যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিই : আমলের খাতা থেকে আল্লাহ আমার গোনাহগুলো সরিয়ে দেবেন
আমাদের গোনাহগুলো আখেরাতে আমাদের কষ্টের কারণ। আমাদের গোনাহগুলো আমাদের জন্য জান্নাতের পথের কাঁটা। এখন কীভাবে আমরা আখেরাতে কষ্টের এ কারণ থেকে মুক্তি পাব, জান্নাতের পথের কাঁটাগুলো অপসারিত করব। এজন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনেক আমল বাতলেছেন। ছোট্ট একটি আমল নিয়ে আলোচনা করব, যার মাধ্যমে আল্লাহ আখেরাতের কষ্ট এবং জান্নাতের পথের কাঁটা দূর করে দেবেন।
আমলটি হল, মানুষ কষ্ট পাবে-পথে এমন কিছু দেখলে তা অপসারিত করা, সরিয়ে দেওয়া। এই ছোট্ট কাজটির দ্বারা আল্লাহ আমলের খাতা থেকে আমার গোনাহগুলো সরিয়ে দেবেন।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِطَرِيقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوْكٍ عَلَى الطّرِيقِ فَأَخرَهُ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ.
এক ব্যক্তি পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। দেখল, পথের মাঝে একটি কাঁটাদার ডাল পড়ে আছে। (এতে মানুষের কষ্ট হবে তাই) সে ডালটি পথ থেকে সরিয়ে রাখল। আল্লাহ তার এই কাজে খুশি হলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯১৪
হাঁ, এ তো মুমিনের সাধারণ বৈশিষ্ট্য; এ তো মুমিনের ঈমানের প্রমাণ। মুমিন পরোপকারী হবে। মুমিন অন্যের কষ্ট দূর করতে সচেষ্ট হবে। এজন্যই তো পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া, অন্যের কষ্ট দূর করতে সচেষ্ট হওয়া; অন্য ভাষায় পরোপকারী হওয়া মুমিনের ঈমানের ন্যূনতম আলামত। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ -أَوْ بِضْعٌ وَسِتّونَ- شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلهَ إِلّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ.
ঈমানের সত্তরটিরও (বা নবীজী বলেছেন, ষাটটিরও) বেশি শাখা-প্রশাখা রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম শাখা হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা। আর সর্বনিম্নশাখা হচ্ছে (পথ চলার সময়) পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া। আর লজ্জা ঈমানের একটি অঙ্গ। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৫
মুসলিম সবসময় চেষ্টা করে, তার কারণে যেন কেউ কষ্ট না পায়; বরং সে অন্যের কষ্ট দূর করতে চেষ্টা করে। অন্যকে আরাম পৌঁছাতে চেষ্টা করে। আরেক ভাই যেন কষ্টের শিকার না হন এজন্য সে নিজে কষ্ট করে। এটিই মুমিনের আখলাক। এটিই নবীজীর শিক্ষা।
এর প্রতি উৎসাহিত করার জন্য এ কাজটিকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি সদাকা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেয়া একটি সদাকা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯৮৯
অনেকসময় এমন হয় যে, আমি মানুষের কষ্টের কারণ হচ্ছি, কিন্তু সেদিকে আমার নযর যাচ্ছে না। যেমন রাস্তার পাশে ময়লা ফেলে রাখা, যার কারণে ঐ পথ দিয়ে চলতে মানুষের কষ্ট হয়। নাক চেপে ধরে ঐ পথ অতিক্রম করতে হয়। আমার নিজেরও এর কারণে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমি খেয়াল করছি না-এর কারণ আমি নিজেই। সুতরাং সচেতন হব।
আর এটি সামাজিক সচেতনতারও বিষয়। একজনকে দেখে আরেকজন শেখার বিষয়। আমি যদি এ ব্যাপারে যত্নবান হই তাহলে অন্যরা আমাকে দেখে শিখবে; তেমনি ছোটরাও আমাকে দেখে শিখবে এবং এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে।
র্কুরা ইবনে ইয়াস আলমুযানী রাহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একবার মা‘কিল ইবনে ইয়াসার রা.-এর সাথে কোথাও যাচ্ছিলাম। পথে তিনি একটি কষ্টদায়ক বস্তু দেখে সরিয়ে দিলেন। কিছুদূর পর আমিও এমন একটি কষ্টদায়ক বস্তু দেখে সরিয়ে দিলাম। তখন তিনি আমার হাত ধরে বললেন, ভাতিজা! কোন্ জিনিস তোমাকে এ কাজে উদ্বুদ্ধ করল? উত্তরে তিনি বললেন, আপনাকে দেখে শিখলাম। আপনার অনুসরণ করলাম। তখন তিনি বললেন, (তাহলে শোনো বলি!) আমি নিজ কানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
مَنْ أَمَاطَ أَذًى عَنْ طَرِيقِ الْمُسْلِمِينَ كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةٌ، وَمَنْ تُقُبِّلَتْ مِنْهُ حَسَنَةٌ دَخَلَ الْجَنّةَ.
যে ব্যক্তি মুসলিমদের পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিল, তার নামে একটি নেকি লেখা হবে। আর যার একটি নেকি কবুল হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৫০২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৪৭৯ মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস ৪৭৪৮
সুতরাং পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিতে সচেষ্ট হব; আশা করা যায়, এর বিনিময়ে আল্লাহ আমলের খাতা থেকে আমার গোনাহগুলো সরিয়ে দেবেন।
যিকিরের মজলিস : যে মজলিসের উদ্দেশ্যহীন অংশগ্রহণকারীকেও ক্ষমা করা হয়
আল্লাহর দয়ার কি সীমা-পরিসীমা আছে! বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য সদা প্রসারিত থাকে তাঁর ক্ষমার হাত। প্রয়োজন শুধু বান্দা সে সুযোগটাকে কাজে লাগানো এবং তাঁর কাছে মাফ চাওয়া। বান্দা ইসতিগফার করলে তিনি মাফ করেন। এটিই স্বাভাবিক নিয়ম; কিন্তু তিনি এমন মহা ক্ষমাকারী যে, বান্দা মাফ না চাইলেও তিনি ক্ষমা করেন। বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য বাহানা তালাশ করেন।
তেমনই একটি ‘বাহানা’ হল, যিকিরের মজলিস। যিকিরের মজলিসে যে উপস্থিত হয় শুধু মজলিসে উপস্থিতির ভিত্তিতে আল্লাহ ক্ষমা করেন; হোক তার এই মজলিসের উপস্থিতি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে। তারপরও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন-কেবল এই মজলিসের শরীক হওয়ার কারণে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
إِنّ لِلهِ مَلاَئِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمًا يَذْكُرُونَ اللهَ تَنَادَوْا: هَلُمّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ قَالَ: فَيَحُفّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِمْ إِلَى السّمَاءِ الدّنْيَا قَالَ: فَيَسْأَلُهُمْ رَبّهُمْ، وَهُوَ أَعْلَمُ مِنْهُمْ، مَا يَقُولُ عِبَادِي؟ قَالُوا: يَقُولُونَ: يُسَبِّحُونَكَ وَيُكَبِّرُونَكَ وَيَحْمَدُونَكَ وَيُمَجِّدُونَكَ قَالَ: فَيَقُولُ: هَلْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: فَيَقُولُونَ: لاَ وَاللهِ مَا رَأَوْكَ؟ قَالَ: فَيَقُولُ: وَكَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدّ لَكَ تَمْجِيدًا وَتَحْمِيدًا، وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحًا...، قَالَ: فَمِمّ يَتَعَوّذُونَ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: مِنَ النّارِ قَالَ: يَقُولُ: وَهَلْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا قَالَ: يَقُولُ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْهَا كَانُوا أَشَدّ مِنْهَا فِرَارًا، وَأَشَدّ لَهَا مَخَافَةً قَالَ: فَيَقُولُ: فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ قَالَ: يَقُولُ مَلَكٌ مِنَ المَلاَئِكَةِ: فِيهِمْ فُلاَنٌ لَيْسَ مِنْهُمْ، إِنّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ. قَالَ: هُمُ الجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ.
আল্লাহর পক্ষ থেকে একদল ফিরিশতা নিয়োজিত রয়েছে, যারা ঘুরে ঘুরে যিকিরকারীদের তালাশ করে। যখন কিছু মানুষকে আল্লাহর যিকিরে মশগুল দেখে তারা একে অপরকে আহ্বান করে-এসো, তোমাদের লক্ষ্যের দিকে এসো। (তোমরা যা খুঁজছ তা মিলে গেছে।) নবীজী বলেন, এরপর তারা নিজেদের ডানা দ্বারা মজলিসটিকে ঘিরে নেয়। এভাবে নিকটবর্তী আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
নবীজী বলেন, তখন তাদের রব তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, -অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক জ্ঞাত-আমার বান্দাগণ কী বলছে? ফিরিশতারা বলে, তারা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছে, আপনার বড়ত্ব ঘোষণা করছে, আপনার প্রশংসা করছে এবং আপনার মর্যাদা ঘোষণা করছে। নবীজী বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তারা কি আমাকে দেখেছে? উত্তরে ফিরিশতারা বলে, না; আল্লাহর কসম, তারা আপনাকে দেখেনি।
নবীজী বলেন, অতঃপর আল্লাহ বলেন, যদি তারা আমাকে দেখত তাহলে তাদের কী অবস্থা হত? ফিরিশতারা বলে, যদি তারা আপনাকে দেখত তাহলে আরও একনিষ্ঠভাবে আপনার ইবাদত করত, অপনার মর্যাদা ঘোষণায় এবং আপনার প্রশংসা প্রকাশে আরো সক্রিয় হত এবং আরো অধিক পরিমাণে আপনার তাসবীহ পাঠ করত!
নবীজী বলেন, তখন আল্লাহ বলেন, তারা আমার নিকট কী চায়? ফিরিশতারা বলে, তারা আপনার নিকট জান্নাত চায়! আল্লাহ বলেন, তারা কি জান্নাত দেখেছে? ফিরিশতারা বলে, না, হে রব! তারা জান্নাত দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে কী করত? ফিরিশতারা বলেন, যদি তারা জান্নাত দেখত তাহলে তার প্রতি আরো লালায়িত হত, তার অন্বেষণে আরো মনোযোগী হত এবং তা লাভের জন্য আরো ব্যাকুল হত।
নবীজী বলেন, আল্লাহ বলেন, তারা কী থেকে পানাহ চাচ্ছে? ফিরিশতারা বলে, জাহান্নাম থেকে। আল্লাহ বলেন, তারা কি জাহান্নাম দেখেছে? ফিরিশতারা বলে, না, আল্লাহর কসম হে রব! তারা জাহান্নাম দেখেনি। তখন আল্লাহ বলেন, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে কী করত? ফিরিশতারা বলে, যদি তারা জাহান্নাম দেখত তাহলে আরো বেশি ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচতে আরো অধিক চেষ্টা করত।
নবীজী বলেন, তখন আল্লাহ বলেন-
فَأُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ.
তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম।
নবীজী বলেন, তখন একজন ফিরিশতা বলে ওঠে, তাদের মধ্যে তো অমুক রয়েছে; যে তাদের দলের নয়, সে অন্য কাজে এসেছে। (সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, তাদের মাঝে তো এক পাপী রয়েছে।) একথা শুনে আল্লাহ বলেন-
هُمُ الجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ.
তারা এমন জামাত, (এটি এমন মজলিস, যার) যাদের কোনো অংশগ্রহণকারীই মাহরূম হয় না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪০৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৮৯
যেভাবে বেচাকেনা-লেনদেন করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন
প্রতিটি ব্যক্তিরই কিছু দুর্বলতা থাকে। কিছু ত্রুটি থাকে। এখন কী করলে আমি আমি আমার ত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো ছাপিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব; তাঁর ক্ষমা লাভে ধন্য হব!
হাঁ, অন্যের ত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে আশা করা যায়, আল্লাহ আমার ত্রুটি ও দুর্বলতাগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।
মানুষ বাকিতে পণ্য নেয়। অভাবের সংসার, নিতে হয়। নির্দিষ্ট একটি মেয়াদে নেয়; এত দিন পর ইনশাআল্লাহ দিয়ে দিব। তার পরিকল্পনা থাকে-অমুক অর্থটা পেলে ঋণটা শোধ দিয়ে দিব। বা ফসল লাগিয়েছি; দু’মাস গেলেই ফসলটা বিক্রি করে ঋণটা দিয়ে দিব। কিন্তু পরে দেখা গেল, যে টাকাটা পাওয়ার কথা ছিল, পাওয়া গেল না। বা ফসল নষ্ট হয়ে গেল। এখন সে পেরেশান হয়-কথা দিয়েছিলাম, অমুক সময় ঋণটা পরিশোধ করে দিব, দিতে পারছি না। সে আরেকটু সময় চায়; অমুক সমস্যার কারণে সময় হয়ে যাওয়া সত্তে¡ও দিতে পারছি না-আমাকে আরেকটু সময় দিন। সে যে ঋণটা সময়মত পরিশোধ করতে পারল না-এটা তার দুর্বলতা। তার এ দুর্বলতার সময় আমি দুই ধরনের আচরণ করতে পারি-বলতে পারি, সমস্যা নেই, যখন টাকা হাতে আসবে তখনই দিয়েন। অথবা তার দুর্বলতার সুযোগে তার সাথে আমি রূঢ় আচরণ করতে পারি, দু’কথা শুনিয়ে দিতে পারি-ঋণ নেয়ার সময় হুঁশ ছিল না, এখন...!
আমি আচরণ যা-ই করি, ঋণটা কিন্তু এখন পাচ্ছি না। যদি দ্বিতীয় আচরণ করি, তাহলে ঋণও পেলাম না, তার মনে কষ্টও দিলাম। আর যদি প্রথম আচরণটা করি তো আমি ঋণ তো যখন পাওয়ার ছিল তখনই পাব; মাঝখান দিয়ে কত বড় পুরস্কার পেয়ে যাব আল্লাহর কাছ থেকে তা কি আমার জানা আছে!
হুযায়ফা রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-
أَنّ رَجُلًا مَاتَ، فَدَخَلَ الْجَنّةَ، فَقِيلَ لَهُ: مَا كُنْتَ تَعْمَلُ؟ - قَالَ: فَإِمّا ذَكَرَ وَإِمّا ذُكِّرَ - فَقَالَ: إِنِّي كُنْتُ أُبَايِعُ النّاسَ، فَكُنْتُ أُنْظِرُ الْمُعْسِرَ، وَأَتَجَوّزُ فِي السِّكّةِ - أَوْ فِي النّقْدِ - فَغُفِرَ لَهُ.
এক ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল। সে জান্নাতে প্রবেশ করল। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কী আমল করতে? (যার বিনিময়ে তুমি জান্নাত লাভ করলে?)
তখন -তার স্মরণ হল অথবা তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল-সে বলল : আমি মানুষের সাথে বেচাকেনা করতাম; অসচ্ছল হলে (বাকিতে দিতাম এবং) সচ্ছলতা পর্যন্ত সুযোগ দিতাম, ছাড় দিতাম। আর সচ্ছল হলে দিনার-দিরহামে ত্রুটি থাকলে মেনে নিতাম। ফলে (এ আমলের বিনিময়েই) তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫৬০
মুমিন বুদ্ধিমান। সে প্রথম আচরণই করবে। কারণ, এত বড় পুরস্কারের জন্য ঋণের টাকা কেবল দেরিতে গ্রহণই নয়, পুরো টাকাটা হাদিয়া দিয়ে দিলেও তা পুরস্কারের তুলনায় তুচ্ছ। হ