জুমাদাল উলা-জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪২   ||   জানুয়ারি ২০২১

হাদীস ও আসারে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও রাকাত-সংখ্যা

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

বুরায়দা রা. থেকে বর্ণিত-

عن النبي صلى الله عليه و سلم، أن رجلا سأله عن وقت الصلاة، فقال له:

صَلِّ مَعَنَا هَذَيْنِ - يَعْنِي الْيَوْمَيْنِ - فَلَمَّا زَالَتِ الشَّمْسُ أَمَرَ بِلَالًا فَأَذَّنَ، ثُمَّ أَمَرَهُ، فَأَقَامَ الظُّهْرَ، ثُمَّ أَمَرَهُ، فَأَقَامَ الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيَّةٌ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْمَغْرِبَ حِينَ غَابَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ طَلَعَ الْفَجْرُ، فَلَمَّا أَنْ كَانَ الْيَوْمُ الثَّانِي أَمَرَهُ فَأَبْرَدَ بِالظُّهْرِ، فَأَبْرَدَ بِهَا، فَأَنْعَمَ أَنْ يُبْرِدَ بِهَا، وَصَلَّى الْعَصْرَ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ أَخَّرَهَا فَوْقَ الَّذِي كَانَ، وَصَلَّى الْمَغْرِبَ قَبْلَ أَنْ يَغِيبَ الشَّفَقُ، وَصَلَّى الْعِشَاءَ بَعْدَمَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ، وَصَلَّى الْفَجْرَ فَأَسْفَرَ بِهَا، ثُمَّ قَالَ: أَيْنَ السَّائِلُ عَنْ وَقْتِ الصَّلَاةِ؟ فَقَالَ الرَّجُلُ: أَنَا، يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: وَقْتُ صَلَاتِكُمْ بَيْنَ مَا رَأَيْتُمْ.

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি এ দু’দিন আমাদের সঙ্গে সালাত আদায় কর।

প্রথম দিন (মধ্যাহ্নের) সূর্য (কিছুটা পশ্চিমে) হেলে যাওয়ার পর বেলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে যোহরের আযান দিলেন অতঃপর ইকামত দিলেন। এরপর সূর্য উপরে সাদা থাকাবস্থায়ই বিলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে আসরের আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। এরপর সূর্যাস্তের পর মাগরিব এবং শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) অস্তমিত হওয়ার পর এশার সালাত আদায় করলেন। অতঃপর ফজর উদিত হলে বিলাল রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশে ফজরের আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন।

দ্বিতীয় দিন বেলাল রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশে যোহরের আযানে বিলম্ব করলেন। রোদের তাপ অনেক ঠাণ্ডা হওয়ার পর যোহরের সালাত আদায় করা হল। এরপর আসরের সালাতও বিলম্বিত করা হল এবং সূর্য কিছুটা উচ্চতায় থাকাবস্থায় সালাত আদায় করা হল। এরপর মাগরিব শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) অস্তমিত হওয়ার (কিছু) আগে আদায় করা হল এবং এশা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বিলম্বিত করা হল। ফজরের সালাত চারদিকে ভালোভাবে ফর্সা হওয়ার পর আদায় করা হল। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই প্রশ্নকারীকে ডাকলেন। সাহাবী উপস্থিত হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই দুই সময়ের মধ্যেই তোমাদের সালাতের সময় নির্ধারিত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬১৩

আবু মূসা রা. বর্ণনা করেন-

عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ أَتَاهُ سَائِلٌ يَسْأَلُهُ عَنْ مَوَاقِيتِ الصَّلَاةِ، فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ شَيْئًا، قَالَ: فَأَقَامَ الْفَجْرَ حِينَ انْشَقَّ الْفَجْرُ، وَالنَّاسُ لَا يَكَادُ يَعْرِفُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالظُّهْرِ، حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدِ انْتَصَفَ النَّهَارُ، وَهُوَ كَانَ أَعْلَمَ مِنْهُمْ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالْعَصْرِ وَالشَّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ بِالْمَغْرِبِ حِينَ وَقَعَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ أَمَرَهُ فَأَقَامَ الْعِشَاءَ حِينَ غَابَ الشَّفَقُ، ثُمَّ أَخَّرَ الْفَجْرَ مِنَ الْغَدِ حَتَّى انْصَرَفَ مِنْهَا، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدْ طَلَعَتِ الشَّمْسُ، أَوْ كَادَتْ، ثُمَّ أَخَّرَ الظُّهْرَ حَتَّى كَانَ قَرِيبًا مِنْ وَقْتِ الْعَصْرِ بِالْأَمْسِ، ثُمَّ أَخَّرَ الْعَصْرَ حَتَّى انْصَرَفَ مِنْهَا، وَالْقَائِلُ يَقُولُ قَدِ احْمَرَّتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ أَخَّرَ الْمَغْرِبَ حَتَّى كَانَ عِنْدَ سُقُوطِ الشَّفَقِ، ثُمَّ أَخَّرَ الْعِشَاءَ حَتَّى كَانَ ثُلُثُ اللَّيْلِ الْأَوَّلُ، ثُمَّ أَصْبَحَ فَدَعَا السَّائِلَ، فَقَالَ: الْوَقْتُ بَيْنَ هَذَيْنِ.

এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি তখন তার উত্তর দেননি। (পরদিন) যখন ফজর উদিত হল তখন (সঙ্গেসঙ্গে) ফজরের সালাত আদায় করলেন। (অন্ধকার হওয়ায়) লোকেরা একজন আরেকজনকে চিনতে পারছিল না। এরপর যখন সূর্য (পশ্চিমাকাশে) হেলে পড়ল তখনই যোহরের আযানের আদেশ করলেন এবং যোহর আদায় করলেন। কেউ বলছিল, সূর্য তো এখনো মধ্যাকাশেই রয়ে গেছে (অর্থাৎ এখনো পশ্চিমাকাশে হেলে যায়নি); অথচ তিনি তাদের চেয়ে অধিক অবগত। এরপর সূর্য উচ্চতায় থাকাবস্থায় আসরের আযানের আদেশ করলেন এবং আসর আদায় করলেন। সূর্য যখন অস্ত গেল তখন মাগরিবের আযানের আদেশ করলেন এবং মাগরিব আদায় করলেন। এরপর যখন শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) অদৃশ্য হল, এশার আযানের আদেশ করলেন এবং এশা আদায় করলেন।

দ্বিতীয় দিন ফজর এতটা বিলম্ব করলেন যে, যখন সালাম ফেরালেন, কেউ বলে উঠল-সূর্য উঠে গেছে কিংবা ওঠার উপক্রম। যোহর এতটা বিলম্ব করলেন যে, তা গতকালের আসরের ওয়াক্তের কাছাকাছি হয়ে গেল। আসর এতটা বিলম্ব করলেন যে, যখন তিনি সালাম ফেরালেন, কেউ বলে উঠল, সূর্য বিবর্ণ হয়ে গেছে। মাগরিব এতটা বিলম্ব করলেন যে, শাফাক অস্তমিত হওয়ার সময় হয়ে গেল। অতঃপর এশা এতটা বিলম্ব করলেন যে, রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে গেল।

ফজরের পর প্রশ্নকারীকে ডেকে বললেন, (সালাতের) ওয়াক্ত এই দ্ইুয়ের মধ্যে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬১৪

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, জিবরীল আলাইহিস সালাম  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন-

قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ زَالَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ جَاءَهُ الْعَصْرَ، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى الْعَصْرَ حِينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ - أَوْ قَالَ: صَارَ ظِلُّهُ مِثْلَهُ - ثُمَّ جَاءَهُ الْمَغْرِبَ، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى حِينَ وَجَبَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ جَاءَهُ الْعِشَاءَ، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى حِينَ غَابَ الشَّفَقُ، ثُمَّ جَاءَهُ الْفَجْرَ، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى حِينَ بَرَقَ الْفَجْرُ - أَوْ قَالَ: حِينَ سَطَعَ الْفَجْرُ ثُمَّ جَاءَهُ مِنَ الْغَدِ لِلظُّهْرِ، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى الظُّهْرَ حِينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَهُ، ثُمَّ جَاءَهُ لِلْعَصْرِ، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى الْعَصْرَ حِينَ صَارَ ظِلُّ كُلِّ شَيْءٍ مِثْلَيْهِ، ثُمَّ جَاءَهُ لِلْمَغْرِبِ، وَقْتًا وَاحِدًا لَمْ يَزُلْ عَنْهُ، ثُمَّ جَاءَ لِلْعِشَاءِ، حِينَ ذَهَبَ نِصْفُ اللَّيْلِ - أَوْ قَالَ: ثُلُثُ اللَّيْلِ - فَصَلَّى الْعِشَاءَ، ثُمَّ جَاءَهُ لِلْفَجْرِ حِينَ أَسْفَرَ جِدًّا، فَقَالَ: قُمْ فَصَلِّهْ، فَصَلَّى الْفَجْرَ، ثُمَّ قَالَ: مَا بَيْنَ هَذَيْنِ وَقْتٌ

উঠুন, সালাত আদায় করুন। তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন-যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ল। অতঃপর আসরের সময় আসলেন এবং বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন-যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হল।১ এরপর মাগরিবের সময় এসে বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। সূর্য যখন অস্ত গেল তখন তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর এশার সময় এসে বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) যখন অদৃশ্য হল তখন এশার সালাত আদায় করলেন। এরপর ফজরের সময় বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। ফজর যখন উদ্ভাসিত হল তখন ফজরের সালাত আদায় করলেন।

পরদিন তিনি যোহরের সময় আসলেন এবং বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন-যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হল। অতঃপর আসরের সময় এসে বলেলেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন-যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হল। এরপর মাগরিবের জন্য তিনি একই সময়ে এলেন; তা থেকে সরেননি।২ এশার জন্য এলেন-যখন অর্ধেক রাত (কিংবা বলেনরাতের এক তৃতীয়াংশ) অতিবাহিত হল এবং এশার সালাত আদায় করলেন। এরপর ফজরের জন্য এলেন-যখন চারিদিকে খুব ফর্সা হয় গেল। বললেন, উঠুন, সালাত আদায় করুন। তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন অতঃপর বললেন, এই দুইয়ের মাঝখানের সময়টুকু হল (সালাতের) ওয়াক্ত। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৫৩৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৪৭২

বায়ান ইবনে বিশর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

قلت لأنس: حدثني بوقت رسول الله صلى الله عليه وسلم في الصلاة، قال: كان يصلي الظهر عند دلوك الشمس، ويصلي العصر بين صلاتيكم الأولى والعصر، وكان يصلي المغرب عند غروب الشمس، ويصلي العشاء عند غروب الشفق، ويصلي الغداة عند الفجر حين يفتتح البصر، كل ما بين ذلك وقت، أو قال: صلاة.

আমি আনাস রা.-কে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের সময় সম্পর্কে আমাকে বলুন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহর আদায় করতেন সূর্য (পশ্চিমাকাশে) হেলে পড়ার সময়। আসর আদায় করতেন তোমরা (এখন) যে সময়ে প্রথম সালাত (অর্থাৎ যোহর) এবং আসর আদায় কর, তার মাঝামাঝি সময়ে। মাগরিব আদায় করতেন সূর্যাস্তের সময়। এশা আদায় করতেন ‘শাফাক’ অস্তমিত হওয়ার সময়। আর ফজরের সালাত আদায় করতেন ফজর উদিত হওয়ার সময়, যখন চক্ষু উন্মীলিত হয়। এর মাঝে যে সময় তার পুরোটা সালাতের ওয়াক্ত। -মুসনাদে আবু ইয়ালা আলমাওসিলী, হাদীস ৩৯৯১

قال الهيثمي في "مجمع الزوائد" 1: 303 : وإسناده حسن.

وقال البوصيري في "إتحاف الخيرة" (1147و 1148) : هذا حديث رجاله ثقات.

ওসমান রা.-এর আযাদকৃত গোলাম হারেস রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

جلس عثمان يوما وجلسنا معه، فجاءه المؤذن، فدعا بماء في إناء، أظنه سيكون فيه مد، فتوضأ، ثم قال: رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يتوضأ وضوئي هذا، ثم قال: "ومن توضأ وضوئي هذا، ثم قام فصلى صلاة الظهر، غفر له ما كان بينها وبين الصبح، ثم صلى العصر غفر له ما بينها وبين صلاة الظهر، ثم صلى المغرب غفر له ما بينها وبين صلاة العصر، ثم صلى العشاء غفر له ما بينها وبين صلاة المغرب، ثم لعله أن يبيت يتمرغ ليلته، ثم إن قام فتوضأ وصلى الصبح غفر له ما بينها وبين صلاة العشاء، وهن الحسنات يذهبن السيئات.

একদিন আমরা উসমান রা.-এর সঙ্গে বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে মুয়াযযিন আসল। তখন তিনি একটি পাত্রে পানি চাইলেন। আমার ধারণা, তাতে এক মুদ পরিমাণ পানি ছিল। তিনি ওযু করলেন। এরপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এই ওযুর মত ওযু করতে দেখেছি। অতঃপর বললেন, যে আমার এই ওযুর মত ওযু করবে, এরপর যোহরের সালাত আদায় করবে, তার যোহর ও ফজরের মধ্যবর্তী ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। অতঃপর আসর পড়লে আসর ও যোহরের মধ্যবর্তী ত্রুটিসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। এরপর মাগরিব পড়লে মাগরিব ও আসরের মধ্যবর্তী পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। তারপর এশা পড়লে এশা ও মাগরিবের মধ্যবর্তী ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। রাতে হয়ত সে শয়ন করবে। এরপর যদি সে উঠে ওযু করে এবং ফজরের সালাত আদায় করে তাহলে ফজর ও এশার মধ্যবর্তী ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এগুলোই হল পুণ্যরাজি, যা পাপরাশিকে দূর করে দেয়। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৫১৩; মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৪০৫

قال المنذري في "الترغيب والترهيب" 1: 240: رواه أحمد بإسناد حسن.

وقال الهيثمي في "مجمع الزوائد" 1: 296 : رواه أحمد وأبو يعلى والبزار، ورجاله رجال الصحيح غير الحارث بن عبد، مولى عثمان بن عفان، وهو ثقة.

ইয়াযীদ ইবনে যিয়াদের সূত্রে  উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা.-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ ইবনে রাফে থেকে বর্ণিত-

أنه سأل أبا هريرة عن وقت الصلاة؟ فقال أبو هريرة: أنا أخبرك، صل الظهر إذا كان ظلك مثلك، والعصر إذا كان ظلك مثليك، والمغرب إذا غربت الشمس، والعشاء ما بينك وبين ثلث الليل، وصل الصبح بغبش يعني الغلس.

তিনি আবু হুরায়রা রা.-কে সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। আবু হুরায়রা রা. বললেন, আমি তোমাকে জানাচ্ছি। যোহর পড়বে-যখন তোমার ছায়া তোমার সমপরিমাণ হবে। আসর পড়বে-যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হবে। মাগরিব পড়বে সূর্যাস্তের সময়। এশা পড়বে রাতের এক তৃতীয়াংশের মধ্যে। আর ফজর পড়বে অন্ধকার থাকাবস্থায়। -মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, বর্ণনা ১; মুসান্নাফে আবদুল রাযযাক, বর্ণনা ২০৪১

জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

الظهر كاسمها، والعصر بيضاء حية، والمغرب كاسمها، وكنا نصلي مع رسول الله صلى الله عليه وسلم المغرب، ثم نأتي منازلنا، وهي على قدر ميل، فنرى مواقع النبل، وكان يعجل العشاء ويؤخر، والفجر كاسمها، وكان يغلس بها.

যোহর তার নামের মত। আসর হল শুভ্রোজ্জ্বল। মাগরিব তার নামের মত। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করে নিজেদের বাড়িতে যেতাম। সেটা ছিল এক মাইল দূরত্বে। তখন আমরা (নিক্ষিপ্ত) তীরের আপতনস্থল দেখতে পেতাম। তিনি এশার সালাত আগে আগে আদায় করতেন আবার বিলম্বও করতেন। আর ফজর তার নামের মত; তিনি অন্ধকার থাকাবস্থায় ফজরের সালাত আদায় করতেন। -মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৪২৪৬; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৩২৫১

قال السيوطي في "جمع الجوامع" (19 : 531-530): هو صحيح.

وفيه عبد الله بن محمد بن عقيل. قال الترمذي في “جامعه” (3) : هُوَ صَدُوقٌ، وَقَدْ تَكَلّمَ فِيهِ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ قِبَلِ حِفْظِهِ. وسَمِعْت مُحَمّدَ بْنَ إِسْمَاعِيلَ، يَقُولُ: كَانَ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَالْحُمَيْدِيّ، يَحْتَجّونَ بِحَدِيثِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُحَمّدِ بْنِ عَقِيلٍ، قَالَ مُحَمّدٌ: وَهُوَ مُقَارِبُ الْحَدِيثِ.

وقال ابن كثير في أول “تفسيره” في فضل الفاتحة : وابن عقيل يحتج به الأئمة الكبار.

ইবনে লাবীবা রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

عن ابن لبيبة قال: جئت إلى أبي هريرة وهو جالس في المسجد الحرام، ... قلت: أخبرني عن أمرٍ الأمورُ كُلّها له تَبَعٌ، عن صلاتنا التي لا بد لنا منها،... قال: أتقرأ من القرآن شيئا؟ قلت: نعم، قال: فقرأت له فاتحة الكتاب، فقال: هذه السبع المثاني التي يقول الله تعالى: وَ لَقَدْ اٰتَیْنٰكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِیْ وَ الْقُرْاٰنَ الْعَظِیْمَ. قال: ثم قال لي: أتقرأ سورة المائدة؟ قلت: نعم، قال: فاقرأ علي آية الوضوء، فقرأتها، فقال: ما أراك إلا عرفت وضوء الصلاة، أما سمعت الله يقول: اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ، أتدري ما دلوك الشمس؟ قلت: إذا زالت الشمس عن كبد السماء - أو عن بطن السماء - بعد نصف النهار، قال: نعم فصل الظهر حينئذ، وصل العصر والشمس بيضاء نقية، تجد لها مسًّا، قال: أتدري ما غسق الليل؟ قال: قلت: نعم، غروب الشمس، قال: نعم، فاحْدُرْها في أثرها، ثم احْدُرْها في أثرها، وصل العشاء إذا ذهب الشفق، وَادْلَأَمّ الليل من ههنا - وأشار إلى المشرق -، فيما بينك وبين ثلث الليل، وما عجلت بعد ذهاب بياض الأفق، فهو أفضل، وصل الفجر إذا طلع الفجر، أتعرف الفجر؟ قال: قلت: نعم، قال: ليس كل الناس يعرفه، قال: قلت: هو إذا اصطفق الأفق بالبياض، قال: نعم، فصلها حينئذ إلى السَّدف، ثم إلى السَّدف،ثم إلى السَّدف.

আমি একবার আবু হুরায়রা রা.-এর কাছে এলাম। তিনি তখন মসজিদে হারামে বসা। আমি তাঁকে বললাম, আপনি আমাকে এমন বিষয়ে অবহিত করুন, অন্যসব বিষয় যার অনুগামী, অর্থাৎ সালাত সম্পর্কে, যা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।

তিনি বললেন, তোমার কি কুরআনের কোনো অংশ মুখস্থ আছে? আমি বললাম, জী। এরপর আমি তাঁকে সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করে শোনালাম। বললেন, এটাই- ‘আস্সাবউল মাসানী’, যার সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ لَقَدْ اٰتَیْنٰكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِیْ وَ الْقُرْاٰنَ الْعَظِیْمَ.

(আমি আপনাকে এমন সাতটি আয়াত দিয়েছি, যা বারবার পড়া হয় এবং দিয়েছি মর্যাদাপূর্ণ কুরআন। -সূরা হিজর (১৫) : ৮৭)

এরপর বললেন, তোমার কি সূরা মায়েদা মুখস্থ আছে? বললাম, জী। বললেন, তাহলে অযুর আয়াতটি তিলাওয়াত করে শোনাও। আমি তিলাওয়াত করলাম। তিনি বললেন, আমার ধারণা, সালাতের অযু সম্পর্কে তুমি জান। তুমি কি আল্লাহ তাআলার এই বাণী শুনেছ-

اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِدُلُوْكِ الشَّمْسِ.

(আপনি সালাত কায়েম করুন ‘দুলূকুশ শামসের’ সময়। -সূরা বানী ইসরাঈল (১৭) : ৭৮)

তুমি জান- ‘দুলূকুশ শামস’ কী? বললাম, মধ্যাহ্নের পর সূর্য যখন মধ্যাকাশ থেকে হেলে যায়। বললেন, হাঁ; সে সময় যোহর পড়বে। আর আসর পড়বে যখন সূর্য শুভ্র-স্বচ্ছ থাকে এবং তার কিছুটা তাপ তোমার গায়ে লাগে। তিনি বললেন, তুমি জান- ‘গাসাকুল লাইল’ কী? আমি বললাম, জী; সূর্যাস্ত। বললেন, হাঁ; সূর্যাস্তের পর যত দ্রুত সম্ভব মাগরিব আদায় করবে। আর এশা আদায় করবে যখন শাফাক (পশ্চিমাকাশের আলোক-আভা) অদৃশ্য হয় এবং রাতের আঁধার এখান থেকে গাঢ় হয়; তিনি পূর্বদিকে ইশারা করলেন-রাতের এক তৃতীয়াংশের মধ্যে তা আদায় করবে। (পশ্চিম) দিগন্তের শুভ্রতা অদৃশ্য হবার পর যত দ্রুত এশা আদায় করবে তত উত্তম।

ফজরের সালাত আদায় করবে-যখন ফজর উদিত হয়। তুমি জান-ফজর কী? বললাম, জী। বললেন, সবাই সে সম্পর্কে জানে না। বললাম, যখন দিগন্তে শুভ্রতা ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বললেন, হাঁ; সে সময় ফজর আদায় করবে দিনের আলো পরিস্ফুট হওয়া পর্যন্ত; এরপর আরো পরিস্ফুট হওয়া পর্যন্ত; এরপর আরো পরিস্ফুট হওয়া পর্যন্ত (অর্থাৎ সূর্যোদয় পর্যন্ত)। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২১০৭, মারকাযুল বুহূস ওয়া তাকনিয়াতিল মালুমাত-এর তাহকীককৃত নুসখা (মাওলানা হাবীবুর রহমান আযমী রাহ.-এর তাহকীককৃত নুসখায় বর্ণনাটির নম্বর ২০৪০)

আলী ইবনে আমর রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের নিকট এই মর্মে উমর রা.-এর পত্র পৌঁছেছে যে-

صَلّوا الْفَجْرَ وَالنّجُومُ مُشْتَبِكَةٌ نَيِّرَةٌ، وَصَلّوا الظّهْرَ إِذَا زَالَتِ الشّمْسُ عَنْ بَطْنِ السّمَاءِ، وَصَلّوا الْعَصْرَ وَالشّمْسُ بَيْضَاءُ نَقِيّةٌ، وَصَلّوا الْمَغْرِبَ حِينَ تَغْرُبُ الشّمْسُ، وَرَخّصَ فِي الْعِشَاءِ.

ফজর আদায় করবে যখন নক্ষত্রসমূহ সন্নিকৃষ্ট ও উজ্জ্বল থাকে। যোহর আদায় করবে যখন সূর্য মধ্যাকাশ থেকে হেলে পড়ে। আসর আদায় করবে যখন সূর্য স্বচ্ছ শুভ্র থাকে। মাগরিব আদায় করবে যখন সূর্য আস্ত যায়। আর এশার ক্ষেত্রে তিনি ছাড় দিয়েছেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৩২৪৯

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর আযাদকৃত গোলাম নাফে‘-এর সূত্রে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব রা. তাঁর গভর্নরগণের নিকট পত্র প্রেরণ করেন এই মর্মে-

عَنْ نَافِعٍ مَوْلَى عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ، أَنّ عُمَرَ بْنَ الْخَطّابِ كَتَبَ إِلَى عُمّالِهِ: إِنّ أَهَمّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصّلَاةُ. فَمَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا، حَفِظَ دِينَهُ. وَمَنْ ضَيّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ، ثُمّ كَتَبَ: أَنْ صَلّوا الظّهْرَ، إِذَا كَانَ الْفَيْءُ ذِرَاعًا، إِلَى أَنْ يَكُونَ ظِلّ أَحَدِكُمْ مِثْلَهُ. وَالْعَصْرَ وَالشّمْسُ مُرْتَفِعَةٌ بَيْضَاءُ نَقِيّةٌ، قَدْرَ مَا يَسِيرُ الرّاكِبُ فَرْسَخَيْنِ أَوْ ثَلَاثَةً قَبْلَ غُرُوبِ الشّمْسِ، وَالْمَغْرِبَ إِذَا غَرَبَتِ الشّمْسُ. وَالْعِشَاءَ إِذَا غَابَ الشّفَقُ إِلَى ثُلُثِ اللّيْلِ. فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُهُ، فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُهُ، فَمَنْ نَامَ فَلَا نَامَتْ عَيْنُهُ. وَالصّبْحَ وَالنُّجُومُ بَادِيَةٌ مُشْتَبِكَةٌ.

আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সালাত। যে তা রক্ষা করবে এবং তার প্রতি যত্নবান থাকবে সে তার দ্বীনকেও রক্ষা করবে। আর যে তা নষ্ট করবে সে অন্যকিছুকে আরো বেশি নষ্ট করবে।

এরপর লেখেন, তোমরা যোহর আদায় করবে-যখন ছায়া এক হাত পরিমাণ হবে। যোহরের সময়সীমা তোমাদের কারো ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। আসর আদায় করবে-যখন সূর্য ঊর্ধ্বে শুভ্র ও স্বচ্ছ থাকে। আর এর সময় থাকে, সূর্যাস্তের আগে আরোহী দুই বা তিন ফারসাখ চলতে পারে এই পরিমাণ। মাগরিব আদায় করবে-যখন সূর্য ডুবে যায়। আর এশা আদায় করবে-যখন ‘শাফাক’ অদৃশ্য হয়। এর সময়সীমা রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত। সুতরাং (এশা না পড়ে) কেউ ঘুমালে তার চোখে যেন ঘুম না আসে। কেউ ঘুমালে তারঁ চোখে যেন ঘুম না আসে। কেউ ঘুমালে তার চোখে যেন ঘুম না আসে। আর ফজর আদায় করবে যখন নক্ষত্রসমূহ প্রকাশিত ও সন্নিকৃষ্ট থাকে। -মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৬; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ২০৩৮ ও ২০৩৯

 

আবদুল্লাহ ইবনে শাফীক রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَقِيقٍ، قَالَ: سَأَلْتُ عَائِشَةَ عَنْ صَلَاةِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، عَنْ تَطَوّعِهِ؟ فَقَالَتْ: كَانَ يُصَلِّي فِي بَيْتِي قَبْلَ الظّهْرِ أَرْبَعًا، ثُمّ يَخْرُجُ فَيُصَلِّي بِالنّاسِ، ثُمّ يَدْخُلُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَكَانَ يُصَلِّي بِالنّاسِ الْمَغْرِبَ، ثُمّ يَدْخُلُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَيُصَلِّي بِالنّاسِ الْعِشَاءَ، وَيَدْخُلُ بَيْتِي فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَكَانَ يُصَلِّي مِنَ اللّيْلِ تِسْعَ رَكَعَاتٍ فِيهِنّ الْوِتْرُ، وَكَانَ يُصَلِّي لَيْلًا طَوِيلًا قَائِمًا، وَلَيْلًا طَوِيلًا قَاعِدًا، وَكَانَ إِذَا قَرَأَ وَهُوَ قَائِمٌ رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَائِمٌ، وَإِذَا قَرَأَ قَاعِدًا رَكَعَ وَسَجَدَ وَهُوَ قَاعِدٌ، وَكَانَ إِذَا طَلَعَ الْفَجْرُ صَلّى رَكْعَتَيْنِ.

আমি আয়েশা রা.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও নফল সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তিনি আমার ঘরে যোহরের আগে চার রাকাত সালাত আদায় করতেন। এরপর বেরিয়ে মুসল্লীদের নিয়ে যোহর আদায় করতেন। এরপর ঘরে এসে দুই রাকাত সালাত আদায় করতেন। তিনি মানুষদের নিয়ে মাগরিব আদায় করতেন এরপর ঘরে এসে দুই রাকাত আদায় করতেন। তিনি লোকদের নিয়ে এশা আদায় করতেন এরপর  আমার ঘরে এসে দুই রাকাত আদায় করতেন। ... এবং ফজর উদিত হলে দুই রাকাত পড়তেন।৩ -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৩০

জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يُصَلِّي الظّهْرَ نَحْوَ صَلَاتِكُمْ وَالْعَصْرَ نَحْوَ صَلَاتِكُمْ وَالْمَغْرِبَ نَحْوَ صَلَاتِكُمْ وَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعِشَاءَ شَيْئًا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত আদায় করতেন তোমাদের ন্যায়, আসর আদায় করতেন তোমাদের ন্যায়, মাগরিব আদায় করতেন তোমাদের ন্যায় আর এশা কিছুটা বিলম্ব করে আদায় করতেন। -মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী, হাদীস ৮১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৩

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

مَا رَأَيْتُ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ صَلّى صَلَاةً قَطّ إِلّا لِوَقْتِهَا، إِلّا أَنّهُ جَمَعَ بَيْنَ الظّهْرِ وَالْعَصْرِ بِعَرَفَةَ، وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ بِجَمْعٍ.

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বদা ওয়াক্তমত সালাত আদায় করতে দেখেছি। তবে (হজ্বের সময়) তিনি আরাফায় যোহর-আসর এবং মুযদালিফায় মাগরিব -এশা একত্রে আদায় করেছেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ৪৪২০

আমর ইবনে দীনারের সূত্রে জাবের ইবনে যায়েদ রাহ. থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন-

صَلّيْتُ مَعَ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ثَمَانِيًا جَمِيعًا، وَسَبْعًا جَمِيعًا.

আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে একত্রে আট রাকাত এবং একত্রে সাত রাকাত আদায় করেছি।

আমর ইবনে দীনার জাবের ইবনে যায়েদের উদ্দেশে বললেন-

يَا أَبَا الشّعْثَاءِ أَظُنّهُ أَخّرَ الظّهْرَ، وَعَجّلَ الْعَصْرَ، وَأَخّرَ الْمَغْرِبَ، وَعَجّلَ الْعِشَاءَ، قَالَ: وَأَنَا أَظُنّ ذَاكَ.

আবু শা‘সা! আমার ধারণা, তিনি ওয়াক্তের ভেতরেই যোহর বিলম্ব করেছেন এবং আসর একেবারে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করেছেন। তেমনিভাবে ওয়াক্তের ভেতরেই মাগরিব বিলম্ব করেছেন এবং এশা একেবারে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করেছেন। জাবের ইবনে যায়েদ রাহ. বললেন, আমারও তাই ধারণা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭০৫; সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৭৪

আবু উসমান নাহদী রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

اصْطَحَبْتُ أَنَا وَسَعْدُ بْنُ أَبِي وَقّاصٍ مِنَ الْكُوفَةِ إِلَى مَكّةَ، وَخَرَجْنَا مُوَافِدَيْنِ، فَجَعَلَ سَعْدٌ يَجْمَعُ بَيْنَ الظّهْرِ وَالْعَصْرِ وَالْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ، يُقَدِّمُ مِنْ هَذِهِ قَلِيلًا، وَيُؤَخِّرُ مِنْ هَذِهِ قَلِيلًا حَتّى جِئْنَا مَكّةَ.

আমি এবং সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. একসঙ্গে কুফা থেকে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। আমরা জামাতবদ্ধ হয়ে বের হয়েছিলাম। (পথে) সা’দ রা. একত্রে যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশা আদায় করছিলেন। আসর ও এশা একটু আগে আদায় করতেন আর মাগরিব ও যোহর একটু বিলম্বে আদায় করতেন। এ অবস্থায় আমরা মক্কায় পৌঁছলাম। (অর্থাৎ যোহরকে সময়ের ভেতরেই বিলম্ব করতেন এবং আসর একেবারে প্রথম ওয়াক্তে পড়তেন। তেমনিভাবে মাগরিবকে ওয়াক্তের ভিতরেই বিলম্ব করতেন এবং এশা একেবারে প্রথম ওয়াক্তে পড়তেন।) -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ৪৪০৬

আ‘মাশ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ أَصْحَابُ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ يُعَجِّلُونَ الظّهْرَ، وَيُؤَخِّرُونَ الْعَصْرَ، وَيُعَجِّلُونَ الْمَغْرِبَ، وَيُؤَخِّرُونَ الْعِشَاءَ.

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর শাগরিদগণ যোহর আগে আগে আদায় করতেন আর আসর বিলম্ব করে আদায় করতেন। মাগরিব জলদি আদায় করতেন আর এশা দেরিতে আদায় করতেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, বর্ণনা ২০৪৩

আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

شَغَلُونَا عَنِ الصّلَاةِ الْوُسْطَى، صَلَاةِ الْعَصْرِ، مَلَأَ اللهُ بُيُوتَهُمْ وَقُبُورَهُمْ نَارًا، ثُمّ صَلّاهَا بَيْنَ الْعِشَاءَيْنِ، بَيْنَ الْمَغْرِبِ وَالْعِشَاءِ.

ওরা আমাদেরকে ‘আসসালাতুল উসতা’ আসরের সালাত থেকে ব্যস্ত রেখেছে। আল্লাহ ওদের ঘর ও কবর আগুনে ভরে দিন। এরপর তিনি তা রাতের দুই সালাতের মাঝে অর্থাৎ মাগরিব ও এশার মাঝে আদায় করেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬২৭

সামুরা ইবনে জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

صَلاَةُ الوُسْطَى صَلاَةُ العَصْرِ.

সালাতুল উসতা’ (মধ্যবর্তী সালাত) হল, আসরের সালাত। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১৮১

قال الترمذي: حديث سمرة في صلاة الوسطى حديث حسن.

জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كُنّا جُلُوسًا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، إِذْ نَظَرَ إِلَى الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، فَقَالَ: أَمَا إِنّكُمْ سَتَرَوْنَ رَبّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا الْقَمَرَ، لَا تُضَامّونَ فِي رُؤْيَتِهِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لَا تُغْلَبُوا عَلَى صَلَاةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشّمْسِ، وَقَبْلَ غُرُوبِهَا - يَعْنِي الْعَصْرَ وَالْفَجْرَ -، ثُمّ قَرَأَ جَرِيرٌ : وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا .

আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, শোন! অচিরেই তোমাদের রবকে তোমরা দেখতে পাবে, যেমন এ চাঁদকে তোমরা দেখতে পাচ্ছ। তাঁকে দেখতে গিয়ে তোমরা পরস্পর ভিড়ের চাপে পড়বে না। যদি তোমরা সক্ষম হও তবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে সালাত আদায়ে পিছপা হয়ো না। অর্থাৎ আসর ও ফজর। এরপর জারীর রা. তিলাওয়াত করলেন-

وَ سَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَ قَبْلَ غُرُوْبِهَا .

(আর আপনি সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে নিজ প্রতিপালকের তাসবীহ ও হামদে রত থাকুন। -সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩০) -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৩; সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৫৪

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

 

১. যোহরের ওয়াক্ত কখন শেষ এবং আসরের ওয়াক্ত কখন শুরু-এ বিষয়ে বিভিন্ন হাদীস ও আসার রয়েছে। কোনো বর্ণনায় আছে, বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া। আবার কোনো বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয়, বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হওয়া। ফুকাহায়ে কেরাম এক্ষেত্রে দলীলের আলোকে বিভিন্ন মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবু হানীফা রাহ.-এর মতে আসরের ওয়াক্ত আরম্ভ হয়, যখন প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার দ্বিগুণ হয়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

صَلِّ الظُّهْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثْلَكَ، وَالْعَصْرَ إِذَا كَانَ ظِلُّكَ مِثلَيْكَ.

যোহর পড়বে যখন তোমার ছায়া তোমার সমপরিমাণ হবে। আর আসর পড়বে যখন তোমার ছায়া তোমার দ্বিগুণ হবে। -মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, হাদীস ১

এই বর্ণনার পর ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. বলেন,

هَذَا قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَحِمَهُ اللهُ فِي وَقْتِ الْعَصْرِ.

আসরের ওয়াক্তের ক্ষেত্রে আবু হানীফা রাহ.-এর মত এটিই।

এই মতটি ওই সকল হাদীস-আসার দ্বারাও সমর্থিত, যেগুলোতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা হবার পর যোহরের সালাত আদায় করার তাকীদ দেওয়া হয়েছে। সামনের বা তার পরের কিস্তিতে সেগুলো উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

২. বোঝা গেল, মাগরিবের ক্ষেত্রে করণীয় হল, সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে আগে আগে মাগরিবের সালাত আদায় করে নেয়া। তবে মাগরিবের ওয়াক্ত মূলত শাফাক অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত, যেটা অন্যান্য হাদীস ও আসার দ্বারা প্রমাণিত।

৩. অর্থাৎ মোট বার রাকাত সালাত। পরিভাষায় এই বার রাকাতকে বলা হয় ‘সুন্নাতে রাতিবা’ বা ‘সুন্নাতে মুয়াক্কাদা’। অন্যান্য নফলের তুলনায় সুন্নাতে রাতিবা বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদার গুরুত্ব অধিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিয়মিত আদায় করতেন এবং উম্মতকে সে বিষয়ে তাকীদ ও উৎসাহিত করতেন। নুমান ইবনে সালিমের সূত্রে আমর ইবনে আউস থেকে বর্ণিত; তিনি আম্বাসা ইবনে আবু সুফিয়ানের বরাতে উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণনা করেন; উম্মে হাবীবা রা. বলেন-

سَمِعْتُ أُمَّ حَبِيبَةَ، تَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: مَنْ صَلَّى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ: فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ عَنْبَسَةُ: فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ أُمِّ حَبِيبَةَ، وَقَالَ عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ: مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَنْبَسَةَ، وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ سَالِمٍ: مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَمْرِو بْنِ أَوْسٍ.

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দিনে-রাতে বার রাকাত  সালাত আদায় করবে, বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হবে।

উম্মে হাবীবা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এই ফযীলত শোনার পর থেকে এই বার রাকাত ছাড়িনি। আম্বাসা রাহ. বলেন, আমি উম্মে হাবীবা রাহ.-এর কাছে তা শোনার পর থেকে এই বার রাকাত ছাড়িনি।

আমর ইবনে আউস রাহ. বলেন, আমি আম্বাসা রাহ. থেকে তা শোনার পর আজ পর্যন্ত এই বার রাকাত ছাড়ি নি।

নুমান ইবনে সালিম রাহ. বলেন, আমি আমর ইবনে আউস রাহ.-এর কাছে তা শোনার পর আজ অবধি এই বার রাকাত ছাড়ি নি। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭২৮

সুতরাং এই বার রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বা সুন্নাতে রাতিবার বিষয়ে যত্নবান হওয়া জরুরী।

 

 

advertisement