৃথিবীতে আরো অনেক নবী-রাসূল এসেছেন। তাঁদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অনেক কিতাবও নাযিল করেছেন। কিন্তু সেইসব কিতাব স্বরূপে সংরক্ষিত থাকেনি। নানা ব্যক্তি গোষ্ঠী ও ফেতনার কবলে পড়ে বিকৃত হয়েছে। মানুষের মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল-

لَا یَاْتِیْهِ  الْبَاطِلُ مِنْۢ بَیْنِ یَدَیْهِ وَ لَا مِنْ خَلْفِهٖ تَنْزِیْلٌ مِّنْ حَکِیْمٍ حَمِیْدٍ.

কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। না এর সম্মুখ থেকে না পেছন থেকে। -সূরা হা মীম সাজদাহ (৪১) : ৪২

মূলত আল্লাহ তাআলা নিজেই কুরআন হেফাযত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বলেছেন-

وَاعْتَصِمُوْا بِحَبْلِ اللهِ جَمِیْعًا وَّلَا تَفَرَّقُوْا .

তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কুরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। বিচ্ছিন্ন হয়ো না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১০৩

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-

إن الصراط محتضر تحضره الشياطين، ينادون: يا عبد الله هلم هذا الطريق ليصدوا عن سبيل الله، فاعتصموا بحبل الله، فإن حبل الله هو كتاب الله.

নিশ্চয় এই পথ বিপদসংকুল। তাতে দাঁড়িয়ে আছে শয়তান। ডাকছে, হে আল্লাহর বান্দা, এদিকে এসো। পথ এদিকে। মূলত ওরা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয় আল্লাহর রজ্জু হল তাঁর কিতাব। -তাফসীরে তাবারী ৫/৬৪৫

অতএব এই কুরআন যারা আঁকড়ে ধরবে, ধারণ করবে, গ্রহণ করবে তারা দুনিয়া-আখেরাতে সফল হবে এবং সকল অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। যারা এই কুরআন থেকে বিমুখ হবে, তাদের জন্য থাকবে মহা সংকটময় জীবন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَنْ اَعْرَضَ عَنْ ذِكْرِیْ فَاِنَّ لَهٗ مَعِیْشَۃً ضَنْكًا وَّ نَحْشُرُهٗ یَوْمَ الْقِیٰمَۃِ اَعْمٰی،  قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِیْۤ  اَعْمٰی وَقَدْ كُنْتُ بَصِیْرًا ، قَالَ کَذٰلِکَ اَتَتْکَ اٰیٰتُنَا فَنَسِیْتَهَا  وَکَذٰلِکَ الْیَوْمَ تُنْسٰی.

যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে মহা সংকটময় জীবন। কিয়ামতের দিন তাকে আমি উঠাব অন্ধ করে।

সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে উঠালেন কেন? আমি তো (দুনিয়াতে) চক্ষুষ্মান ছিলাম।

আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল। তুমি তা ভুলে থেকেছিলে। আজ তাই এমনিভাবে তোমাকে ভুলে থাকা হবে। -সূরা ত্বহা (২০) : ১২৪-১২৬

বিখ্যাত তাফসীরবিদ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

تضمن الله لمن قرأ القرآن، واتبع ما فيه أن لا يضل في الدنيا ولا يشقى في الآخرة.

যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে এবং কুরআনের বিধি বিধান মেনে চলবে আল্লাহ তার জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না। আখেরাতেও দুর্দশাগ্রস্ত হবে না।

আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন-

من قرأ القرآن واتبع ما فيه عصمه الله من الضلالة، ووقاه، أظنه أنه قال: من هول يوم القيامة، وذلك أنه قال (فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى) في الآخرة

যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করবে। কুরআনের বিধান অনুযায়ী চলবে। আল্লাহ তাআলা তাকে সকল ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন। কিয়ামতের ভংয়কর পরিস্থিতি থেকে হেফাযত করবেন। তার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার এই বাণী-

فَمَنِ اتَّبَعَ هُدَايَ فَلا يَضِلُّ وَلا يَشْقَى.

যে আমার হেদায়েতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না। দুঃখগ্রস্ত হবে না। -তাফসীরে তাবারী ১৮/৩৮৯

এখানে হযরত ইবনে আব্বাস রা. কুরআনের অনুসরণ প্রসঙ্গে প্রথমে বলেছেন তিলাওয়াতের কথা। এরপর বিধি বিধান মেনে চলার কথা।

কুরআন তিলাওয়াত করার ফায়েদা

কুরআন মাজীদ নিজে তিলাওয়াত করলে যেমন ফায়েদা ও সওয়াব, তেমনি অন্যের তিলাওয়াত শোনায়ও অনেক ফায়েদা ও সওয়াব।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

من قرأ حرفا من كتاب الله فله به حسنة، والحسنة بعشر أمثالها، لا أقول الم حرف، ولكن ألف حرف ولام حرف وميم حرف.

যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর প্রতিটি নেকী দশ গুণ বৃদ্ধি পাবে। আমি বলছি না, ‘আলিফ লাম মীমএকটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১০

অর্থাৎ কেউ যদি শুধু আলিফ লাম মীমতিলাওয়াত করে তাহলেও ত্রিশ নেকী লাভ করবে। এভাবে যেকোনো সূরা তিলাওয়াত করা হবে তার প্রতি হরফে কমপক্ষে দশটি নেকী আল্লাহ তাআলা দান করবেন। কুরআনের একেকটি আয়াতে একেকটি সূরায় কতগুলো করে হরফ থাকে! সুবহানাল্লাহ।

হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

اقْرَءُوا الْقُرْآنَ فَإِنَّهُ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ شَفِيعًا لِأَصْحَابِهِ.

তোমরা কুরআন তিলাওয়াত করো। কেননা, কুরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসাবে হাযির হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০৪

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন রোযা ও কুরআন সুপারিশ করবে। তখন তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২০৩৬

হাদীস শরীফে কুরআন তিলাওয়াতের আরও অনেক ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

তিলাওয়াত শোনার ফায়েদা

আর তিলাওয়াত শোনার বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন-

وَ اِذَا قُرِیَٔ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَهٗ وَاَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ.

যখন কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং চুপ থাকো। এতে তোমাদের প্রতি রহমত নাযিল হবে। -সূরা আরাফ (৭) : ২০৪

আরেক জায়গায় মুমিনদের গুণাবলি প্রসঙ্গে বলেন-

وَ اِذَا تُلِیَتْ عَلَیْهِمْ اٰیٰتُهٗ زَادَتْهُمْ  اِیْمَانًا وَّعَلٰی رَبِّهِمْ یَتَوَکَّلُوْنَ .

যখন তাদের সামনে তাঁর আয়াত তিলাওয়াত করা হয় তখন তাদের ঈমান বাড়ে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে। -সূরা আনফাল (৮) : ২

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

من استمع إلى آية من كتاب الله كانت له حسنة مضاعفة، ومن تعلم آية من كتاب الله كانت له نورا يوم القيام.

যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত শুনবে তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব। যে আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত শিখবে কিয়ামতের দিন এই আয়াত তার জন্য নূর হয়ে প্রকাশ পাবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৬০১৩

রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সাহাবীদের থেকে তিলাওয়াত শুনতেন। এক হাদীসে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে বললেন, আমাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাও।

ইবনে মাসউদ রা. বললেন, আমি আপনাকে তিলাওয়াত করে শোনাবো, অথচ আপনার উপর কুরআন নাযিল করা হয়েছে!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি চাই অন্যদের তিলাওয়াত শুনি। তিনি বলেন, তখন আমি সূরা নিসা তিলাওয়াত করতে শুরু করলাম। যখন এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম-

فَکَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّجِئْنَا بِکَ عَلٰی هٰؤُلَآءِ شَهِیْدًا.

তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, একটু থামো।

আমি দেখলাম তাঁর দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০০

সাবলীল তিলাওয়াত ও আটকে আটকে তিলাওয়াত

বিশুদ্ধ ও সাবলীলভাবে যারা কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করতে পারে তাদের জন্য যেমন মর্যাদা ও ফযীলত রয়েছে তেমনি মর্যাদা ও ফযীলত রয়েছে, যারা কষ্ট করে আটকে আটকে তিলাওয়াত করে তাদের জন্যও। এ প্রসঙ্গে আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

الماهر بالقرآن مع السفرة الكرام البررة، والذي يقرأ القرآن ويتتعتع فيه، وهو عليه شاق، له أجران.

যারা কুরআনে (তিলাওয়াতে) পারদর্শী, তারা থাকবে সম্মানিত ও অনুগত ফেরেশতাদের সঙ্গে। আর যারা খুব কষ্ট করে আটকে আটকে তিলাওয়াত করে, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৯৮

কুরআন হিফয ও কুরআন অনুযায়ী জীবন গঠন

কুরআন মাজীদ যারা হিফজ করবে, নিয়মিত তিলাওয়াত করবে এবং কুরআন অনুযায়ী আমল করবে, তাদের প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

يقال لصاحب القرآن: اقرأ، وارتق، ورتل كما كنت ترتل في الدنيا، فإن منزلك عند آخر آية تقرؤها.

কুরআনওয়ালা (কুরআন শিক্ষালাভকারী ও তার হক আদায়কারীকে জান্নাতে) বলা হবে, পড়তে থাকো এবং আরোহণ করতে থাকো। আর ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করো, যেমন ধীরে তিলাওয়াত করতে দুনিয়ায়। তোমার মর্যাদা হবে সেখানে, যেখানে তুমি তিলাওয়াত করে পৌঁছবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১৪

 

হে আল্লাহ, আপনি আমাদেরকে কুরআনওয়ালা বানিয়ে দিন। কুরআন বুকে ধারণ করার, নিয়মিত তিলাওয়াত করার, অন্যদের তিলাওয়াত শুনে ফায়েদা অর্জন করার, আয়াতের অর্থ, ভাব ও মর্ম নিয়ে চিন্তা-ফিকির করার এবং কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন। কুরআনকে আমাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী বানিয়ে দিন। কুরআনের মাধ্যমে আপনার নৈকট্য লাভ করা সহজ করে দিন- আমীন।

 

 

advertisement