জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩   ||   জানুয়ারি ২০২২

দৃষ্টি আকর্ষণ
মাশাআল্লাহ তাঁরা ভুল শুধরে নিয়েছেন

আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে আজ থেকে পাঁচ-ছয় বছর আগে জুমাদাল উলা ১৪৩৭ হিজরী আমি কুরআনে কারীমের মোট আয়াত সংখ্যা সম্পর্কে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেছিলাম। গ্রন্থের অধিকাংশ অংশের বাংলা অনুবাদ তখনই মাসিক আলকাউসারের বিশেষ সংখ্যা কুরআনুল কারীম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। উক্ত সংখ্যার পৃ. ৮৭-১৬১ প্রবন্ধাকারে তা রয়েছে।

উক্ত সংখ্যার পৃ. ১২৭-এ ভুল সংখ্যার তরফদারদের আলোচনায় আমি মুজাহিদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত মুসহাফের দায়িত্বশীলদের কথাও উল্লেখ করি। কারণ তারা শুধু ভুল সংখ্যাটি উল্লেখ করেই ক্ষ্যান্ত হননি; বরং তাদের বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছিল যে, ভিত্তিহীন সংখ্যাটিই আসল সংখ্যা আর সঠিক সংখ্যাটি নবআবিষ্কৃত সংখ্যা। তাই বিষয়টি ধরিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই প্রকাশনীর নাম বা প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানকারীদের নাম, কারও নামই উল্লেখ করিনি। কারণ উদ্দেশ্য ছিল ভুলটি শুধরে যাওয়া। বিনা প্রয়োজনে সমালোচনা উদ্দেশ্য নয়।

আলকাউসারের সেই বিশেষ সংখ্যা ছাপার পর পরই তাঁদের কাছে এক কপি পাঠানো হয় এবং ভুলটি শুধরে নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

প্রায় তিন বছর পর যখন আমি এ সম্পর্কে লেখা আমার আসল উর্দূ গ্রন্থটি (عنايات رحمن در عدد آيات قرآن) ছাপার উদ্দেশ্যে পুনর্বার দেখা শুরু করি তখন আমি দ্বিতীয়বার খোঁজ-খবর নেই। আমি যতটুকু জানতে পারি, তখনও ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত মুসহাফের শুরুতে ভূমিকায় প্রকাশকদের কথায় এই ভুলটি বিদ্যমান ছিল। তাই আমি উর্দূ কিতাবে সেই দৃষ্টি আকর্ষণমূলক কথাটি বাকি রাখি এবং কথার শেষে আরবী ভাষায় একটু কঠিনভাবে আপত্তি জানাই।

এ গ্রন্থ পুনর্বার দেখার কাজ ১৪৪০ হিজরীতে শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু গ্রন্থ ছেপে আসতে দেরি হয়ে যায়। জুমাদাল উলা ১৪৪৩ হিজরীতে প্রকাশিত হয়ে গ্রন্থটি পাঠকের সামনে আসে।

পাঠক মহলে গ্রন্থটি পৌঁছার পর আমাকে এক ভাই বললেন, মুজাহিদ প্রকাশনীর দায়িত্বশীলগণ ভুলটি সংশোধন করে নিয়েছেন। এখন তাদের প্রকাশিত মুসহাফে ভুল সংখ্যা ও ভুল সংখ্যার ভুল নিসবত কিছুই নেই। শুধু সঠিক সংখ্যার (৬২৩৬) উল্লেখ আছে। শুনে আমি অনেক খুশি হই, কিন্তু আবার আফসোসও হয় যে, আগে তা আমি জানতে পারিনি। যদি এক-দেড় মাস আগেও আমি তা জানতে পারতাম তাহলে ঊর্দূ গ্রন্থে তাদের শুকরিয়া আদায় করে দিতে পারতাম।

তো আমি শুনতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে একজনকে বাংলাবাজার পাঠাই। তিনি আমার জন্য মুজাহিদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বড় সাইজ ও ছোট সাইজের কিছু মুসহাফ সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। প্রকাশনার দায়িত্বশীলদের কথা পড়ে দেখলাম যে, বাস্তবেই তাতে সঠিক সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। তারা নিজেদের বড়ত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। ইসলামের শিক্ষা তো এটাই-

الرجوع إلى الحق خير من التمادي في الباطل.

এই মুসহাফসমূহে আমাদের এই অঞ্চলের রেওয়াজ মোতাবেক প্রকাশনা-সন উল্লেখ নেই। তবে সেই প্রকাশনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ভাইয়ের মাধ্যমে জানা যায় যে, বড় সাইজের মুসহাফটি পাঁচ-ছয় মাস আগে ছাপা হয়। আর ছোট সাইজের মুসহাফটি ছাপা হয় প্রায় এক বছর আগে।

তবে প্রকাশনার দায়িত্বশীলগণের খেদমতে আদবের সাথে এটিও আরজ করছি যে, ছোট সাইজের মুসহাফের শেষে আপনাদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত বয়ানে (পৃ. ১৬) বিষয়ভিত্তিক আয়াত সংখ্যার আলোচনা এসেছে। সেখানে সেই ৬৬৬৬ সংখ্যাটিই লেখা আছে। অথচ পৃ. ২২-এ উল্লেখকৃত সঠিক সংখ্যা ৬২৩৬ -এর বিপরীতে এটি থাকা উচিত ছিল না। আশা করছি পরবর্তী এডিশনে তাঁরা এটিও সংশোধন করে নেবেন। এ সম্পর্কে আরো অবগতির জন্য মাসিক আলকাউসারে শাওয়াল ১৪৩৭ হি./জুলাই ২০১৬ ঈ. প্রকাশিত প্রফেসর আব্দুস সামাদ সারেম রাহ.-এর আয়াত সংখ্যার আলোচনা : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাশীর্ষক প্রবন্ধটি পড়া যেতে পারে। কিংবা মূল উর্দূ গ্রন্থ (عنايات رحمن در عدد آيات قرآن)-এর ৯ নং অধ্যায় দেখা যেতে পারে।

যাইহোক, সঠিক সংখ্যার বিপরীতে ভুল সংখ্যার তরফদারি করার জন্য মুজাহিদ প্রকাশনীর প্রতি আমি যে আপত্তি জানিয়েছিলাম সেই আপত্তি এখন আর নেই। আমি অন্তরের অন্তস্তল থেকে তাদের শুকরিয়া আদায় করছি যে, তারা এই ভুলটি শুধরে নিয়েছেন। আমার কিতাবের পরবর্তী সংস্করণে ইনশাআল্লাহ সংশ্লিষ্ট স্থানে তাদের ভুল শুধরে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে দেওয়া হবে। সেখানে এজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনও করা হবে ইনশাআল্লাহ।

وبما أنهم اهتموا بإصلاح هذا الغلط، أرجو منهم الاهتمام بالإتقان فيما ذكروه من عدد الكلمات والأحرف وغيرها، بل الاهتمام بمزيد الإتقان في ذلك البيان كله، كما أرجو منهم تغيير عبارتهم في المصحف الكبير إلى عبارةٍ أوضح وأجمل، فإن العبارة الموجودة الآن تُوقع بعضَ القُرَّاء في سوء الفهم. والله تعالى هو الموفق لكل خير.

-আরযগুযার

বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

২৩-০৫-১৪৪৩ হি.

মঙ্গলবার

 

 

advertisement