শাওয়াল ১৪৪১   ||   জুন ২০২০

যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

অন্যকে ক্ষমা কর, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন

কিয়ামতের দিন বান্দার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন- আল্লাহর ক্ষমা। আল্লাহ যদি মাফ করে দেন, বান্দার আর কোনো চিন্তা নেই। তো বিশেষ কী আমল করলে বান্দা কাল কিয়ামতের কঠিন মুহূর্তে রাব্বে কারীমের ক্ষমা লাভ করতে পারে? কত আমলের কথাই তো আমরা জানি, কত আমলই তো আমরা করি; যাতে ক্ষমা পাই রাব্বে কারীমের! কিন্তু কোন্ আমলটি সবচেয়ে উত্তম, যার মাধ্যমে ক্ষমা লাভের আশা প্রবল?

হাঁ, একটি অতি কার্যকর আমল আছে, যার মাধ্যমে আশা করা যায়- বান্দাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন। আরবীতে একটি কথা আছে-আলজাযাউ মিন জিনসিল আমাল’, অর্থাৎ কর্ম যা, প্রতিদানও তার মাধ্যমে। সুতরাং ক্ষমা করাই ক্ষমা লাভের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও কার্যকরী উপায়। আমি যদি মানুষকে ক্ষমা করে দিই, তো আশা করা যায়- এর প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।

কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাঁর ক্ষমার প্রতি ধাবিত হওয়ার আহ্বান করেছেন; সেখানে ক্ষমা লাভকারীদের যে গুণাবলি উল্লেখ করা হয়েছে তার অন্যতম প্রধান হল, মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়া। ইরশাদ হয়েছে-

وَ سَارِعُوْۤا اِلٰی مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ  اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِیْنَ، الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الْكٰظِمِیْنَ الْغَیْظَ وَ الْعَافِیْنَ عَنِ النَّاسِ،   وَ اللهُ یُحِبُّ الْمُحْسِنِیْنَ.

তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে, যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য; যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালবাসেন। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৩-১৩৪

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

ارْحَمُوا تُرْحَمُوا، وَاغْفِرُوا يَغْفِرِ اللهُ لَكُمْ.

তোমরা (অন্যের প্রতি) দয়া কর, তোমাদের প্রতি দয়া করা হবে। তোমরা (অন্যকে) ক্ষমা কর, তোমাদেরকে ক্ষমা করা হবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭০৪১; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৩৮০

সূরা মুলক : যে সূরার সুপারিশে ক্ষমা লাভ হয়

সূরা মুলক। ঊনত্রিশ নাম্বার পারার প্রথম সূরা। সূরা নাম্বার ৬৭। জীবনের উদ্দেশ্য, আল্লাহর কুদরত ও নিআমতের স্মরণ, আখেরাতে জাহান্নামীদের অবস্থা ও তাদের আক্ষেপ ইত্যাদি বিষয় রয়েছে এ সূরাটিতে। অনেক ফযীলত সম্বলিত সূরা এটি। এ সূরাকে বলা হয়, ‘মানেআ-বাধাদানকারী, প্রতিবন্ধক। এ সূরাটি আমলকারীর জন্য কবরের আযাব থেকে প্রতিবন্ধক হবে। সুপারিশ করে বান্দাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে, জাহান্নাম থেকে প্রতিবন্ধক হবে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরাটি তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। জাবের রা. বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَنَامُ حَتّى يَقْرَأَ الم تَنْزِيلُ السّجْدَةَ، وَتَبَارَكَ الّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলিফ লাম মীম তানযীল আসসাজদা (সূরা সাজদাহ) ও তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক (সূরা মুলক)- এ দুই সূরা তিলাওয়াত না করে ঘুমাতেন না। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪৬৫৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫৪৫

অন্যান্য ফযীলতের সাথে সাথে এ সূরার একটি বিশেষ ফযীলত হল, এ সূরার আমলের মাধ্যমে ক্ষমা লাভ হয়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّ سُورَةً مِنَ القُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ

কুরআনে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে, তা এক ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করেছে ফলে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সূরাটি হল, তাবারাকাল্লাযি বিইয়াদিহিল মুলক-সূরা মুলক। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৮৯১; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৮৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৯৭৫

জামাতের উদ্দেশে পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন : গোনাহমাফির কারণ

ইতিপূর্বে লেখা হয়েছে-নামাযের জন্য মসজিদে গমন : কদমে কদমে গোনাহ মাফএই শিরোনামে। আর এখানে যে বিষয়টি লেখার ইচ্ছা তা হল, সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য পায়ে হেঁটে জামাতের নামাযে যাওয়া- এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল এবং ফযীলতের বিষয়। বিভিন্ন বর্ণনার ভাষা ও উপস্থাপন থেকে বিষয়টি উপলব্ধি করা যায়। ফলে পায়ে হেঁটে জামাতের নামাযে শরীক হওয়ার বিষয়টি আলাদা গুরুত্বের দাবি রাখে।

এক হাদীসে নামাযের দিকে হেঁটে যাওয়া প্রতিটি কদমকে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদাকা বলেছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

كُلّ خُطْوَةٍ تَمْشِيهَا إِلَى الصّلَاةِ صَدَقَةٌ.

নামাযের দিকে হেঁটে যাওয়া প্রতিটি কদম তোমার জন্য সদাকা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০০৯

আর এটি গোনাহমাফিরও কারণ। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

كَفّارَاتُ الْخَطَايَا، إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَإِعْمَالُ الْأَقْدَامِ إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصّلَاةِ بَعْدَ الصّلَاةِ.

পাপ মোচনকারী হল- কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদের দিকে পা সঞ্চালন, এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষা করা। (অর্থাৎ, আরেক

নামাযের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান।) -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৮

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহ তাআলা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে জিজ্ঞাসা করেন-

يَا مُحَمّدُ هَلْ تَدْرِي فِيمَ يَخْتَصِمُ المَلَأُ الأَعْلَى؟

হে মুহাম্মাদ! আপনি জানেন কি, ঊর্ধ্ব জগতের অধিবাসীরা কী নিয়ে বিবাদ করে?

একপর্যায়ে নবীজী উত্তরে বললেন-

فِي الكَفّارَاتِ، وَالكَفّارَاتُ المُكْثُ فِي المَسَاجِدِ بَعْدَ الصّلَاةِ، وَالْمَشْيُ عَلَى الْأَقْدَامِ إِلَى الْجَمَاعَاتِ، وَإِسْبَاغُ الوُضُوءِ فِي المَكَارِهِ.

তারা পাপমোচনকারী বিষয় নিয়ে বিবাদ করে। [অর্থাৎ এর ফযীলত নিয়ে অথবা এর সওয়াব নিয়ে আসমানে আরোহণ বিষয়ে বিবাদ করে। -মিরকাত] আর পাপ মোচনাকরী হল- নামাযের পর (আরেক নামাযের অপেক্ষায়) মসজিদে অবস্থান করা। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন এবং কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে ওযু করা। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩২৩৩

শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনার দ্বারা গোনাহ মাফ হয়

গোনাহ তো হয়েই যায়। কিন্তু মুমিনের বৈশিষ্ট্য হল, গোনাহ হওয়ার সাথে সাথে সে পেরেশান হয়; কীভাবে সে গোনাহ থেকে মুক্ত হতে পারে, কীভাবে ক্ষমা পেতে পারে! কুরআনে মুমিনের এ গুণ-বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে এ ভাষায়-

وَ الَّذِیْنَ اِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً اَوْ ظَلَمُوْۤا اَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوْبِهِمْ ۪ وَ مَنْ یَّغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اللهُ وَ لَمْ یُصِرُّوْا عَلٰی مَا فَعَلُوْا وَ هُمْ یَعْلَمُوْنَ.

এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করে ফেলে জেনে বুঝে তাতে অটল থাকে না। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৩৫

হাঁ, মুমিন পেরেশান হয় এবং চিন্তা করতে থাকে- কীভাবে কখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন! রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জানিয়েছেন- কোন্ সময় ক্ষমা চাইলে ক্ষমা লাভের আশা করা যায়। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

يَنْزِلُ رَبّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلّ لَيْلَةٍ إِلَى السّمَاءِ الدّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي، فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ.

আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছো, দুআ করবে আমি তার দুআ কবুল করব। কে আছো, আমার কাছে (তার প্রয়োজন) চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮

শেষ রাতে ইসতিগফার আল্লাহর খাছ বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা শেষ রাতে ইসতিগফারকারীদের প্রশংসা করেছেন। জান্নাতীদের গুণ বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

وَ الْمُسْتَغْفِرِیْنَ بِالْاَسْحَارِ

...এবং রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থীগণ। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৭

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. দুআ-ইসতিগফারের জন্য শেষ রাতের এনতেযারে থাকতেন। ইবনে কাসীর রাহ. উপরোক্ত আয়াতের অধীনে উল্লেখ করেন- ইবনে ওমর রা. রাতে নামাযে মশগুল থাকতেন। একপর্যায়ে নাফে রাহ.-কে জিজ্ঞেস করতেন, সাহার (শেষ রাত) কি ঘনিয়ে এসেছে? যখন নাফে বলতেন, হাঁ তখন ইবনে ওমর রা. দুআ-ইসতিগফারে মশগুল হতেন।

ইবনে মাসউদ রা. শেষ রাতে দুআ-ইসতিগফারে মশগুল হতেন এবং বলতেন-

وَهَذَا سَحَرٌ، فَاغْفِرْ لِي.

(হে আল্লাহ!) এখন সাহার’ (প্রতিশ্রুত শেষ রাত) সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তাফসীরে ইবনে আবি হাতেম, বর্ণনা ১১৯৮২, সূরা ইউসুফ আয়াত ৯৮-এর অধীনে) -তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৭-এর অধীনে

রাতে ঘুম ভাঙলে ইসতিগফার...

অনেকসময় রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। এসময় উচিত- আল্লাহর যিকির-তাসবীহ করা। দুআ-ইসতিগফার করা। সম্ভব হলে নামায আদায় করা। কারণ, এ সময়ের দুআ-ইসতিগফার-নামায কবুল করা হয়। বিশেষ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এসময় ক্ষমা চাইলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। হযরত উবাদা ইবনে সামেত রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ تَعَارّ مِنَ اللّيْلِ، فَقَالَ: لاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، الحَمْدُ لِلهِ، وَسُبْحَانَ اللهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوّةَ إِلّا بِاللهِ، ثُمّ قَالَ: اللّهُمّ اغْفِرْ لِي، أَوْ دَعَا، اسْتُجِيبَ لَهُ، فَإِنْ تَوَضّأَ وَصَلّى قُبِلَتْ صَلاَتُهُ.

কারো যদি রাতে ঘুম ভেঙে যায় এবং সে এই দুআ পড়ে-

لاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، الحَمْدُ لِلهِ، وَسُبْحَانَ اللهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوّةَ إِلّا بِاللهِ.

এরপর বলে-

اللّهُمَّ اغْفِرْ لِي.

(হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন।) তাহলে তাকে ক্ষমা করা হবে। যদি দুআ করে, তার দুআ কবুল করা হবে। আর যদি ওযু করে নামায আদায় করে তাহলে তার নামায কবুল করা হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৫৪; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৯৬

যাদের জন্য ফিরিশতারা মাগফিরাতের দুআ করে

কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর কারণে ফিরিশতারা মাগফিরাতের দুআ করে। আর ফিরিশতাদের দুআ আল্লাহ কবুল করবেন- এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং এসকল আমলের দ্বারা মাগফিরাতের আশা করা যায়। কাজেই এ আমলগুলোর প্রতিও আমরা যতœবান হব ইনশাআল্লাহ; যাতে রাব্বে কারীমের ক্ষমা লাভ করতে পারি।

এক. নামাযের পর নামাযের স্থানে বসে থাকা

যেসকল আমলের কারণে ফিরিশতা মাগফিরাতের দুআ করে এর মধ্যে অন্যতম প্রধান হল, নামাযের পর ওযু অবস্থায় নামাযের স্থানে (বা মসজিদে) বসে থাকা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

المَلاَئِكَةُ تُصَلِّي عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مُصَلّاهُ الّذِي صَلّى فِيهِ، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَقُولُ: اللّهُمّ اغْفِرْ لَهُ، اللّهُمّ ارْحَمْهُ.

কোনো ব্যক্তি নামাযের পর নামাযের স্থানে যতক্ষণ পবিত্র অবস্থায় বসে থাকে ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে; তারা বলে-

اللّهُمّ اغْفِرْ لَهُ، اللّهُمّ ارْحَمْهُ.

আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া কর। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১০৫২০;

কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে-

مَا دَامَ فِي المَسْجِدِ.

(যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবে)। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৩০

দুই. এক নামাযের পর আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান করা

এক নামাযের পর আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান করা অনেক বড় ফযীলতের বিষয়। এটি আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল; এমন পছন্দনীয় যে, আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদের সাথে তাঁর ঐ বান্দাদের বিষয়ে গর্ব করেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। নামাযের পর যারা বাড়িতে ফেরার ফিরে গেল, কিন্তু কিছু মানুষ এশার নামাযের ইনতিযারে মসজিদেই থেকে গেল। এরই মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁপাতে হাঁপাতে কাপড় গুটিয়ে দ্রুত তাশরীফ আনলেন। বললেন-

أَبْشِرُوا، هَذَا رَبّكُمْ قَدْ فَتَحَ بَابًا مِنْ أَبْوَابِ السَّمَاءِ، يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَةَ، يَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي قَدْ قَضَوْا فَرِيضَةً، وَهُمْ يَنْتَظِرُونَ أُخْرَى.

তোমরা (যারা আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান করছ তারা) সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের রব আসমানের বিশেষ এক দরজা উন্মুক্ত করেছেন। তিনি তোমাদের নিয়ে তাঁর ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলছেন, তোমরা দেখ আমার বান্দাদের! তারা এক ফরয (নামায) আদায়ের পর আরেক ফরয (নামায) আদায়ের ইনতিযারে রয়েছে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৮০১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৬৭৫০

আরেক হাদীসে একে রিবাতবলা হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَلَا أَدُلّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدّرَجَاتِ؟ قَالُوا بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: إِسْبَاغُ الْوُضُوءِ عَلَى الْمَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الْخُطَا إِلَى الْمَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصّلَاةِ بَعْدَ الصّلَاةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ.

আমি কি তোমাদের ঐসমস্ত আমলের কথা বলে দিব, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপসমূহ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা সমুন্নত করেন? সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, অবশ্যই বলে দিন আল্লাহর রাসূল! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কষ্টের মুহূর্তে পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে বেশি বেশি গমন করা এবং এক নামাযের পর আরেক নামাযের অপেক্ষা করা। (অর্থাৎ, আরেক নামাযের অপেক্ষায় মসজিদে অবস্থান করা।) এটিই হল রিবাত-সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৫১; জামে তিরমিযী, হাদীস ৫১

রিবাত হল, শত্রুর সাথে জিহাদে এবং  জিহাদের প্রস্তুতিতে নিজেকে আবদ্ধ রাখা। আর এখানে রিবাত দ্বারা উদ্দেশ্য, নিজেকে নেক কাজে আবদ্ধ রাখা। (মেরকাত, আলোচ্য হাদীসের ব্যাখ্যায়)

এ থেকেই বোঝা যায়, এক নামাযের পর আরেক নামাযের ইনতিযারে মসজিদে অবস্থান আল্লাহর কাছে কত প্রিয় আমল।

আর এ আমলের কারণে ফিরিশতারাও মাগফিরাতের দুআ করতে থাকে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَحَدُكُمْ مَا قَعَدَ يَنْتَظِرُ الصّلَاةَ، فِي صَلَاةٍ، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَدْعُو لَهُ الْمَلَائِكَةُ: اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ، اللهُمّ ارْحَمْهُ.

কোনো ব্যক্তি এক নামাযের পর যতক্ষণ আরেক নামাযের ইনতিযারে (মসজিদে) থাকে সে নামাযে রয়েছে বলেই গণ্য হয়; যতক্ষণ সে পবিত্র অবস্থায় থাকে। আর ফিরিশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে; ফিরিশতারা বলে-

اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ، اللهُمّ ارْحَمْهُ.

হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া কর। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৪৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৪৬২

তিন. পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপন করা

রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ওযু করে ঘুমানো উচিত। এব্যাপারে হাদীস শরীফে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব রা.-কে বললেন-

إِذَا أَتَيْتَ مَضْجَعَكَ، فَتَوَضّأْ وُضُوءَكَ لِلصّلاَةِ، ثُمّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ.

যখন তুমি ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাও তখন নামাযের ওযুর মত ওযু কর। অতপর ডান কাত হয়ে শোও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৭

সুতরাং আমরা ঘুমানোর আগে ওযু করে পবিত্র অবস্থায় ঘুমানোর চেষ্টা করব। আর আরেক হাদীসে পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপনের ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ফিরিশতাদের দুআ পাওয়া যায় এবং মাগফিরাত লাভ হয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ بَاتَ طَاهِرًا بَاتَ فِي شِعَارِهِ مَلَكٌ فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ إِلّا، قَالَ الْمَلَكُ: اللّهُمّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فُلَانٍ، فَإِنّهُ بَاتَ طَاهِرًا.

যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপন করে একজন ফিরিশতা তার শিয়রে অবস্থান করে। যখনই সে জাগ্রত হয় ফিরিশতা বলে-

اللّهُمّ اغْفِرْ لِعَبْدِكَ فُلَانٍ، فَإِنّهُ بَاتَ طَاهِرًا.

আল্লাহ আপনি আপনার (অমুক) বান্দাকে মাফ করে দিন; সে পবিত্র অবস্থায় রাত্র যাপন করেছে। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১০৫১; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ২৫২৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১১৪৬

চার. ফজর ও আসরের নামায জামাতে আদায় করা

ফজরের নামায হল দিনের শুরুর নামায আর আসরের নামায হল দিনের শেষ নামায। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রাতে নিযুক্ত ফিরিশতারা ফজরের সময় আসমানে উঠে যায়। আর দিনের ফিরিশতারা ফজরের সময় আগমন করে। তেমনি দিনে নিযুক্ত ফিরিশতারা আসরের পর আসমানে চলে যায় আর রাতে নিযুক্ত ফিরিশতারা আগমন করে। দিনের ফিরিশতারা ফজরের সময় এসে আল্লাহর কিছু বান্দাদের নামাযরত দেখে। তেমনি আসরেও তাদেরকে নামাযরত দেখে।  অর্থাৎ তাদের আগমন এবং যাওয়ার সময় আল্লাহর কিছু বান্দাদের নামাযরত দেখে। তেমনি রাতের ফিরিশতারাও। তখন তারা আল্লাহর কাছে সেভাবেই রিপোর্ট পেশ করে এবং তাদের মাগফিরাতের জন্য দুআ করে। বিষয়টি হাদীস শরীফে এভাবে বিবৃত হয়েছে-

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

يَجْتَمِعُ مَلَائِكَةُ اللّيْلِ وَمَلَائِكَةُ النّهَارِ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ، فَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ فَتَصْعَدُ مَلَائِكَةُ اللّيْلِ، وَتَثْبُتُ مَلَائِكَةُ النّهَارِ، وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْعَصْرِ فَتَصْعَدُ مَلَائِكَةُ النّهَارِ، وَتَثْبُتُ مَلَائِكَةُ اللّيْلِ، فَيَسْأَلُهُمْ رَبّهُمْ: كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي، فَيَقُولُونَ: أَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلّونَ وَتَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلّونَ، فَاغْفِرْ لَهُمْ يَوْمَ الدِّينِ.

রাতে নিযুক্ত ফিরিশতারা এবং দিনে নিযুক্ত ফিরিশতারা ফজর ও আসরের নামাযে একত্রিত হয়। ফজরের সময় রাতের ফিরিশতারা আসমানে চলে যায় এবং দিনের ফিরিশতারা কাজে যোগ দেয়। তেমনি আসরের সময় দিনে নিযুক্ত ফিরিশতারা আসমানে চলে যায় আর রাতের ফিরিশতারা কাজে যোগ দেয়। আসমানে গেলে তাদের রব তাদের জিজ্ঞাসা করেন-

كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي؟

আমার বান্দাদের কী অবস্থায় দেখে এসেছ?

তখন তারা উত্তরে বলে-

أَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلّونَ وَتَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلّونَ، فَاغْفِرْ لَهُمْ يَوْمَ الدِّينِ.

আমরা যখন গিয়েছি তখন তাদের নামাযরত দেখেছি। আবার যখন ফিরেছি তখনও নামাযরত দেখেছি। সুতরাং হে রব! আপনি কিয়ামতের দিন তাদের ক্ষমা করে দিন। -সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ৩২২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২০৬১; মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৯২৭৪

 

পাঁচ. রুগি দেখতে যাওয়া : সত্তর হাজার ফিরিশতা ইসতিগফার করতে থাকে

রুগি দেখতে যাওয়া, রুগির সেবা-শুশ্রƒষা করা- এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের হক। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

এক মুসলিমের উপর অপর মুসলিমের ছয়টি হক রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, কী সেই হকগুলো? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللهَ فَسَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتّبِعْهُ.

যখন তার সাথে দেখা হবে সালাম দেবে। দাওয়াত করলে দাওয়াত কবুল করবে। তোমার কাছে উপদেশ-পরামর্শ চাইলে কল্যাণকামিতার সাথে উপদেশ-পরামর্শ দেবে। হাঁচির পর আলহামদু লিল্লাহ বললে এর জবাব দেবে (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলবে)। যখন অসুস্থ হবে তাকে দেখতে যাবে, শুশ্রƒষা করবে। মৃত্যুবরণ করলে জানাযা-দাফনে শরীক হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬২

আর এটি অনেক বড় ফযীলতের আমলও বটে। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর রহমত লাভ করে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا، لَمْ يَزَلْ يَخُوضُ فِي الرَّحْمَةِ حَتَّى يَجْلِسَ، فَإِذَا جَلَسَ اغْتَمَسَ فِيهَا.

ব্যক্তি যখন কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় সে আল্লাহর রহমতের মাঝে প্রবেশ করে। আর যখন (তার পাশে) বসে তখন সে রহমতের মাঝে ডুব দেয়। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ১০৮৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৪২৬০

আর সবচেয়ে বড় ফযীলত হল, এর দ্বারা গোনাহ মাফ হওয়ার আশা করা যায়। সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য ইসতিগফার করতে থাকে। হাসান ইবনে আলী রা. অসুস্থ হলে  আবু মূসা আশআরী রা. একবার তাঁকে দেখতে গেলেন। তখন আলী রা. বললেন, আপনি কি বেড়ানোর উদ্দেশে এসেছেন, নাকি রুগি দেখতে এসেছেন? তখন তিনি উত্তরে বললেন, বরং রোগি দেখতে এসেছি। তখন আলী রা. বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

مَنْ عَادَ مَرِيضًا بَكَرًا شَيّعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ، كُلّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ حَتّى يُمْسِيَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنّةِ، وَإِنْ عَادَهُ مَسَاءً شَيّعَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ كُلّهُمْ يَسْتَغْفِرُ لَهُ، حَتّى يُصْبِحَ وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ فِي الْجَنّةِ.

কেউ যদি সকালে কোনো অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নিতে যায় তার সাথে সত্তর হাজার ফিরিশতা সঙ্গ দেয় এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য ইসতিগফার করতে থাকে এবং জান্নাতে তার একটি বাগান লাভ হয়। আর যদি সন্ধ্যায় রুগি দেখতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফিরিশতা তার সঙ্গ দেয় এবং সকাল পর্যন্ত তার জন্য ইসতিগফার করতে থাকে। আর জান্নাতে সে একটি বাগানের অধিকারী হয়। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৯৭৫; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৬৫৮৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৬৯; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১২৬৪ (মাওকূফ হিসেবে) সুনানে আবু দাউদবর্ণনা ৩০৯৮; মুসনাদে আহমাদ, বর্ণনা ৯৭৬

এতক্ষণ আমরা ঐসকল বর্ণনা নিয়ে আলোচনা করেছি, যেখানে স্পষ্ট শব্দে -যেমন, اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ- ফিরিশতাদের ক্ষমা প্রার্থনার কথা উল্লেখ আছে। এপর্যায়ে ঐসকল বর্ণনা আলোচনা করব, যেখানে সালাতশব্দে ফিরিশতাদের ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি এসেছে। কারণ, বান্দার প্রতি ফিরিশতাদের সালাতঅর্থ দুআ ও ইসতিগফার উভয়টিই হয়। (জামিউ বায়ানিল ইলম, ১৮৩ নং হাদীসের অধীনে; তরহুত তাছরীব ফী শরহিত তাকরীব ২/৩৬৭; তাফসীরে কুরতুবী, সূরা আহযাব ৪৩ নং আয়াতের অধীনে) কোনো কোনো বর্ণনায় ফিরিশতাদের সালাত’-এর ভাষা-ই হল ইসতিগফার। যেমন-

إِنّ الْعَبْدَ إِذَا جَلَسَ فِي مُصَلاهُ بَعْدَ الصّلاةِ، صَلّتْ عَلَيْهِ الْمَلائِكَةُ، وَصَلاتُهُمْ عَلَيْهِ: اللهُمّ اغْفِرْ لَهُ اللهُمّ ارْحَمْهُ .

(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২১৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ২৭০০) মোটকথা, ফিরিশতাদের সালাত অর্থ, দুআ-ইসতিগফার। নি¤œ এধরনের কিছু বর্ণনা পেশ করা হল :

 

ছয়. প্রথম কাতারে নামায আদায়

জামাতের নামাযে প্রথম কাতারের ফযীলত কী? এ প্রশ্নের উত্তর হাদীস শরীফে একটু ভিন্নভাবে দেওয়া হয়েছে। এর ফযীলত এত এত- এভাবে না বলে বলা হয়েছে- এর ফযীলত যদি তোমরা জানতে তাহলে লটারী করে হলেও প্রথম কাতারে স্থান করে নিতে, প্রথম কাতারে দাঁড়াতে! এর দ্বারা এ আমলের প্রতি আমাদের তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়েছে; যাতে আমরা এ আমলের ফযীলত লাভ করতে পারি। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

لَوْ يَعْلَمُ النّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصّفِّ الأَوّلِ، ثُمّ لَمْ يَجِدُوا إِلّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا...

আযান এবং প্রথম কাতারের ফযীলত যদি মানুষ জানত; আর লটারী করা ছাড়া এ আমলের সুযোগ পাওয়া না যেত, তাহলে লটারী করে হলেও মানুষ এ আমলে অংশ নিত।  -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৫

এ হাদীসে যদিও অভিনব উপস্থাপনের মাধ্যমে আমলের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে, নির্দিষ্ট কোনো ফযীলতের উল্লেখ আসেনি, কিন্তু আরেক হাদীসে এ আমলের এমন এক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যা লাভ করার জন্য আসলেও লটারী করে প্রথম কাতারে দাঁড়ানো উচিত। বারা ইবনে আযেব রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-

إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الصّفِّ الْأَوّلِ.

যারা প্রথম কাতারে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯৯৭

একটু চিন্তা করে দেখিএ আমলের দ্বারা আমরা শুধু ফিরিশতাদের দুআ-ইসতিগফারই নয়; বরং বান্দার প্রতি আল্লাহর সালাততথা রহমতও লাভ করতে পারি।

উপরোল্লিখিত বর্ণনায় الصف الأَوّل (প্রথম কাতার) শব্দে বর্ণিত হয়েছে; তবে কিছু বর্ণনায় الصفوف الأُوَل (সামনের দিকের কাতারসমূহ)-এই শব্দে বর্ণিত হয়েছে। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৪) সে হিসাবে সামনের দিকের কাতারে দাঁড়ানোর মাধ্যমেও এ ফযীলত লাভের আশা করা যায়। সুতরাং সামনের কাতারগুলো পূরণ করার ব্যাপারে যতœবান হওয়া উচিত।

আর সামনের কাতার পুরা করা ফিরিশতাদের ছিফাত। জাবের ইবনে সামুরা রা. থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

أَلَا تَصُفّونَ كَمَا تَصُفّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيْفَ تَصُفّ الْمَلَائِكَةُ عِنْدَ رَبِّهَا؟ قَالَ: يُتِمّونَ الصّفُوفَ الْأُوَلَ وَيَتَرَاصّونَ فِي الصّفِّ.

তোমরা কি সেভাবে কাতারে দাঁড়াবে না, যেভাবে ফিরিশতারা তাদের রবের সামনে দাঁড়ায়! তখন আমরা বললাম, ফিরিশতারা তাদের রবের সামনে কীভাবে কাতারে দাঁড়ায়? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা সামনের কাতারগুলো আগে পূরণ করে এবং মিলে মিলে দাঁড়ায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩০

আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أَتِمّوا الصّفّ الْمُقَدّمَ، ثُمّ الّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ فِي الصّفِّ الْمُؤَخّرِ.

তোমরা প্রথম কাতার আগে পুরা কর। এরপর এর পরের কাতার। যদি কোনো কাতার অপূর্ণ থাকতে হয় সেটা সবচেয়ে পেছনের কাতার থাক (অর্থাৎ, সামনের কোনো কাতার যেন অপূর্ণ না থাকে।) -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭১

তবে একেবারে সামনের কাতারে দাঁড়ানোর ফযীলত যে সবচেয়ে বেশি এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করা- একেবারে সামনের কাতারে দাঁড়াতে। আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, একবার একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-

إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الصّفِّ الْأَوّلِ.

যারা প্রথম কাতারে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে।

একথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহর রাসূল! দ্বিতীয় কাতারের উপরও? তাদের এ প্রশ্ন শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন-

إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الصّفِّ الْأَوّلِ.

এভাবে তিনবার ঘটার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন-

وَعَلَى الثّانِي.

হাঁ, দ্বিতীয় কাতারের উপরও! -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২২৬৩

সাত. বিচ্ছিন্ন কাতারকে সংযুক্ত করা

ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি আল্লাহর সামনে ফিরিশতারা কীভাবে দাঁড়ায়। তারা গায়ে গায়ে লেগে লেগে মিলে মিলে দাঁড়ায়। কাতারের মাঝে কোনো ফাঁকা রাখে না। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় অসচেতনতা বসত আমরা কাতারের মাঝে বেশ ফাঁকা রেখেই দাঁড়িয়ে যাই। ফলে কাতার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বিচ্ছিন্ন

কাতারকে যুক্ত করা অনেক ফযীলতের কাজ। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَنْ وَصَلَ صَفّا وَصَلَهُ اللهُ، وَمَنْ قَطَعَ صَفّا قَطَعَهُ اللهُ.

যে ব্যক্তি (বিচ্ছিন্ন) কাতারকে যুক্ত করবে আল্লাহ তাকে (তাঁর রহমতের সাথে) যুক্ত করবেন। আর যে কাতারকে বিচ্ছিন্ন করবে আল্লাহ তাকে (তাঁর রহমত থেকে) বিচ্ছিন্ন করবেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৬৬

আর বিচ্ছিন্ন কাতারকে যুক্ত করার সবচেয়ে বড় ফযীলত হল এর দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয় এবং ফিরিশতাদের দুআ-ইসতিগফার লাভ হয়। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الّذِينَ يَصِلُونَ الصّفُوفَ، وَمَنْ سَدّ فُرْجَةً رَفَعَهُ اللهُ بِهَا دَرْجَةً.

যারা (বিচ্ছিন্ন) কাতারকে যুক্ত করে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে। আর যে কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করে আল্লাহ তাদের মর্যাদা সমুন্নত করেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯৯৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১৫৫০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২১৬৪

আট. কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লাম সব বিষয়ে ডান দিক পছন্দ করতেন। কাতারের ক্ষেত্রেও একই কথা। সাহাবায়ে কেরাম রা. যখন নবীজীর পিছনে নামায পড়তেন তখন কাতারের ডান দিকে দাঁড়াতে চেষ্টা করতেন। বারা ইবনে আযেব রা. বলেন-

كُنّا إِذَا صَلّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينِهِ.

আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে নামায পড়তাম তাঁর ডানে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬১৫

আর হাদীস শরীফে কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানোর বিশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى مَيَامِنِ الصّفُوفِ.

যারা কাতারের ডান দিকে দাঁড়ায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৬৭৬; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০০৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২১৬০

সুতরাং স্বাভাবিকভাবে কাতারের ডান দিকে দাঁড়াতে চেষ্টা করব। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানোর জন্য সামনের কাতারের বাম দিক খালি রেখে পিছনের কাতারের ডান দিকে দাঁড়ানো হবে।

নয়. সাহরী খাওয়ার ফযীলত

সাহরী খাওয়া একটি বরকতপূর্ণ আমল। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহরী খাওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

تَسَحّرُوا، فَإِنّ فِي السّحُورِ بَرَكَةً.

তোমরা সাহরী খাও; কারণ, সাহরীতে বরকত রয়েছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০৯৫

এ বরকত লাভের জন্যই সামান্য পানি পান করে হলেও সাহরী খেতে বলা হয়েছে। আর বরকত লাভ ছাড়াও সাহরী দ্বারা অনেক বড় ফযীলত লাভ হয়। ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ.

যারা সাহরী খায় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৪৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১১০৮৬; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৪৮৪০

দশ. ইলমে দ্বীনের শিক্ষক

মানুষকে যারা দ্বীন শেখায় তাদেরকে আল্লাহ অতি উঁচু মর্যাদা দান করেছেন। কারণ, দ্বীন ছাড়া মানুষের জীবন অর্থহীন, দুনিয়া-আখেরাত অর্থহীন, সবকিছুই অর্থহীন। ফলে যারা মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দেন তাদের জন্য আসমানের অধিবাসী, যমিনের অধিবাসী, জল-স্থলের অধিবাসী মোটকথা সকলেই দুআ করতে থাকে। আর সকলেবলতে বাস্তবেই সকলে- এটা বুঝানোর জন্য হাদীসে বলা হয়েছে, তাঁদের জন্য সমুদ্রের তিমি (হুত) এমনকি গর্তের পিপিলিকাও দুআ করে। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি রহমত নাযিল করেন, ফিরিশতারা তাঁদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করতে থাকে। এর চেয়ে মর্যাদার বিষয় আর কী হতে পারে!

আবু উমামা বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

إِنّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السّمَوَاتِ وَالأَرضِينَ حَتّى النّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتّى الحُوتَ لَيُصَلّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النّاسِ الخَيْرَ.

যারা মানুষকে খায়েরতথা ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয় আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রহমত নাযিল করেন এবং তাঁর ফিরিশতারা তাদের জন্য দুআ-ইসতিগফার করে। আসমান-যমীনের অধিবাসী, গর্তের পিপিলিকা এমনকি সমুদ্রের তিমি (হূত) পর্যন্ত তাদের জন্য দুআ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮৫; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৭৯১২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৫১৩

এখানে মুআল্লিমতথা শিক্ষক দ্বারা উদ্দেশ্য দ্বীন শিক্ষাদানকারী শিক্ষক। যাকে পরিভাষায় অলেম বলা হয়। আলোচ্য বিষয়টি হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে এ শব্দে বর্ণিত হয়েছে-

وَإِنّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السّمَوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتّى الحِيتَانُ فِي المَاءِ.

আর আলেমের জন্য আসমান-যমীনের অধিবাসী, এমনকি সমুদ্রের তিমি পর্যন্ত ইসতিগফার করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৬৪১; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ১৫৭৩

তেমনি খায়েরদ্বারাও এখানে ইলমে দ্বীন উদ্দেশ্য, যেমনটি উপরের রেওয়ায়েত থেকে বোঝা যায়। হাদীসের বিভিন্ন ব্যাখ্যাগ্রন্থেও বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। [দ্র. মেরকাতুল মাফাতীহ (আলোচ্য হাদীস); ফয়যুল কদীর ৩/৫০৬]

এগার. নবীজীর উপর দরূদ পাঠ

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মহব্বত মুমিনের ঈমান। আর এ ঈমানের প্রকাশক্ষেত্র হল, তাঁর আনীত দ্বীন ও সুন্নাহর অনুসরণ এবং তাঁর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ। আর নবীজীর উপর দরূদ পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ হয়। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلّى عَلَيّ صَلَاةً صَلّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا.

যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়ে আল্লাহ তার প্রতি দশটি রহমত নাযিল করেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৪

আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পাঠের মাধ্যমে ফিরিশতাদের দুআ-ইসতিগফারও লাভ হয়। কোনো ব্যক্তি যতক্ষণ নবীজীর উপর দরূদ পড়তে থাকে ফিরিশতা তার জন্য দুআ-ইসতিগফার করতে থাকে। আমের ইবনে রবীআ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَا صَلّى عَلَيّ أَحَدٌ صَلَاةً، إِلّا صَلّتْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ مَا دَامَ يُصَلِّي عَلَيّ، فَلْيُقِلّ عَبْدٌ مِنْ ذَلِكَ أَوْ لِيُكْثِرْ.

কোনো ব্যক্তি যতক্ষণ আমার উপর দরূদ পাঠ করতে থাকে ফিরিশতারা তার জন্য দুআ-ইসতিগফার করতে থাকে। এখন ব্যক্তির ইচ্ছা, চাইলে আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ করুক অথবা কম। (যে পরিমাণে দরূদ পাঠ করবে সে হিসাবেই ফিরিশতাদের দুআ-ইসতিগফার লাভ করবে।) -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৬৮৯; আলমুনতাখাব মিন মুসনাদে আবদ ইবনু হুমাইদ, হাদীস ৩১৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৯০৭

 

 

advertisement