বড়দের দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
মানুষের জীবন পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে মানুষের জীবননদী নতুন বাঁক নেয়। পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে মনের মাঝে। তখন আমরা আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করি । পিছনের জীবনের হিসাব নিই। অসংখ্য মানুষ এমন আছেন, যাদের জীবনের দীর্ঘ একটা সময় জাগতিক জ্ঞান অর্জন, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরি ইত্যাদিতে কেটে যায়। পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতার দরুন দ্বীনের মৌলিক জ্ঞানটুকুও অর্জন করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। পারিবারিক অসচেতনতা, দ্বীন শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ না পাওয়া, কিংবা নিজের অবহেলা এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান কারণ।
জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর নিজের মাঝে নতুন উপলব্ধি জাগে। অতীত জীবনের উপর অনুশোচনা হয়। হয়ত কোনো আল্লাহওয়ালার সোহবতে কিংবা কোনো দ্বীনী মেহনতের বরকতে অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে । তখন দ্বীনী ইলম না শেখার উপর আক্ষেপ হতে থাকে মনের গভীরে। এই উপলব্ধি, আক্ষেপ ও অনুশোচনা একটি ইতিবাচক দিক, যা ব্যক্তিকে নিজের জীবন নতুনভাবে গড়ার এবং আলোকিত পথের পথিক হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। ভেতরে প্রেরণা যোগায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে দুঃখজনক একটি বাস্তবতা হল, মনের ভেতর উপলব্ধি ও অনুশোচনা জাগলেও এর উপর ভিত্তি করে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না। দ্বীনী জীবন গঠনে যতটুকু উৎসাহ দেখা যায় দ্বীনী শিক্ষা অর্জনে ততটুকু উৎসাহ দেখা যায় না।
দ্বীনী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
এ পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সবচেয়ে সম্মানিত করে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
وَ لَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِیْۤ اٰدَمَ.
আমি বনী আদমকে সম্মানিত করেছি। -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৭০
অন্যান্য প্রাণিজগত থেকে মানবজাতির রয়েছে স্বাতন্ত্র্য ও বৈশিষ্ট্য; যা মানুষকে মহিমান্বিত করে তুলেছে এবং অন্যান্যদের মাঝে বিশেষ মর্যাদা দান করেছে। অন্যান্য প্রাণি শুধু তাদের জীবন ও প্রাণ রক্ষার তাগিদে নিজের সমস্ত চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করে। জীবন ধারণের এ সহজাত বোধ ও প্রবণতাকে কেন্দ্র করে তাদের দিন-রাতের সমস্ত কর্ম আবর্তিত। তাদের জীবন থাকে নির্দিষ্ট স্বভাবের গণ্ডিতে বাঁধা। যার বৃত্ত থেকে কখনো তাদের উত্তরণ ঘটে না। কিন্তু মানুষ এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেবল জীবন ধারণ ও জীবন যাপন করাই মানুষের সৃষ্টির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নয়; বরং ইবাদাত তথা আল্লাহ তাআলার বন্দেগি করার জন্যই মানব জাতিকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে-
وَ مَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَ الْاِنْسَ اِلَّا لِیَعْبُدُوْنِ.
আমি সৃষ্টি করেছি জিন্ন ও মানুষকে এজন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। -সূরা যারিয়াত (৫১) : ৫৬
তাই আল্লাহর ইবাদত করা ও তাঁর হুকুম মেনে চলা মুমিন বান্দার মূল দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলার হুকুম জীবনের সমস্ত অঙ্গন জুড়ে পরিব্যাপ্ত। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন সবকিছুতেই রয়েছে আল্লাহ তাআলার হুকুম। একজন প্রকৃত মুমিন জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই আল্লাহর হুকুম লংঘন করে না। তাই কোন্ ক্ষেত্রে আল্লাহর কী আদেশ ও কী নিষেধ তা জানা একজন মুমিনের অবশ্যকর্তব্য। বুঝা গেল, দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা এমন কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, যা না শিখলেও হয়। বরং আমাদের সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্যই এ শিক্ষা আমাদের অর্জন করতে হবে।
দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের ফযীলত
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
یَرْفَعِ اللهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجٰتٍ.
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন বহুগুণ। -সূরা মুজাদালা (৫৮) : ১১
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلّمَ الْقُرْآنَ وَعَلّمَهُ.
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিক্ষা করে এবং শিক্ষা দেয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২৭
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا، سَهَّلَ اللهُ لَهُ بِهِ طَرِيقًا إِلَى الْجَنّةِ.
যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষার জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯
অন্য হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِي الدِّينِ.
আল্লাহ যার কল্যাণ চান তাকে দ্বীনের বুঝ দান করেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭১
অধিকাংশ সাহাবী দ্বীনী ইলম অর্জন করেছেন বয়স্ক অবস্থায়
বয়স বেশি হওয়া এমনকি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়াও দ্বীনী শিক্ষা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা নয়। সাহাবায়ে কেরাম হলেন সর্বপ্রথম ইলমে ওহী শিক্ষা গ্রহণকারী। নবুওতের পাঠশালার সর্বপ্রথম ছাত্র। তাঁদের বক্তব্য ও শিক্ষার আলোকেই আমাদের কুরআন-সুন্নাহ্ বুঝতে হয়। অথচ তাঁদের অধিকাংশই বয়স অনেক হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং দ্বীন শিখেছেন। নবীজীর পর এ উম্মতের সবচে বড় জ্ঞানী হলেন আবু বকর রা.। অথচ তিনি যখন নবীজীর সংস্পর্শধন্য হয়ে ইলম শেখা শুরু করেছেন তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৪০ বছর। এমনিভাবে ওমর রা., আবু যর রা., আবুদ দারদা রা., প্রমুখ উম্মতের সবচে জ্ঞানী এ মহামানবগণ ইলম শিখেছেন বয়স অনেক হয়ে যাবার পর। ইমাম বুখারী রাহ. হযরত ওমর রা.-এর এ বক্তব্য উল্লেখ করেছেন-
باب الاغتباط في العلم والحكمة وقال عمر : "تفقهوا قبل أن تسوَّدوا "..
তোমরা বয়স অধিক হওয়ার আগেই ইলম শিখে নাও।
সহীহ বুখারীতে ওমর রা.-এর এ বক্তব্য উল্লেখ করে ইমাম বুখারী রাহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন-
قال أبو عبد الله -يعني البخاري نفسه- : وبعد أن تسوّدوا، وقد تعلم أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم في كبر سنِّهم.
অর্থ্যাৎ বয়স বেশি হওয়ার পরও ইলম শিক্ষা কর। কারণ সাহাবায়ে কেরাম (অধিকাংশ) তো বয়স অধিক হওয়ার পরই দ্বীনী ইলম শিক্ষা করেছেন। -সহীহ বুখারী, পৃ. ৩৯
খোদ ওমর রা.-এর অবস্থাই দেখুন, বয়স হবার পরও কীভাবে তিনি দ্বীনী ইলম শিখেছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার এক আনসারী প্রতিবেশী পালাক্রমে নবীজীর কাছে যেতাম। সে একদিন থাকত। আমি একদিন থাকতাম। যেদিন আমি থাকতাম সেদিনকার ওহী ও অন্যান্য বিষয় আমি তাকে জানাতাম। আর যেদিন সে থাকত সেও অনুরূপ করত। (দ্র. সহীহ বুখারী, বর্ণনা ৮৯)
বড়দের দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম হতে পারেন আমাদের প্রেরণার উৎস।
বৈষয়িক সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করা জাগতিক শিক্ষা অর্জনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। ভালো একটা চাকরি পাওয়া, একটু সুখী জীবন লাভ করার জন্যই সাধারণত এ শিক্ষা অর্জন করা হয়। কিন্তু দ্বীনী শিক্ষা এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু পার্থিব জীবনই নয় পরকালীন জীবনের কল্যাণ লাভ করা এ ইলম অর্জনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, তাঁর হুকুম আহকাম জেনে সে অনুযায়ী জীবনযাপন, নবীজীর সুন্নতের অনুসরণ, ফেরেশতাদের দুআ-ইসতিগফার লাভ ইত্যাদি সবকিছুই ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার ফযীলত। আর যে কোনো মানুষই বোঝে, এ ফযীলত অর্জনের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। যে কোনো মানুষই ইলম শিক্ষা করার মাধ্যমে এ ফযীলতগুলো অর্জন করতে পারে।
قيل لأبي عمرو بن العلاء: هل يحسن بالشيخ أن يتعلم؟ قال: إن كان يحسن به أن يعيش فإنه يحسن به أن يتعلم.
আবু আমর ইবনুল আলা’কে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বৃদ্ধ বয়সে ইলম শিক্ষা করা কি উত্তম কাজ? তিনি উত্তরে বলেন, বেঁচে থাকাটা যদি তার জন্য উত্তম হয় তবে ইলম অর্জন করা কেন উত্তম হবে না! -আলফাকীহ ওয়াল মুতাফাক্কিহ, খতীব বাগদাদী, খ. ২, পৃ. ১৬৭
কোনো একজন আলেমকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, কতদিন পর্যন্ত মানুষকে শিখতে হবে? তিনি উত্তরে বলেন, মৃত্যু পর্যন্ত।
আমাদের ইতিহাস আলো করে আছে এমন অসংখ্য মহামানবদের ঘটনা, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যারা ইলম চর্চা করেছেন। ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তেও ইলমের মুযাকারা করেছেন। এরকম অসংখ্য নযীর আছে আমাদের ইতিহাসে।
পরিণত বয়সে দ্বীন শেখার কিছু ইতিবাচক দিক
কিছু বয়স হওয়ার পর দ্বীন শেখার ইতিবাচক দিক রয়েছে, যা ইলম অর্জনের জন্য অনেক সহায়ক। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই শিশু-কিশোর অভিভাবকদের চাপে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় দ্বীনী ইলম অর্জন করে। ভেতরের প্রেরণা, নিজের ইচ্ছা, ফযীলত অর্জন করার মানসিকতা অনেক ক্ষেত্রেই থাকে অনুপস্থিত। তবে একজন বয়স্ক ব্যক্তির দ্বীন শিক্ষা করার অবস্থা হয় এর থেকে ভিন্ন। বয়স্ক ব্যক্তির মনে দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের প্রেরণা সৃষ্টি হয় মনের ভেতর থেকে। সেখানে অন্যের পক্ষ থেকে চাপ কিংবা বাধ্যবাধকতারও কোনো ব্যাপার থাকে না; বরং সাধারণত ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে ইলম অর্জনের ফযীলত হাসিল করার জন্য এবং সহীহভাবে দ্বীনের উপর চলার জন্য দ্বীনী ইলম অর্জনে সচেষ্ট হয়। হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়েই ইলম অর্জনে নিমগ্ন হয়। তাই বয়স্ক ব্যক্তির অদম্য আগ্রহ, তীব্র বাসনা তাকে অনেক দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যায় লক্ষ্যপানে।
তাছাড়া একজন বয়স্ক ব্যক্তির বুঝ ও অনুধাবন শক্তি তীক্ষ্ম হয়ে থাকে। যে কোনো বিষয় অল্প সময়ে বোঝা ও অনুধাবন করা তার জন্য সহজ। ফলে দ্বীনের অনেক কিছুর বুঝ অল্প সময়েই তার অর্জন হয়, যা শেখাকে সহজ ও ত্বরান্বিত করে। সাথে সাথে বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে ইলম অনুযায়ী আমল করার সাওয়াবও অর্জিত হয়।
পড়াশোনার ক্ষেত্রে আগ্রহ ও পূর্ণ মনোযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগ্রহ ও মনোযোগ পূর্ণমাত্রায় থাকলে দীর্ঘ সময়ের পড়া অল্প সময়েই আয়ত্ত হয়ে যায়। পরিণত বয়সের একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে দ্বীনী শিক্ষা অর্জনের সময় এ আগ্রহ ও মনোযোগ সাধারণত পূর্ণ মাত্রায় থাকে, যা অল্প সময়ে তাকে অনেক এগিয়ে দেয়।
সালাফের জীবন থেকে কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
ইসলামের ইতিহাস আলো করে আছে এমন অসংখ্য মনীষী রয়েছেন, যাদের বয়স অনেক হয়ে যাওয়ার পর তাদের হৃদয়ে ইলম অর্জনের আগ্রহ জেগেছিল। এরপর নিরন্তর মেহনত ও অব্যাহত মুজাহাদার মাধ্যমে তারা ইলম অর্জন করেন এবং নিজেদের ও অন্যদের ইলমের আলোয় আলোকিত করেন। এমন কয়েকজন মনীষীর সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিম্নে তুলে ধরা হল।
আলী ইবনে হামযা
ইমাম কিসাঈ নামেই যিনি সমধিক প্রসিদ্ধ। ইলমে নাহুর প্রতিটি ছাত্র এই নামের মহান মানুষটির সাথে পরিচিত। আরবী ব্যাকরণশাস্ত্রে যার রয়েছে বিশাল অবদান। ইলমে কিরাআতেরও অন্যতম ইমাম তিনি। যে সাত কেরাতের কথা আমরা সবাই জানি, সে সাত কেরাতের এক কেরাত তাঁর দিকেই সম্পৃক্ত। তিনি বয়স অনেক হওয়ার পরই ইলমে নাহু শেখা শুরু করেছেন। আল্লামা কিফতী রাহ. বলেন-
انما تعلم الكسائي النحو بعد الكبر فلم يمنعه ذلك من ان برع فيه .
কিসাঈ বয়স অনেক হওয়ার পরই নাহু শেখা শুরু করেন। এ শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জনে অধিক বয়স তার জন্য বাধা হয়নি। -আমবাউর রুয়াত ২ / ২৭১
আবদুর রাহমান ইবনুল কাসেম
মালেকী মাযহাবের অন্যতম ইমাম। ইমাম মালেক রাহ.-এর সবচে কাছের ছাত্রদের অন্যতম। মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব আলমুদাওওয়ানাতুল কুবরার রচয়িতাও তিনি। মালেকী মাযহাবে মাশহুর রেওয়ায়েত বলতে উপরোক্ত গ্রন্থে ইবনুল কাসেম বর্ণিত ইমাম মালেক রাহ.-এর বক্তব্যকেই বুঝানো হয়। এ মহান মনীষীও ইলম শেখা শুরু করেছেন বয়স অনেক হওয়ার পর। কাযী ইয়ায রাহ. লিখেন-
قال ابن وضاح سمع ابن القاسم من المصريين والشاميين، وإنما طلب وهو كبير.
ইবনে ওয়ায্যাহ বলেছেন, ইবনুল কাসেম মিসর ও শামের উলামায়ে কেরাম থেকে ইলম অর্জন করেছেন। আর তিনি অনেক বয়স হওয়ার পর ইলম অণে¦ষণ শুরু করেন। -তারতিবুল মাদারিক ৩/২৪৮
আল্লামা ইবনে হাযম রাহ.
ইসলামের ইতিহাসে যারা অমর হয়ে আছেন তিনি তাদের অন্যতম। আল্লামা যাহাবী রাহ. তার ব্যাপারে বলেন-
ومن أشهر من ذكر عنهم الطلب بعد كبر السن ابن حزم الأندلسي.
বয়স হওয়ার পর যারা ইলম শেখা শুরু করেছেন তাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ হলেন ইবনে হাযম আন্দালুসী।
তার ইলমে ফিকহ অন্বেষণের সূচনা হয়েছিল বিশেষ একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে। ইবনে হাযম রাহ. নিজেই সে ঘটনা বলেছেন। একদিন তিনি এক জানাযায় শরিক হন। তখন এক মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়েন। এক ব্যক্তি তখন তাকে বলল, ওঠ, আগে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামায পড়। তখন তার বয়স ছিল ছাব্বিশ। তিনি তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যান। জানাযা শেষে ফিরে আসার সময়ও মসজিদে যান। এবার প্রবেশ করা মাত্রই নামায শুরু করে দেন। তখন তাকে বলা হল, আরে বস বস; এখন নফল নামায পড়ার সময় নয়। তখন ছিল আসরের পর। এ ঘটনাটি তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটে। এরপর থেকেই তিনি ইলম অর্জন শুরু করেন।
(মু‘জামুল উদাবা, ইবনে হাযম রাহ.-এর জীবনী)
ইয্যুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম
ইলমী আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সত্য কথন ও সাহসী উচ্চারণে প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব। আল্লামা ইবনে দাকীকুল ঈদ যাকে সুলতানুল উলামা (উলামা-সম্রাট) উপাধি দিয়েছেন। বাস্তবিক অর্থেই তিনি ছিলেন সম্রাটতুল্য একজন মানুষ। মানুষের হৃদয়জগতে তিনি ছিলেন সম্রাটের চেয়েও সম্মানিত। পরাক্রমশালী শাসকেরা পর্যন্ত মাথা নত করত তার সামনে। ইয্যুদ্দীন রাহ.-এর জানাযার খাট নিয়ে মানুষ যখন শাহী প্রাসাদের নিচ দিয়ে যাচ্ছিল তৎকালীন শাসক আলমালিকুয যাহির তখন বলেছিল-
আজ আমার রাজত্ব স্থিতিশীলতা লাভ করেছে। এই শায়েখ যদি জনগণকে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বলতেন তাহলে তিনি আমার থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নিতে পারতেন। -তবাকাতুশ শাফিইয়্যাতিল কুবরা ৮/২১৫
এই উলামা-সম্রাটও ইলম শেখা শুরু করেছেন বয়স অনেক হওয়ার পরে। তার জীবনীতে লেখা হয়েছে-
كان الشيخ عز الدين في أول أمره فقيرا جدا ولم يشتغل إلا على كبر.
ইয্যুদ্দীন রাহ. প্রাথমিক অবস্থায় খুবই গরীব ছিলেন। তিনি ইলম অর্জনে মাশগুল হয়েছেন অনেক বয়সে। -তবাকাতুশ শাফিইয়্যাতিল কুবরা ৮/২১৫
এগুলো তো গেল সালাফের যুগের ঘটনা। আমাদের এ যুগেও বয়স হওয়ার পর দ্বীনী ইলম অর্জনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে।
অতীত ও বর্তমানে বয়স্ক দ্বীনী শিক্ষার এত অসংখ্য নযীর রয়েছে যে তা নিয়ে আলাদা গ্রন্থ তৈরি হতে পারে। এসকল মানুষেরা আমাদের জন্য হতে পারেন প্রেরণার উৎস।
পরিণত বয়সে দ্বীন শেখার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা
বয়সকালে দ্বীন শেখার ক্ষেত্রে একটি চিন্তা অনেকের মনেই উঁকি দেয়। তা হল, বয়স একটু বেশি হয়ে গেলে কিছু আর মনে থাকতে চায় না। কোনো কিছু মুখস্থ করতে হলে অনেক সময় লাগে। এ চিন্তার বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। তবে এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই বলছি, মানুষ যখন কোনো কাজের হিম্মত করে তার জন্য শতভাগ চেষ্টা ব্যয় করে তখন সে কাজটি আল্লাহ তাআলা তার জন্য সহজ করে দেন। একটা উদাহারণ দেই। ইমাম কাফফাল শাশী। ফিকহে শাফেয়ীর অবিসংবাদিত ইমাম। আল্লামা সামআনী রাহ. তার ব্যাপারে লিখেছেন-
كان وحيد زمانه فقها وحفظا وورعا وزهدا، وله في المذهب من الآثار ما ليس لغيره من أهل عصره، وطريقته المهذبة في مذهب الشافعي التي حملها عنه أصحابه أمتن طريقة، وأكثرها تحقيقا، رحل إليه الفقهاء من البلاد، وتخرج به أئمة، ابتدأ بطلب العلم وقد صار ابن ثلاثين سنة، فترك صنعته، وأقبل على العلم.
তিনি ছিলেন জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মুখস্থশক্তি এবং তাকওয়া-পরহেযগারিতে যুগের অনন্য ব্যক্তি। ফিকহে শাফেয়ীর মধ্যে তার যে প্রভাব ও অবদান রয়েছে তা তার যুগের অন্য কারো ছিল না। বিভিন্ন দেশ থেকে ফকীহগণ ইলম অর্জনের জন্য তার উদ্দেশে সফর করতেন। তার হাতে অনেক ইমাম গড়ে উঠেছেন। এ মহান মনীষীও ইলম শেখা শুরু করেছেন ৩০ বছর বয়সে। ইলম শেখা শুরু করার পর তিনি তার পেশা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইলম অর্জনে নিমগ্ন হন। -সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৩/১৩০
আল্লামা সুবকী রাহ, তার ব্যাপারে লেখেন-
الإمام الزاهد الجليل البحر أحد أئمة الدنيا... كان قد ابتدأ التعلم على كبر السن بعدما أفنى شبيبته في صناعة الأقفال.
তিনি হলেন পৃথিবীবিখ্যাত ইমামদের অন্যতম। তালা বানানোর পেশায় যৌবন কাটিয়ে শেষ বয়সে তিনি ইলম অর্জনে নিমগ্ন হয়েছেন। (তবাকাতুশ শাফিইয়্যাতিল কুবরা, ৫/৫৪)
আল্লামা সুবকী রাহ. যাকে পৃথিবী বিখ্যাত ইমাম বলেছেন তিনি যে আসলেই কত বড় ইমাম ছিলেন তা বলাই বাহুল্য। এ মহান মনীষীর জীবনেও উপরে উল্লেখিত প্রতিবন্ধকতাটি এসেছিল এবং হয়ত তার মাত্রা আমাদের অনেকের চেয়ে বেশি ছিল। তবুও সে প্রতিবন্ধকতা দূর করে তিনি পৌছে গেছেন আকাশের সীমানায়।
ইলম শেখার আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথমে ‘র্মাও’ এলাকার একজন শায়েখের কাছে যান। তিনি তাকে কিতাবুল মুযানীর এ তিনটি শব্দ প্রথম দিন শেখান-
هذا كتاب اختصرته.
এ পাঠ গ্রহণ করে তিনি ছাদে চলে যান। এশা থেকে ফজর পর্যন্ত এ তিনটি শব্দই মুখস্থ করতে থাকেন। সারা রাত জেগে থাকার কারণে শেষ রাতে একটু চোখ লেগে আসে। তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সারা রাত ধরে কী পড়েছেন কিছুই মনে পড়ছে না। তিনি এ কথা ভেবে লজ্জিত হচ্ছিলেন যে, শায়েখকে আমি কী বলব। এ দুশ্চিন্তার মাঝেই হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। এমন সময় প্রতিবেশী এক মহিলা বলল-
আবু বকর! গতকাল রাতে هذا كتاب اختصرته বলে বলে তো সারা রাত আমাদের ঘুমাতে দাওনি।
মহিলার অভিযোগভরা কথার মাঝেই তিনি যেন খুঁজে পেলেন হারানো সম্পদ। শায়েখের কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন। শায়েখ তখন সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, এ কারণে যেন তোমার ইলম শেখার আগ্রহে ভাটা না পড়ে। কারণ তুমি যখন ইলম চর্চায় নিমগ্ন থাকবে এবং সবসময় মুখস্থ করতে থাকবে তখন তা তোমার অভ্যাসে পরিণত হবে।
শায়েখের কথা সত্যি হয়েছিল। কঠিন অধ্যাবসায় ও চেষ্টা-মুজাহাদার মাধ্যমে এমন দুর্বল মুখস্থশক্তির অধিকারী মানুষটিই হয়েছিলেন-
الإمام الزاهد الجليل البحر أحد أئمة الدنيا.
পৃথিবীবিখ্যাত ইমামদের অন্যতম প্রধান। ইলমের সাগর।
আমাদের মধ্যে এমন লোক ক’জন আছে, যে সারা রাত পড়ে মাত্র তিনটি শব্দও মুখস্থ করতে পারে না। তাই বড়দের দ্বীন শিক্ষার ক্ষেত্রে মুখস্থ না হওয়া কিংবা বুঝে না আসা- এ সমস্যার সমাধান একটাই- চেষ্টা, চেষ্টা এবং চেষ্টা।
একটা বাস্তবতা হলো, দুনিয়াবী বিভিন্ন চিন্তা ও ব্যস্ততায় জড়িয়ে থাকলে মানুষের মুখস্ত-শক্তি কমে যায়। ইলমের জন্য ফারাগাত (ব্যস্ততামুক্ত) ও ইনহিমাক (গভীর নিমগ্নতা) থাকা অত্যাবশ্যকীয় শর্ত। কেউ যখন পার্থিব ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে পূর্ণ নিমগ্নতার সাথে ইলম অর্জন করে আল্লাহ তাআলা তখন তার মেধা খুলে দেন। বয়স্করাও এর থেকে ব্যতিক্রম নন।
আসলে যদি দিলে সাচ্চা ইরাদা ও পোখতা হিম্মত থাকে তাহলে সব কঠিনকেই আল্লাহ তাআলা সহজ করে দেন। আর যদি শত চেষ্টার পরও মুখস্থ না হয় বা না বুঝে আসে তবুও এ চেষ্টার কারণে আল্লাহ তাআলা আজর ও সাওয়াব আমাদের দান করবেন।
বড়দের দ্বীন শিক্ষার দ্বারা এটা বুঝানো হচ্ছে না যে, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে এখনই মাদরাসায় ভর্তি হয়ে যেতে হবে; বরং প্রতিদিনের ব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় ফারেগ করে আমরা ইলম অর্জন করতে পারি। আমার পরিচিত একজনকে দেখেছি, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও প্রতিদিন একটু একটু কুরআন মুখস্থ করতে করতে তিনি হাফেয হয়েছেন। আমরাও চাইলে কুরআন মুখস্থ করতে পারি; হাফেয হওয়া সম্ভব না হলে অন্তত কিছু অংশ তো হিফয করতে পারি।
কুরআন বিশুদ্ধভাবে পড়তে শেখা ও প্রয়োজনীয় মাসআলাগুলো জানা- এটা তো একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের সবার দায়িত্ব। এর পাশাপাশি আরো কিছু দ্বীনী বিষয়ের জ্ঞানও উলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে শেখা যেতে পারে।
বয়স্কদের দ্বীনী শিক্ষার ব্যাপারে থানভী রাহ. বলেছেন, বর্তমানে লোকদের এত হিম্মত এবং সময়-সুযোগও নেই যে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে আলেম হবে। এজন্য দ্বীন শেখা ও শেখানোর এমন একটা সহজ পদ্ধতি বলে দিচ্ছি, যার দ্বারা সাধারণ মানুষ ইলম অর্জনের ফরয দায়িত্ব আদায় করে উভয় জাহানের সফলতা অর্জন করতে পারে। ইলম অর্জনের জন্য পাঁচটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে :
১. দ্বীনী বই-পুস্তক পড়া কিংবা অন্যকে দিয়ে পড়িয়ে শোনা।
২. পরিবারের লোকজনদেরকে নিজে পড়ানো কিংবা অন্যকে দিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা।
৩. উলামায়ে কেরাম থেকে বিভিন্ন বিষয়ে মাসআলা জিজ্ঞেস করা।
৪. ওয়াজ শোনা।
৫. বিশেষজ্ঞ আলেমদের সোহবতে থাকা।
দ্বীনী বই-পুস্তক পড়ার পদ্ধতি হল, যারা পড়তে পারে তারা ভালো কোনো আলেমের কাছে গিয়ে প্রতিদিন সবক হিসাবে কিছু কিছু পড়বে। যদি এমন কাউকে না পাওয়া যায় তাহলে নিজে নিজেই পড়তে থাকবে। কোথাও বুঝে না আসলে কিংবা অস্পষ্টতা থাকলে পেন্সিল দিয়ে তা দাগ দিয়ে রাখবে। পরবর্তীতে ভালো কোনো আলেমের কাছ থেকে জেনে নেবে। এভাবে যতটুকু ইলম অর্জন হতে থাকবে তা অন্যদেরকেও শেখাবে এবং নিজ ঘরের স্ত্রী-সন্তানদের কেও তালীম দেবে।
যারা পড়তে পারে না তারা পড়াশোনা জানে এমন কারো মাধ্যমে সেসকল কিতাব পড়িয়ে শুনবেন। এর জন্য কোনো খরচের প্রয়োজন হলে সবাই মিলে একটু একটু জমা করে তার ওযিফার ব্যবস্থা করবেন। দুনিয়ার প্রয়োজনে আমরা কত টাকা খরচ করি। দ্বীনের জন্য সামান্য ক’টাকা খরচ করা এমন কোনো কঠিন বিষয় নয়। তবে পড়ার ক্ষেত্রে নিজে নিজে কিতাব নির্বাচন করবে না; বরং আল্লাহওয়ালা ও যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো আলেমের সাথে পরামর্শ করে কিতাব নির্বাচন করতে হবে।
তৃতীয় বিষয় অর্থাৎ মাসআলা জিজ্ঞাসা করার পদ্ধতি হল, দ্বীনী বা দুনিয়াবী কোনো বিষয়ে যখন কোনো কাজ করার প্রয়োজন পড়বে এবং এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা জানা না থাকবে তখন সে ব্যাপারে অবশ্যই কোনো আল্লাহওয়ালা আলেম থেকে জিজ্ঞেস করে নিবে। তিনি যা বলে দেবেন তা ভালোভাবে মনে রাখবে এবং অন্যদেরকেও সে বিষয়টি জানাবে। যদি এমন আলেমের কাছে যাওয়ার সুযোগ না হয় তবে তার কাছে চিঠি লিখে সে সম্পর্কে জেনে নেবে।
দ্বীন শেখার এ পদ্ধতি কত সহজ। এ পদ্ধতিতে যদি কেউ দ্বীন শেখা অব্যাহত রাখে তাহলে তেমন কষ্ট ছাড়াই শেখা সম্ভব। -তুহফাতুল উলামা, ৪৩১
সাধারণ শিক্ষিত ও নানা পেশায় নিয়োজিত মুসলিমেরাও কীভাবে প্রয়োজনীয় দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করতে পারেন এ বিষয়ে দরদী উলামায়ে কেরামের ফিকির ও মেহনত অব্যাহত ছিল, এখনো আছে। আলহামদু লিল্লাহ, এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে ‘তালীমুদ্দীন একাডেমী’ নামে একটি নতুন ধারার দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
ছোট থেকে বয়স্ক সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দ্বীনী শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এটি। যারা দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণের জন্য নিয়মতান্ত্রিক মাদরাসায় পড়েননি বা পড়ার সুযোগ পান না, তারাও যেন ফরযে আইন পর্যায়ের দ্বীনী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন- সেজন্যই এ উদ্যোগ।
আলহামদু লিল্লাহ, এরই মধ্যে তালীমুদ্দীন একাডেমীর এই ধারা কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সর্বস্তরের সাধারণ মুসলমানদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
এছাড়াও অনেক আলেম বিভিন্নভাবে এ মেহনত করে যাচ্ছেন। আপনি চাইলে এগুলোতেও শরীক হতে পারেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের মনে দ্বীন শেখার আগ্রহ দান করুন এবং সকলকে তাওফিক দান করুন- আমীন।