সফর ১৪৪২   ||   অক্টোবর ২০২০

প্রিয় তালিবানে ইলম!
অল্প সময় বাকি এর খুব কদর করুন

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِي مِنْ نِعْمَةٍ، أَوْ بِأَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ، فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.

আল্লাহ তাআলার শোকর- মাদরাসাগুলো খুলে গিয়েছে। প্রায় ছয় মাস পর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমাদের ওয়াতানে (وطن) ফিরে আসার তাওফীক দিয়েছেন।

فَاللّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، وَلَكَ الشُّكْرُ.

প্রিয় বন্ধুগণ! শিক্ষাবর্ষের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চলে গেছে। এখন যদি আমরা অবশিষ্ট সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন না করি, আরো ক্ষতিগ্রস্ত হব। এজন্য বছরের মাঝখানে আরম্ভ হওয়া শিক্ষাবর্ষের শুরুতে প্রিয় তালিবানে ইলমের প্রতি আমার নিবেদন হল, আমরা অত্যন্ত ইনহিমাকের সঙ্গে দরস, মুতালাআ, তাকরার ও খালেস ইলমী কাজসমূহে লেগে যাব। সবধরনের অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় এবং অন্যান্য ব্যস্ততা থেকে বেঁচে থাকা আমাদের সবসময়ের কর্তব্য; আর এই শিক্ষাবর্ষে এটি আরো  বেশি জরুরি। এখন তো আমাদের সময়ের একটি বড় অংশ লাগ্ব’ (لَغْو)-এর দখলে চলে গেছে। অথচ কুরআনে কারীমে সূরা মুমিনূনে মুমিনদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যই বলা হয়েছে এটি-

وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ.

অর্থাৎ মুমিন তো সে, যে অহেতুক বিষয় থেকে বিরত থাকে। -সূরা মুমিনূন (২৩) : ৩

যখন সাধারণ মুমিনের বৈশিষ্ট্য এমন হওয়া কাম্য তখন তালিবে ইলমের হালত কী হওয়া উচিত?

প্রিয় বন্ধুগণ! পেছনের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আপনাদের জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হল, আপনারা এই হাদীস শরীফের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিজেদের মধ্যে ধারণ করবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ.

ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হল অনর্থক কাজ পরিহার করা। -মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ১৩৭১; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩১৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৯৭৬

এ সময়ে তালিবে ইলমদের জন্য যেসব জিনিস সবচে বেশি অহেতুক তন্মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল, আমাদের বেফাক ও হাইআতে না বলা ভালো এমন যেসব অবস্থা বিরাজ করছে সেগুলোকে আলোচনার বিষয়বস্তু বানানো এবং এতে নিজেদের যবান ও কলম ব্যবহার করা।

প্রিয় বন্ধুগণ! মেহেরবানী করে আপনারা এ থেকে বিরত থাকুন। নিজেদের কাজে লেগে যান। এই বিশৃঙ্খলা ও পেরেশানি আপনার আলোচনার বিষয় নয় এবং চিন্তা-ভাবনারও বিষয় নয়। এর জন্য তো নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছেন। তারা নিশ্চয় এসব বিষয়ে ভাবছেন। এছাড়া যারা সচেতন মুদাররিসীনে কেরাম আছেন তারাও দায়িত্বশীলদের চিঠি-পত্রের মাধ্যমে এ বিষয় স্মরণ করাতে পারেন। প্রয়োজনীয় মশওয়ারাও দিতে পারেন। হাঁ, এক্ষেত্রে আমাদেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য আছে; সম্ভবত আমাদের খুব কম সাথী তা আদায়ের কথা ভাবেন। সেটি হল, অধিক পরিমাণে তওবা-ইসতিগফার করা, দুআ ইউনুস পাঠ করা এবং দুআ কবুলের সময়গুলোতে দুআর  ইহতিমাম করা। সকল তালিবে ইলমের এ অনুভতি হওয়া উচিত যে, এই সবকিছু হয়তো আমার গুনাহের কারণে হচ্ছে। বড়দের উপর দ্বীনী বিষয়ে যে মসিবত আসে, অনেক সময় তা হয় ছোটদের ত্রæটির কারণে। আমি অনেক দূরে, বাহ্যত আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাও এটা সম্ভব যে, আমার কোনো গুনাহের কারণেই অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেল। তাই এখন আমাদের একমাত্র কাজ হল নিজেদের আমল-আখলাকের ইসলাহের বিষয়ে যতœবান হওয়া এবং ইলমী ও দরসী কাজগুলোতে মগ্ন থাকা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন- আমীন।

আশা করি কেউ ভুল বুঝবেন না। আমি কোনো মুনকারকে সমর্থন করছি না। একথাও বলছি না যে, মুনকারের উপর নাকীর করার প্রয়োজন নেই। আমি শুধু বলছি, সব মুনকারের উপর নাকীর করা সবার কাজ নয়। তাছাড়া শরীয়ত তো নাহী আনিল মুনকারের কিছু নিয়ম-নীতি এবং কিছু আহকাম ও আদাব দিয়েছে। সেগুলো রক্ষা করাও জরুরি।

সুতরাং মাদরাসার তালিবুল ইলম ভাইদের ভাবা উচিত, প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলোর কোন্ মুনকার দূর করার জন্য শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে সরাসরি তাদের অংশগ্রহণ জরুরি। অর্থাৎ এমন কোন্ মুনকার, যা দূর করায় অংশগ্রহণ না করলে তাদের ফরয তরক হয়ে যাবে! যদি বাস্তবে এমন কোনো কাজ ফরযে আইন হয়েও যায় তাহলে সেই ফরয আদায় করার পদ্ধতি কী হবে? এমন তো নয় যে, নেক মাকসাদ হাসিল করার জন্য তরীকা সহীহ হওয়া জরুরি নয়। মনে রাখবেন-

الغاية تبرر الوسيلة.

-এটা জাহেলিয়তের কায়েদা। জানা কথা, শরীয়তের নীতি এমন নয়; বরং তরীকা সহীহ হওয়াও শরীয়তে জরুরি।

একথাও মনে রাখতে হবে যে, মুনকারের মধ্যে এমন বিভাজন নেই যে, মুনকার কাজ অমুকের থেকে প্রকাশ পেলে মুনকার, অমুকের থেকে প্রকাশ পেলে মুনকার নয়। কিংবা কেউ যখন অমুকের মুনকারের উপর নাকীর করল তখন তার নিজের সকল মুনকার বৈধ হয়ে গেল।

আবার কখনো এমন দেখা যায়, এখন যিনি বা যারা নাহী আনিল মুনকার করছেন তিনি বা তারা যখন কোনো পদে নিযুক্ত হন তখন আর নিজের মাঝে কিংবা নিজের আশপাশে কোনো মুনকারই দেখতে পান না। এটাই বা কেমন! তাছাড়া এটাও কি ভাববার দরকার নেই যে, আমি কি নাহী আনিল মুনকার করছি, না পরিচালিত হচ্ছি!

যাইহোক, চিন্তা করার মতো এমন অনেক কিছুই রয়েছে। সংক্ষেপে যেকথা বলা যায় তা হল, মুনকার তরীকায় নাহী আনিল মুনকার শরীয়তে পছন্দনীয় নয়।

তবে এই মুহূর্তে আমার এ লেখার প্রধান মুখাতাব হলেন সেইসকল তালিবুল ইলম ভাই, যারা এখন নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়াশোনায় রত আছেন এবং কোনো না কোনো মাদরসায় দাখেলা নিয়ে পড়াশোনা করছেন। আমি তাদেরকে বলতে চাই, আপনারা মেহেরবানী করে খালেস ইলমী মাশগালায় মগ্ন থাকুন। তাওবা ইস্তিগফার, তিলাওয়াত ও দুআ-যিকিরের প্রতি গুরুত্ব দিন। আল্লাহ তাআলা আপনাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করে নিন- আমীন।

যিলকদ ১৪৪১ হি. সংখ্যায় প্রিয় তালিবানে ইলম! সুস্থতা ও অবসরের কদর করুন।এই শিরোনামে বান্দা তলাবায়ে কেরামের প্রতি যেসব নিবেদন করেছিলাম, তন্মধ্যে অনেক বিষয় এমন, যেগুলো সর্বদাই খেয়াল রাখার মত। আশা করি, তালিবে ইলম ভাইগণ সেই লেখাটি অবশ্যই পড়বেন এবং অধমকে তাদের দুআয় শামিল রাখবেন।

 

-দুআপ্রার্থী

বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

২০-০১-১৪৪২ হিজরী

বুধবার

নজরে ছানী

০২-০২-১৪৪২ হিজরী

রবিবার

 

 

advertisement