সফর ১৪২৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০০৮

একটি ভুল প্রচলন

তাওয়াফের সাত চক্করের জন্য কি আলাদা আলাদা দুআ রয়েছে?

হজ্বের সময় প্রতি বছর অনেক মানুষকে দেখা যায়, মাতাফে তাওয়াফ করার সময় হাতে পুস্তিকা নিয়ে তাতে লেখা তাওয়াফের প্রতি চক্করের নির্দিষ্ট দুআ জোরে জোরে পড়তে থাকে। অনেক মানুষ অশুদ্ধভাবেও পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ অর্থ ও মর্ম না বুঝে শুধু মৌখিকভাবে উচ্চারণ করতে থাকে। বহু মানুষ এমনও আছেন, যারা মুখস্থ বা পুস্তিকা দেখে কোনোভাবেই তা পড়তে পারেন না। তারা শুধু এই দুআগুলো পড়ার জন্য দলবেঁধে এমন কারো সঙ্গে তাওয়াফ করেন যিনি পুস্তিকা দেখে অশুদ্ধভাবে হলেও ওই দুআগুলো পড়তে পারেন। তিনি উচ্চস্বরে দুআগুলো পড়েন। আর অন্যরা যদ্দূর সম্ভব তার অনুকরণের চেষ্টা করেন।

এতখানী শ্রমস্বীকারের পেছনে তাদের এই ধারণা কাজ করে যে, তাওয়াফের প্রতি চক্করে শরীয়তের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন দুআ নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে। যা পড়া জরুরি কিংবা গুরুত্বের সঙ্গে পড়া উচিত। আর এতে বিশেষ সওয়াব ও উপকারিতা আছে।

এ ধারণা ঠিক নয়। বিভিন্ন লিফলেট বা পুস্তিকায় তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের সময় পড়ার জন্য বা যেসব দুআ লিখিত আছে সেগুলোর শব্দ ও অর্থ সঠিক হোক বা ভুল হোক, দুআগুলো করআন-হাদীসের দুআ হোক বা অন্য কারো বানানো হোক, সেগুলো তাওয়াফের দুআ নয়। অর্থাৎ ওই বিশেষ দুআগুলো তাওয়াফের সময় পড়া সুন্নতও নয়, মুস্তাহাবও নয়। তাওয়াফের সময় পড়ার জন্য যে দুএকটি দুআ হাদীস শরীফে এসেছে তা খুবই সংক্ষিপ্ত। যেমন-

ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار

এই কুরআনী দুআ গোটা তাওয়াফেই করা যায়। বিশেষ করে রুকনে ইয়ামানী ও হজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে এই দুআ করা উচিত। এছাড়া যে দুআ মুখস্থ থাকে তা তাওয়াফের সময় পাঠ করা যায়। তদ্রুপ অন্তরে যে হাজত থাকে তা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যায়। এটাই আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়- বান্দা যে ভাষাতেই তা প্রার্থনা করুক না কেন।

কত ভালো হত, যদি আমাদের হাজী ছাহেবান এই মাসায়েল ভালোভাবে অনুধাবন করতেন এবং সে মোতাবেক আমল করতেন! তাহলে তাওয়াফের সময় এই দলবদ্ধতার কারণে অন্য হাজীদেরও কষ্ট হত না আর তাদের উচ্চ আওয়াজে অন্যদের মনসংযোগে কোনো প্রকার ব্যাঘাত ঘটত না।#

 

 

advertisement