বর্তমান সংখ্যা সম্পর্কে কিছু কথা
বর্তমান সংখ্যাটি মূলত যূকা’দাহ ও যুলহিজ্জাহ সংখ্যা। পাঠক যেন একে যৌথ সংখ্যা মনে করে বিভ্রান্ত না হন এজন্য প্রচ্ছদে শুধু এক মাসের নাম দেওয়া হয়েছে।
এ সংখ্যায় হজ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক মাওলানা আবদুল মালেক ছাহেবের একটি মূল্যবান প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। হজ্বের মুসাফির ও সাধারণ পাঠক সবার জন্যই তা অত্যন্ত মুফীদ হবে ইনশাআল্লাহ। এই প্রবন্ধে উল্লেখিত নীতি ও উসূল যদি আমরা মেনে চলতে পারি তাহলে আশা করা যায়, এই মোবারক সফরে নূরানিয়্যাত ও রূহানিয়াত পয়দা হবে। আর শুধু হজ্বের সফরেই নয়, সাধারণ ইজতেমায়ী যিন্দেগীর জন্যও তা হতে পারে অত্যন্ত মুফীদ ও রাহনুমা।
একটি প্রবন্ধে হজ্ব-উমরার সাধারণ ফযীলত এবং হজ্বের বিভিন্ন আমলের আলাদা আলাদা ফযীলত হাদীসের কিতাব থেকে তুলে ধরা হয়েছে, যা সামনে থাকলে ইনশাআল্লাহ হজ্বের শওক পয়দা হবে এবং এই মোবারক আমলগুলো পূর্ণ ইহতিমামের সাথে আদায় করা সহজ হবে।
সামপ্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও এ সংখ্যায় আলোকপাত করা হয়েছে। সংবিধান্তসংশোধন সম্পর্কে কিছু কথা বিগত সংখ্যায় বলা হয়েছিল, বর্তমান সংখ্যায় আরো কিছু বিষয়ে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আগামী সংখ্যায় তা সমাপ্ত হবে।
বাবরী মসজিদ সম্পর্কে এলাহাবাদ হাইকোর্টের সামপ্রতিক রায় ও প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় নিয়ে লিখেছেন মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী। এই রায়ের মধ্য দিয়ে প্রচলিত বিচার-ব্যবস্থার দৈন্য আরেকবার প্রমাণিত হল। খোদ ভারতীয় বিশ্লেষকরাও বলেছেন যে, ‘এই রায়ে যুক্তি ও বিচারের নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ সমপ্রদায়ের ইচ্ছা ও আবেগের জয় হয়েছে।’
রায়টি ঘোষিত হওয়ার পর হিন্দুরা একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়েছে এবং কোনো কোনো রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, এখন ভারতে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত হল। পক্ষান্তরে মুসলমানরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে বিমর্ষ হয়েছেন এবং নিমজ্জমান ব্যক্তির খড়কুটা অবলম্বনের মতো আপিল করার কথা বলেছেন। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, খোদ হিন্দু চিন্তাবিদরা যখন এই রায়ের সমালোচনা করলেন তখন এদেশের কোনো কোনো পত্রিকায় সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল-‘এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় : শানি-পূর্ণ সহাবস্থানের পথ উন্মুক্ত হল’। (প্রথম আলো, ২ অক্টোরব ’১০) অথচ রাজনৈতিক স্বার্থে মসজিদ-মন্দির বিতর্কের জন্মদানকারী বৃটিশ বেনিয়ারাও মসজিদের মূল স্থাপনার বাইরে হিন্দুদের রামচবুতরার জায়গা নির্ধারণ করেছিল এবং সেখানেও হিন্দুদের মন্দির নির্মাণের চেষ্টা এই যুক্তিতে দমন করেছিল যে, এতে দাঙ্গাহাঙ্গামার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভবত হিন্দু ভারতে মুসলমানরা আজ এতই বিপর্যস্ত যে, মসজিদের মূল কাঠামো ভেঙ্গে দিয়ে সে জায়গা হিন্দু-মুসলমানের মাঝে ভাগ করে দেওয়াও এদেশীয় এজেন্টদের ভাষায় ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’। প্রশ্ন এই যে, এ জাতীয় শান্তির অনুশীলন যদি বাংলাদেশে কিংবা অন্য কোনো মুসলিম দেশে করা হত তাহলে এরাই কি মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংখ্যালঘু দলনের অভিযোগ তুলে কণ্ঠ ও লেখনীর সর্বশক্তি নিয়োজিত করতেন না?
মুসলিম ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত চারশো বছরের প্রাচীন মসজিদটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারতে নির্মমভাবে শহীদ করে দেওয়া হয়। মসজিদের কাঠামোটি আজ আর নেই। হিন্দু সামপ্রদায়িক শক্তি উপলব্ধি না করলেও এটি হিন্দু-ভারতের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। কারণ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগে শুধু গায়ের জোরে মুসলমানদের এই মসজিদটি ধ্বংস করা হয়েছে। ১৯৮৬ সালে যখন বাবরি মসজিদ-প্রসঙ্গে উত্তেজনা শুরু হয় তখন ভারতবর্ষের বিখ্যাত আলিম ঐতিহাসিক সাইয়্যেদ সাবাহুদ্দীন আবদুর রহমান ‘মাআরিফ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লিখেছিলেন। গোটা ভারতে তাঁর লেখা আগ্রহের সাথে পঠিত হয়েছে। পরে সম্পাদনা ও সংযোজনের পর শিবলী একাডেমী থেকে তা বই আকারে প্রকাশিত হয়। বাবরি মসজিদের ফলক, বৃটিশ-ভারতের আদালতের রায় ও নথিপত্র এবং খোদ হিন্দু ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রবন্ধ-নিবন্ধের দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, রামমন্দির ভেঙ্গে বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছে-এ কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর সপক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো তিনি প্রমাণ নেই। ইংরেজ বেনিয়ারা হিন্দু-মুসলিম সংঘাত সৃষ্টির জন্য এই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে তারা তাদের একমাত্র আদর্শিক শত্রু ইসলাম ও মুসলমানদের চরিত্রহনণের চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে বৃটিশ-ভারতের দুই প্রধান জনগোষ্ঠী-হিন্দু ও মুসলমানের মাঝে সংঘাত বাধিয়ে রাজ্য-ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করতে চেয়েছে।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইহুদী-খৃষ্টান অক্ষশক্তি ও ব্রাহ্মণ্যবাদী সামপ্রদায়িক শক্তির ঐক্যবদ্ধতার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত বর্তমান প্রজন্মের জানা থাকা উচিত। ইনশাআল্লাহ আমরা আগামী সংখ্যা থেকে সাইয়েদ সাবাহুদ্দীন আবদুর রহমানের বইটির বাংলা অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করব।
‘হাদীস ও আছারের আলোকে ‘বিতর’ শীর্ষক প্রবন্ধটির শেষ কিসি- বর্তমান সংখ্যায় ছাপা হল। এ বিষয়ে মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেবের একটি প্রবন্ধ আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। আর তার পরের সংখ্যা থেকে অর্থাৎ জানুয়ারি ’১১ থেকে ফতোয়া বিষয়ে লিখিত তাঁর মূল্যবান প্রবন্ধটিও পুনরায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের বিষয়ে আমরা আশাবাদী। এছাড়া কুরবানী, পর্দা, লেবাস-পোষাকের ইসলামী নীতিমালা ও প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থার উপর প্রবন্ধ-নিবন্ধসহ নিয়মিত বিভাগগুলোও থাকছে। এরপরও পাঠক যে বিষয়ের শূন্যতা অনুভব করবেন তা হল হযরত মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুমের হজ্বের সফরনামা-‘বাইতুল্লাহর ছায়ায়’। অনিবার্য কারণে এ সংখ্যাতেও আমরা তা পেশ করতে পারিনি। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ইনশাআল্লাহ আগামী সংখ্যা থেকে তা নিয়মিত প্রকাশিত হবে।
আমরা আমাদের সকল পাঠক-গ্রাহক-শুভানুধ্যায়ীদের আছে দুআপ্রার্থী। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের এই সামান্য মেহনতকে কবুল করেন এবং সকল প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের সর্বোচ্চ মেহনত নিবেদন করার তাওফীক দান করেন। আমীন।