মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (মৃত্যু : ১৯০৮ ঈসাব্দ, ১৩২৫ হিজরী) নবুওতের মিথ্যা দাবির কিছু নমুনা
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে অদ্যাবধি চলে আসা ঈমানবিধ্বংসী একটি মতবাদের নাম কাদিয়ানিয়াত বা কাদিয়ানীবাদ। এটি একটি জঘন্য এবং ভয়াবহ কুফুরী ফেতনা। ইসলামের মোকাবেলায় দাঁড় করানো এ মতবাদের অনুসারীদেরকে কাদিয়ানী বলা হয়- তাদের গুরু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর দিকে সম্বন্ধ করে।
কাদিয়ানীরা নিজেদেরকে শুধু মুসলিম নয়; ‘প্রকৃত মুসলিম’ বলে দাবি করে। আর বিশ্বের সকল মুসলমানকে শুধু মির্যা কাদিয়ানীকে না মানার কারণে কাফের মনে করে। অথচ বহু স্পষ্ট কুফুরী বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের কারণে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী অমুসলিম ও কাফের এবং তার অনুসারীরাও অমুসলিম এবং কাফের। গোটা মুসলিম উম্মাহ্র ঐকমত্য এবং মুসলিম আলিম ও গবেষকবর্গের সর্বসম্মত ফতোয়া ও সিদ্ধান্ত এটিই।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কাফের হওয়ার বহু কারণ রয়েছে। তার কুফুরিয়াতের প্রকারও অনেক। একেক প্রকারের অধীনে রয়েছে অসংখ্য উদ্ধৃতি-উদাহরণ। স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনা করলে একেকটি উদ্ধৃতিই তার কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এমনকি মির্যার কোনো কোনো বক্তব্য এমনও রয়েছে, যা দেখলে সহজেই বুঝতে পারবেন, তার একেকটা কথা কতগুলো কুফুরির সমষ্টি এবং প্রত্যেকটিই কত মারাত্মক ও ভয়াবহ পর্যায়ের কুফর ধারণ করে রেখেছে। আর এ ধরনের উদ্ধৃতিও সংখ্যায় কম নয়; অনেক।
তবে তন্মধ্যে সবচে নিকৃষ্ট ও জঘন্যতম কুফর হচ্ছে- মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবি। অর্থাৎ ইসলামের অকাট্য এবং অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় প্রাপ্ত ও অনুসৃত মৌলিক আকীদা হল, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী ও রাসূল। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর নবুওত ও রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করে দিয়েছেন। কুরআনে কারীমে এবং হাদীস শরীফের মাধ্যমে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যবানীতে তিনি তা জানিয়ে দিয়েছেন। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী খতমে নবুওতের এ ইসলামী মৌলিক আকীদার উপর হামলে পড়েছে। নিজে নবী ও রাসূল হবার দাবি করেছে, নিজেকে স্বতন্ত্র শরীয়তের অধিকারী সাব্যস্ত করেছে এবং নিজের নবুওতকে সর্বশ্রেষ্ঠ আখ্যা দিয়েছে। অতএব তার নবুওতের মিথ্যা দাবি নিছক নবুওত দাবি নয়; বরং তা অসংখ্য ভয়াবহ কুফুরের এক দীর্ঘ তালিকার শিরোনামমাত্র।
নবুওত ও শরীয়তপ্রাপ্তির মিথ্যা দাবি করে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (১৯০৮ ঈ.) নিজেকে ‘কাযযাব ও দাজ্জাল’-এর তালিকায় শামিল করেছে, শুধু তাই নয়; বরং এভাবে সে নিজেকে আখেরী নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওত ও শরীয়ত, তাঁর প্রতি অবতীর্ণ সর্বশেষ ওহী আলকুরআনুল কারীমের বিদ্রোহী হিসাবে দাঁড় করিয়েছে। তাকে এবং তার অনুসারীদেরকে যদি তাদের দাবি-দাওয়ার এবং আকীদা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে বিচার করা হয় তাহলে তারা ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ধর্মের প্রবক্তা ও অনুসারী। তাই ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খাতামুন নাবিয়্যীন, কুরআন, সুন্নাহ, ইসলামী শরীয়তসহ শাআইরে ইসলাম ও সকল ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার তাদের প্রতারণা বৈ কিছু নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর বানানো এই ‘ধর্ম’ কোনো পুরোনো (আপন যমানায় অনুসরণীয় সত্য) ধর্মের বিকৃত রূপ নয়, কোনো পুরোনো রহিত ধর্মও নয়; বরং এটি সকল ধর্ম ও শরীয়তকে রহিতকারী এবং নতুন ও পুরাতন সকল ইজম (সুন্নাতুল জাহিলিয়্যাহ)-কে বাতিলকারী কুরআনী শরীয়ত আবির্ভাবের তেরশ বছর পরের বানানো ও দাবিকৃত ধর্ম; যার একমাত্র ভিত্তিই হচ্ছে নবুওত ও শরীয়তের মিথ্যা দাবি; আখেরী ওহী, আখেরী নবী ও আখেরী শরীয়তের বিদ্রোহ এবং কুরআন ও সুন্নাহ, ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের আকাইদ ও পরিভাষা বিকৃতির উপর। তাই কাদিয়ানিয়াত কোনো সাধারণ বিদআতী ফিরকা নয়, আর নয় আহলে কিতাবের মতো কোনো রহিত দ্বীনের অধিকারী; এটি ইসলামের নিছক বিদ্রোহ এবং খালেছ ইরতিদাদ ও যানদাকা।১ এই প্রবন্ধে আমরা তাদের মতাদর্শ, কুফুরী বক্তব্য ও আকীদা-বিশ্বাসের সব দিক নিয়ে আলোচনা করব না; শুধু মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর নবুওতের মিথ্যা দাবির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।
এই একটি বিষয়ও যদি জানা থাকে, তাহলেও মির্যা সাহেব ও তার অনুসারীদের হাকীকত বুঝতে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না। তাদের অন্যান্য কুফুরী আকীদা-বিশ্বাস এবং কুফুরী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি তো আছেই।২
ঊনবিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ানে জন্ম নেওয়া মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। তৎকালীন উপনিবেশী বৃটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় সে তার কুফরিয়াত নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে এবং বিভিন্ন পলিসিতে সরলমনা মুসলমানদের ঈমান হরণে লিপ্ত হয়।
মির্যা কাদিয়ানীর নবুওতের মিথ্যা দাবি
১৮৮০ সন থেকে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়। তবে শুরুতেই সে সরাসরি নবুওত দাবির ধৃষ্টতা দেখানোর দুঃসাহস করেনি। সে ধারাবাহিকভাবে একেক সময় একেক উপাধির অধিকারী বলে ঘোষণা দিতে থাকে। ১৮৮০ সনে সর্বপ্রথম সে নিজেকে ‘মুজাদ্দিদ’ (ধর্মীয় সংস্কারক) বলে দাবি করে। তারপর কখনো ‘মুলহাম মিনাল্লাহ’ (আল্লাহর তরফ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত), কখনো ‘মামুর মিনাল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট), কখনো ‘মুহাদ্দাস’ (যার সাথে গায়েব থেকে কথা হয়), কখনো ‘নাযীর’ (সতর্ককারী), কখনো ‘ইমামুয যামান’ বা যামানার ইমাম ইত্যাদি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপাধির অধিকারী বলে সে দাবি করতে থাকে।
১৮৮৯ সনে এসে সে স্বতন্ত্র জামাত প্রতিষ্ঠা করে এবং নিজের দিকে সম্বন্ধ করে এ দলের নামকরণ করে ‘জামাতে আহমদিয়া’। এ হিসাবে কাদিয়ানীরা ‘আহমদী’ বলে নিজেদের পরিচয় দেয়।
১৮৯১ সনে এসে সে নিজেকে ‘মসীহে মাওঊদ’ (প্রতিশ্রুত মাসীহ) ঘোষণা দেয়৩ এবং ‘ইমাম মাহদী’ বলে দাবি করে। অবশেষে ১৯০০/১৯০১ সনে এসে কোনো প্রকার রাখঢাক ছাড়াই সে নিজেকে পরিপূর্ণ নবী বলে ঘোষণা দেয়। মৃত্যু (১৯০৮ ঈ.) অবধি সে এ দাবির উপরই অনড় থাকে। আর তার অনুসারীরা তাকে এমনটাই বিশ্বাস করে।
এ হল মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবির সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট।
তবে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার চক্করে ফেলে (যেমন মাসীহ, মাহদী, মুজাদ্দেদ, মুলহাম, মামুর ইত্যাদি) সাধারণ মানুষ থেকে নবুওত দাবির প্রসঙ্গটি চেপে যাওয়া মূলত ধোঁকা এবং প্রতারণামাত্র।
মির্যা কাদিয়ানীর দাবি অনুযায়ী-
ক. সে নবী এবং রাসূল।
খ. তার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়েছে।
গ. সে স্বতন্ত্র শরীয়তের অধিকারী।
ঘ. তার মাধ্যমে মুজিযা প্রকাশিত হয়েছে।
ঙ. তার নিকট হযরত জিবরীল আ. আগমন করতেন।
চ. ফিরিশতাগণ ওহী নিয়ে তার নিকট আসতেন।
ছ. সে তার দাবিকৃত ওহীকে কুরআন মাজীদের ন্যায় অকাট্য ঘোষণা করেছে।
জ. তার অস্বীকারকারীদেরকে সে কাফের ঘোষণা করেছে।৪
ঝ. আর যে একবার তাকে মানার পর তাকে প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে সে তাকে মুরতাদ (ধর্মান্তরিত বা ধর্মত্যাগী) আখ্যা দিয়েছে। [দ্রষ্টব্য : হাকীকতুল ওহী, লেখক, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, পৃ. ১২৪; রূহানী খাযায়েন ২২/১২৭; হাকীকতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ৯৪]
অর্থাৎ নবুওত দাবির পাশাপাশি সে নবুওত-রিসালাত সংশ্লিষ্ট অনিবার্য অনুষঙ্গ ও পরিভাষাগুলো নিজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে এবং একমাত্র নবী ও রাসূলের সাথেই সম্পৃক্ত ও সীমাবদ্ধ বৈশিষ্ট্যাবলির অধিকারী বলে সে নিজের ব্যাপারে ঘোষণা করেছে।
তার ও তার সম্প্রদায়ের আরো ধৃষ্টতা হল, কাদিয়ানী ধর্মের বিশ্বাস মতে- মির্যা যেহেতু নবী, তাই মির্যার পরিবার হচ্ছে নবী-পরিবার। তার বিবি নুসরত জাহান বেগম ‘উম্মুল মুমিনীন’। তাকে যারা দেখেছে এবং তার বাইয়াত গ্রহণ করেছে তারা সাহাবী। কাদিয়ানের জলসা হজে¦র সমতুল্য। মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যুর পর কাদিয়ানী জামাতে খলীফা হওয়ার যে ধারা রয়েছে তা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর খুলাফায়ে রাশেদীনের খেলাফত লাভ করার সদৃশ ইত্যাদি। এ হিসাবে কাদিয়ানীরা তাদের প্রথম খলীফা হাকীম নুরুদ্দীনকে ইসলামের প্রথম খলীফা আমীরুল মুমিনীন হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রা.-এর সদৃশ সাব্যস্ত করেছে। এজাতীয় জঘন্য জঘন্য আকীদা তারা লালন করে। [দ্রষ্টব্য : সীরাতুল মাহদী ২/১১৭, খুতবায়ে ইলহামিয়া, পৃ. ১৭১, রূহানী খাযায়েন ১৬/২৫৮, ২৫৯; খুতবায়ে মাহমুদ ৪/২৫৪; হযরত মৌলভী নূরউদ্দীন (রা.) খলীফাতুল মসীহ আউয়াল, লেখক, মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান (কাদিয়ানী), বাংলা, পৃ. ১১]
প্রকাশ থাকে যে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যা কাদিয়ানীর ক্ষেত্রে এধরনের ভয়াবহ এবং মারাত্মক আকীদাসমূহ পোষণ করার কারণ হল, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়নীকে তারা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমকক্ষ-সমতুল্য এবং বরাবর, এমনকি তার চেয়েও বেশি কিছু বিশ্বাস করে থাকে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক শানে এটা জঘন্য ধৃষ্টতা এবং চরম বেয়াদবি। ইসলামের অকাট্য মৌলিক আকীদা খতমে নবুওতের উপর কুঠারাঘাত এবং ইসলামকে সমূলে ধসিয়ে দেবার গভীর ষড়যন্ত্র।
খতমে নবুওতের আকীদার উপর পুরো দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু যুগে যুগে ঈমান হরণকারী গোষ্ঠী খতমে নবুওতের এ চাদরে আঁচড় বসাতে এবং ছলেবলে উম্মতকে কুফর ও বেঈমানীর ফাঁদে টেনে নিতে অপচেষ্টা চালাবে। তাই নবীজী উম্মতকে অগ্রিম সতর্ক করে দিয়েছেন। নবীজী বলেন-
لاَ تَقُومُ السّاعَةُ حَتّى يُبْعَثَ دَجّالُونَ كَذّابُونَ قَرِيبٌ مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلّهُمْ يَزْعُمُ أَنّهُ رَسُولُ اللهِ.
ততদিন কিয়ামত হবে না, যতদিন না ত্রিশের মতো কাযযাব ও দাজ্জাল আবির্ভূত হয়। তাদের সকলেই দাবি করবে, সে আল্লাহর রাসুল। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৪৪৯; সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৬০৯, ৭১২১
নবীজী আরো বলেন-
إِنّهُ سَيَكُونُ فِي أُمّتِي كَذّابُونَ ثَلَاثُونَ كُلّهُمْ يَزْعُمُ أَنّهُ نَبِيّ، وَأَنَا خَاتَمُ النّبِيِّينَ لَا نَبِيّ بَعْدِي.
অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে ত্রিশজন মিথ্যুক আবির্ভূত হবে। প্রত্যেকেই দাবি করবে সে নবী। অথচ আমি শেষ নবী। আমার পর কেউ নবী হবে না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৩৯৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪২৫২; জামে তিরমিযী, হাদীস ২২১৯
লক্ষণীয় বিষয় হল, নবীজী নবুওতের মিথ্যা দাবিদারের ক্ষেত্রে ‘কাযযাব ও দাজ্জাল’ দুটি শব্দ ব্যবহার করেছেন। যা অত্যন্ত তাৎপর্য বহন করে। কাযযাব মানে মহা মিথ্যাবাদী আর দাজ্জাল মানে মহা প্রতারক এবং ভয়াবহ ধোঁকাবাজ। অর্থাৎ ধোঁকা, প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তারা এমনভাবে নবুওতের দাবি করবে যে, অনেকেই পেরেশানীতে পড়ে যাবে। তারা স্পষ্টভাবে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা করবে না। ব্যাখ্যার নামে নানা অপব্যাখ্যা দাঁড় করাবে। ফলে সরলমনা মুসলমান চরমভাবে প্রতারিত হবে। তাদের খপ্পর থেকে সহজে পরিত্রাণ লাভের জন্য নবীজী মূল উসূল স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আর তা হল- ‘আমিই শেষ নবী। আমার পর আর কোনো নবী নেই।’ অতএব আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর যে-ই নবী হবার দাবি করুক না কেন এবং যেভাবেই দাবি করুক না কেন- তাকে প্রত্যাখ্যান করার মাঝেই ঈমানের হেফাযত হবে।
মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য-বিবৃতি এবং কাদিয়ানী মতবাদ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্ক করে দেওয়া ‘কাযিব’ ও ‘দাজ্ল’ তথা মিথ্যা ও প্রতারণার এক ভয়াবহ রূপ। মির্যা কাদিয়ানী কেবল নবুওতের মিথ্যা দাবি করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তার বক্তব্যে রয়েছে অনেক রকমের ‘দাজ্ল’। সে প্রকাশ্যে ইসলামের মোকাবেলায় বিদ্রোহে অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও ধোঁকা প্রতারণা ও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু শত দাজ্ল ও প্রতারণা করেও সে তার কুফরী দাবিগুলো ঢাকতে পারেনি।
মির্যা কর্তৃক খতমে নবুওত অস্বীকার এবং নবুওতের মিথ্যা দাবির বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। এতে কোনো ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। কিন্তু তবুও কাদিয়ানীরা এক্ষেত্রে অপব্যাখ্যা এবং প্রতারণার আশ্রয় নেয়, যা পরিষ্কার দাজল, নিফাক এবং যানদাকা। সাধারণ কুফর অপেক্ষা যা আরো ভয়াবহ। তার উদ্ধৃতিগুলো লক্ষ্য করলে পাঠক এর স্পষ্ট মহড়া দেখতে পাবেন।
মোটকথা, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে নবুওত এবং নবুওত ও রিসালাতের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্যাবলী ধারণের ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ নিজেকে নবীর আসনে নিয়ে নবুওত সংশ্লিষ্ট যত লকব ও পরিভাষা রয়েছে সবগুলো সে নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছে আর তার অনুসারীরাও তাকে ঐ পর্যায়ে রেখেই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আসছে। তার স্বলিখিত পুস্তকগুলোতে এর উদাহরণ প্রচুর। তেমনিভাবে কাদিয়ানীদের অথরিটিমূলক বক্তব্য-বিবৃতিতেও এর অনেক নমুনা ও উদাহরণ রয়েছে।
মির্যা কাদিয়ানী ও তার অনুসারীরা কোথাও কোথাও বিষয়টি ইশারা ইঙ্গিতে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেছে, আবার কখনো কখনো স্পষ্টভাবেই বলে ফেলেছে।
বিষয়টি যাতে সহজেই বোধগম্য হয় তাই আমরা এখানে কয়েকটি ছরীহ ও সুস্পষ্ট উদ্ধৃতি (নকলে কুফর কুফর না বাশাদ-এর ভিত্তিতে)৫ তুলে ধরব- ইনশাআল্লাহ।
যদিও তাদের ইঙ্গিতার্থমূলক পেঁচানো বক্তব্যগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট বক্তব্য অপেক্ষা আরো অধিক জটিল ও ভয়াবহ হয়ে থাকে।
নবী এবং রাসূল হবার দাবি : কিছু দৃষ্টান্ত
মির্যা কাদিয়ানী বহু জায়গায় স্পষ্ট ভাষায় নবী এবং রাসূল হওয়ার দাবি করেছে। এখানে তার কিছু বক্তব্য লক্ষ করুন।
(আয় আল্লাহ! আপনার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাক দামান এবং তাঁর পেয়ারে উম্মতের ঈমান-আকীদা হেফাযতের স্বার্থে এই মির্যা কাদিয়ানীর কিছু কুফুরী কথা শুধু চিহ্নিত করার জন্য উল্লেখ করতে হচ্ছে। আপনি নিজ দয়ায় আমাদের ক্ষমা করুন এবং মির্যার সকল কুফ্র থেকে উম্মতকে হেফাযত করুন- আমীন।
দ্র. দাবির মূল মূল অংশের তরজমা আন্ডারলাইন করে দেয়া হল।)
১. ‘আমার দাবি হচ্ছে, আমি নবী এবং রাসূল’
একবার এক নবাব সাহেব এক কাদিয়ানীর নিকট মির্যা কাদিয়ানী সম্পর্কে কয়েকটি আপত্তি উত্থাপন করেন। এর একটি ছিল, মির্যা সাহেব তো রাসূল হবার দাবি করেছেন। তখন ঐ কাদিয়ানী মির্যা সাহেবের একটি কবিতা শুনিয়ে দেয়। কবিতাটি হল-
من نیستم رسول و نیاوردہ ام کتاب/ہاں ملہم استم و زخداوند منذرم
আমি রাসূল নই এবং কোনো কিতাব আনিনি। হাঁ, আমি ইলহামপ্রাপ্ত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মুনযির বা সতর্ককারী।
ঐ কাদিয়ানী যখন এ পশ্নোত্তরের বিবরণ মির্যা কাদিয়ানীকে শোনায় তখন মির্যা সাহেব তার মুরীদের এ উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি বললেন, বিষয়টি খুলে বলা উচিত ছিল। এটা আসমানী বিষয়। তা প্রকাশ করতে ভয় করা উচিত নয়। এরপর মির্যা সাহেব তার দাবি স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেন-
ہمارا دعوی ہے کہ ہم نبی اور رسول ہیں۔ اصل میں یہ نزاع لفظی ہے۔ خدا تعالی جس کے ساتھ ایسا مکالمہ مخاطبہ کرے کہ جو بلحاظ کمیت وکیفیت دوسروں سے بڑھ کر ہو اور اس میں پیشگوئیاں بھی کثرت سے ہوں اسے نبی کہتے ہیں اور یہ تعریف ہم پر صادق آتی ہے پس ہم نبی ہیں۔ ...
بھلا اگر ہم نبی نہ کہلائیں تو اس کے لیے اور کونسا امتیازی لفظ ہے جو دوسرے ملہموں سے ممتاز کرے۔ ...
ہمارا مذہب تو یہ ہے کہ جس دین میں نبوت کا سلسلہ نہ ہووہ مردہ ہے۔ یہودیوں، عیسائیوں، ہندوؤں کے دین کو جو ہم مردہ کہتے ہیں تو اسی لیے کہ ان میں اب کوئی نبی نہیں ہوتا۔ اگر اسلام کا بھی یہی حال ہوتا تو پھر ہم بھی قصہ گو ٹھہرے۔ کس لیے اس کو دوسرے دینوں سے بڑھ کر کہتے ہیں۔ آخر کوئی امتیاز بھی ہونا چاہئے۔ صرف سچے خوابوں کا آنا تو کافی نہیں کہ یہ تو چوہڑے چماروں کو بھی آجاتے ہیں۔ مکالمہ مخاطبہ الہیہ ہونا چاہئے اور وہ بھی ایسا جس میں پیشگوئیاں ہوں اور بلحاظ کمیت وکیفیت کے بڑھ چڑھ کر ہو۔ ایک مصرعہ سے تو شاعر نہیں ہوسکتے۔ اسی طرح معمولی ایک دو خوابوں یا الہاموں سے کوئی مدعی رسالت ہوتو وہ جھوٹا ہے۔ ہم پر کئی سالوں سے وحی نازل ہورہی ہے اور اللہ تعالی کے کئی نشان اس کے صدق کی گواہی دے چکے ہیں۔ اسی لیے ہم نبی ہیں۔ امرحق کے پہنچانے میں کسی قسم کا اخفاء نہ رکھناچاہئے۔
আমার দাবি হচ্ছে আমি নবী এবং রাসূল। মূলত এটা শাব্দিক বিরোধ।৬ খোদা তাআলা যার সাথে এভাবে কথা বার্তা এবং আলোচনা সম্বোধন করেন, যা সংখ্যায় এবং গুণাগুণে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি এবং তাতে ভবিষ্যদ্বাণীও বিপুল পরিমাণে থাকে- তাকে নবী বলে। আর এ সংজ্ঞা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। সুতরাং আমি নবী।...
এরপর মির্যা সাহেব বনী ইসরাঈলের নবীগণের প্রসঙ্গ টেনে নিজেকে তাদের সদৃশ উপস্থাপন করে বলেন-
আচ্ছা, আমি যদি নিজেকে নবী না বলি তবে এমন কোন্ স্বতন্ত্র শব্দ রয়েছে, যা অপরাপর ইলহামপ্রাপ্তদের থেকে আমাকে স্বতন্ত্র করবে।৭ ...
এরপর মির্যা নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস উল্লেখ করে বলেন-
আমার মাযহাব তো এই যে, যেই ধর্মে নবুওতের ধারা থাকে না- তা মৃত। ইহুদী, ঈসায়ী এবং হিন্দুদের ধর্মকে যে আমরা মৃত বলি, তা তো এজন্যই যে, সেখানে এখন কেউ নবী হয় না। যদি ইসলামেরও একই অবস্থা হয় তাহলে আমরাও তো কেচ্ছাকার সাব্যস্ত হব। কী জন্য আমরা একে অন্যান্য ধর্ম অপেক্ষা অগ্রসর বলি? কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য তো থাকতে হবে।৮ কেবল সত্য স্বপ্ন দেখতে থাকা তো যথেষ্ট নয়। এটা তো চামার মেথরদের কাছেও এসে থাকে। আল্লাহর সাথে কথোপকথন এবং আলাপ-সালাপ হওয়া চাই। আর তাও এমন, যাতে ভবিষ্যদ্বাণী থাকবে এবং সংখ্যায় ও গুণাগুণে তা অগ্রসর থাকবে। এক পঙক্তি দিয়ে তো কেউ কবি হয়ে যায় না। তেমনিভাবে মামুলি এক-দুই স্বপ্ন অথবা ইলহামের মাধ্যমে যদি কেউ রাসূল হবার দাবি করে, তাহলে সে মিথ্যাবাদি। আমার উপর কয়েক বছর যাবতই ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে এবং আল্লাহ তাআলার কতগুলো নিদর্শন এর সত্যতার সাক্ষ্য দিয়েছে।৯ এজন্যই আমি নবী। সত্য বিষয় প্রকাশ করতে কোনো প্রকারের গোপনীয়তা রাখা উচিত নয়।
-বদর ৫ মার্চ ১৯০৮ ঈ.-এর বরাতে হাকীকতুন নবুওয়াহ, লেখক মির্যা মাহমুদ, আনওয়ারুল উলূম (মির্যা মাহমুদের রচনা সমগ্র) ২/৫৮২, ৫৮৩
আরো দ্রষ্টব্য, হাকীকতুন নবুওয়াহ, আনওয়ারুল উলূম ২/৫২৭; এবং মালফুযাত (মির্যা কাদিয়ানীর বাণী সংকলন) ৫/৪৪৬, ৪৪৭ (পাঁচ খণ্ডে নতুন সংস্করণ); ১০/১২৬, ১২৭ (দশ খণ্ডে পুরাতন সংস্করণ)-এ বিস্তারিত দ্রষ্টব্য। মালফুযাতের টীকায় উল্লেখ করা হয়, এটা ১৯০১ সনের ঘটনা। যে প্রেক্ষিতে মির্যা সাহেব ‘এক গলতি কা এযালা’ নামক পুস্তিকাটি লেখেন। কাদিয়ানীরা ঢাকার বকশী বাজার থেকে ‘একটি ভুল সংশোধন’ নামে যার বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে।
মির্যা কাদিয়ানী তার এই বাণীতে স্পষ্ট ভাষায় খতমে নবুওত অস্বীকার করছে এবং পরিষ্কার ভাষায় নবী হবার দাবি করছে। সাথে সাথে এ-ও বলে দিচ্ছে যে, এ ব্যাপারে কোনোরূপ গোপনীয়তার আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়।
কিন্তু তবুও কেন যে তার অনুসারীরা তাদের ‘হযরত’-এর কথা অমান্য করে নবুওত দাবির এ বিষয়টি এতভাবে গোপন করতে চায়! এবং তাদের ‘হযরত’ যাকে সত্য বিষয় বলেছেন বিশ্বাসে তা ধারণ করার পরও তা প্রকাশ করতে এতটা সঙ্কোচ করে!!
২. ‘খোদার কসম করে বলছি, তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন’
মির্যার একটি পুস্তক ‘হাকীকতুল ওহী’। এখানে সে তার ওহী ও নবুওতের বিষয়টি খুব জোরেসোরে এবং জাঁকজমকভাবে প্রমাণিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। যার ফলে তাকে বহু প্রতারণা ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছে। এর পরিশিষ্টে সে বলেছে-
میں اس خدا کی قسم کھا کر کہتا ہوں جس کے ہاتھ میں میری جان ہے کہ اسی نے مجھے بھیجا ہے اور اسی نے میرا نام نبی رکھا ہے اور اسی نے مجھے مسیح موعود کے نام سے پکاراہے اور اس نے میری تصدیق کے لئے بڑے بڑےنشان ظاہر کئے ہیں جو تین لاکھ تک پہنچتے ہیں جن میں سے بطور نمونہ کسی قدر اس کتاب میں بھی لکھے گئے ہیں۔ اگر اس کے معجزانہ افعال اور کھلے کھلے نشان جو ہزاروں تک پہنچ گئے ہیں میرے صدق پر گواہی نہ دیتے تو میں اس کے مکالمہ کو کسی پر ظاہر نہ کرتا اور نہ یقینا کہہ سکتا کہ یہ اس کا کلام ہے۔ پر اس نے اپنے اقوال کی تائید میں وہ افعال دکھائے جنہوں نے اس کا چہرہ دکھانےکے لئے ایک صاف اور روشن آ ئینہ کا کام دیا۔
আমি ঐ খোদার কসম করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, তিনিই আমাকে পাঠিয়েছেন এবং তিনিই আমার নাম নবী রেখেছেন। তিনিই আমাকে ‘মাসীহে মাওঊদ’ নামে ডেকেছেন এবং তিনি আমার সত্যতার জন্য বড় বড় নিদর্শন প্রকাশ করেছেন, যা তিন লক্ষ১০ পর্যন্ত পৌঁছে। নমুনাস্বরূপ এই কিতাবেও কিছু লেখা হয়েছে। যদি তার মুজিযামূলক কর্মকা- এবং স্পষ্ট স্পষ্ট নিদর্শনাবলী, যার সংখ্যা হাজার পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে, এগুলো যদি আমার সত্যতার সাক্ষ্য না দিত, তাহলে তার সাথে আমার কথপোকথনের বিষয়টি কারো সামনে প্রকাশ করতাম না। আর না একীনের সাথে বলতে পারতাম যে, এটা তার কালাম। উপরন্তু তিনি নিজের কথাকে শক্তিশালী করার জন্য ঐসব আচরণ প্রকাশ করেছেন, যেগুলো তার চেহারা দেখানোর জন্য একটি স্বচ্ছ উজ্জ্বল আয়নার কাজ দিয়েছে।১১ -তাতিম্মা হাকিকতুল ওহী, রূহানী খাযায়েন (মির্যা কাদিয়ানীর রচনা সমগ্র) ২২/৫০৩
দেখুন, এখানে সে নবুওতেরও ঘোষণা করেছে এবং তার নবুওতের জন্য নিদর্শন এবং মুজেযা প্রকাশিত হওয়ারও দাবি করছে।
এ উদ্ধৃতিতে এও দেখা যাচ্ছে যে, সে একাই মসীহে মাওঊদ (প্রতিশ্রুত মাসীহ) এবং নবী হওয়ার দাবি করছে। অতএব কাদিয়ানীরা যে বলে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী হলেন ‘মসীহে মাওউদ’। তো তাকে মসীহে মাওউদ বিশ্বাস করা আর নবী বিশ্বাস করা একই কথা; দুই কথা নয়। আর কাদিয়ানীদের বিশ্বাসও এমনটাই। নবী বিশ্বাসের কথাটা গোপন রেখে মসীহে মাওউদ বলা কেবলই প্রতারণা ও ছলচাতুরি মাত্র।
৩. ‘খোদাতাআলা আমাকে সুস্পষ্টভাবে নবীর উপাধি দান করেন’
মির্যা কাদিয়ানী তার বই হাকীকতুল ওহীতে নিজেকে মাসীহ হিসাবে পেশ করে বলে-
اوائل میں میرا یہی عقیدہ تھا کہ مجھ کو مسیح ابن مریم سے کیا نسبت ہے وہ نبی ہے اور خدا کے بزرگ مقربین میں سے ہے۔ اور اگر کوئی امر میری فضیلت کی نسبت ظاہر ہوتا تو میں اس کو جزئی فضیلت قرار دیتا تھا۔ مگر بعد میں جوخدا تعالی کی وحی بارش کی طرح میرے پر نازل ہوئی اس نے مجھے اس عقیدہ پر قائم نہ رہنےدیا اور صریح طور پر نبی کا خطاب مجھے دیا گيا مگر اس طرح سے کہ ایک پہلو سے نبی اور ایک پہلوسے امتی۔
বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূল কেন্দ্র ঢাকার বকশী বাজার থেকে এর অনুবাদ হয়েছে ‘ওহীর প্রকৃত তাৎপর্য’ নামে। সেখানে তারা এর অনুবাদ করেছে-
“প্রথম দিকে আমার এই বিশ্বাসই ছিল যে, মসীহ ইব্নে মরিয়মের সহিত আমার তুলনা হইতে পারে না। তিনি নবী এবং খোদার সম্মানিত নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের অন্তর্ভুক্ত। যদি কোনো বিষয়ে আমার শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশিত হইত তবে আমি উহাকে আংশিক শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করিতাম। কিন্তু পরবর্তীতে বারি ধারার ন্যায় অবতীর্ণ খোদাতালার ওহী আমাকে এই বিশ্বাসের উপর কায়েম থাকিতে দিল না এবং তিনি আমাকে সুস্পষ্টভাবে নবীর উপাধি দান করেন। কিন্তু ইহা এইভাবে যে, একদিক হইতে আমি নবী এবং এক দিক হইতে উম্মতি।”১২ -হাকীকতুল ওহী, পৃ. ১৪৯, ১৫০; রূহানী খাযায়েন ২২/১৫৩, ১৫৪; হাকীকাতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ১১৮
দেখতেই পাচ্ছেন, মির্যা কাদিয়ানী এখানে স্পষ্টভাবে নবী উপাধি লাভ করার ঘোষণা দিচ্ছে। আর তাই তার ছেলে মির্যা বশীর আহমদ এমএ বলে-
مسیح موعود نے بھی اپنی کتابوں میں اپنے دعوئ رسالت اور نبوت کو بڑی صراحت کے ساتھ بیان کیا ہے
মসীহে মাওঊদও নিজের বইগুলোতে নিজের নবুওত ও রিসালাতের দাবি খুউব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। -কালিমাতুল ফছল, লেখক, মির্যা বশীর আহমদ এমএ, পৃ. ২০
৪. ‘আমি ঐ ব্যক্তি সরওয়ারে আম্বিয়া (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যার নাম নবীউল্লাহ রেখেছেন’
মির্যা তার পুস্তক ‘নুযুলুল মাসীহ’-তে বলে-
جس شخص کو خدا تعالی بصیرت عطا کرے گا وہ مجھے پہچان لےگا کہ میں مسیح موعود ہوں اور وہی ہوں جس کا نام سرور انبیاء نے نبی اللہ رکھا ہے اور اس کو سلام کہاہے۔ اور اپنا دوسرا بازو قرار دیا ہے اور خاتم الخلفاء ٹھہرایا ہے وہ مجھے اسی طرح افضل سمجھےگا جس طرح خدا اور رسول نے مجھے فضیلت دی ہے
যাকে খোদা তাআলা অন্তর্দৃষ্টি দান করবেন সে আমাকে চিনে ফেলবে যে, আমি মসীহে মাওউদ (প্রতিশ্রুত মাসীহ) এবং ঐ ব্যক্তি সরওয়ারে আম্বিয়া যার নাম নবীউল্লাহ রেখেছেন এবং তাকে সালাম বলেছেন। এবং নিজের দ্বিতীয় বাহু বলে তাকে আখ্যায়িত করেছেন। এবং ‘খাতামুল খুলাফা’ সাব্যস্ত করেছেন। সে আমাকে ওরকমই শ্রেষ্ঠ মনে করবে, যেমনটি আল্লাহ ও তার রাসূল আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। -নুযুলুল মাসীহ, পৃ. ৪৮; রূহানী খাযায়েন ১৮/৪২৭
দেখুন-
ক. মির্যা তার এ বক্তব্যে নিজেকে মসীহে মওঊদ (প্রতিশ্রুত মাসীহ) দাবি করছে।
খ. এবং নবী হবারও দাবি করছে।
গ. আর তার নাম নবীউল্লাহ (আল্লাহর নবী) নাকি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখেছেন।
ঘ. শুধু তাই নয়, তাকে কি না নবীজী সালামও বলেছেন।
ঙ. এমনকি নবীজী কি না তাকে নিজের বাহু বলে আখ্যায়িত করেছেন।
চ. আরো বেয়াদবি হল, ‘নবীউল্লাহ’, ‘সালাম’ ও ‘খাতামুল আম্বিয়া’ শব্দগুলো বোল্ড করে দেওয়া হয়েছে।
নাউযুবিল্লাহ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শানে কত জঘন্য বেয়াদবি করতে হলে এভাবে বলতে পারে!
এখানে মির্যার উদ্ধৃত বক্তব্যে দেখা যাচ্ছে যে, সে একইসাথে মাসীহ এবং নবী উভয়টাই দাবি করছে। অতএব মির্যাকে মসীহ হিসাবে মেনে নেওয়া মানে তাকে অবশ্যই নবী হিসাবেও মেনে নেওয়া। চাই স্পষ্টভাবে স্বীকার করুক বা না করুক।
৫. ‘নবীর নাম পাওয়ার জন্য আমাকেই নির্দিষ্ট করা হইয়াছে’
মির্যা তার পুস্তক ‘হাকীকাতুল ওহী’-তে আরো বলে-
یہ بات ایک ثابت شدہ امر ہے کہ جس قدر خدا تعالی نے مجھ سےمکالمہ و مخاطبہ کیا ہے اور جس قدر امور غیبیہ مجھ پرظاہر فرمائے ہیں تیرہ سو برس ہجری میں کسی شخص کو آج تک بجز میرے یہ نعمت عطا نہیں کی گئی۔ اگر کوئی منکر ہو تو بار ثبوت اس کی گردن پر ہے۔
غرض اس حصہ کثیر وحی الہی اور امور غیبیہ میں اس امت میں سے میں ہی ایک فرد مخصوص ہوں اور جس قدر مجھ سے پہلےاولیاء اور ابدال اور اقطاب اس امت میں سے گزر چکے ہيں ان کو یہ حصہ کثیر اس نعمت کا نہیں دیا گيا۔ پس اس وجہ سے نبی کا نام پانے کے لئے میں ہی مخصوص کیا گیا اور دوسرے تمام لوگ اس نام کے مستحق نہیں کیونکہ کثرت وحی اور کثرت امور غیبیہ اس میں شرط ہے اور وہ شرط ان میں پائی نہیں جاتی ...
কাদিয়ানীরা এর অনুবাদ করেছে-
“ইহা একটি প্রমাণিত বিষয় যে, খোদাতা’লা আমার সহিত যে পরিমাণ বাক্যালাপ ও সম্বোধন করিয়াছেন এবং আমার নিকট যে পরিমাণ অদৃশ্যের বিষয় প্রকাশ করিয়াছেন, হিজরী ১৩০০ (তেরশত) বৎসরের মধ্যে আজ পর্যন্ত আমি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয় নাই। যদি কোন অস্বীকারকারী থাকে তবে প্রমাণের ভার তাহার স্কন্ধে থাকিবে। মোট কথা খোদার ওহী ও অদৃশ্য বিষয়ের এই বিপুল অংশের জন্য এই উম্মতে আমিই একমাত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি। আমার পূর্বে এই উম্মতে যত আউলিয়া, আবদাল ও কুতুব চলিয়া গিয়াছেন তাহাদিগকে এই পুরস্কারের বিপুল অংশ দেওয়া হয় নাই। অতএব এই কারণে নবীর নাম পাওয়ার জন্য আমাকেই নির্দিষ্ট করা হইয়াছে। অন্য সকল লোক এই নামের যোগ্য নহে। কেননা, ইহাতে বিপুল পরিমাণ ওহী ও বিপুল পরিমাণ অদৃশ্যের বিষয়ের শর্ত রহিয়াছে এবং তাহাদের মধ্যে এই শর্ত পূর্ণ হইতে দেখা যায় না। ...” -হাকীকতুল ওহী, পৃ. ৩৯১; রূহানী খাযায়েন ২২/৪০৬, ৪০৭; হাকীকাতুল ওহী (বাংলা), পৃ. ৩৩০
মির্যা কাদিয়ানীর এ বক্তেব্যের স¦াভাবিক দাবি হল, যেহেতু এই উম্মতের মাঝে একমাত্র সেই নবী হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে, তাই সে শেষ নবী। আর কাদিয়ানীরাও এমনটাই বিশ্বাস করে। দ্রষ্টব্য : কাদিয়ানীদের পত্রিকা আলফযল, ২৮ অক্টোবর ১৯১৫ ঈ., পৃ. ৩, কলাম, ২, ৩
৬. ‘খোদা তো তিনিই, যিনি নিজের রাসূলকে অর্থাৎ এই অধমকে হেদায়েত এবং সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন’
মির্যার দাবি অনুযায়ী আল্লাহ নাকি তাকে (১৯০৩ সনে) ওহী মারফত বলেছেন-
قُلْ اِنِّيْ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُؤْمِنِيْنَ. قُلْ يُوْحى اِلىَّ اَنَّمَا اِلهُكُمْ اِلهٌ وَّاحِدٌ. ...
هُوَ الَّذِیْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَه بِالْهُدٰی وَ دِيْنِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَه عَلَى الدِّيْنِ كُلِّه.
کہہ میں مامور ہوں اور میں سب سے پہلے مومن ہوں۔ کہہ میرے پر وحی نازل ہوتی ہے کہ تمہارا خدا ایک خدا ہے۔ ...
خدا وہ خدا ہے جس نے اپنے رسول کو (یعنی اس عاجز کو) ہدایت اور دین حق دے کر اس غرض سے بھیجا ہے تا وہ اس دین کو تمام دینوں پر غالب کرے۔
তুমি বল, আমি মামুর এবং আমি সর্বপ্রথম মুমিন। তুমি বল, আমার উপর ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের খোদা এক খোদা। ...
খোদা তো তিনিই যিনি নিজের রাসূলকে (অর্থাৎ এই অধমকে) হেদায়েত এবং সত্য ধর্ম দিয়ে এই উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি এই ধর্মকে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করেন। -তাযকেরাহ, পৃ. ৪০৯ (চতুর্থ এডিশন)
মির্যার এ বক্তব্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে-
ক. মির্যা মামুর। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট।
খ. তার উপর ওহী নাযিল হয়।
গ. আল্লাহ মির্যাকে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন।
ঘ. মির্যার ধর্ম সত্য ধর্ম।
ঙ. মির্যার ধর্ম সকল ধর্মের উপর বিজয় লাভ করবে।
নবুওত ও রিসালাতের এত স্পষ্ট দাবির পর তা ঢাকার জন্য কেন যে তারা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়! আল্লাহ্ই ভলো জানেন।
মির্যা কাদিয়ানীর এ বক্তব্যে লক্ষণীয় বিষয় হল, একই বক্তব্যে মির্যা প্রথমে মামুর (আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট) হওয়ার দাবি করছে, পাশাপাশি তার উপর ওহী অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলছে এবং পরক্ষণেই নিজেকে আল্লাহর রাসূল বলেও ঘোষণা দিচ্ছে। এতে কি একথা স্পষ্টই বুঝে আসে না যে, মির্যার মামুর হওয়ার দাবির মাঝে নবুওতের মিথ্যা দাবিও নিহিত রয়েছে!১৩
৭. ‘প্রকৃত সত্য খোদা তিনিই, যিনি কাদিয়ানে তাঁর রাসূল পাঠিয়েছেন’
সে তার বই ‘দাফেউল বালা’তে নিজের ব্যাপারে উল্লেখ করেছে-
سچا خدا وہی خدا ہے جس نے قادیان میں اپنا رسول بھیجا۔
বাংলাদেশে কাদিয়ানীদের মূল কেন্দ্র রাজধানী ঢাকার বকশী বাজার থেকে প্রকাশিত অনুবাদে এর তরজমা করা হয়েছে- “প্রকৃত সত্য খোদা তিনিই, যিনি কাদিয়ানে তাঁর রাসূল পাঠিয়েছেন।” -দাফেউল বালা, রূহানী খাযায়েন ১৮/২৩১; দাফেউল বালা (বাংলা), পৃ. ১২
মহান রাব্বুল আলামীন, যিনি মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর আর কাউকে নবী বানাননি এবং বানাবেনও না, তিনি কি তাহলে কাদিয়ানীদের নিকট সত্য খোদা নন!
৮. ‘তিনিই খোদা, যিনি স্বীয় রাসূলকে অর্থাৎ এই অধমকে হেদায়েত, সত্য ধর্ম এবং উত্তম চরিত্র দিয়ে প্রেরণ করেছেন’
মির্যা কাদিয়ানী আরো বলে, আল্লাহ তাআলা নাকি তাকে (ইলহাম মারফত, যা তার নিকট ওহী) বলেছেন-
اور پھر فرمایا...
هو الذی ارسل رسوله بالهدی ودين الحق وتهذيب الاخلاق.
خدا وہ خدا ہے جس نے اپنے رسول کو یعنی اس عاجز کو ہدایت اور دین حق اور تہذیب اخلاق کے ساتھ بھیجا۔۔
তিনিই খোদা, যিনি স্বীয় রাসূলকে অর্থাৎ এই অধমকে হেদায়েত, সত্য ধর্ম এবং উত্তম চরিত্র দিয়ে প্রেরণ করেছেন। -যমীমা তোহফায়ে গোলড়বিয়া, পৃ. ২৩, ২৪; রূহানী খাযায়েন ১৭/৭২, ৭৩; আরবাঈন নম্বর ৩, পৃ. ৩৫, ৩৬; রূহানী খাযায়েন ১৭/৪২৫, ৪২৬
এ বক্তব্যেও সে স্পষ্টভাবে রাসূল হবার দাবি করল।
৯. ‘কাদিয়ানকে এ কারণে রক্ষা করা হয়েছে যে, সেখানে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল ছিলেন’
মির্যা কাদিয়ানীর আমলে যখন হিন্দুস্তানে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন সে এটাকে মোক্ষম সুযোগ হিসাবে লুফে নেয়। সে তখন রচনা করে ‘দাফেউল বালা’। কাদিয়ানীরা বাংলায় ‘বালা মসিবত প্রতিরোধক’ নামে বইটি প্রকাশ করে। এতে মির্যা কাদিয়ানী খুব উল্লসিত ভঙ্গিমায় প্রচার করতে থাকে যে, এ বিপদ এসেছে তাকে রাসূল না মানার কারণে আসমানী আযাব হিসাবে। তাকে যদি রাসূল মেনে নেওয়া হয় তাহলে আর এ বিপদ থাকবে না। আর কাদিয়ানে যেহেতু সে অবস্থান করছে তাই তা সুরক্ষিত থাকবে। তো এ বইতে সে খুব জোর গলায় নবী এবং রাসূল হবার দাবি করে-
خدا کی وہ پاک وحی جو میرے پر نازل ہوئی۔ اس کی یہ عبارت ہے۔ اِنّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ ماَ بِقَوْمٍ حَتّى يُغَيِّرُوْا مآ بِاَنْفُسِهِمْ اِنّه اَوَى الْقَرْيَةَ۔یعنی خدا نے یہ ارادہ فرمایا ہے کہ اس بلائے طاعون کو ہرگز دور نہیں کرےگا جب تک لوگ ان خیالات کو دور نہ کر لیں جو ان کے دلوں میں ہیں یعنی جب تک وہ خدا کے مامور اور رسول کو مان نہ لیں تب تک طاعون دور نہیں ہوگی اوروہ قادر خدا قادیان کو طاعون کی تباہی سے محفوظ رکھےگا تا تم سمجھو کہ قادیان اسی لئے محفوظ رکھی گئی کہ وہ خدا کا رسول اور فرستادہ قادیان میں تھا۔
কাদিয়ানীরা এর অনুবাদ করেছে- “আল্লাহর সেই পবিত্র বাণী যা আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে তাঁর ভাষা নিম্নরূপঃ
اِنّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ ماَ بِقَوْمٍ حَتّى يُغَيِّرُوْا مآ بِاَنْفُسِهِمْ اِنّه اَوَى الْقَرْيَةَ
অর্থঃ আল্লাহ্ ইচ্ছা করেছেন যে, তিনি প্লেগের আক্রমণকে দূরীভূত করবেন না যতদিন মানুষ নিজেদের ধারণা ও মতামতকে পরিবর্তন না করবে, যা তাদের মনের মধ্যে আছে। অর্থাৎ যতদিন তারা খোদার প্রেরিত পয়গাম্বরকে মেনে না নিবে ততদিন প্লেগ দূরীভূত হবে না এবং মহাশক্তিশালী খোদা কাদিয়ানকে প্লেগের ধ্বংস থেকে রক্ষা করবেন১৪ যেন তোমরা বুঝতে পার যে কাদিয়ানকে এ কারণে রক্ষা করা হয়েছে যে সেখানে আল্লাহর প্রেরিত রসূল ছিলেন।” -দাফেউল বালা, পৃ. ৫; রূহানী খাযায়েন ১৮/২২৫, ২২৬; দাফেউল বালা (বাংলা), পৃ. ৫, ৬
এখানেও পরিষ্কারভাবে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল বলে আখ্যায়িত করছে।
১০. ‘খোদা আমাকে বলেছেন, আমি আমার রাসূলের সাথে দণ্ডায়মান হব’
সে তার এ বইতে বলে, আল্লাহ নাকি সে সময়গুলোতে তার নিকট এভাবে খবর পাঠিয়েছেন (মূলত তার নিকট যা ওহী)-
پھر اس کے بعد ان دنوں میں بھی خدا نے مجھے خبر دی۔ چنانچہ وہ عز وجل فرماتا ہے:۔
ماكان الله ليعذبهم و انت فيهم انه اوى القرية. لولا الاكرام لهلك المقام. انى انا الرحمن دافع الاذى. انى لايخاف لدي المرسلون. انى حفيظ. انى مع الرسول اقوم. والوم من يلوم....
ترجمہ ۔خدا ایسا نہیں کہ قادیاں کے لوگوں کو عذاب دے حالانکہ تو ان میں رہتاہے۔ وہ اس گاؤں کو طاعون کی دست برد اور اس کی تباہی سے بچالے گا۔ اگر تیرا پاس مجھے نہ ہوتا اور تیرا اکرام مد نظر نہ ہوتا تو میں اس گاؤں کو ہلاک کردیتا۔ ميں رحمان ہوں جو دکھ کو دور کرنے والا ہے۔ میرے رسولوں کو میرے پاس کچھ خوف اور غم نہیں میں نگہ رکھنے والا ہوں۔ میں اپنے رسول کے ساتھ کھڑاہوں گا اور اس کو ملامت کروں گاجو میرے رسول کو ملامت کرتا ہے۔ ...
اب اس تمام وحی سے تین باتیں ثابت ہوئی ہیں (১) اوّل یہ کہ طاعون دنیا میں اس لئے آئی ہے کہ خدا کے مسیح موعود سے نہ صرف انکار کیا گیا بلکہ اس کو دکھ دیا گيا۔ اس کے قتل کرنے کے لئے منصوبے کئے گئے۔ اس کا نام کافر اور دجال رکھا گیا۔ پس خدانے نہ چاہا کہ اپنے رسول کو بغیر گواہی چھوڑے۔
বকশী বাজার থেকে তারা এর অনুবাদ করেছে-
“তারপর আজকের বা কালকের দিনগুলোতেও খোদা আমাকে খবর দিয়েছেন। যেমন তিনি, যিনি অসীম ক্ষমতার অধিকারী বলেছেনঃ
ماكان الله ليعذبهم و انت فيهم انه اوى القرية. لولا الاكرام لهلك المقام. انى انا الرحمن دافع الاذى. انى لايخاف لدي المرسلون. انى حفيظ. انى مع الرسول اقوم. والوم من يلوم....
অনুবাদঃ খোদা তাআলা এমন নহেন কাদিয়ানের মানুষকে শাস্তি দিবেন এমন সময়, যখন তুমি তাদের মাঝে অবস্থান করছ। তিনি এই গ্রামকে প্লেগের আক্রমণ এবং এর ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা করবেন। যদি তোমার প্রতি আমার বিশেষ সমর্থন না থাকত, তোমার সম্মানের প্রতি আমার দৃষ্টি না থাকত, তাহলে আমি এই গ্রামকে ধ্বংস করে দিতাম। আমি রহমান, যিনি দুঃখকে দূরীভূত করেন- আমার সমীপে রসূলগণের কোন ভয় বা দুঃখ নেই; আমি সবদিকে লক্ষ্য রাখি।
আমি আমার রসূলের সাথে দন্ডায়মান হব এবং আমি, তাকে দোষারোপ করব, যে আমার রসূলকে দোষারোপ করে। ...”
এরপর তার প্রলাপ-ওহীর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সে বলে-
“এসব ওহীর মাধ্যমে তিনটি কথা প্রমাণিত হয়েছে। প্রথম: প্লেগের আক্রমণ পৃথিবীতে এ কারণে ঘটছে যে, প্রতিশ্রুত মসীহ মাওঊদ (আ.) কে কেবল অস্বীকার করাই হয় নাই। বরং তাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাকে কাফের ও দাজ্জাল নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অতএব, খোদা চান নাই যে, তাঁর নিজ প্রেরিত১৫ ব্যক্তিকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই রেখে দিবেন। ...” -দাফেউল বালা, পৃ. ৬-৯; রূহানী খাযায়েন ১৮/২২৬-২২৯; দাফেউল বালা (বাংলা) পৃ. ৭-১০
১১. ‘কাদিয়ান রাসূলের রাজধানী’ ‘দাফেউল বালা’-তে সে আগে আরো উল্লেখ করে-
خدا تعالی بہر حال جب تک کہ طاعون دنیا میں رہے گو ستر برس تک رہے قادیاں کو اس کی خوفناک تباہی سے محفوظ رکھے گا کیونکہ یہ اس کے رسول کا تخت گاہ ہے اور یہ تمام امتوں کے لئے نشان ہے۔
খোদ কাদিয়ানীরা এর তরজমা করেছে এভাবে- “যতকাল পর্যন্ত প্লেগ পৃথিবীতে থাকবে, যদি সত্তর বছরও থাকে তবুও এর ভয়াবহ আক্রমণ থেকে কাদিয়ান নিরাপদ থাকবে। কারণ এটা রসূলের রাজধানী এবং সকল জাতির জন্য নিদর্শনস্বরূপ।”১৬ - দাফেউল বালা, পৃ. ১০; রূহানী খাযায়েন ১৮/২৩০; দাফেউল বালা (বাংলা) ১১
দেখতেই পাচ্ছেন, মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে রাসূল দাবি করতঃ নিজের এলাকা কাদিয়ানকে ‘রাসূলের রাজধানী’ বলছে। আর এ কারণেই কি না তার এলাকা মহামারি থেকে নিরাপদ থাকবে এবং গোটা দুনিয়াবাসীর জন্য তার সত্যাসত্যের নিদর্শন হয়ে থাকবে! (নাউযুবিল্লাহ)
১২. ‘আমার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহর পবিত্র ওহী (বাণী)-সমূহে নবী, রাসূল ও মুরসাল শ্রেণীর শব্দ একবার-দু’বার নয়, শত শত বার বিদ্যমান রয়েছে’
মির্যা কাদিয়ানীর একটি পুস্তিকা হচ্ছে ‘এক গলতি কা ইযালা’। বকশী বাজার থেকে এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে ‘একটি ভুল সংশোধন’ নামে। এই পুস্তিকাটি সে রচনাই করেছে তার নবুওত ‘প্রমাণ করে’ দেখানোর জন্য। আর এ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য যে, যারা মনে করে, প্রকৃত অর্থে সে নবী হবার দাবি করেনি, তারা ভুলের মাঝে রয়েছে।১৭
তার এই বইয়ের শুরুতেই সে বলে-
حق یہ ہے کہ خداتعالی کی وہ پاک وحی جو میرے پر نازل ہوتی ہے۔ اس میں ایسے الفاظ رسول اور مرسل اور نبی موجود ہیں نہ ایک دفعہ بلکہ صدہا دفعہ پھر کیونکر یہ جواب صحیح ہو سکتا ہے کہ ایسے الفاظ موجود نہیں ہیں۔ بلکہ اس وقت تو پہلے زمانہ کی نسبت بہت تصریح اور توضیح سے یہ الفاظ موجود ہیں
কাদিয়ানীরা এর বাংলা অনুবাদ করেছে এভাবে- “সত্য কথা এই যে, আমার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহর পবিত্র ওহী (বাণী)-সমূহে নবী, রসূল ও মুরসাল শ্রেণীর শব্দ একবার দু’বার নয়, শত শত বার বিদ্যমান রয়েছে। অতঃপর (আমার) ওহীতে এসব নেই, তা বলা কীরূপে সত্য হতে পারে? পরন্তু পূর্বের তুলনায় এসব শব্দ আরও স্পষ্ট ও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।” -এক গলতি কা ইযালা (উর্দু), রূহানী খাযায়েন ১৮/২০৬; একটি ভুল সংশোধন, বাংলা, পৃ. ৩
দেখুন, এখানে মির্যা কাদিয়ানী কতগুলো কুফুরীর সমাবেশ ঘটিয়েছে-
ক. সে নিজের উপর ওহী অবতীর্ণ হবার দাবি করছে।
খ. নিজেকে নবী, রাসূল ও মুরসাল বলে ঘোষণা দিচ্ছে।
গ. এ শব্দগুলো তার ক্ষেত্রে একবার-দু’বার নয়; তার ওহীতে নাকি শত শত বার নবী হবার কথা বিদ্যমান রয়েছে।
ঘ. এবং তার ‘ওহীতে’ নাকি নবুওত সংশ্লিষ্ট এ লকবগুলো আগের চেয়ে আরো স্পষ্টভাবে বিশ্লেষণের সাথে বিদ্যমান রয়েছে। (নাউযুবিল্লাহ)
১৩. ‘স্পষ্টভাবে আমাকে রাসূল বলা হয়েছে’
কুরআনুল কারীমের ৪৮ নাম্বার সূরা, সূরা ফাত্হ। এ সূরার ২৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তাআলা আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে বলেন-
هُوَ الَّذِیْۤ اَرْسَلَ رَسُوْلَهٗ بِالْهُدٰی وَ دِیْنِ الْحَقِّ لِیُظْهِرَهٗ عَلَی الدِّیْنِ كُلِّهٖ ؕ وَكَفٰی بِاللّٰهِ شَهِیْدًا.
তিনিই তাঁর রাসূলকে পাঠিয়েছেন হেদায়েত এবং সত্য দ্বীনসহ, যাতে অপরাপর ধর্মের উপর তিনি একে বিজয়ী করেন। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট। -সূরা ফাতহ (৪৮) : ২৮
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে অবতীর্ণ কুরআনে কারীমের এ আয়াতকে মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে এবং নিজেকে এর প্রতিপাদ্য হিসাবে আখ্যায়িত করে। এখানে উদ্ধৃতিটি লক্ষ্য করুন।
মির্যা কাদিয়ানী তার পুস্তিকা ‘এক গলতি কা ইযালা’য় লেখে-
ایک یہ وحی اللہ ہے هو الذی ارسل رسوله بالهدی ودين الحق ليظهره على الدين كله دیکھو صفحہ ৪৯৮ براہین احمدیہ۔ اس میں صاف طور پر اس عاجز کو رسول کر کے پکارا گیاہے۔
কাদিয়ানীরা এর অনুবাদ করেছে এভাবে- এ পুস্তকে প্রকাশিত আল্লাহর ওহীগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে-
هو الذی ارسل رسوله بالهدی ودين الحق ليظهره على الدين كله.
হুয়াল্লাযী আরসালা রসূলাহু বিলহুদা ওয়া দীনিল হাক্কে লিইউযহিরাহু আলাদ্দীনে কুল্লিহি- (বারাহীনে আহমদীয়া, ৪৯৮ পৃঃ দ্রষ্টব্য)। এতে স্পষ্টভাবে আমাকে রসূল বলা হয়েছে। -এক গলতি কা ইযালা, পৃ. ৩; রূহানী খাযায়েন ১৮/২০৬, ২০৭; একটি ভুল সংশোধন (বাংলা), পৃ. ৩
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এটা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র শানে চরম বেয়াদবি। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে অবতীর্ণ কুরআনে কারীমের পবিত্র আয়াতকে নিজের ওহী বানিয়ে ফেলেছে। এরপর কত সটানভাবে নিজের নবুওতের নিকৃষ্ট দাবি দেখানোর পাঁয়তারা করছে!
১৪. ‘আমাকে রাসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে’
সে তার এ পুস্তিকায় আরো লেখে-
"دنیا میں ایک نذیر آیا" اس کی دوسری قراءت یہ ہے کہ دنیا میں ایک نبی آیا۔ اسی طرح براہین احمدیہ میں اور کئی جگہ رسول کے لفظ سے اس عاجز کو یاد کیا گیا۔
কাদিয়ানীরা এর তরজমা করেছে এভাবে- “ “দুনিয়া মে এক নযীর আয়া” অর্থাৎ পৃথিবীতে একজন ’নযীর‘ (সতর্ককারী) এসেছেন। এ ওহীটির আর এক বর্ণনা আছে।
دنيا میں ايك نبى ايا
“দুনিয়া মে এক নবী আয়া” অর্থাৎ- পৃথিবিতে একজন নবী এসেছেন।১৮ এরূপে বারাহীনে আহমদীয়ায় আরও বহু স্থানে আমাকে রসূল বলে সম্বোধন করা হয়েছে।” -এক গলতি কা ইযালা, পৃ. ১; রূহানী খাযায়েন ১৮/২০৭; একটি ভুল সংশোধন (বাংলা), পৃ. ৪
এ উদ্ধৃতিতে মির্যা কাদিয়ানীর রাসূল দাবির বক্তব্যটি স্পষ্ট।
১৫. ‘আমার নবী ও রাসূল হওয়া আমি কীরূপে অস্বীকার করতে পারি?’
তার এ বই ‘এক গলতি কা ইযালা’য় সে আরো লেখে-
پس میں جب کہ اس مدت تک ڈیڑھ سو پیشگوئی کے قریب خدا کی طرف سے پاکر بچشم خود دیکھ چکا ہوں کہ صاف طور پر پوری ہوگئیں تو میں اپنی نسبت نبی یارسول کے نام سے کیونکر انکار کر سکتا ہوں۔اور جب کہ خود خدا تعالیٰ نے یہ نام میرے رکھے ہیں تو میں کیونکر رد کردوں یا کیونکراس کے سوا کسی دوسرےسے ڈروں۔ مجھے اس خدا کی قسم ہےجس نے مجھے بھیجا ہے اور جس پر افترا کرنا لعنتیوں کا کام ہےکہ اس نے مسیح موعود بنا کرمجھے بھیجا ہے اور میں جیساکہ قرآن شریف کی آیات پر ایمان رکھتا ہوں ایسا ہی بغیر فرق ایک ذرّہ کے خدا کی اس کھلی کھلی وحی پر ایمان لاتا ہوں جو مجھےہوئی جس کی سچائی اس کے متواتر نشانوں سے مجھ پر کھل گئی ہے اور میں بیت اللہ میں کھڑے ہوکریہ قسم کھا سکتا ہوں کہ وہ پاک وحی جو میرے پر نازل ہوتی ہے وہ خدا کا کلام ہے جس نے حضرت موسی اور حضرت عیسی اور حضرت محمد مصطفی صلی اللہ علیہ وسلم پر اپنا کلام نازل کیا تھا۔۔
কাদিয়ানীরা এর অনুবাদ করেছে- “সুতরাং আমি যখন আজ পর্যন্ত খোদার নিকট হতে প্রায় দেড়শত ভবিষ্যদ্বাণী লাভ করে স্বচক্ষে পূর্ণ হতে দেখেছি। তখন আমার নবী ও রাসূল হওয়া আমি কীরূপে অস্বীকার করতে পারি? যখন স্বয়ং খোদাতাআলা আমাকে নবী ও রাসূল আখ্যা দিয়েছেন, তখন আমি কীরূপে এটা প্রত্যাখান করতে পারি এবং তাঁকে ছেড়ে অন্যকে ভয় করি?
যে খোদা আমাকে পাঠিয়েছেন এবং যাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করা মহাপাপীর কাজ; আমি তাঁর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে মসীহ মাওঊদরূপে পাঠিয়েছেন। আমি যেভাবে কুরআন শরীফের প্রতি পূর্ণ ঈমান রাখি সেরূপ বিন্দুমাত্র পার্থক্য না করে আমার প্রতি অবতীর্ণ আল্লাহর প্রত্যেকটি পরিষ্কার ওহীর উপর ঈমান রাখি। এগুলোর সত্যতা অবিরাম নিদর্শনের দ্বারা আমার নিকট সুপ্রকাশিত হয়েছে। আমি কা‘বাগৃহে দাঁড়িয়ে শপথ করতে পারি যে, যেসব পবিত্র ওহী আমার নিকট অবতীর্ণ হয়, এগুলো সে আল্লাহর বাণী, যিনি হযরত মূসা, হযরত ঈসা এবং হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রতি আপন বাণী প্রেরণ করেছিলেন।” -এক গলতি কা ইযালা, পৃ. ৩, ৪ রূহানী খাযায়েন ১৮/২১০; একটি ভুল সংশোধন (বাংলা), পৃ. ৮
দেখুন, এখানে সে স্পষ্টভাবে নবী এবং রাসূল হবার দাবি করছে।
এখানে সে নবী ও রাসূল দাবির পাশাপাশি মাসীহ হওয়ারও দাবি করছে।
উপরন্তু তার জঘন্য ধৃষ্টতা হল, সে কত মজবুতির সাথে নিজের ওহীর অকাট্যতা প্রকাশ করছে। এমন কি শুধু পূর্ববর্তী নবীগণের ওহীর সাথে তুলনা নয়; বরং আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র ওহী কুরআনুল কারীমের সাথে নিজের বানানো কথাকে ওহী দাবি করে তুলনা করছে! তার বিশ্বাসে আল্লাহ পাকের পাক কালাম কুরআন মাজীদ এবং তার প্রলাপ-ওহীর মাঝে বিন্দুমাত্র কোনো ফরক নেই! এরচে ভয়াবহ কুফর আর কী হতে পারে!
১৬. ‘আমার দাবির ব্যাপারে সন্দেহ দূর হওয়া খুব সহজ’
২ নভেম্বর ১৯০৪ ঈসাব্দতে পাঞ্জাবের সিয়ালকোটে ‘ইসলাম’ নামে মির্যা কাদিয়ানীর একটি লিখিত বক্তব্য পঠিত হয়। পরবর্তীতে তা ‘লেকচার সিয়ালকোট’ নামে প্রকাশিত হয়। মির্যা কাদিয়ানী তাতে বলে-
میرے دعوے کی نسبت اگر شبہ ہو اورحق جوئی بھی ہو تو اس شبہ کا دور ہونا بہت سہل ہے کیونکہ ہر ایک نبی کی سچائی تین طریقوں سے پہچانی جاتی ہے
اول عقل سے ۔ یعنی دیکھنا چاہئے کہ جس وقت وہ نبی یا رسول آیا ہے عقل سلیم گواہی دیتی ہے یا نہیں کہ اس وقت اس کی ضرورت بھی تھی یا نہیں اور انسانوں کی حالت موجودہ چاہتی تھی یا نہیں کہ ایسے وقت میں کوئی مصلح پیدا ہو؟
دوسرے پہلے نبیوں کی پیشگوئی ۔ یعنی دیکھنا چاہئے کہ پہلے کسی نبی نے اس کے حق میں یا اس کے زمانہ میں کسی کے ظاہر ہونے کی پیشگوئی کی ہے یا نہیں؟
تیسرے نصرت الہی اور تائید آسمانی۔ یعنی دیکھنا چاہئے کہ اس کے شامل حال کوئی تائید آسمانی بھی ہے یا نہیں؟
یہ تین علامتیں سچے مامورمن اللہ کی شناخت کے لئے قدیم سے مقرر ہیں۔ اب اے دوستو! خدا نے تم پر رحم کرکے یہ تینوں علامتیں میری تصدیق کے لئے ایک ہی جگہ جمع کردی ہیں۔ اب چاہو تم قبول کرو یا نہ کرو...۔
কাদিয়ানীরা এর অনুবাদ করেছে এভাবে-
“আমার দাবি সম্পর্কে সন্দেহ হলে একইসাথে সত্যের সন্ধানও যদি থাকে তাহলে সে সন্দেহ দূর হওয়া খুব সহজ। কেননা প্রত্যেক নবীর সত্যতা তিনভাবে বুঝা যায়।
প্রথমতঃ যুক্তির মাধ্যমে- অর্থাৎ দেখা উচিত, সে নবী বা রসূল যখন আসলেন সুস্থ বিবেকের সাক্ষ্য কী? তখন তাঁর আসার আদৌ প্রয়োজন ছিল, কি ছিল না? আর মানুষের এমন সময় কোন সংশোধনকারীর জন্ম নেয়ার প্রয়োজন বর্তমান অবস্থা এটা দাবি করে কি করে না?
দ্বিতীয়তঃ পূর্ববর্তী নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী- অর্থাৎ দেখা উচিত, পূর্বের কোন নবী তাঁর পক্ষে বা তাঁর যুগে কারো আবির্ভূত হবার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন কি না?
তৃতীয়তঃ ঐশী সাহায্য এবং আসমানী নিদর্শন, অর্থাৎ দেখা উচিত, তাঁর পক্ষে কোন স্বর্গীয় সমর্থন রয়েছে কি?১৯
এ তিনটি লক্ষণ আল্লাহর সত্য প্রত্যাদিষ্টকে চেনার জন্য আদি থেকে নির্ধারিত। এখন হে বন্ধুগণ! খোদাতাআলা তোমাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এ তিনটি লক্ষণ আমার সত্যায়নের উদ্দেশ্যে এক স্থানে একত্র করে দিয়েছেন।২০ এখন ইচ্ছা হলে গ্রহণ কর, না হয় প্রত্যাখ্যান কর।” -লেকচার সিয়ালকোট ৫০; রূহানী খাযায়েন ২০/২৪১; ইসলাম (লেকচার সিয়ালকোট) বাংলা, পৃ. ৪২
দেখুন, এখানে মির্যা কাদিয়ানী নিজেকে ‘মামুর মিনাল্লাহ’ বলে প্রকাশ করছে (যার বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে প্রত্যাদিষ্ট) এবং তার দৃষ্টিতে নবীগণের সত্যতার নিদর্শন উল্লেখ করে বলছে, এগুলো নাকি আল্লাহ তাআলা তার সত্যাসত্য প্রমাণের জন্য একজায়গায় একত্র করেছেন। আর এটা কি না দুনিয়াবাসীর জন্য আল্লাহর দয়া! বলুন, নবীগণের সত্যতার মাপকাঠি দাঁড় করিয়ে সে আলোকে নিজের সত্যতা প্রমাণের অপপ্রয়াস চালানোর পর নবী দাবির আর কী বাকি থাকে!
১৭. ‘আমি কোনো নতুন নবী নই’
এছাড়া তার দাবির সত্যতা সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে-
میں کوئی نیا نبی نہیں۔ مجھ سے پہلے سینکڑوں نبی آچکے ہیں۔ توریت میں جن انبیاء کا ذکر ہےاور آپ ان کو سچا مانتے ہیں جو دلایل انکی صداقت کے اور انکے نبی اور خدا کا فرستادہ یقین کرنے کے ہیں وہ آپ پیش کریں انہی دلایل سے میری صداقت کا ثبوت ملجاویگا۔ جن دلایل سے کوئ سچا نبی مانا جا سکتا ہے وہی دلایل میرے صادق ہونیکے ہیں۔ میں بہی منہاج نبوت پر آیا ہوں۔
আমি কোনো নতুন নবী নই। আমার পূর্বে অসংখ্য নবী আগমন করেছেন। তাওরাতে যেসকল নবীর উল্লেখ রয়েছে এবং আপনি তাদেরকে সত্য মনে করেন, তাদের সত্যতার ব্যাপারে এবং তারা আল্লাহর নবী এবং প্রেরিত এ কথা বিশ্বাস করার ব্যাপারে যেসব দলীল রয়েছে আপনি সেগুলো পেশ করুন। সেইসব দলীল থেকেই আমার সত্যতার প্রমাণ মিলবে। যেসকল প্রমাণ থাকলে কোনো নবীকে সত্য মনে করা হয় সেসকল প্রমাণ আমার মাঝে বিদ্যমান রয়েছে। আমিও নবুওতের ধারায় চলে এসেছি। -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত পত্রিকা আলহাকাম, তারিখ : ১০-০৪-১৯০৮ ঈসাব্দ; পৃ. ২, কলাম ২
মৃত্যুর দেড় মাস আগে নবুওতের মিথ্যা দাবির এ আরেকটি স্পষ্ট বক্তব্য।
১৮. ‘খোদার নির্দেশ মোতাবেক আমি নবী। আর যদি আমি তা অস্বীকার করি তাহলে আমার পাপ হবে’
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী মৃত্যুর ঠিক আগ দিয়ে তার নবুওতের দাবির বিষয়টি খুব স্পষ্ট করে লিখে যায়, তাতে অস্পষ্টতার কিছু আর বাকি থাকেনি। যদিও সেখানে সে তার চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী বিভিন্নভাবে প্রতারণার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার মিথ্যা দাবি কোনোভাবে ঢাকতে পারেনি।
১৭ মে ১৯০৮ সনে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী লাহোরে একটি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে ২৩ মে ১৯০৮ তারিখে ‘আখবারে আম’ পত্রিকায় এই খবর প্রকাশিত হয়। সেখানে এমন সংবাদও আসে যে, মির্যা সাহেব এ জলসায় তার নবুওত দাবি অস্বীকার করেছেন। এ সংবাদ পেতে দেরি, সেদিনই আখবারে আম পত্রিকার সম্পাদক বরাবর মির্যা সাহেব পত্র মারফত এর প্রতিবাদ জানান এবং এর খণ্ডন পেশ করেন। চিঠির নিম্নোক্ত কথাগুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন-
جس بناء پر میں اپنے تئیں نبی کہلاتا ہوں وہ صرف اس قدر ہے کہ میں خداتعالےٰ کی ہمکلامی سے مشرف ہوں اور وہ میرے ساتھ بکثرت بولتا اور کلام کرتا ہے اور میری باتوں کا جواب دیتا ہے اور بہت سی غیب کی باتیں میرے پر ظاہر کرتا اور آئندہ زمانوں کے وہ راز میرے پر کھولتا ہے کہ جب تک انسان کو اس کے ساتھ خصوصیت کا قرب نہ ہو دوسرے پروہ اسرار نہیں کھولتا اور انہیں امور کی کثرت کی وجہ سے اس نے میرا نام نبی رکھاہے۔ سو میں خدا کے حکم کے موافق نبی ہوں اور اگر میں اس سے انکار کروں تو میرا گناہ ہو گا ۔اور جس حالت میں خدا میرا نام نبی رکھتا ہے تو میں کیونکراس سے انکار کر سکتا ہوں۔ میں اس پر قائم ہوں اس وقت تک جو اس دنیا سے گذر جاؤں...
سو میں صرف اس وجہ سے نبی کہلاتا ہوں کہ عربی اور عبرانی زبان میں نبی کے یہ معنے ہیں کہ خدا سے الہام پاکر بکثرت پیشگوئی کرنے والا۔ اور بغیر کثرت کے یہ معنی تحقيق نہیں ہو سکتے جیساکہ صرف ایک پیسہ سے کوئی مالدار نہیں کہلا سکتا۔ سو خدا نے اپنے کلام کے ذریعہ سےبکثرت مجھے علم غیب عطا کیا ہے اور ہزارہا نشان میرے ہاتھ پر ظاہر کئے ہیں اور کر رہا ہے۔ ميں خود ستائی سے نہیں مگر خدا کے فضل اور اس کے وعدہ کی بناء پر کہتا ہوں کہ اگر تمام دنیا ایک طرف ہو اور ایک طرف صرف میں کھڑا کیا جاؤں اور کوئی ایسا امر پیش کیا جائے جس سے خدا کے بندے آزمائے جاتے ہیں تو مجھے اس مقابلہ ميں خدا غلبہ ديگا اور ہر ایک پہلو کے مقابلہ میں خدا میرے ساتھ ہوگا اور ہر ایک میدان میں وہ مجھے فتح دیگا۔ بس اسی بناء پر خدا نے میرا نام نبی رکھا ہے کہ اس زمانہ ميں کثرت مکالمہ مخاطب اللہ اور کثرت اطلاع برعلوم غیب صرف مجھے ہی عطا کی گئی ہے...
যে ভিত্তিতে আমি নিজেকে নবী বলি, তা শুধু এতটুকু যে, আমি খোদা তাআলার সাথে কথা বলার সৌভাগ্য লাভ করেছি এবং তিনি আমার সাথে অনেক কথা বলেন এবং আমার কথার উত্তর প্রদান করেন এবং অদৃশ্যের বহু বিষয় আমার নিকট প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যৎ কালের ঐসকল ভেদ আমার নিকট উন্মোচন করেন। আর তার সাথে যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের বিশেষ নৈকট্য না হবে ততক্ষণ অন্যের নিকট তিনি ভেদ উন্মোচন করেন না। আর এসকল বিষয়ের আধিক্যের কারণে তিনি আমার নাম নবী রেখেছেন। অতএব খোদার নির্দেশ মোতাবেক আমি নবী। আর যদি আমি তা অস্বীকার করি তাহলে আমার পাপ হবে। আর যে অবস্থায় খোদা আমার নাম নবী রাখেন তো আমি কীরূপে তা অস্বীকার করতে পারি? আমি এর উপর অবিচল থাকব দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত। ...
অতএব আমি কেবল এই জন্য নবী দাবি করি যে, আরবী এবং ইবরানী ভাষায় নবীর অর্থ হল, খোদার পক্ষ থেকে ইলহামপ্রাপ্ত হয়ে খুব বেশি ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানকারী। আধিক্য ব্যতীত এই অর্থ প্রযোজ্য হয় না। যেমন নাকি এক পয়সা থাকার দরুন কাউকে মালদার বলা হয় না। তো খোদা স্বীয় কালামের মাধ্যমে আমাকে অধিক পরিমাণে গায়েবের ইলম দান করেছেন। এবং হাজার হাজার নিদর্শন আমার হাতে প্রকাশ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। নিজের প্রশংসা করে নয়, কিন্তু খোদার অনুগ্রহ ও তার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বলছি, যদি গোটা পৃথিবী একদিকে থাকে আর একদিকে শুধু আমাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় আর এমন কোনো বিষয় উপস্থিত করা হয়, যার মাধ্যমে আল্লাহর বান্দাদের পরীক্ষা করা হয়- তাহলে তার মোকাবেলায় আল্লাহ আমাকে জয়ী করবেন আর প্রত্যেক বিষয়ে আল্লাহ আমার সাথে থাকবেন। প্রত্যেক ময়দানে তিনি আমাকে জয়ী করবেন। ব্যস, এই ভিত্তিতেই আল্লাহ আমার নাম নবী রেখেছেন যে, এই যমানায় আল্লাহর সাথে অধিক কথোপকথন ও সম্বোধন এবং গায়বের বিষয়ে অধিক খবরাখবর শুধু আমাকেই দেওয়া হয়েছে।...”
[বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : মজমুআ ইশতিহার (নতুন সংস্করণ) ২/৭২৫, ৭২৬, ইশতেহার নং ২৯২, তারিখ : ২৩ মে ১৯০৮ ঈ.; হাকীকতুন নবুওয়াহ, (যমীমা ২) লেখক, মির্যা মাহমুদ, অনওয়ারুল উলূম (মির্যা মাহমুদের রচনাসমগ্র) ২/৫৮০, ৫৮১]
উল্লেখ্য, এটা মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যুর ঠিক তিন দিন আগে ২৩ মে ১৯০৮ ঈ. তারিখের লেখা। আর তা প্রকাশিত হয়েছে ঠিক মৃত্যুর দিন ২৬ মে ১৯০৮ ঈ. তারিখে আখবারে আম পত্রিকায়। দ্রষ্টব্য : কাদিয়ানীদের প্রকাশিত পুস্তিকা ‘নবুয়ত ও খিলাফত’ (বাংলা), পৃ. ৭৬
মির্যা কাদিয়ানী তার এ চিঠিতে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নবী হওয়ার দাবি করেছে। সে নবুওতের পূর্ণাঙ্গ মর্মার্থ নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে বলছে-
ক. আল্লাহ তাআলা আদেশ করেছেন তাই নবুওত দাবি করতে বাধ্য হয়েছে!
খ. নতুবা তার পাপ হবে!
গ. তাই কী আর করার, বাধ্য হয়েই তাকে নবুওত দাবি করতে হয়েছে!
ঘ. সে আর এ দাবি অস্বীকার করতে পারছে না।
ঙ. ফলে মৃত্যু অবধি কি না তাকে এ (কুফুরী) দাবির উপরই অবিচল থাকতে হবে- নাউযুবিল্লাহ।
চ. আল্লাহ তাআলা নাকি তাকে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, পুরো দুনিয়ার মোকাবেলায় তাকে জয়ী করবেন। এজন্য তাকে নবী বলা হয়েছে।
ছ. আর এভাবে নবুওত নাকি শুধু তাকেই দেওয়া হয়েছে।
এটা যে কত জঘন্য কিসিমের কুফর, তা হয়ত আর খোলাসা করে বলার প্রয়োজন নেই।
প্রিয় পাঠক! উল্লিখিত উদ্ধৃতিগুলোতে অস্পষ্টতার কিছু নেই। কোনো প্রকার রাখঢাক ছাড়াই যে স্পষ্ট ভাষায় মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নবুওত ও রিসালাত এবং নবী ও রাসূল হবার দাবি করেছে এখানে তারই কতিপয় উদ্ধৃতি প্রদত্ত হল।
প্রকাশ থাকে যে, মির্যা কাদিয়ানী মৃত্যু অবধি যে বিশ্বাস পোষণ করে গিয়েছে তার সম্প্রদায়ের বিশ্বাসও তাই; এর ব্যতিক্রম নয়।
কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ ‘হাকীকতুন নবুওয়াহ’ নামে স্বতন্ত্র দীর্ঘ পুস্তক রচনা করেছে, তার বাবা যে নবী হবার দাবি করে গিয়েছে সেকথা প্রমাণের জন্যে। সেখানে সে বহুভাবে মির্যা কাদিয়ানী যে তাদের নবী এবং তিনি যে প্রকৃত অর্থেই নবী ও রাসূল হবার দাবি করেছেন- এ বিষয়টি প্রমাণ করেছে।
‘হযরত মসীহে মাওঊদ সত্যিই আল্লাহর নবী ছিলেন’(!)
তথাপি এ মর্মে আরো একটি উদ্ধৃতি লক্ষ্য করুন। কাদিয়ানী সম্প্রদায় তাদের গুরু মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি কী বিশ্বাস পোষণ করে- তা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে এই উদ্ধৃতিতে।
কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত আহমদীদের ‘আলফযল’ পত্রিকায়-
حضرت مسیح موعود واقعی نبی اللہ تھے
(হযরত মসীহে মাওঊদ সত্যিই আল্লাহর নবী ছিলেন) শিরোনামে মির্যা কাদিয়ানীর ব্যাপারে তাদের আকীদা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়-
حضرت مسیح موعود نے اپنے آپ کو کھلے طور پر نبی اللہ اور رسول اللہ پیش کیا ہے۔ اور اپنے آپ کو زمرہ انبیاء ومرسلین میں شامل فرمایا ہے۔ اور جن آیات قرآنیہ کو اپنے دعوے میں پیش کیا ہے۔ ان میں صریح طور سے الفاظ "رسول" یا "رسلہ" کےموجود ہیں۔ جنکا حضور نے اپنے آپکو مصداق ٹھہرایا ہے۔ پس آیات قرآنیہ بینہ کے لفظ "رسول" کا اپنے آپ کو مصداق ٹھہرانا صاف اور صریح اس امر کی بین دلیل ہے۔کہ حضرت مسیح موعودمن حیث النبوّت انہی معنوں میں نبی اللہ اور رسول اللہ تھے جن معنوں میں ان آیات سے دیگر انبیاء سابقین مراد لئےجاتے ہیں۔ چنانچہ تحفہ گولڑویہ میں حضرۃ مسیح موعود فرماتے ہیں۔
"آیت هو الذی ارسل رسوله بالهدی آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے حق میں ہے اورپہر یہی آئیت مسیح موعود کے حق میں بھی ہے .....۔اور رسول سے اس جگہ آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم بہی مراد ہیں۔ اور مسیح موعود بہی مراد ہے"
اس حوالہ سے حضرت مسیح موعود کا حقیقی معنوں میں نبی اللہ ہونا محقق ہے۔ کیونکہ آیت مذکورہ بالاکے لفظ رسول سے خود مسیح موعود نے اپنے آپ کو ان ہی معنوں میں مراد لیا ہے۔ جن معنوں میں کہ حضرت نبی کریم رسول اللہ ہیں۔ جس سے صاف اور صریح ثابت ہوگیا۔ کہ حضرت مسیح موعود واقعی نبی اللہ تھے۔ اور زمرۂ انبیاء اور مرسلین میں داخل ہیں۔ ...
الغرض محولہ بالا نص صریح کے طور پر یہ امر ثابت کررہا ہے۔ کہ حضرت مسیح موعود من حیث النبوت ورسالت حقیقی معنوں کےانبیاء میں شامل ہیں۔ ...
مندرجہ بالا حوالجات کے رو سے حضرت اقدس مسیح موعود خدا تعالے کے نبی اور رسول بنتے ہیں۔ اور من حیث نبوت ورسالت ویسے ہی نبی اور رسول ہیں۔ جیسے کہ سابقہ زمانہ میں گذرے ہیں۔ یہ تو قرآنی آیات کا ذکرہے۔اب ہم دیکھنا چاہتے ہیں۔ کہ حضرت اقدس مسیح موعود نے اپنی نسبت مطلق نبی اور رسول کا لفظ بھی استعمال کیا ہے۔ اور اپنے آپ کو زمرہ انبیاء میں شمار فرمایا ہے۔...
پس کیا یہ حوالجات ثابت نہیں کرتے۔ کہ حضرت اقدس مسیح موعود واقعی خدا کے برگزیدہ نبی ہیں۔ اور آپ کے لئے نبی اور رسول کا لفظ استعمال کرنا اور آپکو زمرہ انبیاء میں داخل شدہ تصور کرنا نہ صرف جائز بلکہ فرض ہے جس کے انکار سے خدا تعالے کے کلام کی تکذیب لازم آتی ہے۔ چنانچہ حضرت مسیح موعود فرماتے ہیں۔
"الہام جری اللہ فی حلل الانبیاء جس کا ترجمہ ہے۔ خدا کا رسول نبیوں کے لباس میں۔ اس الہام میں میرا نام رسول بھی رکھا گیا ہے۔ اور نبی بھی۔ پس جس شخص کے خود خدا نے یہ نام رکھے ہوں۔ اس کو عوام میں سے سمجھنا کمال درجہ کی شوخی ہے۔ (ایام الصلح ص ৭৫ )...
پس ان اقتباس سے یہ امر ثابت ہوگیا ۔ کہ حضرت مسیح موعود واقعی خدا کے نبی تھے۔ اور یقینا خدا کے نبی تھے۔ اور آپکا دعوی نبوت ورسالت انبیاء سابقین کے دعاوی سے بجز واسطہ وبلا واسطہ نبوت کے ہرگز ہرگز کوئی مغائرت نہیں رکھتا۔ آپ لاریب نبی اور رسول تھے۔ ہاں آپ آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی روحانی تعلیم سے نبی تھے۔ اس لئے آپ آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی طرح بعض انبیاء سابقین سے افضل ہوئے۔ اور حضرت نبی کریم کے امتی بھی کہلائے۔ اور بجز شریعت بریدہ یا ترمیم و تنسیخ احکامات شریعت محمدیہ باقی تمام لوازمات نبوت منجانب اللہ آپ کے ساتھ تھے۔ والسلام
(خاکسار محمد سعید احمدی از لاہور)
হযরত মসীহে মাওঊদ২১ প্রকাশ্যভাবে নিজেকে আল্লাহর নবী এবং আল্লাহর রাসূল বলে পেশ করেছেন এবং নিজেকে তিনি নবীগণ ও রাসূলগণের দলে শামিল করেছেন। আর যেসকল কুরআনী আয়াতকে নিজের দাবির ক্ষেত্রে পেশ করেছেন তাতে স্পষ্টভাবে ‘রসূল’ ও ‘রসূলুহু’ জাতীয় শব্দ বিদ্যমান রয়েছে। ‘হুযুর’ নিজেকে নিজে তার প্রতিপাদ্য হিসাবে সাব্যস্ত করেছেন। অতএব কুরআনী স্পষ্ট আয়াতসমূহে উল্লেখিত রাসূল শব্দের উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে উল্লেখ করা- এ বিষয়টির স্পষ্ট এবং প্রকাশ্য দলীল যে, নবুওতের বিবেচনায় হযরত মসীহে মাওঊদ ওই অর্থেই আল্লাহর নবী ও আল্লাহর রাসূল ছিলেন, যেই অর্থে এসকল আয়াতে পূর্ববর্তী অন্যান্য নবীগণ উদ্দিষ্ট হয়ে থাকেন।
তোহফায়ে গোলড়বিয়াতে হযরত মসীহে মাওঊদ বলেন-
“কুরআনের আয়াত-
هو الذی ارسل رسوله بالهدی.
(তিনি সেই সত্তা, যিনি তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়েত দিয়ে...) আয়াতটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তারপর এই আয়াতই মসীহে মাওঊদের ব্যাপারেও প্রযোজ্য। ... ... এই জায়গায় রাসূল বলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উদ্দেশ্য এবং মসীহে মাওঊদও উদ্দেশ্য।”
হযরত মসীহে মওঊদ প্রকৃত অর্থে নবী হবার বিষয়টি এই উদ্ধৃতি থেকে সুনিশ্চিত। কেননা উপরে উল্লেখিত রাসূল শব্দ থেকে মসীহে মাওঊদ নিজেকে ঐ অর্থেই গ্রহণ করেছেন, যেই অর্থে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। এতে স্পষ্ট এবং পরিষ্কার হয়ে গেল যে, হযরত মসীহে মাওঊদ প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর নবী ছিলেন এবং আম্বিয়া ও মুরসালীনের দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।...
মোটকথা, উল্লিখিত উদ্ধৃতি সুস্পষ্ট পাঠের মতো এ বিষয়টি প্রমাণ করছে যে, হযরত মাসীহে মাওউদ নবুওত ও রিসালাতের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত অর্থেই নবীগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।...
(মির্যা কাদিয়ানীর কয়েকটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করার পর বলে) উপরে উল্লেখিত উদ্ধৃতিগুলোর আলোকে ‘হযরতে আকদাস’ মসীহে মাওউদ খোদা তাআলার নবী ও রাসূল সাব্যস্ত হন। এবং নবুওত ও রিসালাতের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি তেমনই নবী ও রাসূল, যেমনটি পূর্ববর্তী যমানায় অতিবাহিত হয়েছে। এ তো গেল কুরআনের আয়াতের বর্ণনা। এখন আমরা দেখব, হযরতে আকদাস মসীহে মাওঊদ নিজের ব্যাপারে নবী ও রাসূল শব্দও ব্যবহার করেছেন এবং নিজেকে নবীদের জামাতে গণ্য করেছেন। ...
(মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবি সংক্রান্ত কয়েকটি বক্তব্য উল্লেখ করার পর বলে) অতএব এই উদ্ধৃতিগুলো কি একথা প্রমাণ করে না যে, হযরতে আকদাস মসীহে মাওঊদ বাস্তবিকই আল্লাহর প্রেরিত নবী ছিলেন। তার জন্য নবী ও রাসূল শব্দ ব্যবহার করা এবং তাকে নবীগণের জামাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করা শুধু জায়েযই নয়; বরং ফরয। যার অস্বীকৃতি আল্লাহ তাআলার কালামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শামিল।
হযরত মসীহে মাওঊদ বলেন, ইলহাম-
جرى الله فى حلل الانبياء
যার তরজমা হল, আল্লাহর রাসূল নবীদের পোশাকে। এই ইলহামে আমার নাম রাসূলও রাখা হয়েছে এবং নবীও। অতএব স্বয়ং খোদা যার জন্য এই নাম রাখেন তাকে সাধারণ মানুষ মনে করা জঘন্য বেয়াদবি। (আইয়ামুস সুলাহ, পৃ ৭৫) ...
অতএব এ উদ্ধৃতিগুলো থেকে এ বিষয়টি প্রমাণিত হল যে, হযরত মসীহে মাওঊদ বাস্তবেই আল্লাহর নবী ছিলেন। আর তিনি যে নবুওত ও রিসালাত দাবি করেছেন তা পূর্ববর্তী নবীগণের দাবি-দাওয়া থেকে কখনই কখনই কোনো বৈপরীত্য ধারণ করে না, মাধ্যম এবং সরাসরি নবুওত লাভ করা ব্যতীত।২২ তিনি নিঃসন্দেহে নবী এবং রাসূল ছিলেন। হাঁ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহানী তালীমের মাধ্যমে নবী হয়েছিলেন।২৩ এজন্য তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো পূর্ববর্তী কোনো কোনো নবী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন।২৪ এবং তাকে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতীও বলা হয়।২৫ আর শরীয়ত (আনা) এবং শরীয়তে মুহাম্মদিয়ার বিধি বিধান রহিত করা এবং কমবেশি করা ব্যতীত২৬ আল্লাহর পক্ষ থেকে নবুওতের সকল বৈশিষ্ট্য তার মাঝে বিদ্যমান ছিল। ওয়াসসালাম।
(খাকসারে মুহাম্মাদ সাঈদ আহমদী, লাহোর) -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘আলফযল’, তারিখ : ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৪ ঈসায়ী, পৃ. ৫, ৬
পাঠক, এই উদ্ধৃতি ক’টি পড়ার পর নিশ্চয়ই আপনার অন্তরাত্মা প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে। হাঁ, কাদিয়ানী বিশ্বাসগুলো এভাবেই মুসলমানদের ঈমানের ভীতে আঘাত হানতে থাকে।
তবে যাইহোক, কাদিয়ানীরা যে তাদের গুরু মহোদয়ের নবুওত দাবির প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যেতে চায়; বরং চেপে যেতে চায় এবং এর মাধ্যমে মুসলমানদের তো বটেই, কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের সরলমনা সাধারণ সদস্যকেও ভুলিয়ে রাখতে চায়। এটা কেবলই ধোঁকা এবং প্রতারণা।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের মৌলিক একটি বিশ্বাস এভাবে গোপন করে কিংবা লুকোচুরি করার মাধ্যমে তারা তাদের হযরত এবং তার ধর্মের উপর কতটুকু ন্যায়বিচার করছে! কাদিয়ানী ভাইদের প্রতি দরখাস্ত- আপনারা দ্বীনে মুহাম্মদীতে আশ্রয় নিন। ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসুন। নতুবা স্পষ্ট ভাষায় নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। নিজেদের মতবাদকে স্বতন্ত্র ধর্মমত হিসাবে ঘোষণা দিন। দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মুসলিম জাতির সাথে প্রতারণা বন্ধ করুন। ইসলাম ও মুসলমান নাম এবং শাআইরুল ইসলামসহ ইসলামের সকল পরিভাষার অপব্যবহার থেকে বিরত থেকে নিজেদের মূল পরিচয় দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরুন।
এখানে মাত্র কয়েকটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হল মাত্র। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মহব্বত এবং ঈমানী গায়রতের দরুন যেকোনো মুসলমান এ ক’টি উদ্ধৃতি দেখেই প্রচণ্ডভাবে ঝাঁকুনি খাবেন। তবে মির্যা কাদিয়ানীর কুফ্র এতটুকুতেই শেষ নয়; মির্যার লেখাজোখায় এ ধরনের আরো বহু জঘন্য জঘন্য বক্তব্য-বিবৃতি রয়েছে। কোথাও কোথাও ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেছে, আবার কোথাও কোথাও দ্ব্যর্থহীনভাবে নবুওতের দাবি করে বসেছে। সে যে কত জায়গায় কতভাবে এ দাবি করেছে তাতে তার নবুওতের মিথ্যা দাবির বিষয়ে অস্পষ্টতার কিছু বাকি থাকে না। কেবল সহজে বুঝার জন্য এখানে স্পষ্ট কিছু উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। হ
টীকাসমূহ ......
১. ইরতিদাদ মানে ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া। আর যানদাকা অর্থ মুখে মুখে মুসলিম হওয়ার দাবি থাকা সত্ত্বেও ইসলামের কোনো মৌলিক আকীদা অস্বীকার করা বা তার বিকৃতি করা। এটি নিফাক (মুনাফেকী)-এর ভয়াবহ প্রকাশ। (প্রবন্ধকার)
২. কাদিয়ানিয়াত যে ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা মতবাদ- তা কিন্তু স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের গুরুজনেরাও তা স্বীকার করে এবং তাদের লিখনী ও যবানীতে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বিবৃতিও এসেছে। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের ‘প্রথম খলীফা’ হাকীম নুরুদ্দীনের (মৃত্যু : ১৯১৪ ঈ.) স্পষ্ট ঘোষণা শুনুন-
ان کا اسلام اور ہےاور ہمارا اسلام اور ہے
তাদের ইসলাম ভিন্ন আর আমাদের ইসলাম ভিন্ন। -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত আলফযল পত্রিকা; তারিখ : ৩১-১২-১৯১৪ ঈ., পৃ. ৬, প্রথম কলাম
অর্থাৎ কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের প্রথম খলীফা হাকীম নুরুদ্দীন এখানে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, অ-আহমদী তথা মুসলমানদের ইসলাম ভিন্ন আর আহমদী তথা কাদিয়ানীদের ইসলাম ভিন্ন। নিজেদের ধর্মের নাম যা-ই দিক না কেন, তারা যে (ইসলাম থেকে ভিন্ন) একটি স্বতন্ত্র মতবাদের অনুসারী- একথা তাদের গুরুরা অকপটে স্বীকার করে। যদিও মুসলিম সমাজে কিংবা সরলমনা সাধারণ কাদিয়ানীদের নিকট তারা বিষয়টি চেপে যেতে চায়। তবে বাস্তবতা তাই, যা হাকীম নুরুদ্দীন বলেছে।
অতএব অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় যে ইসলাম আমাদের নিকট পৌঁছেছে এবং আল্লাহ তাআলার ওয়াদা অনুযায়ী কিয়ামত পর্যন্ত যা সংরক্ষিত এবং সুরক্ষিত থাকবে, কাদিয়ানীবাদ এ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং পৃথক মতবাদের নাম। মূলত যা ইসলামের মোকাবেলায় দাঁড় করানো একটি কুফুরী মতবাদ, যাকে তারা ইসলাম বলে ব্যক্ত করে।
কাদিয়ানীদের লাহোরী গ্রুপের আমীর মোহাম্মাদ আলী লাহোরী বলে-
The Ahmadiyya movement stands in the same relation to Islam in which christinaity stood to Judaism.
ইসলামের সাথে আহমদিয়াত তেমনই সম্পর্ক রক্ষা করে, যেমন সম্পর্ক ছিল ইহুদী ধর্মের সাথে খ্রিস্ট ধর্মের। -রিভিউ অব রিলিজিয়নস, ইংরেজি ১৯০৬; বরাতে মুবাহাসা রাওয়ালপিন্ডি, পৃ. ২৪০, দারুল ফযল, কাদিয়ান
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ আলী লাহোরী একথা বলেছে মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যুর প্রায় দুই বছর পূর্বে ১৯০৬ সনে। তখনও সে কাদিয়ানীদের মূল জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি।
মোটকথা, ইহুদী ধর্ম এবং খ্রিস্ট ধর্ম যেমন পৃথক দুটি ধর্ম তেমনি কাদিয়ানীরাও ইসলাম থেকে নিজেদের ধর্মমতকে পৃথক ধর্ম বলে বিশ্বাস করে। এ বিষয়টি তাদের মতবাদের মূল বিশ্বাসের অংশ। মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্য থেকেও তা প্রমাণিত।
এরপরও যে তারা নিজেদের ধর্মমতকে ইসলাম নাম দেয় এটা নিছক তাদের প্রতারণা। বিষয়টি স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি রাখে। আপাতত এখানে এতটুকু উল্লেখ করা হল। আল্লাহ তাআলা জালেমদের সকল প্রতারণা থেকে উম্মতকে হেফাযত করুন- আমীন। (প্রবন্ধকার)
৩. আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রায় ছয়শ বছর পূর্বে এসেছিলেন নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম। ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁকে আসমানে তুলে নেন। কিয়ামতের পূর্বে আল্লাহ তাআলা তাঁকে পুনরায় দুনিয়ায় পাঠাবেন। এটা ইসলামের মুতাওয়াতির ও অনুসৃত আকীদা। কুরআন-হাদীসে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।
মির্যা কাদিয়ানীর একটি কুফর এবং নির্জলা মিথ্যা হল, সে একদিকে হযরত ঈসা আ.-কে ‘মৃত’ বলে এবং কিয়ামতের পূর্বে তাঁর পৃথিবীতে আগমনের বিষয়টি অস্বীকার করে। অপরদিকে নির্লজ্জভাবে সে এ দাবিও করে যে, হাদীসে যে মাসীহের আগমনের কথা রয়েছে, সে নিজেই সেই মাসীহ। এ হিসাবে সে নিজেকে ‘মসীহে মাওঊদ’ বা প্রতিশ্রুত মাসীহ বলে এবং কাদিয়ানীরাও।
তাদের এ কুফুরী বিশ্বাস সম্পর্কে এখানে কিছু বলছি না। শুধু এতটুকু বলতে চাচ্ছি যে, মির্যা কাদিয়ানী ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের বক্তব্যে যেখানে যেখানে ‘মসীহে মাওঊদ’ শব্দ আসে সেখানে এর দ্বারা উদ্দেশ্য খোদ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। (প্রবন্ধকার)
৪. শুধু তাই নয়, কাদিয়ানীদের নিকট কাফের হওয়ার জন্য মির্যা কাদিয়ানীর অস্বীকার ও বিরোধিতাই একমাত্র কারণ নয়; বরং কাদিয়ানী বিশ্বাস মতে, যারা মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে মেনে নেবে না, তারাই কাফের। চাই সে জীবনে মির্যা কাদিয়ানীর নামটাও না শুনুক। কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র বশীরুদ্দীন মাহমুদের বক্তব্যে দেখুন-
کل مسلمان جو حضرت مسیح موعود کی بیعت میں شامل نہیں ہوئے خواہ انہوں نے حضرت مسیح موعود کا نام بھی نہیں سنا وہ کافر اور دائرہ اسلام سے خارج ہے۔
সকল মুসলমান, যারা হযরত মসীহে মাওঊদের (মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) বাইয়াতে শামিল হয়নি, চাই তারা হযরত মসীহে মাওঊদের (মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী) নামটাও না শুনুক, তারা কাফের এবং ইসলাম থেকে খারেজ। -আয়নায়ে সাদাকাত, লেখক, মির্যা মাহমুদ, আনওয়ারুল উলূম (মির্যা মাহমুদের রচনা সমগ্র) ৬/১১০
এমনকি মুসলিম শিশুদের ক্ষেত্রেও তাদের এ কুফুরী বিশ্বাসের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর এবং ‘আপোষহীন’।
মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর জ্যেষ্ঠপুত্র ও কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা মাহমুদকে একজন জিজ্ঞাসা করল, গায়রে আহমদীর (কাদিয়ানী নয় এমন) ব্যক্তির নাবালেগ শিশুর জানাযা কেন পড়া হবে না? সে তো মাসুম (নিষ্পাপ) এবং এ বাচ্চার ক্ষেত্রে তো এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, শিশুটি বড় হয়ে আহমদী হয়ে যাবে।
এর উত্তরে মির্যা মাহমুদ বলে-
جس طرح عیسائی کے بچےکا جنازہ نہیں پڑھا جاسکتا۔ اگرچہ وہ معصوم ہی ہوتاہے۔ اسی طرح ایک غیراحمدی کے بچے کا بھی جنازہ نہیں پڑھا جاسکتا۔ جس طرح ایک غیر احمدی کے بچے کے متعلق امکان ظاہر کیا جاتا ہے۔ کہ وہ بڑا ہوکر احمدی ہوتا اسی طرح کا امکان ایک عیسائی کے بچے کے متعلق بھی ہوسکتا ہے۔
যেমনিভাবে কোনো খ্রিস্টান শিশুর জানাযা পড়া যায় না, যদিও সে নিষ্পাপই হয়ে থাকে; তদ্রূপ কোনো গায়রে আহমদী শিশুর জানাযাও পড়া যাবে না। যেমনিভাবে কোনো গায়রে আহমদী শিশুর ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা প্রকাশ করা যায় যে, সে বড় হয়ে আহমদী হয়ে যাবে; এরূপ সম্ভাবনা একটি খ্রিস্টান শিশুর ক্ষেত্রেও হতে পারে। -কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত পত্রিকা আলফযল, তারিখ : ২৩-১০-১৯২২ ঈ.; পৃ. ৬ (১ম কলাম)
স্পষ্ট তুলনা। ইসলামের দৃষ্টিতে খ্রিস্টানদের যে অবস্থান, কাদিয়ানীদের বিশ্বাস অনুসারে তাদের নিকট মুসলমানদের অবস্থান তেমনই।
কাদিয়ানীদের পক্ষ থেকে মুসলমানদের কাফের মনে করার প্রসঙ্গটি স্বতন্ত্রভাবে আলোচনার বিষয়। এখানে এদিকটার প্রতি খুব সংক্ষেপেই ইশারা করা হল মাত্র। (প্রবন্ধকার)
৫. অর্থাৎ কোনো কুফুরী বক্তব্যের কুফর হওয়ার বিষয়টি চিহ্নিত করার জন্য তা উদ্ধৃত করা কুফর নয়; বরং তা নাহী আনিল মুনকারের অন্যতম জরুরি অংশ।
বি. দ্র. বক্ষমান প্রবন্ধের উদ্ধৃতিগুলো সরাসরি মির্যা কাদিয়ানীর স্বলিখিত পুস্তকাদি এবং কাদিয়ানীদের নিকট নির্ভরযোগ্য পুস্তকসমূহ থেকে হুবহু উল্লেখ করা হয়েছে। এতে শব্দ-বাক্যের বিন্দুমাত্র পার্থক্য করা হয়নি। অতএব উদ্ধৃতিগুলো কাদিয়ানীদের কি না- এ ব্যাপারে কোনোরূপ সংশয়-সন্দেহের অবকাশ নেই।
দ্বিতীয় কথা হল, কাদিয়ানীরা মির্যার যেসকল বই বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে সেখান থেকে মির্যার বক্তব্যের অনুবাদ তুলে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে নিজের থেকে তরজমা করা হয়নি। পাঠক তাদের অনুবাদ থেকেই তাদের কুফ্র স্পষ্ট ধরতে পারবেন। (প্রবন্ধকার)
৬. এই কথাটি মির্যার প্রতারণার অংশ। শাব্দিক বিরোধ বলে সে তার নবুওত দাবির বিষয়টাকে খুব সাধারণ করে পেশ করতে চাচ্ছে। অথচ পরক্ষণেই যে সে নবীর সংজ্ঞা দিচ্ছে এবং তাতে যে সে উত্তীর্ণ হয়েছে এ ব্যখ্যার মাধ্যমেই তার চাতুরিপনা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। (প্রবন্ধকার)
৭. কাদিয়ানী বিশ্বাস মতে মির্যার ইলহাম সাধারণ কিছু নয়। এটা তাদের নিকট অকাট্য ওহীর। এখানে যে ইলহাম ইলহাম করছে এগুলো মূলত তার নিকট ওহী, একটু পরেই যা স্পষ্টভাবে বলেছে- ‘আমার উপর কয়েক বছর যাবতই ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে এবং ...’। (প্রবন্ধকার)
৮. হায়! ইসলামের মূল আকীদা এবং বৈশিষ্ট্য যে, আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে নবুওতের ধারা সমাপ্ত, তার জানাযা দিয়ে ইসলামের বৈশিষ্ট্যের সবক শেখাচ্ছে! এবং ইসলামকে জীবিত রাখার স্লোগান দিয়ে নিজের নবুওত সাব্যস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে! (প্রবন্ধকার)
৯. মির্যা কাদিয়ানী বারবার শুধু নিদর্শন প্রকাশ এবং ভবিষ্যদ্বাণীর আওয়াজ তুলে। অথচ সে তার যে যে ভবিষ্যদ্বাণীর উপর যত বেশি জোর দিয়েছে এবং সেগুলোকে তার বিশেষ নিদর্শন হিসাবে উল্লেখ করেছে আল্লাহ তাআলা সবগুলোতে তাকে তত লাঞ্ছিত করেছেন। তবুও সে অবিরাম নিদর্শন ও ভবিষ্যদ্বাণীর ধোঁয়া তুলে যায় মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। যা তার দাজ্ল এবং প্রতারণার অংশ।
বিস্তারিত জানতে দেখুন, কাদিয়ানিয়াত পর গওর করনে কা সীধা রাস্তা, মাওলানা মনযুর নুমানী রাহ.; আহাম পেশগোইয়াঁ, হাফেয মুহাম্মাদ ইকবাল রাঙ্গুনী এবং এই প্রবন্ধের ১৫ নং টীকা। (প্রবন্ধকার)
১০. মির্যা সাহেবের মুখে হাজার হাজার লাখ লাখ নিদর্শন বা মুজেযা প্রকাশের কথা যতই উচ্চারিত হোক না কেন এগুলো সবই মিথ্যা এবং প্রতারণা। যার কোনোই বাস্তবতা নেই। ফলশ্রুতিতে কাদিয়ানীরা দূরবর্তী ব্যাখ্যা করেও মির্যার নিদর্শন এবং ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা প্রমাণ করতে পারে না; ফলে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেওয়া ছাড়া উপায়ও থাকে না। (প্রবন্ধকার)
১১. মির্যা কাদিয়ানী এখানে মুজেযা প্রকাশের দাবি করছে। এটা মির্যার ভয়াবহ ধৃষ্টতার একটা রূপ। সে আল্লাহর নামে মিথ্যাচার করছে। আল্লাহ নাকি নিজের কথা শক্তিশালী করার জন্য তার মাধ্যমে মুজেযা এবং নিদর্শন প্রকাশ করেছেন, আল্লাহর চেহারা দেখার জন্য যা স্বচ্ছ আয়নার কাজ দিয়েছে- নাউযুবিল্লাহ।
অথচ বাস্তব কথা হল, এর কোনোই সত্যতা নেই। অস্পষ্টভাবে এটা সেটা বলে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া মাত্র। আর যেখানেই সে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলেছে সেখানে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে চরমভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে। (প্রবন্ধকার)
১২. এগুলো মূলত শয়তানের পক্ষ থেকে। আল্লাহ বলেন-
وَ اِنَّ الشَّیٰطِیْنَ لَیُوْحُوْنَ اِلٰۤی اَوْلِیٰٓـِٕهِمْ لِیُجَادِلُوْكُمْ.
আর নিঃসন্দেহে শয়তান তার দোস্তদের প্রতি ওহী প্রেরণ করতে থাকে, যাতে তারা তোমাদের সাথে বিবাদ করতে পারে। -সূরা আনআম (৬) : ১২১
আর মির্যা কাদিয়ানী যে বলল, একদিক থেকে নবী এবং একদিক থেকে উম্মতী। এই উম্মতী শব্দটি মির্যা কাদিয়ানীর নিজস্ব পরিভাষা। ক্ষেত্র বিশেষে ধোঁকা দেওয়ার জন্য সে এ শব্দ ব্যবহার করে। তবে এর অর্থ সে নিজেই করে দিয়েছে। কাদিয়ানী জামাতের দ্বিতীয় খলীফা মির্যাপুত্র মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ মির্যা কাদিয়ানীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি উল্লেখ করতঃ এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে বলে-
امتی نبی ہونا کمی درجہ کی علامت نہیں بلکہ علو درجہ کی علامت ہے اور ایسے نبی کے ذریعہ سے آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کی قوت قدسیہ اور کمال فیضان ثابت ہوتا ہے۔
উম্মতী নবী হওয়া কম মর্যাদার আলামত নয়; বরং তা উঁচু মরতবার আলামত। আর এমন নবীর মাধ্যমে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র শক্তি এবং ফায়যের পূর্ণধারা প্রমাণিত হয়। -হাকীকতুন নবুওয়াহ, আনওয়ারুল উলূম ২/৩৬৩
মির্যা মাহমুদ আরো স্পষ্ট করে বলে-
امتی نبی کے یہ معنی نہيں کہ وہ پہلے سب انبیاء سے گھٹیا ہو بلکہ ہو سکتا ہے کہ وہ پہلے بہت سے انبیاء سے یا آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے سوا باقی سب انبیاء سے افضل ہو۔
উম্মতী নবী অর্থ এই নয় যে, তিনি পূর্বের সকল নবী অপেক্ষা নিম্ন পর্যায়ের; বরং হতে পারে, তিনি পূর্বের অসংখ্য নবী অপেক্ষা অথবা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত অন্য সকল নবী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। -হাকীকতুন নবুওয়াহ, আনওয়ারুল উলূম ২/৩৮২
বুঝা গেল, একদিক থেকে উম্মতী হওয়া মানে নবী হওয়ার অস্বীকার নয়; বরং উঁচু মানের নবী হওয়ার দাবি। তো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার পরেও নবুওতের মিথ্যা দাবিকে ঢাকা গেল না। (প্রবন্ধকার)
১৩. এখানে একটি কথা মনে রাখলে আশা করি বিষয়টি উপলব্ধি করা সহজ হবে। মির্যা কাদিয়ানীর নবুওত দাবির সাথে তার মুজাদ্দেদ, মুলহাম, মামুর বিশেষ করে মসীহ, মাহদী ইত্যাদি দাবি সাংঘর্ষিক নয়। মির্যা কাদিয়ানী ও তার অনুসারীদের নিকট ফলাফলের বিচারে এ দুয়ের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তাদের বক্তব্য থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট। বক্ষমান প্রবন্ধে তা আলোচ্য বিষয় না হওয়ায় তা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হল না। তবে এখানে ২, ৩, ৪, ৬-এ এবং সামনে ৯, ১০, ১৫, ১৬-এ উদ্ধৃত মির্যার কয়েকটি বক্তব্য থেকেও পাঠক বিষয়টি আঁচ করতে পারবেন। (প্রবন্ধকার)
১৪. এটি হল এক মিথ্যা দাবি প্রমাণের জন্য আরেক মিথ্যা দাবি। খোদ মির্যার লেখাতেই রয়েছে, মহামারির প্রকোপে কাদিয়ান কত মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। দেখুন পরবর্তী (১৫ নং) টীকা। (প্রবন্ধকার)
১৫. বাংলায় এখানে রাসূলের অনুবাদ প্রেরিত করলেও মির্যার আরবী বক্তব্য, মির্যা কর্তৃক এর উর্দু তরজমা এবং ব্যাখ্যায় রাসূল শব্দই এসেছে। এমনকি বাংলা দাফেউল বালাতেও অন্য জায়গায় ‘প্রেরিত রাসূল’ তরজমা করা হয়েছে। দেখুন, ৯ নং উদ্ধৃতি। মোটকথা, মির্যা কাদিয়ানী এখানে নিজেকে রাসূল বলে দাবি করেছে। আর এর সাথে ভবিষ্যদ্বাণী জুড়ে দিয়েছে।
তো মির্যা কাদিয়ানী তাকে রাসূল হিসাবে না মানার কারণে যেই মহামারিকে আসমানী শাস্তি হিসাবে দেখাতে চাইল এবং তার উপস্থিতির কারণে তার এলাকা কাদিয়ান নিরাপদ থাকার ঘোষণা দিল এখন মির্যার নিজের যবানীতেই সংক্ষেপে শুনুন তার নিজের ও তার এলাকার কী অবস্থা-
مخدومی مکرمی اخویم سیٹھ صاحب سلمہ۔ ... اس طرف طاعون کا بہت زور ہے سنا ہے ایک دو مشتبہ وارداتیں امرتسر میں بہی ہوئی ہیں۔ چند روز ہوئے میرے بدن پر بہی ایک گلٹی نکلنی تہی...
মাখদুমী শ্রদ্ধেয় ভাই আমার, ...এখানে প্লেগের প্রকোপ খুব বেশি। শুনেছি, এ ধরনের দু একটি ঘটনা অমৃতসরেও হয়েছে। কয়েকদিন হল আমার শরীরেও একটি গিল্টি বের হতে নিচ্ছিল। -মাকতুবাতে আহমদিয়া, ৫ম খণ্ড, ১ম অংশ, মাকতুব নং ৩৮, পৃ. ১৫ (তারিখ : ২৫ এপ্রিল ‘৯৮ ঈ.)
তাহলে যার দাবি অনুসারে তার উপস্থিতি কাদিয়ানকে রক্ষা করবে, আমরা দেখলাম, তিনিই বললেন, না কাদিয়ান রক্ষা পেল, আর না তিনি নিজে রক্ষা পেলেন!
এ হল তার সাক্ষ্য-প্রমাণ!! কাদিয়ান মহামারিতে আক্রান্ত হওয়ার এরকম আরো উদ্ধৃতি রয়েছে মির্যার লেখায় এবং চিঠিপত্রে। তো যাইহোক, এ হল মির্যা সাহেবের ভবিষ্যদ্বাণীর অবস্থা! (প্রবন্ধকার)
১৬. হাঁ, সকল জাতির জন্য নিদর্শন তো বটে। তবে তাতে তো মির্যা সাহেবের মিথ্যা ও অসারতাই প্রমাণিত হয়। কারণ তার বক্তব্য অনুযায়ী কাদিয়ানও মহামারিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। (প্রবন্ধকার)
১৭. সঙ্গত কারণে এখানে মির্যা কাদিয়ানীর এ পুস্তিকাটি প্রণয়নের প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা জরুরি মনে হচ্ছে।
খতমে নবুওতের আকীদা ইসলামের অকাট্য মৌলিক আকীদা। অবিচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় মুসলমানরা এ আকীদা পোষণ করে আসছে। এ ভিত্তিতে প্রথম প্রথম মির্যার কোনো কোনো অনুসারীও ভাবতে পারেনি যে, তাদের হযরত বাস্তবিক অর্র্থেই নবী হবার দাবি করেছে।
সে হিসাবে একবার একজন এক কাদিয়ানীকে লক্ষ্য করে বলল- তোমরা যার হাতে বাইয়াত হয়েছ সে তো নবী এবং রাসূল হবার দাবি করে। একথা শুনে ওই কাদিয়ানী বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করে। মির্যা কাদিয়ানী যখন এ খবর শুনতে পায় তখন সে জবাব দেয়, এমন উত্তর দেওয়া সঠিক নয়। সে তখন তার অনুসারীদের কুফুরী বিশ্বাস পোক্ত করার জন্য রচনা করে এই পুস্তিকা। আর এর নামকরণ করে- এক গলতি কা এযালা (একটি ভুল সংশোধন)। এখানে মির্যা তার নবুওত দাবির বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে। যেখানে অস্পষ্টতার কিছু বাকি থাকেনি।
[দ্রষ্টব্য : এক গলতি কা ইযালা, ১ ; রূহানী খাযায়েন ১৮/২০৬; একটি ভুল সংশোধন, (বাংলা), পৃ. ৩] (প্রবন্ধকার)
১৮. আমরা জানি, কুরআনুল কারীম আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে এবং এর তিলাওয়াতের বিভিন্ন কেরাত রয়েছে। মুতাওয়াতিরভাবে সেগুলো প্রমাণিত।
কিন্তু লক্ষ করুন, এখানে মির্যা কাদিয়ানী কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত-শৈলীর সাথে খুবই সূক্ষ্মভাবে নিজের নবুওত দাবি সম্বলিত উর্দু বক্তব্যকে তুলনা করে বলছে- ইস কী দুসরী কেরাত হ্যয় ...-এর অন্য কেরাত হল...। অর্থাৎ কেরাতের বিষয়টি, যা তিলাওয়াতে কুরআনের সাথে সম্পৃক্ত সেটাকে সে নিজের কুফুরী বক্তব্যের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করছে।
মির্যা কাদিয়ানীর কুফুরীর এটাও একটি জঘন্য দিক। অর্থাৎ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সে নিজের বিভিন্ন বক্তব্যকে আল্লাহর কালামের সাথে তুলনা করে করে উল্লেখ করে।
বাংলা ভাষার পাঠক হয়ত ভাবছেন- কই, এখানে তো কেরাতের কোনো প্রসঙ্গ দেখা যাচ্ছে না। হাঁ, কাদিয়ানী সম্প্রদায় ‘ইস কী দুসরী কেরাত হ্যয় ...’ (যার মূল অনুবাদ হল, এর অন্য কেরাত হল...।) -এর অনুবাদ করেছে, ‘এ ওহীটির আর এক বর্ণনা আছে ...’- এভাবে রয়েসয়ে। যাতে তাদের গুরু মহোদয় যে, নিজের উর্দু প্রলাপকে পবিত্র কুরআন মাজীদের সাথে তুলনা করেছেন, অন্তত এখানে এ অসারতা কেউ টের না পায়। স্পষ্ট কথা, এটা তাদের পক্ষ থেকে খেয়ানত।
আরো লক্ষ্য করার বিষয় হল, ‘বারাহীনে আহমদিয়া’ তার ১৮৮০-১৮৮৪ সনের রচনা। পরবর্তীতে নবুওত দাবি করার পর সে এ বইয়ের বিভিন্ন উদ্ধৃতিকে ওহী হিসাবে পেশ করতে থাকে। নবুওতের মিথ্যা দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য এ আরেক প্রতারণা। (প্রবন্ধকার)
১৯. মির্যা কাদিয়ানীর উল্লেখকৃত এ আলামতের বিচারেও যদি তাকে পরখ করা হয় তবুও তার দাবি প্রমাণিত হয় না।
এক. নবী হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। বিবেকের কাঠগড়ায় যদি ব্যক্তি মির্যা কাদিয়ানীকে তোলা হয় তাহলে সে একটি সভ্য সমাজের সাধারণ সদস্য হওয়ারও উপযুক্ত থাকে না। ‘সীরাতুল মাহদী’ ও ‘যিকরে হাবীব’সহ তার জীবন চরিত নিয়ে রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলো যার জ্যান্ত সাক্ষী।
তাছাড়া আল্লাহ তাআলা যখন ঘোষণাই করে দিয়েছেন, নবুওতের ধারা সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে এবং সর্বশেষ নবী ও রাসূল হলেন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাহলে তো তাঁর পর কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে নবুওত লাভ করার সম্ভাবনাই নেই। এখন যদি কোনো ফিরিশতা-সিফাত ইনসানও নবুওত দাবি করে তা-ও সে মিথ্যাবাদী। তার কাছে নিদর্শন তলব করাও জায়েয নেই। এমনকি যদি এ ধরনের মিথ্যা দাবিদারের হাতে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পায় (যা প্রকৃতপক্ষে ভেল্কিবাজি) তবুও সে মিথ্যাবাদী। তাকে গ্রহণ করা স্পষ্ট কুফর। এটাই সুস্থ বিবেক এবং ইসলামী শরীয়তের ফয়সালা।
আর উম্মতের হেদায়েতের জন্য তো নবীজী কিতাব ও সুন্নাহ রেখে গিয়েছেন এবং স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যতক্ষণ তা আঁকড়ে ধরবে তোমরা ভ্রষ্ট হবে না। কিতাব ও সুন্নাহ যা নবীর ওয়ারিসগণ ধারণ করে রেখেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যার তালীম প্রচার-প্রসার করে যাবেন সেটাই হেদায়েতের জন্য যথেষ্ট।
দুই. তার ব্যাপারে পূর্ববর্তী নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীর যে দাবি করেছে তা তো সম্পূর্ণই মিথ্যা।
তিন. আর আসমানী সমর্থন বলতে যে সে তার সত্যতার নিদর্শন এবং ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বোঝায়- সেক্ষেত্রে তো আল্লাহ তাআলা তাকে পদে পদে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করেছেন। বিস্তারিত জানতে দেখুন ‘আহাম পেশগোইয়াঁ, হাফেয মুহাম্মাদ ইকবাল রাঙ্গুনী; এবং দেখুন এই প্রবন্ধের ১৫ নং টীকা। (প্রবন্ধকার)
২০. হাঁ, আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে মির্যার মধ্যে মিথ্যাবাদী এবং মহাপ্রতারক হওয়ার এত স্পষ্ট স্পষ্ট নিদর্শন বিদ্যমান রেখেছেন, যাতে খুব সহজেই তার দাজ্ল ও কুফর ধরা পড়ে যায়। (প্রবন্ধকার)
২১. অর্থাৎ মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। মির্যা সাহেব নিজে এবং তার অনুসারীরা তাকে মসীহে মওঊদ দাবি করে থাকে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা যেমন তার নবী হবার দাবিটি নির্জলা মিথ্যা। (প্রবন্ধকার)
২২. মাধ্যম হয়ে নবুওত লাভ করা আর সরাসরি নবুওত লাভ করার এই বিভাজন কাদিয়ানীদের আবিষ্কৃত একটি নীতি। তাদের বিশ্বাস মতে মির্যা সাহেব নাকি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহানী তালীমের মাধ্যমে নবী হয়েছেন। কিন্তু যে ব্যক্তি এত এতভাবে এত এত পরিমাণে ওহী প্রাপ্তির দাবি করে (যার কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেছনের উদ্ধৃতিগুলোতে পাঠক লক্ষ্য করে এসেছেন) এবং যে দাবি করে- তার নিকট হযরত জিবরাঈল আ. ওহী নিয়ে আগমন করেন এবং বার বার আগমন করেন (দেখুন, হাকীকতুল ওহী, পৃ. ১০৩; রূহানী খাযায়েন ২২/১০৬) তার সরাসরি নবুওত লাভ করার দাবি করতে আর কী বাকি থাকে! আসল কথা হচ্ছে, কাদিয়ানীদের মতে মির্যা সাহেব যে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহানী তালীমের মাধ্যমে নবী হয়েছেন, যার কারণে তিনি উম্মতী নবীও বটে, এর মাধ্যমে মির্যাকে তারা অন্যান্য নবী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকে। অতএব সরাসরি নবুওত লাভ না করে মাধ্যম হয়ে নবুওত লাভ করা মানে উঁচু মানের নবুওত দাবি করা। পরের বাক্যেই যা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। আরো দেখুন ১২ নং টীকা। (প্রবন্ধকার)
২৩. নবুওত একমাত্র আল্লাহর দান। আর আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আখেরী নবী ঘোষণা করেছেন। কারো তালীমের দ্বারা কেউ নবী হতে পারে না। আর মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তো জীবনভর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালীমের বিরোধিতাই করেছে। তাই এক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ-এর তালীমের কথা উল্লেখ করা প্রতারণা বৈ কিছু নয়। (প্রবন্ধকার)
২৪. যদিও মির্যা কাদিয়ানীর দাবি হল সে সকল নবী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। মির্যা বলে-
آنچہ دادست ہر نبی را جام/ داد آں جام را مرا بتمام
যিনি সকল নবীকে সুধা পান করিয়েছেন তিনি সেই সুধা সবটুকু আমাকে দান করেছেন। -নুযূলুল মাসীহ, পৃ. ৯৯; রূহানী খাযায়েন ১৮/৪৭৭ (প্রবন্ধকার)
২৫. তাদের উম্মতী শব্দের মধ্যেই নবুওতের দাবি নিহিত রয়েছে। দেখুন এই প্রবন্ধের ১২ নং টীকা। তাই তো এখানেই উম্মতী বলার পাশাপাশি বলেছে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মতো পূর্ববর্তী কোনো কোনো নবী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ছিলেন’। নাউযুবিল্লাহ। (প্রবন্ধকার)
২৬. মির্যা সাহেব শরীয়ত অধিকারী নবী হিসাবেও নিজেকে সাব্যস্ত করেছেন। যদিও কাদিয়ানীরা তা অস্বীকার করতে চায়। এটি স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয়। আপাতত এখানে মির্যা সাহেবের একটি বক্তব্য লক্ষ্য করুন-
یہ بھی تو سمجھو کہ شریعت کیا چیز ہےجس نے اپنی وحی کے ذریعہ سے چند امر اور نہی بیان کئے اور اپنی امت کے لئے ایک قانون مقرر کیا وہی صاحب الشریعت ہوگیا۔ پس اس تعریف کے رو سے بھی ہمارے مخالف ملزم ہیں کیونکہ میری وحی میں امر بھی ہیں اور نہی بھی ۔... اور ایسا ہی اب تک میری وحی میں امر بھی ہوتے ہیں اور نہی بھی...
এটাও তো বোঝ যে, শরীয়ত কাকে বলে? যিনি নিজের ওহীর মাধ্যমে কিছু আদেশ-নিষেধ বর্ণনা করেন এবং নিজের উম্মতের জন্য একটি বিধান নির্ধারণ করে দেন তিনিই শরীয়তের অধিকারী হয়ে গেলেন। অতএব এই সংজ্ঞার আলোকেও আমার প্রতিপক্ষ ফেঁসে যায়। কেননা আমার ওহীতে আদেশও আছে এবং নিষেধও।... আর তেমনিভাবে এখন পর্যন্ত আমার ওহীতে আদেশও থাকে এবং নিষেধও।... -আরবাঈন নম্বর ৪, পৃ. ৬; রূহানী খাযায়েন ১৭/৪৩৫, ৪৩৬
দেখুন, মির্যা সাহেব এখানে স্পষ্টভাবে নিজেকে শরীয়তের অধিকারী সাব্যস্ত করছেন। (প্রবন্ধকার)