শাবান-রমযান ১৪৪২   ||   মার্চ-এপ্রিল ২০২১

করোনার টিকা : শরঈ দৃষ্টিকোণ

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

মহামারি নভেল করোনা ভাইরাস, যা পরবর্তীতে কোভিড-১৯নাম ধারণ করেছে। পৃথিবীব্যাপী এ রোগের ভয়াবহতা চলছে বছরাধিককাল ধরে। রোগটির ব্যাপকতা বাড়ার পর থেকেই এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কাজ চলছে বলে শোনা গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে ভ্যাকসিন তথা টিকা এসে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি এ টিকা  নিজ নিজ গবেষণা ও প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করেছে। এদের মধ্যে ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা অন্যতম। এছাড়া চীনও পৃথকভাবে টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদন করেছে। জনসনসহ আরো প্রতিষ্ঠানও বের করেছে করোনা ভ্যাকসিন। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন শরীয়তের দৃষ্টিতে এ টিকার হুকুম সম্পর্কে, দেশের বাহির থেকেও অনেকে জানতে চেয়েছেন। আজকে সে বিষয়েই কিছুটা আলোকপাত করার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সরকারিভাবেই করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে, যেটি সরকার আমদানি করে নিজ ব্যবস্থায় নাগরিকদের প্রদান করছে। ভ্যাকসিনের মূল্য (সরকারের খরিদ মূল্য বাহিরের বাজারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে কথা ওঠে) নিয়ে কিছুদিন বিস্তর লেখা-লেখি হয়। আজ আমরা সে বিষয়ে যেতে চাই না। আমরা আজ আলোচনা করব টিকার শরঈ দিক নিয়ে। ইচ্ছা ছিল এ নিয়ে বড় করে তাহকীকী নিবন্ধ লেখার; সে অনুযায়ী কিছু পড়াশোনাও করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে সাধ্যমত। এরপর মারকাযের দারুল ইফতায় এ বিষয়ে একটি শরঈ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। দারুল ইফতার সদস্যগণ ছাড়াও মারকাযের ফিকহ বিভাগ থেকে পড়ে যাওয়া কয়েকজন নওজোয়ান আলেমও (যারা এখন অন্য দারুল ইফতায় কর্মরত) তাতে যোগ দেন। তাদের একজনও এ নিয়ে ভালো পড়াশোনা ও মেহনত করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এসব মেহনত কবুল করে নিন।

বলছিলাম, টিকার শরঈ দিক নিয়ে একটু বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু অন্যান্য ব্যস্ততার মাঝে আলকাউসার ছাপার সময় এসে যায়; লেখা তখনো শুরুই হয়নি। শেষে সহকর্মিরা বললেন, সংক্ষেপে হলেও কিছু লিখে দিতে।

আজ আমরা আলোকপাত করব মূলত বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রদানকৃত কোভিড ভ্যাকসিন (করোনার টিকা) নিয়ে। এটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃক আবিষ্কৃত এবং ভারতের সেরাম ইনিস্টিটিউটে তৈরি। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে যা বহু লোকের মধ্যে প্রয়োগ করা হয়েছে।

প্রথমেই বলে রাখা ভাল যে, করোনার টিকার বিষয়টি নতুন হলেও পৃথিবীতে বিভিন্ন রোগের বহু টিকা আগের থেকে চালু আছে। ঐসকল টিকা আসার পর বিশ্বের বিভিন্ন ফিকহী ফোরামে সেগুলোর শরঈ বিষয়ে গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। উলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে শরঈ নির্দেশনা দিয়েছেন।

যে কোনো টিকার শরঈ বিশ্লেষণের শুরুতেই যে বিষয়টি বিবেচনায় আসে তা হচ্ছে, ‘টিকাকোনো ঔষধ নয়, বরং তা প্রতিষেধক। ঔষধ প্রয়োগ করা হয় রোগ মুক্তির জন্য, পক্ষান্তরে টিকা দেয়া হয় রোগাক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য। অর্থাৎ টিকা গ্রহণের উদ্দেশ্য সতর্কতা অবলম্বন; রোগমুক্তি নয়। তাই এটিকে সে অর্থে চিকিৎসাও বলা যায় না। এজন্যেই জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা বিষয়ক শরীয়তের ছাড়গুলোর সবকটি টিকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। সাধারণত একটি সমাজে টিকা গ্রহণ না করা লোকের সংখ্যা থাকে অসংখ্য। কিন্তু তাদের সিংহভাগই সে রোগে আক্রান্ত হয় না। তাই এটি সতর্কতাই বটে।

যারা জান বাঁচানো ফরযÑ এধরনের অজুহাত তুলে এককথায় বাছ-বিচার ছাড়াই টিকা নেয়ার ফতোয়া জারি করেন তারা সে বিষয়টি লক্ষ করেন কি না জানি না। তবে একথাও জেনে রাখা দরকার, রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও হালাল-হারাম বাছাইয়ের বিষয় রয়েছে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে হারাম বস্তু দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণের যে মত রয়েছে সেটিও বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষ। আর আগেই বলা হয়েছে যে, টিকা চিকিৎসা নয়; বরং সতর্কতা অবলম্বনস্বরূপ প্রতিষেধক নেয়া।

এবার মূলকথায় আসা যাক। আলোচিত টিকার শরঈ বিশ্লেষণে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া দরকার তার মধ্যে রয়েছেÑ

১. এর উপাদানগুলোতে শরীয়ত-নিষিদ্ধ কিছু রয়েছে কি না।

২. এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

৩. কী উদ্দেশ্যে টিকা নেয়া হবে ইত্যাদি।

প্রথমেই আসা যাক উপাদান প্রসঙ্গে। আমাদের দেশে ব্যবহৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার উপাদান সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য আমরা সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রোডাক্ট ইনফরমেশন লিফলেটটি পড়েছি। এরপর এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মহলের সাথে কথা বলেছি। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরীয়ার দৃষ্টিতে এ টিকার উপাদানগুলোর কয়েকটি নিয়ে ভাববার অবকাশ রয়েছে। যেমন : ১. এডিনোভাইরাস (Adenovirus) ২. পলিসরবেট ৮০ (Polysorbate 80) (ই৪৩৩) ৩. ইথানল

এডিনোভাইরাস (Adenovirus)

আলোচিত টিকার এডিনোভাইরাসউপাদানটির গোড়ায় রয়েছে একটি মানবদেহের অংশবিশেষের ইতিহাস। জানা গেছে, এতে গত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুর দিকে এই ভাইরাস প্রস্তুত করতে গিয়ে একটি গর্ভপাত হওয়া শিশুর কিডনির সেল/কালচার ব্যবহৃত হয়েছে। এর প্রথম ব্যবহারকারীদের দাবি, সেটি ছিল একটি আইনগত বৈধ গর্ভপাত। সে থেকে ঐ ভাইরাসের গ্রো (বংশবৃদ্ধি) করে তা অসংখ্য পরিমাণে উৎপাদিত হয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তাদের দাবি হচ্ছে, এত বছর উৎপাদনের পর এখনকার এডিনোভাইরাসে আর মানবদেহের কোনো অংশ পাওয়া যাবে না। হয়ত কথাটি যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু এডিনোভাইরাসের সঙ্গে যে একটি মৃত বা গর্ভপাত হওয়া মানব দেহের অংশবিশেষের যোগসূত্র রয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই ভালো হত যদি টিকায় এ উপাদানটি ব্যবহার না করে অন্য কোনো পদার্থ দ্বারা এ উদ্দেশ্য হাসিল করা হত। যদিও অর্ধশতাব্দী ধরে ঐ সেল থেকে ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন পরিমাণে ভাইরাস গ্রো করার পর এখন আর সরাসরি একথা বলা যাচ্ছে না যে, এখনকার এডিনোভাইরাসে মানবাংশ রয়েছে। আর সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকায় এডিনোভাইরাসের কারণে এ টিকা ব্যবহার হারামও বলা হচ্ছে না। তবে মুসলিম দেশগুলোর অবশ্যই দাবি তোলা উচিত, যেন ভবিষ্যতের  অন্যান্য টিকায় এর উপাদানের উত্তম বিকল্প ব্যবহার করা হয়, যেন মানুষের মনে কোনো সন্দেহের উদ্রেক না ঘটে এবং শরীয়ার দিক থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়।

পলিসরবেট ৮০ (Polysorbate 80)

অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকায় ব্যবহৃত এ উপাদানটি ফ্যাট তথা চর্বিবিশেষ। এটি ই কোড ৪৩৩ হিসাবেও পরিচিত। এটি সাধারণত দুটি উৎস থেকে সংগৃহীত হয়Ñ ১. প্রাণিজ চর্বি ২. উদ্ভিদ। উদ্ভিদ থেকে নেয়া হলে তো সমস্যা নেই। কিন্তু যদি প্রাণিজ উৎস থেকে নেয়া হয় তখন আবার প্রশ্ন দাঁড়াবে প্রাণীটি কী? সেটি শূকর নয় তো? অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় জেলাটিন না থাকায় অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন, কিন্তু পলিসরবেট ৮০-ও যেহেতু এনিমেল তথা প্রাণিজ উৎস থেকে নেওয়ার সম্ভবনা থাকে তাই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার ছিল। খোঁজা-খুঁজির পর যে তথ্যগুলো পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ইউকে গভর্ণমেন্টের ওয়েবসাইটে রেগুলেটরি এপরোভাল অব কোভিড-১৯ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডিটেইলসে বলা হয়েছে, এ টিকায় এনিমেল তথা প্রাণীর কোনো উপাদান নেই। সম্ভবত এর উপর ভিত্তি করেই ব্রিটিশ ইসলামিক মেডিক্যাল এসোসিয়েশন টিকাটির বিষয়ে ইতিবাচক মত দিয়েছে। এছাড়া ভারতের বিজনেস টুডে পত্রিকার ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ঈ. সংখ্যায় অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ কয়েকটি কোম্পানির টিকা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, প্রস্তুতকারকগণ জানিয়েছেন যে, এসবে শূকরের কোনো মিশ্রণ নেই। বিষয়টি যদি এমনি হয় তবে ধরে নেওয়া যায় যে, ‘পলিসরবেট ৮০উদ্ভিদ বা সিনথেটিক থেকে সংগৃহিত। সে দৃষ্টিতে এতে সমস্যা থাকছে না।

ইথানল (Ethanol)

অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকায় সামান্য পরিমাণ ইথানল রয়েছে। এটি এলকোহল তথা মদ। মুসলমানদের জন্য খাদ্য ও পানীয়তে অতি সামান্য পরিমাণ এলকোহল ব্যবহারও অবৈধ। সেটির উপাদান যাই হোক। আঙ্গুর, খেজুর, যব, লতা-পাতা তথা উদ্ভিদ অথবা সিনথেটিকÑ যা দিয়েই প্রস্তুত করা হোক খাবার বা পানীয়তে এলকোহল মেশানোর সুযোগ নেই। হাদীসে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ রয়েছেÑ

ما أسكر كثيره فقليله حرام

অর্থাৎ মাদক সামান্য পরিমাণও হারাম। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৮৬৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৮১

এ তো গেল খাবার বা পান করার মাসআলা।

এলকোহলের আরেকটি মাসআলা হল সেটি নাপাক তথা অপবিত্র। তবে এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর একটি বক্তব্য অনুযায়ী আঙ্গুর, খেজুর ও যবের দ্বারা উৎপাদিত  মদ নাপাক; অন্যান্য মদ নাপাক নয়। অন্যদিকে বর্তমান সময়ে অধিকাংশ এলকোহল ভেজিটেবল বা সিনথেটিক উপাদান দ্বারা তৈরি বলে বলা হয়।

আর করোনার টিকা খাবার বা পানীয় হিসেবে প্রয়োগ করা হয় না; বরং তা ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এছাড়া টিকাটিতে যতগুলো উপাদান রয়েছে তার মধ্যে ইথানলের পরিমাণ খুবই সামান্য। এসব বিবেচনায় টিকাটি গ্রহণ করা হারাম হবে বলে মনে হয় না।

টিকায় অন্যান্য যে উপাদানগুলো রয়েছে যেমন, সোডিয়াম জাতীয় দ্রব্যগুলো সেগুলোতে শরঈ কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা থেকে একথা বলা যায় যে, উপাদানগত দিক থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহার শরীয়তে বাধা নেই।

স্বাস্থ্যগত দিক

ইসলাম মানুষকে এমন কিছু ব্যবহারের অনুমোদন দেয় না, যা তার জন্য প্রাণহানীকর অথবা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর কারণ। সে দৃষ্টিতে কোনো টিকা নেওয়ার পূর্বেই তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়া দরকার এবং ব্যবহারকারীর জন্য স্বাস্থ্যগত দিক থেকে উপযুক্ত কি না তা জেনে নেওয়া আবশ্যক। যদিও দীর্ঘমেয়াদি করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী হতে পারে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। কারণ টিকাগুলো প্রয়োগই শুরু হয়েছে মাত্র মাস দুয়েক আগে। অন্যদিকে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী ব্যবহারকারীদের মধ্যে অল্প কিছু লোক ছাড়া অন্যদের মধ্যে এখনও জটিল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি বলে বলা হচ্ছে। তথাপি টিকা ব্যবহারের পূর্বে স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলো জেনে-বুঝে নেওয়া দরকার।

নিয়ত বা উদ্দেশ্য

আগেই বলা হয়েছে, টিকা রোগের ঔষধ নয়; বরং রোগাক্রান্ত না হওয়ার জন্য অগ্রিম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। এখন প্রশ্ন হল, এ বিশ্বাসে কি টিকা গ্রহণ করা যাবে যে, এটি নিলে কোনোক্রমেই ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না অথবা এ টিকার এমন নিজস্ব শক্তি রয়েছে যে, তা স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে রোগ থেকে বাঁচাতে সক্ষম। না, কোনো মুসলমান এমন নিয়ত বা এ ধরনের বিশ্বাস ধারণ করতে পারে না; বরং তাকে এ বিশ্বাস ও ঈমান রাখতে হবে যে, ভালো-মন্দ, রোগাক্রান্ত হওয়া বা রোগমুক্ত থাকা সবকিছুর মূল শক্তি আল্লাহর হাতে। আল্লাহ না চাইলে তার ক্ষেত্রে টিকা কার্যকর হবে না। টিকা কাজ করলে তা আল্লাহর ইচ্ছাতে এবং তাঁর অনুগ্রহেই করেছে।

উপরোক্ত কথা থেকে এটিও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সঠিক নিয়তে ব্যবহার করলে টিকা তাওয়াক্কুলপরিপন্থী নয়। কারণ টিকা গ্রহণকারী তা ব্যবহারই করবে ওসিলা হিসেবে। তার বিশ্বাস, মূল কার্যক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার।

উপসংহার

উপরে যা বলা হয়েছে তা দ্বারা একথা বোঝানো হয়েছে যে, করোনার টিকাটি গ্রহণ করা মুবাহ তথা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কিন্তু এটি নেয়া আবশ্যক বা উত্তমÑ এমন কিছুই নয়। তাই কেউ না নিতে চাইলে তাতে শরীয়তের দৃষ্টিতে সমস্যা নেই। তবে যে নেবে সে নিয়ত ও উদ্দেশ্য সহীহ করে নেবে; যেভাবে উপরে বলা হয়েছে।

পরিশেষে এ বিষয়ে যারা সহযোগিতা করেছেন আমরা তাদের সকলের শুকরিয়া আদায় করছি। আল্লাহ সকলকে উত্তম জাযা দান করুন।

আরেকটি কথা বলে শেষ করছি, তা হল, মুসলমানদের একটি  দেশ, যাতে কোটি কোটি লোকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তা আমদানির সিদ্ধান্তের পূর্বে যদি নির্ভরযোগ্য আলেমদের মাধ্যমে আগেই এর শরীয়া বিষয়গুলো নিশ্চিত করে নেয়া হত তাহলে তা কতই না ভাল হত।

শুরুতেই এ কাজটি করতে পারত। বিভিন্ন সময়ে এবং দরকারে ধর্মের প্রতি ক্ষমতাসীনরা তাদের আগ্রহের কথা বড় করে তুলে ধরতে ভোলেন না, কিন্তু প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তার আমল দেখা যায় না সাধারণত।

ইন্দোনেশিয়া আমাদের মতই একটি মুসলিমপ্রধান দেশ। তাদের সরকার সে দেশে করোনার টিকা শুরুতে ঢোকাতে দেয়নি। তারা বলেছে, আগে নিশ্চিত হতে হবেÑ এটিতে হারাম উপাদান নেই; এরপর আমরা তা গ্রহণ করব। ইন্দোনেশিয়া তার দ্বীনী পরিচয়ের স্বাক্ষর রাখতে পারল বিশ্ব দরবারে আর আমরা!

 

 

 

advertisement