উম্মাহ-২ : স্বাগতম কসোভো!
বলকানের রাষ্ট্র সার্বিয়া। এতদিন যার অধীনে একটি প্রদেশ ছিল কসোভো। সেই কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন কসোভিয়ান পার্লামেন্টের সদস্যরা। এ স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীব্যাপী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আর রাশিয়া ও স্পেনসহ তাদের মিত্র কিছু রাষ্ট্র এ স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে সার্বিয়ার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। সার্বিয়া তার এতদিনকার প্রদেশ কসোভোর স্বাধীনতার ঘোষণায় সাংঘাতিক বিরক্তি প্রকাশ করেছে এবং এ স্বাধীনতাকে তারা মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে। অপরদিকে কসোভোর প্রধানমন্ত্রী হাশিম থাচি স্বাধীনতার যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত। গণতান্ত্রিক এ রাষ্ট্রে সব জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত থাকবে।’ কসোভিয়ান পার্লামেন্টের কয়েকজন সংখ্যালঘু সদস্যের অনুপস্থিতিতে ১০৯জন সদস্যের সবার সম্মিলিত ভোটে কসোভোকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
মুসলিম প্রধান কসোভোর স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মোড়লগুলোর পক্ষ-বিপক্ষের এ অবস্থান গ্রহণ এবং মিডিয়ায় তার জোরালো প্রচারে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন এ বিষয়টির মাঝে একটি ছল-চাতুরির দুর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। যে আমেরিকা যেকোনো যুদ্ধ ও যুদ্ধমূলক সিদ্ধান্তে পৃথিবীর বড় শক্তিগুলোকে যখন তখন পাশে দাঁড় করাতে সক্ষম হয় এক্ষেত্রে তাকে কসোভোর পক্ষে একটি নিরীহ ও নির্বিকার শক্তি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। দেশটির স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের চিৎকার-আস্ফালন জোরেশোরেই প্রচার পাচ্ছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনৈতিক পলিসির স্বাভাবিক ধারার মধ্যে পড়ে না। এ থেকে এই আশংকা জেগে উঠা স্বাভাবিক যে, কসোভোকে শেষ পর্যন্ত স্বাধীন থাকতে দেওয়া হবে নাকি একটি রক্ষক্ষয়ী পরিণতির দিকে তাকে ঠেলে দেওয়া হবে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না।
কোনো কোনো পর্যবেক্ষক মনে করেন, কসোভোর স্বাধীনতার ব্যাপারটি এতটাই স্বাভাবিক ও অবধারিত ছিল যে, ইইউ ও আমেরিকা তাতে কালক্ষেপনের আর কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করেনি। তাই কসোভিয়ানদেরকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে উদ্বুদ্ধ করে দিয়ে পেছনে তারা দাঁড়িয়ে যায়। যদিও কসোভোর স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তিকে নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা তারা করেনি। বিপক্ষ শক্তিকে কসোভোর বিরুদ্ধে সব রকম তৎপরতা চালাতে দিয়ে কেবল নিজেরা ‘নির্বিরোধী’ মৌখিক সমর্থন নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে কসোভোর উপর নিজেদের ‘অনুগ্রহ ও কর্তৃত্ব’ স্থাপনের একটি সুযোগ করে নিল। এরচেয়ে বেশি কিছু নয়। কেউ কেউ মনে করেন, সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আফগানিস্তান ও ইরাকে ব্যাপক রক্তক্ষয় ও দখলাদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে আমেরিকার যে বৈপরীত্যপূর্ণ ক্ষতস্থানের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে কিছুটা মলমের মতো ভূমিকা রাখতে এবং পৃথিবীকে সেটা দেখাতে কসোভোর ক্ষেত্রে আমেরিকা এবার এই সমর্থনের ‘সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র সুগোস্লাভিয়ার যেসব রাজ্য স্বাধীন হয়ে গেছে তার ষষ্ঠটি হচ্ছে এই কসোভো। আমরা সদ্য স্বাধীন এই মুসলিম রাষ্ট্রটির স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকা এবং উত্তরোত্তর শান্তি ও সত্যের দিকের অভিযাত্রার জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করি। এ রাষ্ট্রটির স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সার্বিয়া, রাশিয়া, স্পেন ও অন্যান্য রাষ্ট্রশক্তির সুবুদ্ধি কামনা করি। নতুন স্বাধীন এই রাষ্ট্রটি মোড়ল দেশ ও শক্তিগুলোর সব ধরনের ছল-চাতুরি ও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাক-প্রত্যাশা করি। #