আনওয়ারুল কুরআন : প্রশ্নোত্তর
[আনওয়ারুল কুরআন বিভাগের সর্বশেষ শিরোনাম ‘প্রশ্নোত্তর’। এর অধীনে প্রত্যেক সংখ্যায় ইনশাআল্লাহ তিন থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। সংক্ষেপের জন্য প্রশ্নকারীর নাম-পরিচয় অনুল্লেখ থাকবে।]
প্রশ্ন : ১. ইলমে তাজবীদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় একটি শাস্ত্র, তা আমি জানি। কিন্তু আফসোস হল, আমি এই শাস্ত্রের মূল কিতাবগুলো এবং উদ্ধৃতি দেওয়া যায় এমন কিতাবগুলোর নাম জানি না। অবশ্য প্রাথমিক কিছু কিতাবের নাম জানা আছে। যেমন, নুযহাতুল কারী, গুনইয়াতুল কারী, মুফীদুল কারী, জামালুল কুরআন এবং ফাওয়ায়েদে মাক্কীয়্যা ইত্যাদি। আশা করছি, এই শাস্ত্রের আরও এমন কিছু কিতাবের নাম উল্লেখ করবেন, যেগুলো নির্ভরযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি উৎসগ্রন্থও।
উত্তর : ইলমুল কিরাআতেরই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ ইলমে তাজবীদ। তাই ইলমুল কিরাআতের মূল ও সুদীর্ঘ কিতাবগুলোতেই তাজবীদের নিয়মকানূন ও মাসায়েল বিস্তারিত ও দলীলসহ উল্লেখিত রয়েছে। তাছাড়াও এই বিষয়ে স্বতন্ত্র অনেক কিতাব লেখা হয়েছে। যেমন :
1ـ الرعاية لتجويد القراءة وتحقيق لفظ التلاوة<. تأليف : الإمام أبو محمد مكي بن أبي طالب القيسي (355ـ 437هـ).
‘আররি‘আয়াহ লি-তাজবীদিল কিরাআতি ওয়া-তাহকীকি লাফযিত তিলাওয়াহ’, ইমাম আবূ মুহাম্মাদ মাক্কী ইবনে আবী তালিব আলকাইসী (৩৫৫ হি.-৪৩৭ হি.)। প্রকাশনী : দারুস সাহাবা, তানতা, মিশর। প্রকাশকাল : ১৪২২ হি. = ২০০২ ঈ.
2ـ التحديد في الإتقان والتجويد<. تأليف: الإمام أبو عمرو عثمان بن سعيد الداني (371ـ444هـ).
‘আততাহদীদ ফিল-ইতকানি ওয়াত-তাজবীদ’, ইমাম আবূ আমর উসমান ইবনে সাঈদ আদদানী (৩৭১ হি.-৪৪৪ হি.)। প্রকাশনী : দারে আম্মার, আম্মান, জর্ডান। প্রকাশকাল : ১৪২১ হি. = ২০০০ ঈ.
3ـ التمهيد في معرفة التجويد<. تأليف: الإمام أبو العلاء الحسن بن أحمد العطار (448ـ521هـ).
‘আততামহীদ ফী মা‘রিফাতিত তাজবীদ, ইমাম আবুল আলা হাসান ইবনে আহমাদ আলআত্তার (৪৪৮ হি.-৫২১ হি.)। প্রকাশনী : দারে আম্মার, আম্মান, জর্ডান। প্রকাশকাল : ১৪২০ হি. = ২০০০ ঈ.
4ـ التمهيد في علم التجويد<. تأليف: الإمام شمس الدين ابن الجزري (751ـ833 هـ).
‘আততামহীদ ফী ইলমিত তাজবীদ’, ইমাম শামসুদ্দীন ইবনুল জাযারী (৭৫১ হি.-৮৩৩ হি.)। প্রকাশনী : মুআস্সাসাতুর রিসালা, বাইরুত, লেবানন। প্রকাশকাল : ১৪২১ হি. = ২০০১ ঈ.
5ـ المقدمة الجزرية< تأليف: الإمام ابن الجزري (751ـ833 هـ).
‘আলমুকাদ্দিমাতুল জাযারিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল জাযারী (৭৫১ হি.-৮৩৩ হি.)।
এই শেষোক্ত কিতাবটি আমাদের উপমহাদেশেও অনেক পরিচিত এবং গ্রহণযোগ্য। আরবী ও উর্দূতে এর অনেক শরাহ রয়েছে। আরবীতে বেশি প্রসিদ্ধ শরাহ মোল্লা আলী কারী রাহ. (১০১৪ হি.)-এর المنح الفكرية ‘আলমিনাহুল ফিকরিয়্যাহ’। উর্দূতে কারী আবুল হাসান আ‘যমী দামাত বারাকাতুহুম-এর একটি সমকালীন শরাহ আছে- النفحة العنبرية ‘আননাফহাতুল আম্বারিয়্যাহ’ নামে। তা মাকতাবা সাওতুল কুরআন, দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ২. কুরআনে কারীমের সূরার নির্দিষ্ট সংখ্যা আলহামদু লিল্লাহ আমার জানা আছে। সর্বমোট একশ চৌদ্দটি সূরা; সর্বপ্রথম সূরা ফাতেহা এবং সর্বশেষ সূরা নাস। কিন্তু কুরআনের সর্বমোট আয়াত সংখ্যা কত, তা জানি না। আশা করি জানাবেন।
উত্তর : এটা তো আপনি নিজেই জানতে পারেন। সাধারণত কুরআনের প্রত্যেক সূরার শুরুতে তার আয়াত সংখ্যা উল্লেখ থাকে। তারপর প্রত্যেক আয়াতের পরে গোল (Ο) চিহ্নের ভেতর আয়াত নম্বর লেখা থাকে। আপনি প্রত্যেক সূরার শুরু বা শেষ থেকে আয়াত সংখ্যা দেখে, সকল সূরার আয়াত সংখ্যা যোগ করে নিতে পারেন। এভাবে হিসাব করলে দেখবেন, সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬। এব্যাপারে আরও কিছু জানতে চাইলে মাসিক আলকাউসারের বিশেষ সংখ্যা ‘কুরআনুল কারীম সংখ্যা’য় প্রকাশিত ‘কুরআন মাজীদের আয়াত-সংখ্যা : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রবন্ধটি দেখে নিতে পারেন।
প্রশ্ন ৩. কুরআনে বর্ণিত ‘লুকমান’ কে ছিলেন?
উত্তর : হযরত লুকমান হাবাশার একজন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি সুদানের অধিবাসী ছিলেন। তাফসীরগ্রন্থে তাঁর নাম লুকমান ইবনে বাঊরা বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাওহীদে বিশ্বাসী এবং আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিপুল প্রজ্ঞা বা হিকমত দান করেছিলেন। তাই তাঁকে লুকমান হাকীম বলা হয়। তাঁর প্রজ্ঞাপূর্ণ অনেক কথা বহুকাল ধরে আরবী প্রাচীন কাব্যে এবং লোকমুখে ব্যক্ত হয়ে আসছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর কিছু প্রজ্ঞাপূর্ণ মূল্যবান উপদেশ কুরআনে কারীমেও উল্লেখ করেছেন।
লুকমান হাকীমের সময়কাল সম্পর্কে অনেক তাফসীরের কিতাবে আছে, তিনি হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের যামানা পেয়েছিলেন। (দ্র. তাফসীরে তবারী; রূহুল মাআনী; তাফসীরে কুরতুবী)
তাঁর সম্পর্কে অনেক ধরনের কথা বাংলা বই-পুস্তকে আছে, সেগুলোর অনেক কিছুই ভিত্তিহীন। কুরআনে কারীম বা সহীহ হাদীসে তাঁর সম্পর্কে বিশদ বিবরণ নেই। শুধু তাঁর উপদেশ বাণীগুলোই কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে। হযরত লুকমান সম্পর্কে খুঁটিনাটি বৃত্তান্ত জানা, কুরআন তার যে নসীহত উল্লেখ করেছে তা হাসিল করার জন্য অপরিহার্য নয়। তাই এসবের অনুসন্ধান না করে বরং কুরআন তাঁর যে নসীহত উল্লেখ করেছে, তা ধারণ করাই কাম্য।
উপদেশগুলোর একটি বড় অংশ সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণসহ মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ ছাহেবের কলমে ‘দান করেছি লুকমানকে হিকমাহ...’ শিরোনামে মাসিক আলকাউসারে শাওয়াল ১৪৩৯ হি./জুলাই ২০১৮ ঈ. থেকে মুহাররম ১৪৪০ হি./অক্টোবর ২০১৮ ঈ. পর্যন্ত মোট চার সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
-বিভাগীয় সম্পাদক