উম্মা খালিদ! হাযিহী সানা!
একদিন তার আব্বু তাকে নিয়ে এলেন নবীজীর কাছে। উম্মে খালেদ তো নবীজীর কাছে আসতে পেরে খুব খুশি। আব্বুর হাত ছাড়িয়ে সে একবার এদিকে যায়, একবার ওদিকে। একবার নবীজীর বালিশ ধরে তো একবার ধরে কম্বল। এমনি করে সব দেখা শেষে সে নবীজীর পেছনে দাঁড়িয়ে খেলা করতে লাগল নবীজীর পিঠের মোহরে নবুওয়ত নিয়ে। নবীজী ঠিকই বুঝতে পারছিলেন তাঁর পেছনে কে দাঁড়িয়ে আছে আর তুলতুলে নরম হাত দুটি কার।
হযরত খালেদ রা. এতক্ষণ তা লক্ষ্য করেননি। হঠাৎ তিনি উম্মে খালেদ নবীজীর মোহরে নবুওয়ত নিয়ে খেলা করতে দেখে ব্যস্ত হয়ে ওঠলেন এবং বললেন, ‘একি করছ উম্মে খালেদ! নবীজীকে বিরক্ত করছ?’
উম্মে খালেদ হকচকিয়ে গেলেন। সত্যিই তো নবীজীকে বিরক্ত করাটা মোটেই ঠিক হয়নি। কিন্তু আমাদের নবীজী তো ছিলেন সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী। শিশুদের তিনি কখনো ধমক দিতেন না, শুধু আদর করতেন। উম্মে খালেদকেও আদর করলেন। আদর পেয়ে উম্মে খালেদ তো খুশিতে আটখানা! নবীজী কত ভালো! আব্বুর চেয়ে ভালো। আব্বু শুধু শুধু বকা দিলেন। আর নবীজী কিছুই বললেন না। শুধু আদর করলেন।
***
একদিন নবীজী কিছু জিনিসপত্র বণ্টন করে দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে দুদিকে সুন্দর পাড়ওয়ালা একটি ছোট নকশা করা ওড়না পেলেন। নবীজী ভাবতে লাগলেন এটা কাকে দেওয়া যায়। কিছুক্ষণ ভেবে একজনকে ডেকে বললেন, ‘উম্মে খালেদকে নিয়ে এসো তো!’ উম্মে খালেদ এলে নবীজী তার মাথায় নিজের হাতে ছোট্ট ওড়নাটা পরিয়ে দিলেন। বললেন, উম্মা খালেদ! হাযিহী সানা!’
‘সানা’ শব্দটি আরবী নয়, হাবাশী। কিন্তু নবীজী তা ব্যবহার করেছেন। এর কারণ হল, উম্মে খালেদ যখন একবারে ছোট তখন তার আব্বা আম্মা তাকে নিয়ে হাবশা দেশে হিজরত করেছিলেন। সে দেশে থেকে উম্মে খালেদ তাদের কিছু কিছু ভাষা শিখে ফেলেছিলেন। সুন্দরকে আরবী ভাষায় বলে ‘হুসনা’। উম্মে খালেদ এটাকে হাবশী ভাষায় বলতেন, ‘সানা’। তাই নবীজীও বললেন, ‘সানা’!
নবীজীর উপহার পেয়ে উম্মে খালিদের কচি মুখখানা ফুলের মতো সুন্দর হাসিতে ভরে উঠল। আর তার কানে বাজতে লাগল নবীজীর বাণী-‘উম্মা খালিদ! হাযিহী সানা’!