উল্টো চিন্তা : পাপের খাতের দিকে চোখ যায় না
গত কুরবানী বা ঈদুল আযহার আগে আগে হঠাৎ করে কুরবানীর খরচ কমিয়ে কিভাবে সিডর-দুর্গতদের সাহায্য করা যায়-এ প্রশ্নটি জোরালো করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্নটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি ২টাকা মূল্যের দৈনিক পত্রিকা এ নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকেরও আয়োজন করেছিল। সেখানে দু-তিনজন আলেমের পাশাপাশি কিছু এমন রাজনীতিককেও ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় যারা কুরবানী করার মধ্যে কেবল ‘অর্থ খরচের’ বহর দেখতে পেয়ে থাকেন। কেউ কেউ তো এবার কুরবানী না করারই প্রস্তাব দিয়ে বসেন। তবে, উপস্থিত আলেমদের ব্যাখ্যা ও বক্তব্যে শেষ পর্যন্ত বৈঠকের মডারেটর ওই পত্রিকাটির সম্পাদক একথা বলে বক্তব্য শেষ করেন, এবার আমরা নফল কুরবানী না করে ওই নফল কুরবানীর টাকা সিডর-দুর্গত গরীবদের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারি।
যে কোন দুর্যোগে দান-খয়রাত করা, গরীব ও বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের একটি অন্যতম নির্দেশনা। ইসলাম যিনি মনে-প্রাণে মানেন এসব দুর্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে তাকে আলাদাভাবে অনুপ্রাণিত করার দরকার পড়ে না। কিন্তু দুর্যোগ আসলেই দেখা যায় ধর্মীয় যেকোন খাতের খরচ কমিয়ে কীভাবে সেটা বিপন্নদের সাহায্যে লাগানো যায় এ নিয়ে একশ্রেণীর লোকেরা অতি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরা কুরবানীর কথা বলেন, হজ্বের কথা বলেন। সেসব খাতের টাকা যেন বিপন্নদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয় সে কথা বলে বাহবা কুড়ানোর চেষ্টা করেন। তারা ভুলেও অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা, তথাকথিত বিনোদন কিংবা গোনাহ ও অপচয়ের খাতগুলো থেকে টাকা নিয়ে বিপন্নদের দিতে বলেন না। তারা বলেন না, দেশে যে মদের বারগুলো রয়েছে, পাঁচতারা হোটেলে মদের যেসব কাউন্টারগুলো রয়েছে সেগুলো এক সপ্তাহ বা একমাস বন্ধ থাকুক। সে টাকাটা দুর্গতদের দিয়ে দেওয়া হোক। তারা বলেন না, তামাক ও ধূমপানের পেছনে এক মাসে যে ব্যয়টা হয় তা বন্ধ রেখে সে টাকা দুর্গতদের মাঝে দিয়ে দিন। তারা বলেন না, সিনেমা হলগুলো, সিডির দোকানগুলো বন্ধ রেখে সে টাকা গরীবদের মাঝে বেঁটে দিন। তারা বলেন না, সারা দেশে ডিশ-এন্টেনার যে নেটওয়ার্ক রয়েছে এক মাস তা বন্ধ রেখে সে টাকাটা বিপন্নদের উদ্ধারে খরচ করুন। ১০ হাজার ২০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল সেট কেনা বন্ধ করে সে টাকা দান করুন। এ খাতের ধারাবাহিকতা বেশ দীর্ঘ। এ ধরনের খাতগুলো মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় কিংবা আবশ্যিক খরচের খাত নয়। এ ধরনের খাতগুলোর এক মাসের টাকা বাঁচালে তা কয়েক হাজার কোটি টাকার মতো হয়ে যাবে। তবুও তারা ওই দিকে না গিয়ে হ্রাস টানার লাগামটা ধরেন ধর্মীয় বিষয়ে। বিপন্নতা, মানবিকতা এবং দান-অনুদানের কথা বলে তারা পুণ্যের সঙ্গে জড়িত আমল কিংবা নির্দিষ্ট ইবাদতের গন্ডিতে হাত ঢুকিয়ে দেওয়ার বদ-কাজটি করে বসেন। এটা কতটুকু বৈপরীত্যপূর্ণ কাজ কিংবা এতে বাস্তবেই কোনো সুফল আসবে কি-না সেদিকটিও দেখতে তারা প্রস্ত্তত নন।
কুরবানী এবার বহু মানুষ কম করেছেন সচ্ছলততার অভাবে। কুরবানী-সংকোচপন্থীদের আহবানে সাড়া দিয়ে কেউ কুরবানী কমিয়েছেন কি-না তা জানা নেই, কিন্তু কুরবানীর পর সিডর-দুর্গত মানুষকে না করা নফল কুরবানীর টাকা পৌঁছে দিয়েছেন-এমন ঘটনা আমরা শুনিনি। আসলে যে বা যারা সিডরের দুর্গত মানুষকে কিংবা যেকোন বিপন্ন মানুষকে দান-খয়রাত করবেন, তাদেরকে কুরবানী না করতে কিংবা কমাতে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এটি একটি অর্থহীন ও অসমীচীন প্রয়াস। এদেশের যেসব লোক সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী সীমিত করে করেন তারা কি সবাই দু-চার হাজার টাকা সিডর-দুর্গতদের পাঠিয়ে দিয়েছেন?#