বিকেলের ভাবনা
পড়ন্ত বিকেল। দীপ্তিময় সূর্যের সোনালী আভা ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতির মায়াবি মুখে। এই স্নিগ্ধ বিকেল আমার কাছে পরম প্রিয় মুহূর্ত। বসে আছি জানালার পাশে। বসে থেকে থেকে এক সময় ছাদে চলে গেলাম। চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। ছাদের গা ঘেঁষে কয়েকটা সুপারি গাছ, বাতাসে দোল খায় তার বাড়ন্ত পাতা। মাথার উপর একঝাঁক অচেনা পাখি মিষ্টি মধুর কলরবে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে কোথাও। ভাবি, ইস! আমিও যদি পারতাম যেতে, ওই পাখিদের সাথে, স্বপ্নের সীমানায়। বহু দূরে! কিন্তু অসম্ভব, অসাধ্য আর অক্ষমতার দুয়ার পেরিয়ে আমি কি পারব যেতে! পারব না। তাই সেই স্বপ্নের ছবি আঁকি হৃদয়ের পাতায়।
মুঠো মুঠো শুভ্র মেঘ ভেসে যাচ্ছে কী জানি কোথায়! কোন ঠিকানায়! একটু দাঁড়ানোর অবকাশ যেন তাদের নেই। আমার ব্যথা কি ওরা বোঝে? চোখ বন্ধ করে আবার তাকাই। তখনি স্থির, অটল-অনঢ় সূর্যের প্রতিবিম্ব আমার দৃষ্টিতে প্রতিভাত হয়। সূর্যতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তোবা সে আমার ব্যথা বোঝে। হয়তো চুপি চুপি বলছে- তুমি মেঘের দিকে তাকিয়ে কষ্ট পাও কেন? ভাবতে পারো ওরা সময়ের মতই বাঁধাহীন। সময় কখনো দাঁড়িয়ে থাকে না। শত কামনা তুচ্ছ করে চলে যায় এই অবিরাম গতিতে। সময়কে তো আর দেখা যায় না। মেঘকে দেখা যায়, এই মেঘ দেখেই তুমি উপলব্ধি করো, এই মেঘের মতোই ভেবে নাও সময় এখন মেঘ হয়ে চলে যাচ্ছে। এই মেঘ দেখেই কিন্তু তুমি শিক্ষা নিতে পারো। মেঘ যেভাবে সময়ের চলন্ত রূপ নিয়ে সবকিছু পেছনে ফেলে চলে যায়, তেমনি তুমিও সকল অবসন্নতা, জড়তা, ব্যথা-বেদনা, দুঃখ-হতাশা, অপ্রাপ্তির বঞ্চনা আর না পাওয়ার বেদনা, নিরাশার প্রাচীর মাড়িয়ে এগিয়ে যাও সামনে। ফিরে এলাম নিজের ভুবনে। ভাবছি তাইতো। সময় যেমন থেমে থাকে না আমিও কেন নিশ্চল ভাবনার মাঝে ডুবে থাকব?
সময়ের সাথে রাগ নয় মিতালী পাততে হবে। সে চলে যাচ্ছে যাক। তাতে ক্ষতি কি? আমিও তার সাথে পাল্লা দিয়ে জীবনকে সফলরূপে এগিয়ে নিয়ে যাব। আর আকাশের মত উদার, পাখির মত স্বাধীন, সাগরের মত বিশাল মনের অধিকারী হতে আপ্রাণ চেষ্টা করব। সূর্যের কাছ থেকে শিক্ষা নেব তার মতই যেন কিরণ ছড়িয়ে হেসে উঠতে পারি। অপসংস্কৃতির অন্ধকার দূরীভূত করে সন্ধ্যার আঁধারে ডুবে না গিয়ে আলো ছড়াতে পারি। মহান প্রভুর শানে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করি- হে সৃষ্টিকর্তা! আমাকে করো পবিত্র মনের অধিকারী। হৃদয়ে ঢেলে দাও ঈমানী জযবা। মিথ্যার বিনাশ থেকে আর বাতিল থেকে বেঁচে থাকার শক্তি অর্জন করার তাওফীক দাও। #