আমার মুহসিন কিতাব-২
[নওয়াব সদর ইয়ার জঙ্গ মাওলানা হাবীবুর রহমান খান শেরওয়ানী রাহ. ১২৮৩ হিজরীর ২৮ শাবান/১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি আলীগড় জেলার ভীকনপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিখ্যাত আফগানী খান্দান শেরওয়ানী বংশের। বংশগতভাবেই জমিদার ছিলেন। ভীকনপুরে তাঁদের জমিদারী ছিল।
পারিবারিক সুখ সমৃদ্ধির মধ্যে থেকেও তিনি ছিলেন ধীমান বিদ্যানুরাগী।
প্রাথমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করেন মৌলভী আবদুল গণী কায়েমগঞ্জী রাহ.-এর কাছে। এরপর সান্নিধ্য লাভ করেন উস্তাযুল উলামা মাওলানা লুতফুল্লাহ কোয়েলী রহ.এর। আরবী পড়ার পাশাপাশি তিনি ইংরেজি ভাষাও রপ্ত করেন। হাদীসের দরস গ্রহণ করেন শায়খ হুসাইন ইবনে মুহসিন আল-আনসারী রাহ.-এর কাছে।
তিনি ছিলেন মাওলানা ফযলুর রহমান গঞ্জমুরাদাবাদী রাহ.-এর খলীফায়ে মুজায।
নদওয়াতুল উলামার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল অনেক গভীর। সে সম্পর্ক নদওয়ার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। তিনি নদওয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অন্যতম। এছাড়াও তিনি এ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে বিভিন্ন সময়ে নিযুক্ত ছিলেন। ১৩২২ হিজরীতে নদওয়ার মুখপত্র হিসেবে যখন ‘আন-নদওয়া’ প্রকাশিত হয় তখন তিনি ও মাওলানা শিবলী নোমানী রাহ. পত্রিকাটি সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল মজবুত। সেখানে ‘কিসমুদ দিরাসাতিত দীনিয়্যাহ’র প্রধান ছিলেন তিনি দীর্ঘদিন। এমনিভাবে হিন্দুস্তানের অনেক শিক্ষা ও দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে তাঁর খেদমত ছিল সুব্যাপ্ত।
জামিয়া উসমানিয়া প্রতিষ্ঠা ও পরিকল্পনায় তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য। এ প্রতিষ্ঠানের প্রথম উপাচার্যও তিনি। মোহামেডান কলেজকে মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তর করার ব্যাপারেও তাঁর ভূমিকা অনেক। তিনি ছিলেন দারুল মুসান্নিফীনের আজীবন প্রধান। এছাড়া ১৯১৮ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত প্রায় তেরো বছর তিনি হায়দারাবাদের ধর্মমন্ত্রী ছিলেন।
নানামুখী দীনী খেদমতের পরও তাঁর ইলমী মুতালাআ ছিল ঈর্ষণীয়। তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরী উপমহাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত লাইব্রেরীগুলোর অন্যতম। ইনতিকালের পর এখন সেটি আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাওলানা আযাদ লাইব্রেরী’র অংশ। এ লাইব্রেরীতে হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি।
তিনি উঁচু মাপের ঐতিহাসিক এবং উর্দু ভাষার বড় লেখক ও সাহিত্যিক ছিলেন। উর্দূ ও ফার্সী ভাষায় লেখা তাঁর কবিতার সংখ্যাও অনেক। তার রচনাবলির মধ্যে আছে, তাযকিরায়ে বাবর, সীরাতুস সিদ্দীক, ইমাম আবু হানীফা আওর উনকে নাকিদীন, উলামায়ে সালাফ, না-বীনা উলামা, উস্তাযুল উলামা, রাসায়েলে সীরাত ও মাকালাতে শেরওয়ানী ইত্যাদি।
শিক্ষাবিদ ও দাঈ এই আলেমেদ্বীন ১৩৬৯ হিজরীর ২৬ শাওয়াল/১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট জুমার দিন আলীগড়ে ইনতিকাল করেন। তাঁর নামে রাখা গ্রাম ‘হাবীবগঞ্জ’-এর পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর কবর। -সংকলন : অনুবাদক]
বীজ বোনার আগে একজন মালী প্রথমে উপযুক্ত জমি নির্বাচন করে। তারপর সেচ দেয় এবং আবর্জনা খড়কুটো পরিষ্কার করে। জমি প্রস্তুত করার পর উন্নত বীজ এনে বুনে। এরপর রোদ বৃষ্টি থেকে বীজকে রক্ষা করে এবং চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে। চারা গজিয়ে উঠলে নিয়মিত পানি দিয়ে তাকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। এভাবে দীর্ঘদিনের যত্ন পরিচর্যায় সেই চারা বৃক্ষে পরিণত হয়। ছায়া ও ফল দিয়ে পৃথিবীকে উপকৃত করে।
একজন তালিবুল ইলমের বিষয়ও এমন। প্রথমে তাকে সকল বদঅভ্যাস থেকে মুক্ত হতে হয়। মন্দ চরিত্র থেকে পবিত্র হতে হয়। ইলম অর্জন ও ইলমের নেক প্রভাব গ্রহণের জন্য এই পবিত্রতা খুব জরুরি।
দেখা যায়, তালিবুল ইলমকে সবচে বেশি প্রভাবিত করে তার পারিবারিক পরিবেশ। এরপর উস্তাযের সোহবত, পাঠদান ও নেগরানী। তারপর নিজ উদ্যোগে করা মেহনত ও পরিশ্রম।
এ বিষয়গুলো ইলমের জমিন প্রস্তুত করার মতো। এরপর বিষয় বা শাস্ত্র নির্বাচন মালীর বীজ নির্বাচনের মতো। আর দরস ও নেগরানী সেই বীজে পানি দেওয়া ও পরিচর্যা করার মতো।
আমি আমার নিজের কথা বলছি, আল্লাহর মেহেরবানীতে যে পরিবেশে আমি বেড়ে উঠেছি তা ছিল ইলম ও সাহিত্য চর্চার পরিবেশ। আমার মুরুব্বি ছিলেন আমার চাচা মৌলভী আবদুশ শাকুর খান রাহ.। তিনি আরবী পড়াশোনা করেন ‘মোল্লা হাসান’ (শ্রেণি) পর্যন্ত। তিনি মাওলানা সায়্যিদ আলম আলী মুরাদাবাদী রাহ.-এর ছাত্র। তাঁর কাছে হাদীস পড়েছেন। শুনেছি তাঁর মুরিদও ছিলেন। সায়্যিদ সাহেব তখন ভীকনপুরে এলে সপ্তাহ বা কয়েক মাসও অবস্থান করতেন। অধিকাংশ সময়ই অবস্থান করতেন চিকিৎসার জন্য। মাওলানা লুতফুল্লাহ ছাহেব, মাওলানা ফয়যুল হাসান সাহারানপুরী ছাহেব এবং এমন আরো অনেকেই তখন ভীকনপুরে আসতেন।
ওদিকে মৌলভী আবদুল গফুর খান নকশ্বন্দী রাহ.-এর বাড়িতে সবসময় তাঁর মুরিদান থাকত। বাড়ির ভেতরে এবং বাইরেও নিয়মিত যিকিরের হালকা হত।
আর মৌলভী সায়্যিদ হুযূর আহমদ ছাহেব সাহসাওয়ানী রাহ.-এর বয়ানে মসনবীর প্রভাব এত বেশি ছিল, দীর্ঘ এক যুগ পর এখনো আমি তা অনুভব করি।
সৌভাগ্যের আরেকটি বিষয় ছিল এই যে, আমার দাদাজান মুহাম্মদ খাঁ যামান খাঁ সাহেব (যিনি শাহ আবদুল আযীয রাহ.-এর মুরিদ ছিলেন) সায়্যিদ আমীনুদ্দীন জালীসরী-এর মাধ্যমে একটি ফতোয়া সংগ্রহ করেছিলেন শাহ ইসহাক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. থেকে। ফতোয়ার বিষয় ছিল, বিয়ে-অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন শোক-প্রথা পালন। ‘মাসায়েলে আরবাঈন’ নামে সেটি এখনো প্রসিদ্ধ। দাদাজান সেই ফতোয়া অনুযায়ী তাঁর বড় ভাই হাজ্বী মুহাম্মদ দাউদ খাঁ সাহেবের তত্ত্বাবধানে খান্দানের বিভিন্ন প্রথা পালন ও উৎসব উদযাপনের সংশোধন করেছিলেন। আল্লাহর মেহেরবানীতে তার কিছু এখনো অবশিষ্ট আছে। এ কারণে আমাদের পরিবার সব সময় অর্থহীন কুপ্রথা থেকে পাকসাফ ছিল। বিশেষ কোনো প্রথা পালনে বাড়াবাড়ির কোনো ঘটনা আমাদের পরিবারে কখনো দেখিনি।
আমার আব্বাজান রাহ.-এর আগ্রহ ছিল উর্দূ সাহিত্য ও ফারসী ইতিহাস-গ্রন্থের প্রতি। তিনি তার অধ্যয়ন থেকে একটি চয়নিকাও প্রকাশ করেছিলেন ‘সারাপা মাশুক’ নামে। সাধারণত তার মুতালাআয় থাকত তারীখে ফেরেশতা, সিয়ারুল মুতাআখখিরীন, তুযকে জাহাঙ্গীরী ও রওযাতুস সাফা ইত্যাদি। রাতের খাবারের আগে ও দুপুরে বিশ্রামের সময় শুয়ে শুয়ে তিনি কিতাব পড়তেন । আর বলতেন, রওযাতুস সাফা কিতাবের ভারে বুক ব্যথা হয়ে যায়। এমনিতে একান্ত আলাপচারিতায় ইতিহাসের ঘটনা বেশি বলতেন।
আমি চোখ মেলেছি এই পরিবেশে। আলহামদু লিল্লাহ এখনো চোখের সামনে সে পরিবেশই আছে। অন্য কোনো পরিবেশ তাতে অনুপ্রবেশের সুযোগ পায়নি।
মূল বিষয়ে ফিরে আসি। সর্বপ্রথম যেই কিতাব আমি নিজে পড়েছি তা ছিল মির্যা গালিবের ‘উরদুয়ে মুআল্লা’। কিতাবটি আব্বাজান রাহ. আমাকে দেখতে দিয়েছিলেন। মনে করুন এটিই ছিল আমার কিতাব দেখার আগ্রহের ভিত। বয়স কম ছিল। পুরোপুরি বুঝতামও না। শুধু দেখে যেতাম। তাতেও কিছুটা সাহিত্য বোধ ও রুচি তৈরী হচ্ছে বলে অনুভব করেছি।
মুহতারাম চাচাজান রাহ. এর ওখানে ফিকহ ও দ্বীনী মাসায়েলের তাহকীক হত। তিনি প্রচলিত ধারার তার্কিক ও তাদের আঙ্গিক উপস্থাপন এড়িয়ে চলতেন। দেখেছি এর প্রভাব আমার মধ্যেও পড়েছে। (হয়ত তাঁর সোহবতের বরকতেই আল্লাহ তাআলা আমাকে তাদাব্বুরের সাথে কুরআনে কারীম মুতালাআর তাওফীক দিয়েছেন। হাদীস ও আসার মুতালাআর আগ্রহ দিয়েছেন। ফলে যখন আমি কানযুল উম্মাল মুতালাআ করেছি, তার সুব্যাপ্ত সংকলনে অনেক মুগ্ধ হয়েছি।)
‘উরদুয়ে মুআল্লা’র রুচি শৈলী বুঝার পর পড়েছি মির্যা গালিবের ‘ইনশায়ে ঊদে হিন্দি’। এটি পড়েছি বারবার। এরমধ্যেই এক সময় ইংরেজি পড়া শুরু করেছি। তখন আমার উস্তায হাজী আবদুর রশীদ খান সাহেবের দেয়া উৎসাহে উর্দু প্রবন্ধও লিখতে শুরু করেছি। এরপর সেগুলো পত্রিকায় ছাপতে দিয়েছি। এসময় তাঁর কাছে মৌলভী মুহাম্মাদ হুসাইন আযাদ দেহলভী রাহ.-এর ‘তাযকিরায়ে আবে হায়াত’ কিতাবটি এল। খুব আগ্রহের সঙ্গে তিনি সেটি পড়লেন। তাঁর আগ্রহ দেখে আমারও আগ্রহ হল। আমি কয়েকবার পড়লাম। প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ উভয়টিই পড়লাম। এরপর পড়লাম ‘দরবারে আকবরী’। সেটি পড়লাম খুব আগ্রহ নিয়ে ভেবেচিন্তে।
ইতোমধ্যে আলীগড় যাওয়া আসা শুরু হল। সেখানে স্যার সায়্যিদ আহমদ এর খেদমতে হাযির হতে লাগলাম। সায়্যিদ সাহেবের ধর্মীয় ধ্যান ধারণা আমার দিল কবুল করল না। তবে তার সাহিত্য ও শিক্ষা প্রচেষ্টাকে খুব বড় মনে হল। সেই মনে হওয়া এখনো আমার মাঝে সতেজ সজীব আছে।
সেখানে আমার জন্য বড় একটি নিআমত ছিল মাওলানা শিবলী নোমানী রাহ.-এর সান্নিধ্য। সেটা ছিল হযরতের আলীগড়ে আসার প্রথম সময়। সেসময় তাঁর কাছে এলেই ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা হত। আমি তাঁর কিতাব ‘মুসলমানূঁ কী গুযাশতা তালীম’ ‘আল-মামুন’ ‘সীরাতুন নুমান’ ‘শেরুল আজম’ মুতালাআ করে পর্যালোচনা লিখলাম। এই কিতাবগুলো মুতালাআ করতে গিয়ে বিশেষ করে বাক্যের সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক বর্ণনা আর ঘটনা বলার শক্তি সত্যিকারার্থেই হৃদয়ের গভীরে প্রভাব ফেলল।
দরসে নেযামী পড়ার সূত্রে শেষ দিকের অনেকগুলো কিতাব দেখেছি। পড়েছি। এখানে পরিষ্কার বলে দেওয়া ভালো যে, আমি দরসে নেযামী সমাপ্ত করিনি। সেসময় দরসে আমার মন মস্তিষ্ক মানতেক ফালসাফার প্রভাব খুব কম গ্রহণ করত। আমি খুঁজতাম ঘটনা ও বাস্তবতা।
এই দীর্ঘ ভূমিকায় আমার উদ্দেশ্য এ বিষয়টি স্পষ্ট করা যে, আমার মধ্যে যে কিতাবগুলো প্রভাব ফেলেছে সেগুলো কেন প্রভাব ফেলেছে। আর যেগুলো প্রভাব ফেলেনি সেগুলো কোন প্রভাব ফেলেনি।
দেখা যায় একই কিতাব কয়েকজন মুতালাআ করে। কিন্তু প্রভাব পড়ে ভিন্ন ভিন্ন। এক কিতাবই কারো দিলে খোদাভীতি, চারিত্রিক পবিত্রতা ও ইখলাস পয়দা করে। কারো দিলে উগ্রতা, এমনকি ধর্মদ্রোহিতা ও মন্দ চরিত্রের বিষ ছড়ায়। এই পার্থক্যটা কেন হয়? অথচ কিতাব এক! তথ্য উপাত্ত এক!
মূল কথা হল তারবিয়াত, যোগ্যতা, নির্দিষ্ট কিতাব পড়ার উপযুক্ততা ও দিল দেমাগে বিশেষ কারো সোহবতের প্রভাবে মুতালাআর এই পার্থক্য হয়ে থাকে।
পরিশেষে এমন কয়েকটি কিতাবের নাম উল্লেখ করছি যেগুলো আমার ইলমী রুচি তৈরীতে ভূমিকা রেখেছে। যেগুলোকে বলা উচিত আমার পরম মুহসিন ও নীরব উস্তায।
আকাইদ বিষয়ে : ইমাম আবুল হাসান আশআরী রাহ. কৃত ‘মাকালাতুল ইসলামিয়্যীন’।
রিজাল শাস্ত্রে : বুসতানুল মুহাদ্দিসীন, শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রাহ.। ইযালাতুল খফা, শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ.। ওয়াফায়াতুল আয়ান, ইবনে খাল্লিকান রাহ.। তাযকিরাতুল হুফফায, ইমাম যাহাবী রাহ.। তাবাকাতে ইবনে সা‘দ। মাআরিফে ইবনে কুতাইবা। মুকাদ্দামাতু ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার আসকালানী রাহ.।
তাসাওউফ বিষয়ে : হালাতে মির্যা মাযহার রাহ., শাহ গোলাম আলী রাহ.। হালাতে শাহ গোলাম আলী রাহ., শাহ আবদুল গণী মুজাদ্দেদী রাহ.। ফাওয়ায়েদুল ফুয়াদ, খাজা হাসান দেহলভী রাহ.। সিলসিলাতুল আরিফীন বা মালফুযাতে খাজা উবাইদুল্লাহ আহরার রাহ.। ফুতূহুল গাইব, শায়খ আবদুল কাদের জিলানী রাহ.। আল-ইনতিবাহ ফী সালাসিলি আউলিয়াইল্লাহ, শাহ ওয়ালিউল্লাহ রাহ.। মালফুযাতে হযরত পীর ও মুরশিদ মাওলানা ফযলুর রহমান কুদ্দিসা সিররুহু, মাওলানা সায়্যিদ মুহাম্মাদ আলী ও মৌলভী সায়্যিদ নুরুল হাসান খাঁন। যুবদাতুল মাকামাত, খাজা মুহাম্মাদ হাশিম রাহ.। মাদারিজুস সালিকীন শরহে মানাযিলুল সায়ীরিন, হাফেয ইবনুল কায়্যিম রাহ.। এছাড়াও রয়েছে হাফেয ইবনুল কায়্যিম রাহ.-এর ‘আর-রূহ’ ও ‘ইলামুল মুয়াককিয়ীন’।
উর্দূ : মির্যা গালিবের উরদুয়ে মুআল্লা ও ইনশায়ে উদে হিন্দী। মীর মুহাম্মাদ আযাদ দেহলভী রাহ.-এর তাযকিরায়ে আবে হায়াত ও দরবারে আকবরী। মাওলানা শিবলী নোমানী রাহ.এর মুসলমানূঁ কী গুযাশতা তালীম, আল-মামুন ও শেরুল আজম।
ফারসী : ইতিহাসের তিনটি কিতাব- ওয়াকিয়াতে বাবরী, তারীখে ফেরেশতা ও তুযকে জাহাঙ্গীরী।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। উল্লেখিত কিতাবগুলোর কোনোটি এমন, যার কোনো অংশ কেবল প্রয়োজনের সময় দেখেছি। অল্পকিছু মুতালাআ করেছি। তবে এর ভিত্তিতেই সে কিতাবের গভীর প্রভাব দিল দেমাগে পড়েছে।
এখানে এমন দুটি কিতাব আছে, যেগুলো সম্পর্কে একটু বিস্তারিত না বললে বোধহয় অকৃজ্ঞতা হবে। কিতাব দুটি হল,
১. বুসতানুল মুহাদ্দিসীন, শাহ আবদুল আযীয দেহলভী রাহ.। কিতাবটি মুহাদ্দিস ইমামদের তাসনীফ ও রচনা সম্পর্কিত। তাতে রচনা আলোচনার প্রসঙ্গে ইমামদের জীবনীও আলোচিত হয়েছে। দীর্ঘদিন এই কিতাব আমার অধ্যয়নে ছিল। বড়দের কুতুবখানা থেকে পুরোনো একটি নুসখা পেয়েছিলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে বারবার পড়েছি। লেখক খুব সাবলীল গদ্যে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আমার বিশ্বাস, ‘উলামায়ে সালাফ’ ছাড়াও বিভিন্ন পুস্তিকা রচনায় যে সফলতা আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করেছেন তাতে এই কিতাব থেকে আহরিত রুচি শৈলীর অনেক প্রভাব রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মুসান্নিফকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।
২. তাসাওউফ বিষয়ক দুটি পুস্তিকা। একটি হযরত মির্যা মাযহার জানে জানাঁ রাহ.-এর জীবনীকে কেন্দ্র করে, যার রচয়িতা হযরত শাহ গোলাম আলী রাহ.। অন্যটি হযরত শাহ গোলাম আলী রাহ.-এর জীবনী কেন্দ্র করে। সেটির লেখক শাহ আবদুল গনী মুজাদ্দেদী রাহ.। এই রিসালা দুটিও বড়দের কুতুবখানা থেকে হঠাৎ আমার হাতে এসেছে। এরপর সৌভাগ্য মনে করি যে, রিসালা দুটির প্রতি আগ্রহও তৈরী হয়েছে। ফলে বুসতানুল মুহাদ্দিসীনের মতো সেগুলোও দীর্ঘদিন মুতালাআ করেছি। এগুলোও ছিল খুব পুরনো ছাপা। তবে সাবলীল গদ্যে, অতিশয়তামুক্ত ও বাহুল্যবর্জিত উপস্থাপনায়, আস্থাপূর্ণ ও হৃদয় শীতল করা বর্ণনায় বিভিন্ন ঘটনা তাতে এসেছে। রিসালা দুটি পড়ে এই চিন্তার ভিত তৈরী হয়েছিল যে, তাসাওউফকে শুধু আলোচনা ও বিশ্লেষণের মধ্যে না দেখে হালাত ও ঘটনার দর্পণে দেখা উচিত। আলহামদু লিল্লাহ সেই চিন্তা এখনো আমার মাঝে কাজ করছে। সমকালীন বুযুর্গ মনীষীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং তাঁদের প্রতি আস্থা ও মহব্বত সৃষ্টি হওয়ার পেছনেও রিসালা দুটির অবদান অনেক। আল্লাহ তায়ালা এই মুসান্নিফদেরকে উত্তম থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তাঁদের সকল কর্ম কীর্তিকে কবুল করুন। তাঁদের প্রতি রাজি খুশি ও সন্তুষ্ট হয়ে যান। আমীন।
ভাষান্তর : তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব