মুহাররম ১৪২৯   ||   জানুয়ারি ২০০৮

উ ম্মা হ : সিআইএ মুছে ফেলেছে মানুষের টেপ

খসরূ খান

সম্প্রতি খবর বের হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ কিছু টেপ নষ্ট করে ফেলেছে। এ টেপগুলো ছিল সন্দেহভাজন আলকায়েদা সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য সংবলিত। আল কায়েদা সদস্য সন্দেহে বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রেফতার করে বন্দীশিবিরে ২০০২ সন থেকে যাদের কয়েদ করে রাখা হয়েছিল তাদেরকে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় নষ্ট করা ভিডিও টেপগুলো ছিল সে সবের প্রামাণ্য চিত্র। এগুলো কোনো সময় প্রকাশ হলে সিআইএর মানবাধিকার লংঘন ও নির্যাতন নিয়ে প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবি উঠতে পারে এ আশঙ্কা থেকেই টেপগুলো নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সিআইএ-প্রধান অবশ্য বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য হুমকি থাকায় এবং কোনো গোয়েন্দামূল্য না থাকায় টেপগুলো নষ্ট করা হয়েছে। টেপ মুছে ফেলার ঘটনা তদন্তের জন্য বিচার ও গোয়েন্দা বিভাগীয় যৌথ তদন্ত কামিটিও গঠন করার খবর বের হয়েছে গত ১০ ডিসেম্বর। এব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাকর্মী এবং কোনো কোনো মানবাধিকার সংগঠনকে জোরালো ভূমিকা রাখতে দেখা গিয়েছে। দুহাজার একের এগারই সেপ্টেম্বর টুইনটাওয়ার ধ্বংস করার ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কত হাজার মুসলমানকে যে গ্রেফতার করে উঠিয়ে নিয়েছে মার্কিনীরা তার কোনো হিসাব কেউ রাখে না। বিচারহীনভাবে সেসব বন্দীকে গুয়ানতানামো বে থেকে নিয়ে বিভিন্ন কারাগারে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করা হয়েছে। সেসব খবর বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশও হয়েছে। ইরাকের আবু গারিব কারাগারেও মার্কিনী ও বৃটিশ সৈনিকরা বর্বর আচরণ করেছে ইরাকী বন্দীদের সঙ্গে। বন্দীদের সঙ্গে বর্বরতাই যেন সভ্যতার ফেরিওয়ালা এসব পশ্চিমা দেশের বৈশিষ্ট। নির্বিচার বন্দিত্ব আরোপ, বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় চরম অমানুষিক নির্যাতন চালানো তাদের স্বভাব। ভবিষ্যতে প্রকাশের ভয়ে টেপ মুছে ফেলার ঘটনার মধ্য দিয়ে এটি আবার প্রমাণিত হল। কিন্তু তারপরও সভ্যতার একটি নমুনা দুনিয়াকে দেখানোর জন্য নিজেদের মধ্যে মানবিক মানবিক একটা ভাবের সৃষ্টি করে তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভেতরে ভেতরে মুসলিম বন্দীদের নির্যাতনের ব্যাপারে তাদের কারো মাঝে কোনো মতভিন্নতা না থাকলেও সিআইএর টেপ নষ্টের ঘটনায় হৈচৈ বাঁধিয়ে দেওয়া থেকেও এসত্য প্রকাশিত হয়েছে।

কারণ ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা তার ৯ ডিসেম্বরের সংখ্যায় একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে বলেছে-২০০২ সালে বিদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বন্দীশিবির আছে সেগুলো পরিদর্শনে এমন একটি প্রতিনিধিদলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যাতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলেরই সদস্য ছিলেন। মুসলিম বন্দীদের যে নির্যাতনের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এ বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছিল। এতে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। সে দলের অন্তর্ভুক্ত দুজন সিনেটর জিজ্ঞাসাবাদ কালে সিআইএকে কঠোর হতে আহবান জানিয়েছিলেন। ওই রিপোর্টে প্রতিনিধিদলের কজন সদস্যের নামও উল্লেখ করা হয়। এ থেকে বোঝা যায়, মুসলিম বন্দীদের নির্যাতনে, সিআইএর মানবাধিকার লংঘনে মার্কিনী সব রসূনের গোড়া আসলে একই। মুসলমানদের প্রতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনো একটি ইস্যু নিয়ে হৈচৈ করে এদের কেউ কেউ মাঝে মধ্যে লাইম লাইটে আসার কৌশল গ্রহণ করেন। সংবাদমাধ্যমগুলো সেসব হৈচৈয়ের ঘটনাকে ফলাও প্রচার দিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে যে, মার্কিনীদের মধ্যে মানবতাবাদী মানুষও আছে। ভিতরে পশু-বাইরে মানুষ সাজার এই মার্কিনী কসরত দেখে দুনিয়ার দুঃখী মুসলমানরা কষ্টের মধ্যেও কৌতুকের উপাদান খুঁজে পান। #

 

 

advertisement