ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী ও ইমাম আবুল হাসান আশআরী
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মহান দুই মুখপাত্র
ইমাম মাতুরীদী
ইমাম মাতুরীদীর নাম মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ বিন মাহমুদ। উপনাম আবু মানসুর। সমরকন্দের নিকটবর্তী একটি মহল্লার নাম মাতুরীদ। তিনি সেখানকার অধিবাসী ছিলেন। সেদিকে সম্পৃক্ত করেই তাঁকে মাতুরীদী বলা হয়। বিভিন্ন শক্তিশালী আলামত থেকে বোঝা যায়, ২৪০ হিজরীর কাছাকাছি সময়ে তাঁর জন্ম হয়ে থাকবে। ওফাত হয়েছে ৩৩৩ হিজরীতে।
তাঁর উসতাযগণের মধ্যে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল রাহ. (২৪৮ হি.), ইমাম আবু নসর ‘ইয়াযী, ইমাম নুসাইর ইবনে ইয়াহইয়া বলখী (২৬৮ হি.) এবং ইমাম আবু বকর আহমদ ইবনে ইসহাক জুযজানী রাহ.-এর কথা বিশেষভাবে আলোচিত হয়।
আবু বকর জুযজানী হলেন ইমাম আবু সুলাইমান জুযজানীর শাগরিদ, যিনি ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শায়বানী (১৮৯ হি.)-এর শাগরিদ। আর ইমাম মুহাম্মাদ হলেন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম সুফিয়ান সাওরীসহ হাদীস, ফিকহ ও আকাইদের অনেক ইমামের শাগরিদ।
এমনিভাবে মুহাম্মাদ ইবনে মুকাতিল রাযী সরাসরি ইমাম মুহাম্মাদের শাগরিদ। অপর দিকে নুসাইর ইবনে ইয়াহইয়া ইমাম আবু সুলায়মান জুযজানীরও শাগরিদ আবার ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সামাআরও শাগরিদ। মুহাম্মাদ ইবনে সামাআ ইমাম আবু ইউসুফের শাগরিদ আর তিনি ইমাম আবু হানীফার শাগরিদ।
মাতুরীদী রাহ.-এর বিশিষ্ট উসতায ইমাম আবু নসর ‘ইয়াযী, যিনি ফকীহ হওয়ার পাশাপাশি অনেক বড় মুজাহিদ ছিলেন। এমনকি জীবনের শেষে তিনি আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাতের মহাসৌভাগ্যও লাভ করেন। তিনিও ফিকহশাস্ত্রে ইমাম আবু বকর জুযজানীর শাগরিদ ছিলেন।
এসব বলার উদ্দেশ্য হল, ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ.-এর ইলমী সনদ খায়রুল কুরূনের ইমামগণের সঙ্গে যুক্ত। তিনি উসূলুদ্দীন (ইসলামী আকাইদ), হাদীস, তাফসীর, ফিকহ ও উসূলের ইলম আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমামগণের নিকট হাসিল করেছেন। আর আমৃত্যু তিনি এই নির্ভরযোগ্য ইলমই তাঁর কিতাবসমূহে প্রচার করে গিয়েছেন।
তাঁর মূল ব্যস্ততা ছিল বিভিন্ন ভ্রান্ত ফেরকার খ-ন করা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পথ ও আদর্শকে দলীলের মাধ্যমে শক্তিশালী করা। সেজন্যই মুসলিম উম্মাহ তাঁকে ‘ইমামুল হুদা’ উপাধিতে স্মরণ করে। তাঁর কিতাবসমূহের মধ্যে تأويلات أهل السنة ও كتاب التوحيد মুদ্রিত হয়েছে।১
ইমাম আশআরী
ইমাম আশআরী রাহ.-এর উপনাম আবুল হাসান। নাম আলী ইবনে ইসমাঈল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবী আবু মূসা আশআরী রা.-এর বংশধর। জন্ম ২৬০হি. আর ওফাত ৩২৪ হি.। বসরার অধিবাসী।
এটা একটা আশ্চর্য বিষয় যে, আবুল হাসান আশআরী রাহ. প্রথমে মু‘তাযিলা ফেরকার বড় ব্যক্তিত্ব আবু আলী জুব্বায়ীর শাগরিদ ও তার আকীদার অনুসারী ছিলেন। আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে পরবর্তীতে তাঁর কাছে মু‘তাযিলাদের গোমরাহী স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে তিনি প্রকাশ্যে তওবা করে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদায় ফিরে আসেন এবং মু‘তাযিলাদের ভ্রান্ত আকীদাসমূহের খ-নে কলম ধরেন। তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকাইদের সমর্থনে এবং বিভিন্ন বাতিল ফেরকার সংশয়সমূহের অপনোদনে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু কিতাব রচনা করেন। তার কিতাবসমূহের মধ্যে
‘আলইবানা আন উসূলিদ দিয়ানা’(الإبانة عن أصول الديانة) ,
‘আল লুমা ফির রদ্দি আলা আহলিয যায়গি ওয়াল বিদা’(اللمع في الرد على أهل الزيغ والبدع) ,
‘মাকালাতুল ইসলামিয়্যীন ওয়াখতিলাফুল মুসাল্লীন’ ((مقالات الإسلاميين واختلاف المصلين
‘ইসতিহসানুল খওযি ফী ইলমিল কালাম’ (استحسان الخوض في علم الكلام) ইত্যাদি ছাপা হয়েছে।
আবুল হাসান আশআরী রাহ. ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর ইলম হাসিল করেছেন তাঁর সমসাময়িক শাফেয়ী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফকীহ আবু ইসহাক মারওয়াযী থেকে। তিনি আবুল আব্বাস ইবনে সুরাইজের শাগরিদ। ইবনে সুরাইজ হলেন ইমাম আবুল কাসেম আনমাতীর শাগরিদ আর তিনি ইমাম মুযানীর। আর মুযানী ছিলেন ইমাম শাফেয়ীর বিশিষ্ট শাগরিদ।
আবুল হাসান আশআরীর অন্যান্য উসতাযগণের মধ্যে যাকারিয়া সাজী (৩০৭ হি.), আবু খলীফা জুমাহী (২০৬ হি.-৩০৫ হি.), আবদুর রহমান ইবনে খালাফ বসরী (২৭৯ হি.) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এঁদের মধ্যে যাকারিয়া সাজী বহুত বড় হাফিযুল হাদীস এবং মুফতী ছিলেন। তিনি ইলমে ফিকহ হাসিল করেছেন ইমাম শাফেয়ী রাহ.-এর দুই শাগরিদ রবী‘ ও মুযানী রাহ. থেকে।
শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. লিখেছেন-
كان من أئمة الحديث، أخذ عنه أبو الحسن الأشعري مقالة السلف في الصفات، واعتمد عليها أبوالحسن في عدة تآليف.
যাকারিয়া সাজী ইলমে হাদীসের ইমামগণের মধ্যে অন্যতম। আবুল হাসান আশআরী আল্লাহ তাআলার সিফাত সংক্রান্ত বিষয়ে সালাফের নীতি তাঁর থেকেই গ্রহণ করেছেন এবং তিনি তাঁর বিভিন্ন কিতাবে এই নীতিরই অনুসরণ করেছেন। -সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, খ. ১৪ পৃ. ১৯৮
ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী বয়সে ইমাম আবুল হাসান আশআরীর বড় ছিলেন। তাঁর জন্ম ইমাম আশআরীর আগে হয়েছিল, তবে ওফাত হয়েছিল পরে। ওদিকে আশআরী রাহ.-এর মত তাঁর জীবনে দুই ভাগ ছিল না; তিনি শুরু থেকে ওফাত অবধি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি ও আদর্শের উপর অবিচল ছিলেন।
আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের এই ইমামদ্বয় ছিলেন ইমাম আবু জাফর তহাবী রাহ.-এর সমসাময়িক। ইমাম আবু জাফর তহাবী হিজরী তৃতীয় শতকের শেষার্ধে ও চতুর্থ শতকের প্রথম এক-চতুর্থাংশে মিসরে ইলমে হাদীস ও ইলমে ফিকহের বড় ইমামগণের অন্যতম ছিলেন। আকীদার দিক থেকে তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের ইমাম ছিলেন আর মাযহাবের দিক থেকে হানাফী মাযহাবের ফকীহ ছিলেন। তাঁর জন্ম ২৩৯ হিজরীতে আর ওফাত ৩২১ হিজরীতে।
হাদীস শাস্ত্রে তাঁর রচিত ‘শরহু মাআনিল আসার’ ও ‘শরহু মুশকিলিল আসার’ হল তাজদীদী কিতাব। ইলমে ফিকহ ও ইলমে তাফসীরেও তাঁর লিখিত কিতাবগুলো সর্বজন সমাদৃত। তিনি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকাইদ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত কিতাব রচনা করেন, যা ‘আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা’ নামে পরিচিত। সমগ্র পৃথিবীতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের নীতি ও আদর্শের মুখপত্র হিসেবে এই কিতাবটি গ্রহণ করা হয়েছে।
এই পুস্তিকার শুরুতে ইমাম তহাবী রাহ. লিখেছেন-
هذا ذكر بيان عقيدة أهل السنة والجماعة على مذهب فقهاء الملة، أبي حنيفة النعمان بن ثابت الكوفي، وأبي يوسف يعقوب بن إبراهيم الأنصاري، وأبي عبد الله محمد بن الحسن الشيباني، رضوان الله عليهم أجمعين، وما يعتقدون من أصول الدين.
ইমাম তহাবী রাহ. এখানে বলেন, তিনি এই পুস্তিকায় আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা বর্ণনা করবেন। আর এসব আকীদা তিনি হানাফী মাযহাবের প্রথম সারির তিন ইমাম (ইমাম আবু হানীফা রাহ. ৮০ হি.-১৫০হি., ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. ১১৩ হি.- ১৮২ হি. ও ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান ১৩২ হি.-১৮৯ হি.)-এর রেওয়ায়েত ও আকীদা মোতাবেক বর্ণনা করবেন।
যদ্দুর জানি, ইতিহাসে এমন কোনো বর্ণনা সংরক্ষিত নেই, যার দ্বারা বোঝা যায়, এই ইমামত্রয়ের অর্থাৎ ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী, ইমাম আবুল হাসান আশআরী ও ইমাম আবু জাফর তহাবী পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছে। তবে যেহেতু এই তিনজনই ইলমে ওহী ও উলূমে শরীয়তে পারদর্শী ছিলেন এবং দ্বীন ও ইলমে দ্বীন নিয়মমাফিক সালাফে সালেহীনের স্থলবর্তী ইমামগণ থেকে হাসিল করেছেন সেজন্য তাঁরা সকলে একই গন্তব্যে পৌঁছেছেন এবং ইসলামী আকীদার প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়ে তাঁরা যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন তার ফলাফল একই হয়েছে। তিনজন একই সময়ে ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাসলাক ও নীতি-আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। পার্থক্য এটুকু যে, ইমাম তহাবী সংক্ষেপে শুধু মৌলিক আকীদাগুলো উপস্থাপন করেছেন। আর ইমাম মাতুরীদী ও ইমাম আশআরী সেই আকীদাগুলো ব্যাখ্যা ও দলীলসহ সবিস্তারে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি সেসব আকীদার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভ্রান্ত ফেরকা বিকৃতির যে অপচেষ্টা চালিয়েছে তার খ-নও করেছেন। নতুবা মূল আকীদার বিষয়ে এই তিন ইমামের আলোচনায় মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।
এজন্যই আমরা দেখি, মাতুরীদী মাসলাকের অনুসারী অনেক আলেম ‘আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা’-এর ব্যাখ্যা লিখেছেন। তবে তাদের কেউই ইমাম তহাবীর সঙ্গে মতবিরোধ করেননি। এমনিভাবে আশআরী আলেমগণও ‘আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা’-এর সঙ্গে একমত। এই পুস্তিকা তাদের নিকটও গ্রহণযোগ্য।
আহলুস সুন্নাহ আশআরী বা মাতুরীদী কেন?
এখানে এই কথা স্পষ্ট করে দেয়া জরুরি যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা ما أنا عليه وأصحابي (যে পথে আমি ও আমার সাহাবীরা আছি।)-এর বাস্তবরূপ। চতুর্থ শতাব্দী থেকে এই আকীদার অনুসারী অধিকাংশ মানুষকে আশআরী বা মাতুরীদী বলা হয়। এর কারণ হল, আকীদায়ে আহলে সুন্নতের সংরক্ষণ ও এ বিষয়ে উদ্ভূত বিভিন্ন বাতিল ফেরকার খ-নে এই দুই ইমাম অধিক পরিচিতি লাভ করেন। মুসলিম উম্মাহ তাঁদের এই খেদমত গ্রহণ করে। সেজন্য তাঁদের মাসলাকের অনুসারীগণ ‘মাতুরীদী’ বা ‘আশআরী’ নিসবতে পরিচিতি লাভ করেন।
এই বাস্তবতাটি একাধিক আলেম স্পষ্টভাবে আলোচনা করেছেন। আমরা এখানে কয়েকজন মনীষীর বক্তব্য উদ্ধৃত করব।
আল্লামা মুরতাযা যাবীদী (১২০৫ হি.) রাহ. লেখেন-
"وليعلم أن كلا من الإمامين أبي الحسن وأبي منصور رضي الله عنهما وجزاهما عن الإسلام خيرا، لم يُبْدِعا من عندهما رأيا، ولم يَشْتَقّا مَذْهَبا، إنما هما مُقَرِّران لمذاهب السلف، مُناضلان عما كانت عليه أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم، فأحدهما قام بنصرة نصوص مذهب الشافعي وما دلت عليه، والثاني قام بنصرة نصوص مذهب أبي حنيفة وما دلت عليه، وناظر كل منهما ذوي البدع والضلالات، حتى انقطعوا ووَلّوا مُنهزمين.
وهذا في الحقيقة هو أصل الجهاد الحقيقي (من أنواع الجهاد باللسان والقلم)، الذي تقدمت الإشارة إليه، فالانتساب إليهما إنما هو باعتبار أن كلا منهما عقد على طريق السلف نطاقا، وتمسك وأقام الحجج والبراهين عليه، فصار المقتدي به في تلك المسائل والدلائل يسمى أشعريا وماتريديا.
وذكر العز بن عبد السلام أن عقيدة الأشعري أجمع عليها الشافعية والمالكية والحنفية وفضلاء الحنابلة، ووافقه على ذلك من أهل عصره شيخُ المالكية في زمانه أبو عمرو ابن الحاجب، وشيخُ الحنفية جمال الدين الحصيري، وأقره على ذلك التقي السبكي فيما نقله عنه ولده التاج "২
মুরতাযা যাবীদী রাহ.-এর এই বক্তব্য তাঁর কিতাব ‘ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন’-এর দ্বিতীয় খণ্ডের শুরুতে (২ : ৬-৭) রয়েছে। ইতহাফ হল ইমাম গাযালী রাহ.-এর কিতাব ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ। ‘ইহইয়া’-এর দ্বিতীয় অধ্যায় হল قواعد العقائد অর্থাৎ আকীদা সংক্রান্ত নীতিমালা। এর ব্যাখ্যায় শুরুতে আল্লামা যাবীদী রাহ. ভূমিকা হিসেবে যা লিখেছেন তাতে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ’ বলতে কাদের বুঝায় সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছেন। উচ্চতর স্তরে অধ্যয়নরত তালিবে ইলমগণ এটি মুতালাআ করতে পারেন। সেখানে আল্লামা যাবীদী রাহ. বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে এ বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন যে, ইমাম মাতুরীদী রাহ. ও ইমাম আশআরী রাহ. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা সংক্রান্ত ইলম কোন্ মাধ্যমে হাসিল করেছেন?
সেখানে যাবীদী রাহ. সংক্ষেপে এই গুরুত্বপূর্ণ কথাটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে, ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ. এবং ইমাম আবুল হাসান আশআরী রাহ. -আল্লাহর পানাহ- কোনো নতুন আকীদা বা নতুন ফেরকা আবিষ্কার করেননি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা তো সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগ থেকে চলে আসছে। ইমাম মাতুরীদী ও ইমাম আশআরী সেসব আকীদারই সংকলন ও বিশ্লেষণ করেছেন এবং সেগুলোর প্রতি বাতিলপন্থীদের উত্থাপিত আপত্তিসমূহের জবাব দিয়েছেন। সেজন্য তাঁদের পরবর্তীদেরকে তাঁদের দিকে সম্বন্ধ করা হয়।
আবু হাসান আশআরী রাহ. ছিলেন ইরাকের বাসিন্দা। তাই চতুর্থ শতাব্দী থেকে ইরাক, শাম ও খোরাসানে আহলুস সুন্নাহ বলতে আশাইরা তথা আশআরী রাহ.-এর অনুসারীদের বোঝানো হয়।
আর আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ. ছিলেন হানাফী এবং সমরকন্দের অধিবাসী। সেজন্য ‘মা ওরাআন নাহর’-এ আহলুস সুন্নাহ বলতে মাতুরীদীয়া তথা মাতুরীদী রাহ.-এর অনুসারীদের বোঝানো হয়। (দেখুন, শরহুল আকায়েদের উপর মুস্তফা ইবনে মুহাম্মাদ কাসতালী (৯০১ হি.)-এর হাশিয়া এবং শামসুদ্দীন আহমাদ ইবনে মূসা খয়ালী (৮৭০ হি.)-এর হাশিয়া। আরো দেখুন, ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, খ. ২ পৃ. ৬)৩
স্মর্তব্য, ইরাক, শাম ও খোরাসানের হানাফী আলেমগণের অধিকাংশ মাতুরীদীই ছিলেন। তবে যেহেতু আশআরী ও মাতুরীদী মাসলাকের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই সেহেতু হানাফীদেরকেও সাধারণত আশআরী বলা হয়; বিশেষত যেসব অঞ্চলে আবুল হাসান আশআরী রাহ.-এর ইলম ও খেদমত অধিক প্রচারিত হয়েছে। কারণ সেখানে তিনিই ছিলেন ‘সুন্নাহ’-এর নিদর্শন। তাই পুরো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতকে তাঁর দিকেই নিসবত করা হত। যেমন হিন্দুস্তানে বেরেলবীদের মোকাবেলায় সকল আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারীকে দেওবন্দী বলা হয়, অথচ তাদের অনেকেই দেওবন্দের সাথে যুক্ত নয়।
যাইহোক, ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ. ও ইমাম আবুল হাসান আশআরী রাহ. এবং তাঁদের অনুসারীগণ যে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত- এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। তা অস্বীকার করেন একমাত্র মু‘তাযিলীগণ এবং ওই সালাফীগণ, যারা মুশাব্বিহার মাসলাক গ্রহণ করেছেন কিংবা তার দিকে ঝুঁকে গেছেন।
উল্লিখিত বাস্তবতাটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অনেক মুহাক্কিক আলেম স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এখানে আমরা ইমাম বায়হাকী (৪৫৮ হি.) রাহ.-এর বক্তব্য থেকে সংশ্লিষ্ট অংশটুকু উদ্ধৃত করছি। ইমাম বায়হাকী রাহ.-এর বক্তব্যটি মুহাদ্দিস ইবনে আসাকির দিমাশকী (৪৯৯ হি.-৫৭১ হি.)-এর কিতাব
"تبيين كذب المفتري، فيما نسب إلى الإمام أبي الحسن الأشعري"
(পৃ. ৮৬-৯১, প্রকাশনা : আলমাকতাবাতুল আযহারিয়্যা লিত তুরাস, কায়রো, মিশর)-এ সনদসহ বর্ণিত আছে। সেখান থেকে তাজুদ্দীন সুবকী রাহ. তাঁর কিতাব ‘তবাকাতুশ শাফিইয়্যাতিল কুবরা’ (খ. ৩, পৃ. ৩৯৫-৩৯৯)-এ ইমাম আশআরী রাহ.-এর জীবনীতে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম বায়হাকী রাহ. তাঁর এক পত্রে লেখেন-
إِلَى أَن بلغت النّوبَةُ إِلَى شيخنَا (أي إمام جماعتنا) أَبِي الْحسن الْأَشْعَرِيّ رَحمَه الله تعالى، فَلم يُحدِث فِي دين الله حَدَثا، وَلم يَأْتِ فِيهِ ببدعة، بل أَخذ أقاويل الصّحَابَة وَالتّابِعِينَ وَمن بعدهمْ من الْأَئِمّة فِي أصُول الدّين، فنَصَرها بِزِيَادَة شرح وتبيين، وَأَن مَا قَالُوا فِي الْأُصُول وَجَاء بِهِ الشّرْع صَحِيح فِي الْعُقُول، خلاف مَا زعم أهل الْأَهْوَاء من أَن بعضَه لَا يَسْتَقِيم فِي الآراء. فَكَانَ فِي بَيَانه تَقْوِيَة (لدلائل) أهل السنة والجماعة، وَنصرة لأقاويل من مضى من الْأَئِمّة، كَأبي حنيفَة وسُفْيَان الثّوْريّ من أهل الْكُوفَة، وَالْأَوْزَاعِيّ وَغَيره من أهل الشّام، وَمَالك وَالشّافِعِيّ من أهل الْحَرَمَيْنِ، وَمن نحا نَحْوهمَا من الْحجاز، وَغَيرِهَا من سَائِر الْبِلَاد، وكأحمد بْن حَنْبَل وَغَيره من أهل الحَدِيث، وَاللّيْث بن سعد وَغَيره، وَأبي عبد الله مُحَمّد بن إسماعيل البُخَارِيّ، وَأبي الْحسين مُسلم بن الْحجّاج النّيْسَابُورِي، إمامَي أهل الْآثَار وحفاظ السّنَن، الّتِي عَلَيْهَا مدَار الشّرْع رَضِيَ اللهُ عَنْهُم أَجْمَعِينَ.
وَذَلِكَ دأب مَنْ تَصَدّى من الْأَئِمّة فِي هَذِهِ الْأمة، وَصَارَ رَأْسا فِي الْعلم من أهل السّنة فِي قديم الدّهْر وَحَدِيثه...
উচ্চতর স্তরে অধ্যয়নরত তালিবে ইলমগণ ইমাম বায়হাকী রাহ.-এর বক্তব্যের বাকি অংশ ‘তাবয়ীনু কাযিবিল মুফতারী’ বা ‘তবাকাতুশ শাফিইয়্যাতিল কুবরা’ থেকে দেখে নিতে পারেন।
যদি এই বাস্তবতাটি উপলদ্ধি করা যায় তাহলে ওইসকল সালাফী ভাইয়ের বাড়াবাড়ি ও প্রান্তিকতার ব্যাপারে আফসোস না করে উপায় থাকবে না, যারা ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী ও ইমাম আবুল হাসান আশআরীকে -আল্লাহর পানাহ- আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত থেকে খারিজ বলতে কোনো দ্বিধা বোধ করে না!!
সালাফের আকীদা ও সালাফী আকীদা উভয়টা কি এক?
মনে রাখবেন, ‘সালাফের আকীদা’ আর ‘সালাফী আকীদা’ দুটি এক কথা নয়। সালাফের আকীদা তো হুবহু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা। সালাফে সালিহীন (সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন)-এর আকীদারই বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন ইমাম আবু জাফর তহাবী, ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী ও ইমাম আবুল হাসান আশআরীসহ আরো অনেক ইমাম।
আর ‘সালাফী আকীদা’ বলতে যা বোঝানো হয় তাতে সালাফের নামে এমন অনেক কিছু আকায়েদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে, যেগুলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মুতাওয়ারাস আকীদা তথা সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন থেকে যুগ পরম্পরায় চলে আসা আকীদার অন্তর্ভুক্ত নয়। এরপর যে সালাফী ব্যক্তি যত বাড়াবাড়ি করে, আকীদার ক্ষেত্রে তার সংযোজন ও প্রান্তিকতা তত মারাত্মক হয়।
আমাদের যুগে যেসব বন্ধু সালাফী আকীদার প্রবক্তা, তারা যদিও আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা-এর কথা খুব বলেন, তবে তারা এই কিতাবের ওইসকল আলোচনা একদমই গ্রহণ করেন না, যেগুলো ইবনুল কায়্যিমের ‘আলকাসীদাতুন নূনিয়্যা’ القصيدة النونية -এর খেলাফ। সেজন্য ‘আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা’-এর চাইতে ইবনু আবিল ইয ( ابن أبي العز) -এর ‘শরহুল আকীদাতিত তহাবিয়্যা’ই তাদের কাছে অধিক পছন্দনীয়। কারণ তাতে সালাফের আকীদার সঙ্গে ‘সালাফী আকীদা’রও অনেক কথা যুক্ত করা হয়েছে। ইবনু আবিল ইযের শরাহটি সহজবোধ্য। তাতে অনেক ক্ষেত্রে সালাফের আকীদা বর্ণনার পাশাপাশি হাদীস ও আসার থেকে সেগুলোর দলীলও উল্লেখ করা হয়েছে। মাযার-কবর সংশ্লিষ্ট শিরক ও বিদআত খ-নে তাতে ভালো আলোচনা রয়েছে।
তবে কিছু আকীদার ক্ষেত্রে ইবনু আবিল ইযের ব্যাখ্যায় সালাফের আকীদার চাইতে সালাফী চিন্তাধারার প্রতিনিধিত্বই হয়েছে বেশি।৪
এখন মাশাআল্লাহ আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা-এর বিস্তারিত শরাহ ড. সাঈদ আবদুল লতীফের কলমে প্রকাশিত হয়েছে। এটি-
الشرح الكبير على العقيدة الطحاوية.
-নামে দারুয যাখায়ের বৈরুত থেকে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে।
ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ.-এর তিনটি বই : কিছু কথা
এখানে প্রসঙ্গক্রমে এ বিষয়টিও আরয করছি যে, ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (১৯৫৮ ঈ.-২০১৬ ঈ.) তাঁর ‘আল-ফিকহুল আকবর : বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা’ বইয়ে (পৃ. ২৭৭) লেখেন, ‘ইবন কুল্লাবের ছাত্র ইমাম আবুল হাসান আলী ইবন ইসমাঈল আলআশআরী (৩২৪ হি.) তাঁর মত সমর্থন করেন এবং ‘আশআরী’ মতবাদের জন্ম হয়।’
আরো লেখেন, ‘তবে আকীদা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইমাম মাতুরীদী ইমাম ইবন কুল্লাব ও ইমাম আশআরীর ইলমে কালাম নির্ভর ধারা অনুসরণ করেছেন। পক্ষান্তরে ইমাম তাহাবী মূলত ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর দু’ সঙ্গীর আকীদা ব্যাখ্যা করেছেন।’
আল্লাহ তাআলা ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের প্রতি রহম করুন। এখানে তার ভুল হয়ে গেছে। তার বক্তব্যে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আপত্তিজনক-
১. তিনি লিখেছেন, আবুল হাসান আশআরী রাহ. ইবনে কুল্লাবের ছাত্র অথচ তা একেবারে অসম্ভব ব্যাপার। কারণ ইবনে কুল্লাবের ওফাত ২৪১ হিজরীতে; এদিকে আবুল হাসান আশআরীর জন্ম ২৬০ হিজরীতে। এই কিতাবেরই ২৭০ পৃষ্ঠায় তিনি আবু বকর খাল্লালকে ইমাম আহমাদ রাহ.-এর ছাত্র লিখেছেন। এটাও সঠিক নয়। খাল্লাল ইমাম আহমাদের নয়; বরং তাঁর ছাত্রদের ছাত্র।
২. তিনি বলেছেন, ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ. আবুল হাসান আশআরী রাহ.-এর ইলমে কালামের অনুসরণ করেছেন। এটা সঠিক নয়। কারণ মাতুরীদী রাহ. বয়সে আশআরী রাহ. থেকে বড় ছিলেন। আর ইতিহাসে এটা কোনোভাবেই প্রমাণিত নয় যে, তাঁদের পরস্পরের মাঝে কখনো কোনো সাক্ষাৎ হয়েছে কিংবা তাদের কেউ অপরজনের কিতাব লাভ করেছেন এবং তা পড়েছেন। ইতিহাসে এটাও প্রমাণিত নয় যে, মাতুরীদী রাহ. বসরা সফর করেছেন কিংবা আশআরী রাহ. সমরকন্দ সফর করেছেন। আর সেখানে মাতুরীদী রাহ.-এর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটেছে। তলাবায়ে কেরাম এক্ষেত্রে আল্লামা সিনানুদ্দীন বায়াযী রাহ.-এর বক্তব্য দেখতে পারেন-
فليس الماتريدي من أتباع الأشعري، لكونه أول من أظهر مذهبَ أهل السنة كما ظُنّ،...،لأن الماتريدي مفصِّل لمذهب الإمام أبي حنيفة وأصحابه المظهرين قبل الأشعري مذهبَ أهل السنة، فلا يخلو زمان من القائمين بنصرة الدين وإظهاره...
(ইশারাতুল মারাম, বায়াযী, পৃ.২৪-২৫; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, খ. ২ পৃ. ৫; আরো দেখুন তাবসিরাতুল আদিল্লা, আবুল মুঈন নাসাফী ৫০৮ হি., খ. ১ পৃ. ৩১০, ৩৫৬-৩৭৫)
৩. তিনি বলেছেন, ইমাম তহাবী রাহ. তো ‘আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা’ তে ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহ.-এর রেওয়ায়েত মোতাবেক আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদাসমূহ উপস্থাপন করেছেন। তবে ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ. এই ইমামগণের রেওয়ায়েতের পরিবর্তে ইলমে কালামের তরীকা অবলম্বন করেছেন।
এই কথা আপত্তিকর। কারণ ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদীও ইমাম তহাবীর মত ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর সঙ্গীগণের রেওয়ায়েত ও বর্ণনা মোতাবেকই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকাইদ বর্ণনা করেছে। তহাবী ও মাতুরীদীর মধ্যে পার্থক্য এই যে, তহাবী সংক্ষেপে শুধু আকীদাগুলো উপস্থাপন করেছেন আর মাতুরীদী সেগুলোর ব্যাখ্যাও করেছেন আবার সেসব বিষয়ে কুরআন, হাদীস ও আসার থেকে দলীল উল্লেখের পাশাপাশি আকলী দলীল তথা যুক্তি-নির্ভর দলীলও উপস্থাপন করেছেন। পাশাপাশি ভ্রান্ত ফেরকাগুলোর বিভিন্ন সংশয় ও আপত্তির জবাবও দিয়েছেন। অতএব পার্থক্য সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত বর্ণনার এবং উপস্থাপনের বিভিন্নতার। নতুবা মূল আকীদার বিষয়ে তাঁদের মাঝে কোনো মতবিরোধ নেই।
কোনো সন্দেহ নেই- ইমাম মাতুরীদী রাহ. ইসলামী আকীদার যে খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন সেটা ইলমে কালামের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তিনি ইমাম আশআরীর ইলমে কালামের অনুসরণ করেছেন। আসল বিষয় হল, ইবনে কুল্লাব, মাতুরীদী ও আশআরী এই তিনজনই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদার মুখপাত্র এবং তিনজনই এই আকীদারই সাহায্য ও সংরক্ষণের খেদমত সঠিক পন্থায় আঞ্জাম দিয়েছেন। সেজন্যই তাঁদের সকলের বক্তব্য ও বিশ্লেষণ একরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। কিন্তু এ কারণে একজনকে আরেকজনের শাগরিদ বা তার থেকে উপকৃত হয়েছে বলার সুযোগ নেই। এর জন্য ভিন্ন দলীল লাগবে।
ইলমে কালামের কথা যখন চলে আসল তখন এ বিষয়টিও আলোচনা করা জরুরি মনে করছি যে, ইলমে কালামকে ঢালাওভাবে মন্দ বলা- এটা সালাফী বন্ধুদের ভুল প্রোপাগান্ডা। বেদআতীদের ইলমে কালাম নিঃসন্দেহে মন্দ; কেননা তারা এর মাধ্যমে তাদের বেদআতী চিন্তাধারা প্রমাণের অপচেষ্টা চালায়। কিন্তু যারা হকপন্থী অর্থাৎ যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পথে আছেন তাদের ইলমে কালামকে মন্দ আখ্যা দেয়া ঠিক নয়। এ বিষয়ে তলাবায়ে কেরাম ইমাম আশআরী রাহ.-এর রিসালা-
استحسان الخوض في علم الكلام.
-মুতালাআ করতে পারেন। এই কিতাবে তিনি দলীলের আলোকে ইলমে কালামের গুরুত্ব প্রমাণ করেছেন।
হাঁ, ইলমে কালামের কিতাবসমূহ অধ্যয়নের সময় হাকীমুল উম্মত থানবী রাহ.-এর সেই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি মনে রাখা জরুরি, যেটি তিনি তাঁর কোনো এক মজলিসে আলোচনা করেছেন এবং মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. তা কলমবন্দ করেছেন। তার সারকথা হল, ইলমে কালামের মূলনীতি ও পরিভাষাসমূহ, যেগুলো বিভ্রান্তিকর আপত্তিসমূহের খ-নে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলো ইসলামী আকীদার অংশ নয়। সেগুলো বেদআতপন্থীদের মোকাবেলায় অবশ্যই ব্যবহার করা যাবে, তবে সেগুলো কোনোভাবে ইসলামী আকীদার অংশ নয়। সেগুলো তো তর্কশাস্ত্রের ফর্মুলা মাত্র। ইসলামের আকীদাসমূহ তো ভিন্নভাবে আলাদা শিরোনামে লেখা হয়েছে, যেগুলো কিতাব ও সুন্নাহ্য় স্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে এবং ইলমের ধারক-বাহকগণের মাঝে তাওয়ারুস তথা যুগপরম্পরায় বিদ্যমান আছে। তলাবায়ে কেরামের প্রয়োজন বিবেচনা করে আমরা থানবী রাহ.-এর সে আলোচনা এখানে উদ্ধৃত করছি-
ایک بات یاد رکھنی چاہئے کہ علم کلام کی تحقیقات کو صرف مانع اصطلاحی کا درجہ دیا جائے جس کا حاصل ایک احتمال پیدا کرنا ہے کہ یوں بھی ہو سکتا ہے اس کو عقیدہ کا درجہ دینا حد سے تجاوز کرنا ہے جن حضرات علماء نے علم کلام کے اشتغال کو منع کیا ہے وہ اسی غلو اور حد سے تجاوز کی بنا پر کیا ہے مثلا حضرات متکلمین نے فلاسفہ کے اس قول کو رد کیا کہ جسم ہیولی اور صورت سے مرکب ہے اس کے بالمقابل جسم کی ترکیب اجزاء لاتتجزأ سے قرار دیں تو جو لوگ جزء لا يتجزأ کے مسئلے کو مانع یعنی احتمال پیدا کرنے کے درجے میں رکھیں وہ کوئی خلاف شرع کام نہیں کر رہیں لیکن اگر یہ عقیدہ بنا لیں کہ جسم کی ترکیب اجزاء لاتتجزأ سے ہے تو شریعت میں اس کی کوئی دلیل نہ ہونے کی بنا پر ایسا عقیدہ رکھنا غلط اور ناجائز ہوگا۔
-মাজালিসে হাকীমুল উম্মত, মুফতী মুহাম্মাদ শফী, পৃ. ১৩২-১৩৩; উলূম ও ফুনূন ও নেসাবে তালীম, মুফতী মুহাম্মাদ যায়েদ মাযাহেরী, পৃ. ৯২
হযরত থানবী আরো বলেন-
اس لئے میں تو یہ کہتا ہوں کہ علم کلام کو صرف مدافعت اہل بدعت اور منع اصطلاحی یعنی احتمال وامکان کے درجے میں رکھنا چاہئے۔ اور عقائد کو مثل سلف صالحین کے ان مباحث سے سادہ رکھنا چاہئے۔
-মাজালিসে হাকীমুল উম্মত, মুফতী মুহাম্মাদ শফী, পৃ. ১৭৯; উলূম ও ফুনূন ও নেসাবে তালীম, মুফতী মুহাম্মাদ যায়েদ মাযাহেরী, পৃ. ৯৩
ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ‘শরহে ফিকহে আকবর’ ও ‘ইহইয়াউস সুনান’ সম্পর্কে মাসিক আলকাউসারে এক প্রসঙ্গে আমি একটি নোট লিখেছিলাম। সেই পুরো নোটটি আরো বিশ্লেষণের সঙ্গে এখানে পেশ করা মুনাসিব মনে করছি-
“এক মজলিসে আমি সরাসরি ডক্টর খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে শুনেছি যে, ‘আমাদেরকে চলতে হবে সুন্নাহ ও উম্মাহকে সঙ্গে নিয়ে। কথাটির উদ্দেশ্য হল, শরীয়তের দলীল তো হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এবং এই সুন্নাহ্ই উম্মতের জন্য উসওয়ায়ে হাসানা ও সর্বোত্তম আদর্শ। তবে যেহেতু অনেক মাসআলার ক্ষেত্রেই সুন্নাহর বিভিন্নতা রয়েছে আবার বহু মাসআলায় সুন্নাহ অনুধাবনের ক্ষেত্রে বা তার আমলী রূপরেখা নির্ধারণের ক্ষেত্রে হাদীস ও সুন্নাহ-বিশেষজ্ঞ ফকীহদের মাঝে ইজতিহাদী ইখতিলাফ রয়েছে, এজন্য নিয়ম এটা হওয়া উচিত, যে এলাকায় উম্মাহর মধ্যে যে আমল চালু আছে যদি সুন্নাহ্ বা আসারে তার কোনো নির্ভরযোগ্য দলীল বিদ্যমান থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের সামনে ঐ সুন্নাহর মোকাবেলায় আরেক সুন্নাহর দাওয়াত দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করা উচিত নয়।’ তার এই কথাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। মূলত সব যুগের মুহাক্কিক ও মুতাদিল উলামায়ে কেরামের নীতি এটাই ছিল। আমার বিশ্বাস, যদি তার উল্লেখ করা এই নীতি অনুযায়ী তিনি তার পুরোনো কিতাব ‘ইহইয়াউস সুনান’-এর নযরে সানী করার সুযোগ পেতেন তাহলে অনেক মাসআলায় তার রায় পরিবর্তন হয়ে যেত। তার যেসব অডিও-ভিডিও এখন প্রচারিত হচ্ছে, যদি ব্যবস্থাপকগণ উক্ত নীতি অনুযায়ী বিচার-বিশ্লেষণ করেন তাহলে তারা এগুলোর অনেক কিছু আর হয়ত প্রচার করবেন না। কিন্তু মুতালাআর স্বল্পতা এবং উসূলে ফিকহের পর্যাপ্ত ইলমের অভাবে তারা এ বিষয়টি হয়ত বুঝতে পারছেন না। আসলে ব্যক্তির উচিত, (এবং তার পরে যারা তার ইলমী ওয়ারিস তাদেরও উচিত,) রচনাবলির মত নিজের অডিও-ভিডিওসমূহ (যদিও ব্যক্তিগতভাবে ভিডিওকে আমি দাওয়াতের সুন্দর মাধ্যম মনে করি না।) -এরও নযরে সানী ও সম্পাদনা করতে থাকা। কারণ অনেক সময় তাতে এমন অনেক কথা থাকে, যেগুলো সংশোধনযোগ্য। নযরে সানীর সময় সেগুলো ধরা পড়ে। আর নযরে সানী ও সম্পাদনা ব্যতীত নিজের লেখা ও আলোচনা কোনো কিছুই প্রচার করা ঠিক নয়।
কেউ আমাকে খোন্দকার সাহেবের একটি ভিডিও পাঠিয়েছেন, যাতে তিনি ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তা বলতে গিয়ে কুরআন ও সুন্নাহকে স্বর্ণের বারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরপর সেটাকে স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি যা বলেছেন সেটা একেবারে অনুচিত কথা। আমার ধারণা, যদি তিনি বেঁচে থাকতেন এবং বিষয়টি নযরে সানী করার সুযোগ পেতেন তাহলে তিনি তা মুছে দিতেন। অথবা সংশোধন করে নতুনভাবে উপস্থাপন করতেন।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে বলে রাখি, অনেক ভাই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তার অমুক কিতাবটি কেমন? আমি কি এ কিতাবটি পড়তে পারি? এধরনের প্রশ্ন আমার জন্য খুবই বিব্রতকর। কোনো কিতাবের উপর মতামত দিতে হলে সে কিতাবের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়তে হয়। যদি কেউ এর সুযোগ না পায় তাহলে সে কীভাবে জবাব দেবে? তাছাড়া কে কোন্ কিতাব পড়বে তা বলার জন্যে তো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবস্থা জানতে হয়। এজন্য সঠিক পন্থা এটাই যে, সকলেই আমরা নিজ নিজ দ্বীনী ও ইলমী মুশীর তথা পরামর্শকের সাথে মাশওয়ারা করেই মুতালাআর কিতাব নির্বাচন করব।
যাই হোক, রবিউল আউয়াল ১৪৩৫ হিজরীতে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ‘আলফিকহুল আকবার’-এর বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। তার বড় একটা অংশ আমি মুতালাআ করেছিলাম এবং সে বিষয়ে আমার মতামত তাকে জানিয়েছিলামও। কিন্তু জানি না, কেন তিনি দলীল-নির্ভর পর্যালোচনাগুলোকে গ্রহণ করতে পারেননি। সেই ব্যাখ্যাগ্রন্থে মাশাআল্লাহ কিছু উপকারী আলোচনা রয়েছে। তবে কিছু কিছু বিষয়ে আপত্তিও রয়েছে। প্রথম কথা তো এই, যে ‘আলফিকহুল আকবার’-এর অনুবাদ তিনি করেছেন তা নির্ভরযোগ্য ও প্রমাণসিদ্ধ রায় মোতাবেক আবু হানীফা রাহ.-এর কিতাব নয়। যদিও মোল্লা আলী কারী রাহ. সেটাকে আবু হানীফা রাহ.-এর কিতাব মনে করে তার শরাহ্ও লিখে দিয়েছেন এবং ইবনু আবিল ইয রাহ. ‘শরহুল আকীদাতিত তাহাবিয়্যায়’ তাকে আবু হানীফা রাহ.-এর কিতাব বলে উল্লেখ করে তার থেকে হাওয়ালা উদ্ধৃত করেছেন। মনে হয়, আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেব তাদের অনুসরণ করেছেন। আসল ‘আলফিকহুল আকবার’ সেটিই, যেটি মিসরের প্রকাশকগণ ‘আলফিকহুল আবসাত’ নামে ছাপিয়েছেন এবং অনেক প্রকাশক এটিকে ‘আলফিকহুল আকবার’ নামেই ছাপিয়েছেন। সে ব্যাপারে অন্য কোনো প্রসঙ্গে আরো বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় কথা হল, জাহাঙ্গীর সাহেবের বাংলা ব্যাখ্যায় মাতুরীদী ও আশআরীদের উপর ঢালাওভাবে কিছুটা কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে, যা মুনাসিব হয়নি। যদি পূর্ববর্তী মাতুরীদী ও আশআরীদের কিতাবগুলো তার গভীরভাবে মুতালাআর সুযোগ হত তাহলে সম্ভবত তিনি এমন সমালোচনা করতেন না। অপরদিকে তিনি কট্টরপন্থী সালাফীদের ব্যাপারে (এমনকি এই যুগের এই এলাকার সালাফীদের ব্যাপারেও) কোনো বিশেষ সমালোচনা করেননি। এটাকে একটি ত্রুটিই বলতে হবে, যা সম্ভবত পর্যাপ্ত মুতালাআ ও মুযাকারার সুযোগ না হওয়ার কারণে ঘটেছে।
সিফাতে মুতাশাবিহাতের বিষয়ে তিনি লম্বা আলোচনা করেছেন কিন্তু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আসল মাসলাক তার আলোচনা থেকে ফুটে ওঠেনি। মোদ্দাকথা, এই কিতাবে নযরে সানী এবং সম্পাদনা দরকার ছিল।”
এই আলোচনার আলোকে যদি চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে, তার আরেকটি কিতাব ‘ইসলামী আকীদা’-এর মধ্যেও বেশ কিছু বিষয় সংশোধনযোগ্য রয়েছে। এটি তাঁর বেশ আগের লেখা একটি বই। এটি আমাদের মতে আরো বেশি নযরে সানী ও সম্পাদনাযোগ্য।
কিছু জরুরি বিষয়
এক.
এই কথা তো একদম পরিষ্কার যে, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ ইমাম মাতুরীদী ও ইমাম আশআরী এবং তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাঁদের উভয়ের জন্ম হিজরী তৃতীয় শতকে আর ওফাত চতুর্থ শতকে। অথচ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের প্রথম জামাত হলেন সাহাবায়ে কেরাম। দ্বিতীয় জামাত তাবেয়ীন আর তৃতীয় জামাত তাবে তাবেয়ীন। অতঃপর সমস্ত ইসলামী শহর ও অঞ্চলে যেসকল মনীষী ও তাদের অনুসারীগণ ঈমান-আকীদা, নীতি-আদর্শ ও ঐতিহ্যে খায়রুল কুরূনের মনীষীদের পথে রয়েছেন তারা সকলে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অংশ; আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ বললে তারাও উদ্দেশ্য। স্পষ্ট কথা- ইমাম মাতুরীদী ও ইমাম আশআরী তাঁদের পূর্ববর্তী এই মনীষীগণের মাধ্যমেই দ্বীন-শরীয়ত ও ঈমান-আমলের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ইলম হাসিল করেছেন, যেমনটি আমরা ইঙ্গিত করেছি। অতএব মাতুরীদী ও আশআরী তাঁদের পূর্ববর্তী মনীষীগণের পথে আছেন; এই নয় যে, তাঁরা এই দুইজনের পথে ছিলেন।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পূর্ববর্তী মনীষীগণের পথে অবিচল থাকার কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাঁরা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন। ফলে চতুর্থ শতাব্দীর শেষ থেকে আজ অবধি উম্মাহর অধিকাংশ আহলে ইলম, অর্থাৎ ইলমে দ্বীনের যত শাখা রয়েছে সেগুলোর যারা ধারক-বাহক, তাদের অধিকাংশ ব্যক্তি হয়ত আশআরী নতুবা মাতুরীদী। কখনো সুযোগ হলে তাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠকগণের সামনে পেশ করা যেতে পারে। তবে এই বাস্তবতাটুকু স্বীকারের পাশাপাশি আমাদের এই কথা প্রকাশ করতে কোনো সংকোচ নেই, বরং সেটা প্রকাশ করা আমরা জরুরি মনে করি যে, শরীয়ত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাপকাঠি আশআরী বা মাতুরীদী হওয়াকে বানায়নি; বানিয়েছে সুন্নাহ ও জামাআতকে। তেমনিভাবে হকের অনুসারীদের আশআরী বা মাতুরীদী নিসবত রাখাটাও জরুরি করে দেয়নি। সেজন্য এটা একদম স্বাভাবিক যে, আশআরী-মাতুরীদী ধারা থেকে উপকৃত হওয়া এবং এর দিকে নিজেকে নিসবত করা মানুষের সংখ্যা বিপুল ও ব্যাপক; তা সত্ত্বেও এমন আহলে ইলম পাওয়া যাবে, যারা এবং তাদের অনুসারীরা নীতি ও আদর্শে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী তবে তারা আশআরী-মাতুরীদী নিসবত রাখেন না।
এটা কেবল সম্ভাবনা-ই নয়; বাস্তবতাও। চতুর্থ শতাব্দীর শেষ দিকের ও তার পরের অনেক মুহাদ্দিস আশআরী বা মাতুরীদী নিসবত রাখতেন না; তবে তাঁরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসারী। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহ.-এর অনেক অনুসারীও এই নিসবত রাখতেন না; তবে তাঁরা আহলুস সুন্নাহর পথে ছিলেন। এই মনীষীগণের আকাইদের বিষয়ে যদি সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা যায় তাহলে দেখা যাবে, তাঁদের এবং আশআরী-মাতুরীদীর আকাইদে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। যেমন ইমাম মুহাদ্দিস ইবনে হিব্বান বুস্তী (২৭০ হি.-৩৫৪ হি.)। তেমনিভাবে হাম্বলীগণের মধ্যে আছেন আবুল ফযল তামীমী (৪১০ হি.) ও ইবনুল জাওযী (৫১০ হি.-৫৯৭ হি.)। ইবনুল জাওযী রাহ.-এর دفع شُبَه التشبيه بأَكُفّ التنزيه চমৎকার কিতাব। সচেতন তালিবে ইলমগণ এটি মুতালাআ করতে পারেন।
আশআরী আলেম শায়েখ আবু আবদিল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে আবুল ফযল কাসিম আল বাক্কী তিউনিসী (৯১৬ হি.) রাহ. বলেন, অনুসন্ধান মোতাবেক আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ বলতে তিনটি দল উদ্দেশ্য হয়-
১. মুহাদ্দিসগণ। যারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকাইদকে হাদীস-আসারের আলোকে কিংবা আলআকীদাতুত তহাবিয়্যার মত সরলভাবে প্রচার করেছেন।
২. আশআরী ও হানাফীগণ (অর্থাৎ মাতুরীদীগণ)।
৩. সূফীগণ।
অর্থাৎ শরীয়ত ও সুন্নতের অনুসারী সুফিয়ায়ে কেরাম, যারা সহীহ আকীদাসমূহকে কাশফ-ইলহামের হাওয়ালাতেও বর্ণনা করেছেন। আসলে এটার কোনো দরকার ছিল না। তবু শরীয়তের দলীলাদির মাধ্যমে প্রমাণিত আকীদা বা আমলের সমর্থনে কোনো বুযুর্গ যদি নিজের কোনো স্বপ্ন বা কাশফ-ইলহাম উল্লেখ করেন, এতে গুনাহের কিছু নেই। এখানে ওসব বেদআতী সূফী উদ্দেশ্য নয়, যারা ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে শরীয়তের দলীলের চাইতে কাশফ-ইলহামকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। এদের সবাই গোমরাহ। কেউ ফাসেক আর কেউ একেবারে মুলহিদ ও যিন্দীক!
মুরতাযা যাবীদী রাহ. উল্লেখিত বক্তব্যটি বাক্কীর কিতাব شرح عقيدة ابن الحاجبথেকে উদ্ধৃত করেছেন৫। আমি এখানে তার সারকথাটুকু কিছুটা বিশ্লেষণের সঙ্গে উল্লেখ করলাম। (দেখুন, ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, খ. ২, পৃ. ৬-৭; ফযলুল বারী : দরসে বুখারী, আল্লামা শায়খুল ইসলাম শাব্বীর আহমদ উসমানী, খ. ১, পৃ. ২৩৫-২৩৬)
দুই.
যেসকল মুহাদ্দিস বা হাম্বলী আশআরী-মাতুরীদী নিসবত রাখেন না তাদের প্রত্যেকে এমন নন যে, তাদেরকে ব্যাপকভাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত বলা যায়; বরং তাদের মধ্যে অনেক লোক এমনও আছেন, যারা সিফাতের মাসআলায় মুজাসসিমা বা মুশাব্বিহার দিকে ঝুঁকে গেছেন কিংবা তাদের পথ গ্রহণ করেছেন। যেমন ইবনে হামেদ হাম্বলী (৪০৩ হি.), আবু আলী আহওয়াযী (الأهوازي)-(৩৬২ হি.-৪৪৬ হি.) ও আবু ইয়ালা হাম্বলী (৩৮০ হি.-৪৫৮ হি.)। [আবু ইয়ালা মাওসিলী ৩০৭ হি. নয়; তিনি আরো আগের এবং মুসনাদ গ্রন্থের সংকলক।]
তিন.
আশআরী-মাতুরীদীদের বিরুদ্ধে অনেক প্রোপাগান্ডা করা হয়েছে। তাদেরকে যেসব অপবাদ দেয়া হয়েছে, সম্ভবত সেগুলোর সবচে বেশি চর্চা করেছেন সউদী সালাফীগণ। এমনকি তারা এদেরকে জাহমিয়া আখ্যা দিয়েছেন। এটাও বলেছেন যে, এরা শুধু তাওহীদে রুবূবিয়াতের চর্চা করে; অথচ আসল তাওহীদ হল তাওহীদে উলূহিয়াত। তাওহীদে উলূহিয়াত সাব্যস্ত করার জন্যই আল্লাহ তাআলা সকল নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন; নতুবা কাফের-মুশরিকরা তো তাওহীদে রুবূবিয়াত মানেই।
এই বেচারারা আশআরী-মাতুরীদীদের বিরোধিতা করতে গিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। সেজন্য তাদের মুখ ও কলম থেকে এ ধরনের বাতিল কথা বের হয়েছে। সত্য কথা হল, আল্লাহ তাআলা তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেয়ার জন্য খাতামুন নাবিয়্যীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামসহ সকল নবী-রাসূলকে পাঠিয়েছেন; যার মধ্যে তাওহীদে রুবূবিয়াত ও তাওহীদে উলূহিয়াত সবই অন্তর্ভুক্ত। মুশরিকরা যেভাবে তাওহীদে উলূহিয়াত অস্বীকার করত তেমনিভাবে তাওহীদে রুবূবিয়াতও অস্বীকার করত। ‘আল্লাহ তাআলা খালিক ও মালিক’ স্বীকার করে নেয়ার দ্বারা তাওহীদে রুবূবিয়াত সাব্যস্ত হয়ে যায় না। তাওহীদে উলূহিয়াতের প্রতি ঈমান আনা ব্যতীত তাওহীদে রুবূবিয়াত সাব্যস্ত হওয়া সম্ভবই নয়। ‘আল্লাহ তাআলা খালিক ও মালিক’ শুধু এটুকু স্বীকারের দ্বারা ঈমান সাব্যস্ত হয়ে যায় না। মুশরিকরা বিতর্কের সময় আল্লাহ তাআলার রুবূবিয়াত স্বীকার করত। তবে তারা আল্লাহ তাআলার রুবূবিয়াত এবং এই সিফাতের ক্ষেত্রে তিনি একক- এর প্রতি ঈমান আনত না। কুরআন-সুন্নাহ মুতাআলার দ্বারা এই বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু আশআরী-মাতুরীদীদের বিরোধিতায় সীমা ছাড়িয়ে এই বন্ধুরা এই হাকীকত থেকে গাফেল হয়ে গেছেন।
এরপর তারা যে বলেন, মাতুরীদী-আশআরীরা তাওহীদে উলূহিয়াতের আলোচনা করেন না- এটা ডাহা মিথ্যা। সবচে পাক্কা আশআরী আলেম ফখরুদ্দীন রাযী (৫৪৪ হি.-৬০৬ হি.)-এর ‘তাফসীরে কাবীর’ [সূরা ফাতিহা (১) : ৪] এবং স্বয়ং ইমাম আবু মানসুর মাতুরীদীর কিতাব تأويلات أهل السنة [সূরা ফাতিহা (১) : ৪; সূরা হুদ (১১) : ৫০,৬১; সূরা ইসরা (১৭) : ২৩; সূরা কাহ্ফ (১৮) : ৪৬] দেখুন, তাঁরা কত স্পষ্ট ভাষায় তাওহীদে উলূহিয়াতের আলোচনা করেন।
চার.
আশআরী ও মাতুরীদী মাসলাক সম্পর্কে আমরা যা বলেছি সেটা মাসলাকের মুহাক্কিক এবং ভারসাম্য বজায় রাখেন এমন আহলে ইলম কর্তৃক মাসলাকের খেদমতসমূহকে সামনে রেখে বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, আশআরী বা মাতুরীদী মাসলাকের কোনো লেখক কোথাও বাড়াবাড়ি করেননি। নিঃসন্দেহে ইলমে কালাম সম্পর্কে যারা লিখেছেন তাদের কেউ কেউ কোনো কোনো জায়গায় বাড়াবাড়ির শিকার হয়েছেন এবং কোনো আকীদার অপ্রয়োজনীয় চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ভুলের শিকার হয়েছেন। আমরা এ ধরনের বাড়াবাড়ি থেকে নিজেদেরকে মুক্ত ঘোষণা করছি; এগুলোর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা কারো বাড়াবাড়ির সঙ্গ দেই না। তেমনিভাবে কোনো মুক্তাদা ও অনুসরণীয় আলেমের ত্রুটি-বিচ্যুতিকেও হক মনে করি না এবং ভুল-ত্রুটির ক্ষেত্রে আমরা কারো অনুসরণ করি না।
পাঁচ.
প্রসিদ্ধ আছে, আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ.-এর পর যে হানাফী আলেমগণ আছেন, তারা -যে এলাকারই হন- মাতুরীদী। আর আবুল হাসান আশআরী রাহ.-এর পর শাফেয়ী মাযহাবের যে আলেমগণ আছেন, তারা -যে অঞ্চলেরই হন- আশআরী।
এই কথা অধিকাংশের বিবেচনায় ঠিক আছে। নতুবা আবু মানসুর মাতুরীদী রাহ.-এর পরের হানাফী আলেমগণের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিলেন, যিনি ভিন্ন মাসলাকের অনুসারী। উদাহরণস্বরূপ কেউ আকীদার বিষয়গুলো ‘আলআকীদাতুত তহাবিয়্যা’-এর উপস্থাপন অনুযায়ী গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি ইলমে কালামের পথ অবলম্বন করেননি। আবার কেউ সালাফী চিন্তাধারার দিকে ঝুঁকে গেছেন- যেমন ইবনু আবিল ইয এবং কেউ মু‘তাযিলীদের অনুসরণ করেছেন- যেমন যামাখশারী!!
একই অবস্থা শাফেয়ীগণের। তাই এটা জরুরি নয় যে, কোনো ব্যক্তি ফিকহী বিষয়ে কোনো ইমামের মাযহাব অনুসরণ করলে আকীদার ক্ষেত্রেও তাঁর মাসলাক (অর্থাৎ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাসলাক)-এর উপর থাকবে। কারণ দেখা যায়, কোনো লোক হয়তো ফিকহের ক্ষেত্রে সঠিক পথে আছে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আকীদার ক্ষেত্রে সরল পথ থেকে সরে গেছে। যেমন হাম্বলীগণের মধ্যে অনেক ব্যক্তি এমন আছেন, যারা আকীদার ক্ষেত্রে ইমাম আহমাদের মাসলাক থেকে সরে মুশাব্বিহাদের মাসলাকের দিকে ঝুঁকে গেছেন। অথচ ফুযালাউল হানাবিলা, মধ্যমপন্থী হাম্বলী আহলে ইলম, তাঁরা ইমাম আহমদের মাসলাকের অনুসারী ছিলেন, নয়তো ইমাম আবুল হাসান আশআরীর মাসলাকের। তেমনিভাবে আশআরী রাহ.-এর পর অধিকাংশ মুহাক্কিক মালেকী আলেম তাঁর মাসলাকের অনুসারী ছিলেন।
এখানে সংক্ষেপে বিষয়টির প্রতি ইশারা করা হল। ইতিহাসের আলোকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে গেলে তা সময়সাপেক্ষ। এর বিশেষ প্রয়োজনও নেই।
ছয়.
সিফাতে মুতাশাবিহার ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ পথ ও পন্থা জানার জন্য তলাবায়ে কেরাম নিম্নোক্ত কিতাবগুলো মুতালাআ করতে পারেন-
أ- > القول التمام بإثبات التفويض مذهبا للسلف الكرام< للدكتور سيف بن علي العصري.
ب- >الصفات الخبرية عند أهل السنة والجماعة< لمحمد عَيَّاش الكُبَيسِي.
ج- >فصول في العقيدة بين السلف والخلف< للدكتور يوسف القرضاوي.
د- >السيف الصقيل في الرد على ابن زفيل< لتقي الدين السبكي (756 هـ) رحمه الله.
ه- >تكملة الرد على نونية ابن القيم< للعلامة الكوثري (1371 هـ) رحمه الله (حاشية السيف الصقيل)
و- >دفعُ شُبَه التشبيه بأَكُفّ التنزيه< لابن الجوزي (597 هـ) رحمه الله.
ز- >نجم المهتدي ورجم المعتدي< لابن المُعَلّم القُرَشي (660 هـ ـ 753 هـ)
ح->ابن تيمية ليس سَلَفيا< لمنصور محمد محمد عَوَيْس. (يريد أن ابن تيمية ليس على منهج السلف في مسألة الصفات ونحوها)
ط->فرقان القرآن بين صفات الخالق وصفات الأكوان< للعلامة سَلاَمة القضاعي (1376 هـ)
هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين، وعلى آله وصحبه أجمعين، وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.
-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
১৫-০৩-১৪৪৩ হিজরী
শনিবার
টীকা :
১. দেখুন, কাতায়িবু আ‘লামিল আখইয়ার, মাহমুদ বিন সুলায়মান কাফাবী; আলফাওয়াইদুল বাহিয়্যা, আবুল হাসানাত লখনবী; ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন, আল্লামা মুরতাযা যাবীদী রাহ. (১২০৫ হি.) খ. ০২ পৃ. ৩-১৪; ইমাম মাতুরীদীর তাফসীর গ্রন্থ تأويلات أهل السنة -এর মুহাক্কিকের ভূমিকা এবং বায়াযীর ‘ইশারাতুল মারাম’ এর উপর লিখিত আল্লামা কাউসারী রাহ.-এর ভূমিকা।
২. তাকীউদ্দীন সুবকী (৬৮৩ হি.-৭৫৬ হি.) রাহ.-এর যে বক্তব্যটির প্রতি এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটি তাঁর কিতাব-
السيف الصقيل في الرد على ابن زفيل
-এর শুরুতে রয়েছে। السيف الصقيل হল ইবনুল কায়্যিম রাহ. রচিতالقصيدة النونية -এর বিষয়ে একেবারে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা। এই পর্যালোচনাটিকে দলীলাদির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ করেছেন আল্লামা যাহেদ কাওসারী রাহ.। তাঁর রচনাটির নাম-
تبديد الظَّلَام المُخَيّم من نُونِيَّة ابن القيم.
এটি تكملة الرد على نونية ابن القيم নামে পরিচিত এবং তা السيف الصقيل-এর টীকায় ছাপা হয়েছে।
৩.
قال الشيخ مصطفى الكستلي: "وبين الطائفتين (الأشاعرة والماتريدية) اختلاف في بعض الأصول (أي في بعض مسائلها الفرعية)، كمسألة التكوين، ومسألة الاستثناء في الإيمان، ومسألة إيمان المقلد، والمحققون من الفريقين لاينسب أحدهما الآخر إلى البدعة والضلالة".
৪. আমি আলকাউসারের শিক্ষার্থীদের পাতায় উচ্চস্তরের কোনো কোনো তালিবে ইলমকে ইবনু আবিল ইযের শরাহটি পড়ার পরামর্শ দিয়েছি। এর অর্থ শুধু এটুকু যে, বুঝমান এবং শুদ্ধ-অশুদ্ধের পার্থক্যের যোগ্যতা রাখেন এমন তালিবে ইলমগণ তা মুতালাআ করতে পারেন; কেননা তাতে অনেক সুন্দর আলোচনা আছে। এই নয় যে, আমি এটিকে সালাফের আকীদার খাঁটি নির্ভরযোগ্য কিতাব মনে করি।
৫. স্মর্তব্য, ইতহাফুস সাদাহ-এর ছাপা নুসখায় ‘বাক্কী’ নিসবতটি বিকৃত হয়ে ‘সুবকী’ হয়ে গেছে। ফলে বক্তব্যটি তাজুদ্দীন সুবকীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে। অথচ এটি শায়েখ বাক্কীর বক্তব্য। তাঁর কিতাব ‘তাহরীরুল মাতালিব লিমা তাযাম্মানাতহু আকীদাতুবনিল হাজিব’ ছেপে এসেছে। শায়েখ نزار حمادي-এর তাহকীক-তা‘লীকসহ মুআস্সাসাতুল মাআরিফ, বৈরুত থেকে তা প্রকাশিত হয়েছে। এই কিতাবের ৩৯-৪০ নং পৃষ্ঠায় উক্ত আলোচনাটি আছে। অধম এটিকে সুবকী রাহ.-এর বক্তব্য ভেবেছিলাম। অধমের শাগরিদ মাওলানা আব্দুল মাজীদ বিন খলীলুর রহমান এ বিষয়ে অধমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
তাজুদ্দীন সুবকী রাহ. ‘আকীদাতুবনিল হাজিব’-এর কোনো শরাহ লিখেছেন- এরূপ কোনো আলোচনা পাওয়া যায় না। এদিকে বক্তব্যটি বাক্কী রাহ.-এর কিতাবে বিদ্যমান আছে। স্বয়ং মুরতাযা যাবীদী রাহ. ইতহাফুস সাদাহ্-এ আকাইদ অধ্যায়ের শরহের ভূমিকায় তাঁর উৎসগ্রন্থসমূহের তালিকা উল্লেখ করেছেন। সেখানে ইবনুস সুবকী (তাজুদ্দীন সুবকী)-এর এমন কোনো কিতাবের নাম উল্লেখ করেননি। বরং বাক্কী রাহ.-এর তাহরীরুল মাতালিবের কথা উল্লেখ করেছেন।