বিশুদ্ধ উর্দূ শেখা এখন সহজ হয়ে গেল
মাদরাসাতুল মাদীনাহর প্রকাশনা বিভাগের আরেকটি অনবদ্য কীর্তি
এসো উর্দূ শিখি-২
الطريق الى الارديہ (دوسرا حصہ)
যিলকদ ১৪৩৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০১২ ঈসাব্দতে ‘এসো উর্দূ শিখি’-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছিল। নেসাবী তাসনীফ এবং তাদরীসের ক্ষেত্রে হযরত মাওলানা আবু তাহের মিছবাহ দামাত বারাকাতুহুম হলেন (মাশাআল্লাহ) মুওয়াফ্ফাক মিনাল্লাহ-আল্লাহর পক্ষ থেকে খাস তাওফীকপ্রাপ্ত। এ অঙ্গনে তাঁর বিশেষজ্ঞতাও আছে, সেই সঙ্গে নিজেকে কুরবান ও বিলীন করে দেয়ার মাকামও তাঁর আছে। সেজন্য তাঁর নেসাবী কাজগুলো সাধারণত তাজদীদী ধরনের হয় এবং অনেক গুণ ও বৈশষ্ট্যমণ্ডিত হয়।
‘এসো উর্দূ শিখি’-এর প্রথম খণ্ড প্রকাশের পর আমার আবেদনে তিনি এর শিক্ষাদান পদ্ধতির বিষয়ে তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণ কোর্সেরও আয়োজন করেছিলেন। কোর্সটি রবিউল আউয়াল ১৪৩৪ হি.-এর দ্বিতীয় দশকে (৩০ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ঈ.) অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
দশ-এগার বছর পর এখন মাশাআল্লাহ এই কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হল। নিতান্ত দুর্বলতা ও অসুস্থতা এবং প্রচণ্ড ব্যস্ততা ও প্রতিবন্ধকতার মাঝে রচিত এই কিতাবে পাঠকগণ শুধু উদ্যম এবং ইলমের পথে নিজেকে বিলীন করে দেয়ার নিদর্শনই দেখতে পাবেন। উম্মাহর সন্তানদের জন্য হযরতের হৃদয়ে যে ব্যথা ও ব্যাকুলতা তারই প্রতিফলন ঘটেছে পুরো কিতাবে। আল্লাহ তাআলা হযরতের যিন্দেগীতে আফিয়াত ও সালামত এবং সিহহত ও কুওয়াতের সঙ্গে বরকত দান করুন এবং উম্মাহর উপর তাঁর ছায়া দীর্ঘ করুন।
এই কিতাবের বিষয়ে আমার কিছু বলা অনুচিত। কারণ যদিও আমার অধিকাংশ লেখা উর্দূতে হয় তবু আমি উর্দূতে অজ্ঞ। সেজন্য এখানে তালিবে ইলমদের উৎসাহের জন্য উর্দূ ভাষীগণের কিছু বক্তব্য উদ্ধৃত করব।
ড. নেওয়ায দেওবন্দী। উত্তর প্রদেশ উর্দূ একাডেমি লখনৌ-এর সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি কিতাবের প্রথম খণ্ড দেখে মুসান্নিফকে চিঠিতে বলেন-
ماشاءاللہ آپ کی یہ بڑی گراں قدر خدمت ہی نہیں بلکہ ایک تخلیقی کارنامہ بھی ہے، امید ہے کہ طلبہ اس کے ذریعہ کم وقت میں بہتر طور پر اردو سیکھ سکیں گے۔
মাশাআল্লাহ এটি কেবল আপনার মূল্যবান খেদমতই নয়; বরং একটি উদ্ভাবনী কীর্তি। আশা করি, তালিবানে ইলম এর মাধ্যমে অল্প সময়ে ভালোভাবে উদূর্ শিখতে পারবে।
তিনি আরো বলেন-
ایک طرف فن کی نزاکت تو دوسری طرف نصابی ضرورتوں کو مد نظر رکھتے ہوئے آپ نے دونوں تقاضوں کی رعایت رکھنے کی پوری کوشش کی اور طلبہ کی استعداد کا بھی خیال رکھا ہے۔ میں آپ کی علم دوستی اور اردو زبان کے تئیں بے پناہ لگاؤ کی قدر کرتا ہوں۔
جہاں تک خاص اس کتاب کا تعلق ہے تو بلاشبہ یہ اردو زبان سکھانے کے لیے نہایت عمدہ اور جامع کتاب ہے۔ جس طرح اس کی ترکیب اچھی ہے اسی طرح اس کی تعبیر بھی خوبصورت اور شاندار ہے۔ اس کتاب کے پانچ ابواب میں اردو زبان کے تمام قواعد اور مصادر آ گئے ہیں، ساتھ ہی مشق کے لیے چند مختصر اور آسان اسباق بھی کتاب میں شامل ہیں۔ میری نظر میں اس کتاب کی ایک اہمیت اور ہے وہ یہ کہ اس کتاب کے پانچویں باب میں آپ نے حروف تہجی کی ترتیب سے اردو کے اکثر الفاظ اور ان کے طریقۂ استعمال کی بھی مشق کرادی ہے۔ اس طرح اس کتاب کی اہمیت دو چند ہو جاتی ہے، چوں کہ یہ کتاب بنگلہ زبان جاننے والے طلبہ کو اردو سکھانے کے لیے لکھی گئی ہے؛ لیکن اس میں جو طریقۂ تعلیم اختیار کیا گیا ہے وہ ہر زبان کے طلبہ کو اردو سکھانے کا بہترین طریقہ ہے، بلکہ اس کتاب کے شروع میں اگر حروف تہجی کی مشق کرادی جائے تو اردو والے طلبہ کو بھی اس کے ذریعے پڑھنا آسان ہو جائے گا۔ اگر یہ کہوں تو مبالغہ نہیں ہو گا کہ یہ کتاب ہندوستان کے مدارس میں بھی بڑی حد تک پڑھانے کے لائق ہے اور مزید یہ بھی امید کرتا ہوں کہ ان مدارس کے طلبہ کے لیے بھی یہ کتاب مفید اور سود مند ثابت ہو گی ان شاء اللہ۔
দারুল মুসান্নিফীন শিবলী একাডেমি আযমগড় থেকে প্রকাশিত গবেষণামূলক পত্রিকা ‘মাআরিফ’-এর সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈ. সংখ্যায় الطريق الى الارديہ -এর উভয় খণ্ডের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে গিয়ে পত্রিকার সম্পাদক ড. উমায়ের সিদ্দীক নদভী লেখেন-
"...، مصنف کا پورا مقدمہ جو حصۂ دوم میں ہے وہ صرف بنگلہ دیش کے ماہرین تعلیم ہی کے لیے نہیں برصغیر کے ہر علاقہ کے لیے بار بار پڑھنے اور سوچنے کے لائق ہے۔ اصل خوبی اورتعریف کے لائق بات یہ ہے کہ زیر نظر دونوں کتابوں کے ذریعہ، انہوں نے اردو سکھانے کے جوعملی سبق دیے ہیں وہ کمال کے ہیں اور روایتی قواعد زبان سے قطعی جدا ہیں۔
پہلے حصہ میں بنگالی زبان کا زیادہ غلبہ تھا، اس لیے ہمارے لیے اس کی خوبیوں سے واقف ہونے میں دشواری تھی، مگر دوسرے حصہ سے پتہ چلا کہ مصنف نے زندگی کے تدریسی تجربوں سے جو سیکھا، اس کو کتنی مہارت سے اس کتاب میں پیش کر دیا، خود انہوں نے مثال دی کہ ایک حرف کی پہچان کے بعد اس حرف پرمشتمل آسان اور معروف الفاظ دیے گئے پھر ان کوخوبصورت جملوں میں استعمال کیا گیا ایسے جمل جن میں بچوں کے معیار سے ادبیت کے ساتھ دینی، اخلاقی اور فکری رہنمائی کا فرض بھی ادا ہوتا جاتا ہے۔
پہلی جلد میں سات اور دوسری میں گیارہ ابواب ہیں، ان کے تحت اسم، فعل، ضمیر، تذکیر تانیث، اضافت، حروف ربط ، صفت، مبالغہ، مصدر لازمی و متعدی ومرکب، غرض صرف و نحو کا شاید ہی کوئی پہلو رہ گیا ہو، اور یہ تو عموما قواعد کی ہر کتاب کا لازمہ ہے۔
یہاں خاص یہ ہے کہ ان مباحث کو سمجھانے کا جو طریق ہے وہ ہے داد کے لائق، کہیں کہیں تو مصنف کو بھی اندازہ ہوا کہ خالق لوح قلم نے ان سے کچھ اورہی کام لے لیا، جیسے دوسرے حصہ کا پانچواں باب جس میں ابجدی ترتیب سے الفاظ اور جملے اس طرح یکجا کیے گئے کہ واقعۃً یہ بچوں کے لیے ایک مکمل قاموس بن گیا۔
یہ دونوں کتابیں اس لائق ہیں کہ ان پر درس و تدریس کے ذمہ دار تفصیل سے اظہار خیال کریں اور ان سے استفادہ کی راہ ہموار کریں۔ فاضل مصنف نے شروع میں" کچھ ضروری باتیں" لکھ کر ثابت کیا کہ بنگلہ دیش کے خاکستر میں اب بھی کیسی کیسی چنگاریاں ہیں۔
এই পর্যালোচনাদুটি পড়ে শুধু এইটুকু বলা যায়-
قدر جوہر شاہ بداند یا بداند جوہری
কোনো বন্ধু একবার আমাকে অভিযোগ করে বললেন, আপনি ছাত্রদেরকে উর্দূর বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেন। আমি বললাম, ইন্না লিল্লাহ, কবে, কোথায়? বললেন, আলকাউসারে শিক্ষার্থীদের পাতায়। আমি বললাম, হায় আফসোস! আমি তো শুধু এটুকু লিখেছিলাম- আরবী যোগ্যতা না থাকার দরুন উর্দূ শরহের পেছনে পড়া তালিবে ইলমের জন্য উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ মুখতাসারুল মাআনীর জন্য মিসবাহুল আমানী, কানয বোঝার জন্য মা‘দিনুল হাকায়েক, শরহে বেকায়ার জন্য উর্দূ সিকায়া এবং হেদায়ার জন্য আশরাফুল হেদায়ার আশ্রয় খোঁজা ঠিক নয়। তালিবে ইলমদের জন্য উচিত, তারা আরবী বোঝার যোগ্যতা অর্জন করবে এবং কিতাবী ইসতে‘দাদ হাসিলের চেষ্টা করবে। কিতাবী ও আরবীর দুর্বলতার সমাধান উর্দূ-বাংলা শরহে খুঁজবে না। উর্দূ-বাংলা শরহে কোনো বৈশিষ্ট্য থাকলে সেটা হাসিলের জন্য পড়বে। আর উর্দূ বলা, পড়া ও বোঝার যোগ্যতা অর্জনের বিষয়ে বললে বলব, এ উপমহাদেশের তলাবা ও আহলে ইলমের জন্য না এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অস্বীকারের কোনো সুযোগ আছে, আর না -আমার জানামতে- এতে মতবিরোধের কোনো অবকাশ আছে। বরং আমি তো আমাদের তালিবানে ইলমের জন্য উর্দূ শেখা অত্যন্ত জরুরি মনে করি; যেমন জরুরি মনে করি তাদের জন্য বাংলা শেখা। বাস্তব কথা হল, الطريق الى الارديہ -এর দুই খণ্ড প্রকাশের পর এখন বিশুদ্ধ উর্দূ শেখা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে মুসান্নিফ দামাত বারাকাতুহুম-এর যে ভবিষ্যত-পরিকল্পনা রয়েছে সেটা বাস্তবায়িত হলে তো নূরুন আলা নূর।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আমাদের তালিবানে ইলমকে এই কিতাব থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। এই কিতাবটি প্রকাশ করেছে মাদরাসাতুল মাদীনাহ হযরতপুরের প্রকাশনা বিভাগ আর বিতরণ করছে সাবআ‘ সানাবিল বাংলাবাজার। এরা আমাদের শুকরিয়ার হকদার। আল্লাহ তাআলা উভয় প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গতা ও স্থায়িত্ব দান করুন এবং হযরত মুসান্নিফকে ‘শাজারাতুন তূবা’-রূপে মাদরাসা ও আহলে মাদরাসা এবং সকল তালিবানে ইলম ও আহলে ইলমের উপর ছায়াদার বানিয়ে রাখুন- আমীন।
-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
১৬-০৩-১৪৪৩ হিজরী