সুবহে সাদিক কখন শুরু?
প্রসঙ্গ : আহসানুল ফাতাওয়ার উল্লেখকৃত মুশাহাদা ও তার পর্যালোচনা
বিগত দুই সংখ্যায় ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক হওয়ার সপক্ষে সমকালীন বহু মুশাহাদার প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আমরা আহসানুল ফাতাওয়ায় উল্লেখকৃত মুশাহাদা এবং এর উপর বিস্তারিত পর্যালোচনা তুলে ধরছি ইনশাআল্লাহ।
পাকিস্তানে যুগ যুগ থেকে ১৮° অনুযায়ী প্রণীত নামাযের সময়সূচি অনুসারে আমল চলে আসছিল। ১৩৬৮ হি. (মোতাবেক ১৯৪৮ ঈ.) সনে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. যখন হিজরত করে পাকিস্তানে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন তখন তিনি মসজিদগুলোতে হাজ্বী ওজীহুদ্দীন রাহ.-কৃত একটি সময়সূচি দেখতে পান। এই সময়সূচিটি প্রাথমিক যাচাইয়ে সঠিক পাওয়া যায় এবং এ অনুযায়ী আমল চলতে থাকে।
কিন্তু ১৩৮৮ হি. (মোতাবেক ১৯৬৮ ঈ.) সালে এসে হযরত মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী রাহ.-এর পক্ষ থেকে নামাযের এই সময়সূচির উপর আপত্তি আসে। তখন বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য ১৩৯০ হি. (মোতাবেক ১৯৭০ ঈ.) সনে হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ও মুফতী রশীদ আহমাদ রাহ.-সহ এগারোজন আলেম মোট তিন দিন সুবহে কাযিব ও সুবহে সাদিক মুশাহাদার চেষ্টা করেন। এর প্রথম দুই দিন তাঁরা মুশাহাদা করেছিলেন পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের টান্ডুআদম নামক এলাকা থেকে পূর্ব দিকে তিন মাইল দূরত্বে অবস্থিত মাদরাসা মুহাম্মাদিয়াতে গিয়ে। আর তৃতীয় দিন মুশাহাদা করেছিলেন করাচিতেই।
১৮°-এ সুবহে কাযিব এবং ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবিটির সপক্ষে আহসানুল ফাতাওয়াতে এই তিন দিনের মুশাহাদাকে খুব জোরদারভাবে বারবার দলীল হিসেবে পেশ করা হয়েছে। আহসানুল ফাতাওয়াতে এক জায়গায় বলা হয়েছে-
حضرت مفتی محمد شفیع صاحب کی سرکردگی میں گیارہ علماء کے تین روز تک مشاہدات سے متعلق حضرت مفتی صاحب کی خود نوشتہ روئیداد اور اسکے نتائج اسقدر واضح اور بدیہی ہیں کہ اسکے بعد شک وشبہہ کی کوئی گنجائش باقی نہیں رہتی، اس سے بڑھ کر اور کیا دلیل ہو سکتی ہے؟ فبأي حديث بعده يؤمنون؟
অর্থাৎ হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর নেতৃত্বে এগারোজন আলেমের তিন দিনের মুশাহাদার হযরত মুফতী ছাহেব রাহ.-এরই লিখিত রেজুলেশন এবং ফলাফল এতই স্পষ্ট ও মজবুত, যার পর আর কোনো সংশয়-সন্দেহের অবকাশ বাকি থাকে না। এর চেয়ে বড় দলীল আর কী হতে পারে?-
فبأي حديث بعده يؤمنون.
‘এরপর কোন্ কথায় তারা আর বিশ্বাস করবে?’। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৫৯)
এর থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এই মুশাহাদা আহসানুল ফাতাওয়ার নিকট নিজ দাবির সপক্ষে কত সুস্পষ্ট ও শক্তিশালী দলীল! এখন আমরা আহসানুল ফাতাওয়ার এই সবচেয়ে সুস্পষ্ট ও বড় দলীলটির হাকীকত তুলে ধরছি। যেটি মূলত আহসানুল ফাতাওয়ার সকল দাবি অমূলক ও বাস্তবতা বিরোধী হওয়ার সপক্ষেই শক্তিশালী দলীল। আর এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ, আমাদের আলোচনায় পূর্বে ১৮°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার সপক্ষে যেসব প্রাচীন মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের বক্তব্য ও মুসলিম উম্মাহর তাআমুলের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিও মুশাহাদাই। দীর্ঘদিন এমনকি বছরের পর বছর আকাশ পর্যবেক্ষণ (Observation) করেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এক্ষেত্রে প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান যে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে এবং পূর্বযুগ থেকে যে অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহর আমল চলে আসছে, বিজ্ঞানের ব্যাপক উৎকর্ষের এ যুগে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানও তাতে কোনো ত্রুটি বের করতে সক্ষম হয়নি। তাছাড়া সমকালীন বহু দেশে হয়ে যাওয়া মুশাহাদা দ্বারাও বিষয়টি চাক্ষুষভাবে প্রমাণিত। বিষয়টি যেহেতু চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণের, আর পর্যবেক্ষণের বিষয়টিও প্রকাশ্য আলামত, যা পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো যান্ত্রিক সহযোগিতারও প্রয়োজন নেই, তাই এতে এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। অতএব প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে বর্তমান কাল পর্যন্ত এত অসংখ্য মুশাহাদা দ্বারা ১৮°-এর ভেতর সুবহে সাদিক প্রমাণিত হওয়ার পর হঠাৎ করেই কেউ এসে এটিকে ভুল সাব্যস্ত করে ফেলবে- তা কীভাবে সম্ভব?!
মোটকথা, যেখানে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অবজারভেশনই প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও যুগ পরম্পরায় চলে আসা মুসলিম উম্মাহর আমলকে সমর্থন করা ছাড়া তাতে কোনো ভুল বের করতে সক্ষম হয়নি, সেখানে বর্তমানে আমাদের নিজেদের মুশাহাদা তথা চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ দ্বারা যে একে ভুল সাব্যস্ত করা সম্ভব নয়- তা সহজেই অনুমেয়।
বর্তমানে যারাই মুশাহাদা করবেন, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কোনো সমস্যার কারণে ১৮° থেকে দেরিতে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করলেও তা الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ তথা সাদা রেখার মত হালকা ও ক্ষীণ আকারে দেখতে পারবে না; বরং ১৮° থেকে যত দেরি হবে আলোর পরিমাণ তত বেশি থাকবে। অথচ সরাসরি কুরআনুল কারীম দ্বারা প্রমাণিত যে, সুবহে সাদিক শুরু হয় الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ তথা সাদা রেখার মত হাল্কা ও ক্ষীণ আকারে। পক্ষান্তরে কারো জন্য ১৮°-এ বা এরপর সুবহে কাযিব মুশাহাদার প্রমাণ দেখানোও সম্ভব নয়।
এটি এতই সুপ্রমাণিত বাস্তবতা যে, খোদ আহসানুল ফাতাওয়ার মুশাহাদাই এর প্রমাণ। আহসানুল ফাতাওয়াতে নিজ দাবির সপক্ষে নিজেদের যে মুশাহাদাকে প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে এর দ্বারা উল্টো অনুসৃত মতটিই প্রমাণিত হয়। আহসানুল ফাতাওয়ার কোনো দাবিই এর দ্বারা প্রমাণিত হয় না। একে আহসানুল ফাতাওয়ায় নিজ দাবির সপক্ষে পেশ করা হলেও এর দ্বারা বাস্তবে উল্টো আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিই ভুল সাব্যস্ত হয়। কারণ, আহসানুল ফাতাওয়ার একটি দাবি হল, ১৮°-এর আগে আকাশে কোনো আলো দেখা যায় না। এই দাবির উপর ভিত্তি করে আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হল, যেহেতু ১৮°-এর আগে আকাশে কোনো আলো দেখা যায় না তাই ১৮° থেকে সুবহে কাযিব শুরু হয়; সুবহে সাদিক নয়। অথচ আহসানুল ফাতাওয়ার এই মুশাহাদাতেই আছে, তাঁরা ১৮°-এর কয়েক মিনিট আগে সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন। আহসানুল ফাতাওয়ার আরেক দাবি হল, সুবহে সাদিক হয় ১৫°-এ; এর আগে নয়। অথচ এই মুশাহাদাতে তাঁরা ১৫°-এর আগেই সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। সামনে বিশ্লেষণসহ এই তিন দিনের মুশাহাদার বাস্তব চিত্র আমরা পেশ করছি।
وبالله التوفيق.
১৯৭০ -এর মুশাহাদা ও পর্যালোচনা
এখানে শুরুতে একটি বিষয় লক্ষণীয়। তা হল, এই মুশাহাদার পরিপূর্ণ রেজুলেশন আমরা পাইনি। আহসানুল ফাতাওয়াতে এই রেজুলেশন পরিপূর্ণভাবে হুবহু উল্লেখ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছে-
ذیل میں اس روئیداد کے ضروری اقتباسات دیئے جاتے ہیں۔
অর্থাৎ নিম্নে এই রেজুলেশনের নির্বাচিত জরুরি কিছু অংশ দেওয়া হল। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৫)
যা হোক, মূল রেজুলেশন থেকে আহসানুল ফাতাওয়া কতৃর্ক সংক্ষেপিত বিবরণকে সামনে নিয়েই বিষয়টির উপর আমরা আলোচনা তুলে ধরছি ইনশাআল্লাহ।
প্রথম দিনের মুশাহাদা
এই মুশাহাদার স্থান ছিল, পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের টান্ডুআদম নামক এলাকা থেকে পূর্ব দিকে তিন মাইল দূরত্বে অবস্থিত মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া। এর অবস্থান, যেমনটি আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, তা হল- ২৫°:৪৬ʹ (২৫.৭৬৬৬°) উত্তর ও ৬৮°:৪০ʹ (৬৮.৬৬৬৬°) পূর্ব। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৫)
মুশাহাদার প্রথম দিন ছিল ১১ জুন ১৯৭০ ঈ.। এ দিনের মুশাহাদার বিবরণ আহসানুল ফাতাওয়াতে এভাবে এসেছে-
11 جون، پھر ایک روشنی عرضا پھیلنے والی افق کے اوپر شروع ہوئی، روشنی کا پورا تبین جس پر سپ دیکھنے والوں نے اتفاق کیا ہے وہ تو 4:19 پر تھا، اس روشنی کے اس سے کچھ پہلے ہونے کا بھی بعض کو شبہہ رہا۔
১১ জুন, অতঃপর দিগন্তে বিস্তৃত আকারে একটি আলো শুরু হল। আলোটি পরিপূর্ণভাবে স্পষ্ট আকারে দেখা গেছে ৪:১৯ মিনিটে, যার উপর মুশাহাদাকারী সবার ইত্তেফাক ও ঐকমত্য ছিল। কারো কারো মনে হচ্ছিল, আলোটি মূলত শুরু হয়েছে আরো আগেই। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৬)
মুশাহাদার এই বিবরণে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
১. এই মুশাহাদাগুলো দ্বারা ১৫°-এ ‘সুবহে সাদিক’ শুরু হওয়ার দাবি কীভাবে প্রমাণিত হল- এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ আহসানুল ফাতাওয়াতে নেই। মুশাহাদার স্থলে ঐ দিন ১৫°-এর সময় কয়টায় শুরু হয়; ৪:১৯ মিনিটের আগে না পরে- তা বলা ছাড়া আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি প্রমাণিত হবে কীভাবে?!
২. সামনে আমরা অ্যাস্ট্রোনমির হিসাব তুলে ধরছি। যার দ্বারা প্রমানিত হয় যে, এই দিন তারা ১৫°-এর আগেই খুবই স্পষ্টভাবে সুবহে সাদিক দেখেছেন।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আহসানুল ফাতাওয়াতেই আছে, এই মুশাহাদার স্থানটির অবস্থান হল, ২৫°:৪৬ʹ (২৫.৭৬৬৬°) অক্ষাংশে ও ৬৮°:৪০ʹ (৬৮.৬৬৬৬°) দ্রাঘিমাংশে। আর প্রথম দিন মুশাহাদার তারিখ ছিল ১১ জুন ১৯৭০ ঈ.। আর আহসানুল ফাতাওয়াতে নিজ দাবির প্রমাণ হিসেবে تحقیقات جدیدہ বা ‘নতুন তাহকীক/গবেষণা’ শিরোনামের অধীনে পাকিস্তানের হাইড্রোগ্রাফি নেভাল হেডকোয়ার্টারের ডাইরেক্টর কতৃর্ক প্রেরিত পত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ পত্রেই আছে যে, ১১ জুন ১৯৭০ ঈ. তারিখে উক্ত স্থানে ১৫°-এর সময় হয় ৪:২০ মিনিটে। (দেখুন : আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৬৮)
অতএব আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখিত এই পত্রের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে, তারা ঐ দিন সেখানে সুবহে সাদিক দেখেছেন ১৫°-এর সময়ের (৪ : ২০ -এর) এক মিনিট আগে। তাহলে এই দিনের মুশাহাদাটি আহসানুল ফাতাওয়ার প্রমাণ হয় কীভাবে? এর দ্বারা তো বরং আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিই ভুল প্রমাণিত হয় এবং সুবহে সাদিক ১৫°-এর আগে শুরু হওয়ার স্বীকৃত মতটিই সঠিক প্রমাণিত হয়। কেননা আহসানুল ফাতাওয়ার মতে তো সুবহে সাদিক শুরুই হয় ১৫°-এ, ১৫°-এর আগে হল সুবহে কাযিবের সময়।
দ্বিতীয়ত আহসানুল ফাতাওয়াতে এই পত্রটি তুলে ধরার পরও (যাতে আছে যে, ১৫°-এর সময় হয় ৪:২০ মিনিটে) এ বিষয়ে চুপচাপ থেকে উল্টো এই পত্র ও মুশাহাদা উভয়টিকে নিজ দাবির সপক্ষে তুলে ধরা কতটুকু ন্যায়সঙ্গত হল?!
এখানে উল্লেখ্য, National Oceanic and Atmospheric Administration (NOAA) আমেরিকার একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। যার কাজ হল, মহাসাগর, বায়ুমণ্ডল, আবহাওয়া ও পরিবেশ বিষয়ক গবেষণা। তাদের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত NOAA Solar Calculator এর হিসাব অনুযায়ীও ১১ জুন ১৯৭০ ঈ. তারিখে উক্ত স্থানে ১৫°-এর সময় হয় ৪:২০ মিনিটে। আর ৪:১৯ মিনিটে সূর্য দিগন্তের ১৫.১৬° ডিগ্রি নিচে থাকে।
এখানে ভালোভাবে বুঝে রাখা দরকার, সুবহে সাদিক যেহেতু বাস্তবে শুরু হয় ১৮°-এর ভেতর তাই কোনো ওজরের কারণে কারো তা দেখতে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। এতে আপত্তি তোলার কিছু নেই। কিন্তু যদি দাবি করা হয় যে, তা শুরুই হয় ১৫°-এ, তাহলে ১৫°-এর অল্প আগেও তা দেখা সম্ভব হবে না। ১৫° থেকে ০.১° আগেও কেউ তা দেখতে পারবে না। অথচ এই দিন তাঁরা সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন ১৫.১৬°-এ সর্বসম্মতভাবে খুবই স্পষ্ট আকারে।
৩. আহসানুল ফাতাওয়ার এ বিবরণ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, তারা ঐ দিন ১৫°-এর এক মিনিট আগেই (১৫.১৬°-এ) সুবহে সাদিক দেখেছেন। আহসানুল ফাতাওয়ায় প্রদত্ত মুশাহাদার এই বিবরণ থেকেই আরো প্রমাণিত হয় যে, ঐ দিন সুবহে সাদিক ১৫° থেকে শুধু এক মিনিট আগে নয়; বরং এরও বেশ আগে শুরু হয়েছিল। আহসানুল ফাতাওয়ার কথাটি আবার খেয়াল করুন-
روشنی کا پورا تبین جس پر سپ دیکھنے والوں نے اتفاق کیا ہے وہ تو 4:19 پر تھا۔
অর্থাৎ ৪:১৯ মিনিটে আলোটি খুব স্পষ্টভাবেই সবাই দেখতে পাচ্ছিলেন। এ সময় আলোটি প্রশস্ত আকারে প্রকাশিত হওয়ার ব্যাপারে তাঁদের কারো দ্বিমত ছিল না।
আহসানুল ফাতাওয়ার এ কথা থেকেই স্পষ্ট যে, ঐ দিন সুবহে সাদিক মূলত শুরু হয়েছে ৪:১৯-এর বেশ আগেই। কেননা কুরআন মাজীদে এসেছে, সুবহে সাদিক الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ সাদা রেখার মত অনেক হালকা ও ক্ষীণ আকারে শুরু হয়। শুরুতে তা খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায় না। যার কারণে কেউ যদি সুবহে সাদিক কখন শুরু হয়- তা মুশাহাদা করতে চায়, তবে তাকে মুশাহাদা করতে হবে ধারাবাহিকভাবে, অনেকদিন। কারণ, হঠাৎ করে দেখে সুবহে সাদিক উদয়ের সময়ের ক্ষীণ আলো ধরা যায় না। প্রখর দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিও তা বুঝতে পারে সুবহে সাদিকের উদয় বারবার দেখে অভ্যস্ত হলে।
অতএব মুশাহাদার প্রথম দিনই যদি তাঁরা সবাই সর্বসম্মতভাবে ৪:১৯ মিনিটে খুব স্পষ্ট আকারে সুবহে সাদিক দেখে থাকেন তাহলে এর থেকেই স্পষ্ট যে, তাঁরা এই দিন সুবহে সাদিক শুরু হয়ে যাওয়ার অনেক পর তা দেখতে পেয়েছেন। الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ তথা সাদা রেখার মত হালকা ও ক্ষীণ আকারে সুবহে সাদিক মূলত শুরু হয়ে গিয়েছিল আরো আগেই। এজন্যই তাঁদের কেউ কেউ যথার্থই সন্দেহ পোষণ করেছেন, যেমনটি আহসানুল ফাতাওয়াতে বলা হয়েছে-
اس روشنی کے اس سے کچھ پہلے ہونے کا بھی بعض کو شبہہ رہا۔
কারো কারো মনে হচ্ছিল, আলোটি মূলত শুরু হয়েছে আরো আগেই। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৬)
মোটকথা, আহসানুল ফাতাওয়ায় বর্ণিত এই মুশাহাদা দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে যায় যে, সুবহে সাদিক শুরু হয় ১৫°-এর আগেই। কিন্তু সেখানে তাঁরা সুবহে সাদিকের শুরু মুহূর্তটি মুশাহাদা করতে না পারার পেছনে আবহাওয়া ও পরিবেশগত বড় কোনো প্রতিবন্ধক ছিল। যার কারণে বাস্তবে সুবহে সাদিক শুরু হয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা এর মুশাহাদা করতে পেরেছেন বিলম্বে। হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের ভাষায় (যিনি নিজে এই মুশাহাদায় উপস্থিত ছিলেন) সেই প্রতিবন্ধক হল, দিগন্ত ধুলিকণাযুক্ত (مطلع گردآلود) থাকা। (ফাতাওয়া উসমানী ১/৩৮৭)
৪. এই দিনের মুশাহাদায় ৪:১৯ মিনিটের আগে তাঁরা কী রকম আলো দেখেছেন, সুবহে কাযিব দেখেছিলেন কি না- এর বিবরণ আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখ করা হয়নি। আহসানুল ফাতাওয়াতে এই দিনের মুশাহাদার বিবরণ শুরুই করা হয়েছে এভাবে-
11 جون، پھر ایک روشنی عرضا... ۔
‘১১ জুন, অতঃপর দিগন্তে বিস্তৃত আকারে একটি আলো...।’ এখানে মূল রেজুলেশনে پھر (অতঃপর)-এর আগে কী বিবরণ ছিল- তা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ এটি একটি প্রয়োজনীয় অংশ ছিল। এর আগে কোনো আলো দেখেছেন কি না? দেখে থাকলে এই আলোর ধরন কী ছিল? আর যদি কোনো ধরনের আলো না দেখে থাকেন তবে তাও উল্লেখ করার প্রয়োজন ছিল।
মোটকথা, এই বিবরণটি থাকলে হয়ত আমাদের কাছে এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট হত। বাকি আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
দ্বিতীয় দিনের মুশাহাদা
পরের দিন (১২ জুন) একই স্থানে মুশাহাদা করা হয়। অর্থাৎ টান্ডুআদম নামক এলাকা থেকে পূর্ব দিকে তিন মাইল দূরত্বে অবস্থিত মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া। যার অবস্থান ২৫°:৪৬ʹ (২৫.৭৬৬৬°) উত্তর ও ৬৮°:৪০ʹ (৬৮.৬৬৬৬°) পূর্ব।
আহসানুল ফাতাওয়াতে এই দিনের মুশাহাদার বিবরণ এভাবে তুলে ধরা হয়েছে-
12جون، صبح کو تقریبا 3:30 بجے میدان میں سب حضرات پہنچ گئے، اس وقت افق مشرق پر کسی قسم کی روشنی نہیں تھی، ٹھیک چار بجے افق پر مخروطی شکل کی طولانی روشنی نمودار ہوئی، جسکو سب نے دیکھ کر صبح کاذب قرار دیا، اور اسکے سترہ منٹ بعد یعنی 4:17 پر صبح صادق واضح طور پر مشاہدہ کی گئی، اس پر سب کا اتفاق رہا۔
অথার্ৎ ১২ জুন ঠিক ৪ টার সময় দিগন্তের উপর দিকে লম্বালম্বিভাবে শঙ্কু আকারের আলো প্রকাশ হয়। যাকে সবাই সুবহে কাযিব গণ্য করেছেন। এর ১৭ মিনিট পর অথার্ৎ ৪:১৭ মিনিটে সুবহে সাদিক স্পষ্টভাবে মুশাহাদা করা হয়। এর উপর সবার ইত্তেফাক ও ঐকমত্য ছিল। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৬)
এখানে আহসানুল ফাতাওয়ায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ঐ দিন তাঁরা সবাই ঠিক ৪ টার সময় সুবহে কাযিব দেখেছেন। আর আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হল, সুবহে কাযিব শুরু হয় ১৮°-এ। এর আগে আকাশে কোনো আলো দেখা যায় না। অথচ NOAA Solar Calculator -এর হিসাব অনুযায়ী ঐ স্থানে ১২ জুন ১৮°-এর সময় হয়, ৪ টা ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ডে। তাহলে ঐ দিন সেখানে তারা ঠিক ৪ টায় সুবহে কাযিব দেখে থাকলে এটি তারা দেখেছেন ১৮°-এর ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড আগে। অতএব আহসানুল ফাতাওয়ায় বর্ণিত এই মুশাহাদা দ্বারাই সাব্যস্ত হল যে, ‘সুবহে কাযিব ১৮°-এ শুরু হয়; এর আগে শুরু হয় না’- আহসানুল ফাতাওয়ার এ দাবি ভুল।
তারপর দেখুন, ঐ দিন ৪ টার পরও তাঁরা সুবহে কাযিব দেখেছেন এমন কোনো দাবি আহসানুল ফাতাওয়াতে করা হয়নি। অথচ এরপরও সুবহে কাযিব তাঁরা দেখে থাকলে আহসানুল ফাতাওয়া থেকে তা কখনোই ছুটে যেত না।
এবার সুবহে সাদিকের বিবরণে আসা যাক। আহসানুল ফাতাওয়াতে বলা হয়েছে, ঐ দিন ‘৪:১৭ মিনিটে সুবহে সাদিক স্পষ্টভাবে মুশাহাদা করা হয়। এর উপর সবার ইত্তেফাক ও ঐকমত্য ছিল।’ অথচ ১১ জুনের কয়েকদিন আগ থেকে ১২ জুনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত ১৫°-এর সময় একই থাকে। আর একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আহসানুল ফাতাওয়াতেই আছে, ১১ জুন ১৫°-এর সময় হয় ৪:২০ মিনিটে।
অন্য মাধ্যমেও আমরা এই হিসাবই পেয়ে থাকি। ঘঙঅঅ ঝড়ষধৎ ঈধষপঁষধঃড়ৎ -এর হিসাব অনুযায়ীও সেখানে ১২ জুন ১৫°-এর সময় হয় ৪:২০ মিনিটে। তাহলে দেখুন, ঐ দিন সেখানে তাঁরা সবাই সর্বসম্মতভাবে স্পষ্ট আকারে ১৫°-এর ৩ মিনিট আগে সুবহে সাদিক দেখেছেন। অ্যাস্ট্রোনমির হিসাব অনুযায়ী যা ১৫.৫° -এর আগে হয়ে থাকে। অর্থাৎ আগের দিন তাঁরা ১৫°-এর যতটুকু আগে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন, এই দিন তাঁরা এরও আগে সুবহে সাদিক মুশাহদা করেছেন। আর ঐ দিন সেখানে الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ সাদা রেখার মত হালকা ও ক্ষীণ আকারে সুবহে সাদিক মূলত আরো আগেই যে শুরু হয়ে গিয়েছিল তা এর বিবরণ থেকেই স্পষ্ট । কেননা এই দিনও তাঁরা সবাই সর্বসম্মতভাবে ৪:১৭ মিনিটে সুস্পষ্ট আকারে সুবহে সাদিক দেখেছিলেন।
তাহলে দেখুন, আহসানুল ফাতাওয়ায় বর্ণিত এই দিনের মুশাহাদা দ্বারা ১৮°-এ সুবহে কাযিব শুরু হওয়া এবং ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার উভয় দাবিই ভুল সাব্যস্ত হল।
আর এই দুই দিনের মুশাহাদার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হল, এ দুই দিনই তারা ১৮°-এ বা এর পর ১৫°-এর আগ পর্যন্ত সুবহে কাযিব মুশাহাদা করতে পারেননি।
তৃতীয় দিনের মুশাহাদা
তৃতীয় দিনের মুশাহাদার বিবরণ আহসানুল ফাতাওয়াতে এভাবে উল্লেখ হয়েছে-
13 جون، آج کراچی میں کورنگی سوکواٹر کے قریب مشرقی ساحل سمندر پر جا کر مشاہدہ کی کوشش کی گئی، جس میں مفتی رشید احمد صاحب مولانا محی الدین صاحب مولانا عاشق الٰہی صاحب مولوی محمد علی صاحب مولانا محمد رفیع صاحب اور احقر محمد شفیع شامل تھے۔
اتنا سب نے محسوس کیا کہ 4:11 جو وقت صبح صادق قدیم نقشوں میں آج کی تاریخ کا لکھا ہوا ہے اس وقت کسی قسم کی روشنی افق پر نہیں تھی۔ اس کے بعد وہ روشنی جس کو صبح کاذب کہا جا سکتا ہے شروع ہوئی، پھر اس کے بعد صبح صادق کی معترضا پھیلنے والی روشنی سامنے آئی۔
১৩ জুন, আজ করাচির কোরঙ্গি সোকোয়াটারের নিকটে পূর্ব সমুদ্র সৈকতে গিয়ে মুশাহাদা করা হয়। এতটুকু সবাই অনুভব করতে পেরেছেন যে, ৪:১১ যা পুরাতন সময়সূচিগুলোতে আজকের সুবহে সাদিকের সময় লেখা আছে, তখন দিগন্তে কোনো আলো ছিল না। এরপর ঐ আলো, যাকে সুবহে কাযিব বলা যেতে পারে, তা শুরু হয়। এরপর সুবহে সাদিকের প্রশস্ত আকারের আলো সামনে আসে। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৬)
এই মুশাহাদার বিবরণটিতে কয়েকটি দিক লক্ষণীয়। প্রথমে এই মুশাহাদার বিবরণটির ভাষা ও উপস্থাপনের ধরন এবং এর আগের দুই দিনের মুশাহাদার বিবরণের ভাষা ও উপস্থাপনের ধরনের প্রতি ভালোভাবে খেয়াল করুন। আগের দুই দিনের বিবরণ কত পরিষ্কার, সুস্পষ্ট ও বলিষ্ঠ ভাষায় উপস্থান করা হয়েছে যে, তাঁরা সবাই ৪:১৯ ও ৪:১৭ মিনিটে সুবহে সাদিক দেখেছেন। এবং সুবহে সাদিক দেখেছেনও তাঁরা তখন খুব স্পষ্ট আকারে সর্বসম্মতভাবে। এর তুলনায় দেখুন, তৃতীয় দিনের বিবরণটির ভাষা ও উপস্থাপন কত দুর্বল! ‘পুরাতন সময়সূচিতে প্রদত্ত সময়ে দিগন্তে কোনো আলো ছিল না- তা ‘সবাই অনুভব করেছেন’ (سب نے محسوس کیا)।’ অর্থাৎ তাঁরা অনুভবই করেছেন; নিশ্চিতভাবে কোনো কিছু বুঝতে পারেননি।
সামনে বলেছেন, ‘এরপর ঐ আলো প্রকাশিত হয়, যাকে সুবহে কাযিব বলা যেতে পারে (جس کو صبح کاذب کہا جا سکتا ہے)।’ এভাবে কত দুর্বল ভাষায় বলা হচ্ছে কথাগুলো! অর্থাৎ এই আলোটি যে সুবহে কাযিব তা মুশাহাদাকারীগণের কারো কাছে স্পষ্ট ছিল না।
আবার কোন্ আলো কতটার সময় দেখেছেন তারও বিবরণ নেই। اس کے بعد (এরপর) এবং پھر اس کے بعد... (অতঃপর)- এভাবে অস্পষ্ট রেখেই তা উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেকটি বড় বিষয় হল, ঐ দিন কতটার সময় তাঁরা সুবহে সাদিক দেখেছেন আহসানুল ফাতাওয়াতে সেটিই স্পষ্ট করা হয়নি। অতএব এই দিন তারা যে সময় সুবহে সাদিকের প্রশস্ত আলো দেখেছেন এটি কত ডিগ্রিতে ছিল তা কীভাবে বোঝা যাবে? এর দ্বারা ১৫°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার দাবি প্রমাণিত হবে কীভাবে?! এই দিন ১৮°-এ সুবহে সাদিকের আলো দেখতে পারেননি- তা মেনে নেওয়া হলেও এই দিন যে তাঁরা ১৫°-এর আগে সুবহে সাদিক দেখেননি তা বোঝা গেল কীভাবে? হতে পারে আগের দুই দিনের মত এই দিনও ১৫°-এর আগেই সুবহে সাদিক দেখেছেন। যার কারণে এই সময়টি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। নতুবা এই সময়টি অস্পষ্ট রাখার পেছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে?! কারণ, বাস্তবেই যদি এই সময়টি ১৫°-এ বা তার পরে হত তাহলে আহসানুল ফাতাওয়াতে এটিকে অস্পষ্ট রাখা হবে- এমনটি হতেই পারে না! তাহলে এক কথায় বিষয়টি এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা এই দিন সুবহে কাযিব সম্পর্কে সংশয়-সন্দেহে ছিলেন আর সুবহে সাদিক কতটার সময় দেখেছেন- সেই সময়ই তাতে উল্লেখ নেই।
মোটকথা, এই দিনের মুশাহাদাটি অনেক দিকে থেকেই অস্পষ্ট। মুশাহাদাকারীগণ এই দিন ভালোভাবে যে মুশাহাদা করতে পারেননি তা এই বিবরণের শব্দ-শব্দ থেকেই প্রমাণিত। যার কারণ অবস্থান কিংবা আবহাওয়া ও পরিবেশগত কোনো বিষয় হয়ে থাকবে।
তাছাড়া তৃতীয় দিনের মুশাহাদার স্থানটি কত ডিগ্রি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত তা উল্লেখ করে জায়গাটি নির্ধারণও করা হয়নি। এই দিনের মুশাহাদার বিবরণে এটিও অস্পষ্টতার একটি দিক। অথচ কোনো মুশাহাদা থেকে নতীজা ও ফলাফল বের করার জন্য স্থানের নির্ধারণ এবং মুশাহাদার সময়ের বিবরণ উভয়টি খুবই জরুরি। উভয়টি জানা ছাড়া কোনো ফলাফল বের করাই অসম্ভব।
সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, মূল রেজুলেশন থেকে তৃতীয় দিনের মুশাহাদারও পুরো বিবরণটি উল্লেখ না করে اقتباس (অংশ বিশেষ)-ই উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং যে মুশাহাদার উপর স্বয়ং মুশাহাদাকারীগণই সংশয়-সন্দেহ ও অস্পষ্টতায় ছিলেন- এর দ্বারা যে নিশ্চিত কোনো ফলাফল দাঁড়াতে পারে না এবং এর ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত প্রদান সম্ভব নয়- তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর চেয়েও বড় কথা হল, এই দিন তারা কতটার সময় সুবহে সাদিক দেখেছেন তা অস্পষ্ট রাখার কারণে সেইদিন কত ডিগ্রিতে সুবহে সাদিক দেখেছিলেন সেটি বোঝারই সুযোগ থাকেনি। অতএব এর দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার ১৫°-এর দাবিই প্রমাণিত হবে কীভাবে?!
এই মুশাহাদাতেও ১৮°-এ সুবহে কাযিব দেখার কোনো প্রমাণ নেই
এখানে লক্ষণীয় যে, সুবহে সাদিক যেহেতু ১৮°-এ শুরু হয় তাই ১৫°-এও তা দেখা যাবে। এটিই স্বাভাবিক। অতএব কেউ যদি সুবহে সাদিক ১৫°-এ দেখেন, এর দ্বারা কখনো তিনি দাবি করতে পারেন না যে, সুবহে সাদিক এর আগে শুরুই হয় না বা ১৮°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার কথা ভুল। হাঁ, ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবিকারী যদি ১৮° থেকে ১৫°-এর ভেতর সুবহে কাযিব মুশাহাদার বিষয় প্রমাণ করে দেখাতে পারেন তাহলে এটিকে ১৮°-এ সুবহে কাযিব এবং ১৫°-এ সুবহে সাদিক হওয়ার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করতে পারেন। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে এমন একটি প্রমাণও নেই। এর সপক্ষে ফালাকিয়াত (অ্যাস্ট্রোনমি)-এর নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাব বা বইয়ের কোনো উদ্ধৃতি যে নেই- তা তো পূর্বেই তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আমরা বলতে চাচ্ছি, আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখিত এই মুশাহাদায়ও ১৮° থেকে ১৫°-এর ভেতর সুবহে কাযিব মুশাহাদার কোনো প্রমাণ নেই।
সর্বমোট তিন দিনের এই মুশাহাদার প্রথম দিন সুবহে কাযিব দেখারই কথা নেই আহসানুল ফাতাওয়াতে। এর থেকে এটিই বোঝা যায়, তাঁরা এই দিন সুবহে কাযিব দেখেনইনি। দেখে থাকলে তা উল্লেখ করবেন না কেন?
দ্বিতীয় দিন সুবহে কাযিব দেখেছেন। তবে সেটি দেখার সময় ছিল ১৮°-এর ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড আগে।
বাকি থাকল তৃতীয় দিন (১৩ জুন)। এই দিন পুরোনো সময়সূচিতে প্রদত্ত সময়ের পর যে আলো দেখেছেন, তাঁরা অনুভব করছেন, এটি সুবহে কাযিব ছিল। নিশ্চিতভাবে তাঁরা কিছু বলতে পারেননি। অতএব এমন অস্পষ্ট ও সন্দেহপূর্ণ বিষয় যে কোনো প্রমাণ হতে পারে না- তা স্পষ্ট। উপরন্তু তাঁদেরই আগের দিনের মুশাহাদা দ্বারা তাঁদের এই দিনের অনুভব ভুল সাব্যস্ত হয়। কেননা এর আগের দিন (১২ জুন) তাঁরা সবাই সর্বসম্মতভাবেই ১৮°-এর ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড আগে সুবহে কাযিব দেখেছেন। তাহলে পরের দিন ১৮°-এর পর যে আলোটি তাঁরা দেখেছেন তা সুবহে কাযিব হবে কীভাবে? কেননা তাদের দ্বিতীয় দিনের মুশাহাদা দ্বারাই তো প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, সুবহে কাযিব হয় ১৮°-এর আগে। সুতরাং তাঁরা ঐ দিন যে আলোকে সুবহে কাযিব অনুভব করেছিলেন বাস্তবে তা সুবহে কাযিব ছিল না।
তাছাড়া ১৮°-এ বা এর পর সুবহে কাযিব দেখা যাওয়া যে অসম্ভব তা তো শাস্ত্রজ্ঞগণের নিকট স্বীকৃত বিষয়। শাস্ত্রীয়ভাবেই বিষয়টি সুপ্রমাণিত। প্রাচীন মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী হোক বা আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী সবার বক্তব্য দ্বারাই এটি প্রমাণিত।
মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ দীর্ঘদিন মুশাহাদার পর বলেছেন, সুবহে সাদিক ১৮°-এর ভেতরই শুরু হয়ে যায়। ১৮° থেকে কখনো দেরি হয় না। এ ব্যাপারে তাঁদের সবার ইজমা। অতএব সুবহে কাযিব ১৮°-এ দেখা যাওয়া তাঁদের মতে অসম্ভব। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণও স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন-
The zodiacal light can be observed without twilight contamination after astronomical twilight or before astronomical dawn, when the Sun is more than 18° below the horizon.
অর্থাৎ জোডিয়াকাল লাইট (সুবহে কাযিব) পর্যবেক্ষণ (Observation) করা সম্ভব সন্ধ্যা রাতে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টোয়াইলাইটের পরপরই এবং ভোররাতে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ডন (টোয়াইলাইট) এর আগ মুহূর্তে। সূর্য যখন দিগন্ত থেকে ১৮°-এর বেশি নিচে থাকে।
দেখুন-
The Light of the Night Sky, P. 40, by F.E. Roach and Janet L. Gordon. D. Reidel Publishing Company, Dordrecht-Holland/Boston U.S.A. First printing: December 1973
অন্যত্র আরো স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে-
The zodiacal light is never visible when the Sun is less than 18° below the horizon.
অর্থাৎ সূর্য দিগন্ত থেকে ১৮° -এর কম নিচে থাকলে (উপরের দিকে লম্বালম্বি আকারে দৃশ্যমান) জোডিয়াকাল লাইট দেখা সম্ভব নয়।
দেখুন-
The Environment of the Earth p.110. by Francis Delobeau. 1st edition 1971, D. Reiadel publishing company, holland
এভাবে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক বইয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে যে, জোডিয়াকাল লাইট (সুবহে কাযিব) দেখা যায় (ভোর বেলা) ১৮°-এর আগ মুহূর্তে; ১৮°-এ বা এর পর তা দেখা সম্ভব নয়।
সারকথা
খুলাসা কথা হল, আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখিত তিন দিনের এই মুশাহাদায় তাঁরা সুবহে কাযিব দেখেছেন কেবল এক দিন এবং সেই দিন তাঁরা সুবহে কাযিব মুশাহাদা করেছেন ১৮°-এর ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড আগে। অথচ আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি হল, সুবহে কাযিব শুরু হয় ১৮°-এ। ১৮°-এর আগে আকাশে কোনো আলো দেখা যায় না। তাই ১৮°-এর আগে সুবহে কাযিব শুরু হয় না।
অতএব আহসানুল ফাতাওয়ার এই দাবি যে ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী- আহসানুল ফাতাওয়ার মুশাহাদা দ্বারাই তা প্রমাণিত হল।
আর এই তিন দিনের মুশাহাদার প্রথম দুই দিন তাঁরা সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন অনেক স্পষ্ট আকারে সর্বসম্মতভাবে ১৫°-এর এক মিনিট আগেই। আর দ্বিতীয় দিন তাঁরা সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন ১৫°-এর তিন মিনিট পূর্বে ১৫.৫°-এরও আগে। আর এই দুই দিন তাঁরা ১৫°-এর কেবল এক মিনিট ও তিন মিনিট আগে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করলেও বাস্তবে এটি ছিল الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ সাদা রেখা আকারে সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার অনেক পরের সময়। যা আহসানুল ফাতাওয়ার বক্তব্য দ্বারাই স্পষ্ট। অতএব এর দ্বারা ১৫°-এর আগে সুবহে সাদিকের সময় হয় না- আহসানুল ফাতাওয়ার এ দাবিটিও ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী প্রমাণিত হল। তৃতীয় দিনে তাঁরা কতটার সময় সুবহে সাদিক দেখেছিলেন এর উল্লেখ নেই। স্পষ্টতই সেদিনও তাঁরা ১৫°-এর আগেই সুবহে সাদিক মুশাহাদা করে থাকবেন।
এই হল আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখিত তিন দিনের মুশাহাদার হাকীকত ও বাস্তব চিত্র। যার দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিগুলোই উল্টো অমূলক ও বাস্তবতা বিরোধী সাব্যস্ত হয়। অথচ এই মুশাহাদাকেই আহসানুল ফাতাওয়ায় নিজ দাবির সপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু তা কীভাবে করা হয়েছে- সামনে দেখুন।
আহসানুল ফাতাওয়ায় যেভাবে এই মুশাহাদা দ্বারা প্রমাণ দেওয়া হয়েছে
আহসানুল ফাতাওয়ায় এই মুশাহাদা তুলে ধরা হয়েছে ১৫°-এ সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার দাবিটির দলীলস্বরূপ। এখন এই দিনগুলোতে তাঁরা যে সময় সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিব দেখেছেন, ডিগ্রির হিসেবে তখন কত ডিগ্রি হয় সেটিও উল্লেখ করতে হবে। তবেই না দলীলের উপস্থাপন পরিপূর্ণ হবে। পূর্বের আলোচনাগুলোতে আমরা আহসানুল ফাতাওয়ার উল্লেখকৃত বিবরণ থেকেই প্রমাণ করে দেখিয়েছি, এই দিনগুলোতে তাঁরা সুবহে কাযিব দেখেছেন ১৮°-এর আগে। পক্ষান্তরে সুবহে সাদিকও মুশাহাদা করেছেন ১৫°-এর পূর্বেই। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে এই মুশাহাদা দ্বারা কীভাবে ১৮°-এ সুবহে কাযিব ও ১৫°-এ সুবহে সাদিক প্রমাণ করা হয়েছে- সেটি এখন দেখার বিষয়।
এই তিন দিনের মুশাহাদার সংক্ষিপ্ত বর্ণনাটি তুলে ধরার পর তাতে বলা হয়েছে-
نتائج :
کراچی کے مشاہدہ کا نتیجہ ایسا عام فہم ہے کہ اس سے متعلق کچھ سمجھانے کی ضرورت نہیں، اور ٹنڈوآدم کے مشاہدہ کے نتائج پر اہل فن غور کریں تو ثابت ہوگا کہ وہاں بندہ کے تحقیق کے عین مطابق صبح کاذب 18 درجہ زیر افق اور صبح صادق 15 درجہ زیر افق کے وقت پر ہوئی، اور عوام اس کی تصدیق یوں کر سکتے ہیں کہ تاریخوں میں کراچی کے اوقات پرانے نقشوں میں یوں دیے ہیں-
11 جون: صبح صادق 4 بجکر 12 منٹ، طلوع 5 بجکر 41 منٹ۔
12 جون: صبح صادق 4 بجکر 11 منٹ، طلوع 5 بجکر 41 منٹ۔
ٹنڈوآدم میں طلوع کراچی سے 9 منٹ قبل 5 بجکر 32 منٹ پر ہوا، تو صبح صادق اور صبح کاذب میں بھی تقریبا 9 منٹ بلکہ بروئے حساب 10، 11 منٹ قبل ہونی چاہیے، حالانکہ وہاں صبح صادق کراچی کے وقت سے 12 جون میں 6 منٹ بعد 4 بجکر 17 منٹ بر ہوئی، اور 11 جون میں 7 منٹ پعد 4 بجکر 19 منٹ بر ہوئی، البتہ صبح کاذب 11 منٹ قبل 4 بجے ہوئی، اس سے ہر ادنیٰ فہم رکھنے والا شخص بھی بخوبی سمجھ سکتا ہے کہ کراچی کے قدیم نقشوں میں صبح صادق کے عنوان کے تحت دیئے ہوئے اوقات در حقیقت صبح صادق کے نہیں بلکہ یہ اوقات صبح کاذب کا ہے۔
এই বক্তব্যটিতে কারাচি ও টান্ডুআদমের মুশাহাদার ফলাফল উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে প্রথমে বলা হয়েছে, ‘করাচির মুশাহাদাটি এতই সহজবোধ্য যে, এ ব্যাপারে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই।’
অথচ বাস্তবতা কী- তা আমরা একটু আগেই পড়ে এলাম। এই দিনের মুশাহাদাটি ছিল নিতান্তই অস্পষ্ট এবং সন্দেহ ও অনুমান নির্ভর। করাচির মুশাহাদার বিবরণ যে ভাষায় তাতে উল্লেখ করা হয়েছে এর শব্দ-শব্দ থেকে পরিষ্কার, স্বয়ং মুশাহাদাকারীগণই এই দিন অনেক সংশয়-সন্দেহ ও অস্পষ্টতায় ছিলেন। কোন্টি সুবহে কাযিব আর কোন্টি সুবহে সাদিক এ ব্যাপারে তারা সন্দিহান ছিলেন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, এই দিন যখন সুবহে সাদিক দেখেছেন তা কতটার সময় ছিল- সেটিই লেখা হয়নি। তাহলে এই মুশাহাদা দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি প্রমাণিত হবে কীভাবে? সময়টি যে ১৫°-এর আগে ছিল না- তা কীভাবে বোঝা গেল? আর সুবহে কাযিব বিষয়ে তাদের এই দিনের অনুমান অবাস্তব হওয়ার প্রমাণ তো তাদেরই আগের দিনের মুশাহাদা।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়! সব দিক থেকে অস্পষ্টতাপূর্ণ এই মুশাহাদার ব্যাপারেই বলা হচ্ছে, ‘করাচির মুশাহাদাটি এতই সহজবোধ্য যে, এ ব্যাপারে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই’!!
তারপর আসা যাক টান্ডুআদমের মুশাহাদায়। এ সম্পর্কে তাতে প্রথমে বলা হয়েছে-
اور ٹنڈوآدم کے مشاہدہ کے نتائج پر اہل فن غور کریں تو ثابت ہوگا کہ وہاں بندہ کے تحقیق کے عین مطابق صپح کاذب 18 درجہ زیر افق اور صبح صادق 15 درجہ زیر افق پر تھا۔
অর্থাৎ টান্ডুআদমের মুশাহাদার ফলাফলের উপর শাস্ত্রজ্ঞগণ চিন্তা করলেই তাদের কাছে প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, সেখানে একদম আমার তাহকীক অনুযায়ী সুবহে কাযিব ১৮°-এ এবং সুবহে সাদিক ১৫°-এ হয়েছিল। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৭)
আহসানুল ফাতাওয়ার এ দাবি যে সঠিক নয় তা তো আমাদের পূর্বের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট। কিন্তু তা সত্ত্বেও কীভাবে এই অবাস্তব দাবি করা হল- এখন সেটি দেখুন।
এই দাবিটির পর তাতে এর ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টিকে এমন পেঁচিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বভাবিকভাবে যা বোঝা অনেক জটিল। যার সারাংশ হল-
১. পুরোনো সময়সূচিগুলোতে করাচির সময় দেওয়া আছে এভাবে- ১১ জুন সুবহে সাদিক ৪:১২ মিনিটে। এবং ১২ জুন সুবহে সাদিক ৪:১১ মিনিটে।
২. আর টান্ডুআদমে করাচি থেকে প্রায় ৯ মিনিট; বরং হিসাব অনুযায়ী ১০/১১ মিনিট আগে সুবহে সাদিক ও সুবহে কাযিবের সময় হওয়ার কথা।
৩. অথচ টান্ডুআদমে ১২ জুন সুবহে সাদিক হয়েছিল করাচি থেকে ৬ মিনিট পর ৪:১৭ মিনিটে, আর ১১ জুন সেখানে সুবহে সাদিক হয়েছিল করাচি থেকে সাত মিনিট পর ৪:১৯ মিনিটে।
৪. অবশ্য সুবহে কাযিব ১১ মিনিট আগে চারটাতেই হয়েছিল। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৭)
আহসানুল ফাতাওয়ার এই বক্তব্যটি পড়ার পর এখন কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করুন-
১. এখানে প্রথমে দাবি করা হয়েছে, টান্ডুআদমে সুবহে সাদিক হয়েছিল ঠিক ১৫°-এ। অতএব এখন হিসাব করে দেখাতে হবে, ১১ জুন ৪:১৯ মিনিটে এবং ১২ জুন ৪: ১৭ মিনিটে ঠিক ১৫°-এর সময় কীভাবে হয়। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে সেটি দেখানো হয়নি। বরং ১৮° অনুযায়ী প্রণীত করাচির পুরোনো সময়সূচি থেকে এই দুইটি সময় কত মিনিট পর ছিল সে কথা বলা হচ্ছে। স্পষ্টত, এই হিসাব দ্বারা ১৮°-এর কত মিনিট পর সুবহে সাদিক দেখা গিয়েছিল তা বোঝা গেল ঠিক, কিন্তু উক্ত সময়টি ১৫°-এর আগে ছিল, না পরে- এর কিছুই তা দ্বারা প্রমাণিত হয় না। তাহলে দেখুন, দাবি করা হল একটা, হিসাব দেওয়া হল আরেকটা! ১৫°-এর সোজা হিসাব না দিয়ে এখানে অযথাই উল্টো দিক থেকে এর হিসাব দেওয়া হয়েছে।
২. দ্বিতীয় বিষয়, এখানে বলা হয়েছে, সুবহে সাদিকের ক্ষেত্রে করাচির সাথে টান্ডুআদমের সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিট। তারপর আবার বলা হয়েছে, বরং হিসাব অনুযায়ী ১০/১১ মিনিট ব্যবধান হওয়ার কথা।
এখানে লক্ষণীয় হল, এই দুই জায়গার সময়ের ব্যবধান একসাথে তিনটি হতে পারে না। হলে যে কোন একটিই হবে। ৯ মিনিট থেকে ১১ মিনিটে তিন মিনিটের ব্যবধান। এই তিন মিনিটে প্রায় আধা ডিগ্রি ব্যবধান হয়ে যায়। অতএব ৯, ১০ ও ১১ এই তিনটির মাঝে সঠিক যে কোনো একটিই সঠিক হবে। বাকি দুটি বেঠিক হবে। এটিই স্বাভাবিক।
এখন দেখার বিষয়, এর মধ্যে বাস্তবে কোন্টি সঠিক। আর সেটি হল, ৯ মিনিট। করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিটের। ১০ ও ১১ মিনিটের কথা ঠিক নয়। বিষয়টি আমরা আহসানুল ফাতাওয়ার মাধ্যমেই প্রমাণ করছি ইনশাআল্লাহ। আহসানুল ফাতাওয়াতে ১৫° অনুযায়ী করাচির প্রতি দিনের সময়সূচি দেওয়া আছে। সেখানে ১১ জুন সময় লেখা হয়েছে ৪:২৯ মিনিট। (২/২৬৮) আর আহসানুল ফাতাওয়াতেই (পাকিস্তানের হাইড্রোগ্রাফি নেভাল হেডকোয়ার্টারের ডাইরেক্টর কতৃর্ক প্রেরিত পত্রে) টান্ডুআদমে ১১ জুন ১৫°-এর সময় লিখা আছে ৪:২০ মিনিট। (২/১৬৮) আর ৪:২০ এবং ৪:২৯-এর মাঝে ৯ মিনিটের ব্যবধান হয়। এটিই সঠিক হিসাব। NOAA Solar Calculator এবং এরকম নির্ভরযোগ্য অনলাইন সফটওয়্যার দ্বারাও এটিই প্রমাণিত।
সুতরাং করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিট; ১০ ও ১১ মিনিট নয়।
৩. এই বক্তব্যটিতে আরেকটি বিষয় দেখুন, এতে বলা হয়েছে, ‘করাচিতে ১১ জুন সুবহে সাদিক হয় ৪:১২ মিনিটে। এবং ১২ জুন সুবহে সাদিক হয় ৪:১১ মিনিটে’। এই কথাটিতেই দুটি ভুল রয়েছে। প্রথমত, ১১ থেকে ১২ জুন একমিনিট সময়ের ব্যবধান- একথাটি সঠিক নয়। বাস্তবে উভয় দিনে ১৮°-এর সময় একটিই হবে এবং ১৫°-এর সময়ও একটিই। পক্ষান্তরে সূযোর্দয় ও সূর্যাস্তের ক্ষেত্রেও এমনই হবে। বিষয়টি শাস্ত্রীয়ভাবে প্রমাণিত। জুন মাসের মাঝামাঝি এই দিনগুলোতে দিন ও রাতের হিসাব একই রকম স্থির অবস্থায় থাকে। এক দিন থেকে আরেকদিন রাত ও দিনের পরিমাণ কম-বেশি হয় না। এই বিষয়টির প্রমাণও আমরা অন্য কিছু থেকে না দিয়ে আহসানুল ফাতাওয়া থেকেই তুলে ধরছি। আহসানুল ফাতাওয়াতে ৮ জুন ১৫° অনুযায়ী করাচির সময় লেখা হয়েছে ৪:২৯ মিনিট। এবং ৮ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত ১৫°-এর একই সময় লেখা হয়েছে; ৪:২৯ মিনিটি। অথার্ৎ ৮ থেকে ১৫ জুন এই মোট আট দিনের সময় একটিই লেখা হয়েছে। তাহলে সহজেই বুঝতে পারেন, ১১ ও ১২ জুনের সময় একটিই হবে; এই দুই দিনের মাঝে ১ মিনিটির ব্যবধান বলা সঠিক নয়।
৪. আরেকটি বিষয় হল, এখানে পুরোনো সময়সূচি অনুযায়ী ১১ ও ১২ জুন করাচির সময় লেখা হয়েছে যথাক্রমে ৪:১২ ও ৪:১১ মিনিট। এই পুরোনো সময়সূচি মানে ১৮° অনুযায়ী প্রণিত সময়সূচি। কিন্তু বাস্তবে করাচির নির্ভরযোগ্য কোনো সময়সূচিতে এমন সময় দেওয়া থাকতে পারে না। সঠিক কথা হল, হিসাব অনুযায়ী করাচিতে উভয় দিনই ১৮°-এর সময় হয় ৪:১৩ মিনিটে। NOAA Solar Calculator এবং এরকম নির্ভরযোগ্য অনলাইন সফটওয়্যার দ্বারাও এটিই প্রমাণিত।
মোটকথা, করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিট; ১০ ও ১১ মিনিটের কথা সঠিক নয়। এবং এই দুই তারিখেই করাচিতে ১৮°-এর সময় হয় ৪:১৩ মিনিটে; ৪:১২ ও ৪:১১ মিনিটের কথা বলা সঠিক নয়।
এখন ভেবে দেখুন, করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিট। যা আহসানুল ফাতাওয়া দ্বারাই প্রমাণিত। আহসানুল ফাতাওয়াতেই লেখা হয়েছে যে, করাচিতে ১৫°-এর সময় হয় ৪:২৯ মিনিটে। আহসানুল ফাতাওয়ার এই দুই হিসাব দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, টান্ডুআদমে ১৫°-এর সময় হয় ৪:২৯-এর ৯ মিনিট আগে; ৪:২০ মিনিটে। অথচ আহসানুল ফাতাওয়াতে আছে, তারা সবাই সর্বসম্মতিক্রমে পরিষ্কার আকারে সুবহে সাদিক দেখেছেন ৪:১৭ ও ৪:১৯ মিনিটে। অর্থাৎ ১৫°-এর তিন মিনিট আগে। ডিগ্রি অনুযায়ী যা ১৫.৫° হয়ে যায়। অতএব আহসানুল ফাতাওয়া দ্বারাই প্রমাণিত যে, টান্ডুআদমে তারা সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন ঠিক ১৫°-এ নয়; বরং এর আগেই; ১৫.৫°-এ।
৫. এ তো গেল সুবহে সাদিকের বিষয়। এখন সুবহে কাযিবের বিষয়টি দেখুন। এ সম্পর্কে তাতে বলা হয়েছে, ১২ জুন ৪টার সময় তারা যে সুবহে কাযিব দেখেছেন তা ঠিক ১৮°-এর সময় ছিল। আর এর হিসাব এভাবে দেওয়া হয়েছে যে, করাচির পুরোনো সময়সূচিগুলোতে (১৮° অনুযায়ী) ১১ জুন সুবহে সাদিকের সময় লেখা নাকি ৪:১১ মিনিট। আর করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ধরা হয়েছে ১১ মিনিট। এ হিসেবে ৪:১১ এর ১১ মিনিট আগে ঠিক ৪ টার সময় ১৮°-এর সময় হয়। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৭)
কিন্তু আমাদের পূর্বের আলোচনা থেকে বিষয়টি পুরো স্পষ্ট যে, আহসানুল ফাতাওয়ার এই হিসাব পুরোপুরিই ভুল। ১২ জুন করাচিতে ১৮°-এর সময় হয় ৪:১১ মিনিটে- এ কথাও ভুল। এবং করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ১১ মিনিটের- এ কথাও ভুল। এক্ষেত্রে সঠিক হিসাব হল, ১২ জুন করাচিতে ১৮°-এর সময় ৪:১৩ মিনিটে এবং করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিটের। সে হিসেবে ৪:১৩-এর নয় মিনিট আগের সময় হয় ৪:০৪ মিনিট। অর্থাৎ এই হিসাব অনুযায়ী টান্ডুআদমে ১৮°-এর সময় হয় ৪:০৪ মিনিটে। অথচ এই দিন তারা সর্বসম্মতভাবে ঠিক চারটার সময় সুবহে কাযিব দেখেছেন। সুতরাং এই দিন তারা সুবহে কাযিব দেখেছেন ১৮°-এর প্রায় চার মিনিট আগে; ১৮°-এ নয়।
৬. এ পর্যন্ত আলোচনাগুলো বোধগম্য হয়ে থাকলে তো বোঝার বাকি থাকে না যে, করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান সুনির্ধারিতভাবে ৯ মিনিট না বলে কেন ১০/১১ মিনিটের কথা বলা হয়েছে, এবং ১১ ও ১২ জুন করাচিতে ১৮°-এর সময় ৪:১৩ মিনিট না লিখে কেন এক দিনের জন্য ৪:১২ এবং আরেক দিনের জন্য ৪:১১ লেখা হয়েছে। এই ভুল বিবরণটি হয়তো বেখেয়ালিতে হয়েছে। কিন্তু তা যে বড় রহস্যময় তাতে কোনো সন্দেহ নেই। টান্ডুআদমে ১২ জুন তাঁরা সুবহে কাযিব দেখেছেন ঠিক চারটার সময়। এখন যদি করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিট বলা হয় এবং ঐ দিন করাচিতে ১৮°-এর সময় ৪:১৩ মিনিট বলা হয় তাহলে এর দ্বারা টান্ডুআদমে ১৮°-এর সময় চারটা বাজার চার মিনিট পর হয়ে যায়। অথচ তাঁরা সেখানে ঐ দিন সুবহে কাযিব দেখেছেন ঠিক চারটার সময়। তাহলে এর দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার দাবি ভুল সাব্যস্ত হয়ে যায় যে, সুবহে কাযিব ১৮°-এ শুরু হয়; এর আগে নয়। এমনটি যেন না হয় সে জন্য একদিক থেকে দুই মিনিট বাড়ানো হয়েছে এবং আরেক দিকে দুই মিনিট বাড়ানো হয়েছে। এভাবে দুই দিকে দুই মিনিট করে মোট চার মিনিট বাড়িয়ে টান্ডুআদমে ১২ জুন চারটার সময়কে ১৮°-এর সময় বানানো হয়েছে!
আর ১১ জুন সেখানে তাঁরা সুবহে সাদিক দেখেছেন ৪:১৯ মিনিটে এবং ১২ জুন ৪ : ১৭ মিনিটে। আর করাচিতে এই দুই দিন ১৫°-এর সময় হয় ৪:২৯ মিনিটে। এখন যদি বলা হয় যে, করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ৯ মিনিট তাহলে সেখানে ১৫°-এর সময় হয়ে যায় ৪:২০ মিনিট। যার দ্বারা উভয় দিনই তাঁদের সুবহে সাদিক মুশাহাদার সময় (৪:১৯ ও ৪:১৭) ১৫°-এর আগে হয়ে যায়। ফলে এর দ্বারাও উল্টো আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিই ভুল প্রমাণিত হয়ে যায়। কিন্তু যদি করাচি ও টান্ডুআদমের মাঝে সময়ের ব্যবধান ১১ মিনিট ধরা হয় এবং ১১ জুন থেকে ১২ জুনের সময় এক মিনিট আগে ধরা হয় তাহলে আর সমস্যা থাকে না! তখন উভয় দিন সুবহে সাদিক মুশাহাদার সময় ১৫° অনুযায়ী হয়ে যায়।
মোটকথা, উক্ত দিনগুলোর সময়ের ভুল বিবরণ পেশ করার কারণ যাই হোক তা যে ভুল ও অবাস্তব এতে কোনো সন্দেহ নেই। সঠিক সময় হিসেবে টান্ডুআদম ও করাচির মুশাহাদা দ্বারা আহসানুল ফাতাওয়ার কোনো দাবিই সঠিক প্রমাণিত হয় না; রবং উল্টো ভুলই প্রমাণিত হয়।
১৫°-এ ‘ইসফার’ হয়ে যায়
সুবহে সাদিক যখন শুরু হয় তখন এর আলো অনেক হাল্কা ও ক্ষীণ থাকে। যা কুরআন মাজীদেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়েছে। কুরআন মাজীদে এটিকে اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ বা সাদা রেখা দ্বারা ব্যক্ত করা হয়েছে। আবু হাইয়ান আন্দালুসী রাহ. [৭৪৫ হি.] এ আয়াতের তাফসীরে বলেন-
وَشُبِّهَ بِالْخَيْطِ وَذَلِكَ بِأَوّلِ حَالِهِ، لِأَنّهُ يَبْدُو دَقِيقًا ثُمّ يَرْتَفِعُ مُسْتَطِيرًا.
অর্থাৎ সুবহে সাদিককে اَلْخَيْطُ বা সুতার সাথে তাশবীহ দেওয়া হয়েছে এর শুরুর অবস্থা বিবেচনায়। কেননা সুবহে সাদিক শুরু হয় হালকা ও ক্ষীণভাবে। এরপর ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। (আলবাহরুল মুহীত ফিত তাফসীর ২/২১৬)
আরো দেখুন : মাফাতীহুল গায়ব (তাফসীরে কাবীর), ফখরুদ্দীন রাযী [৬০৬ হি.] ৫/২৭৩; তাফসীরে খাযিন ১/১১৭; উমদাতুল কারী ১০/২৯২
অতএব এই আয়াত থেকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, সুবহে সাদিক যখন শুরু হয় তখন দিগন্তে খুবই হালকা ও ক্ষীণ আলো দেখা যায়; দিগন্ত তখন বেশি উজ্জ্বল থাকে না। তাছাড়া বিভিন্ন হাদীস দ্বারাও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত আছে যে, সুবহে সাদিকের শুরুতে রাত অনেক অন্ধকার থাকে। হাদীসের পরিভাষায় এ সময়টির নাম اَلْغَلَسُ (গালাস)। যার অর্থই অন্ধকার। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সময়ে ফজরের নামায পড়েছেন এবং নামায শেষ করার পরও অন্ধকারের কারণে সাহাবীগণ একে-অপরকে চিনতে পারতেন না।
দেখুন : সহীহ বুখারী, হাদীস ৮৭৩; শরহু মাআনিল আছার, ইমাম তহাবী, হাদীস ১০৫৮; মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালিসী, হাদীস ১৭৬৩; ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ, বূসিরী, হাদীস ৮৭৩
আর ‘গালাস’ শেষ হওয়ার (অন্ধকার কমার) পর যখন চতুর্দিক অনেকটা আলোকিত হয়ে যায় সে সময়ের নাম اَلْإِسْفَارُ (ইসফার)। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায এ সময় পড়ার আদেশ করেছেন এবং বলেছেন, এ সময় ফজর পড়লে সওয়াব বেশি। (জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫৪; শরহু মাআনিল আছার, হাদীস ১০৬৫-১০৭০; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালীসী, হাদীস ১০০৩; ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ, বূসিরী, হাদীস ৮৩৯)
ইমাম নাজমুদ্দীন উমর নাসাফী রাহ. [৫৩৭ হি.] এই اَلْغَلَسُ (গালাস)-এর ব্যাখ্যায় বলেন-
ويصلي الفجر بغلس، وأصله ظلام آخر الليل، ويراد به حين يطلع الفجر الثاني من غير تأخير قبل أن يزول الظلام وينتشر الضياء.
অর্থাৎ ‘গালাস’ হল শেষ রাতের অন্ধকার। আর এটি হল, ঠিক সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার সময়; অন্ধকার কেটে যাওয়ার এবং আলো ছড়িয়ে পড়ার আগমুহূর্ত। (তিলবাতুত তালাবা, পৃ. ৩১)
বিষয়টি যেহেতু সরাসরি কুরাআন ও হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত, তাই এটি সবার নিকটই স্বীকৃত। আরো দেখুন : শরহু সুনানি আবী দাউদ, বদরুদ্দীন আইনী ২/২৪৫; আননিহায়া ফী গারীবিল হাদীসি ওয়াল আছার ৩/৩৩৯; তাহযীবুল লুগাহ ৮/৬৯; লিসানুল আরব ৬/১৫৬; তাজুল আরুস ১৬/৩১০
মোটকথা, সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার পর পরই অনেক অন্ধকার থাকে; চারদিক খুব বেশি আলোকিত হয়ে যায় না; বরং চারদিক উজ্জ্বল ও আলোকিত হয় ইসফারের সময়। যার অনেক আগেই সুবহে সাদিক শুরু হয়ে যায়।
এই হল সুবহে সাদিক উদয়ের সময়কার আলোর ধরনের বিবরণ। অথচ মুশাহাদা দ্বারা প্রমাণিত যে, ১৫°-এ আলোর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায় এবং গালাসের সময় পার হয়ে ইসফারের সময় হয়ে যায়। আমাদের আলোচনায় পূর্বে উল্লেখিত কোনো কোনো মুশাহাদা দ্বারা এটিই প্রমাণিত। কিন্তু আমরা এখানে বিষয়টি প্রমাণ করে দেখাতে চাচ্ছি আহসানুল ফাতাওয়া দ্বারাই। আহসানুল ফাতাওয়ার একাধিক বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, ১৫°-এর সময় এর আলো اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ বা সাদা রেখার মত হালকা ও ক্ষীণ আকারে থাকে না; বরং তখন আলোর পরিমাণ বেড়ে اَلْإِسْفَارُ (ইসফার)-এর সময় হয়ে যায়।
আহসানুল ফাতাওয়ায় উল্লেখিত টান্ডুআদমের মুশাহাদার বক্তব্য ও এর উপর পর্যালোচনা আমরা একটু আগেই পড়ে এসেছি। প্রথম দিনের মুশাহাদার বিবরণে বলা হয়েছে, ঐ দিন (১১ জুন) মুশাহাদাকারী সবাই ঐকমত্যের সাথে ৪:১৯ মিনিটে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে (روشنی کا پورا تبین) দিগন্তে বিস্তৃত আকারের আলো দেখেছেন। এমনকি কারো কারো নিকট এই আলোটি আরো আগেই শুরু হওয়ার সন্দেহ হচ্ছিল। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৬)
আহসানুল ফাতাওয়ার এই কথা থেকে একদম পরিষ্কার, তখন গালাসের সময় ছিল না, বরং اَلْإِسْفَارُ (ইসফার)-এর সময় হয়ে গিয়েছিল। اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ বা সাদা রেখা আকারে সুবহে সাদিক এর অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। যা তাঁরা সময়মত দেখতে পারেননি।
দ্বিতীয় দিন (১২ জুন)-এর মুশাহাদার অবস্থাও এমনই ছিল। সেদিনও তারা সর্বসম্মতভাবে ৪:১৭ মিনিটে স্পষ্টভাবেই (واضح طور پر) সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৭৬) যার থেকেও স্পষ্ট, তাদের মুশাহাদার এই সময়টি اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ বা اَلْغَلَسُ (গালাস) পরবতীর্ اَلْإِسْفَارُ (ইসফার)-এর সময় ছিল। উপরন্তু ৪:১৯ ও ৪:১৭ মিনিটও ১৫°-এর সময় নয়। বরং ১৫°-এর সময় হয় আরো কিছুক্ষণ পর।
আহসানুল ফাতাওয়ার আরেকটি বক্তব্য দ্বারা বিষয়টি আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। তা হল-
تنبیہ:
تحقیق مذکور پر یہ اشکال پیش کیا جاتا ہے کہ اس وقت افق اتنا روشن ہو جاتا ہے کہ ہر دیکھنے والا اسے دن سمجھتا ہے۔
اس کا جواب یہ ہے کہ اسی لئے تو اس کو صبح صادق کہا جاتا ہے جس کو شریعت نے دن کے حکم میں قرار دیا ہے، اور اگر یہ مطلب ہے کہ اس وقت سے قبل ہی روشنی تیز ہو جاتی ہے، تو اس کا جواب یہ کہ روشنی میں کمی وبیشی امر نسبی ہے، شریعت نے اس کا اعتبار نہیں کیا، خوب سمجھ لے کہ شرعاً صبح صادق کا مدار روشنی کی زیادتی پر نہیں، بلکہ اس کے طول وعرض پر ہے، روشنی خواہ کتنی ہی زیادہ ہو جائے مگر جب تک اس کے طول سے عرض زیادہ نہوگا یہ صبح کاذب ہے، اگر صبح کاذب کو دن سمجھنے کی غلطی عام نہوتی تو حضور صلوسلم عل "تمہیں فجر مستطیل دھوکہ نہ دے" ارشاد نہ فرماتے۔
এখানে বলা হয়েছে, ১৫°-এ সুবহে সাদিকের বক্তব্যের উপর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যে, তখন দিগন্ত এত বেশি আলোকিত হয়ে যায় যে, যে-ই দেখে তার কাছে তখন দিনের মত মনে হয়। (যার দ্বারা বোঝা যায়, সুবহে সাদিক মূলত এর আরো আগেই হয়ে যায়)।
এটি আহসানুল ফাতাওয়ার ১৫°-এ সুবহে সাদিকের বক্তব্যের উপর মৌলিক একটি প্রশ্ন। যা আহসানুল ফাতাওয়াতেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর জবাব দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কী জবাব দেওয়া হয়েছে সেটি হল দেখার!
আহসানুল ফাতাওয়াতে এই প্রশ্নটি উল্লেখ করার পর এর জবাবে বলা হয়েছে- ‘এজন্যই তো এটিকে সুবহে সাদিক বলা হয়, যাকে শরীয়ত দিনের অন্তভুর্ক্ত আখ্যা দিয়েছে। (অতএব তখন দিনের মত মনে হতেই পারে। যেমনটি প্রশ্নে বলা হয়েছে)। আর প্রশ্নটির উদ্দেশ্য যদি এই হয় যে, ১৫°-এর আগেই আলো তীব্র হয়ে যায় তাহলে এর উত্তর হল, আলো কম-বেশি হওয়া আপেক্ষিক বিষয়। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার, আলো বেশি হওয়া আর কম হওয়ার উপর শরীয়ত সুবহে সাদিকের ভিত্তি রাখেনি; বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে সুবহে সাদিকের ভিত্তি, আলোটির প্রশস্ততা বেশি, নাকি এর দৈর্ঘ্য বেশি- এর উপর। আলো যতই বেড়ে যাক, কিন্তু এর দৈর্ঘ থেকে প্রশস্ততা যদি বেশি না হয় তবে এটি সুবহে কাযিব। সুবহে কাযিবকে দিন মনে করার ভুল যদি ব্যাপক না হত তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ইরশাদ করতেন না যে, তোমাদেরকে সুবহে কাযিব যেন ধোঁকা না দেয়। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৬১)
আহসানুল ফাতাওয়ার এই উত্তরটি ভালোভাবে ভেবে দেখুন। এতে প্রশ্নের দাবিটির পরিপূর্ণ সমর্থন করা হয়েছে যে, ১৫°-এর আগেই আলোর তীব্রতা বেড়ে যায়; যখন দিনের মত মনে হয়। উত্তরটিতে একবারও বলা হয়নি যে, এ কথাটি সঠিক নয়; তখন আলো এত বেশি থাকে না; বরং এই কথাটিকে পরিপূর্ণ সমর্থন করেই এর জবাব দেওয়ার চেষ্ট করা হয়েছে।
অথচ সুবহে সাদিক যে اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ -এর মত খুবই হালকা ও ক্ষীণ আকারে প্রকাশিত হয় তা সরাসরি কুরআনুল কারীম দ্বারাই প্রমাণিত এবং তখন যে দিনের মত মনে হয় না; বরং রাতের অন্ধকার বাকি থাকে- সেটিও সরাসরি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
তাহলে ১৫°-এ আলোর তীব্রতা যদি এ পরিমাণ বেড়ে যায় যে, তখন দিনের মত মনে হয় তবে তো এই আলোটিকে কখানোই اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ বা সাদা রেখা বলা যাবে না; এবং এটি اَلْغَلَسُ (গালাস)-এর সময় হতে পারে না; বরং এটি হবে اَلْإِسْفَارُ (ইসফার)-এর সময়। অতএব আহসানুল ফাতাওয়ার এই বক্তব্যগুলো দ্বারাই প্রমাণিত যে, সুবহে সাদিক মূলত শুরু হয় ১৫°-এর বেশ আগেই। ১৫°-এর সময় যে আলো প্রকাশিত হয় তা কখনোই اَلْخَیْطُ الْاَبْیَضُ -এর মত হালকা ও ক্ষীণ আকারে দেখা যাবে না।
অতএব ১৫°-এর উপর উত্থাপিত এই প্রশ্নটিই সঠিক ও দলীলসম্মত। কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়াতে এর জবাবে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, এর দ্বারা কোনোভাবেই এই প্রশ্নের জবাব হয় না। কেননা এখানে সুবহে সাদিক নির্ণয়ের যে মূলনীতি ও মানদণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে তা তো সবার নিকটই স্বীকৃত। এতে কারো দ্বিমত নেই। যারা ১৫°-এর আগে সুবহে সাদিক হওয়ার কথা বলেন তাদের নিকটও সুবহে সাদিকের পরিচয় ও তা নির্ণয়ের মানদণ্ড এটিই। এই পরিচয় ও মানদণ্ড অনুযায়ীই তারা ১৫°-এর বেশ আগে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। এমনকি টান্ডুআদমের মুশাহাদার সময় দিগন্ত ধুলিকণাযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও উভয় দিন সবাই ১৫°-এর আগে সুবহে সাদিক মুশাহাদা করেছেন। সুতরাং এখানে শুধু শুধু সুবহে সাদিক নির্ণয়ের মানদণ্ড উল্লেখ করে দিয়ে মূল বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার দ্বারা নিজের দাবি কিছুতেই প্রমাণিত হবে না।
আরেকটি বিষয়, আহসানুল ফাতাওয়াতে এই বক্তব্যটির শেষে বলা হয়েছে-
‘সুবহে কাযিবকে দিন মনে করার ভুল যদি ব্যাপক না হত তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করতেন না যে, তোমাদেরকে সুবহে কাযিব যেন ধোঁকা না দেয়।’ (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৬১)
এটিও সম্পূর্ণ অনর্থক কথা। সুবহে কাযিবকে দিন মনে করার মানে কী? দিনের মত আলোকিত হওয়া? এ তো স্পষ্ট বাস্তবতাবিরোধী কথা। তখন তো জমিন পুরোই অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে।
আর যদি বলা হয়, এর দ্বারা উদ্দেশ্য দিনের হিসাব কখন থেকে শুরু হয়- তাহলেও এ কথা সঠিক নয়। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে দিন শুরু হয় সুবহে সাদিক থেকে। আর সাধারণ হিসেবে দিন শুরু হয় সূযোর্দয় থেকে। সুবহে কাযিব থেকে কেউই দিনের হিসাব করে না। এটি তো স্পষ্ট কথা।
তারপর দেখুন, এখানে বলা হয়েছে, সুবহে কাযিবকে দিন মনে করার ভুল ব্যাপক হওয়ার কারণেই নাকি হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, তোমাদেরকে সুবহে কাযিব যেন ধোঁকা না দেয়। অথচ হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَغُرَّنَّكُمْ مِنْ سَحُورِكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ، وَلَا بَيَاضُ الْأُفُقِ الْمُسْتَطِيلُ هَكَذَا، حَتّى يَسْتَطِيْرَ هَكَذَا وَحَكَاهُ حَمّادٌ بِيَدَيْهِ، قَالَ: يَعْنِي مُعْتَرِضًا.
বিলালের আযান এবং আকাশ প্রান্তের এ লম্বা শুভ্র আলো যেন তোমাদেরকে সাহরি খাওয়ার ব্যাপারে ধোঁকায় না ফেলে, যতক্ষণ না এ শুভ্র আলো (পূর্ব দিগন্তে) এভাবে (অর্থাৎ উভয় দিকে) বিস্তৃত হয়। ... (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৪)
আরেক বর্ণনায় এসেছে-
لَا يَغُرَّنَّكُمْ نِدَاءُ بِلَالٍ، وَلَا هَذَا الْبَيَاضُ حَتّى يَبْدُوَ الْفَجْرُ - أَوْ قَالَ - حَتَّى يَنْفَجِرَ الْفَجْرُ.
বিলালের আযান এবং এই শুভ্র (লম্বা) আলো (সুবহে কাযিব) যেন তোমাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে, যতক্ষণ না ফজর (সুবহে সাদিক) প্রকাশিত হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৪)
আরেক বর্ণনায় আরো স্পষ্ট ভাষায় এসেছে-
لَا يَمْنَعَنَّـكُمْ مِنْ سَحُوْرِكُمْ أَذَانُ بِلَالٍ، وَلَا الفَجْرُ المُسْتَطِيلُ، وَلَكِنِ الفَجْرُ المُسْتَطِيرُ فِي الأُفُقِ.
বিলালের আযান এবং দিগন্তের দৈর্ঘ্যে প্রকাশিত আলো (সুবহে কাযিব) তোমাদের যেন সাহরী থেকে বাধা না দেয়; বরং (সাহরী থেকে বাধাদানকারী হল) দিগন্তের উভয়দিকে বিস্তৃত ফজরের আলো (অথার্ৎ সুবহে সাদিক)। (জামে তিরমিযী, হাদীস ৭০৬)
বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য আমরা এখানে কয়েকটি বর্ণনাই উল্লেখ করলাম। যার থেকে স্পষ্ট যে, হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, কেউ যেন সুবহে সাদিক নির্ধারণে সুবহে কাযিব দ্বারা বিভ্রান্ত না হয় এবং সুবহে কাযিবকেই সুবহে সাদিক মনে করে তখন থেকেই সাহরী খাওয়া বন্ধ না করে দেয়। সুবহে কাযিবকে যেন কেউ দিন না মনে করে- এমন কথা কোনো হাদীসে নেই। এমন কথা হাদীস শরীফে থাকবেই কীভাবে?!
এই মুশাহাদা নির্ভর আহসানুল ফাতাওয়ার বাস্তবতা বিরোধী দাবিসমূহ ও এর বিশ্লেষণ
আহসানুল ফাতাওয়াতে উল্লেখিত মুশাহাদার বাস্তব চিত্র এই; যার দ্বারা আমরা দেখলাম, আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিই বরং উল্টো ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী প্রমাণিত হয়। কিন্তু খুবই দুঃখজনক হল, এই মুশাহাদার উপর ভিত্তি করে তাতে এমন এমন দাবি করা হয়েছে, যার বিন্দুমাত্র কোনো বাস্তবতা নেই।
এই মুশাহাদা সম্পর্কে আহসানুল ফাতাওয়ার একটি দাবি আমরা এই আলোচনার শুরুতেই উল্লেখ করেছি। সেখানে বলা হয়েছে-
حضرت مفتی محمد شفیع صاحب کی سرکردگی میں گیارہ علماء کے تین روز تک مشاہدات سے متعلق حضرت مفتی صاحب کی خود نوشتہ روئیداد اور اسکے نتائج اسقدر واضح اور بدیہی ہیں کہ اسکے بعد شک و شبہہ کی کوئی گنجائش باقی نہیں رہتی، اس سے بڑھ کر اور کیا دلیل ہو سکتی ہے؟ فبأي حديث بعده يؤمنون؟
অর্থাৎ এই মুশাহাদা আহসানুল ফাতাওয়ার দাবির সপক্ষে এতই সুস্পষ্ট ও মজবুত দলীল, যার পর আর কোনো সংশয়-সন্দেহের অবকাশ বাকি থাকে না। এর চেয়ে বড় দলীল আর কী হতে পারে?-
فبأي حديث بعده يؤمنون.
‘এরপর কোন্ কথায় তারা আর বিশ্বাস করবে?’। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৫৯)
দেখুন, এই মুশাহাদার উপর আহসানুল ফাতাওয়ার কী পরিমাণ আস্থা ও ভরসা! নিজ দাবির সপক্ষে আহসানুল ফাতাওয়ার বক্তব্য অনুযায়ী এটিই সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী দলীল। অথচ আমরা দেখলাম, এই সবচেয়ে বড় শক্তিশালী দলীলটিও উল্টো আহসানুল ফাতাওয়ার দাবিটিকেই ভুল ও বাস্তবতা বিরোধী সাব্যস্ত করে।
আহসানুল ফাতাওয়ার অন্যত্র বলা হয়েছে-
১৮ درجہ زیر افق کے وقت دائرہ کی شکل ہرگز نظر نہیں آسکتی، جب چاہیں جہاں چاہیں مشاہدہ کر کے فیصلہ کریں، تمام فلکیین اس وقت ظاہر ہونے والی روشنی کو مستطیل بتاتے ہیں، اور گیارہ علماء کے تین روز تک مشاہدات میں بھی یہ روشنی مستطیل ہی نظر آئی، جیساکہ حضرت مفتی محمد شفیع صاحب رحمۃ اللہ علیہ کی خود نوشتہ روئیداد میں تحریر ہے۔
১৮°-এর সময় বৃত্তাকারের আলো (সুবহে সাদিক) কখনোই দেখা সম্ভব নয়। যখন চান যেখানে চান মুশাহাদা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সকল জ্যোতির্বিজ্ঞানী এই সময়ে প্রকাশিত আলোটি উপরের দিকে লম্বালম্বি আকারের বলে থাকেন। এবং এগারোজন আলেমের তিন দিনের মুশাহাদাতেও এই আলো উপরের দিকে লম্বালম্বি আকারেই দেখা গেছে। যেমনটি হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী ছাহেব রাহ.-এর স্বলিখিত রেজুলেশনে লিপিবদ্ধ আছে। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/২২৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে-
یہ امر احادیث اور فقہ سے ثابت ہے اور اس پر پوری امت کا اجماع ہے کہ صبح کاذب کی روشنی افق سے اوپر کو مستطیل ہوتی ہے، اور صبح صادق معترض شمالا جنوبا پھیلنے والی ہوتی ہے، اور بقول بیرونی نصف دائرہ کی شکل بن جاتی ہے، اس معیار کو مدنظر رکھ کر ہر شخص مشاہدہ کرکے یہ فیصلہ کر سکتا ہے کہ پرانے نقشوں کے وقت پر ظاہر ہونے والی روشنی صبح کاذب ہے، کیونکہ یہ مستطیل ہوگی، حضرت مفتی صاحب کی خود نوشتہ روئیداد کے مطابق بھی اس وقت ٹنڈوآدم اور کراچی میں طولانی روشنی نظر آئی۔
فلکیات قدیمہ میں بھی اس کی تصریح ہے کہ اس وقت ظاہر ہونے والی روشنی مستطیل ہوتی ہے، انہوں نے یہ فیصلہ رصدگاہ سے مشاہدات کے بعد کیا ہے، جب اس روشنی کے طول سے عرض زیادہ ہونے لگے گا تب صبح صادق کی ابتدا ہوگی، جس کا وقت میرے نقشے کے مطابق ہوگا، جیساکہ ٹنڈوآدم کے مشاہدات میں ہوا۔
এখানেও একই কথা আরো বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৫৯)
আরো দেখুন : আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৮০
এই বক্তব্যগুলোতে বারবার বলা হচ্ছে, এগারোজন আলেমের তিন দিনের মুশাহাদাতে ১৮°-এর সময় উপরের দিকে লম্বালম্বি আকারের আলো মুশাহাদা করা হয়েছে। অথচ তিন দিনের প্রথম দিন উপরের দিকে লম্বালম্বি আকারের আলো দেখার কোনো কথাই নেই। তৃতীয় দিন যা দেখেছেন তা ছিল অস্পষ্ট। তাই দৃঢ়তার সাথে তারা কিছু বলতে পারেননি। আর দ্বিতীয় দিন যে সময় এই ধরনের আলো দেখেছেন সেটি ছিল ১৮° থেকে তিন মিনিট আগের সময়। তাহলে বলুন, এতবার যে কথাগুলো বলা হচ্ছে তার বৈধতা কতটুকু? একে তো সুবহে কাযিব দেখেছেনই তিন দিনের এক দিন। কিন্তু বলছেন, তিন দিনই দেখেছেন। আর যে এক দিন দেখেছেন সেটিও ছিল ১৮°-এর আগে। কিন্তু বলা হচ্ছে ১৮°-এর সময়। এত স্পষ্ট বাস্তবতা বিরোধী কথা বলার কী প্রয়োজন ছিল?!
তাতে অন্যত্র আরো বলা হয়েছে-
پرانے نقشوں کے وقت سے قبل متصل آپ کو کوئی روشنی ہرگز نظر نہیں آئے گی، ماہرین فلکیات جدیدہ وقدیمہ سب اس پر متفق ہیں کہ اس وقت سے قبل متصل افق پر کوئی روشنی نہیں ہوتی، ٹنڈوآدم اور کراچی کے مشاہدات سے متعلق حضرت مفتی صاحب کی روئیداد میں بھی اس کی تصریح موجود ہے کہ اس وقت افق پر کسی قسم کی روشنی نہیں تھی، اس سے بھی ثابت ہوا کہ پرانے نقشوں میں صبح کاذب کی اوقات ہیں۔
অর্থাৎ পুরোনো সময়সূচিগুলোতে প্রদত্ত সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে কোনো আলো কখনো দেখা যাবে না। প্রাচীন ও আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী সবাই একমত যে, এর ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে কোনো আলো দেখা যায় না। টান্ডুআদম ও করাচির মুশাহাদার বিবরণে হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর লিখিত রেজুলেশনেও সুস্পষ্ট বক্তব্য আছে যে, তখন দিগন্তে কোনো আলো ছিল না। এর দ্বারাও প্রমাণিত যে, পুরাতন সময়সূচিগুলোতে সুবহে কাযিবের সময় দেওয়া হয়েছে। (আহসানুল ফাতাওয়া ২/১৬০)
এই বক্তব্যে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়। প্রথমত, পুরোনো সময়সূচির (১৮°-এর) ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে কোনো আলো দেখা যাওয়া না যাওয়া কোনোটি দ্বারাই আমাদের আলোচ্য বিষয়ে কোনো কিছু ভুলও প্রমণিত হয় না, সঠিকও প্রমাণিত হয় না। এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ। সুতরাং বারবার এই অপ্রাসঙ্গিক বিষয়টির অবতারণার কোনো অর্থ নেই। যার উপর আমরা আলকাউসার আগস্ট ২০২০ সংখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরেছি।
দ্বিতীয়ত, এখানে বলা হয়েছে, হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.-এর লিখিত রেজুলেশনে সুস্পষ্ট বক্তব্য আছে যে, ‘পুরাতন সময়সূচিতে প্রদত্ত সময়ের (১৮°-এর) ঠিক আগ মুহূর্তে সঙ্গে সঙ্গে দিগন্তে কোনো আলো ছিল না।’ কিন্তু আহসানুল ফাতাওয়ার দেওয়া এই রেজুলেশনে আমরা এমন কোনো কথা পাইনি। সেখানে ঐ তারিখ ১৮°-এর সময় কখন হয় তা-ই তো উল্লেখ নেই। তাহলে এর সুস্পষ্ট বক্তব্য সেখানে থাকবে কীভাবে?! বরং এই বিবরণ দ্বারা যে উল্টো বিষয়ই প্রমাণিত হয় তা তো বলাই হল। কেননা তারা যে দিন সুবহে কাযিব দেখেছেন সেদিন তা দেখেছেন ১৮°-এর আগেই।
এই মুশাহাদার পরর্তী প্রেক্ষাপট
এই মুশাহাদার পর পুরোনো সময়সূচির বিষয়ে হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ও আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ.-সহ তখনকার উলামায়ে কেরামের অনেকটা সংশয় তৈরি হয়ে গিয়েছিল ঠিক, কিন্তু তারা মুফতী রশীদ আহমদ রাহ.-এর সাথে যে পুরোপুরি একমত হয়ে গিয়েছিলেন বিষয়টি এমন নয়। তাই তারা তখনও এভাবে চূড়ান্ত ফায়সালা দেননি যে, ১৫°-এর আগে সুবহে সাদিক হয় না। তাই ১৫°-এর আগ পর্যন্ত সেহরি খাওয়া জায়েয। যদিও তখন তাঁরা ফজরের নামায ১৫°-এর পর পড়তেই বলতেন। প্রচলিত সময়সূচির উপর সংশয় তৈরি হওয়ার কারণেই তাঁরা একটা সময় পর্যন্ত মাঝামাঝি এই কথাটি বলতেন।
অতএব এই মুশাহাদার মাধ্যমে যেহেতু চূড়ান্ত তাহকীক হয়নি তাই মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ও আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ.-এর জীবদ্দশাতে এ বিষয়ে আরো তাহকীক চলতে থাকে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনেকবার মুশাহাদা করা হয়। যার বিবরণ আমরা পূর্বে তুলে ধরেছি। এবং এর সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন কিতাবাদির আলোকেও বিষয়টির তাহকীক করা হয়। এসবকিছুর পর সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, পুরোনো সময়সূচিই সঠিক। তখন আল্লামা বানূরী রাহ. ও মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেন যে, আমরা রশীদ আহমদ ছাহেবের বক্তব্যের সাথে একমত নই।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ও আল্লামা বানূরী রাহ.-সহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামের মাশওয়ারা ও সহযোগিতায় তখন প্রফেসর আবদুল লতীফ সাহেব একটি পুস্তিকা তৈরি করেন। এতে মুশাহাদাসমূহের বিবরণ তুলে ধরা হয়। সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিভিন্ন কিতাবের আলোকেও বিষয়টির সমাধান পেশ করা হয়। মুফতী রশীদ আহমদ রাহ. ছাড়া পাকিস্তানের প্রায় সব মুহাক্কিক আলেমগণ এই পুস্তিকার সত্যায়ন করেন। তখন মুফতী রশীদ আহমদ রাহ. তার মতের উপর একা থেকে যান।
লক্ষণীয় যে, যদি এ কথাও মেনে নেওয়া হয় যে, হযরত মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ও আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ.-সহ অন্যান্য উলামায়ে কেরাম তখন আহসানুল ফাতাওয়ার সাথে পুরোই একমত হয়ে গিয়েছিলেন এবং ১৫°-এ সুবহে সাদিকের সিদ্ধান্তই তারা প্রদান করেছিলেন, তবেও কী সমস্যা? তারা যে এরপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন তা তো কোনো দলীল-প্রমাণ ছাড়া মনগড়াভাবেই করেননি; বরং যথাযোগ্য দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতেই পূর্বের ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। এটি তো বরং আমানতদার মুহাক্কিক আলিমের প্রমাণ। ফিকহে ইসলামীতে তো এর ভূরি ভূরি নযীর রয়েছে। আর তারা যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন তা মুফতী রশীদ আহমদ রাহ.-কে না জানিয়েও করেননি; বরং সকল দলীলাদি লিখিত আকারে তার কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম-এর ভাষায় তিনি এর কোনো উত্তর দেননি। তাহলে উভয় পক্ষের মাঝে পার্থক্য এই দাঁড়ালো- এক পক্ষ দলীল-প্রমাণের ভিত্তিতে পূর্বের ভুল মত থেকে ফিরে এসেছেন। কিন্তু অপর পক্ষের সামনে দলীল-প্রমাণ আসার পরও (কোনো ওজরের কারণে) আগের মতে বহাল থেকেছেন। তবে আমাদের ধারণা, মুফতী রশীদ আহমদ রাহ. তাঁর জীবদ্দশায় ১৮°-এর মত গ্রহণ করার ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা না দিলেও এটি যে সঠিক মত- তা একসময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্বীকার করতেন। যা শাব্বীর আহমাদ কাকাখিল সাহেবের বরাতে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুমের ভাষায় এই মুশাহাদা ও তার পরবর্তী প্রেক্ষাপট
সুবহে সাদিক ও নামাযের সময়সূচি নিয়ে মুফতী রশীদ আহমদ রাহ.-এর এই মতবিরোধের প্রতিটি ধাপের চাক্ষুষ সাক্ষী হলেন হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম। টান্ডুআদমের মুশাহাদায় তিনি উপস্থিত ছিলেন। এর আগে-পরে যেসব মজলিস হয়েছে সেগুলোতেও উপস্থিত ছিলেন। তারপর ১৯৭৩ সালে যে মুশাহাদা হল, যার ভিত্তিতে আকাবির উলামায়ে কেরাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন, সেই মুশাহাদায়ও তিনি উপস্থিত ছিলেন। এখন হযরতের যবানী থেকে আমরা টান্ডুআদমের মুশাহাদা ও এর পরবর্তী অবস্থার বিবরণ তুলে ধরছি। হযরত বলেছেন-
صبح صادق کے مسئلے پر حضرت والد صاحب اور حضرت مولا نا بنوری صاحب قدس سره کے زمانے میں مہینوں تحقیق جاری رہی، جس میں مشاہدات بھی کئے گئے اور حسابی تحقیق بھی کی گئی، آ پ نے ٹنڈوآدم کے جس مشاہدے کا ذکر فرمایا ہے وہ متعدد مشاہدات کا ایک مرحلہ تھا،کوئی حتمی مشاہدہ نہیں تھا، اس وقت یہ بات سب پر واضح تھی کہ مطلع گردآلود ہونے کی بناء پر اس مشاہدے کو كسی حتمی فیصلے کی بنیاد نہیں بنایا جاسکتا، اسکے بعد بھی متعدد مشاہدات کئے گئے، کتابی تحقیق بھی ہوئی، بالآخر حضرت والد صاحب اور حضرت مولانا بنوری صاحب دونوں نے حضرت مفتی رشید احمد صاحب مدظلہم کی تحقیق سے اختلاف اور اس پر عدم اطمینان کا اعلان فرمایا، اسکے بعد انہی حضرات کے حکم سے خود احقر نے ایک مفصل تحریر حضرت مفتی رشید احمد صاحب مدظلہم العالی کی خدمت میں بھیجی، جس میں ان بزرگوں کے فیصلے کی و جوہ عرض کی تھیں، حضرت مدظلہم کی طرف سے اس تحریر کا کوئی جواب بھی موصول نہیں ہوا، بہر صورت یہ مسئلہ مہینوں کی محنت اور تحقیق ومشاہدہ کے بعد کم از کم ہماری حد تک واضح ہو گیا، افسوس ہے کہ اس کے باوجود ہر موقع پر ٹنڈوآدم کے اس ناتمام مشاہدے کی بنیاد پر بزرگوں کو مطعون کرنے کی کوشش کی جاتی ہے اور ان حضرات کی بعد کی تحریروں، مشاہدات اور زبانی گفتگو کا کوئی حوالہ نہیں دیا جاتا۔
এখানে হযরত মাওলানা মুফতী তাকী উসমানী দামাত বারাকাতুহুম বলেছেন, হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. ও আল্লামা ইউসুফ বানূরী রাহ. মুশাহাদা ও কিতাবভিত্তিক যথাযথ তাহকীকের পরই মুফতী রশীদ আহমদ রাহ.-এর মত প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দেন। শেষে মুরব্বীগণের নির্দেশে তখন এ বিষয়ে বিস্তারিত একটি লেখা তিনি প্রস্তুত করেন। যাতে মুরব্বীগণের এই সিদ্ধান্তের দলীল-প্রমাণগুলো তিনি তুলে ধরেন এবং তা হযরত মুফতী রশীদ আহমদ রাহ.-এর কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু তার পক্ষ থেকে এর কোনো উত্তর আসেনি।
তারপর তিনি বলেন, আফসোস! এদতসত্ত্বেও সর্বত্র টান্ডুআদমের অসম্পূর্ণ মুশাহাদাটির ভিত্তিতে আমাদের বুযুর্গগণকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁদের পরবতীর্ লেখা, মুশাহাদাসমূহ এবং তাঁদের মৌখিক বক্তব্যগুলোর উদ্ধৃতি দেওয়া হয় না!! (ফাতাওয়া উসমানী ১/৩৮৭-৩৮৮) হ
(সামনের সংখ্যায় পড়ুন-
‘সুবহে সাদিক কখন শুরু? প্রসঙ্গ : আহসানুল ফাতাওয়ার উদ্ধৃতিগুলোর পর্যালোচনা’)