সফর ১৪২৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৮

আগ্রাসনের বিরুদ্ধে

ঢাকার প্রখ্যাত একটি মানবাধিকার সংগঠন অধিকার ২৪.১০.০৭ঈ. তারিখে সীমান্তে বিএসএফ-এর হত্যাযজ্ঞ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্ট হতে যা জানা যায় তা পাঠকের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হচ্ছে-

২০০২ সালের জানুয়ারি হতে ২৩ অক্টোবর ২০০৭ঈ. পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ-এর হামলায় ৭২৭জন বাংলাদেশী আহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে  ২৬২ জন, নিখোঁজ হয়েছে ৮৯জন। এর মধ্যে ৮টি শিশুও রয়েছে। এতদ্ব্যতীত বিএসএফ কর্তৃক ১৩জন নারী ধর্ষণ ও ৬৪টি লুটপাটের অমানবিক ঘটনাও ঘটেছে বলে এই রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে।

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী এই বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশী হত্যা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা যেন রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। অধিকারএর জরিপ হয়তো সম্পূর্ণ নয়। সংবাদপত্রে আসে না, সাধারণের গোচরে যায় না এমন বহু হত্যাকান্ড সীমান্তে ঘটানো হচ্ছে। ঠান্ডা মাথায় এভাবে পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা যুদ্ধরত কোনো দেশ ছাড়া অকল্পনীয়। সুতরাং এ যুদ্ধে বরাবরের মতো আমাদের এই স্বাধীন দেশ পরাভূত, আগ্রাসী শক্তির খপ্পরে বিপর্যস্ত। কিন্তু ওদের আগ্রাসন প্রতিরোধে আমরা যেন নিদারুণ অসহায়। তাহলে এদেশের অর্জিত স্বাধীনতার মান, আযাদির সুউচ্চ শির আর কোথায় রইল?

এদেশে বিএসএফ-এর হত্যাযজ্ঞ যে কত ভীতিপ্রদ দানবরূপ পরিগ্রহ করেছে, এর পক্ষে আরেকটি দৃষ্টান্ত প্রদান সঙ্গত মনে করছি। সাতক্ষীরা সীমান্তে অবস্থিত এলাকাগুলোতে গত ১০ মাসে (নভেম্বর ০৭ঈ. পূর্ববর্তী) ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফ-এর হাতে ১৮জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছে। নিহতদের কাউকে বিএসএফ নৃশংসভাবে গুলি করে, আবার কাউকে নির্মমভাবে পিটিয়ে, আবার কাউকে সীমান্ত নদীতে ফেলে স্পীডবোটের পাখায় ক্ষত-বিক্ষত করে হত্যা করা হয়েছে। (খবর : দৈনিক ভোরের ডাক-এর)

এই হল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অবস্থা। সচেতন মহল অবশ্যই ব্যাপারটি বুঝতে পেরেছেন যে, যেখানে রাষ্ট্রযন্ত্র সাজে পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের অলংকারে, যেখানে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র পরিচালিত হয় ভীন দেশীদের শুভাশীষে(?) সেখানে স্বাধীনতা ও স্বাধীকার রয়েছে বলে শুধু-ই মুখের ফেনা তোলা যাবে, কিন্তু প্রকৃত স্বাধীনতা সোনার হরিণই থেকে যবে। সুতরাং আমাদের নিজস্ব আদর্শ ও প্রেরণার ভিত্তিতে দেশের সব কিছু পরিচালনা করা কর্তব্য। দেশপ্রেমী ধর্মপ্রাণ মানুষের এ লক্ষ্যে সচেতন হওয়া কাম্য। আমরা যেন কোনো আগ্রাসী শক্তির খেলার সামগ্রীতে পরিণত না হই, সেজন্য রাষ্ট্রের কর্ণধাররাসহ সব নাগরিকের সচেতন ঐক্যবদ্ধতা দরকার।

মুহা. আব্দুর রহমান চাঁদপুরী

সাতাইশ মাদরাসা, টঙ্গী, গাজীপুর

 

 

advertisement