মুসলিম মায়েদের প্রতি একটি পয়গাম
নিজের কোনো প্রশংসা করে নয়; বাস্তব কথাটা বুঝবার জন্য বলছি- আল্লাহ তাআলার তাওফীকে জীবনে যতটুকু পড়াশোনা করার সৌভাগ্য হয়েছে এবং যেসকল বিষয়ে দু-চার কলম লেখার সুযোগ হয়েছে তন্মধ্যে জীবনবৃত্তান্তমূলক লেখালেখি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আজ আমি একজন চরিতকার হিসাবে বলছি, আল্লাহর মেহেরবানীতে বুযুর্গানে দ্বীনের জীবনী আমি প্রচুর পড়েছি। আরবীতেও, ফার্সীতেও এবং উর্দূতেও। যেসকল বুযুর্গদের ব্যাপারে গোটা জগদ্বাসী একমত যে, তারা ছিলেন উম্মতের গর্ব ও আলোকবার্তিকা, হক ও হক্কানিয়াতের প্রতীক এবং আল্লাহ তাআলার খাছ ও প্রিয় বান্দা। তাদেরকে যদি উম্মাহর হীরক-মতিও বলা হয় তবুও তাদের মান ক্ষুণ্ন হবে। আপনি এ ধরনের বুযুর্গদের নামের তালিকা নিন। ধরুন, শায়খ আবদুল কাদের জিলানী রাহ.-এর কথা। হিন্দুস্তানের দিকে তাকালে খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রাহ.-এর নাম আসবে। এ দু‘জনের কথাই বলি।
এ দুই মহান বুযুর্গের জীবনী আমি পড়েছি। যেহেতু আমি নদওয়াতুল উলামার সাথে সম্পৃক্ত এবং আমার সখ্য নদওয়াতুল উলামার সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারের সাথে। সে হিসাবে আমি এমন সব কিতাবাদি দেখার সুযোগ লাভ করেছি, অনেকসময় বড় বড় বিদ্বানদের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে আমি তাদের জীবনী পড়েছি। আমি বলতে পারি, এই মহান দুই সত্তার বিনির্মাণে মূল অবদান এবং সবচে কার্যকরি ভূমিকা ছিল যার, তিনি হচ্ছেন তাদের ‘মা’।
হযরত শায়েখ আবদুল কাদের জিলানী রাহ. যখন বাগদাদের উদ্দেশে রওয়ানা করলেন তখন বাগদাদ কেবল মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানীই ছিল না; বরং ইলম ও হিকমত এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, তালীম ও তরবিয়ত এবং দ্বীনী শিক্ষা ও দীক্ষা এবং মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র ছিল বাগদাদ। সেখানে তখন অবস্থান করতেন বড় বড় পীর-বুযুর্গ ও মুরশিদ-মুরব্বী। শিক্ষার জন্য তাতে যেই ব্যবস্থাপনা ছিল অন্য কোথাও সে আয়োজন ছিল না। তো দ্বীনী তালীম ও তরবিয়ত হাছিল করার জন্য হযরত শায়েখ আবদুল কাদের জিলানী রওয়ানা হয়েছেন বাগদাদের উদ্দেশে। ইতিহাসের পাতায় পাওয়া যায়, শিশু আবদুল কাদের যখন সফরে রওয়ানা হবেন তখন মা একটি নসীহত করলেন। বললেন, বাবা! তোমাকে একটি নসীহত করছি, মনে রেখো- কখনো মিথ্যা বলো না, কেমন!
মা নসীহত করে ছেলেকে আল্লাহর হাওয়ালা করে দিলেন। ছেলে চলছে কাফেলার সাথে। তখন তো আর এখনকার মতো সফর ছিল না। মানুষ কাফেলাবদ্ধ হয়ে সফর করত। দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হত। ডাকাতদল পথ আগলে ধরত। হত্যা-লুণ্ঠন করত।
এ কাফেলার সাথেও তাই ঘটল। ডাকাতদল যাত্রা রোধ করল। তারা কাফেলার সবাইকে এক এক করে জিজ্ঞাসা করছিল, তোমার কাছে কী কী আছে। সবাই বলছিল, আমার কাছে কিছুই নেই। আমি রিক্ত, আমি শূন্য। তারপর তারা সবকিছু ঘেঁটেঘুঁটে অনেক মূল্যবান মূল্যবান আসবাব পত্র এবং টাকা পয়সা বের করে আনছিল। সেগুলো তারা সব লুটে নিচ্ছিল এবং তাদেরকে মারপিট করছিল।
এভাবে তাদের লুটতরাজ চলছিল। একেক করে জিজ্ঞাসা করে আসতে আসতে এবার পালা এল আবদুল কাদেরের। তারা জিজ্ঞাসা করল তোমার কাছে কী আছে? তিনি বললেন, আমার কাছে কিছু স্বর্ণমুদ্রা আছে। মা আমাকে সেগুলো সেলাই করে দিয়েছেন। ইতিহাস বলে- কেবল এই একটি কথা! এই কথার প্রভাবে ডাকাতরা সবাই তওবা করে ভালো মানুষে পরিণত হল।
এই একটি বালক। সে চাইলে সবার মতোই উত্তর করতে পারত। বলতে পারত, আমার কাছে কিছু নেই। বাহ্যিক বেশভূষাতেও বুঝবার উপায় ছিল না, বেচারার কাছে কিছু থাকবে। কোনো বিত্তশালী অভিজাত পরিবারের কোনো দুলাল বলেও মনে হচ্ছিল না তাকে। কিন্তু না, সে মায়ের উপদেশ মনে রেখেছে। অকপটে সত্য বলে দিয়েছে। ফলে ডাকাতদল ডাকাতি কী করবে! জীবন বদলে রত হয়ে গেছে। কাফেলার সম্পদ তাদের ফেরত দিয়েছে। নিজেদের রোযগারের অসাধু পথ পরিহার করেছে এবং তওবা করে ঈমানী পথ অবলম্বন করেছে। এটা ইতিহাসের একটি ঘটনা।
একটি পয়গাম শুনুন
আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, প্রায় সকল বুযুর্গ মনীষীর ব্যক্তিত্ব গঠনে মূল ভূমিকা রেখেছেন মায়েরা। তাদের তরবিয়তে বড় অবদান রয়েছে মায়ের, বড় বোনের এবং ঘরের মুরব্বী নারীগণের। মায়েরা সন্তানের হৃদয়ের গভীরে নবী কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার অঙ্কুর রোপণ করে দিন। আদব ও মহব্বতের সাথে যেন তারা নবীর নাম নেয়। নবীর প্রতি এতটাই দিওয়ানা থাকে, যেন এ নামে জান কুরবান করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। সন্তানের এ অবস্থা তৈরি হবে মূলত ঘরের তরবিয়তে।
তেমনিভাবে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে তাদেরকে পরিচিত করে তুলুন। তারা যেন তাদের প্রতি সম্মান নিয়ে বেড়ে ওঠে- সেই দীক্ষা দিন।
এরপর রয়েছে চরিত্র নির্মাণের পর্ব। অন্যায়ের প্রতি অনাসক্তি ও ঘৃণাবোধ জাগ্রত করা এবং ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার মানসিকতা তৈরির পাঠ। কারো মনে কষ্ট দেব না, কাউকে অবজ্ঞা করব না, কাউকে ঠকাব না, বড়দের শ্রদ্ধা করব, তাদের সাথে বেয়াদবি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখব, শরীয়ত নিষেধ করেছে এমন কিছু করব না...।
বলুন, কোন্ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সবকগুলো তাকে রপ্ত করাবেন! এগুলো কি দলীল-প্রমাণ দিয়ে শেখানোর বিষয়! ঘরের পরিবেশে একটি শিশু যতটুকু হাছিল করবে তা আর কোথাও থেকে সম্ভব নয়। মা-বাবার সাথে হাসতে-খেলতে সে এগুলো শিখতে থাকবে।
সন্তানের তরবিয়তের ক্ষেত্রে যে বিষয়টির প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখবেন, তা হচ্ছে- তার অন্তরে শিরকের প্রতি বিতৃষ্ণাবোধ সৃষ্টি করুন। তাওহীদের চেতনায় তাকে উদ্দীপ্ত করুন। তার হৃদয়ে গেঁথে দিন- আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ নেই। তিনিই একমাত্র উপাস্য। তিনি ব্যতীত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ না। আল্লাহর হুকুম ও ক্ষমতায় সবকিছু পরিচালিত হয়। মালিক একমাত্র আল্লাহ। লাভ-ক্ষতি একমাত্র আল্লাহর হাতে। এ কথাগুলো কেবল দলীল দিয়ে উপলব্ধি করার নয়। এক বিশেষ পরিবেশে, এক বিশেষ তরবিয়তে যদি এর চর্চা হয় তবেই তা ফলপ্রসূ হয়।
ছোট থেকেই আপনার শিশুর কোমল হৃদয়ে এ কথাগুলো গেঁথে দিন। তাকে শোনান নবীগণের জীবনী, কুরআনে বর্ণিত ঈমানী ঘটনাগুলো। শোনান হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঘটনা- কীভাবে তিনি শিরকের মোকাবেলা করেছেন। তাওহীদের জন্য কাফেরের অগ্নিকুণ্ড বরণ করে নিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় বন্ধু ইবরাহীমের জন্য সেই ভয়াবহ আগুনকে শান্তিদায়ক শীতল বানিয়ে দিয়েছেন।
এভাবে ঘরের মধ্যেই গল্পে গল্পে তাকে তাওহীদের চেতনায় গড়ে তুলুন। তার মাঝে শিরকের প্রতি ঘৃণাবোধ জাগিয়ে দিন। তেমনিভাবে বিদআতের প্রতি তার মনে অনীহা সৃষ্টি করুন। মিতব্যয়িতা শিক্ষা দিন। কারো মনে কষ্ট দেওয়া যাবে না- এ দীক্ষায় তাকে এগিয়ে নিন।
আজ অভাব কোন্ জিনিসের?
আজ আমাদের দেশে এসব কী হচ্ছে? দেশে কি বিশ্ববিদ্যালয় নেই? উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা নেই? ইংরেজি শিক্ষার প্রোগ্রাম নেই? এমন বাবুদের কি কমতি রয়েছে, যারা ইউরোপ-আমেরিকার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন! তাদের উন্নতি-অগ্রগতির প্রতি গভীর দৃষ্টি রাখেন! এতসব কিছু থাকার পরও রাষ্ট্রের এ হাল কেন? কী আর হল? কর্নাটকে কিছু সময়ের জন্য উর্দুতে সংবাদ প্রচারিত হল; ব্যস, এতেই আগুন ধরে গেল! চল্লিশটি প্রাণ ঝরে গেল এক ঝটকায়। এ মানসিকতা কোত্থেকে তৈরি হচ্ছে? শিক্ষার অগ্রগতি কোথায় গেল? কোথায় রইল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান? কোথায় গেল নীতি ও দর্শনের ডিপার্টমেন্টগুলো? বুদ্ধিজীবীদের কলমগুলো কী করল? ইউরোপের বড় বড় দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের লিটারেচার এবং ভারতের সাধু-সন্ন্যাসীদের নীতি-বাণী কোথায় গেল? কেবল উর্দু ভাষাটা কানে পড়ল আর তাতেই রক্তপাত শুরু হয়ে গেল! বাধ্য হয়ে প্রশাসনকে তা বন্ধ করতে হল! এ ধরনের দাঙ্গার যে ঘটনাগুলো ঘটছে, নিরীহ জনতার রক্ত ঝরছে, ছাত্রদের উপর হামলা হচ্ছে, ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, আরও কত কি ঘটছে যা মুখে আনবার মতো নয়! এ সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে যে উগ্রতার গন্ধ আসে, রক্তের গন্ধ আসে, মানবতার প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণের গন্ধ আসে, আসে হিংস্র সাম্প্রদায়িকতার উৎকট গন্ধ; এর মূল কারণ কী? আমি তো পরিষ্কার বলি, আমাদের প্রজন্মের যে শিক্ষা কোল থেকে লাভ করা উচিত ছিল, দোলনা থেকে যে তরবিয়ত হাছিল করা দরকার ছিল, প্রজন্ম সে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কী মুসলিম ঘর আর কী হিন্দু ঘর, প্রজন্ম বঞ্চিত হচ্ছে তার অধিকার থেকে। আমাদের সন্তানদের ঈমানী পরিচর্যা হচ্ছে না। আখলাকী পরিচর্যা হচ্ছে না। উন্নত মন-মানসিকতা বিনির্মাণের ফিকির করা হচ্ছে না। ফলে একটি শিশু যে পরিবেশের মাঝে বেড়ে উঠছে সে পরিবেশেরই প্রতিফল আজকের এ অরাজকতা। আজ শিশুদের মাঝে সে উপলব্ধি জাগ্রত করা হচ্ছে না, যা তাকে সত্যনিষ্ঠ করে তুলবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তুলবে। সত্যের পক্ষে আপোসহীন করবে। মানুষের দিল ভাঙতে সে কেঁপে উঠবে।
আমাদের চলে যাওয়া পীর-বুযুর্গরা তো এই ভূমিরই বাসিন্দা ছিলেন! আপনি পড়ুন না তাদের জীবনীগুলো। দেখবেন সেসকল বটবৃক্ষের চারাটা রোপিত হয়েছে তাদের ঘরেই।১
আমার তরবিয়তের কথা বলি
আল্লাহর মেহেরবানীতে এখনো হিন্দুস্তানে এমন সম্ভ্রান্ত কিছু খান্দান রয়েছে, যারা এ বিষয়টির প্রতি যত্নবান। ভালো ভালো আলেম পরিবার রয়েছে, যারা এ ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন। আমার পরিবারের কথাই বলি- সেই ছোট্টকাল থেকেই আমার ব্যাপারে দুটি বিষয়ে খুব সতর্ক দৃষ্টি রাখা হয়েছে। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে তাঁদের শোকরগোযার। আমার তরবিয়তে এর ভূমিকা অপরিসীম। ‘কারওয়ানে যিন্দেগীতে’ আমি এ বিষয়ে আলোচনাও করেছি। এখন আপনাদের আবার বলছি। সে দুটি বিষয় হল-
এক. আমার মুখে যেন কোনো হারাম লোকমা না যায়।
দুই. কখনো যেন কারো মনে কষ্ট না দিই।
আজ এ দুটিরই দুর্ভিক্ষ চলছে। বর্তমানে আপনি যে অন্যায়, অবিচার, অরাজকতা, অনাচার, দুর্নীতি, হানাহানি, মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ, উগ্রতা, উশৃঙ্খলা ইত্যাদি যা কিছু দেখছেন এর বড় কারণ হল ঘরের সেই দীক্ষা হ্রাস পাচ্ছে। শিক্ষাকে আবদ্ধ করা হয়েছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেয়ালে। যা পড়তে হয় বিদ্যালয় থেকে পড়। যা শিখতে হয় মিডিয়া থেকে শেখ। কিন্তু এছাড়াও যে ঘরের একটা শিক্ষা, একটা দীক্ষার ব্যাপার রয়েছে- সেই খেয়াল ও সেই ফিকির আজ কোথায়!
মাশাআল্লাহ, এমন কিছু পরিবার এখনো পাওয়া যায়, যাদের ঘরগুলোতে সন্তানের তালীম-তরবিয়তের বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। সন্তানের আকীদা দুরস্ত করা, তার মাঝে আল্লাহভীতি পয়দা করা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ইশক ও মহব্বতের সম্পর্ক তৈরি করা, মানুষের সম্মান করা এবং মানবতার ডাকে সাড়া দেওয়ার সবক শেখানো হয়। মিথ্যা, অন্যায়, প্রতারণা ও অসভ্যতা থেকে বেঁচে থাকার তরবিয়ত করা হয়। আল্লাহর কাছে চাওয়া, তাঁর নিকট রোনাজারি-কান্নাকাটি করা, তাঁর অস্তিত্বে যথাযথ বিশ্বাস স্থাপন করা এবং শিরকমুক্ত তাওহীদ পোষণ করার তালীম দেওয়া হয়। আল্লাহর বান্দা, চাই সে যে ধর্মের হোক, যে বর্ণের হোক, যে স্তরেরই হোক না কেন, সে আল্লাহর বান্দা। তাকে কষ্ট দেওয়া যাবে না- এ দীক্ষায় তাকে গড়ে তোলা হয়।
এ বিষয়গুলোই আজ আমাদের ঘরগুলো থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিতাব খুলে দেখুন, এমন সব ঘটনা পাবেন, যা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। ক্ষুধার্ত শিশু নিজের খাবারটি আরেক শিশুর মুখে তুলে দিচ্ছে। কারণ সে হয়ত তারচে ক্ষুধার্ত। পরোপকারের এসকল ঘটনা মনে হয় কোনো খানকার কারগুজারী। অথচ এগুলো ঘরোয়া তরবিয়তের ফসল।
নারীগণ এ বিষয়ে যত্নবান হোন
নারীগণ এ ব্যাপারে যত্নবান হোন- আপনার সন্তানকে আপনার গড়তে হবে। তার আকীদা দুরস্ত করতে হবে। তার আচার-আচরণ পরিশুদ্ধ করতে হবে। তার মন-মানসিকতা পরিশীলিত করতে হবে। দেখুন, আমি মানসিকতা গঠন করতে বলছি। তা নির্মাণ করতে বলছি। এক হল কোনো কিছু এমনে এমনে হয়ে যাওয়া। আরেক হল কোনো জিনিস হওয়ার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা। তা গঠন করার জন্য মেহনত-মুজাহাদা করা। পৃথিবীতে ভালো-মন্দ যা-ই দেখুন না কেন, তার অবদান বা দায় মৌলিকভাবে বর্তায় তাদের উপর, যারা চিন্তা-চেতনা ও মন-মানস তৈরিতে ভূমিকা রাখে। আমি পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাস পড়েছি। ইউনানী ইতিহাস পড়েছি। ইরানী ইতিহাস পড়েছি। তাদের যখন চরম উৎকর্ষ ছিল তখন তাদের নৈতিক অবস্থান কেমন ছিল তাও জেনেছি।
এজন্য আমি বলছি, সন্তানের দেমাগে সহীহ আকীদা খোদাই করে দিন। ভালো-মন্দ ও ন্যায়-অন্যায়ের ফরক তাদের দিলে বসিয়ে দিন। তাদেরকে এমন মানসিকতায় গড়ে তুলুন, যাতে অন্যায় অপরাধের প্রতি ঘৃণাবোধ তার স্বভাবে পরিণত হয়। মাফ করবেন, আমি কেবল অন্যায় পরিত্যাগ করার কথাই বলছি না; বরং অন্যায়ের প্রতি তার ঘৃণাবোধ সৃষ্টি করার কথা বলছি।
শিশু অনাকাক্সিক্ষত কিছু উল্লেখ করলে তাকে সতর্ক করে দিন- ছিঃ ছিঃ তওবা তওবা, তুমি এসব কী বলছ! শিশু শিশুকে বলবে, বন্ধু বন্ধুকে বলবে- হায়, তুমি এ কী বলছ! তুমি কীভাবে অন্যকে ঠকাবার কথা বলছ! কুকুর বিড়াল বলে গালি দিচ্ছ! অন্যের উপর জুলুম করার কথা ভাবছ! তুমি কীভাবে আরেক ভাইকে খাটো করতে চাইছ! দেখ, আমি কিন্তু এসব শুনতে পারি না।
প্রিয় বোন আমার! এজন্য চাই এমন নারী, যে নিজে সর্বপ্রথম গুনাহের প্রতি অনাসক্ত হবে। সহীহ আকীদাসম্পন্ন একজন নেককার ‘খাতুন’ হবে। পাশাপাশি দিলে এই জযবা থাকতে হবে, সাধ্যমতো আমিও অন্যকে গুনাহের ব্যাপারে অনাগ্রহী করে তুলব এবং অন্যায় থেকে দূরে রাখব। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সেই তাওফীক দান করুন এবং কামিয়াব করুন- আমীন।
[দ্রষ্টব্য : তা‘মীরে হায়াত, ১০ নভেম্বর ১৯৬৪ ঈসাব্দ (ইসলাম মেঁ আওরত কা দরজা আওর উসকে হুকূক ও ফারায়েয, পৃ. ২৩৯-২৪৪)]
ভাষান্তর : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর