সফর ১৪৪২   ||   অক্টোবর ২০২০

ওযর শেষ হয়ে যাওয়ার পর সাধারণ হুকুম অনুযায়ী আমল করা জরুরি
পুরুষের জন্য মসজিদে জামাতের সাথে ফরয নামায আদায় করার গুরুত্ব ও ফযীলত

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

فَاِذَا اطْمَاْنَنْتُمْ فَاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ، اِنَّ الصَّلٰوةَ كَانَتْ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ كِتٰبًا مَّوْقُوْتًا.

অতঃপর যখন তোমরা নিরাপত্তা বোধ করবে তখন সালাত যথারীতি আদায় করবে। নিশ্চয়ই সালাত নির্ধারিত সময়ে মুমিনদের এক অবশ্যপালনীয় কাজ। -সূরা নিসা (৪) : ১০৩

এই ইরশাদে রব্বানী সূরায়ে নিসার ১০৩ নম্বর আয়াতের শেষাংশ। আয়াতটি সালাতুল খাওফের বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে। তবে আয়াতের এই অংশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হল, যখন আপতিত পরিস্থিতি এবং ওযরের হালাত শেষ হয়ে যায় তখন নামায স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী যথাযথভাবে আদায় করা জরুরি। কেননা নামায হচ্ছে মুমিনের উপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরয বিধান। যার সময়ও নির্দিষ্ট এবং পদ্ধতিও নির্ধারিত।

ফরয নামাযের ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য শরীয়তের বিধান হচ্ছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা। কোনো শরয়ী ওযর ব্যতীত মসজিদের জামাত তরক করা জায়েয নেই। কাছাকাছি কোনো মসজিদ না থাকলে চেষ্টা করবে যেন একাকী নামায আদায় করতে না হয়; বরং দু-চার জন মিলে জামাত করে নেবে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

لَقَدْ رَأَيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنِ الصَّلَاةِ إِلَّا مُنَافِقٌ قَدْ عُلِمَ نِفَاقُهُ، أَوْ مَرِيضٌ، إِنْ كَانَ الْمَرِيضُ لَيَمْشِي بَيْنَ رَجُلَيْنِ حَتَّى يَأْتِيَ الصَّلَاةِ.

আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, নামায (-এর জামাত) থেকে পিছিয়ে থাকত কেবল এমন মুনাফিক, যার নিফাক স্পষ্ট ছিল অথবা অসুস্থ ব্যক্তি। তবে আমরা অসুস্থদেরকেও দেখতাম, দুই ব্যক্তির কাঁধে ভর করে তারা নামাযের জন্য চলে আসত। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৮৫

হযরত ইবনে মাসউদ রা. আরো বলেন-

إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَّمَنَا سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الْهُدَى الصَّلَاةَ فِي الْمَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَّنُ فِيهِ.

নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হেদায়েতের তরীকাগুলো শিখিয়েছেন। হেদায়েতের এই তরীকাসমূহের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যেখানে আযান হয় সেখানে নামায আদায় করা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৮৫

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এ-ও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কাল (হাশরের ময়দানে) মুসলিমঅবস্থায় আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে চায় তার উচিত এই নামাযগুলো মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করা।

(مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللهَ غَدًا مُسْلِمًا، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلَاءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ)

তারপর তিনি বলেন-

فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُنَنَ الْهُدَى، وَإِنَّهُنَّ منْ سُنَن الْهُدَى، وَلَوْ أَنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا الْمُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ، لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ لَضَلَلْتُمْ.

কেননা আল্লাহ তোমাদের নবীর জন্য হেদায়েতের পথ সুনির্ধারিত করে দিয়েছেন। আর এই নামাযগুলো মসজিদে জামাতের সাথে আদায় করা এই হেদায়েতের পথসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যদি তোমরা ঘরে নামায পড়তে থাক যেভাবে পিছিয়ে থাকা লোক (মুনাফিক) ঘরে নামায আদায় করে তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর পথ ছেড়ে দিলে। আর নবীর পথ ছেড়ে দিলে তো তোমরা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৮৬

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

صَلاَةُ الجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً.

অর্থাৎ একাকী নামায পড়া অপেক্ষা জামাতে নামায আদায় করা সাতাশ গুণ বেশি ফযীলতপূর্ণ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪৭৫

হযরত উবাই ইবনে কাব রা. বর্ণনা করেন-

صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا الصُّبْحَ، فَقَالَ: أَشَاهِدٌ فُلَانٌ، قَالُوا: لَا، قَالَ: أَشَاهِدٌ فُلَانٌ، قَالُوا: لَا، قَالَ: إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ، وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا، وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ، وَإِنَّ صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ، وَصَلَاتُهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ، وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالَى.

একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ফজরের নামায পড়ালেন। অতঃপর বললেন, অমুক কি এসেছে? সাহাবীগণ বললেন, না। জিজ্ঞাসা করলেন, অমুক কি এসেছে? সাহাবীগণ বললেন, না। নবীজী বললেন, নিঃসন্দেহে ফজর এবং ইশা এই দুই নামায মুনাফিকদের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর। যদি তোমরা জানতে এতে কী (পুণ্য ও কল্যাণ) রয়েছে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এর জামাতে উপস্থিত হতে।

আর প্রথম কাতার ফিরিশতাদের কাতারের মর্যাদাতুল্য। যদি এর ফযীলতের ব্যাপারে তোমরা জানতে তাহলে তাতে জায়গা গ্রহণের জন্য আগেভাগে চলে আসতে।

একাকী নামায পড়া অপেক্ষা দুই ব্যক্তির নামায অধিক উত্তম (পুণ্য ও ফযীলতের কারণ)। দুই ব্যক্তি অপেক্ষা তিন ব্যক্তির নামায অধিক উত্তম। জামাতে উপস্থিতির সংখ্যা যত বাড়তে থাকে আল্লাহ তাআলার নিকট তা তত প্রিয়। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫৫৪; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৮৪৩

অনেক সহীহ হাদীসে এই ফযীলতও এসেছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি ঘর থেকে উত্তমরূপে ওযু করে মসজিদের উদ্দেশে রওয়ানা হয় তাহলে প্রত্যেক কদমে তার একটি মরতবা বুলন্দ হয় এবং একটি গুনাহ মাফ হয়। মসজিদে প্রবেশ করার পর যতক্ষণ সে নামাযের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ তা নামাযে গণ্য হতে থাকে। আর নামায শেষ করার পর যতক্ষণ সে ওযু অবস্থায় সেই স্থানে বসে থাকে ফিরিশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকে- আয় আল্লাহ! আপনি তাকে মাফ করে দিন। আয় আল্লাহ! আপনি তার উপর রহম করুন। আয় আল্লাহ! আপনি তার তওবা কবুল করুন। (সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৫০৪, ১৫১৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৬২৩)

কোনো ওযর ব্যতীত জামাত তরক করা যে কত বড় অন্যায় শুধু এই হাদীস থেকেই তা অনুমিত হতে পারে। সুনানে ইবনে মাজাহ-এ সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. উভয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বরে ইরশাদ করতে শুনেছেন-

لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الْجَمَاعَاتِ، أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ، ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الْغَافِلِينَ.

অর্থাৎ যারা জামাতে উপস্থিত হচ্ছে না তারা যেন এ কর্ম থেকে অবশ্যই নিবৃত্ত হয়। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর সেঁটে দেবেন। অতঃপর তারা এমন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে, যারা (দ্বীন ঈমানের ব্যাপারে) উদাসীন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৭৯৪

মসজিদে জামাতে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচে বড় ওযর হল শঙ্কা-ভীতি এবং অসুস্থতা। এই দুই ওযরের বিবেচনায় বিগত দিনগুলোতে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে এমন অনেকেই ঘরে নামায পড়তে শুরু করেছেন, যারা মাশাআল্লাহ মসজিদে নিয়মিত নামায পড়তে অভ্যস্ত ছিলেন। যতদিন ওযর ছিল ততদিন এতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু যখন ভয়ের সেই পরিস্থিতি নেই এখন সুস্থ ব্যক্তি এবং বড় কোনো বিশেষ রোগে আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তির জন্য মসজিদে জামাতে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সংশয় থাকা উচিত নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুস্থ ব্যক্তিদের জন্য মসজিদে উপস্থিতির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরও মসজিদে মুসল্লীগণের উপস্থিতি সাবেক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না। নিঃসন্দেহে এ অবস্থা সংশোধনযোগ্য।

বাস্তব কথা তো এই, মসজিদগুলোতে কেবল পূর্বের চিত্র ফিরে আসাই যথেষ্ট নয়; বরং আগে যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে মসজিদে আদায় করতে অভ্যস্ত ছিলেন না, তাদেরও এখন এর ইহতিমাম করা উচিত। কোনো যৌক্তিক ওযর ব্যতীত মসজিদের জামাত থেকে পিছিয়ে থাকার অভ্যাস করে নেওয়া কবীরা গুনাহের শামিল। এজন্য আমাদের কর্তব্য হল, জামাতে নামায আদায় করার খুব বেশি ইহতিমাম করা এবং অন্যদেরকেও মসজিদে উপস্থিত হওয়ার দাওয়াত দেওয়া।

আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, মুআযযিন ছাহেব আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আহŸানকারী। আর আযান হচ্ছে, সরাসরি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি মসজিদের জামাতে হাজির হওয়ার দাওয়াত। অতএব যিনি মসজিদে উপস্থিত হন তিনি আল্লাহ তাআলার এই দাওয়াতে লাব্বাইক বলেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই সৌভাগ্য নসীব করুন- আমীন।

 

কাতারে কীভাবে দাঁড়াবেন?

জামাতের নামাযে কাতারের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীয়তের সাধারণ বিধান হচ্ছে কাতার সম্পূর্ণ সোজা হবে। দুই কাতারের মাঝে এক কাতার ফাঁকা রাখা তো দূরের কথা, প্রতি কাতারে দুই জনের মাঝে ফাঁকা জায়গা রাখাও নিষেধ। এক মুসল্লী অপর মুসল্লীর সাথে মিলে মিলে দাঁড়ানো এবং মাঝে কোনো ফাঁকা না রাখাই হচ্ছে মূল বিধান। এটা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। কিন্তু আল্লাহ পাক রহমানুর রাহীম এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাঠিয়েছেন রাহমাতুল্লিল আলামীন বানিয়ে। ওযরের বিবেচনায় বিভিন্ন বিধানে তারা রুখছত তথা ছাড় দিয়ে রেখেছেন। রুখছতের সেই মূলনীতির আলোকে উলামা-মাশায়েখ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কোনো আপত্তি করেননি, যা স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমে জারি করা হয়েছে। কিন্তু আলহামদু লিল্লাহ, অবস্থা যখন ভালো হতে থাকল, দেখা গেল, অনেক মসজিদে মুসল্লীগণ প্রায় আগের মতোই মিলে মিলে দাঁড়াচ্ছেন। পক্ষান্তরে কোনো কোনো মসজিদে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির সেই শুরুর দিককার মতো অবস্থা বলবৎ রাখা হয়েছে। অথচ অধিকাংশ মানুষই দেখা যাচ্ছে, জীবনের অন্যসব ক্ষেত্রে এখন আর শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো জরুরত অনুভব করছে না।

সঠিকভাবে কাতারবদ্ধ হওয়া এবং কাতারের মাঝে কোনো ফাঁকা না রাখার ব্যাপারে খাতামুন নাবিয়্যীন হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু হাদীস স্মরণ করিয়ে দেওয়া মুনাসিব মনে হচ্ছে :

১. হযরত জাবির ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে তাশরীফ আনলেন। বললেন-

أَلَا تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ تَصُفُّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ: يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الْأُوَلَ وَيَتَرَاصُّونَ فِي الصَّفِّ.

তোমরা কি সেভাবে কাতারবদ্ধ হবে না, যেভাবে ফিরিশতাগণ তাদের রবের সামনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়? আমরা আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ফিরিশতাগণ তাদের রবের সামনে কীভাবে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়? বললেন, তারা প্রথম কাতারগুলো পূর্ণ করে এবং কাতারে পরস্পর খুব মিলে মিলে দাঁড়ায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৬৭

২. হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

سَوُّوا صُفُوفَكُمْ، فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ .وفي لفظ: مِنْ تَمَامِ الصَّلَاةِ.

তোমরা কাতার সোজা করে নাও। কেননা কাতার সোজা করা নামাযের অংশ। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭৪

৩. হযরত আনাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

رُصُّوا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوا بَيْنَهَا وَحَاذوا بِالْأَعْنَاقِ، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ.

তোমরা কাতারে খুব মিলে মিলে দাঁড়াও। কাতারগুলোকে নিকবর্তী করে করে প্রস্তুত কর। (অর্থাৎ দুই কাতারের মাঝে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফাঁক রেখো না।) পরস্পরে ঘাড়ে ঘাড় মিলিয়ে দাঁড়াও। আল্লাহর কসম, আমি দেখি, কাতারের (ফাঁকা জায়গাগুলোর) মাঝে শয়তান ছোট বকরির মতো প্রবেশ করে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৭; সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৮১৪

৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَقِيمُوا الصُّفُوفَ وَحَاذوا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ.

তোমরা কাতার সোজা করে নাও এবং নিজেদের কাঁধগুলোকে মিলিয়ে নাও। ফাঁকা স্থানগুলো পূর্ণ করে নাও। (কাতার পূর্ণ অথবা সোজা করার জন্য) নিজের ভাইয়ের হাতে নরম হয়ে যাও। শয়তানের জন্য মাঝে কোনো ফাঁকা রেখো না। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৬

নিজের ভাইয়ের হাতে নরম হয়ে যাও’ -এর অর্থ হল, কাতার সোজা করার জন্য বা পূর্ণ করার জন্য মুসল্লীদের পক্ষ থেকে বা ইমাম-মুআযযিনের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা আসে তা সহজে গ্রহণ করে নেওয়া।

আশা করি, মাসআলার হাকীকত এবং গুরুত্ব বোঝার জন্য এ কয়টি হাদীসই যথেষ্ট হবে, ইনশাআল্লাহ।

هذا، وصلى الله تعالى وبارك وسلم على سيدنا ومولانا محمد خاتم النبيين لا نبي بعده، وعلى آله وأهل بيته الأطهار، ورضي الله تعالى عن صحابته الأخيار، وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

 

আরযগুযার

বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

২৩ মুহাররম, ১৪৪২ হিজরী, শনিবার

 

 

advertisement