একটি ভিত্তিহীন কাহিনী
জান্নাতে মূসা আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গী কে?
মূসা আলাইহিস সালাম যেহেতু কালীমুল্লাহ অর্থাৎ তিনি আল্লাহ্র সাথে কথা বলেছেন, ফলে মূসা আ. ও আল্লাহ্র কথোপকথন শিরোনামে অসতর্ক বক্তাদের মাধ্যমে সমাজে প্রচুর ভিত্তিহীন কিসসা-কাহিনী প্রচলিত আছে। সেগুলোরই একটি-
মূসা আ. একবার আল্লাহকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহ! আমার হাশর হবে কার সাথে? আল্লাহ বললেন, এক কসাইয়ের সাথে। মূসা আ. জিজ্ঞাসা করলেন, সে কোথায় আছে? আল্লাহ বললেন, অমুক বাজারে। তখন মূসা আ. ঐ বাজারে গেলেন এবং কসাইকে দেখলেন- সারাদিন গোস্ত বিক্রির পর কিছু গোস্ত নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছে।
মূসা আ. তার পিছেপিছে গেলেন এবং তাকে বললেন, আমি আজ আপনার মেহমান হতে চাই। সে রাজি হল। তখন মূসা আ. দেখলেন, বাড়িতে গিয়ে সে প্রথমে তার বৃদ্ধা মাকে গোসল করাল এবং গোস্ত রান্না করে খাওয়াল। তখন তার মা তার জন্য দুআ করলেন- আল্লাহ্! আমার ছেলের হাশর যেন এই যামানার নবীর সাথে হয়। এটা শুনে মূসা আ. হাসলেন। কসাই বলল, আমি প্রতিদিন যথাসাধ্য আমার মায়ের খেদমত করার চেষ্টা করি। আর আমার মা প্রতিদিন আমার জন্য এই দুআ করেন।
কেউ কেউ এভাবেও বলেন, মূসা আ. আল্লাহকে বললেন, আল্লাহ! জান্নাতে কে আমার সঙ্গী হবে- তাকে আমি দুনিয়াতেই দেখতে চায়। তখন জিবরীল আ. এসে বললেন, অমুক কসাই। ...
...তার মা কী যেন বলল! মূসা আ. তা বুঝতে পারলেন না। যুবককে জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি প্রতিদিন আমার মায়ের খেদমত করি আর মা আমার জন্য দুআ করেন- ‘আখেরাতে আল্লাহ যেন তোমাকে মূসা আ.-এর সঙ্গী বানান!’
অবশেষে মূসা আ. যুবককে বললেন, তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর; আল্লাহ তোমার মায়ের দুআ কবুল করেছেন। জান্নাতে আমার সঙ্গী কে- আমি আল্লাহ্র কাছে দুনিয়াতেই তাকে দেখার আবদার করেছি। তখন তোমার নামই বলা হয়েছে। আমি তোমার বিশেষ কোনো আমল পাইনি মায়ের খেদমত ছাড়া। মায়ের খেদমতের এমনই পুরস্কার!
মায়ের খেদমতের ফযীলত বলতে গিয়ে এ কিসসাটি বলা হয়। কিন্তু এর কোনো সনদ পাওয়া যায় না। মাফাতীহুল জিনান-এ কিসসাটি উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু সনদবিহীন। আর বাস্তবে এর কোনো সনদ খুঁজেও পাওয়া যায় না। এটি গল্পকার বা অসতর্ক বক্তাদের বানানো কিসসা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
যাইহোক, মায়ের খেদমত বিষয়ে প্রচুর আয়াত-হাদীস রয়েছে। মায়ের খেদমতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার জন্য সেগুলোই বলা উচিত। এজাতীয় ভিত্তিহীন কিসসা-কাহিনী বলা সমীচীন নয়।