শাওয়াল ১৪৪২   ||   মে ২০২১

তাহাজ্জুদ : আল্লাহর প্রিয় হওয়ার আমল

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম

আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে!- বলেছিলেন আম্মাজান আয়েশা রা. দো-জাহানের সরদার হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদ্দেশ্য করে। রাত জেগে দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পড়তে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত, তাই এই অনুযোগ। উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন-

أَفَلاَ أُحِبّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا.

আমার কি উচিত নয় যে,  (এই মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ শোকর আদায়কারী বান্দা হব?’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮২০

কিয়ামুল লাইল- রাত জেগে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নামায, মুমিনের মর্যাদার সিঁড়ি। জান্নাতের যাওয়ার অন্যতম উপায়। সফলতার চাবিকাঠি। আল্লাহর একান্ত ও প্রিয় হওয়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম।  রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও তাহাজ্জুদ ছাড়েননি। ছুটে গেলে কাযা করতেন। নিজে আদায় করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উৎসাহিত করতেন।

মুমিনের মর্যাদার সোপান

জিবরীল আলাইহিস সালাম আল্লাহর হুকুমে নবীজির খেদমতে আসতেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মাঝে ওহীর জ্ঞান ও ঊর্ধ্বজগতের খবর পৌঁছানোর গুরুদায়িত্বটা ন্যস্ত ছিল তাঁর কাঁধে। নবীজীর কাছে আসতেন এবং কিছু উপদেশ ও নসীহত শুনিয়ে আবার সরে যেতেন মানবপরিবেশ থেকে। একদিন উপদেশ শোনানোর পর তিনি নবীজীকে একটি অসাধারণ দর্শন জানালেন-

يَا مُحَمّدُ! شَرَفُ الْمُؤْمِنِ قِيَامُ اللّيْلِ وَعِزّهُ اسْتِغْنَاؤُهُ عَنِ النّاسِ.

قال المنذري في الترغيب والترهيب ১/ ৩৩৩: إسناده حسن، وأشار إلى ثبوته الهيثمي في مجمع الزوائد، ২/ ২৫৩

হে মুহাম্মাদ! মুমিনের মর্যাদা কিয়ামুল লাইল- রাতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় ও বিভিন্ন বন্দেগীর মধ্যে, আর তাঁর সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে। -মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৯২১; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৪২৭৮

ফরয নামাযের পরেই যার স্থান

পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুমিনের পরিচয়। এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর পরই যে নামায আল্লাহর কাছে প্রিয় তা হল তাহাজ্জুদ। হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত হাদীস; নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرّمُ، وَأَفْضَلُ الصّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ، صَلاَةُ اللّيْلِ.

রমযানের পর রোযা রাখার উত্তম সময় মুহাররম মাস আর ফরয নামাযের পর উত্তম নামায রাতের নামায, অর্থাৎ তাহাজ্জুদ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭২৫

যে আমল নবীজী কখনো ছাড়েননি

প্রিয় জিনিস কি কেউ কখনও ছাড়তে চায়? আর যদি সাথে যুক্ত হয় মজবুত ঈমান ও সওয়াবের আশা, হৃদয়ে থাকে প্রভুর প্রতি ভালবাসা এবং আমলের অদম্য প্রেরণা; তখন কঠিন কাজও হয়ে যায় অতি সহজ। হাঁ, আমাদের জন্য এর সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর জীবনসঙ্গীনী ও মুমিন-জননী হযরত আয়েশা রা.-এর যবান থেকেই এর একটি বিবরণ শুনুন। উরওয়া রাহ. বলেন, আয়েশা রা. বলেন-

كَانَ يَقُومُ مِنَ اللّيْلِ، حَتّى تَتَفَطّرَ قَدَمَاهُ، فَقَالَتْ عَائِشَةُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ، وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخّرَ؟ قَالَ: أَفَلاَ أُحِبّ أَنْ أَكُونَ عَبْدًا شَكُورًا.

(নবীজী) রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পাও মোবারক ফুলে যেতো। এ দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এত কষ্ট করছেন, অথচ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমার কি উচিত নয় যে, (এই মহা অনুগ্রহের জন্য আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যমে) আমি একজন পূর্ণ শোকর আদায়কারী বান্দা হব?’ -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮২০

স্বেচ্ছায় তো ছাড়তেনই না, কখনো অনিচ্ছায় ছুটে গেলেও কাযা করে নিতেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকেই বর্ণিত, রোগ-ব্যাধি কিংবা অন্য কোনো কারণে যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেন, তবে দিনের বেলায় বারো রাকাত আদায় করে নিতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৪৬

অন্য বর্ণনায় আছে, আবদুল্লাহ ইবনে কাইস রা.-কে হযরত আয়েশা রা. বললেন-

ياعَبْدَ اللهِ لاَ تَدَعْ قِيَامَ اللّيْلِ، فَإنّ النّبِيّ صَلّى الله عَلَيْهِ وَسَلّمَ مَا كَانَ يَدَعُهُ وَكَانَ إِذَا مَرِضَ أَوْ كَسِلَ صَلّى قَاعِدًا.

হে আবদুল্লাহ! কিয়ামুল লাইল কখনো ছেড়ো না! কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা কখনো ছাড়েননি। কখনো অসুস্থতা বা দুর্বলতা বোধ করলে বসে আদায় করতেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩০৯

পাপ মুছে দেয়

তাহাজ্জুদ গোনাহ মিটিয়ে দেয় এবং মানুষকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللّيْلِ فَإِنّهُ دَأَبُ الصّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌ لِلسّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ.

তোমরা কিয়ামুল লাইলের প্রতি যত্নবান

হও। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সালেহীনের অভ্যাস এবং রবের নৈকট্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। আর তা পাপরাশী মোচনকারী এবং গোনাহ থেকে বাধা প্রদানকারী। -জামে তিরমিযি, হাদীস ৩৫৪৯; মুসতাদরাকে হাকেমহাদীস ১১৫৬

কিয়ামুল লাইল : জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য

পবিত্র কুরআনে মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

اِنَّ الْمُتَّقِیْنَ فِیْ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوْنٍ.

সেদিন নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবণবিশিষ্ট জান্নাতে। -সূরা যারিয়াত (৫১) : ১৫

সাথে তাদের কিছু গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের বিবরণও এসেছে। তন্মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল-

وَ بِالْاَسْحَارِ هُمْ یَسْتَغْفِرُوْنَ.

রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত। -সূরা যারিয়াত (৫১): ১৮

ইবাদুর রহমান-রহমানের বান্দাদের কতিপয় বৈশিষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে কুরআনে কারীমের সূরা ফুরকানে। সেখানেও উপরোল্লিখিত বৈশিষ্ট্যটি বিবৃত হয়েছে-

وَ الَّذِیْنَ یَبِیْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا.

আর তাঁরা রাত অতিবাহিত করে তাঁদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদারত হয়ে এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬৪

সূরার শেষের দিকে তাদের পুরস্কারের বিবরণও এসেছে-

اُولٰٓىِٕكَ یُجْزَوْنَ الْغُرْفَةَ بِمَا صَبَرُوْا وَ یُلَقَّوْنَ فِیْهَا تَحِیَّةً وَّ سَلٰمًا، خٰلِدِیْنَ فِیْهَا حَسُنَتْ مُسْتَقَرًّا وَّ مُقَامًا.

তাদের প্রতিদান দেয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ কক্ষ। কারণ তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসেবে তা কত উৎকৃষ্ট! -সূরা ফুরকান (২৫) :  ৭৫-৭৬

কিয়ামুল লাইল : জান্নাত লাভ ও মর্যাদা বৃদ্ধির আমল

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন, মানুষের সাথে আমিও তাঁকে একনজর দেখবার জন্য বের হলাম। তাঁর চেহারা মোবারকের দিকে যখন তাকালাম, আমার বিশ্বাস হয়ে গেল, এ কোনো মিথ্যাবাদির চেহারা হতে পারে না। তখন তাঁর মুখে সর্বপ্রথম আমি যে কথাগুলো শুনেছি-

يَا أَيّهَا النّاسُ، أَفْشُوا السّلاَمَ، وَأَطْعِمُوا الطّعَامَ، وَصَلّوا وَالنّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُونَ الجَنّةَ بِسَلاَمٍ.

হে লোকসকল! সালামের প্রসার কর। মানুষকে আহার করাও! আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, তখন তুমি নামায আদায় কর! তবেই নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -জামে তিরমিযি, হাদীস ২৪৮৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩২৫১

অন্য হাদীসে পাওয়া যায়, উপরোক্ত গুণাবলী যাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, জান্নাতে থাকবে তাঁদের জন্য বিশেষ মর্যাদা। হযরত আবু মালেক আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ فِي الْجَنّةِ غُرْفَةً يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا، وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا أَعَدّهَا اللهُ لِمَنْ أَطْعَمَ الطّعَامَ، وَأَلَانَ الْكَلَامَ، وَتَابَعَ الصِّيَامَ وَصَلّى وَالنّاسُ نِيَامٌ.

নিশ্চয়ই জান্নাতে রয়েছে এমন কিছু কক্ষ/প্রাসাদ, যার বাহির থেকে ভেতরাংশ দেখা যাবে, ভেতর থেকে বহিরাংশ দেখা যাবে। এগুলো আল্লাহ তাঁদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল ভাষায় কথা বলে, ধারাবাহিকভাবে রোযা রাখে, সালামের প্রসার ঘটায় এবং রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তারা নামাযে দণ্ডায়মান থাকে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯০৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫০৯; জামে তিরমিযি, হাদীস ২৫২৭

কিয়ামুল লাইল : কিছু আদব

অন্য সকল আমলের মতো এই ফযীলতপূর্ণ আমলটির ক্ষেত্রেও কিছু আদব ও নিয়ম-নীতি রয়েছে :

চোখ মুছে নেওয়া এবং দুআ পড়া

ইবনে আব্বাস রা. নবীজীর রাতের আমল প্রত্যক্ষ করার জন্য তার খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা.-এর ঘরে ছিলেন। তিনি বলেন, দেখলাম-

... اسْتَيْقَظَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، فَجَلَسَ يَمْسَحُ النّوْمَ عَنْ وَجْهِهِ بِيَدِهِ، ثُمّ قَرَأَ العَشْرَ الآيَاتِ الخَوَاتِمَ مِنْ سُورَةِ آلِ عِمْرَانَ.

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে দুই হাত দিয়ে চোখ মুছে ঘুম দূর করলেন এবং সূরা আলে ইমরানের  শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করলেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬৩

মিসওয়াক করা

হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন তাহাজ্জুদের জন্য উঠতেন, তখন ভালো করে মিসওয়াক করতেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৩৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫১৬

হযরত আলী রা. বলেন-

إِذَا قَامَ مِنَ اللّيْلِ فَتَسَوّكَ ثُمّ تَوَضّأَ ثُمّ قَامَ إِلَى الصّلَاةِ جَاءَهُ الْمَلَكُ حَتّى يَقُومَ خَلْفَهُ يَسْتَمِعُ الْقُرْآنَ فَلَا يَزَالُ يَدْنُو مِنْهُ حَتّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيهِ فَلَا يَقْرَأُ آيَةً إِلّا دَخَلَتْ جَوْفَهُ.

কেউ যখন রাতে তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য ওঠে এবং মিসওয়াক করে ওযু করে, অতঃপর নামাযে দণ্ডায়মান হয় তখন ফিরিশতা তিলাওয়াত শোনার জন্য পিছনে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর ফিরিশতা তার নিকটবর্তী হতে থাকে; একপর্যায়ে খুব নিকটে চলে আসে এবং ব্যক্তির  মুখে মুখ রেখে দেয়। তখন সে যা তিলাওয়াত করে ফিরিশতার উদরে চলে যায়। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৮১০; ফাযলু কিয়ামিল লাইল, আজুররী, হাদীস ৩৫

প্রথমে হালকা দুই রাকাত দিয়ে শুরু করা

প্রথমে ছোট সূরা দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে দুই রাকাত আদায় করবে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করতেন। আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে যখন নামাযের জন্য উঠতেন-

افْتَتَحَ صَلاَتَهُ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.

শুরুতে হালকা করে দুই রাকাত আদায় করতেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৫৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ৬৬৮২

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেন-

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللّيْلِ، فَلْيَفْتَتِحْ صَلاَتَهُ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ.

তোমাদের কেউ যখন রাতে উঠবে, সে যেন প্রথমে হালকা দুই রাকাতের মাধ্যমে শুরু করে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৬৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩২৩

নিয়মিত আদায় করি

আর আমরা চেষ্টা করব তাহাজ্জুদ নিয়মিত আদায় করতে। একান্ত ওজর ছাড়া তাহাজ্জুদ ছাড়ব না। নবীজী নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। যেকোনো আমল নিয়মিত আদায় করা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়। হাদীসে এসেছে-

أَحَبّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلّ.

আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৬৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৪২

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা.- কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপদেশ দিয়ে বলছেন-

يَا عَبْدَ اللهِ، لاَ تَكُنْ بِمِثْلِ فُلاَنٍ كَانَ يَقُومُ اللّيْلَ فَتَرَكَ قِيَامَ اللّيْلِ.

হে আব্দুল্লাহ! অমুকের মতো হয়ো না। সে নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করত; কিন্তু পরবর্তীতে আবার ছেড়ে দিল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭০৩

রাত্রি জাগরণে ভারসাম্য রক্ষা

অনেক সময় এমন হয় সারা রাত জেগে নামায পড়া হল, কিন্তু ভোর রাতে একটু বিশ্রাম করতে গিয়ে ফজরের জামাতই ছুটে গেল। অথচ ফজরের জামাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। হাদীসের কিতাবে একটি ঘটনা পাওয়া যায়-

উমর ইবনে খাত্তাব রা. একদিন ফজরের সালাতে সুলায়মান ইবনে হাসমা রা.-কে পাননি। সকালে উমর রা. বাজারে গেলেন। সুলায়মান রা.-এর বাড়ি হল বাজার আর মসজিদে নববীর মাঝখানে। তাই সুলায়মান রা.-এর মা শিফা রা.-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উমর রা. তাঁকে জিজ্ঞেস  করলেন, সুলায়মানকে ফজরে দেখলাম না। তিনি বললেন, সে রাতে সালাত আদায় করেছে। একপর্যায়ে তার ঘুম চলে এসেছে। উমর রা. বললেন-

لأن أشهد صلاة الصبح في الجماعة أحب إلي من أن أقوم ليلة.

ফজরের জামাতে উপস্থিত হওয়া আমার নিকট সারারাত সালাত আদায় করার চাইতে বেশি প্রিয়। -মুয়াত্তা মালিক, হাদীস ৭

ঘুমের চাপ হলে বিশ্রামে চলে যাওয়া

অনেকসময় এমন হয় যে, ঘুমের চাপ এত বেশি থাকে যে, আমল করাই কঠিন হয়ে যায়। নামাযে কী পড়ছে, কয় রাকাত

পড়ল কিছুই বুঝতে পারে না। এ অবস্থায় নামায জারি না রেখে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেওয়া চাই। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ فِي الصّلاَةِ فَلْيَرْقُدْ حَتّى يَذْهَبَ عَنْهُ النّوْمُ، فَإِنّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلّى وَهُوَ نَاعِسٌ لَعَلّهُ يَذْهَبُ يَسْتَغْفِرُ، فَيَسُبّ نَفْسَهُ.

যদি (রাতের) নামাযে কারো তন্দ্রা আসে সে যেন শুয়ে যায়, যতক্ষণ না তার ঘুম দূর হয়। কেননা এ অবস্থায় (সে কী বলে কিছুই বুঝতে পারে না;) হয়ত সে ইসতিগফার করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসতে পারে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৭৮৫

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللّيْلِ، فَاسْتَعْجَمَ الْقُرْآنُ عَلَى لِسَانِهِ، فَلَمْ يَدْرِ مَا يَقُولُ، فَلْيَضْطَجِعْ.

যখন কেউ রাতে নামাযে দাঁড়াল, কিন্তু  (ঘুমের কারণে) তার মুখে উচ্চারিত কুরআন এত অস্পষ্ট শোনা যেতে লাগল যে কী বলছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না, সে যেন শুয়ে পড়ে! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৮৭

সপরিবারে তাহাজ্জুদ

এত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতের আমল একা কেন, পরিবারের অন্যান্যদেরও অংশগ্রহণ করাতে পারি এবং অনায়াসেই শামিল হতে পারি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র যবানের নূরানী দুআয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللّيْلِ فَصَلّى، ثُمّ أَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، وَرَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللّيْلِ فَصَلّتْ، ثُمّ أَيْقَظَتْ زَوْجَهَا فَصَلّى، فَإِنْ أَبَى نَضَحْتَ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ.

সে ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে, তারপর স্ত্রীকে জাগিয়ে দেয় এবং সেও সালাত আদায় করে। স্ত্রী যদি উঠতে না চায় তখন তার চেহারায় পানি ছিটিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। তদ্রƒপ ওই নারীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন, যে রাতে উঠে সালাত আদায় করে তারপর স্বামীকে জাগিয়ে দেয় এবং স্বামী উঠে সালাত আদায় করে। স্বামী উঠতে না চাইলে চেহারায় পানি ছিটিয়ে হলেও তাকে উঠানোর চেষ্টা করে। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৩০২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৩৬

আরেক হাদীসে এসেছে, স্বামী-স্ত্রী যদি একে অপরকে জাগিয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করে তাহলে আল্লাহ তাদেরকে যাকিরীনের মধ্যে গণ্য করেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنِ اسْتَيْقَظَ مِنَ اللّيْلِ وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ فَصَلّيَا رَكْعَتَيْنِ جَمِيعًا كُتِبَا مِنَ الذّاكِرِينَ اللهَ كَثِيرًا وَالذّاكِرَاتِ.

যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য রাতে ওঠে এবং স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয়; অতঃপর দুজনে একসাথে দুই রাকাত নামায আদায় করে তাদেরকে যাকিরীনের মধ্যে গণ্য করা হয়, যারা বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৩০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৩৫

কিয়ামুল লাইল হোক জীবনের অংশ!

রমযান মাস মুমিনের জন্য আমলের বসন্ত। রমযান সঞ্চার করেছিল আমাদের হৃদয়ে আমলের প্রেরণা ও স্পৃহা। রমযানে সাহরিকে কেন্দ্র করে অনেকেই কমবেশি তাহাজ্জুদের আমল করতে পেরেছি, আলহামদু লিল্লাহ! বিদায় রমযান, কিন্তু তার অনেক আমলই অব্যাহত রাখা যায় বারো মাস। উসতাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক ছাহেব হাফিযাহুল্লাহু বলেছেন-রমযান বিদায় হয়ে যাচ্ছে ঠিক, কেউ চাইলেও সেটি আর ধরে রাখতে পারবে না, কারণ সেটি হেলাল দিয়ে শুরু হয়, হেলাল দিয়ে শেষ হয়। কাজেই এটি ধরে রাখার উপায়ও নেই। কিন্তু  যেটি ধরে রাখা সম্ভব সেটি হল রমযানের আমল এবং আছার ধরে রাখা। রমযানে রোযা, তারাবীহ, তিলাওয়াত, তাহাজ্জুদ এবং যিকির-আযকার; এগুলোর প্রতি অন্তরে যে ভালোলাগা তৈরি হয়েছে, আল্লাহর প্রতি যে ভালোবাসা এবং ভয় বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটি জাগ্রত রাখা।’  হুজুর আরও বলেছেন-রমযানের ফরয  রোযা অন্য মাসে পাওয়া যাবে না, বাকি সবকিছুই আগের মতো। ফরয রোযা না থাকলেও নফল রোযা আছে বছরময়। তারাবীহ নেই, কিন্তু তাহাজ্জুদ আছে বারো মাস।-মাজালিসে ইতেকাফ পৃ. ২০৪

প্রথম কাজ নিয়ত ও সংকল্প

এখনই নিয়ত করে ফেলতে পারি আল্লাহর নৈকট্য লাভের এ আমলটির জন্য। নিয়মিত শুরু করি আমলটি। রমযানে যদি কিছুটা হয়ে থাকে, এখন পুরোপুরি অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করি। প্রথম কাজই হল নিয়ত করে ফেলা। দিল থেকে নিয়ত করতে পারলে আমল সহজ হয়ে যায়। সত্যিই নিয়ত অনেক কার্যকরী একটি উপাদান। মুমিনের অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্বল। এর মাধ্যমে আমলসমূহের শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার হয় যে কেবল তা নয়; অনেকসময় ওজরবসত আমল করতে না পারা আমলেরও সওয়াবও পেয়ে যায় মুমিন শুধু এই নিয়তের কারণে। সালাতুল লাইলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ أتى فِراشَه وَهُوَ يَنْوي أن يّقُومَ يُصلِّي مِنَ اللّيلِ فغلبتْهُ عَيْناه حَتّى أصْبحَ، كُتبَ لَه مَا نَوى، وَكانَ نومُهُ صدَقةً عَلَيْهِ مِنْ رّبِّه - عز وجل

যে ব্যক্তি রাতে নামায পড়ার নিয়ত করে বিছানায় গেল, কিন্তু ঘুম তাকে পরাস্ত করল, সে উঠতে পারল না, সকাল হয়ে গেল, তাহলে নিয়তের কারণে তার আমলনামায় আমলের সওয়াব লেখা হবে। আর এই ঘুম রবের পক্ষ থেকে তার জন্য সদাকা বলে বিবেচিত হবে। -সুনানে নাসাঈ, হাদীস ১৭৮৭

অতি আরামদায়ক বিছানা : শেষ রাতে ওঠার প্রতিবন্ধকতা দূর করি

বিছানা অতি আরামদায়ক হলেও শেষ রাতে উঠতে কষ্ট হয়ে যায়। কারণ বিছানা যত আরামদায়ক হবে ঘুম তত গভীর হবে। ফলে শেষ রাতে ওঠা কষ্টকর হয়। নবীজীর ঘটনা- উম্মুল মুমিনীন হাফসা রা. একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য দু-পাট্টার বিছানাকে চার পাট্টা করে দিয়েছেন, যেন একটু আরাম হয়। সকালে নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, গত রাতে কী বিছিয়েছিলে? বললেন, আগের বিছানাই তো ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেবল দু-পাট্টাকে চার পাট্টা করে দিয়েছিলাম। নবীজী তখন বললেন-

رُدّوْهُ لِحالَتِهِ الأوْلى فإنّه مَنَعَتْنِي وَطاءَتُه صَلاتِيَ اللّيْلَةَ.

আগের মতো করে দিও! কারণ এর কোমলতা আমাকে রাতে নামায থেকে বিরত রেখেছে। -শামায়েলে তিরমিযি, হাদীস ৩৩০

গভীর রাতে প্রভুর সান্নিধ্যে

গভীর রাত। সবাই এখন আরামের নিদ্রায়। আমি আরামের নিদ্রা ত্যাগ করেছি কেবল আপন রবের সান্নিধ্য লাভের জন্য। হাঁ, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- এসময় স্বয়ং আল্লাহ বান্দার নিকটবর্তী হয়ে যান। এমন সময় যদি আমিও আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করি তাহলে খুব সহজেই লাভ হবে রবের সান্নিধ্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ-

أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الرّبّ مِنَ العَبْدِ فِي جَوْفِ اللّيْلِ الآخِرِ، فَإِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمّنْ يَذْكُرُ اللهَ فِي تِلْكَ السّاعَةِ فَكُنْ.

هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ مِنْ هَذَا الوَجْهِ.

রাতের শেষভাগে রব তাঁর বান্দার খুব নিকটবর্তী হন। যদি পার, ওই সময় আল্লাহর যিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও! -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১২৭৭

রাতের শেষ প্রহর : রব তোমাকে ডাকছেন!

আল্লাহ যেন আমার ডাকে সাড়া দেন। তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন- এর জন্য আমাদের কত ভাবনা! কোন্ আমল করলে আল্লাহ আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন, কখন কীভাবে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা করবেন- কত ভাবনা। কিন্তু বিষয়টি যদি এমন হয়- স্বয়ং আল্লাহ বান্দাকে ডাকতে থাকেন দুআ কবুলের জন্য, আল্লাহ ডাকতে থাকেন বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য! হাঁ, রাতের শেষ প্রহর! এটিই সময় দুআ কবুলের, এটিই সময় রবের ক্ষমা লাভের। কারণ এসময় রাব্বুনা তাবারাকা ওয়া তাআলা বান্দার ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য, তাকে ক্ষমা করার জন্য ডাকতে থাকেন। শুনুন নবীজীর পাক যবানে-

يَنْزِلُ رَبّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلّ لَيْلَةٍ إِلَى السّمَاءِ الدّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي، فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ.

আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছো, দুআ করবে আমি তার দুআ কবুল করব। কে আছো, আমার কাছে (তার প্রয়োজন) চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮

এর জন্য সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল, তাহাজ্জুদ। তাই আসুন, তাহাজ্জুদের প্রতি যত্নবান হই। নিজে অভ্যস্ত হই। অন্যকেও উৎসাহিত করি এবং সহযোগিতা করি।

বিদায় হয়ে গেল পবিত্র রমযান। সাহরীতে যেহেতু উঠেছি, ফলে তাহাজ্জুদের সময় ওঠার একটা অনুশীলন হয়েছে দীর্ঘ এক মাস। এখন কেবল সেটি ধরে রাখলেই হয়। শেষ রাতে ওঠার এ অভ্যাস কাজে লাগাই। রমযানের এই অভ্যাস ধরে রাখি বছরময়। দু-চার রাকাত আদায় করে আল্লাহর দরবারে রোনাযারি, কান্নাকাটি করি, ইসতিগফার করি। তাঁর নৈকট্য ও মাগফিরাত লাভে ধন্য হই। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক দান করুন- আমীন! হ

 

 

advertisement