রবিউল আউয়াল ১৪২৯   ||   মার্চ ২০০৮

জান্নাতের পথিক

সাঈদ বিন আবু বকর

খায়বার দুর্গের পতন হল। মুসলিম বাহিনীর বিজয় হল। হঠাৎ এক ব্যক্তির লাশ তাদের চোখে পড়ল, যার দেহ কৃষ্ণবর্ণ, চেহারা ধুলোয় ধুসরিত। আর পরনে মলিন বস্ত্র। এই ব্যক্তি কে? কোত্থেকে এসেছে? কেন এখানে এসেছে? আরো বিভিন্ন প্রশ্ন সাহাবীদেরকে বড় চিন্তিত করে তুলল। কিন্তু কেউ জানল না তার পরিচয় ও আগমন-রহস্য। ইতোমধ্যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হলেন। সাহাবীগণ আরজ করলেন, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! এ ব্যক্তিকে আমরা কেউ চিনতে পারছি না। তিনি বললেন, একে চিনতে পারছ না, এতো এমন এক ব্যক্তি, যে জীবনে এক রাকাত নামায পড়েনি, একটা রোযাও রাখেনি, এমনকি একটা পয়সা যাকাতও দেয়নি। [আর হজ্ব তো তখনও ফরয হয়নি।] কিন্তু আমার অন্তর সাক্ষ্য দিচ্ছে, এ ব্যক্তি জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হয়ে গেছে।’’

সাহাবীগণকে বিস্মিত হতে দেখে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো ঘটনা খুলে বললেন। ঘটনার বিবরণ এই- এ লোকটি ছিল এক ইহুদীর গোলাম, সে তার মনিবের বকরী চড়াত। খাইবার দুর্গ মুসলিম বাহিনীর অবরোধে থাকাকালীন সে একবার বকরীর পাল নিয়ে দুর্গ থেকে বের হল। রাজা-বাদশাহ, রাজপ্রাসাদ কিংবা শাহীমহল এসব দেখার প্রতি তার ছিল অত্যন্ত আগ্রহ ও কৌতহহল। তদুপরি হিজাজের বাদশাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার শখ তার বহুদিনের। তাই সে মুসলিম বাহিনীর দিকে অগ্রসর হল। এক সাহাবীকে জিজ্ঞাসা করল, হিজাজের বাদশাহ এখন কোথায় অবস্থান করছেন? সেই সাহাবী একটি তাঁবুর দিকে ইশারা করলেন। এতে লোকটি ভীষণ আশ্চর্যান্বিত হল। ভেবেছিল, বাদশাহর তাঁবু হবে স্বর্ণ-রূপা দ্বারা তৈরি! তাঁবুর সামনে ঝুলে থাকবে স্বর্ণের কারুকার্য খচিত রং বেরংয়ের বিভিন্ন পর্দা! সেখানে থাকবে চাকর-বাকর ও ভৃত্যদের ছোটাছুটি! আর থাকবে পাহারাদারদের কড়া পাহারা। অথচ এসবের কিছুই এখানে নেই। আছে শুধু সাধারণ সৈনিকদের তাঁবুর মতো একটি তাঁবু। আর সেখানেই আছেন হিজাজের বাদশাহ! রাজপ্রাসাদ কিংবা শাহীমহল না হয় দেখা নাই হল কিন্তু বাদশাহ তো আছেন। তাই বাদশাহকে দেখার কৌতূহল নিয়েই তাঁবুর দিকে অগ্রসর হল। পরম আনন্দ ও অজানা আশঙ্কার মধ্য দিয়ে সে তাঁবুতে প্রবেশ করল। এই তো হিজাজের বাদশাহ বসে আছেন। কত সুন্দর! কত হাস্যোজ্জ্বল তাঁর চেহারা! কত উত্তম তাঁর চাহনি! কিন্তু কেন এত সাদাসিধে তাঁর জীবনযাত্রা? বিষয়টি তার উপর অসাধারণ প্রভাব ফেলল। সে মুহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা, আপনি মানুষকে কিসের দাওয়াত দেন? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি মানুষকে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্র দাওয়াত দেই। আর আমি আল্লাহর রাসূল, এই দাওয়াত দেই। সুতরাং তুমিও এক আল্লাহকে স্বীকার করে নাও। আমাকে তার রাসূল হিসেবে মেনে নাও। এ কথা শুনে লোকটি ইসলাম গ্রহণ করে নিল। তারপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল ইয়া রাসূলুল্লাহ! এখন বলে দিন আমাকে কী করতে হবে? তিনি বললেন, তুমি তো এমন সময় মুসলমান হয়েছো, এখন না নামাযের সময় যে, তোমাকে নামায পড়তে বলব, না রমযান মাস যে, তোমাকে রোযা রাখতে বলব। তোমার কাছে মালও নেই যার যাকাত দেবে। তবে একটি ইবাদত আছে, মুসলমানগণ এখন যা করে যাচ্ছে। তা হল আল্লাহর পথে জিহাদ। এখন এটাই তুমি করতে পার। আর এই জিহাদ করতে করতে মৃত্যুবরণ করলে তুমি সরাসরি জান্নাতে চলে যাবে। তবে তার আগে বকরীর পাল তোমার মনিবের নিকট ফিরিয়ে দিয়ে আস। তখন সেই লোকটি বকরীর পাল দুর্গের দিকে তাড়িয়ে দিলেন, যাতে মনিব পর্যন্ত বকরীগুলো পৌঁছে যেতে পারে। তারপর তিনি জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। #

 

 

advertisement