জায়নবাদের সূচনা
বর্তমান ইহুদী জায়নবাদের জন্ম ইহুদী সংবাদিক থিউডর হার্টজিলের উদ্যোগে। এরই ভিত্তিতে ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। হার্টজিল তার লক্ষ্য পূরণের জন্য উসমানী বাদশাহ সুলতান আব্দুল মজিদের সঙ্গে দু’বার কথা বলেছেন। কিন্তু আত্মমর্যাদা-সম্পন্ন বাদশাহ সুলতান ইহুদীদের জন্য এক বিঘত জমিও ছাড়তে সম্মত হননি। এরপরই ইহুদীরা উদ্যোগ নেয় সুলতানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে এবং খেলাফতে উসমানিয়াকে খতম করে দিতে। শেষ পর্যন্ত তাদের ষড়যন্ত্র সফল হয়।
ইহুদীরা যে দেশেই গিয়েছে সেখানেই তারা তাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটিয়েছে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে পথচ্যুতি, চারিত্রিক ধস এবং মানবতাবিনাশী ব্যাধিগুলোকে ব্যাপক করে দিয়েছে। সৃষ্টি করেছে বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহের পরিবেশ। এ কারণেই সব দেশ থেকে তারা বহিষ্কৃত হয়েছে। রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে ইহুদী ষড়যন্ত্রে। ফরাসী বিপ্লবের পর ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে যেখানেই কোন বিপ্লব বা বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছে, দেখা গেছে সেখানেই পুরোপুরি জায়নবাদের সম্পৃক্ততা ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইহুদীরা গোটা ইউরোপে বিশেষ করে বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানীতে ছড়িয়ে পরে। আর সেসব দেশে নিজেদের প্রভাব ও ভিত্তি দৃঢ় করতে উঠে পরে লেগে যায়।
সুইজারল্যান্ডের ‘বাল’ শহরে ১৮৯৭ সনে হার্টজিলের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনে তিনশ’ ইহুদী পন্ডিত, চিন্তাবিদ, দার্শনিক ও মেধাবী হার্টজিলের নেতৃত্বে গোটা দুনিয়াব্যাপী ইহুদী সাম্রাজ্য বিস্তারের একটি প্লান তৈরি করে ঊনিশটি প্রটোকল বা দফারূপে। এ পরিকল্পনার স্বরূপ পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়। এ পরিকল্পনাকে ইহুদী পন্ডিতদের ‘দলীল’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। এ পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ার ছড়িয়ে থাকা তিনশটি ইহুদী সংগঠনের মেধাবী সদস্যরা অংশ নিয়েছিল। সে সম্মেলনের পর ইহুদীরা নিজেদের সংগঠনকে আরো মজবুত করে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের ধূর্ততা, নগ্নতা ও গুপ্ত কৌশলের ভিত্তিতে তাদের সর্বনাশা টার্গেট পূরণে তৎপরতা শুরু করে। অসাধারণ কৌশল ও বুদ্ধি খাটিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে তারা ঢুকে পড়ে। সবার আগে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সওয়ার হয়ে গোটা দুনিয়ার নজর থেকে তাদের মন্দ বৈশিষ্ট্য, লাঞ্ছনা, অবিশ্বস্ততা, লোভ, আত্মিক নিঃস্বতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মানসিকতা এবং মানবতার দুশমনির বিষয়টি দূরে সরিয়ে দেয়। উল্টো নিজেদের মজলুম হিসেবে তুলে ধরে এবং নিজেদের জাতীয় মন্দ বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরবদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় নিয়োজিত হয়। এরপর অর্থনৈতিক খাতে জবরদস্ত সাফল্য লাভে তাদের লক্ষ্য পূরণ সহজ করে দেয়। এভাবেই আরব বিশ্বের হৃদয়-ফিলিস্তিনে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
‘বাল’ কনফারেন্সে সাব্যস্ত প্রটোকলগুলোকে বাস্তবায়নের জন্য চারটি মূল দফা ঠিক করা হয়- ১. ফিলিস্তিনে যে কোনো মূল্যে ইহুদী কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের নাগরিকের আবাসনের ব্যবস্থা করা। ২. বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সংগঠনসমূহের সাহায্যে গোটা দুনিয়ার ইহুদীদের একত্র করা। ৩. যদি প্রয়োজন হয় তবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জায়নবাদী লক্ষ্যসমূহ সম্পর্কে নিঃসংশয়তা আনতে ভূমিকামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের অস্তিত্ব মেনে নিতে চেষ্টা চালানো। ৪. ইহুদীদের মধ্যে ধর্মীয় ও জাতীয় চেতনা বাড়িয়ে তোলা। জায়নবাদীরা তুর্কী, জার্মানী ও বৃটেনে ইহুদীদের জন্য স্বতন্ত্র দেশ গড়ে তুলতে একাধিকবার আলাপ-আলোচনা করেছে। কিন্তু তারা সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত তারা ১৯১৭ সনে তাদের চেষ্টায় সাফল্যের মুখ দেখে। ১৯১৭ সনের ৯ নভেম্বর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তি সম্পাদনে বৃটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী বড় ভূমিকা পালন করে।
তথ্য কণিকা
মসজিদে নববীর নির্মাণ প্রথম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে শুরু হয়েছিল।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর প্রথম ঈমান আনয়নকারী ছিলেন হযরত খাদীজা রা.।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা. স্বাধীন পুরুষদের মধ্যে প্রথম ঈমান আনয়নকারী ছিলেন।
শিশু-কিশোরদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঈমান গ্রহণ করেছেন হযরত আলী রা.।
উচ্চ শব্দে প্রথম কুরআন তেলাওয়াতকারী সাহাবী ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.।
মদীনার প্রথম মুসলমান ছিলেন হযরত সুয়াইদ ইবনে সামেত রা.।
আল্লাহর পথে কাফেরদের প্রথম রক্ত ঝরানোর মর্যাদা হাসিল করেছিলেন হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা.। আল্লাহর পথে প্রথম তীর বর্ষণের মর্যাদাও ছিল তাঁর।
বদরের যুদ্ধে প্রথম শহীদ হযরত সুহজা রা.। তিনি ছিলেন হযরত উমর রা.-এর গোলাম।
হযরত আবু যর গিফারী রা. শুধু একটি যুদ্ধ- গাযওয়ায়ে তবুকে অংশ নিতে পেরেছিলেন।