জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪৩   ||   জানুয়ারি ২০২২

প্রশ্নোত্তর

[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম প্রশ্নোত্তরএর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]

 

প্রশ্ন ১১ :  علم القراءات -এর সাথে  ابتدائى تعارف -এর জন্য কিছু معتبر  কিতাবের নাম লেখকের পরিচয়সহ জানতে চাই। 

উত্তর : ইলমুল কিরাআতের ওপর প্রতি শতাব্দীতেই বহু কিতাব লেখা হয়েছে। নিচে কয়েকটি কিতাবের পরিচয় দেওয়া হল, যেগুলো এই ফনের উৎসগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে আসছে।

১। التيسير في القراءات السبع أبو عمرو عثمان الداني (444 هـ)

আবু আমর উসমান আদদানী পঞ্চম শতকে ইলমুল কিরাআতের অনেক বড় ইমাম ছিলেন। ইলমুল কিরাআত ও ইলমুত তাজবীদের ওপর তার অনেক কিতাব রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল আততাইসীর ফিল কিরাআতিস সাবই। মুসান্নিফের যামানা থেকেই কিতাবটি উলামায়ে উম্মতের নিকট ব্যাপক সমাদৃত। পরবর্তীতে প্রকাশনা শুরু হওয়ার পরে ১৯৩০ সালে ইস্তাম্বুল থেকে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর আরব-আজমের অনেক মাকতাবা কিতাবটির একাধিক তাহকীককৃত নুসখা ছেপেছে। এর একটি সংস্করণ দারুস সাহাবা থেকে শায়েখ জামালুদ্দীন মুহাম্মাদ শারাফ-এর তাহকীকে প্রকাশিত হয়েছে।

২। حرز الأماني ووجه التهاني في القراءات السبع (الشاطبية) أبو محمد الشاطبي (590 هـ)  

ইলমুল কিরাআতের আরেকজন বড় ইমাম আবু মুহাম্মাদ আশশাতেবী রাহ.। তাঁর মূল নাম কাসিম ইবনে র্ফিরূহ। তাঁর হিরযুল আমানী ওয়া ওয়াজহুত তাহানী ফিল কিরাআতিস সাবই কিতাবটি আশশাতিবিয়্যাহ নামেই পরিচিত। যুগ যুগ ধরে ইলমুল কিরাআতের ফনে এই কিতাবটি অন্যতম এক উৎসগ্রন্থ বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। মূলত কিতাবটি মানযূম তথা ছন্দবদ্ধভাবে রচিত। এই কিতাবের বহু শরাহ লেখা হয়েছে। মূল কিতাবটিও আলাদাভাবে পুস্তিকা আকারে  متن الشاطبية নামে ছেপেছে।

আশশাতিবিয়্যাহর কয়েকটি শরাহ :

আবু শামা আলমাকদীসী রাহ. (৬৬৫ হি.) রচিত

إبراز المعاني من حرز الأماني ووجه التهاني.

-এর একটি সংস্করণ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

শায়েখ আলী মুহাম্মাদ আদ্দব্বারাহ. (১৩৮০ হি.) রচিত

إرشاد المريد إلى مقصود القصيد في القراءات السبع.

কিতাবটি দারুস সাহাবা তানতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

কাযী আব্দুল ফাত্তাহ আবদুল গনী রাহ. (১৪০৩ হি.) রচিত

الوافي في شرح الشاطبية في القراءات السبع.

-এর একটি সংস্করণ মাকতাবাতুস সাওয়াদী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

ইলমুল কিরাআত ও ইলমুত তাজবীদের সুবিখ্যাত ব্যক্তিত্ব কারী ফাতাহ মুহাম্মাদ পানীপথী রাহ. (১৪০৭ হি.) রচিত عنايات رحمانى, যার একটি সংস্করণ তিন খণ্ডে কিরাআত একাডেমি লাহোর থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

দারুল উলূম দেওবন্দের সাবেক উস্তায ও কারী এবং বর্তমানে ইলমুল কিরাআত ফনের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আল্লামা আবুল হাসান আযমী দামাত বারাকাতুহুমও আশশাতিবিয়্যাহর একটি শরাহ লেখেছেন

النفحات القاسمية شرح القصيدة الشاطبية.

-নামে, যা মাকতাবা সওতুল কুরআন দেওবন্দ থেকে ১৪১৯ হিজরীতে প্রকাশিত হয়েছে। 

৩। نشر القراءات العشر ابن الجزري (833 هـ)   

নবম শতকের ইলমুল কিরাআতের ইমাম আল্লামা ইবনুল জাযারী রাহ.-এর কিতাব নাশরুল কিরাআতিল আশর। কিতাবটির পুরোনো নুসখা আননাশ্র ফিল কিরাআতিল আশ্রনামে প্রকাশিত হওয়ায় কিতাবটি সেই নামেই বেশি পরিচিত। আমাদের কাছে এর দুই ধরনের নুসখা রয়েছে। একটি নুসখা শায়েখ আলী মুহাম্মাদ আদ্দব্বারাহ.-এর তাহকীকে ২ খণ্ডে প্রকাশিত, যিনি  إرشاد المريد -এর মুসান্নিফ। অপর নুসখাটি ড. আইমান রুশদী সুআইদ-এর তাহকীকে মাকতাবা দারে গাওছান বাইরুত থেকে ৫ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। 

৪। الكشف عن وجوه القراءات السبع وعللها وحججها أبو محمد مكي بن أبي طالب القيسي (437 هـ)  

আবু মুহাম্মাদ মাক্কী আলকাইসী রাহ.-এর কিতাব আলকাশ্ফ আন উজূহিল কিরাআতিস সাবই ওয়া ইলালিহা ওয়া হুজাজিহা। এর একটি সংস্করণ ড. মুহিউদ্দীন রমাদান-এর তাহকীকে ২ খ-ে মুআসসাসাতুর রিসালা থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

৫। الحجة للقراء السبعة أئمة الأمصار بالحجاز والعراق والشام أبو علي الحسن بن أحمد الفارسي (377 هـ)

আবু আলী আলফারসী রাহ.-এর কিতাব আলহুজ্জাহ লিল কুররাইস সাবআহ। এর একটি সংস্করণ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ থেকে ১৪২১ হিজরীতে ৪ খ-ে প্রকাশিত হয়েছে। আরেকটি সংস্করণ ১৪০৪ হিজরীতে দারুল মামূন দিমাশক থেকে ৭ খ-ে প্রকাশিত হয়েছে।

৬।البدور الزاهرة في القراءات العشر المتواترة أبو حفص سراج الدين عمر الأنصاري النشار (937 هـ)

সিরাজুদ্দীন আননাশ্শার রাহ.-এর কিতাব আলবুদূরুয যাহিরাহ ফিল কিরাআতিল আশরিল মুতাওয়াতিরাহ। কিতাবটি ড. আহমাদ ঈসা আলমাসারাবী-এর তাহকীকে আলামুল কুতুবথেকে ৪ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।

একই নামে কাযী আব্দুল ফাত্তাহ আবদুল গনী রাহ.-এর এক খণ্ডে একটি কিতাব রয়েছে, যিনি আলওয়াফী ফী শারহিশ শাতিবিয়্যাহর লেখক।

ইলমুল কিরাআতের ওপর আরও বহু কিতাব রয়েছে। আপাতত এগুলোর নাম উল্লেখ করা হল।

 

প্রশ্ন ১২ : আমি এতদিন জানতাম, মুহাইমিন আল্লাহ তাআলার নাম। আজ এক ভাইয়ের কাছে শুনলাম, সূরা মায়িদায় কুরআন শরীফকেও মুহাইমিন বলা হয়েছে। তাহলে কি মুহাইমিন আল্লাহ তাআলার নাম নয়?

উত্তর : মুহাইমিন শব্দের অর্থ রক্ষক, সংরক্ষক, হেফাযতকারী ইত্যাদি। লিসানুল আরব ১৫/৯৬; তাজুল আরূস ৩৬/২৮৪-২৮৫।

আল্লাহ তাআলা সকলের রক্ষক ও হেফাযতকারী। অতএব রক্ষা করা এবং হেফাযত করা আল্লাহ তাআলার একটি সিফাত বা গুণ এবং মুহাইমিন বা রক্ষক হওয়া তাঁর সিফাতী বা গুণবাচক নাম।

আল্লাহ তাআলার কিছু নাম তাঁর যাতী বা সত্তাগত, যা কেবল তাঁর জন্যই বিশেষ। আর কিছু নাম সিফাতী বা গুণবাচক। যার অনেকগুলোই মর্মের তারতম্যসহ অন্য ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়। মুহাইমিন তেমনই একটি সিফাতী নাম, কুরআন কারীমে সূরা হাশরে আল্লাহ তাআলার এই সিফাতী নাম উল্লেখ হয়েছে-

هُوَ اللهُ الَّذِیْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ  اَلْمَلِكُ الْقُدُّوْسُ السَّلٰمُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَیْمِنُ الْعَزِیْزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ  سُبْحٰنَ اللهِ عَمَّا یُشْرِكُوْنَ.

তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি বাদশাহ, পবিত্রতার অধিকারী, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, সকলের রক্ষক, মহা ক্ষমতাবান, সকল দোষ-ত্রুটির সংশোধনকারী, গৌরবানি¦; তারা যে শিরক করে তা থেকে আল্লাহ পবিত্র। -সূরা হাশর (৫৯) : ২৩

আবার সূরা মায়িদায় কুরআন শরীফকে মুহাইমিন বলার কারণ, আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে যা কিছু নাযিল করেছিলেন এই কুরআন সেগুলোর সংরক্ষক। কুরআনের মাধ্যমেই জানা যাবে, আগের আসমানীগ্রন্থগুলোতে কী কী ছিল, আর তাতে লোকেরা কতটুকু পরিবর্তন করেছে। এজন্য সূরা মায়িদায় কুরআন শরীফের ব্যাপারে মুহাইমিন শব্দ ব্যবহার করে বলা হয়েছে-

وَ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیْنَ یَدَیْهِ مِنَ الْكِتٰبِ وَ مُهَیْمِنًا عَلَیْهِ .

(হে রাসূল), আমি তোমার প্রতিও সত্যসম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, তার পূর্বের কিতাবসমূহের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে। -সূরা মায়িদা (৫) : ৪৮

দ্রষ্টব্য, তাফসীরে তবারী ৩/৩৭৭-৩৭৮; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/১২৭-১২৮

এজাতীয় ব্যবহার আরও কিছু শব্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে, যেগুলো আল্লাহ তাআলার সিফাতী নাম হওয়া সত্ত্বেও অন্যত্র ব্যবহার করা হয়েছে।  হ

 

 

advertisement