দিলের গভীরে ইলমে ইলাহীর গুরুত্ব গেঁথে নিন
[আলহামদু লিল্লাহ, আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়, আজ এ মুহূর্তে হযরত আমাদের এখানে তাশরীফ রেখেছেন। আমরা হযরতের খেদমতে বসতে পেরেছি। বাস্তব কথা হল, বর্তমানে হযরতের অস্তিত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অনেক বড় নিআমত।
দারুল উলূম দেওবন্দের যে মাকাম ও মর্যাদা এবং অবস্থান ও ভাবমূর্তি আমাদের আকাবিরের যামানা থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে এই তাওয়ারুছকে ধরে রাখা তো প্রত্যেক যামানার যারা ওয়ারিছ হবে তাদেরই যিম্মাদারী। তবে যেসকল হযরতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা দারুল উলূমের ‘মাকাম ও ওয়াকার’কে সত্য ও বাস্তবতার উপর প্রতিষ্ঠিত রেখেছেন (আল্লাহ তাআলা এই দুই বৈশিষ্ট্যকে কিয়ামত পর্যন্ত কায়েম দায়েম রাখুন।) এবং যেসকল হযরতের কারণে এখনও সেই ছিফাত কায়েম দায়েম রয়েছে তাদের মাঝে হযরতের অবস্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এজন্য হযরতের অস্তিত্ব আমাদের জন্য অত্যন্ত গনীমত এবং বড় নিআমতের বিষয়। আল্লাহ তাআলা সুস্থতা, সক্ষমতা ও নিরাপত্তার সাথে হযরতের দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন- আমীন।
আজ আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয় যে, হযরত থেকে আমরা ইস্তিফাদা করার সুযোগ পাচ্ছি, হযরতের নিকট একটি দরখাস্ত- সাথীরা হযরত থেকে হাদীস শরীফের ইজাযত প্রত্যাশা করছে। তো বয়ানের পর যদি ‘ইজাযত’ পাওয়া যায় তবে তা আমাদের জন্য খুবই সৌভাগ্যের বিষয় হবে।
-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
১৪ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৪১ হিজরী মোতাবেক ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ঈসাব্দ, রবিবার
স্থান : মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা, হযরতপুর প্রাঙ্গণ]
হামদ ও ছানার পর :
হযরত আসাতেযায়ে কেরাম ও আযীয তলাবা! যখন আমরা আসাতেযা ও তলাবা দুটি শব্দ বলে থাকি তখন আমাদের উদ্দেশ্য এই হয় না যে, আমরা দুটি আলাদা শ্রেণি; বরং আমরা সবাই তালিবে ইলম। ব্যস, এতটুকু যে, কেউ সিনিয়র আর কেউ জুনিয়র।
দ্বীনের ভিত্তিই হল ইলমে ওহী
বন্ধুরা! দ্বীন-ইসলামের একমাত্র ভিত্তি হল ইলমে ওহী। ইসলামের চর্চা ও বিকাশ এবং এর সূত্র ও উৎস সবকিছুর মূল হচ্ছে ইলমে ওহী। আপনারা সবাই জানেন, উসূলে ফিকহের ভাষায় ওহী বলতে মাতলূ ও গায়রে মাতলূ উভয়টি বোঝায়। অর্থাৎ ওহী বলতে কুরআন ও হাদীস উভয়টিই উদ্দেশ্য।
আপনারা বুখারী শরীফ পড়েন। ইমাম বুখারী রাহ. তাঁর সহীহ বুখারীতে প্রথম বাব কায়েম করেছেন-
كَيْفَ كَانَ بَدْءُ الوَحْيِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ؟
-এই শিরোনামে। চিন্তা করুন, তিনি সর্বপ্রথম এই অধ্যায় কেন নির্বাচন করলেন? মূলত এর মাধ্যমে তিনি এদিকেই ইঙ্গিত করতে চাইছেন যে, পুরো দ্বীনের ভিত্তিই হল ওহী ইলাহী। তাই ওহীর আলোচনাই সর্বপ্রথম হওয়া চাই।
ওহী ইলাহী, চাই মাতলূ হোক কিংবা গায়রে মাতলূ, কুরআন হোক কিংবা হাদীস, উভয়টিই এসেছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে। মাতলূ এবং গায়রে মাতলূ-এর পার্থক্য অত্যন্ত বিস্তৃত। তবে সারকথা হল, উভয়টিই ওহী ইলাহী। কুরআনে কারীমের আয়াত-
وَ مَا یَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰی .اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْیٌ یُّوْحٰی.
[সে তার নিজ খেয়াল খুশি থেকে কিছু বলে না। এটাতো কেবলই ওহী, যা তার কাছে পাঠানো হয়। -সূরা নাজ্ম (৫৩) : ৩, ৪] -এ এ কথার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
মতন ও শরহ-এর পারস্পরিক সম্পর্কের ধরন ও বিবরণ তো আপনাদের ভালোভাবেই জানা আছে। শরহ (ব্যাখ্যা) সর্বদা মতনের (মূল পাঠের) অনুগামী হয়। মতন থেকে শরহ ভিন্ন কিছু নয়; বরং তারই ব্যাখ্যা মাত্র। মতনকে শরহের মাধ্যমে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাই না! তো কুরআন ও হাদীসের পারস্পরিক সম্পর্ক তো এমনই।
যাইহোক, কুরআন ও হাদীস হল ওহী ইলাহী। আর এই ওহী ইলাহী হাছিল করাই হল আমাদের মূল উদ্দেশ্য। আর কুরআন-হাদীস বুঝার জন্য আমাদেরকে নাহব-ছরফ, লুগাত-বালাগাত ইত্যাদি বিষয়গুলোও পড়তে হয়, শিখতে হয়। কেননা কুরআন-হাদীসই হল মূল ইলমে ইলাহী।
এই ইলমের গুরুত্ব কত!
এই ইলম, যার সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার সাথে এবং যা নাযিল হয়েছে সরাসরি রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে সেই ইলমের ফাওয়ায়েদ ও ফাযায়েল কেমন হতে পারে! দুনিয়ার কোনো কিছু কি তার সমকক্ষ হতে পারে! আপনি লক্ষ করুন, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম করছেন-
قُلْ رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا.
[(হে নবী!) আপনি (এভাবে) বলুন, হে আমার রব! আপনি আমার ইলম বাড়িয়ে দিন। -সূরা ত্বহা (২০) : ১১৪] অর্থাৎ আপনি আমার নিকট ইলমের আধিক্য প্রার্থনা করুন। অন্য কোনো ব্যাপারে এরকম হুকুম আসেনি যে, সেই বিষয়ের আধিক্যের জন্য আমার নিকট আপনি দরখাস্ত করুন। কিন্তু ইলমের আধিক্যের জন্য দরখাস্ত করার কথা আল্লাহ তাআলা নিজেই শিখিয়ে দিচ্ছেন-
قُلْ رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا.
আয় আমার রব! আপনি আমার ইলমকে বাড়িয়ে দিন।
এখন আপনিই চিন্তা করুন, এই ইলম কত গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান একটি বিষয়! একদিকে এর সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহ তাআলার সাথে; আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে নাযিলকৃত ওহী। অপরদিকে তিনি নিজেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুকুম করছেন, আপনি আমার নিকট এই ইলমের আধিক্যের জন্য দুআ করুন। ধন-সম্পদ, রাজত্ব-হুকুমত, সন্তান-সন্ততি কোনো কিছুর ব্যাপারে আধিক্যের প্রার্থনা করতে হুকুম করা হয়নি। হুকুম করা হয়েছে, ইলমের আধিক্যের জন্য দুআ করতে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, এই ইলম কত মহান!
নিজের মাঝে ইলমের গুরুত্ব জাগ্রত করুন
আচ্ছা, আরো সামনে চলুন। একটি স্বতঃসিদ্ধ নীতি হচ্ছে, যে বিষয় যত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে সেই বিষয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ, আকাক্সক্ষা ও গুরুত্ববোধ তত প্রবল হয়ে থাকে। এটা ব্যক্তির স্বভাবজাত প্রবণতা। কোনো জিনিসকে যদি আপনি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং তার প্রতি যদি আপনার আগ্রহ-আকাক্সক্ষাও থেকে থাকে, সেই জিনিস অর্জনে আপনার প্রত্যাশা ও তার প্রাবল্য কি সেই পরিমাণ হবে, যেমনটি হয়ে থাকে অন্যান্য ক্ষেত্রে? এ দুইয়ের মাঝে আসমান-যমিন ব্যবধান হবে না! বরং দুইয়ের মাঝে তো কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না। উপরন্তু যে বিষয়ে আপনার গুরুত্ব ও আগ্রহ নেই, এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে যদি আপনার মুরব্বীর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে যে, এটা অর্জন করার চেষ্টা করবে, তখন উল্টো তবিয়তে চাপ পড়ে, মন মস্তিষ্ক প্রভাবিত হয়।
আমি আমার প্রিয়দের বলে থাকি, তোমরা হৃদয়ে ইলমের গুরুত্ব ও মহত্ব জাগ্রত কর। এটা খুবই জরুরি একটি বিষয়। উস্তাযগণেরও কর্তব্য হচ্ছে, ছাত্ররা যখন আসবে তখন তাদের সাথে উলূমে নবুওত তথা কুরআন-হাদীসের ইলমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বার বার মুযাকারা করবেন। খুব ভালোভাবে তাদেরকে বুঝাতে থাকবেন। তাদের অন্তরে যদি ইলমের গুরুত্ব গেঁথে যায়, তাহলে কেল্লা ফতেহ। তখন আপনাদেরকে আর এত কষ্ট-মেহনত করতে হবে না। এতসব নেগরানী তদারকি করারও প্রয়োজন পড়বে না।
এখন তো বিস্তর ব্যবধান। আমরা আমাদের দিকে তাকাই। আমাদের যমানার আলিম তালিবে ইলমদের প্রতি লক্ষ্য করি। আর হযরাতে তাবেঈন, মুহাদ্দিসীনে কেরাম, ফকীহ ইমামগণের জীবনী পড়ি- তখন কোনো মিল খুঁজে পাই না। বিস্তর ফারাক মনে হয়। তাঁদের বাহ্যিক গাফলতও আমাদের চূড়ান্ত মনোযোগ অপেক্ষা অনেক অনেক অগ্রসর ছিল। তাঁরা ইলম হাছিলের পথে যে পরিমাণ কষ্ট, মুজাহাদা ও পেরেশানী বরদাশত করেছেন আমরা তা কল্পনাও করতে পারি না। তাদের কষ্টের সেই বিবরণ যদি প্রথম দিনই আপনাদের শুনিয়ে দেওয়া হত তাহলে আপনারা মাদরাসা ছেড়ে পালাতেন। কে বরদাশত করবে এত কষ্ট!
কিতাব খুলে পড়ে নিন সেগুলো! দেখে নিন তাঁদের বৃত্তান্ত! খুব বেশি না, আপনি হিম্মত করে ‘কিতাবুল জারহি ওয়াত তা‘দীলের’ মুকাদ্দিমাটা পড়ে নিন। এতটুকু পড়লে আরো হিম্মত হবে। তখন আপনি আরো পড়বেন। এতে আপনি দেখবেন যে, আমাদের আসলাফ-আকাবির ইলম হাছিলের জন্য কী পরিমাণ কষ্ট স্বীকার করেছেন! ইমাম আবু হাতেম রাযী রাহ. তো বলেন, ইলম হাছিলের জন্য সফর করতে করতে আমার বহু বার (সঠিক সংখ্যা আমার মনে নেই) রক্ত-পেশাব হয়েছে। এখন তো এসিতে বসে কাজ করতেও আমাদের কষ্ট অনুভূত হয়! অপরদিকে আমাদের আসলাফ ইলমের জন্য কত কষ্টসাধ্য সফর করছেন! মাথায় কিতাবের বিরাট বিরাট পাণ্ডুলিপির বোঝা নিয়ে পায়ে হেঁটে চলছেন! উত্তপ্ত আবহাওয়া এবং সীমাহীন কষ্ট! পেশাব হচ্ছে, তো তা হচ্ছে রক্তের মতো! তবুও তাঁরা দমে যাননি। আর আমরা এখন তালীম হাছিল করছি সিটের উপর শুয়ে বসে!
বন্ধুরা আমার, আমার একটাই কথা। নিজের মাঝে ইলমের গুরুত্ব পয়দা করুন। যদি এর গুরুত্ব আপনার দিলে বসে যায় তাহলে আপনার পিছনে উস্তাযকে লেগে থাকতে হবে না। আপনি নিজ তাগিদেই দৌড়ঝাঁপ করতে থাকবেন।
আমি প্রথমেই যে কথাটি বলেছি, এই ইলমের সম্পর্ক সরাসরি আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলার সাথে। ইমাম বুখারী রাহ. সর্বপ্রথম এ অধ্যায় নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলতে চাইছেন- বৎস, দ্বীন ইসলামের মূল উৎস এবং মূল সূত্র হচ্ছে এই ওহী ইলাহী। এই ওহী ইলাহীকেই আজ আমরা উলূমে হাদীস, উলূমে কুরআন বলে ব্যক্ত করে থাকি। তো এই ইলমের কত মর্যাদা! যদি এর মর্যাদা ও গুরুত্ব আমাদের অন্তরে বসে যায় তখন তা হাছিলের জন্য আপনি নিজ থেকেই সব ধরনের কষ্ট স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়ে যাবেন।
তাঁদের থেকে আমরা এত দূরে! কেন?
কোনো কাজের ফল ও ফসল যদি কারো সামনে থাকে তখন সে কাজের প্রতি তার আগ্রহ ও উদ্যম সৃষ্টি হয়। একজন কৃষক রোদে কত পোড়ে, বৃষ্টিতে কত ভেজে, কত কষ্ট করে! কেন? কারণ সে জানে, আমি যদি কষ্ট করি তাহলে কাক্সিক্ষত ফসল পাব। তো আপনিও এই ইলমে ইলাহীর ফল ও ফসলের কথা চিন্তা করুন। এতে আপনার মাঝে ইলমের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ইলমের প্রতি যদি একবার আগ্রহ সৃষ্টি হয় তখন আসানীর সাথে সামনের সকল স্তর অতিক্রান্ত হতে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
দেখুন, তারাও মানুষ ছিলেন, আমরাও মানুষ। তারাও নিজেদেরকে তালিবে ইলম-তালিবে হাদীস পরিচয় দিতেন আমরাও তালিবে ইলম-তালিবে হাদীস বলে নিজেদের পরিচয় দেই। তাহলে তাঁদের কর্ম ও আচরণের সাথে আমাদের কর্ম ও আচরণের তো কিছু হলেও মিল থাকা চাই! কিন্তু কোথায় সেই মিল?! পার্থক্য হল, তাঁদের দিলে ইলমের গুরুত্ব গেঁথে গিয়ে ছিল। তাই তা হাছিল করতে তাঁরা সর্ব প্রকারের কুরবানী করে গেছেন।
আজ আমাদের মাঝে ইলমের গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। আমাদের এমন কত তালিবে ইলম রয়েছে, যারা বাধ্য হয়ে পড়তে এসেছে! তাদের দিল এখনও ইলম হাছিল করতে প্রস্তুত হয়নি। কিন্তু মা-বাবা বলে দিয়েছেন, না পড়লে ঘরে জায়গা নেই। তাই মাদরাসায় পড়ে আছে। তো যখন বাধ্য হয়ে কাজ করছে তাহলে মেহনত করবে কীভাবে?! এখন সামান্য কষ্ট হলেই বলে দেয়, আমি আর পড়তে পারব না। কিন্তু অন্তরে যদি ইলমের জন্য তড়প ও আগ্রহ থাকত তাহলে বলত, হাজার কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি; আমাকে তো কাক্সিক্ষত বিষয় হাছিল করতেই হবে। মৌলবী ছাহেবরা! বুঝতে পেরেছেন- মূল সমস্যাটা কিন্তু এখানেই।
উস্তাযের প্রতি শ্রদ্ধা কমছে কেন?
পূর্বেকার তালিবে ইলমদের মাঝে উস্তাযগণের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও মহব্বত-ভালবাসার যে প্রগাঢ় সম্পর্ক বিরাজ করত, তার ভিত্তিও ছিল এটি। অর্থাৎ তাদের অন্তরে ইলমের গুরুত্ব প্রোথিত ছিল। তারা ভাবত, প্রত্যাশিত গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি উস্তাযের মাধ্যমেই হাছিল করা সম্ভব। তাই তারা উস্তাযের যথাযথ কদর করত। এখন তো আমাদের দিলে ইলমের সেই গুরুত্ব নেই। আসাতেযা ও উলামার কদর কীভাবে করব?!
আমি আমার ছাত্রদের প্রায়ই বলে থাকি, তোমরা আকাবিরের জীবনী অধ্যয়ন কর। পূর্ববর্তী ফুকাহা-মুহাদ্দিসীনের হালাত মুতালাআ কর। বেশি বেশি মুতালাআ কর। উপলব্ধি জাগ্রত কর। যত বেশি পড়বে তোমার দিলে ইলমের গুরুত্ব তত বাড়তে থাকবে। যখন তোমার মাঝে ইলমের গুরুত্ববোধ জাগ্রত হবে তখন এর জন্য সকল প্রকার কষ্ট সহ্য করতে তুমি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
এখন এ কাজটিরই খুব প্রয়োজন। তালিবে ইলমদের মাঝে এই ওহী ইলাহী তথা উলূমে দ্বীনিয়ার গুরুত্ব জাগিয়ে তুলুন। ইলমে হাদীসের গুরুত্ব, ইলমে ফিকহের গুরুত্ব, ইলমে তাফসীরের গুরুত্ব পয়দা করুন। কেননা এগুলোই তো আমাদের উদ্দেশ্য। যখন এর গুরুত্ব জাগ্রত হবে তখন সকল সমস্যা ও পেরেশানীর অর্ধেক সমাধান এমনি এমনি হয়ে যাবে। এটা কর, সেটা কর ইত্যাদি এতকিছুর প্রয়োজন পড়বে না।
এখন উস্তাযগণ আমাদেরকে বলেন, ভাই, একশ হাদীস মুখস্থ করে শোনাও। বলতে বলতে আমরা মুখস্থ করি বটে। কিন্তু দুই মাস পর আবার ভুলে যাই। কেন? এর একটি বড় কারণ হল, সেই আগ্রহের কমতি। কেননা মানুষ যে বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বোধ করে তা বার বার আওড়াতে থাকে। আপনার মাঝে যদি ইলমে হাদীসের আকর্ষণ পয়দা হয়ে থাকত তাহলে তো আপনি দিনরাত তা নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। উস্তাদজীকে তখন আর বেত তাড়িয়ে বেড়াতে হত না।
বন্ধুরা আমার! আপনি যখন অন্তরে এর কদর ও মর্র্যাদা বসাবেন তখন অনিবার্যভাবে এর প্রতি এক ধরনের টান ও আকর্ষণ অনুভব করতে থাকবেন। আর মানুষের একটি প্রবণতা হল, যখন সে কোনোকিছুতে আকর্ষণ বোধ করে তখন তা হাছিলে সে ছোটাছুটি আরম্ভ করে। দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয়। এর জন্য যত ধরনের কষ্ট রয়েছে সব স্বীকার করতে প্রস্তুত হয়ে যায়।
এটাই হল তাঁদের সাথে আমাদের পার্থক্য। হযরাত আকাবির ফুকাহা-মুহাদ্দিসীন ইলমের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তাদের হালত ছিল- জীবন যায় যাক, কোনো পরওয়া নেই। আমাকে তো এ প্রত্যাশিত ইলম হাছিল করতেই হবে। আর আমাদের অবস্থা হল- সামান্য গরমও সওয়া যাবে না। একটু গরম বাড়লেই তালিবে ইলমদের হা-হুতাশ শুরু হয়ে যায়- এত কঠিন গরম পড়েছে। আমরা এখন কীভাবে পড়ব! অথচ আসলাফ-আকাবির ইলমের জন্য জান কোরবান করতেও প্রস্তুত ছিলেন। আর আমরা সামান্য গরম বরদাশত করতে প্রস্তুত নই! বলুন, এই বিস্তর ব্যবধান কেন সৃষ্টি হল? এজন্যই যে, আমাদের দিলে তাঁদের মতো ইলমে দ্বীনের সেই আযমত ও গুরুত্ব জাগ্রত নেই। এটাই হল মূল কারণ। এজন্য সর্বপ্রথম অন্তরে ইসলামী উলূম বিশেষ করে কুরআন ও হাদীসের গুরুত্ব ও আযমত পয়দা করুন। তারপর আপনি নিজ গরজেই তা হাছিলে অগ্রসর হতে থাকবেন। বুঝতে পেরেছেন!
আমরা খুব সহজেই ইলম পেয়ে যাচ্ছি, তাই এর কদর কম
মানুষের একটি স্বভাব-প্রবণতা হল, যে জিনিস যত সহজে সে পেয়ে যায় তার প্রতি তার আকর্ষণ তত হ্রাস পায়। চাই তা যত মূল্যবানই হোক না কেন। আপনার সুস্থতা ও জীবন ধারণের জন্য আলো, বাতাস, পানি ইত্যাদি নিআমতগুলো কত প্রয়োজনীয়! পক্ষান্তরে সোনা-রুপা, হীরা-মানিক এগুলো কতটুকু দরকার! আপনার পেটে খাবার নেই। কিন্তু সাথে দশ কুইন্টাল স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে। তাতে কি আপনার পেট ভরে যাবে? কখনই না। কিন্তু আমাদের হালত হল, যেহেতু এ আলো বাতাস পানি মুফতে পেয়ে গেছি তাই এর কদর আমাদের কাছে নেই। আর সোনা-রুপা যেহেতু কম পাওয়া যায় তাই এখন এর কদর হয়ে গেছে। তাই না! তো যেই বস্তু যত সহজে লাভ হয় তার গুরুত্ব তত হ্রাস পায়।
আপনি চিন্তা করুন, এই ইলমে হাদীস হাছিলের জন্য আকাবির মুহাদ্দিসগণ কত মেহনত করেছেন! মাস পেরিয়ে গেছে, মাছ খাওয়া হয়নি। হঠাৎ একদিন শায়েখ অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তাই দরস হবে না। তো হাতে কিছু সময় পাওয়া গেল। চিন্তা করলেন- আমরা মাছ কিনে রান্না করে খাই। সে মতে মাছ কিনেও আনা হল। এর মধ্যে আরেক মুহাদ্দিসের সন্ধান পাওয়া গেল। ব্যস, সব রেখে চলে গেলেন তাঁর সান্নিধ্যে। চার-পাঁচ দিন এভাবে মাছ ঘরে পড়ে ছিল। এমন কোনো ফুরছতই মিলেনি যে, মাছটি ধুয়ে রান্না করে খাবেন। সেখানে আমাদের এখানকার মতো এত গরম ছিল না। শীতপ্রধান অঞ্চল ছিল। বাধ্য হয়ে কাঁচা মাছ খেয়ে নিয়েছেন। তো তাঁরা রান্না করে খাওয়ার সময় পেতেন না। এত কষ্ট করে ইলম হাছিল করেছেন। আজকের মতো এমন ব্যবস্থাপনা তো তখন ছিল না।
এখন তো মাদরাসা কায়েম হচ্ছে। কত ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে! তাই আপনি খুব সহজেই ইলম পেয়ে যাচ্ছেন। একদিকে চিন্তা করা হয়েছে, এত কষ্ট করতে হলে কে আর ইলম হাছিল করতে আসবে? কেউ তো আসবে না। তাই আমাদের জন্য ব্যবস্থাপনা সহজ করা হয়েছে। এখন যখন সহজ হয়ে গেছে তো এর প্রতিক্রিয়া হল, সুবিধা বেড়েছে তো দিল থেকে ইলমের আযমতও কমে গেছে। তাই এখন আসলাফের সাথে আমাদের আকাশ-পাতাল ব্যবধান চোখে পড়ছে।
আমি দিলের একটি দরদ নিয়ে ফিরছি
আমাদের ছাত্র যামানা আর বর্তমান যামানা; মাঝে কতটুকুই বা ব্যবধান! সত্তর-আশি বছর! কিন্তু এর মাঝেই আসমান-যমিনের ফারাক দেখতে পাচ্ছি। কারণ কী? কারণ একটাই, আমাদের যত সুবিধা বাড়ছে আমাদের দিল থেকে ইলমের কদর তত কমছে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এবং বড়দের এ বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।
যেখানেই যান, কেবল একটাই অভিযোগ- তালিবে ইলমদের মাঝে তলব নেই। তলব কীভাবে পয়দা হবে? আগে তো মাদরাসাগুলোতে নমুনা পাওয়া যেত। এখন তো সেই নমুনাও পাওয়া যায় না। ইনসান বনে ইনসান দেখে। হরফ তো কেবল আলামত মাত্র। নতুবা মানুষ তো গড়ে মানুষ দেখে। এখন সেই আদর্শ-নমুনা কমতে যাচ্ছে। এখন তো জানি না, ছাত্ররা কী কী ফিকির মাথায় নিয়ে ঘোরে?! এমনিতেই তো যামানা নবুওত-কাল থেকে যত দূরে সরবে হেদায়েত থেকেও দূরে সরতে থাকবে। কিন্তু আমাদের তো চেষ্টা থাকতে হবে, কীভাবে অধঃপতনের এ ধারা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা যায়।
আপনারা হয়ত ভেবেছেন আমি ইলমে হাদীসের উপর কোনো বক্তব্য রাখব। কিন্তু এর জন্য আমি বিলকুল প্রস্তুত নই। এখানে তো বড় বড় মুহাদ্দিস রয়েছেন। তাদের থেকে আপনারা ফয়েয হাছিল করবেন। আমি দিলে যে দরদ নিয়ে ফিরছি, আমার যেহেনে তো শুধু সে কথাই ঘুরপাক খেতে থাকে। আমি যেখানে, যে মাদরাসাতেই যাই না কেন, কেবল একথাই বলে থাকি- আমরা পড়ছি বটে, কিন্তু তলবে ইলমের যে হালত হওয়া দরকার আমাদের মাঝে তা কেন পাওয়া যাচ্ছে না? এ বিষয়টা আপনারা চিন্তা করুন। যেখানেই যাই, তালিবে ইলমদের মজলিসে আমি একথাই বলতে থাকি। তাদের সামনে আমার যেহেনে কেবল এ বিষয়টিই ঘুরতে থাকে। উলূমে হাদীসের পরিচয়, ছহীহ কাকে বলে, হাসান কাকে বলে, যঈফ কাকে বলে, শায কাকে বলে, মা‘রূফ কাকে বলে, এগুলো তখন আমার মাথায় আসে না। এগুলো তো আপনারা আসাতেযায়ে কেরাম থেকে প্রতিনিয়ত শুনতেই থাকেন।
আমার তালিবে ইলমানা দরখাস্ত!
আমি এসকল মুরব্বিয়ান ও আসাতেযার সামনে নিজেকে একজন মামুলি তালিবে ইলম মনে করি। বন্ধুরা আমার, ইনাদের সামনে কোনো ইলমী আলোচনা পেশ করার দুঃসাহস আমার নেই। আমি তো কেবল আপনাদের মতোই একজন তালিবে ইলম। ব্যস, আপনারা জুনিয়র আর আমি সিনিয়র। এ হিসাবে নসীহা ও হিতাকাক্সক্ষার ভিত্তিতে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের খেদমতে পেশ করছি- বন্ধুরা, অন্তরে ইলমের প্রতি গুরুত্ব ও আকর্ষণ পয়দা করুন। আর এ আকর্ষণ সৃষ্টি করার জন্য বড়দের জীবনী অধ্যয়ন করুন। মুহাদ্দিসীনে কেরামের হালাত মুতালাআ করুন। এ বিষয়ে পর্যাপ্ত কিতাব রয়েছে। বড়রা লিখে গেছেন সবকিছু। রিজাল ও তারাজিমের কিতাব রয়েছে, সেগুলো পড়ুন।
বিশেষ করে শুরুর যামানায় ইসলামী উলূম সংকলিত হওয়ার পূর্বেকার আকাবিরের জীবনী পড়ুন। ইসলামী উলূম-ফুনূন যখন গ্রন্থবদ্ধ হতে আরম্ভ করে তখন অনেক মুরব্বী তা অপছন্দ করেছিলেন। হযরত ইবরাহীম নাখাঈ রাহ.-এর কথা আপনারা পড়েছেন। আরো অন্যান্য মুরব্বীগণও এটা অপছন্দ করেছেন। তাদের বক্তব্য ছিল, এভাবে ইলম গ্রন্থবদ্ধ হতে থাকলে মানুষ কিতাবের উপর ভরসা করে বসে থাকবে। ইলম হাছিল করার সেই আগ্রহ ও জযবা তখন কমে যাবে। কিন্তু কী করার, এর প্রয়োজনও তো ছিল।
যেমন ধরুন, বর্তমানে কম্পিউটারের প্রচলন শুরু হয়েছে। অনেক আকাবির এর বিরোধিতা করেন। কারণ কম্পিউটার-নির্ভর হয়ে যাবে তো স্বনির্ভরতা আপনা-আপনিই কমে যাবে! আপনি পার্থক্য দেখুন- যখন থেকে টেলিফোনের ব্যাপক প্রচলন আরম্ভ হয়েছে। এখন মানুষ চিঠি লিখতে পারে না। বড় শিক্ষিত হয়ে যায় কিন্তু চিঠি লেখার শিল্প তার আয়ত্ত থাকে না। বড়দের কীভাবে খেতাব করতে হয়, ছোটদের প্রতি কীভাবে লিখতে হয়, সমবয়সী বন্ধুদের কীভাবে সম্বোধন করতে হয়- এ শিল্প তার রপ্ত থাকে না। বিদ্বান তো বনে যায় ঠিক, কিন্তু চিঠি লেখার রীতিনীতি জানা থাকে না। কেন এই অবস্থা? এক টেলিফোন এসে শেষ করে দিয়েছে। এখন চিঠি লেখার সেই শিল্প কি আছে?!
তো সুযোগ-সুবিধা যত বাড়ছে, মনে হচ্ছে তালীম আরো সহজ হবে। কিন্তু এই সুযোগে তালিবে ইলমদের মেযাজ ও তবিয়তে গুরুত্বহীনতার যে প্রভাব পড়ার তাও পড়ছে। এখন আমাদের সমন্বয় করতে হবে। যামানা হিসাবে তো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আবার এটার যে নেতিবাচক দিক রয়েছে তাও নিয়ন্ত্রিত করতে হবে; নিঃশেষ তো করা যাবে না, নিয়ন্ত্রিত করতে হবে। তবে তা কীভাবে করবেন? আসাতেযা কেরামের জন্য তাই এখন ভাববার বিষয়!
আমি কেবল একটি কথাই বলতে চাই
ব্যস, আমি কেবল একটা কথাই বলতে চাই- দিলের গভীরে এই ইলমের মর্যাদা ও গুরুত্ব গেঁথে নিন। আর এর পদ্ধতি এটাই- এ পথে যাঁরা গত হয়েছেন তাঁদের জীবনী মুতালাআ করুন। বিশেষ করে সেসকল বুযুর্গের হালাত পড়ুন, হাদীস সংকলনের পূর্বে যাঁরা ইলমে হাদীস শিখেছেন।
আপনারা তো শুনেছেন- ইলম খুবই গায়রতওয়ালা। তুমি তোমার সর্বস্ব না দেওয়া পর্যন্ত সে তোমাকে সিকিটুকু দেবে না। বন্ধুরা! এটা কেবলই তাঁদের মুখের কথা ছিল না; বাস্তব জীবনে তাঁরা তা বাস্তবায়ন করে গেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. উত্তরাধিকার সূত্রে কত সম্পত্তি পেয়েছিলেন! কিন্তু এর সবগুলো তিনি খরচ করে দিয়েছেন ইলম হাছিলের পথে। লুগাত শিখতে কিছু খরচ করেছেন আর ফিক্হ শিখতে ব্যয় করেছেন কিছু। এভাবে পুরো সম্পত্তি নিঃশেষ করেছেন ইলম হাছিলের জন্য। তো তাঁরা যে বলতেন, ইলম অত্যন্ত গায়রতওয়ালা তুমি তাকে তোমার সবটুকু না দেওয়া পর্যন্ত সে তোমাকে দেবে না। একথা তাঁরা কাজে পরিণত করে তবেই বলেছেন। তো এই মহান আসলাফের জীবনী অবশ্যই মুতালাআ করুন।
আমি আছরের পরের সময়ের জন্য পাঁচ-ছয়জন তালিবে ইলম নির্বাচন করে নিই। তাদেরকে বলে দিই, অমুক অমুক কিতাব মুতালাআ করবে। অমুক অমুক বুযুর্গের জীবনী অধ্যয়ন করবে। তারপর সপ্তাহে এক দিন তাদেরকে নিয়ে বসি। জিজ্ঞাসা করি, এই কয়দিন কী কী পড়লে? এগুলো পড়ে তোমার ভেতর কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে?
এভাবে যদি মাদরাসাগুলোতে কিছু তলাবা বাছাই করে রাহবারী করা যায় তাহলে প্রতি বছর একটি জামাত তৈরি হতে থাকবে। আকাবিরের হালাত পড়লে চেতনা জাগ্রত হয়। পূর্বসূরিদের কাজ থেকে উত্তরসূরিরা অনুপ্রাণিত হয়। তাই সেই বড়দের জীবনী, সেই মুহাদ্দিসীনের জীবনী, সেই ফুকাহার জীবনী জরুর বিজ- জরুর মুতালাআ করুন। দেখুন, ইলম অর্জনের পথে তাঁরা কত কষ্ট বরদাশত করেছেন! পানি পাননি; রাস্তায় বেহুঁশ পড়ে থেকেছেন! একটু পড়ে দেখুন না সেগুলো! আর নিজেকে সেই আয়নায় একটু পরখ করুন! মাদরাসার মাতবাখে একদিন রুটি কম সেঁকা হয়েছে, খাবারে গড়মিল হয়েছে তো হাঙ্গামা শুরু হয়ে যায়। আর ওখানে খাবারই মিলছে না। ক্ষুধায় মারা যাচ্ছেন! কেন এই পার্থক্য? কেন এই ব্যবধান? কারণ একটাই, আমরা জানিই না, কীভাবে ইলম হাছিল করতে হয়? যাঁরা হাছিল করেছেন, কীভাবে করেছেন? দ্বিতীয়ত সেই ইলমের প্রতি আগ্রহ ও আকর্ষণও নেই আমাদের মাঝে। তো এগুলো যদি আপনি মুতালাআ করে থাকেন তাহলে আপনার মাঝে আগ্রহ পয়দা হবে, ইলমের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হবে। তখন এ পথে যত মুশকিলাত সামনে আসবে সব তুচ্ছ মনে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন। আমার অন্তরে উলূমে দ্বীনিয়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে দিন। উপস্থিত আসাতেযা-তালাবাকেও আল্লাহ পাক সে তাওফীক নসীব করুন -আমীন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين.
তরজমা : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর
পত্রস্থকরণ : মুহাম্মাদুল্লাহ মাসুম